তুমি হৃদয়ে লুকানো প্রেম পর্ব ৪২+৪৩+৪৪

#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪২

” কাছে এসো দুয়া। আমি যে তোমায় ছুঁতে অপারগ। ”

আকুলতা মিশ্রিত বাক্য নিঃসৃত হলো মানুষটির কণ্ঠনালী হতে। তা কর্ণপাত হতেই আবেগী হয়ে পড়লো দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা রমণী। ডান হাতে খামচে ধরলো দ্বার। অক্ষিকোল গড়িয়ে পড়লো তপ্ত কণা। তূর্ণ তৃষ্ণার্ত চাহনিতে তাকিয়ে। চোখের ইশারায় জানাচ্ছে কাছের আসার আকুল আহ্বান! একটুখানি সান্নিধ্য, ছুঁয়ে দেয়ার লো.ভে ম রি য়া চিত্ত। আস্তে আস্তে বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে কাছে আসার আহ্বান করলো মানুষটি। আবেগপ্রবণ দুয়া সে আহ্বান ফেলতে পারলো না। মন্থর গতিতে কদম ফেলে এগোতে লাগলো তূর্ণ’র পানে। প্রতিটি কদমে প্রসারিত হতে লাগলো মানুষটির অধর। চোখেমুখে ফুটে উঠলো তৃপ্তিকর আভা। দুয়া এসে দাঁড়ালো শিয়রে। তূর্ণ শিশুসুলভ উচ্ছাস প্রকাশ করে তার বাঁ পার্শ্বে বসতে বললো। সম্মোহিত হয়ে সেথায় বসলো দুয়া। তাকিয়ে রইল একান্ত জনের পানে। তার আহত অবস্থা, ক্ষত, চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। সবটাই অবলোকন করতে লাগলো। হঠাৎ ধ্যান ভঙ্গ হলো। মানুষটির বাঁ হাতে বন্দী তার কোমল হাতটি। তূর্ণ ওর নয়নে নয়ন রেখে ক্ষীণ স্বরে থেমে থেমে বললো,

” খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলাম? ”

মাথা নাড়িয়ে ইতিবাচক সম্মতি জানালো মেয়েটি। কপোল ছুঁয়ে গড়িয়ে পড়লো অশ্রু বিন্দু। তূর্ণ ওর মুঠোবন্দী হাতে আলতো চাপ প্রয়োগ করে বললো,

” আলহামদুলিল্লাহ্ এখন সব ঠিক আছে। ভয়ের কোনো কা কারণ নেই। ”

ভাঙা স্বরে মেয়েটি বলে উঠলো,

” খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে। এমনটা কেউ করে? একটু সাবধানে গাড়ি চালাবে তো। তুমি জানো না তোমার কিছু হলে আমরা.. ”

আর বলা হলো না। কণ্ঠনালী বুঝি অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। শব্দমালা সেথায় রুদ্ধ। শুকনো ঢোক গিলতে লাগলো দুয়া। জিভে সিক্ত করলো ওষ্ঠাধর। তূর্ণ ওর হাতের উল্টো পিঠে বৃদ্ধাঙ্গুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে বললো,

” কাঁদে না দুয়া। ”

ছোট্ট এই বাক্যে ধৈর্য্যের সমস্ত বাঁধ ভেঙে চু.রমার হলো। আহত মানুষটির বক্ষস্থলে ঝাঁপিয়ে পড়লো দুঃখ ভারাক্রান্ত রমণী। দু হাতে আঁকড়ে ধরলো একান্ত জনকে। তার বুকে মুখ লুকিয়ে হুঁ হুঁ করে কাঁদতে লাগলো। একদিকে বুকের ওপর অর্ধাঙ্গিনীর ভার, অন্যদিকে ক্ষতস্থানে চিনচিন ব্যথা। দুই মিলিয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করলো তূর্ণ। দুয়া’র ক্রন্দন ধ্বনিতে নি.ষ্ঠুর রূপে কর্তন হতে লাগলো তার প্রেমী চিত্ত। তর্জন- গর্জন করে উঠলো অশান্ত হৃদয়। তূর্ণ আস্তে আস্তে দুর্বল ডান হাতটি বিছানা হতে উঁচু করলো। রাখলো মাইরা’র পৃষ্ঠে। সেথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। প্রয়াস চালিয়ে গেল শান্ত করার। দৃষ্টি নিবদ্ধ তার সফেদ সিলিংয়ে। কিছু প্রহর সেভাবেই অতিবাহিত হলো। ক্ষণিকের যাতনা ভুলে মুখ তুলে তাকালো মেয়েটি। ক্রন্দনে লালিমায় মাখা চেহারা। ফুলো নেত্র। কম্পনরত ওষ্ঠাধর। নে শা ধরে যাচ্ছে তনুমনে। দুয়াও অপলক চাহনিতে তাকিয়ে। চোখে চোখ রেখে কিছু মুহূর্ত কাটলো। দুঃখিনী মেয়েটি স্বল্প একটু ঝুঁকে গেল স্বামীর পানে। ডান হাতটি রাখলো খরশান কপোলে। আলতো করে ওষ্ঠ স্পর্শ করলো ললাটে। শুভ্র ব্যান্ডেজের উপরিভাগে। চক্ষু বন্ধ করে প্রিয়তমার ছোঁয়া উপভোগ করতে লাগলো তূর্ণ। ললাট পেরিয়ে ওষ্ঠ নেমে এলো নিম্ন দিকে। দু চোখের পাতা, নাকের ডগা কোমল ওষ্ঠের ছোঁয়ায় আবেশিত হলো। অতঃপর এলো সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত। একান্ত মানুষটির ওষ্ঠে কোমল ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো দুয়া। আলতো সে স্পর্শ। তেমনিভাবে ক্রন্দনে ভেঙে পড়লো মেয়েটির কোমল হৃদয়। দিশেহারা তূর্ণ দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে কোমলতম ওষ্ঠ প্রগাঢ় রূপে আয়ত্ত্ব করে নিলো। শুষে নিতে লাগলো সবটুকু দুঃখ, যাতনা, ক্লেশ! দু’জনের চোখেই নোনাজলের অস্তিত্ব বিদ্যমান। সে এক হৃদয়ছোঁয়া মুহূর্ত!

তূর্ণ বিছানায় শুয়ে। বদ্ধ আঁখি পল্লব। কেবিনে উপস্থিত ওর বন্ধুমহল। টগর বন্ধুর নীরবতায় বিরক্ত হয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্রুপের স্বরে বলে উঠলো,

” কি মিয়া? এতবছর ধরে গাড়ি চালাও। এরপরও ব্রেক কষতে শিখলা না? ধুরুম ধারুম আরেক গাড়ির লগে চু*ম্মা খাইলা? ”

চোখ মেলে তাকালো তূর্ণ। মৃদু স্বরে বললো,

” উল্টোপাল্টা কি বলছিস? যা বলেছিস নিজে শুনছিস তো?”

