#তুমি_আমার_প্রেমবতী
#পর্বঃ৯ ও ১০
#সানজিদা_খানম_স্বর্ণা
১৮.
রাত গভীর হচ্ছে।কেউ নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে, কেউ ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।গভীর রাত নির্জনতার সাক্ষী রেখেছে চারদিকে অন্ধিকার বিছিয়ে দিয়ে।রাতের নিজস্ব একটা রূপ আছে।কোন মিথ্যাবাদী প্রচার করল,রাতের সৌন্দর্য নেই?রাতের এই সৌন্দর্য দেখতে মনে চোখ লাগে।
রেল লাইনের ধারের জানালাটা খুঁলে জানালার ধারে বসে আছে প্রেমা।চোখে নিষ্পলক দৃষ্টি। খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে ভাবনায় ব্যাস্ত সে।নিমীলিত চোখে আকাশের তারা গুলোর সাথে গল্প করছে প্রেমা।
সেলিনা পারভীন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আদিল নিজেও ঘুমের দেশে বিচরণ করছে।প্রেমার চোখে ঘুম নেই।সে জানে না আদিল আর তার নিজের ভবিষ্যৎ কি?মায়ের চিকিৎসার খরচ কিভাবে চালাবে?দিন দিন সে চিন্তা বেশি গভীর হচ্ছে।
হঠাৎই বাহিরে একটা শব্দ হয়। প্রেমা কান খাড়া করে শোনে বুঝার চেষ্টা করে কিসের শব্দ!কেউ একজন এসেছে হয়তো। প্রেমা দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে আসে।বাহিরে এসে দেখতে পায় কুদ্দুসকে।প্রেমা চোখ মুখ খিঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘এতো রাতে অভদ্রের মতো এখানে কি করছেন আপনি?সেদিন থাপ্পড় খেয়ে মন ভরেনি আপনার? এখানে কেন এসেছেন আবার?’
‘এমন ভাবে কথা বলছিস যেন আমি তোর ঘরে ডুকেছি।আমার যখন ইচ্ছা যেখানে খুশি থাকবো। তুই বলার কে?’
‘আমাদের উঠোনে দাঁড়িয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন আমি বলার কে?একটু ভদ্রতাও তো দেখাতে পারেন। এতো রাতে কোনো ভালো মানুষ অন্যের বাড়িতে আসে না।’
‘তোকে কে বললো আমি ভদ্র?আমি তো অভদ্র!অনেক অভদ্র আমি।দেখবি আমার অভদ্রতার নমুনা?’
‘কুদ্দুস ভাই?আপনি আমাদের বস্তিতে এসে ঝামেলা করছেন।আমি যদি এখন চিৎকার করি আপনার কি অবস্থা হবে ভাবতে পারছেন না।ভালোই ভালোই বলছি চলে যান এখান থেকে।’
‘তোর ঐ শুকনো থ্রেট আমাকে দিয়ে লাভ নাই।কুদ্দুস এই সবে ভয় পায় না।’
‘তাহলে আপনি যাবেন না তাইতো?আপনি বস্তিবাসীর থেকে গণদোলায় না খেয়ে এক পা’ ও নড়বেন না। আমি বুঝতে পেরেছি।’
কুদ্দুস প্রেমার বাহু চেপে ধরে বলে,’এ প্রেমা এই।তোমাকে তো আমি দেখে নেব।এই কুদ্দুসের দিন আসবে।’
এই বলেই দ্রুত পদে প্রস্থান করে কুদ্দুস।প্রেমা কুদ্দুসের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।কেমন বেহায়া একটা লোক!
১৯.
