মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব -৩০+৩১+৩২

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩০
ঘন জঙল,সেখানে রয়েছে বড়ো বড়ো মেহগনি গাছ।সেই গাছের ফাঁক ফোঁকড় দিয়ে কিঞ্চিত পরিমানে রোদের আলো দেখা দিচ্ছে।পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখোরিত চারপাশ।আশেপাশে ঝোপঝাড়ে নাম না জানা হরেক রঙের ফুল ফুটে রয়েছে। এ যেন রূপকথার কোনো রাজ্যে এনে দিয়েছে অথৈকে রুদ্রিক।আর সেই রূপকথার রাজ্যে অথৈয়ের সামনে কাঠের কটেজটা হলো একটা রাজপ্রসাদ।চারদিকের এই অপার সৌন্দর্যে অথৈয়ের চোখ ধাধিয়ে যাচ্ছে।সে বাকরুদ্ধ।ঠিক কি বলবে ভেবে পাচ্ছে।সে কি এসব বাস্তবেই দেখছে।নাকি তার মনের ভ্রম।এসব ভেবে ভেবে সে হয়রান।তার অবস্থাটা হয়তো রুদ্রিক বুঝতে পারল।অথৈয়ের নরম হাতটা তার শক্তপোক্ত,নিরেট হাতের মাঝে আগলে নিলো।অতঃপর মৃদ্যু হেসে বলে,
‘ এটা তোমার স্বপ্ন না বউ।এটা তুমি বাস্তবেই দেখছ।সবটা তোমার চোখের সামনেই স্পষ্ট।’

অথৈয়ের গলা কাঁপছে। এমন সুনশান-নিস্তব্ধ জঙলের মাঝে এতো সুন্দর কাঠের কটেজ কেউ তৈরি করতে পারে ওর ভাবনার বাহিরে ছিলো।এমন না যে সে এসব দেখেনি।দেখেছে তবে তা বিভিন্ন মুভিতে।কিন্তু বাস্তবে যে এমন কিছু ও দেখতে পারবে এটা ওর ভাবনার বাহিরে ছিলো।অথৈ তাকালো রুদ্রিকের দিকে।কণ্ঠ তার স্পষ্টভাবে কাঁপছে।অথৈ বলে উঠে,
‘ এটা এতো সুন্দর কেন রুদ্রিক?’
‘ তোমার পছন্দ হয়েছে?’
‘ আপনি কি আমাকে দেখে বুঝতে পারছেন নাহ?’

রুদ্রিক বিনিময়ে হাসল।বলল,
‘ ভীতরে যাবে নাহ?নাকি এইভাবেই বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবে?’

অথৈ মাথা দুলালো।পা বাড়াতে নিয়েও কিছু একটা মনে করে থেমে গেল।কৌতুহল দমাতে না পেরে অথৈ মনের কথাটা বলেই ফেলল,’ কিন্তু এই কটেজটা কাদের?এইভাবে না জেনেশুনে কটেজের ভীতরে যাওয়া ঠিক হবে?’

অথৈয়ের এমন বোকাসোকা প্রশ্নে রুদ্রিক ভ্রু-কুচকালো। দু কদম এগিয়ে আসল অথৈয়ের কাছে। গম্ভীর গলায় আওড়ালো,’ তোমার কি মাথা খারাপ?আমি আমার বউকে অন্যের কটেজে নিয়ে আসব?আমাকে কি তোমার পাগল মনে হয়?’

রুদ্রিকের গম্ভীর গলায় বলা বাক্যে চুপসে যায়।মিনমিন করে বলে,’ এভাবে বলছেন কেন?আমি কি খারাপ কিছু বললাম নাকি?’

রুদ্রিক বলল,’ হ্যা সেরকমই কিছু বলেছ।’
‘ আর সেটা কি?’
‘ এইটা তোমার শশুড়বাড়িরই সম্পত্তি।মানে এটা আমাদের ই কটেজ।বাবা এই কটেজটা মাকে তাদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী সময়ে গিফট করেছিলো।’

অথৈ আহাম্মক হয়ে তাকিয়ে রইলো।সে যে আসলেই বলদের মতো কান্ড করেছে তা আর বুঝতে বাকি নেই।একটু লজ্জা লাগল।মাথা নিচু করে নিলো অথৈ। রুদ্রিক অথৈকে মাথা নিচু করতে দেখে সাথে সাথে অথৈয়ের থুতনিতে স্পর্শ করে ওর মাথা উঁচু করে দিলো।শক্ত গলায় সুধালো,’ আর কখনও যেন না দেখি মাথা নিচু করতে। তুমি আরিহান রুদ্রিক মির্জার স্ত্রী এটা ভুলে যাবে না।আর আমার বউ সবসময় মাথা উঁচু করে বাঁচবে।কখনও কোনো পরিস্থিতিতেই যেন মাথা নত না হয়।বুঝেছ?’