” অফকোর্স শুনছি। আমি কি কানে কালা? ”

তূর্ণ চোখ বন্ধ করতে করতে বললো,

” আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণর এতটাও খারাপ দিন আসেনি যে বউকে বাদ দিয়ে গাড়িকে চু মু খেতে হবে। ”

সশব্দে হেসে উঠলো বন্ধুরা। দিবা ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে বললো,

” ফাটিয়ে দিয়েছিস গুরু। ”

রাজীব চোখ কুঁচকে তাকালো মেয়েটার দিকে। তার প্রেয়সী নামে পরিচিত মেয়েটি নিজের লোককে ছেড়ে বি.য়াইত্তা বন্ধুকে কিসি দিচ্ছে? হুয়াই? নিশাদ প্রশ্ন করলো,

” তূর্ণ? এবার বল তো ভাই। আসলে হয়েছিল টা কি? ”

” আমরাও জানতে চাই কি হয়েছিল মিস্টার আদ্রিয়ান?”

অপরিচিত কণ্ঠ শুনে সকলে তাকালো কেবিনের দরজায়। সেথায় দাঁড়িয়ে পুলিশ অফিসার। দানিশ তাদের স্বাগতম জানালো। ভেতরে প্রবেশ করলো অফিসার। মনিকা টুল ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। বসার জায়গা করে দিলো পুলিশকে। অফিসার সেখানেই বসলো। তূর্ণ’র অবস্থা একবার অবলোকন করে বললো,

” কেমন আছেন এখন? ”

” আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। ” ক্ষীণ স্বরে জবাব দিলো তূর্ণ।

” গুড। আপনার জবানবন্দি নিতে চলে এলাম। আফটার অল অ্যাক্সিডেন্ট কেস। ”

মনিকা বন্ধুকে প্রশ্ন করলো,

” তূর্ণ! সব বলতে পারবি তো? প্রবলেম হচ্ছে? ”

” আ’ম ফাইন মনি। ”

স্বস্তি পেল বন্ধুরা। অফিসার এবার জিজ্ঞেস করলো,

” তো মিস্টার আদ্রিয়ান। এবার বলুন গতকাল রাতে ঠিক কি হয়েছিল? ”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে তূর্ণ থেমে থেমে ক্ষীণ স্বরে বলতে লাগলো,

” গতকাল কিছু পারিবারিক কারণে গাজীপুর গিয়েছিলাম। মামা বাড়িতে। কাজ শেষ করে রাতের বেলা ফিরছিলাম। আমি নিজেই ড্রাইভ করছিলাম। ঢাকায় চলে এসেছি। মহাসড়ক। বড় বড় যানবাহন চলাচল করছে। আমি যথেষ্ট সাবধান ছিলাম। হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না। উল্টো দিক থেকে ধেয়ে এলো একটা মালবাহী ট্রাক। কেমন দৈ-ত্যকায় ভঙ্গিতে ছুটে এলো। ড্রাইভার ম.দ্যপ ছিল বোধহয়। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই অতর্কিত ভাবে আঘাত করে বসলো। মুহুর্তের মধ্যেই… ”

থামলো তূর্ণ। গণ্ডস্থল শুকিয়ে কাঠ। দিবা পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো। আস্তে ধীরে পানি পান করলো তূর্ণ। অফিসার বললো,

” কোথায় কোথায় আঘাত পেয়েছেন? শুধু মাথা আর পায়েই? ”

” হাঁ। স্টিয়ারিংয়ে মাথায় আঘাত লেগেছিল। আর গাড়িতে আঘাত লাগায় আমি ভারসাম্য রাখতে পারিনি। পা এবং কোমরে প্রচুর চাপ পড়েছিল। তাই এই অবস্থা। ”

” হুম বুঝলাম। তো মিস্টার আদ্রিয়ান আপনার কি মনে হয়? এটা সাধারণ কোনো অ্যা.ক্সিডেন্ট নাকি প্রি প্লানড্? আপনার কোনো শ ত্রু আছে যে আপনাকে মা`রতে চায়? কিংবা ক্ষতি চায়? ”

তূর্ণ বন্ধুদের দিকে একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো অফিসারের পানে।

” না। এমন কেউ নেই। ”

নিশাদ বললো,

” অফিসার আমাদের জানামতে তূর্ণ’র কোনো এমন শত্রু নেই যে ওর প্রা*ণনাশের কারণ হতে পারে। আই থিংক ওই ড্রাইভার ড্রাঙ্ক ছিল। তাই আমাদের বন্ধুর এই দুরবস্থা। ”

দাঁতে দাঁত চেপে শেষোক্ত কথাটা বললো নিশাদ। অফিসার বললো,

” তাই হবে হয়তো। আমরা ইনভেস্টিগেশন চালিয়ে যাচ্ছি। তবে গাড়ির নম্বর প্লেট ব্যতিত খুঁজে পাওয়া কিছুটা মুশকিল হয়ে যাবে বটে। রাতের বেলা। ব্যস্ত সড়ক। কেউই নম্বর প্লেট দেখেনি। দেখার আগেই ট্রাক পালিয়ে গেছে। ”

দানিশ তূর্ণর দিকে তাকিয়ে বললো,

” ভাগ্যিস ওখানকার লোকেরা সময়মতো ওকে উদ্ধার করে হসপিটালে এনেছিল। নাহলে কি যে হতো! ”

অতঃপর অফিসারের দিকে তাকিয়ে বললো,

” অফিসার যে করেই হোক ওই ম*দখোরকে অ্যারেস্ট করুন। ওকে ছেড়ে দেবেন না। ”

” উই আর গিভিং আওয়ার বেস্ট। নিশ্চয়ই অপরাধী ধরা পড়বে। ”

” থ্যাংকস অফিসার। ” কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো নিশাদ।

অফিসার উঠে দাঁড়ালো। তূর্ণ’কে বললো,

” তো মিস্টার আদ্রিয়ান। আজ তাহলে আসছি। সাবধানে থাকবেন। টেক কেয়ার। ”

তূর্ণ মাথা নাড়িয়ে সালাম দিলো। সালামের জবাব দিয়ে বেরিয়ে গেল অফিসার এবং তার সঙ্গী। মনিকা তূর্ণ’কে জিজ্ঞেস করলো,

” আর ইয়্যু ওকে? ”

তূর্ণ মাথা নাড়লো। স্বস্তি পেল বন্ধুমহল।

আধিঁয়ার রজনী। হসপিটাল লবিতে দাঁড়িয়ে দুয়া, নাজমুল সাহেব, নিজাম সাহেব, তানজিনা, তৃষা এবং নিশাদ। দুয়া সকলের উদ্দেশ্যে বললো,

” অনেক রাত হয়েছে। তোমরা তাহলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হও। ”

নিজাম সাহেব বললেন,

” হাঁ। তোরা বাড়ি যা। আমি থেকে যাচ্ছি। ”

দুয়া আপত্তি জানালো।

” না বাবা। তুমিও বাড়ি যাও। খুব ক্লান্ত। রেস্টের প্রয়োজন। আজ আমি থাকবো। ”

নাজমুল সাহেব বললেন,

” না মা। তুইও বাড়ি যা। সারাদিন তোর ওপর কম ধকল যায়নি। বিশ্রাম দরকার। ”

