আমায় একটু ভালবেসো পর্ব -০১

নিজের ভালবাসার মানুষকে বিয়ে করছে আমারি আপন ছোট বোন। তাও আবার আমার সামনে।ক ষ্টে যেন বুকটা ফে টে যাচ্ছে। তবুও হাসি মুখে মেনে নিচ্ছি সব। কী আর করব? একতরফা ভালবাসা গুলো বোধহয় এমনই হয়।
যার সাথে আমার ছোট বোনের বিয়ে হচ্ছে। সে আমাদের কলেজের প্রফেসর আদনান রহমান। যেদিন আমি আর পর্ণা কলেজে ভর্তি হই, সেদিনই প্রেমে পড়ি আদনান স্যারের। গ ম্ভী র, আর সল্পভাষী আদনান স্যারকে যখন প্রথম দেখি। সেদিনই থমকে গিয়েছিলাম। সতরো বছর বয়সে সেদিন উপলব্দি করি আমি প্রেমে পড়েছি। মা রা ত্মক ভাবে প্রেমে পড়েছি। আস্তে, আস্তে সেই প্রেম বাড়তে থাকে।একসময় তা ভালবাসাতে পরিণয় হয়। সবসময় চুপচাপ আর একা থাকার কারণে, কোন বন্ধু বান্ধব ও ছিল না আমার। তাই কখনো কারো কাছে বলতে পারতাম না, যে আমি আদনান স্যারকে ভালবাসি। পর্ণার সাথে আমার সম্পর্ক কখনোই ভাল থাকতো না ।সে আমার দু মিনিটের ছোট। আমরা জমজ হয়েছিলাম। কিন্তু পর্ণা আর আমি সম্পূর্ণ আলাদা। দুজনেই সুন্দর তবে চেহারার কোনো মিল নেই। অনেকেই বলে আমার থেকে নাকি পর্ণাকে বড় লাগে। আসলেই তাই। ভালো স্বাস্থের অধিকারী হওয়ায়, পর্ণাকে একটু বেশিই ভালো লাগতো।