অথৈয়ের মন ছুঁয়ে গেল রুদ্রিকের প্রতিটি কথায়।এই লোকটা এমন এমন কথা বলে। যে অথৈয়ের মন চায় রুদ্রিককে খুশিতে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিতে।লোকটার কথাগুলো একদম বুকে গিয়ে লাগে।হৃদয়ে গেধে রাখার মতো।নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জা পেলো অথৈ। গালদুটোকে লাল আভা ছেঁয়ে গেল।রুদ্রিক অথৈয়ের ওই ফোলা ফোলা গালে লজ্জার লাল আভাগুলো দেখে মুগ্ধ হলো।এই মেয়েটাকে এতো সুন্দর লাগে কেন?রুদ্রিকের মাঝে মাঝে মন চায় অথৈকে একদম তার শক্তপোক্ত বুকের মধ্যিখানটায় লুকিয়ে রাখতে। যাতে কেউ অথৈকে না দেখতে পায়। একমাত্র সে একাই দেখবে তার বউকে।রুদ্রিক অথৈয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।নম্র কণ্ঠে বলে,’ চলো তাহলে। যাওয়া যাক।’

অথৈ রুদ্রিকের হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল। তারপর পা বাড়ালো রুদ্রিকের সাথে কটেজের ভীতরে।যাবার আগে আরেকবার কটেজের বাহিরের সৌন্দর্যটা পরখ করে নিলো।কাঠের কটেজটা বেশি বড়ো না আবার ছোটোও না।দুতলা কটেজটা অন্যরকম সুন্দর লাগে।এই কটেজের বেশিরভাগ সৌন্দর্য এই কারনে যে কটেজটায় প্রায় সব জায়গাতেই গাছ লাগানো। গাছ গাছালি দিয়ে ভড়পুর।তাতে নানান রকম ফুল ফুটে আছে।পাতা বাহার গাছও আছে।যে কারোরও ভীষণ পছন্দ হবে জায়গাটি।তার মধ্যে অথৈ একজন।

এদিকে রুদ্রিক অথৈকে নিয়ে কটেজের মধ্যে প্রবেশ করতেই অথৈ চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলো।কটেজটার ভীতরটা দেখেও অথৈ মুগ্ধ হলো।কটেজটার ভীতরকার ডিজাইন, এর প্রতিটা আসবাবপত্র। সবকিছুই বেশ সুন্দর।অথৈ উচ্ছ্বাসিত গলায় বলে,’ ভীতরটাও বেশ সুন্দর।আসবাবপত্রগুলোও বেশ ইউনিক।আর ঘরের মধ্যেও কি সুন্দর নানান জাতের গাছের সমাহার।এতো এতো সুন্দর।’

অথৈয়ের খুশিতে রুদ্রিক যেন দ্বিগুন খুশি হলো। তার এখন আফসোস হচ্ছে।আরও আগে কেন আনলো না মেয়েটাকে।তাহলে আর প্রাণপ্রিয়ার এই স্নিগ্ধ মুখখানায় ওই নির্মল হাসিটুকু আরও আগেই দেখতে পারত ও।তবে এখন আফসোস করে তো আর লাভ নেই। এখন শুধু সময় প্রেয়সীর ওই হাসিটুকু দুচোখ ভরে দেখা।আর রুদ্রিক সেটাই করছে।রুদ্রিক হেসে বলে,’ কটেজটার ডিজাইন বাবা করলেও।মা এই কটেজটা নিজ হাতে সাজিয়েছে।এই কটেজের প্রতিটা আসবাবপত্র তার করা ডিজাইনে বানানো।’

অথৈ চারদিক থেকে চোখ সরিয়ে রুদ্রিকের দিকে তাকালো।প্রশ্ন করল,’ আচ্ছা আপনারা তো সবসময় এখানে থাকেন না।তাহলে কটেজটা দেখাশোনার জন্যে নিশ্চয়ই কেয়ারটেকার রেখেছেন।কিন্তু এমন কাউকেই তো দেখলাম নাহ।’
‘ তা দেখবে কিভাবে?আমি তোমাকে নিয়ে এখানে আসার আগে তাকে ফোন করে বলে দিয়েছি। সবকিছু গুছিয়ে রেখে সে যেন চলে যায়। ‘

কথাটা শেষ করে এইবার অথৈয়ের কাছে একটু ঝুকে আসল রুদ্রিক।ফিসফিস করে বলে,’ বউয়ের সাথে একান্তভাবে একটু সময় কাটাতে এখানে এসেছি।সেখানে তাকে এখানে রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।’

লজ্জা পেল অথৈ। লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে বলে,’ ধুর,আপনিও না।’

রুদ্রিক শব্দ করে হেসে দিলো। সেই হাসি শব্দে বুক কেঁপে উঠল অথৈয়ের।চোখ তুলে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো।এই লোকটার হাসি এতো সুন্দর।যে একবার তাকালে অথৈ চোখ সরাতে পারে না।এদিকে হাসি থামিয়ে অথৈকে নিজের দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রুদ্রিক মৃদ্যু হাসে। ভ্রু নাচিয়ে বলে,’ কি এভাবে কি দেখছ?’

