বিরহ শ্রাবণ ২ পর্ব – ৩৬

#বিরহ_শ্রাবণ(দ্বিতীয় খণ্ড)
#পর্ব_৩৬
#লেখিকা_সারা মেহেক

সময় সম্পূর্ণরূপে আপেক্ষিক। কারোর কাছে সময় হয় খুবই দীর্ঘ। আবার কারোর কাছে সময় হয় খুবই স্বল্প। আমার কাছে মনে হয় সময় নির্ভর করে ব্যক্তির সুখ দুঃখের উপর। এই যেমন সুখে শান্তিতে দিন কাটলে মনে হয় সময়টা খুবই দ্রুত চলে যাচ্ছে। আবার কষ্টে থাকলে মনে হয় সময়ই যেতে চাইছে না। এই এক বছরে সময় একদম বালু কণার ন্যায় হাতের মুঠো হতে ফসকে বেরিয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে মনে হতো সময়টা কাঁচের কৌটোয় বন্ধ করে রাখলে বুঝি ভালো হতো। অন্ততপক্ষে এই সুখকর মুহূর্তগুলো চোখের পলকে শেষ হয়ে যেতো না!
দেখতে দেখতে আমাদের বিয়ের এক বছর পার হয়ে গিয়েছে। এই এক বছর আমি ভীষণ সুখে কাটিয়েছি। মনে হয়েছে, জীবনে বোধহয় এতো সুন্দর একটা বছর আর কখনো আসেনি। প্রোজ্জ্বলের সাথে আমার সম্পর্কে অনেক উন্নতি হয়েছে। আমাদের সম্পর্কটা ‘আপনি’ থেকে ‘তুমি’তে পরিণত হয়েছে। যদিও প্রোজ্জ্বল এখনও আমায় ‘তুই’ বলে সম্বোধন করে। এতে অবশ্য আমার কোনো সমস্যা নেই। আমার ভালো লাগে খুব। উনার মুখে ‘তুই’ ডাকটা ভীষণ মানায়। খুব আপন মনে হয় নিজেকে।

ভালোবাসা কেমন হতে পারে তা আমি প্রোজ্জ্বলের কাছে শিখেছি। ওর মতো মন উজার করে কখনো হয়তো আমি ভালোবাসতে পারিনি বা পারবো না। কিন্তু আমি জানি আমি ওকে কতোটা ভালোবাসি। মাঝে মাঝে এ ভালোবাসা কোনো কথা বা কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারি না৷ মনের লুকায়িত বাক্সে এ ভালোবাসার কথাগুলো বন্ধ হয়ে থেকে যায়। কিন্তু মন চায় ওকে বলে বুঝাই, ঠিক কতোটা আমি ভালোবাসি ওকে। ওর গুরুত্ব আমার জীবনে কতটুকু তা বলে বুঝাতে বরাবরই ব্যর্থ হই আমি৷ শুধু ‘আই লাভ ইউ’ বা ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ শব্দ তিনটা ভালোবাসা বুঝানোর জন্য নিতান্তই কম শব্দ মনে হয় আমার কাছে। মনে হয় ওকে নিয়ে বিশাল একটা রচনা লিখলে হয়তো আমি স্বস্তি পাবো, আমার মনের কথা বুঝাতে পারবো৷ কিন্তু শব্দগুচ্ছ সাজাতে ফের ব্যর্থ হই। এই মহা যন্ত্রণায় পড়ে আমি সিদ্ধান্তই নিয়েছি যে এসব থেকে একশ হাত দূরে থাকবো। থাক না, অনুভূতিগুলো মনের বাক্সে বন্দি। সবাই তো পারে না সব প্রকাশ করতে। প্রোজ্জ্বল পারে নিজের অনুভূতিগুলো জাহির করতে। কিন্তু আমি পারি না। তাই এখন অব্দিও ওকে ‘ভালোবাসি’ শব্দটা সরাসরি বলিনি। এ নিয়ে অবশ্য ওর কোনো অভিযোগ নেই।
এই এক বছরে আমি বুঝেছি, অভ্র ভাইয়ের প্রতি কখনোই আমার মনে ভালোবাসার সৃষ্টি হয়নি। যেটাকে আমি প্রথম ভালোবাসার নাম দিয়েছিলাম তা ছিলো ক্ষণিকের মোহ বা আকর্ষণ।