নিজাম সাহেবের দিকে তাকিয়ে,

” ভাইয়া তোমরা সবাই যাও। আমি থাকছি আজ। ”

দুয়া অনুরোধের স্বরে বললো,

” চাচু প্লিজ। আজ আমি থাকতে চাই। আমায় দয়া করে যেতে বলো না। বাড়িতে মন টিকবে না। ছটফটানি হবে।”

নাজমুল সাহেব বড় শ্বাস ফেললেন। উনি বুঝতে পারলেন মেয়েটার অবস্থা।

” ঠিক আছে। তোকে যেতে হবে না। আমিও নাহয় থাকছি। একা একটা মেয়েকে ছাড়া ঠিক হবে না। তোমরা তাহলে যাও। আমি আর দুয়া মা থাকছি। ”

নিজাম সাহেব কিছু বলার পূর্বেই শোনা গেল মনিকার কণ্ঠ। সে ওদের মাঝে উপস্থিত হলো। বললো,

” আংকেল তুমি নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে পারো। আমি আছি এখানে। কোনো অসুবিধা হবে না। ”

কিইবা করার? সবার কথামতো ওরা সেথা হতে প্রস্থান করলো। রয়ে গেল শুধু দুয়া, নাজমুল সাহেব এবং মনিকা।

ঘড়ির কাঁটা তখন একের ঘরে। ওয়েটিং জোনে হেলান দিয়ে বসে নাজমুল সাহেব। হাসপাতালে উনি সহসা আসতে চান না। এখানে যে ওনার পুরনো দুঃস্মৃতি রয়েছে। যা ওনাকে সর্বদা তাড়া করে বেড়ায়। এই হাসপাতালেই তো উনি ওনার প্রিয়তমা স্ত্রীকে হারিয়েছেন। নিশির বয়স তখন মাত্র ছয়। ব্রেন টিউমারের বি-ধ্বংসী রূপে ইন্তেকাল করলেন ওনার মিসেস। সেদিন এই হাসপাতালেই ওনার চোখের সামনে সবটা শেষ হয়ে গেছিল। মাতৃহারা হলো শিশু নিশি। উনি হলেন বিপত্নীক। সেই ঘটনার পর কতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে। চাচির মাতৃছায়ায় বড় হতে লাগলো নিশি। উনিও ব্যবসায়িক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শুরু করলেন। ভুলে যেতে চাইলেন পুরনো সকল দুঃস্মৃতি। নিশি একসময় হয়ে উঠলো তূর্ণ, তৃষার আপন সহোদরা। তাসলিমা এবং নিজাম সাহেব সর্বদা ওকে নিজের সন্তানের মতো স্নেহ করেছে। অনেকে তো এক দেখায় ধরেই নিতো নিশি তূর্ণ’র আপন বোন। কেউ কেউ আবার কু মানসিকতা অধিকারী। ওদের পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতো। যদিওবা তাতে ওদের কিচ্ছুটি এসে যায় না। ওরা তো জানে ওদের মন কলুষিত নয়। ওরা ভাই-বোন। তবে কেন অন্যের কুরুচিকর মন্তব্যে হবে দুঃখবোধ? পুরনো কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নাজমুল সাহেব। আজো বড্ড মনে পড়ে প্রিয়তমাকে।

সফেদ বিছানায় নিদ্রায় শায়িত তূর্ণ। তার পাশে টুলে বসে দুয়া। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মানুষটির পানে। যার দুষ্টু হাসিতে ছ’লকে উঠতো হৃদয়, চোখের চাহনিতে লাজে রাঙা হতো মুখশ্রী আজ সে মানুষটি হাসপাতালে শয্যাশায়ী। অসুস্থ। মলিন হয়ে উঠেছে গৌর বদন। যত্রতত্র ক্ষত। তা দেখতেই কোমল হৃদয় কেঁদে ওঠে। দিশেহারা হয়ে ওঠে অন্তঃস্থল। কোনোমতে নিজেকে ধাতস্থ করে নিলো দুয়া। পেলব হাতের মুঠোয় ভরে নিলো একান্ত সঙ্গীর হাতটি। আলতো করে হাতের পিঠে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো। অস্ফুট স্বরে বললো,

” দ্রুত সুস্থ হয়ে তোমার মাইরা’র কাছে ফিরে এসো প্রিয়। ”

চলবে.#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪৩

” উঁহু। খেতে ইচ্ছে করছে না। এগুলো নিয়ে যাও। ”

বালিশে হেলান দিয়ে বসে অসুস্থ মানব। বারবার নাকোচ করছে খাদ্য। বিপরীতে বসে থাকা রমণী তাতে মোটেও বিরক্ত হলো না। বরং আদুরে কণ্ঠে বললো,

” না খেলে কি করে চলবে? হুঁ? ওষুধ খেতে হবে তো। ”

শিশুসুলভ আচরণ করে মানুষটি বললো,

” তেঁতো লাগে সব। খাবো না। এগুলো সরাও। দেখতেই বমি ভাব হচ্ছে। ”

দুয়া ভেজিটেবল স্যুপে চামচ নাড়াতে নাড়াতে বললো,

” আমি খাইয়ে দিলেও খাবে না? ”

বলে তাকালো মানুষটির পানে। মুচকি হাসলো। বেচারা এখন কনফিউজড। বুঝতে পারছে না কি করবে। এমন সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করবে নাকি লুফে নেবে? হুঁ? দুয়া মিটিমিটি হেসে বলল,

” কি? খাবে না? ”

” পকপক না করে দে। ওই নিমপাতার ওষুধ খেতে হবে তো। ”

দুয়া’র পেট ফাঁটা হাসি পাচ্ছে। মানুষটাকে এত কিউট লাগছে যে আদর করে গাল টিপে দিতে ইচ্ছে করছে। বেচারা ভাঙবে তবু মচকাবে না। ঢঙ! দুয়া হাসি চেপে চামচে স্যুপ নিলো। বাড়িয়ে দিলো মুখের কাছে। তূর্ণ ওর দিকে অসন্তুষ্ট চোখে তাকিয়ে স্যুপ মুখে নিলো। ইশ্! তেঁতো স্বাদে মুখের অবস্থা করুণ। ওষুধ খেয়ে সবই এখন বিস্বাদ লাগছে। দুয়া দ্বিতীয় চামচ এগিয়ে দিলে তূর্ণ মুখে নিলো‌। ওর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,

” তুই খেয়েছিস? ”

” হুঁ? না। তোমাকে খাইয়ে তারপর খাবো। ”

” কেন? কোন সংবিধানে লেখা আছে অসুস্থ বরের আগে খাওয়া যাবে না? ”

দুয়া মৃদু হেসে বলল,

” জাহিরাহ্ দুয়া’র সংবিধানে লেখা আছে। ”

” যতসব ফালতু দরবার। দু’দিন ধরে হসপিটালে পড়ে আছিস। নিজের খেয়াল না রাখলে তোকেও যে এখানে ভর্তি করা লাগবে। সে খেয়াল আছে? ”