অথৈ মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় বলে,’ আপনি এভাবে কারো সামনে হাসবেন না রুদ্রিক।কোনোদিন হাসবেন না।এই হাসিটুক সবসময় শুধু আমার সামনে হাসবেন। আপনার এই প্রাণখোলা হাসি যেন শুধু এবং শুধু আমিই দেখতে পাই।আপনার হাসি দেখার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যক্তিটি শুধু আমি হবো।আর কেউ না।’

অথৈয়ের সহজসরল সিকারোক্তিটুক যে রুদ্রিকের হৃদয়ে কি পরিমান প্রভাব ফেলেছে তা শুধু সে জানে। এই মেয়েটা ক্ষণে ক্ষণে তাকে আরও বাজেভাবে নিজের মায়ায় জড়িয়ে নিচ্ছে।মেয়েটার ভালোবাসায় আরও গভীরভাবে পরে যাচ্ছে সে।তবে রুদ্রিকের এতে একটুও খারাপ লাগে না।সে তো আরও ভালোবাসতে চায় মেয়েটাকে।শতবার,হাজারবার,লাখোবার,কোটিবার,বহুবার এই এক মেয়েরই প্রেমে পরতে চায় সে।যে কিনা তার সহধর্মিনী,তার স্ত্রী,তার ভালোবাসা।রুদ্রিক অথৈয়ের বাহু ধরে তাকে নিজের বরাবর এনে দাঁড় করালো।মুখ নামিয়ে আনলো অথৈয়ের কাছে।তার নিখাঁদ ভালোবাসাটুক বুঝানোর জন্যে অধর ছোঁয়ালো অথৈয়ের ললাটে।ওই একটুখানি স্পর্শে অথৈয়ের সর্বাঙ্গ যেন ঝংকার দিয়ে কেঁপে উঠল।লোকটার অধরের ওই স্পর্শটুকু যেন তাকে জানান দিয়ে দিচ্ছে যে রুদ্রিক তাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে।অথৈ তা খুব করে অনুভব করতে পারছে। তাইতো পরম সুখে অথৈয়ের বন্ধ চোখের কোণ ঘেষে একফোঁটা জল গড়িয়ে পরল।তা রুদ্রিকের অগোচরেই বিলীন হয়ে গেলো। সময় নিয়ে সরে আসল রুদ্রিক।অথৈ পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো।রুদ্রিক মুচঁকি হেসে বলে,’ দুপুর গড়িয়ে গিয়েছে।নিশ্চয়ই তোমার ক্ষুদা লেগেছে। খাবার তৈরিই আছে।চলো যাওয়া যাক।’
‘ চলুন তাহলে।’

অথৈকে নিয়ে কিচেনরুমে আসল রুদ্রিক।মূলত কিচেনরুমেই খাবার খাওয়ার ব্যবস্থা করা।রাউন্ড একটা টেবিল।সেখানে চারটা চেয়ার রাখা।রুদ্রিক অথৈকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো।তারপর নিজেও বসে পরল।তারপর খাবারের বাটিগুলো ঢাকনা সরালো।কিন্তু দেখে খাবারগুলো ঠান্ডা হয়ে আছে। মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ আগেই বানিয়ে রেখেছে খাবারগুলো।যা দেখে নাক মুখ কুচকালো রুদ্রিক।রাগি স্বরে বলে,’ এই ছাব্বিরটাও না।একটা কাজও ঠিকঠাকভাবে করতে পারে না।খাবারগুলো পুরো ঠান্ডা।না জানি কখন বানিয়েছে।উফ,অসহ্য।’

রুদ্রিকের কথা শেষ হতেই দেখে অথৈ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। অথৈকে দাঁড়াতে দেখে ও প্রশ্ন করে,’ তোমার আবার কি হলো?দাঁড়িয়ে পরলে কেন?’

অথৈ ওর ব্যাগ থেকে একটা ক্লিপ বের করল।তা দিয়ে নিজের চুলগুলো সুন্দরভাবে বেধে নিলো।এরপর বলল,’ খাবারগুলো যেহেতু ঠান্ডা।আর আমি জানি আপনি গরম খাবার ছাড়া খেতে পারেন না।তাই খাবারগুলো গরম করা প্র‍য়োজন।আর আমি এখন সেটাই করব।’

অথৈয়ের বলতে দেরি রুদ্রিকের চেঁচাতে দেরি হয়নি।সে বলে,’ হোয়াট?কি বলছ এসব?তুমি খাবার গরম করবে?’
‘ হ্যা। কেন কোনো সমস্যা?’
‘ সমস্যা মানে,অনেক সমস্যা।এখানে ওভেন নেই যে সেটা দিয়ে খাবার গরম করবে তুমি।এখানে চুলো জ্বালিয়ে সব করতে হবে। আর আমি তোমাকে তা করতে দিবো না।বাই চান্স যদি ছ্যাঁকা ট্যাকা লেগে যায়।আমি তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চায়নি।’