পছন্দ বা মোহ হলো ছোট্ট চারার ন্যায়। একে রোজ পানি ও রোদ দিয়ে আদরযত্ন করে বড় করতে হয়। সময় যেতে যেতে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে এক পর্যায়ে সেই চারা বড় হয়ে গাছে পরিণত হয়। অর্থাৎ সেই পছন্দ বা মোহ ভালোবাসায় পরিণত হয়। অভ্র ভাইয়ের জন্য আমার মনে ক্ষণিকের যে অনুভূতি জন্ম নিয়েছিলো তা কখনো উপযুক্ত পরিবেশ পায়নি। এজন্য সে পছন্দ কখনোই ভালোবাসায় পরিণত হয়নি। প্রোজ্জ্বলকে ভালোবেসে আমি এই প্রকৃত ভালোবাসার অর্থ বুঝেছি। ভালোলাগা ও ভালোবাসার পার্থক্য উপলব্ধি করতে পেরেছি।

আজ আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। প্রথম বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে অনেক আয়োজন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু দুজনের ব্যস্ততায় সেই বিশাল আয়োজন করার সময়টুকু হয়নি। একদিকে আমার শেষ কার্ড পরীক্ষা চলছে। আরেকদিকে প্রোজ্জল কাজে ব্যস্ত। দুপুর পর্যন্ত কলেজে থাকে। আবার বিকেল থেকে শুরু হয় ক্লিনিকের ডিউটি। সম্প্রতি প্রোজ্জ্বল নতুন একটা ক্লিনিকে জয়েন করেছে। সপ্তাহে তিনদিন ডিউটি থাকে ক্লিনিকে। আজও ও ব্যস্ত ছিলো। এ ব্যস্ততার মাঝে ও কিছু করতে পেরেছি কি না জানি না। তবে আমি বিকেলে গিয়ে একটা কেক কিনে এনেছিলাম। এখন সেই কেক নিয়েই রুমে যাবো।

নানু, মামা, মামি গভীর ঘুমে মগ্ন। প্রোজ্জ্বল মগ্ন পড়াশোনায়। সামনের এমডি পরীক্ষায় বসতে চাইছে ও। এজন্য প্রতিদিন রাত দুটো তিনটে পর্যন্ত পড়তে থাকে। ওর এতো পড়াশোনা দেখলে মাঝেমধ্যে ভীষণ বিরক্ত আর রাগ হয় আমার। কিন্তু এ বিরক্ত আর রাগ প্রকাশ করি না আমি। কারণ আজ হোক, কাল হোক, ও পোস্টগ্রাজুয়েশনের জন্য এপ্লাই করবে। তাহলে শুধু শুধু রাগ দেখিয়ে কি লাভ!

ফ্রিজ থেকে কেক বের করে এনে প্রথমে আমার রুমে ঢুকলাম। বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে এই রাতেও হালকা একটু সেজেছি। পিচ কালারের একটা শাড়ি পরে চুলগুলো খোলা রেখে হালকা একটা মেকআপ দিয়েছি মুখে। কেকটা ড্রেসিংটেবিলের উপর রেখে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিলাম, সব ঠিক আছে কি না। নিজেকে একবার ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ শেষে কেক নিয়ে আমাদের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালাম৷ ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললাম,
“ হ্যাপি অ্যানিভার্সেরি প্রোজ্জ্বল। ”
বলেই দৃষ্টি তুলে দেখলাম রুমের বাতি নিভানো। উপরন্তু জানালার সামনে মেঝেতে গোল করে বেশ কয়েকটি মোমবাতি জ্বালানো। মোমবাতির ভিতরে ফুলের পাপড়ি দিয়ে ‘Happy anniversary’ লিখা। স্বভাবতই এমন সারপ্রাইজ দেখে ভীষণ অবাক হলাম আমি। কারণ প্রোজ্জ্বলকে দেখে মনে হয়নি ও সারপ্রাইজ দিবে আমাকে। একদিকে আমি সারপ্রাইজ দিলাম কেক এনে, আরেকদিকে ও সারপ্রাইজ দিলো এভাবে রুমের একাংশ সাজিয়ে।

আমি কেক নিয়ে প্রোজ্জ্বলের দিকে এগিয়ে গেলাম। মোমবাতির হলদে আলোয় প্রোজ্জ্বলকে ভীষণ আকর্ষণীয় লাগছে। আমায় দেখে এক গাল হেসে বললো,
“ আমি মোটেও সারপ্রাইজেড হয়নি চন্দ্রিমা। আধ ঘণ্টা ধরেও যখন তুই রুমে আসছিলি না একবারও তখনই বুঝে গিয়েছিলাম তুই কোনো সারপ্রাইজ প্ল্যান করছিস। আমিও তার কিছুক্ষণ পরই ছোট্ট এ সারপ্রাইজ রেডি করি। জানি, প্রথম অ্যানিভার্সেরি উপলক্ষে এটা অনেক কম হয়ে গিয়েছি। কিন্তু আই প্রমিজ, পরের বছর ধুমধাম করে এ দিনটাকে স্মরনীয় করে রাখবো। ”

আমি প্রোজ্জ্বলের কথায় মৃদু হাসলাম। বললাম,
“ আমার কাছে বড় বড় সারপ্রাইজের চেয়ে এমন ছোট ছোট সারপ্রাইজই বেশি ভালো লাগে। থ্যাংকস ফর দা সারপ্রাইজ প্রোজ্জ্বল। এবার কেক কাটি তাহলে?”