” সমস্যা কোথায়? মিয়া-বিবি একসাথে থাকবো। একে অপরের খেয়াল রাখবো। ”

স্যুপ মুখে নিয়ে তূর্ণ বললো,

” ইশ্! শখ কত। এটা তো হসপিটাল নয় যেন পার্সোনাল ফ্লাট। প্রেম প্রেম ভাব পাচ্ছে বুঝি? ”

আর’ক্ত আভা ছড়িয়ে পড়লো মেয়েটির মায়াবী মুখশ্রীতে। মিহি স্বরে বললো,

” আমি তোমার মতো বেশরম নই যে সবসময় উল্টোপাল্টা চিন্তা করবো। ”

তূর্ণ মুহূর্তের মধ্যেই ওর বাঁ হাতটি ধরে টান দিলো। অতর্কিত টানে কিছুটা এগিয়ে গেল দুয়া। তাকিয়ে রইল অবাক চোখে। স্যুপ পড়তে গিয়েও পড়েনি। ইশ্! তূর্ণ ওর মুখপানে মুখ এগিয়ে নয়নে নয়ন মিলিয়ে দৃঢ় স্বরে বললো,

” উল্টোপাল্টা চিন্তা কাকে বলছিস? এমনিতেই আমি বহুত লেট করে ফেলেছি। আমার বাবুসোনারা দুনিয়াতে আসার জন্য ছটফট ছটফট করছে। বি.দ্রোহ ঘোষণা করছে। সেখানে তুই কিনা ওদেরকে আরো লেট করাতে চাস? ভেরি ব্যাড মিসেস। ওরা এসে তোকে কিন্তু দোষারোপ করবে। বিলম্বে আনার জন্য মামলাও করতে পারে। ”

” হা? ”

স্তব্ধ তূর্ণ’র বাবুসোনাদের মা জননী! ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে এমন গাঁ*জাখুরি চিন্তাভাবনা শুনে। তূর্ণ মুচকি হেসে টুপ করে সুডৌল নাকে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো। বললো,

” কি হলো আমার না হওয়া বাবুদের মা জননী? খাইয়ে দিন। পতী সেবা করুন। বাবুরা তখন আপনাকে ক্ষমা করলে করতেও পারে। পাপার মুখ চেয়ে। এখন তাড়াতাড়ি খাইয়ে দিন। দিন। ”

দুয়া’র মাথায় হাত। পা.গলাটে লোকটা মাথায় আঘাত পেয়ে আরো পা গ ল হয়ে গেল বুঝি।

শূন্য লবি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল তৃষা। হঠাৎ বেজে উঠলো মোবাইল। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো বিশাল কলিং। তৃষা দুষ্টু হেসে স্টিলের আসনে বসে পড়লো। কল রিসিভ করে লম্বা চওড়া সালাম দিয়ে বললো,

” হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। কারে চাই? ”

ওপাশ থেকেও সালামের লম্বা জবাব এলো,

” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। তৃষের জমজ বোনরে চাই। দেওয়া যাবে একটু? ”

” জমজ বোন! বাহ্! তা নাম কি তার? তৃষা তো অজ্ঞাত তার এই লুকানো জমজ বোন সম্পর্কে। ”

বিশাল দুষ্টুমি অব্যাহত রেখে বললো,

” জানবে কি করে? বোন যে শৈশবে মেলায় হারিয়ে গেছে। বহু বছর পর আরেক মেলায় আমার সাথে দেখা। তারপর প্রেম। এরপর বিয়া। ”

” শ*তান ছ্যা ম ড়া। ফালতু ক্যা চা ল বন্ধ কর। ফোন করছিস কেন বল। ”

” আরে তোর বেবি রূপী ভাবির জন্য ফোন করছি। ”

” মানে? দুয়ারে ক্যান চাই? হেতি এহন জামাই লইয়া বিজি। ”

সশব্দে হেসে উঠলো বিশাল।

” বান্ধবী আমগো ভালোই গিন্নী হয়া গেছে। পড়ালেখা ছাইড়া পতীসেবায় ব্যস্ত। ”

” তাতে তোর কি বে? মেয়েদের সবচেয়ে বড় সম্পদ জামাই। তারে বাদ দিয়া পড়ালেখা করবে বুঝি? পড়ালেখা দিয়া হবে টা কি? হুঁ? ”

” ক্যান? জানোস না? পড়ালেখা করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে।”

” আমার বাপ ভাইয়ের গাড়ি আছে। ও ফ্রি ফ্রি ই চড়তে পারবো। অ্যার জন্য পড়ালেখার দরকার নাই। বুঝছোছ? ”

” বুঝছি। ”

” কি বুঝছোছ? ক্রমানুসারে বল। ”

” এইডাই বুঝলাম যে তোর মতো ফে ল্টু ভালো জামাই পা.গলি হইবো। ”

তৃষা তৎক্ষণাৎ আপত্তি জানালো,

” ইহ্! বললেই হলো? আমি পা`গলী না বরং আমার জামাই বউ পা`গলা হবে। দেখে নিস। ”

বিশাল কিছু বলার পূর্বেই শুনতে পেল মা ডাকছে।

” ওই। মা ডাকছে। এখন রাখি। আল্লাহ্ হাফিজ। ”

টুট টুট শব্দে কেটে গেল কল। তৃষা একাকী হাসছিল। ও নাকি জামাই পা.গলী হবে! হঠাৎ থমকে গেল। কর্ণ কুহরে পৌঁছালো পুরুষালি ভারিক্কি কণ্ঠস্বর,

” তোর বর বউ পা.গলা হবে? তুই এতটা শিওর কি করে হচ্ছিস? প্রেম ট্রেম করিস নাকি? ”

চমকিত রমণী ডান পাশে তাকালো। নিশাদ বসে। ইশ্! জিভে কা.মড় বসালো মেয়েটা। এ লোকটা এখানে! সবটা শুনে নিয়েছে নাকি! ওহ্ শিট! কি না কি ভাবছে।

” কি রে? বোবা হয়ে গেলি? বল। বফ আছে বুঝি? ”

তৃষা ঘোর আপত্তি জানালো।

” জ্বি না। ”

” জ্বি। আবার না। সত্যি কোনটা? আছে কি নেই? ”

তৃষা বিরক্ত হয়ে বলল,

” আরে বাবাহ্। নেই। ”

নিশাদ হতবিহ্বল হওয়ার ভঙ্গিতে বলে উঠলো,

” বাবা! ইন্না লিল্লাহ। আগে ভাই ডাকতি। মানলাম। শেষমেষ বাবা! কেন রে তোর বাপ বুঝি বাবা ডাকতে দেয় না? ”

হতভম্ব তৃষা! মৃদু স্বরে বললো,

” আপনিও শেষমেষ ভাইয়ার টিমে যোগদান করলেন? ”

” মানে? ”

” মানে টানে ছাড়েন। ভাইয়ার মতো ত্যা ড়া কথা বলতে আসবেন না। আমি কিন্তু দুয়া নই যে ছেড়ে কথা বলবো। ”