,,এই অর্ণা!এখানে কি করছিস? ঐদিকে তো পর্ণাকে সাজাতে হবে নাকি।চল তাড়াতাড়ি। বরপক্ষ তাড়াহুড়ো করছে। বলছে এখনো সাজানো হয়নি কেন?
মেঝো ফুফুর ডাকে ধ্যান ভা ঙে আমার।
আড়ালে চোখের পানি গুলো মুছে ওঠে দাঁড়ালাম। মিথ্যা হাসির হেসে বললাম,
,হ্যাঁ চলো ফুপি।
,একি তোর চোখ ওমন লাল হয়ে আছে কেন?কান্না করছিলি বুঝি?কেন রে মা বল আমাকে। কী হয়েছে তোর?
আমি ভড়কে গেলাম। কোনভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
,নাহ ফুপি তেমন কিছু না। পর্ণার জন্য মন খা রা প হচ্ছিল। তাই,,
ফুপির মন গলে গেল । জড়িয়ে ধরে বলল,
,মন খা রা প করিস না পাখি। মেয়েদের জন্মই হয় পড়ের ঘরে যাবার জন্য। এটাই জগৎের নিয়ম।আমরা তো চেয়েছিলাম আগে তোর বিয়ে দেব তারপর পর্ণার।কিন্তু মেয়েটা তো আর সেই সুযোগ দিল না। আর এদিকে তুইও লেখাপড়া করবি। যাকগে ওসব কথা বাদ দে এখন চল তাড়াতাড়ি।
এই বলে ফুপি আমার হাত ধরে নিচে নিয়ে গেল।
পর্ণার রুমে ঢুকতেই। সে আমার দিকে তাকিয়ে পৈশাচিক একটা হাসি দিল। তারপর মিছে কান্নার অভিনয় করে বলল,
,কোথায় ছিলি অর্ণা? আমি তোকে সেই কখন থেকে খুঁজছি জানিস। তোর জন্য আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি চলে গেলে তুই একা থাকবি কিভাবে?
এই বলে পর্ণা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ফিসফিস করে বলল,
,কেমন চমক দিলাম মিস অর্ণা আহমেদ। তুই কি ভেবেছিলি। আমি তোর আর আদনানের বিয়ের জন্য বাবাকে বলছিলাম। মূর্খ মেয়ে। তুই যে আদনানকে পছন্দ করিস। তা আমি আগে থেকে জানি।আর তুই তো জানিস। তোর পছন্দের জিনিস কেড়ে নেয়া। আমার অন্যতম শখ। তাই বেহায়ার মতো বাবাকে নিজের বিয়ের কথা বলেছি।হুহ্ কেমন লাগছে এখন? বুঝবি এখন কষ্ট কাকে বলে।সবসময় ভালো রেজাল্ট করে। ভালো কাজ করে বাবা-মা ফুফু কাকাদের মধ্য মণি হয়ে থাকতি।তোর জন্য কেউ আমাকে ভালবাসতো না সবাই আমাকে গাল মন্দ করতো।সবকিছু আমি চুপচাপ স হ্য করেছি। শুধু আজকের জন্য। আজ থেকে তোর সব সুখ আমি কেড়ে নিলাম অর্ণা। আজ থেকে তুই বুঝবি ভালবাসা না পাওয়ার কষ্ট কী!
পর্ণার কথা শুনা মাত্র আমার মনে হলো আশেপাশে কোথাও হয়তো বা জ পড়েছে। অবাক চোখে তার দিকে তাকালাম। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম। একটা কথায় শুধু মাথায় ঘুরছিল।কেউ কি করে এতটা বিশ্বাস ঘা ত ক হতো পারে।
,এই মেয়েরা কি করছিস তোরা? হ্যাঁ। ঐদিকে যে তাড়া দিচ্ছে। এই অর্ণা ওকে তাড়াতাড়ি সাজিয়ে দে তো। অনেক হয়েছে দু বোনের কান্নাকাটি। এবার থাম্।
বলেই ফুপি তাড়া দিল।পর্ণা আমার হাত ধরে নিয়ে খাটে বসালো। তারপর আমার দিকে ঝুঁকে কানে,কানে বলল,
,ভালো করে সাজাবি আমাকে অর্ণা।যেন আদনান আমার থেকে চোখ ফেরাতে না পাড়ে। আর যদি খা রা প হয়। তাহলে আমি সবাইকে বলব যে,তোর আগে আমার বিয়ে হচ্ছে বলে তুই হি ং সা করছিস।
আমার যেন আজ অবাক হওয়ার পালা। নিজের আপন বোন যে এতো খা রা প হতে পারে তা জানা ছিল না।কি না করেছি ওর জন্য। এতদিন এসব গল্পে শুনে এসেছি। কিন্তু আজ স চোখে দেখলাম।

শখের বশে পার্লারের কাজ শিখেছিলাম। হাত ও বেশ ভালো ছিল।তাই পর্ণা না করেছে পার্লারের লোক আনতে।ভেবেছিলাম আমার হাতে সাজার ইচ্ছে বুঝি ওর। কিন্তু এখন বুঝলাম কেন এই আবদার।আমি মুচকি হেসে সাজানো শুরু করলাম। নিজের সর্বোচ্চ টা দিয়ে পর্ণাকে সাজিয়ে দিলাম।সত্যি আজ পর্ণাকে দারুণ লাগছে। চোখ ফেরানো যাবে না এমন সুন্দর।

বিয়ে পড়ানো শেষ। এখন বিদায় পালা। পর্ণাকে সাজিয়ে সেই যে আমি আমার রুমে এসেছি। আর বের হয়নি। চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে। এ য ন্ত্র ণা স হ্য করার ক্ষ মতা আমার নেই। যাকে এতদিন ভালোবেসে এলাম। সে আজ অন্য কারো হয়ে গেছে। কই আদনান স্যার তো এমন ছিল না। আমি যখন তার চোখে চোখ রাখতাম। তার চোখ তো অন্য কথা বলতো। মেয়েদেরকে কেউ যদি ভালবাসে। তবে তারা নাকি বুঝতে পারে। তবে কী আমার বুঝার মধ্যে ভু ল হয়েছে।
,এই অর্ণা। কই তুই? দরজা খোল।পর্ণাকে ওরা গাড়িতে তুলছে। মেয়েটা দেখতে চাইছে তোকে!

#চলবে,,,
#আমায়_একটু_ভালবেসো
#জান্নাতুল_ফেরদৌস_কেয়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here