প্রোজ্জ্বল মুচকি হেসে আমার দিকে এগিয়ে এলেন। কেকটা নিয়ে মেঝেতে রাখলেন। অতঃপর আমার দুজন মেঝেতে বসে কেক কাটলাম। এক পিস কেক কেটে প্রথম প্রোজ্জ্বল আমাকে খাওয়ালো,তারপর আমি প্রোজ্জ্বলকে খাওয়ালাম৷ কেক খাওয়া শেষে প্রোজ্জ্বল জিজ্ঞেস করলো,
“ বল, কি চাস আমার কাছে। ”

আমি প্রোজ্জ্বলের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললাম,
“ আমার আর কি চাই! যেখানে তুমি নিজেই আছো। তবে একটা জিনিস চাইতে অনেকদিন থেকে ইচ্ছা করছে। তবে এর আগে প্রমিজ করো, আমাকে মানা করবে না তুমি। ”

“ আচ্ছা, করবো না। ”

“ প্রোজ্জ্বল, আমি জানি, তুমি আমার পড়ালেখা নিয়ে অনেক সিরিয়াস। আমি নিজেও সিরিয়াস। আমিও চাই না আমার পড়ালেখার কোনো ক্ষতি হোক। কিন্তু এই চাওয়ার আড়ালে মা হওয়ার ইচ্ছাটা ঢাকা পড়ে গিয়েছে। আমি মা হতে চাই প্রোজ্জ্বল। ”

আমার কথা শোনা মাত্র প্রোজ্জ্বল নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। ওর চেহারা হতে হাসি মিলিয়ে গেলো। খানিক গম্ভীর চাহনিতে বললো,
“ চন্দ্রিমা, এ নিয়ে আমাদের এর আগেও কথা হয়েছে। বলেছি, ইন্টার্নি শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা বাচ্চার জন্য ট্রাই করবো না। তখন কিছু বলিসনি। তাহলে এখন এই আবদার কেনো?“

“ আমি জানি না প্রোজ্জ্বল। আমার মনের ভেতরে এই ইচ্ছাটা তখন জাগ্রত হয়েছে যখন আমি প্রত্যাশা আপুকে দেখেছি। আপুর সাথে যতক্ষণ সময় কাটিয়েছি তাতে বারবার মনে হয়েছে মা হওয়ার অনুভূতিটা বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুখকর অনুভূতি। বাচ্চা হওয়ার পর যখন সে ছোট ছোট হাত দিয়ে আমার আঙুল আঁকড়ে ধরবে সে অনুভূতিটা কেমন হবে তা ভাবতেই আমার গা শিউরে উঠে।”

“ তোর কথা বুঝছি চন্দ্রিমা। কিন্তু এখন……”

“ এখন না। আমি বলছি না এখনই বাচ্চা নেওয়ার জন্য ট্রাই করতে। কিন্তু আমি চাচ্ছি, আমার পড়ালেখার মাঝে যদি ভুলবশত কিছু হয়ে যায় তাহলে যেনো তোমার আফসোস না থাকে। আমি চাই, পড়ালেখার মাঝে বাচ্চা হওয়ার খবরটা শুনলে যেনো তুমি মন থেকে মেনে নাও। শুধু এতটুকুই চাওয়া। এটা তো বড় কিছু না প্রোজ্জ্বল। এ চাওয়াতেও কি তোমার আপত্তি আছে?”