নিশাদ ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে গেল। ফিসফিসিয়ে শুধালো,

” আচ্ছা? তাহলে কি করবি? হুঁ? ”

তৃষা মাথাটা পিছিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বললো,

” ডিরেক্ট অ্যা.কশন নেবো। ”

নিশাদ সোজা হয়ে বসে দুঃখ দুঃখ বদনে বলে উঠলো,

” ইশ্! তুই তো বড় মা`রমুখী! তোর জামাইয়ের কপালে দুঃখ আছে রে। ”

তৃষা ঢিমি স্বরে বললো,

” তাতে আপনার কি? হুঁ? নিজের চরকায় পেট্রোল দিন না। ”

নিশাদ একাকী বিড়বিড় করে উঠলো,

” আমারই তো সব। চিন্তা করবো না? ”

তৃষাও একাকী ভাবতে লাগলো,

” অ্যাক্সিডেন্ট করে মাথার তার কয়টা ছিঁড়ে গেছে মনে হয়। এর থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। ”

উঠে দাঁড়ালো তৃষা। তাতে ধ্যান ভঙ্গ হলো নিশাদের।

” কি রে কোথায় যাচ্ছিস? ”

” ভাইয়ার কাছে। ”

নিশাদ উঠে দাঁড়ালো। বললো,

” আমিও যাবো। চল। ”

” আমি একাই যেতে পারবো। সঙ্গী দরকার নেই। ”

প্রস্থান করলো তৃষা। নিশাদ একাকী বলে উঠলো,

” বহুত বে দ্দ প আছে। হবু জানের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে? বিয়ের পর এটাকে ট্রেনিং দিয়ে রোমান্টিক বউ বানাতে হবে। আমার হয়েছে যত জ্বা লা। ”

তূর্ণ হসপিটালে থাকলো এক সপ্তাহ। পরিবারের সদস্যরা খুব করে ওর খেয়াল রাখলো। পালাক্রমে সেবাযত্ন করলো। ওপর ওয়ালার অশেষ রহমতে তূর্ণ এখন আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। অবশেষে আজ ডিসচার্জ করা হলো মশাইকে। মাথায় এবং পায়ের গোড়ালিতে ব্যান্ডেজ মোড়ানো। একান্ত সঙ্গিনীর কাঁধ জড়িয়ে হাত। আস্তে ধীরে সাবধানতা অবলম্বন করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে এলো তূর্ণ, দুয়া। নিশাদ গাড়ির কাছে দাঁড়িয়ে। ওদের দেখে এগিয়ে এলো। বন্ধুর আরেক হাত ধরে আস্তে ধীরে হেঁটে গাড়ির কাছে পৌঁছালো। উন্মুক্ত করে দিলো গাড়ির দ্বার। দুয়া’র সহায়তায় পেছনের সিটে আসন গ্রহণ করলো তূর্ণ। দুয়া ওপাশের দ্বার উন্মুক্ত করে তার ডান পাশে বসলো। তূর্ণ’র সাইডের দ্বার বন্ধ করে দিলো নিশাদ। বসলো ড্রাইভারের পাশের সিটে। চলতে আরম্ভ করলো গাড়ি। দুয়া স্বামীর পানে তাকালো। মিহি স্বরে শুধালো,

” খারাপ লাগছে? ”

তূর্ণ কিচ্ছুটি বললো না। নিভৃতে আলতো করে মাথা এলিয়ে দিলো সঙ্গিনীর কাঁধে। দুয়া সযত্নে তাকে আগলে নিলো। কাঁধে মাথাটা ভালোমতো রেখে মানুষটির ডান হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে গুঁজে দিলো তার চিকন কোমল বাঁ হাতের আঙ্গুল। কখনো কখনো ডান হাত বুলিয়ে চলেছে মাথায়। নিশাদ তা রিয়ার ভিউ মিররে লক্ষ্য করে তৃপ্তিময় হাসলো। ভালোবাসা আসলেই সুন্দর! হৃদয়ছোঁয়া!
.

তূর্ণ বাড়ি ফিরলো সপ্তাহ শেষে। মূল দ্বারে দাঁড়িয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লেন তাসলিমা। ছেলেকে যতন করে আগলে নিলেন। এঁকে দিলেন স্নেহের বেশকিছু চুম্বন। তূর্ণ তৃপ্তিময় হাসলো। মা ও সহধর্মিণীর সহায়তায় ধীরপায়ে হেঁটে সোফায় বসলো সে। তানজিনা ট্রে’তে শরবতের গ্লাস নিয়ে হাজির হলো। তাসলিমা ছেলের পানে গ্লাস এগিয়ে দিলেন।

” এই নাও আব্বা। শরবতটা খাও। ভালো লাগবে। ”

তাসলিমা গ্লাস ধরে রাখলেন। তৃপ্তির সহিত শরবত পান করলো তূর্ণ। নিজাম সাহেব উদগ্রীব হয়ে প্রশ্ন করলেন,

” তুমি ঠিক আছো তো বাবা? ক্লান্ত লাগছে? রুমে যাবে? ”

তূর্ণ মৃদু স্বরে বললো,

” ঠিক আছি আব্বু। এখানে একটু বসি। ”

কতদিন বাদে গাড়িতে ভ্রমণ। শরীরটা বড্ড ক্লান্ত। তবুও পরিবারের সান্নিধ্য লাভের আশায় এখানেই রয়ে গেল সে। খালামণি, মামা সবাই সপরিবারে হাজির হয়েছে। কেমন আনন্দের বিষয়! তবে সকলেই আজ চিন্তিত। কেউ খুশি উদযাপন করতে আসেনি। তাদের চোখেমুখে চিন্তার স্পষ্ট ছাপ। লিভিং রুমে কিছুটা সময় কাটিয়ে মা ও সঙ্গিনীর সহায়তায় নিচতলায় তাদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষে প্রবেশ করলো তূর্ণ। পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া অবধি দোতলায় যাওয়া নিষেধ। সিঁড়ি ভাঙা অনুচিত। তাই সাময়িক সময়ের জন্য নিচতলায় স্থানান্তরিত হলো।