রুদ্রিকের এহেন কথায় অথৈয়ের বিরক্ত লাগল।সে কপাল কুচকে বলে,’ আমি কি কচি খুকি?যে রান্না করতে পারি না।আর চুলো জ্বালাতে গেলে আগুনের আঁচ লেগে যাবে।শুনুন আপনার বউ কোনো অকার্মার ঢেকি না।সে মোটামুটি সবকিছুই রান্না করতে পারো।সো কোনো কথা বলবেন না।আমি এখন এই খাবারগুলো গরম করে নিয়ে আসছি।আপনি বসুন।’

কি আর বলবে রুদ্রিক।বউয়ের করা কথায় তাকে চুপচাপ মেনে নিতে হলো।হতাশ হয়ে বলল,’ ঠিক আছে। তবে সাবধানে হ্যা?আর আমিও তোমাকে হ্যাল্প করি?’
‘ ঠিক আছে। আপনি আমাকে তরকারির বাটিগুলো চুলোর কাছে এনে দিন।তাহলেই হবে।’

বলেই অথৈ একটা তরকারি বাটি নিয়ে চলে গেল।তারপর চুলোতে একটা ননস্টিকি কড়াই দিয়ে সেটাই তরকারিগুলো ঢেলে দিলো।সুন্দরভাবে তরকারিটা গরম করতে লাগল। এর মধ্যে রুদ্রিক বাকি তরকারির বাটিগুলোও নিয়ে আসল।অথৈ একটা একটা করে তরকারি গরম করে নামাচ্ছে আর রুদ্রিক সেগুলো নিয়ে টেবিলে সাজাচ্ছে।এইভাবে সবগুলো তরকারি গরম করে নিলো তারা মিলেমিশে।অথৈ গিয়ে নিজে খাবার বেড়ে দিলো প্লেটে।কিন্তু একটা প্লেটে খাবার বাড়তেই রুদ্রিক অথৈকে থামিয়ে দিলো।
‘ একটাতেই খাবার বাড়ো।’

ভ্রু-কুচকে অথৈ বলে,’ কিন্তু কেন?’

মুচঁকি হেসে রুদ্রিক বলল,’ কারন আমি তোমার হাতে খাবার খাবো।’

রুদ্রিকের সরল আবদার।যা শুনে অথৈ মনটা কেমন করে যে উঠল।সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।তা দেখে রুদ্রিক বলে,’ কি হলো?চুপ করে আছ যে?খাইয়ে দিবে নাহ?’

নিজেকে সামলে নিলো অথৈ। ধীর আওয়াজে বলে,’ আসলে আমি কখনও কাউকে খাইয়ে দেয়নি।তাই আর কি।’
‘ কোনো সমস্যা নেই।তবুও আমি তোমার হাতেই খাবো।’

অথৈ মাথা দুলালো।তারপর ভাতের প্লেটটা হাতে তুলে নিলো।তরকারি দিয়ে ভাতটুকু মেখে নিয়ে রুদ্রিকের মুখের সামনে ধরল। রুদ্রিক অনতিবিলম্বে খাবারটুকু মুখে পুরে নিলো।এদিকে রুদ্রিকের ঠোঁটের ছোঁয়া অথৈয়ের আঙ্গুলে এসে লাগতেই অথৈ ঠোঁট কামড়ে ধরে। তার পায়ের তলা শিরশির করছে।রুদ্রিক খাবারটুকু গিলে নিতে।অথৈ আবারও খাবার ধরল রুদ্রিকের মুখের সামনে।কিন্তু এইবার রুদ্রিক খেলো না।সে অথৈয়ের হাতটা ধরে সেটা অথৈয়ের দিকে ঘুরিয়ে দিলো। চোখের ইশারায় করে বলে উঠল,’ তুমিও খাও। তোমারও তো ক্ষিদে পেয়েছে।’

অথৈ বিনাবাক্যে খাবার খেয়ে নিলো।ঠিক এইভাবেই পুরোটা খাবার শেষ করল দুজনে।অথৈ এঁটো থাল নিয়ে চলে গেল।অপরিষ্কার থালাবাসনগুলো সুন্দরভাবে ধুঁয়্র মুছে জায়গামতো রেখে দিলো। কাজ শেষ করে পিছনে ঘুরতেই রুদ্রিকের প্রসস্থ বুকের সাথে ধাক্কা লাগে অথৈয়ের।পরে যেতে নিলেই রুদ্রিক দ্রুত অথৈয়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নেয়।ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলো অথৈ। এখন নিরাপদে আছে ভেবে চোখ মেলে তাকায়।তারপর কপট রাগ দেখিয়ে বলে,’ এসবের মানে কি?এমনভাবে ভুতের মতো পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন। আর একটু হলেই তো পরে আমার কোমড়টা ভেঙে যেতো।’