প্রোজ্জ্বল কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার দিকে চেয়ে এ নিয়ে ভাবলো। অতঃপর বললো,
“ আচ্ছা, ঠিক আছে। কিন্তু আমাকে কখনোই এ বিষয়ে জোর করবি না৷ ”

আমি খুশি মনে বললাম,
“ আচ্ছা।”

প্রোজ্জ্বল মৃদু হাসলেন। অতঃপর আমার কপালে গভীর চুম্বন এঁকে দিলেন।

হঠাৎ আমাদের দুজনকে চমকিয়ে এই রাত বারোটার পর শাহেদ ভাইয়ার কল এলো। এত রাতে শাহেদ ভাইয়ার কল দেখে দুজনে আ’ত’ঙ্কি’ত চাহনিতে একে অপরের দিকে চাইলাম। অনুমান করলাম নিশ্চয়ই প্রত্যাশার আপুর ব্যাপারে কোনো খবর পাবো।
প্রোজ্জ্বল সময় নষ্ট না করে কল রিসিভ করলো। যা অনুমান করেছিলাম সেটাই সঠিক হলো। ওপাশ হতে শাহেদ ভাইয়ার ভীতসন্ত্রস্ত কণ্ঠ শুনতে পেলাম।
“ প্রোজ্জ্বল, প্রত্যাশার লেবার পেইন উঠেছে। ওকে তোমাদের হসপিটালে নিয়ে এসেছি। জলদি চলে আসো। ”

“ আসছি শাহেদ ভাই। আপনি টেনশন করবেন না৷”
বলেই প্রোজ্জ্বল কল কেটে দিলো। সাথে সাথে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত কণ্ঠে বললো,
“ চন্দ্রিমা, তুই নানুকে ডেকে তোল। আমি আব্বা আম্মাকে ডেকে তুলছি৷ ”
এই বলেই উনি রুম হতে বেরিয়ে গেলেন। আমি শাড়ি পরা অবস্থাতেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে নানুর রুমে গেলাম নানুকে ডাকতে।

.

প্রত্যাশার আপুর ছেলেকে কোলে করে দাঁড়িয়ে আছি। কি মায়াবী দেখতে বাচ্চাটা! একদম নরম তুলতুলে তুলার ন্যায়। কোলে নেওয়ার সাথে সাথে মনে হয়েছিলো এই বুঝি গলে যাবে। একদম হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো।
চুপচাপ আমার কোলে ঘুমিয়ে আছে ও। ওকে দেখে মনে হচ্ছে, হয়তো আর কয়েক বছর পর আমার কোল জুড়েও এমন একটা বাচ্চা থাকবে। এমন চুপচাপ আমার কোলে ঘুমিয়ে থাকবে। ওকে দেখে দেখেই আমি সময় কাটিয়ে দিবো।

“ এমন একটা বাচ্চা যেনো তোরও হয় সে দোয়া করে দিলাম। ”

হঠাৎ পিছন হতে নানুর কণ্ঠ শুনে চমকে উঠলাম আমি। সামান্য হেসে নানুকে বললাম,
” আল্লাহ চাইলে হবে নানু। ”

নানু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
“ নিজেদেরও তো একটু চেষ্টা থাকতে হয় রে।”

নানুর কথা শেষ হতে না হতেই মামি এসে যোগ দিলেন,
“ আম্মা ঠিক বলেছে চন্দ্রিমা। আমারও তো মন চায় দাদু হতে। খুব ইচ্ছা করে ছেলের বাচ্চা নিয়ে একটু খেলি। ”

“ মামি, এখনই চাইলে যে বাচ্চা হয়ে যাবে তা তো না। আমি নিজেকে পুরোপুরি মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নেই। তারপর বাচ্চা নিবো। ”

প্রোজ্জ্বল এসে আমার সাথে যোগ দিলো। বললো,
“ আম্মা, চন্দ্রিমার আর তিন মাস পর প্রফ পরীক্ষা। এখন বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে আলোচনা বাদ দাও। এ বিষয়ে আমরা পরে কথা বলবো। ”

বলা বাহুল্য, ছেলের বাচ্চা কোলে নেওয়ার তীব্র ইচ্ছা থাকায় মামি প্রোজ্জ্বলের এহেন কথায় মনঃক্ষুণ্ন হলেন। মনঃক্ষুণ্ন হলেন খোদ নানিও৷ দুজনে আর কথা বাড়ালেন না। প্রোজ্জ্বল আমায় বললেন,
“ বাচ্চা নিয়ে কথা উঠলেই এড়িয়ে যাবি তুই। বারবার একই কথা বলতে ভালো লাগে না৷ ”
এই বলে প্রোজ্জ্বল আপুর ছেলেকে আমার কোল থেকে নিয়ে কেবিনে চলে গেলো।

————-

আজও এক মেয়ে পক্ষকে বিয়েতে নাকচ করে এসেছেন অভ্র ভাই। খোদেজা মামি এ নিয়ে ভীষণ ক্ষেপে আছেন উনার উপর। কিন্তু এ নিয়ে উনার কোনো পরোয়া নেই। উল্টো নিশ্চিন্তে রোজ উনি হসপিটালে যাচ্ছেন, ডিউটি করছেন৷ বাসায় এসে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছেন। শেষ চার পাঁচ ধরে অভ্র ভাইয়ের জন্য প্রায় সাতটা মেয়ে দেখেছেন খোদেজা মামি। প্রতিটা মেয়েই মামির মনে ধরলেও অভ্র ভাইয়ের মনে একটিও ধরেনি।