হিমাংশু’র দ্যুতি ছড়িয়ে ধরনীর বুকে। বিছানায় শুয়ে তূর্ণ। অলস সময় কাটছে। বিরক্তিতে ছেয়ে তনুমন। উশখুশ উশখুশ করছে। খানিক বাদে খট করে শব্দ হলো। উন্মুক্ত হলো ওয়াশরুমের দ্বার। বেরিয়ে এলো দুয়া। চমকিত মানব তাকিয়ে রইল সেথায়। দুয়া’র পড়নে সফেদ সালোয়ার কামিজ। চোখেমুখে, গলদেশে বিন্দু বিন্দু জলের অস্তিত্ব। চুলের অগ্রভাগ কিঞ্চিৎ সিক্ত। একদম সতেজ, আকর্ষণীয় লাগছে দেখতে! শুকিয়ে আসছে গণ্ডস্থল। বেসামাল হচ্ছে পৌরুষ চিত্ত। একটুখানি ছুঁয়ে দেয়ার আকাঙ্ক্ষা জেঁকে বসেছে প্রবল রূপে। তবে এ মুহূর্তে তা সমীচিন নয়। আস্তে ধীরে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো তূর্ণ। দুয়া দাঁড়ালো সমতল আরশির সম্মুখে। চুলে আলতো করে তোয়ালে চালনা করলো। চোখেমুখে, গলদেশে ছুঁয়ে গেল তোয়ালে। মুছে নিলো সবটুকু জল। অতঃপর রাত্রিকালীন ত্বকের পরিচর্যা সেরে পিছু ঘুরে তাকালো দুয়া। স্বামীর চোখে চোখ পড়তেই মুচকি হাসলো। তাতে আরো সম্মোহিত হলো মানুষটি। বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করে রাখার প্রয়াস চালিয়ে গেল। কক্ষের আলো নিভিয়ে বিছানার পানে এগিয়ে গেল দুয়া। বসলো অর্ধাঙ্গের ডান পাশে। জাগ্রত মানুষটির পানে কিঞ্চিৎ ঝুঁকে ললাটে ওষ্ঠ চেপে ধরল। মধুর কণ্ঠে বললো,

” ঘুমিয়ে পড়ো। বিশ্রাম দরকার। ”

শয্যা গ্রহণ করলো দুয়া। ঘুমের পূর্বের দোয়া দরুদ পাঠ করতে লাগলো। স্বভাবতই অনুভব করতে লাগলো অস্বস্তি। কিছুর অনুপস্থিতি তাকে জ্বা.লিয়ে ছাড়ছে। কেমন যেন লাগছে। আকস্মিক সবটা দূরীকরণ হলো। এক পশলা শীতলতায় ছেয়ে গেল অন্তঃপুর। তাকে বলিষ্ঠ বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিয়েছে একান্ত মানুষটি। তৃপ্তির আভা ছড়িয়ে পড়লো মেয়েটির মুখে। দু’জনার স্বস্তির জন্য ডান কাত হয়ে শুলো। নিভৃতে আরেকটু ঘনিষ্ট হলো তূর্ণ। উদরে বাঁ হাতটি চেপে ধরে মুখ ডুবালো কেশে। সেভাবেই অতিবাহিত হলো কিছু মুহূর্ত। একসময় দুয়া অনুভব করতে লাগলো ঘন শ্বাস। নিদ্রায় তলিয়ে মানুষটি। মুচকি হেসে উদরে রাখা হাতের ওপর হাত রেখে চোখ বুজে নিলো দুয়া। ধীরে ধীরে সেও ঘুমিয়ে পড়লো।

চলবে.#তুমি_হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্ব_৪৪

” আরে আস্তে আস্তে। এখুনি পড়ে যাচ্ছিলে তো। সাবধান। ”

বিছানা ত্যাগ করে সাবধানী ভঙ্গিতে মেঝেতে পদযুগল ঠেকালো তূর্ণ। উদ্দেশ্য ওয়াশরুমে যাওয়া। অসুস্থ শরীরে ধীরে ধীরে কদম ফেলে হাঁটছিল। ব্যথা অনুভূত হচ্ছিল পায়ের চোটে। হঠাৎই ভারসাম্য হারিয়ে ফেললো। পড়ে যেতে গিয়েও ব্যর্থ হলো। ওর পেশীবহুল ভারী শরীরটি ঠিক আগলে নিলো দুয়া। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে উঠলো,

” আরে আস্তে আস্তে। এখুনি পড়ে যাচ্ছিলে তো। সাবধান। ”

দুয়া’র হাতে হাত রেখে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হলো তূর্ণ। দাঁড়ালো সোজা হয়ে। দুয়া ওর বাহুতে হাত রেখে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রশ্ন করলো,

” তুমি ঠিক আছো তো? কি হয়েছে? একাকী উঠলে কেন? ওয়াশরুম যাবে? ”

তূর্ণ মলিন মুখে সম্মতি জানালো। দুয়া স্বামীর হাত ধরে ওয়াশরুমের কাছে নিয়ে গেল।

” দরজা আটকাতে হবে না। ভিজিয়ে রাখো। আমি এখানেই আছি। ”

তূর্ণ কিছু বললো না। নীরবে ওয়াশরুম চলে গেল। তবে দুয়া’র কথা অমান্য করে দরজা বদ্ধ করে নিলো। তপ্ত শ্বাস ফেললো মেয়েটা। খানিক বাদে বেরিয়ে এলো তূর্ণ। দুয়া ওর হাতটি ধরে ধরে বিছানায় নিয়ে গেল। বসতে সহায়তা করলো। অর্ধাঙ্গের ম্লান মুখখানা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়লো সহধর্মিণী। বিপরীতে দিকে বসে হাত রাখলো বাঁ কপোলে। চিন্তা মিশ্রিত স্বরে শুধালো,

” কি হয়েছে তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ করছে? ”

তূর্ণ তার মাইরা’র পানে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। কিছুটা সময় নীরবে অতিবাহিত করে মৃদু স্বরে বলে উঠলো,

” সবাইকে খুব অসুবিধায় ফেলে দিয়েছি তাই না? আমার পেছনে সবাইকে পড়ে থাকতে হচ্ছে। খুঁটিনাটি সবটাই করে দিতে হচ্ছে। অসুস্থ শরীরে এতটাই অসহায় হয়ে পড়েছি যে সামান্য ওয়াশরুম অবধি একা যেতে পারছি না। দিন নেই রাত নেই সবাইকে জ্বালাতন করছি। ”

ধক করে উঠল মেয়েটির হৃদয়। তার স্বামী এসব কি বলছে? এমন অসহায়ত্ব অনুভব করছে! কবে থেকে? তাদের কারোর আচরণে কি কষ্ট পেয়েছে? দুয়া নিভৃতে আরো সান্নিধ্যে এলো। দু হাতের আঁজলায় ভরে নিলো স্বামীর মুখখানা। প্রশ্ন করলো,

” তুমি এভাবে বলছো কেন? আমরা কেউ কি তোমাকে অজান্তে আঘাত করে ফেলেছি? তাহলে ক্ষমা চাইছি। তুমি এমন করে বলো না। জ্বালাতন করবে কেন? এসব বাজে কথা বলো না। ”

” ভুল কিছু তো বলিনি। এটাই সত্যি। ”

” উঁহু। এটা তোমার ভুল ধারণা। আজ যদি তোমার জায়গায় আমি কিংবা বাড়ির অন্য কেউ থাকতো তুমি কি দেখভাল করতে না? নাকি আপনজনদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে? নার্সের ভরসায় রেখে দিতে। হুঁ? ”

তূর্ণ কিচ্ছুটি বললো না। অবনত করে নিলো দৃষ্টি। দুয়া অশ্রুসজল নয়নে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময়। অতঃপর স্বামীর বক্ষে মাথা এলিয়ে দিলো। বাঁ হাতে আঁকড়ে ধরলো পেটের দিকে টি-শার্টের একাংশ। ভেজা কণ্ঠে বলতে লাগলো,