এতো রাতে মাতাল হয়ে সাক্ষরকে ফিরতে দেখে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে মোজাম্মেল সাহেব আর শাহানাজ বেগম।সাক্ষরকে এই অবস্থায় যদি স্নিগ্ধার বাবা মা দেখে ফেলতো তাহলে কি সর্বনাশটাই না হতো এটা ভেবেই বার বার শিহরিত হচ্ছেন মোজাম্মেল সাহেব।
অভি হতভম্বের মতো সাক্ষরের দিকে তাকিয়ে আছে।তার ভাই তো এমন নয়!তাহলে কি হয়েছে আজ?অভি দ্রুত সাক্ষরকে ধরে নিয়ে এসে বসিয়ে দেয় সোফায়।সেই চট্টগ্রাম থেকে এই ভাবে মাতাল হয়ে ঢাকায় ফেরার পেছনে কোনো না কোনো কারণ তো নিশ্চয়ই আছে।
বাড়িতে হইচইপূর্ণ পরিবেশ আন্দাজ করে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসে স্মৃতি আর সাথী।স্মৃতি সাক্ষরকে দেখে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। সে বুঝতে পারছে না সাক্ষর এই ভাবে কেন আছে।
‘ছোট ভাইয়া কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন করছো কেন?’
স্মৃতিকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেন মোজাম্মেল সাহেব। সাক্ষরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলেন,’এসব কি সাক্ষর তোমার একি অঃধপত হয়েছে?তোমাকে পড়াশোনার জন্য পাঠানক হয়েছিল। অথচ তুমি নেশা করে বাড়িতে এসেছো?’
অভি মোজাম্মেল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘কি শুরু করেছেন আব্বু?আম্মু তুমি আব্বুকে বোঝাও।সাক্ষর কোনো কারণ ছাড়া তো এই ভাবে আসেনি।কিন্তু তোমাদের বোঝা উচিত এতো দূর থেকে সে এসেছে, আর তার অবস্থা দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো এখন ও কথা বলার অবস্থায় নেই।’
মোজাম্মেল সাহেব কটমট করে অভির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘কোনো ছেলে মেয়েকে মানুষ করতে পারলাম না।’
অভি সাক্ষরকে ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দেয়।সে আর বাহিরে না গিয়ে বাকী রাত টুকু ভাইয়ের সাথে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়।
২০.
‘হ্যালো, তাওহিদ।’
‘হ্যাঁ পড়শী বল।’
‘সাক্ষর কি হোস্টেলে ফিরেছে?’
‘এখনো তো ফিরেনি।ওর ফোনটাও বন্ধ দেখাচ্ছে।কি করব কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।কোথায় আছে সে?’
”আমিও সেই কখন থেকে ফোনে ট্রাই করতেছি অথচ ফোন বন্ধ।কোথায় খুঁজবো এখন তাকে?’
‘দেখ পড়শী,পুরো ব্যাপারটা তোর জন্যই ঘটেছে।যা হয়েছিল সব মানলাম।তুই কেন সাক্ষরকে থাপ্পড় মা*র*তে গেলি?’
‘আমি কোনো ভাবেই ওকে আটকাতে পারছিলাম না।এর পর বাধ্য হয়ে এটা করেছি।কি করবো আমি?সবাই মজা নিচ্ছিলো সাক্ষর যদি শিহাবের সাথে উল্টো পালটা কিছু করে বসতো তাহলে?
‘আজ অবধি ওকে এতটা রেগে যেতে আমি কক্ষনো দেখিনি।তুই খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।সাক্ষর তোর এই ব্যাবহারে খুব কষ্ট পেয়েছে।তুই ঠিক করিসনি। ‘
‘থাক সে সব কথা।তুই তো সাক্ষরের পেছনে গেছিলি।কোথায় গেলো সে তুই দেখিস নি?’
‘আমি ওর পেছনে গেলেই কি আমাকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে কোথায় একটা চলে গেছে।’
‘কি!!!তোর এতটুকু বুদ্ধি মাথায় রাখা উচিত ছিল।রাগের মাথায় এখন যদি সাক্ষর কিছু একটা করে বসে। কি করবি তুই?’