অভ্র ভাইয়ের এহেন কাজকর্ম দেখে কিছুটা অনুমান করছি, এসবের পিছনে কোথাও না কোথাও আমি দায়ী। কেননা প্রতিটি মেয়েই দেখতে ভীষণ সুন্দর ছিলো। বিয়েতে এমন মেয়ে রিজেক্ট করার কোনো কারনই নেই। অথচ অভ্র ভাই রিজেক্ট করছেন। উনার এমন বিয়ের প্রতি অনীহা দেখে খোদেজা মামি শেষমেশ বাধ্য হয়েই আমাকে উনার সাথে কথা বলতে বললেন।

বিকেলে অভ্র ভাইয়ের বাসায় গেলাম উনার সাথে কথা বলতে। দেখলাম উনি সিমেন্টের সেই বেঞ্চে বসে আছেন। আমি গিয়ে উনার পাশে বসলাম৷ উনি আমায় দেখেই মুচকি হেসে বললেন,
“ আরে চন্দ্রিমা! অনেকদিন পর দেখলাম তোমাকে। কেমন আছো? ”

আমি খানিক হেসে বললাম,
“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন অভ্র ভাই? ”

“ এই আছি ভালোই। ”

“ দিনকাল কেমন কা’ট’ছে আপনার? ”

“ কা’ট’ছে তার গতিতে। রোজ ডিউটি, ডিউটি শেষে বাসায় এসেই ঘুম। এই তো জীবন। ”

“ এভাবে কি আর জীবন চলে নাকি! বিয়ে করছেন কবে তাই বলুন। ”

আমার কথা শুনে অভ্র ভাই মৃদু হাসলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
“ আম্মা পাঠিয়েছে তোমাকে। তাই না?”
বলেই আমার দিকে ঘুরে বসলেন।
উনার এমন প্রশ্নে খানিক চমকে উঠলাম। একবার ভাবলাম কথা ঘুরিয়ে নেই। তারপর ভাবলাম, এ বিষয় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলার অর্থ নেই। সরাসরিই বলা উচিত। তাই বললাম,
“ আপনি বিয়ে করছেন না কেনো অভ্র ভাই? আপনি যাদেরকে রিজেক্ট করেছেন তারা প্রত্যেকেই সুন্দর ছিলো। তাহলে তাদের রিজেক্ট করার কারণ কি?”

অভ্র ভাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। বললেন,
“ এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার চন্দ্রিমা। আমার আপাতত বিয়ে করার ইচ্ছে নেই। ”

“ তাহলে কবে ইচ্ছে হবে? কবে বিয়ে করবেন?”

“ জানি না। হয়তো কখনো ইচ্ছে করবে না৷ কখনো বিয়ে করবো না। ”

“ কি বলছেন অভ্র ভাই! এভাবে বিয়ে না করে কতদিন থাকবেন! একটা জীবনসঙ্গীর তো প্রয়োজন সবারই আছে। ”

“ সবার নেই চন্দ্রিমা। আমার কোনো জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন নেই। আমি এভাবেই সুখী আছি। ”

“ কেনো নেই? ”

“ সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি না আমি।”

উনার এরূপ কথা শুনে সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসলাম,
” অভ্র ভাই, এসবের কারণ কোথাও না কোথাও আমি না তো?”

উনি বিস্তৃত হাসলেন। বললেন,
“ জানো, তাহলে জিজ্ঞেস করলে কেনো?”

“ কেনো অভ্র ভাই! আর কতদিন এভাবে থাকবেন? এক বছর পার হয়ে গিয়েছে আমার বিয়ের।”

“ হ্যাঁ, তো? এক বছরই তো গেলো মাত্র। এতো বছর ধরে যেখানে তোমাকে নীরবে ভালোবেসেছি সেখানে সামনেও ভালোবাসবো। ”

আমি এবার খানিক কড়া গলায় বললাম,
“ এভাবে চলে না অভ্র ভাই। আপনি আমাকে কেনো ভুলে যাচ্ছেন না!”

“ তোমার মতো দুদিনের জন্য ভালোবাসিনি আমি। আমি তোমাকে নিঃস্বার্থভাবে অগনিত দিন ধরে ভালোবেসেছি৷ এভাবে বললেই ভুলতে পারা যায় না৷ ”
®সারা মেহেক

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here