” এভাবে মন খারাপ করে থেকো না। তুমি তো আমার অর্ধাঙ্গ। অর্ধেক অঙ্গ। আমার একান্ত আপনজন। তোমার বিপদে যদি আমি পাশে না থাকি তবে কিসের জন্য তোমার সহধর্মিণী হলাম? সহধর্মিণী শুধু সুখের নয় বরং দুঃখেরও সাথী। আমরা একে অপরের পরিপূরক প্রিয়। একে অপরের সুখদুঃখের অংশীদার। তুমি শুধু শুধু মন খারাপ করো না। বরং আল্লাহ্’র কাছে দোয়া করো। ইনশাআল্লাহ্ তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। আমার সেই পুরনো খালাতো বর ফুল ফর্মে ফিরে আসবে। ”

অজান্তেই শব্দ করে হেসে উঠলো তূর্ণ। খালাতো বর! মন্দ নয় তো। স্বামীর হাস্য ধ্বনি কর্ণ কুহরে পৌঁছাতেই স্বস্তি বোধ করলো মেয়েটি। আলতো করে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো বক্ষপটে। স্রষ্টার নিকটে প্রার্থনা করলো স্বামীর আরোগ্য। আঁখি বুজে অর্ধাঙ্গের বক্ষস্থলে আরো ভালোমতো লেপ্টে গেল। তূর্ণও দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃদু হাসার চেষ্টা করলো। নিজের সনে আগলে নিলো সঙ্গিনীকে।

ভানু’র কিরণে উজ্জ্বল বসুধা। বেডের হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে তূর্ণ। চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। হাতে শার্লক হোমসের বই। সম্পূর্ণ মনোযোগ বইয়ের পাতায়। খানিক বাদে কর্ণ কুহরে পৌঁছালো,

” ভাইয়া। আমার প্রিয় ভাইয়া। ভেতরে আসতে পারি? ”

বইয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেই তূর্ণ দুষ্টু হাসলো। বললো,

” এখানে প্রিয় নামে কেউ থাকে না। সো ডোন্ট ডিস্টার্ব।”

তৃষা পেঁচামুখী বদনে ভেতরে প্রবেশ করলো। ভাইয়ের ডান পাশে দাঁড়িয়ে প্রথমে হাতে থাকা ক্ষুদ্র বক্সটি মেঝেতে রাখলো। অতঃপর ভাইকে বলতে লাগলো,

” ভেবেছিলাম ধুরুম ধারুম বাড়ি খেয়ে ভাই আমার ভালো হয়ে গেছে‌। কিন্তু না। ভাই আমার আগের মতোই ফা.টাকেষ্ট আছে। একটুও বদলায়নি। ”

তূর্ণ হেসে ওর দিকে তাকালো।

” সরি বোন। আপনার এই ক্ষুদ্র আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে আদ্রিয়ান আয়মান তূর্ণ ভালো হতে পারেনি। আগের মতই রয়েছে। ”

” হাঁ। সে তো দেখতেই পাচ্ছি। পুরো আগের মতো আছো। দিনরাত আমার ভাবি রূপী বেবিটাকে জ্বালাতন করছো। ”

তূর্ণ বইয়ে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বললো,

” বউ আমার। তাকে জ্বালাতন করবো না সোহাগ করবো এটা সম্পূর্ণ আমার বিষয়। এখন তুই বলে ফেল হঠাৎ উদয় হলি কোথা থেকে? কি চাই? ”

তৃষা অবাক বদনে ভাইয়ের পাশে বসলো।

” তুমি এতবড় কথাটা বলতে পারলে? আমি শুধু তোমার কাছে চাইতে আসি? কখনো কিছু দিই নি? ”

তূর্ণ তাকালো। ভাবুক হয়ে শুধালো,

” দিয়েছিস? ঠিক মনে করতে পারছি না। আসলে সমুদ্রের পানিতে হঠাৎ এক ফোঁটা পানি যুক্ত হলে সে কি আর টের পাওয়া যায়? যায় না তো। ”

তৃষা ভাইয়ের বাহুতে আঘাত করতে গিয়েও দমে গেল। নেহাৎ ভাইটা অসুস্থ। নাহলে কি ল পড়তো কয়েকটা। আদুরে বোনটার শুকনো মুখ দেখে তূর্ণ ওকে ডান হাতে আলিঙ্গন করলো। মধুর কণ্ঠে বললো,

” কি হয়েছে বোন? বল। ভাইয়া শুনছি। ”

তৃষা সিক্ত কণ্ঠে বললো,

” তোমার জন্য ছোট্ট গিফট এনেছি। দেবো? ”

তূর্ণ বোনের ললাটে চুমু এঁকে দিলো। উৎসাহী কণ্ঠে বললো,

” দে। দেখি দেখি বোন আমার কি এনেছে। ”

তৃষা খুশি খুশি মেঝে হতে ক্ষুদ্র বক্সটি তুলে বিছানায় রাখলো। তূর্ণ অবাক হলো র.্যাপিং পেপারে মোড়ানো উপহার দেখে!

” এটা কি? কি আছে এতে? ”

” ওয়েট। ওয়েট। দেখাচ্ছি। ”

তৃষা আস্তে আস্তে মোড়কমুক্ত করলো উপহারটি। চোখের সামনে দৃশ্যমান হলো উপহার। বক্সে রয়েছে ‘আরিফ আজাদ’ রচিত বেশকিছু বই। তন্মধ্যে প্যারাডক্সিকাল সাজিদ, বেলা ফুরোবার আগে, প্রত্যাবর্তন অন্যতম। বোনের কাছ থেকে উপহার পেয়ে তূর্ণ অবাক! পুলকিত! তৃষা ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

” পছন্দ হয়েছে ভাইয়া? আমি জানি তুমি আরিফ আজাদের বই পছন্দ করো। সবগুলো সময়ের অভাবে কিনতে পারোনি। তাই আমি বেশ কয়েকটা কালেক্ট করেছি। তোমার অবসর সময় ভালোই কেটে যাবে। তাই না? ”

তূর্ণ বোনকে আলিঙ্গন করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

” খুব সুন্দর হয়েছে বোন। ভাইয়া ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। শুধু এতটুকু জেনে রাখ বোনের থেকে পাওয়া ছোট থেকে বড় সমস্ত উপহার ভাইদের কাছে শ্রেষ্ঠ উপহার। ”

আবেগী হয়ে পড়লো তৃষা। ভাইকে জড়িয়ে তার প্রিয় বাক্য আওড়ালো,

” আমার প্রিয় ভাইয়া। ”

অশ্রু ভেজা হাসিতে সংক্রমিত হলো দুই ভাই-বোন। দরজায় দাঁড়িয়ে এমন অসাধারণ মুহুর্তের সাক্ষী হলেন নিজাম সাহেব। ওনার অধরে তৃপ্তির ছোঁয়া।

নিশুতি রাত। ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত পরিবারের সদস্যরা। তূর্ণ’র পাশে দাঁড়িয়ে তাসলিমা। ছেলের প্লেটে নিজ হাতে খাবার পরিবেশন করে দিচ্ছেন। আজ সবটাই তূর্ণ’র পছন্দের খাবার। উনি খাবার পরিবেশন শেষে ছেলের পিঠে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলেন।