‘প্রশ্নটা আমাকে না করে নিজেকে কর।আজকে তোর জন্যই সাক্ষরের এই অবস্থা হয়েছে।তুই কেন তাকে থাপ্পড় দিতে গেলি।তাও এতো গুলো ছেলে মেয়ের সামনে।’
‘আর তুই বা কেমন বন্ধু ওকা একা সাক্ষরকে ছেড়ে দিলি?’
‘সাক্ষর শুধু একা আমার বন্ধু নয়। সে তোর ও বন্ধু।শুধু বন্ধু কেন বলছি? বন্ধুর থেকে বেশি কিছু।কিন্তু আশ্চর্য তুই নিজেই তাকে আঘাত করলি।থাপ্পড়রের আঘাতের থেকেও ওর মনের আঘাতের দাগটা অনেক হয়েছে।তুই সেটা বুঝবি না।’
‘এখন আমাকে দোষ না দিয়ে একটু খোঁজ করে দেখবি প্লিজ সাক্ষর কোথায় আছে?’
‘আচ্ছা তুই ফোন রাখ।আমি দেখছি।’
‘ ওকে, কিছু জানতে আমাকে একটু জানাবি প্লিজ। আমি টেনশনে আছি।’
‘ওকে ঠিক আছে।এখন বাই’
এই বলে ফোন কেটে দেয় তাওহিদ।কপালে তার চিন্তার ভাঁজ।মাথায় তার অজস্র প্রশ্ন?কোথায় গেলো সাক্ষর?হুট করেই মাথায় আসে। কোনো ভাবে বাড়িতে চলে গেল না তো?
২১.
স্নিগ্ধার বাবা মা বাড়িতে ফিরে স্নিগ্ধাকে ডেকে এনেছে।বিয়ে সম্পর্কে আরেকবার জিজ্ঞেস করা উচিত মেয়েকে।
‘কিরে মা, তাহলে তুই বিয়েতে রাজি আছিস তো?’
‘হুম, আব্বু আম্মু আমি বিয়ে করতে রাজি।তোমরা খুশি মানে আমিও খুশি।এই বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেই।কিন্তু আব্বু আম্মু তোমরা কি যার সাথে আমার বিয়ে তাকে দেখেছো?মানে সাক্ষর নামক ছেলেটাকে দেখে তোমাদের কি মনে হলো?’
‘আসলে মা আমরা ছেলেটাকে এখনো দেখি নি।সাক্ষর নাকি চট্টগ্রাম থাকে।তবে ছেলেটা কাল আসবে মোজাম্মেল সাহেব তাকে আসতে বলবেন।আমরা ওর সাথে কথা বলে ওর মতামত নিয়েই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করব।’
‘তোমাদের যা ইচ্ছে।কিন্তু অভি আমাকে যেই অপমান করেছে এর পর যেভাবেই হোক আমি ঐ বাড়িতে বউ হয়ে যাবোই।’
‘কিছু কি বললি স্নিগ্ধা?কি বিরবির করছিস?’
‘না আব্বু কিছু না।তোমরা কথা বলো আমি যাই।’
স্নিগ্ধার বাবা মা মেয়ের যাওয়ার পাণে তাকিয়ে থাকেন।ছোট্ট মেয়েটা কত বড় হয়ে গেল।তাকে বিয়ে দেবার বয়স হয়ে গেছে এটা ভাবতেই স্নিগ্ধার মায়ের দু ফোঁটা অশ্রুকণা ঝড়ে পরে চোখের কোণ বেয়ে।
চলবে,ইনশাআল্লাহ ✨
(আসসালামু আলাইকুম।একদল চাইছেন প্রেমা নায়িকা থাকুক একদল স্নিগ্ধা।এখন সবার মন রক্ষা করা সম্ভব নয়।এবার গল্পটা আমার মতো করে এগিয়ে নিয়ে যাবো।আপনাদের ইচ্ছে গল্পের সাথে থাকবেন নাকি থাকবেন না।বিশ্বাস করেন আমার এখন উট রেখে হেঁটে চলার গল্পটার কথা মনে হচ্ছে।সত্যি সবার মন রক্ষা করা সম্ভব না। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করবেন।হ্যাপি রিডিং)
#তুমি_আমার_প্রেমবতী
#পর্বঃ১০
#সানজিদা_খানম_স্বর্ণা
২২.