রুদ্রিক বাঁকা হেসে বলে,’ ভাঙতে তো দেয়নি।তার আগেই তো ধরে ফেলেছি।’
‘ হুহ! ‘ ভেঙচি কাটলো অথৈ। রুদ্রিক আলতো হাসল।পর পর এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো অথৈকে।ভয় পেয়ে অথৈ রুদ্রিকের গলা জড়িয়ে ধরল।আতংকিত গলায় বলে,’ আরে এভাবে হুটহাট কোলে নিয়ে নেন কেন আজব?আমি ভয় পাই নাহ হ্যা?’
‘ অভ্যাস করে নেও।’

বলেই রুদ্রিক কিচেন থেকে বেড়িয়ে দোতলার দিকে হাটা ধরল।দোতলায় এসে একটা রুমে প্রবেশ করল রুদ্রিক।রুমে আসতেই অথৈ গোলগোল চোখে সব দিকে তাকাচ্ছে।রুমটা আকাড়ে বেশ বড়ো।এবং বেশ খোলামেলা।রুমের একপাশ পুরো খোলা।মানে সেখানে স্লাইডিং ডোর লাগানো।সেখান দিয়ে ব্যালকনিতে যায়।সেখানে পর্দা লাগানো।সাদা আর নীল রঙের সংমিশ্রণে।বিছানার চাদর,আর সোফা সেটের কুশনগুলো একই কালারের সংমিশ্রণে।রুদ্রিক অথৈকে নিয়ে সোজা বিছানায় সুইয়ে দিলো।এরপর নিজেও অথৈয়ের অন্যপাশে শুয়ে পরল।পর পর হাত বাড়িয়ে অথৈকে নিজের বুকের মাঝে টেনে নিলো।অথৈয়ের বুক কাঁপছে।কেমন যেন অস্থির লাগছে।এই প্রথম রুদ্রিকের সাথে এক বিছানায় শুয়েছে সে।মস্তিষ্ক হ্যাং হয়ে যাচ্ছে।রুদ্রিকের একটা হাত অথৈয়ের কোমড়ে।যা আলতো হাতে স্পর্শ করে যাচ্ছে ওকে।অথৈ নিজেই আরো একটু মিশে গেলো রুদ্রিকের বুকের মাঝে।এদিকে রুদ্রিকের নেশাক্ত চোখে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।মেয়েটাকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে গভীরভাবে।আদরে আদরে ভড়িয়ে তুলতে ইচ্ছে করছে।রুদ্রিক ধীর স্বরে বলে উঠল,’ অথৈ?’
‘ হু!’
‘ একটুখানি ছুঁয়ে দেই তোমায়?রাগ করবে?’

কি সুন্দর আবদার।এই আবদার কি অথৈ ফিরিয়ে দিতে পারবে? অথৈ হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরল রুদ্রিককে শক্ত করে।খামছে ধরল রুদ্রিকের পিঠ।মৌনতা বজায় রেখেই রুদ্রিককে সম্মতি দিয়ে দিলো অথৈ। ও নিজেও চায় রুদ্রিক তাকে ছুঁয়ে দিক।কোন মেয়েই বা না চাইবে নিজের স্বামি আদর,সোহাগ, ভালোবাসা পেতে।রুদ্রিক অথৈকে বালিশে শুইয়ে দিলো।অথৈ নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে।রুদ্রিক চুমু খেল অথৈয়ের কপালে।একে একে অধরের স্পর্শ দিলো অথৈয়ের গালে,নাকে,চিবুকে।অথৈ রুদ্রিকের গলা জড়িয়ে ধরেছে।রুদ্রিক মাদকতা চাহনী নিয়ে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে।অথৈয়ের ওই ওই ভেজা,গোলাপি ঠোঁটজোড়া দেখে শুকনো ঢোক গিলল।হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিলো অথৈয়ের অধরজোড়া।ছুঁয়ে নিজেই কেঁপে উঠল।এদিকে রুদ্রিকের এহেন কান্ডে অথৈয়ের সারাদেহ কাঁপছে।রুদ্রিক ঢোক গিলে বলে,’ এই ঠোঁটজোড়া আমায় বড্ড টানছে অথৈ। চেয়েও নিজেকে সামলাতে পারছি না।’

জোড়ে শ্বাস নিতে থাকা অথৈ রুদ্রিককে নিজের আরেকটু কাছে টেনে নিলো।কাঁপা গলায় থেমে থেমে বলে উঠল, ‘ নিজ..নিজের স্ত্রীকে ভালোবাসবেন।আ..আমি তো আপ..আপনাকে আটকাইনি।’