” নাও আব্বা। খেতে শুরু করো। ”

তূর্ণ মুচকি হেসে মায়ের একটি হাত আঁকড়ে ধরলো। অনুনয়ের স্বরে বললো,

” খাইয়ে দেবে আম্মু? ”

তাসলিমা কিঞ্চিৎ অবাক হলেন! কতবছর বাদে ছেলে ওনার হাতে খাওয়ার আবদার করলো? বড় হওয়ার পর তো নিজের হাতে খেতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতো। ওনার কাছে তেমন একটা আবদার করতো না। আজ এতবছর বাদে! তাসলিমার চোখে খুশির নোনাজল। উনি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালেন। শূন্য বোলে হাত ধুয়ে বসলেন ছেলের পাশের চেয়ারে। খাবার মাখিয়ে মুখের কাছে ধরলেন। তূর্ণ খুশিমনে খাবার গ্রহণ করলো। উপস্থিত সকলেই খুশি এ দৃশ্য দেখে! তাসলিমা সযত্নে ছেলেকে খাইয়ে দিতে লাগলেন। কিছুক্ষণ বাদে শোনা গেল,

” আমরা বোধহয় বানের জলে ভেসে এসেছি। তাই না তৃষ? ”

” ঠিক বলেছিস রে ভাবি। আমরা তো পর। ওনার আদরের বাবুসোনা ই সব। তাই তো চোখের সামনে অন্যকে খেতে দেখতে হচ্ছে। ”

তূর্ণ হেসে উঠলো। খাবার চিবুতে চিবুতে বললো,

” হিংসুটের দল। ”

জিভ বের করে ভেংচি কেটে দিলো দুয়া। তূর্ণ মিটিমিটি হাসছে। তাসলিমা দুই কন্যার উদ্দেশ্যে বললেন,

” অ্যাই। আমার ছেলেটা অসুস্থ। ওর খাবারে একদম নজর দিবি না।”

দুয়া বললো,

” আমাদের বয়েই গেছে তোমার বাবুসোনার খাবারে নজর দিতে। হুহ্! ”

নিজাম সাহেব বললেন,

” দুয়া মা। মন খারাপ করিস না। বাবা আছি তো। একদিন তোদেরকে আমিও মজাদার খাবার খাইয়ে দেবো। তখন এরা মা-ছেলে দেখবে আর জ্বলবে। ”

তৃষা ফিক করে হেসে উঠলো।

” পেট্রোলের আ.গুনে জ্বলবে নাকি? হি হি হি। ”

হাসিঠাট্টায় ডিনার টাইম অতিবাহিত হতে লাগলো।

দিবাবসুর দীপ্তিতে আলোকিত ধরনী। তূর্ণ লিভিং রুমে সোফায় বসে। হাতে মোবাইল। পাশে বসে ইউটিউবে মগ্ন তৃষা। সে মুহূর্তে কলিংবেল বেজে উঠল। হেল্পিং হ্যান্ড গিয়ে খুলে দিলো দ্বার। হাসিমুখে সালাম দিয়ে প্রবেশ করলো নিশাদ এবং রাজীব। তূর্ণ, তৃষা দু’জনেই ওদের খেয়াল করে খুশি হলো।

” আসসালামু আলাইকুম দোস্ত। কি অবস্থা? বাড়ি বসে অলস দিনকাল কেমন কাটছে? ”

লম্বা সালাম দিয়ে বিপরীত দিকের সোফায় বসলো রাজীব, পাশে নিশাদ। তূর্ণ মোবাইল রেখে বললো,

” এই তো আলহামদুলিল্লাহ্। তোদের কি খবর বল? ”

নিশাদ আড়চোখে তৃষার পানে তাকিয়ে বললো,

” আমরাও আছি আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো। তোর শরীর কেমন আছে এখন? ঠিকঠাক? ”

” হুঁ। ”

রাজীব তৃষার পানে তাকিয়ে বললো,

” কি ছোটবোন? কেমন আছো? ”

তৃষা হাসিমুখে জবাব দিলো,

” আমি তো অ্যাজ ইউজুয়াল আলহামদুলিল্লাহ্ ফাটাফাটি আছি।”

নিশাদ ফোঁড়ন কেটে বললো,

” খেয়েদেয়ে কাজকর্ম নেই। ভালো থাকবে না তো কি থাকবে? ”

তৃষা মুখ ফুলিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকালো। এই আশায় যে ভাই বুঝি সাপোর্ট করবে। তূর্ণ নিশাদকে বললো,

” ক্যান রে? ওর কাজকর্ম না থাকায় কারোর অসুবিধা হচ্ছে বুঝি? ”

আকস্মিক খুক খুক কেশে উঠলো নিশাদ। তূর্ণ’র অধর কোণে বাঁকা হাসি। রাজীব বন্ধুর পিঠে চাপড়ে দিতে লাগলো। তৃষা বিড়বিড় করে উঠলো,

” যক্ষ্মা রোগীর মতো খ্যাক খ্যাক করছে কেন? ”

নিশাদ তা শুনতে পেল কি? কেমন ত্যা.ছড়া নজরে তাকালো। এতক্ষণে বেচারার কাশি উড়ে গেছে। তৃষা ভাইয়ের উদ্দেশে বললো,

” ভাইয়া তোমরা কথা বলো। আমি আসছি। ”

মোবাইল হাতে উঠে দাঁড়ালো তৃষা। প্রস্থান করলো সেথা হতে। ওর যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিশাদদের হৃদয়ে বেজে উঠলো,

” যেয়ো না সাথী। ও ও ও। ”
.

তৃষা করিডোর ধরে হেঁটে যাচ্ছে। একাকী বকবক করে চলেছে,

” এই নিশাদ ভাইয়ার মধ্যে সামথিং তো অভিয়াসলি ফিশি। কেমন যেন হাবভাব করে। আমার সিক্স সেন্স তো সতর্কবার্তা দিচ্ছে। আসলেই কি তাই? ”

তৎক্ষণাৎ আঁতকে উঠলো।

” নো নো। দুয়া বেবির মতো আমিও ধ’মকা ধমকি জিন্দেগী চাই না। আমি তো একটা পা.গলাটে লাভিং বর চাই। যে হবে আমার জন্য পা গ ল। যার পা.গলামিতে পা.গলপ্রায় হবো আমি। প্রেমে পড়বো নিত্যনতুন। এমন একজনকে চাই। ”

একাকী কল্পনায় ডুবে গেল মেয়েটা। যেখানে শুধু সে এবং তার পা’গল প্রেমিক। অন্য কেউ নেই। শুধুই ভালোবাসা আর ভালোবাসা। খানিক বাদে কল্পনা ভঙ্গ হলো নিশির ডাকে। একাকী বিড়বিড় করতে করতে নিশি’র রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো মেয়েটা। ধুৎ! ভেঙে দিলো ভালোবাসাময় স্বপ্নটা। ভাল্লাগে না।

চলবে.

[ কেমন লাগলো পর্বটি? ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here