কর্মব্যস্ততায় সবাই নিজের নিজের মতো সকাল সকাল বেরিয়ে গেছে নিজেদের কর্মক্ষেত্রে। ব্যাস্ততম এই শহরে সূর্য উঁকি দিতেই সবার ব্যাস্ততা শুরু হয়।চৈত্র মাসের সূর্য! সকালে সে সূর্যের দিকে তাকালে মনে হয় দুপুর ঘনিয়ে এসেছে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে অভি অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়েছে।
সাক্ষর তখনো ঘুমে।অভি নিজের মতো ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে গেছে।কিন্তু রাস্তায় জ্যমাএ বসে সে এখন বিরক্তিতে কপাল কুঁচকাচ্ছে।স্নিগ্ধাদের বাড়ি থেকে ফেরার সময় এমন জ্যামে পরেছিল।ভাবতেই আদিলের কথা মনে পরে অভির।মনে মনে চায় আজকে আদিলের সাথে দেখা হোক।তার আদুভাই হবার গল্পটা শোনা বাকী আছে।
ভাবতেই গাড়ি থেকে নেমে একটু সাইডে হাটাহাটি করে অভি।শপিংমলের সামনে দাঁড়ানো স্নিগ্ধাকে দেখে চমকে যায় অভি।মার্জিত পোকাশ,হাতে একটা ভ্যানিটি ব্যাগ, চোখে কালো চশমা বেশ লাগছে স্নিগ্ধাকে।কিন্তু চোখ কপালে ওঠে স্নিগ্ধার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটাকে দেখে।
কে এই ছেলেটা?আর স্নিগ্ধার সাথে এতো কিসের মাখামাখি!অভি মনে মনে ভাবে সাক্ষরের সাথে এই মেয়েটার বিয়ে ও কিছুতেই হতে দেবে না।এমন একটা মেয়ের সাথে তার ভাইয়ের কিছুতেই বিয়ে হতে পারে না।ও ধারণা সুন্দরী মেয়েদের অনেক গুলো বয় ফেন্ড থাকে।আর এই সব মেয়েরা বিয়ের আগেই ফষ্টিনষ্টি করে বেরায়।
অভি স্নিগ্ধাকে দেখে ঘৃণায় মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়।পরমুহূর্তে মনে হয় এই মেয়েটার আসল রূপ বাবার সামনে আনতে পারলেই এর সাথে সাক্ষরের বিয়েটা হবে না।এই ভেবেই স্নিগ্ধার কাছে এগিয়ে যায় অভি।চোখ মুখে রাগের অস্তিত্ব ফুটিয়ে তুলে বলে,
‘সেদিন তো আমি মিথ্যে বলি নি!বলেছিলাম না এই সব মেয়েদের একসাথে ডজন খানেক বয়ফ্রেন্ড না থাকলে চলে না।যদি আপনার অন্য ছেলেদের সাথে এতো মেলামেশা করার ইচ্ছে তাহলে আমার ভাইকে কেন বিয়ে করতে চাচ্ছেন?’
স্নিগ্ধা অভির কথায় অবাক হয়।
‘এই! কে আপনি? আর কোন সাহসে আমাদের অপমান করছেন যা নয় তাই বলছেন?’
পাশে থাকা ছেলেটা কিছু একটা বলতে গেলে থামিয়ে দেয় স্নিগ্ধা।
‘শুভ ভাইয়া তুমি চুপ করো। উনাকে যা বলার আমি বলছি।’
‘আর কি বলবেন আপনি?দেখতেই তো পাচ্ছি।আমার ভাইকে বিয়ে করার কথা বলছেন আবার এখানে অন্য ছেলেকে নিয়ে মাতামাতি করছেন।বাহ আপনারা পারেন ও বটে!’