রুদ্রিকের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।যা দেখে লজ্জা চোখ বন্ধ করে নিলো অথৈ। রুদ্রিক কালবিলম্ব না করে অধরে অধর মিলিয়ে দেয় অথৈয়ের।অথৈ ভূমিকম্পের ন্যায় কেঁপে উঠল।খামছে ধরল রুদ্রিককে।স্বামীর ভালোবাসাময় ছোঁয়ায় নিজেকে মাতিয়ে তুলল।রুদ্রিক যেন প্রিয়িতমার ওষ্ঠ সুধায় মত্ত হয়ে গিয়েছে।নিয়ন্ত্রণহীন্ন হয়ে গিয়েছে সে।প্রেমময় দীর্ঘ চুম্বনে লিপ্ত হলো তারা।অনেকটা সময় কেটে গেলো। অথৈ ঠিকঠাক শ্বাস নিতে পারছে না আর।তা উপলব্ধি করতে পেরে সরে আসল রুদ্রিক।দুজনেই হাপাচ্ছে।রুদ্রিক হাঁপানো কণ্ঠে বলে,’ নেশা ধরে গিয়েছে বউ।এখন থেকে তো প্রতিদিন এই সুধা পাণ করতে হবে আমায়।নাহলে যে আমি শান্তি পাবো না।’

এমনিতেই প্রচুর লজ্জা পাচ্ছিলো অথৈ। আর এখন রুদ্রিকের এই কথায় আরও ভয়ানক লজ্জা পেলো।সর্ব মুখশ্রী লাল হয়ে গিয়েছে।রুদ্রিকের বুকে আলতো আঘাত করল সে।পর পর নিজের লজ্জা ঢাকতে রুদ্রিকের বুকে মুখ লুকালো।রুদ্রিক তৃপ্তির হাসি দিয়ে অথৈয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগল।বলল,’ এখন ঘুমাও একটু।’

তারপর নিজেও চোখ বন্ধ করে নিলো।অথৈও কিছুক্ষন হাশফাশ করে ঘুমিয়ে গেল।
#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩১+৩২
রুদ্রিক,ইহান,সাফাত,নীল,অনিক ওরা আড্ডা দিতে ব্যস্ত ভার্সিটির মাঠে।এমন সময় সেখানে আসে জেনি,সিয়া,মারিয়া।জেনি এখন আর আগের মতো নেই।সেদিনের পর থেকে রুদ্রিকের ভয়েই হোক।শান্ত হয়ে গিয়েছে।রুদ্রিকের আশেপাশেও যায় না।আর অথৈয়ের কাছে তো ভুলেও না।এদিকে সিয়া সোজা হেটে গিয়ে দাঁড়ায় অনিকের সামনে।শান্ত চোখে অনিকের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,’ একটু আমার সাথে আসুন।আপনার সাথে জরুরি কথা আছে।’

হঠাৎ সিয়া নিজ থেকে এসে অনিকের সাথে কথা বলায় অনিক একটু না।অনেকটাই অবাক হয়েছে।তবে সেটা কাউকে বুঝতে দিলো না।প্রতিত্তুরে বলল,’ তুই আবার আপনি আপনি বলা শুরু করেছিস?আমি না বলেছি আগের মতো করেই আমাকে ডাকবি।’

সিয়া যেন তাচ্ছিল্য হাসল।
‘ আগের মতো ডাকতে বললেই কি ডাকা যায়? তখন আমাদের মাঝে যেই সম্পর্কটা ছিলো। আজ তার ছিটেফোঁটাও নেই।তাই আগের সিয়ার মতো আমার মাঝে কিছুই পাবেন না আপনি।’

অনিকের তীব্র একটা কষ্ট লাগল সিয়ার এহেন কথায়।তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,’ এইভাবে বলছিস কেন?একবার সুযোগ দে।প্রমিস আর কখনও অভিযোগ করার সুযোগ দিবো না।’

সিয়া কথাটা এড়িয়ে গেল।এখন এখানে বন্ধুদের মাঝে সে আর কোনো সিনক্রিয়েট করতে চায় না।অনিককে একান্তভাবে সবটা বুঝাতে হবে।না সে আগের সিয়া আছে।আর না সে অনিকের কাছে আর ফিরে যাবে।একবার কষ্ট পেয়ে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়েছে সিয়া।দ্বিতীয়বার আর একই কষ্ট সে নিতে পারবে না।তাহলে এইবার মরন ছাড়া আর তার কোনো গতি থাকবে না।অনিকের ভালোবাসায় মত্ত হয়ে সে নিজের সবটা প্রায় খুয়েই ফেলেছিল।ভাগ্যের জোড়ে সবটা আবার ফেরত পেতে সক্ষম হয়েছে।আবার সেই পিছুটানের দিকে ছুটতে গিয়ে নিজের বাবা মায়ের স্বপ্নগুলো সে বিসর্জন দিতে পারবে না।আর পারবে না সিয়া। সিয়া নির্লিপ্ত কণ্ঠে সুধালো,’ আপনি আসবেন কিনা আমার সাথে সেটা বলুন।নাহলে আমি চলে যাচ্ছি।’

অনিক বাইকের উপর বসা থেকে নেমে দাঁড়ালো।একপলক বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ চল।’

সিয়া সোজা হাটা ধরল।অনিকও ওর পিছু চলে গেল।ওরা যেতেই ইহান চিন্তিত স্বরে বলে,’ তোদের কি মনে হয়?কি এমন কথা বলবে সিয়া?আর সিয়া কি কখনও অনিককে ক্ষমা করে ওর কাছে ফিরে আসবে?’