‘মুখ সামলে কথা বলুন।আপনি কখন থেকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছেন।এটা আমার ভাই।আমার কাজিন শুভ।আর আপনি?ছি!আপনার মানসিকতা এতো নিচু।ভাবতেই আমার ঘৃণা হচ্ছে।আপনার ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে এই নয় আমি আপনি ভুল বললে মেনে নেব।’
‘স্নিগ্ধা এই রকম একটা বাড়িতে তুই বউ হয়ে যাচ্ছিস?যেই বাড়ির ছেলেরা মেয়েদের সম্মান দিতে জানে না?আর উনার ভাইয়ের সাথে তোর বিয়ে হচ্ছে উনি কেন এতো নাক গলাতে আসেন?’
‘এই লিসেন! ভাইটা আমার।নাক গলানোর হলে আমিই গলাবো আপনি নয়।আর শুনুন মিস স্নিগ্ধা,আমাদের বাড়ির মানুষ যেহেতু এতোই খারাপ তাহলে আমাদের বাড়িতে বউ হয়ে কেন আসতে চাচ্ছেন?বিয়েতে না করেন দিন।তাহলেই তো হয়।’
স্নিগ্ধা মনে মনে হাসে।এই ছেলেটার অহংকার ভাঙার জন্যই তো সে সাক্ষরকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে।অভি যেই ভাবে তাকে অপমান করেছে সেই অপমানের জবাব দিতে হবে।অপমানের তালিকাটা আজকে নিয়ে আরেকটু ভারী হলো।
‘কি হলো স্নিগ্ধা কি এতো ভাবছিস?আজকে বাড়িতে গিয়ে চাচ্চুকে বলব এই বিয়ে ভেঙে দিতে।এই রকম একটা পরিবারে তোর বিয়ে দেবার কোনো মানেই হয় না।’
‘না শুভ ভাইয়া।এই পরিবারেই আমি বউ হয়ে যাবো।উনার ছোট ভাইয়ের বউ হিসাবে আমি উনাদের বাড়িতে যাবোই।এখন এখান থেকে চলো।উনার সাথে কথা বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই।’
অভি কিছু বলার আগেই দ্রুত পদে সরে যায় স্নিগ্ধা আর শুভ।অভি তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।এমন একটা মেয়েকে কিছুতেই তাদের বাড়ির বউ হতে দেওয়া যায় না।
২৩.
সকাল সকাল প্রেমা আদিলকে নিয়ে বেরিয়েছে।উদ্দেশ্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।আদিল দুর্বল শরীর নিয়ে আস্তে আস্তে প্রেমার হাত ধরে এসে ডাক্তারের চেম্বারের কাছে এসে দাঁড়ায়। দূরে দাঁড়ানো অভিকে দেখে খুব খুশি হয় আদিল।চিনতে কষ্ট হয় না।চোখে মুখে ফুটে ওঠে প্রশান্তি।প্রেমার দিকে তাকিয়ে বলে,’আপু একটু তুমি দাঁড়াও।আকি আসছি।’
বলেই অসুস্থ শরীর নিয়ে ছূট লাগায় আদিল।দ্রুত অভির কাছে গিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে ‘স্যার কেমন আছেন?’
অভির মনযোগ তখনো স্নিগ্ধার কথাগুলোর দিকে। আচমকা ডাকে পিছিনে তাকায় অভি।হুট করেই তার মনে ভালো হয়ে যায়।আদিলকে দেখে অভি নিজেও হাসে।মুচকি হেসে বলে’আমি ভালো আছি?তুমি কেমন আছো আদুভাই?’
‘আপনি আমার নাম মনে রেখেছেন?’
‘তোমার আদুভাই হবার গল্পটা যে এখনো এখনো শোনা বাকী!তোমাকে ভুলে গেলে কে বলবে শুনি?’
‘আমি আপনাকে বলব।কিন্তু এখানে ইই করছেন আপনি?’
‘এই তো তেমন কিছু না।তুমি কি করছো?’