রুদ্রিক ইহানের কথায় সুদূর আকাশের দিকে তাকালো।বলল,’ আমার মনে হয় না সিয়া কখনও অনিককে মেনে নিবে।হ্যা,ক্ষমা করে দিতে পারে।আসলে ভালোবাসে তো।তাই ক্ষমা করে দিবে। হয়তো ক্ষমা করেও দিয়েছে।কিন্তু ওর কাছে কখনও ফিরে আসবে না।জানিস মেয়েদের অনেক রূপ থাকে।তারা পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের সামলাতে পারে।কখনও কোমল,নরম একেবারে তুলোর মতো।আবার সেই মানুষটায় একসময় শক্ত পাথরের থেকেও কঠিন হয়ে পরে।তাদের ভাঙা যে সবার সাধ্যের বাহিরে।এই জন্যেই সময় থাকতে নিজের শখের নারিকে আগলে রাখো। আগলে রাখতে না পারলে তারা এতোটাই দূরে চলে যাবে যে তাদের ছোঁয়ার সাধ্য তুমি শতো চেষ্টা করেও পাবে না।’

রুদ্রিকের বলা প্রতিটা কথা যেন ইহানের প্রতিটি নিউরনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল।রুদ্রিকের প্রতিটি কথাই সত্যি।না,সে আর দেরি করবে না।যতো দ্রুত সম্ভব রিধিকে ওর মনের কথা বলে দিতে হবে।ও নিজেও বুঝতে পেরেছে রিধিও ওকে ভালোবাসে।তাই তো কারনে অকারনে ওদের বাসায় আসতো আর তা যে ওকে দেখার জন্যে। সেটা বোকা ও কখনই বুঝতে পারেনি।এখন সে ভালোবাসে রিধির ভালোবাসা বুঝতে পারছে।

এদিকে রুদ্রিকের কথাগুলো শুনে সাফাত দীর্ঘশ্বাস ফেলল।কণ্ঠে তার কাতরতা স্পষ্ট,’ আমি বোধহয় সেই মানুষটার একজন।তোর কথাগুলো সাথে পুরোটা তবে আংশিক মিল আছে। কারন আমি যে একতরফা ভালোবেসেছিলাম।ও না সরি।ভালোবেসেছিলাম না এখনও ভালোবাসি।তবে এখন আর তাকে পাওয়ার আশা করি না।শুধু দূর থেকে চাইবো সে যেন সুখে থাকে।কারন সে সুখে থাকলেই আমি সুখি।’

সাফাতের কথায় যেন রুদ্রিকের মনে হলো।কেউ যেন ওর বুকে বাজেভাবে জখম করে দিয়েছে। নিজেকে কেমম যেন অপরাধী মনে হচ্ছে।ও যদি আগেই অথৈয়ের সম্পর্কে ওর বন্ধুদের বলে দিত।তাহলে আজ এমনটা হতো না।ওর বন্ধু এতো কষ্ট পেতো না।আচ্ছা,সে কি আসলেই বড্ড স্বার্থপর হয়ে গিয়েছে?নাকি?না,না সে এসব কি ভাবছে?এটা যে হবার নয়।ও অথৈকে ভালোবাসে।ভীষণ ভালোবাসে।অথৈকে ছাড়া যে ও বাঁচতে পারবে না।অথৈ বিহীন জীবন যে ওর চাই না।এসব ভাবলেই তো ওর নিশ্বাস আটকে আসে।রুদ্রিক দুহাতে ওর মুখ ঢেকে নিলো।কি করবে ও?ঠিক কি করলে সবটা ঠিক হয়ে যাবে।কিভাবে সাফাতের কষ্ট কমাবে।হঠাৎ কাধে কারও হাতের স্পর্শ পেয়ে রুদ্রিক ওর মুখশ্রী থেকে হাত সরিয়ে ফেলে।তাকিয়ে দেখে ইহান।রুদ্রিক ওই লাল চোখজোড়া দেখে ইহান ব্যস্ত হয়ে বলে,’ তুই কি ঠিক আছিস রুদ্রিক?’