‘আমার শরীরে জ্বর কিনা?আপুর সাথে একটু ডাক্তার দেখেতে এসেছি।’
‘ওহহ,তা তোমার আপু কোথায়?’
দূরে দাঁড়িয়ে পুরো ঘটনা দেখে চলেছে প্রেমা।তবে কথোপকথন শুনা যাচ্ছে না।প্রেমা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আদিলের দিকে।অভিকে চিনতে তার ও কষ্ট হয় না।তার ফুক গুলো ফেলে দিয়ে সরি শব্দটাও উচ্চারণ করেনি।সেই লোকটাকে কিভাবে ভুলে যাবে সে?
আর এই অভদ্র লোকটার সাথেই কিনা তার ভাইয়ের এতো ভাব এতো হেসে হেসে কথা বলছে! প্রেমা রাগান্বিত হয়ে এসে বলে,’ঐ আদিল এখানে কি করছিস? চল ডাক্তারের কাছে চল।এই লোকটার সাথে তোর এতো কিসের কথা?’
অভি প্রেমার দিকে চোখ তুলে তাকায়। আরে এতো সেই ফুলওয়ালী মেয়েটা।কিন্তু সে এখানে কি করছে?
কেউ কিছু বোঝার আগেই আদিল বলে,’এই হচ্ছে আমার আপু প্রেমা।আর আপু এটা হচ্ছে ঐ স্যারটা যে আমাকে এক হাজার টাকা দিয়েছিল।’
দুজনেই দুজনের পরিচয় জেনে অবাক হয়।অভি বলে, ‘তুমি খুব মিষ্টি আদিল।কিন্তু তোমার বোন এতো রুক্ষভাষী কেন?’
‘মোটেই না আমি কোনো রুক্ষভাষী নই।আপনি আমার ফুল ফেলে দিয়েছিলেন।কিন্তু আমার ভাই আপনার সম্পর্কে যা বলেছে মনে হয় না আপনি এতোটাও খারাপ।কিন্তু খুব যে ভালো এমটাও নয়।’
অভি প্রেমার কথায় হাসে দুই ভাই বোনের মধ্যে একটা মিল আছে।সেটা হচ্ছে প্রেমা আর আদিলের হাসি এক রকম।প্রেমা অভির দিকে তাকিয়ে মনে মনে কি একটা ভাবে। লজ্জায় নয়তো বিনম্রতায় নিচু হয় প্রেমার মাথা। অভি তাদের দিকে তাকিয়ে বলে,’এখন কি দুই ভাই বোন আমাকে তাদের বন্ধু বানাবে?
আদিল মাথা নাড়ে।অভি বলে তাহলে আমিও চলো তোমাদের সাথে ডাক্তারের কাছে যাই।প্রেমা চোখ মুখ কুঁচকে জবাব দেয়,’আপনি কেন যাবেন?’
অভি দুষ্টুমির ছলে বলে,’বা রে ফেমড বানালে এখন ফেন্ডকে নিয়ে যাবে না?চলো আমিও তোমাদের সাথেই যাচ্ছি।’
এই বলে তিন জন ডাক্তারের চেম্বারের দিকে অগ্রসর হয়।প্রেমা আর অভি একে অপরের দিকে তাকায়।চোখে চোখ মিলে।দৃষ্টিতে গভীরতা।প্রেমা চমকে ওঠে।এই দৃষ্টিতে সে কখনো কোনো পুরুষের চোখে তাকায় নি।মনে মনে কি একটা ভেবে চোখ নামিয়ে নেয়।নিজের অস্তিত্ব ভুলে গেছিলো কিছুক্ষণের জন্য।কিছুক্ষণের জন্য সে অভিকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে গেছিলো।প্রেমা মনে মনে বলে, ‘না প্রেমা তুই এমন চিন্তা মাথায় আনবি না।এটা যে সম্ভব নয়।’
চলবে,ইনশাআল্লাহ ✨
(আসসালামু আলাইকুম।কাল দিতে না পারার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করবেন।হ্যাপি রিডিং)