রুদ্রিক আশেপাশে এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে কোনরকম বলল,’ হু! আ’ইম ফাইন।’
‘ সিয়র?’
‘ ইয়াহ!’
_______________
নীল অসহায় চোখে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।আজ তিনদিন যাবত মেয়েটা ওর সাথে কথা তো দূরে থাক।ওর দিকেও তাকাচ্ছে না।মারিয়া যে নিজেও ভালো নেই। তা মীল খুব ভালোভাবেই জানে।মারিয়ার মলিন চেহারাই সবটা বলে দিচ্ছে ওকে।চোখের নিচে কালি পরেছে।চোখজোড়া ওর লাল হয়ে আছে।নীল শুকনো ঢোক গিলল।ধীর পায়ে এগিয়ে গেল মারিয়ার কাছে।গলা ধরে আসছে ওর।বহু কষ্টে বলে উঠল,’ মা..মারিয়া।একবার আমার কথাটা শু….’

আর বলতে পারল না নীল।কারন তার আগেই মারিয়া বলে উঠে,’ জেনি তুই কি যাবি আমার সাথে?আমি ক্লাসে যাচ্ছি।কিছু নোটস করব।’
‘ হ্যা চল।’

জেনি সম্মতি দিতেই মারিয়ায় নীলের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে চলে গেল।নীল অসহায় চোখে মারিয়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।কি করবে ও? এদিকে ওদের দুজনের মাঝে এমন দুরুত্ব দেখে।রুদ্রিক এগিয়ে গেল নীলের কাছে।গম্ভীর স্বরে নীলের উদ্দেশ্যে বলল,’ তোদের মাঝে আবার কি হয়েছে?দু তিনদিন যাবত দেখছি আমি।মারিয়া তোর আশেপাশেও আসছে না।এমনকি তুই ওর কাছে গেলেও ও তোর থেকে দূরে চলে যায়। সমস্যাটা কি তোদের?’

রুদ্রিকের কথায় নীল রুদ্রিককে হুট করে জড়িয়ে ধরল।নীলের প্রচুর কান্না আসছে।নীল ভেজা কণ্ঠে বলে,’ আমি কি করব দোস্ত?মারিয়া যে আমার হবে না।ওকে আমার কাছে এনে দে।ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না।’

রুদ্রিক দুহাতে নীলকে জড়িয়ে ধরল।ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে,’ কিন্তু মারিয়া তো তোরই।তাহলে এসব বলছিস কেন?’

‘ কারন ওর বাবা ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।সামনের সপ্তাহেই না-কি আকঁদ করিয়ে রাখবে।’

নীলের এহেন কথায় ইহান আর সাফাতও দ্রুত পায়ে ওদের কাছে আসল।ইহান অবাক হয়ে বলে,’ মানে?কি বলছিস এসব?আর তুই আমাদের জানালি না কেন?আর তাছাড়া তুই কিছু করিস নি?’

নীল রুদ্রিককে ছেড়ে দিলো।চোখের কোণের জলটুক মুছে বলে,’ আমি কি করব বল ইহান।কোনো মেয়ের বাবা কি চাইবে আমার মতো বেকার ছেলের কাছে তার মেয়েকে তুলে দিতে?’

‘ কিন্তু তুই তো একেবারেই ফেলনা নাহ।আমরা অনার্স ফাইনাল ইয়ার এক্সাম দিবো বেশিদিন নেই।তারপর আর এক বছর মাস্টার্স করলেই তো তুই ভালো একটা চাকরি করতে পারবি।তাছাড়া তোর বাবার নিজেরও তো ব্যবসা আছে।তুই চাইলে সেখানেও জয়েন হতে পারিস।তোদের ফ্যামিলি ওয়েল স্টেবলিশড ফ্যামিলি।’ রুদ্রিক বলে উঠল।

নীল করুণ গলায় বলে,’ সেটা ওর বাবা মানলে তো?ওর বাবা উচ্চবিত্ত এক ফ্যামিলির ছেলের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করে নিয়েছে।এখন মারিয়া আমায় বলছে ওর বাবার সাথে কথা বলতে।তোরাই বল আমি কিভাবে যাবো ওর বাবার কাছে?ওর বাবা ওমন বড়োলোক ফ্যামিলির ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে না দিয়ে কি আমার কাছে দিবে?’

নীলের কথায় শুনে রুদ্রিক রেগে গেল।রাগি গলায় বলে,’ তুই এসব মারিয়াকে বলেছিস আর সেইজন্যেই ও রেগে আছে?’

নীল কোনো জবাব দিলো না।মাথা নিচু করে নিলো।আর নীলের নীরবতাকেই সম্মতি হিসেবে ধরে নিলো রুদ্রিক।রুদ্রিক তেড়ে গিয়ে নীলের শার্টের কলার চেপে ধরল।আগুন ঝরা চোখে তাকিয়ে বলে,’ তোর মতো ভীতুদের কখনও ভালোবাসতে নেই।যখন ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করে নেওয়ার জন্যে।পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলাই যদি না করতে পারিস।তাহলে ভালোবাসতে যাস কেন?কেন একটা মেয়েকে মিথ্যে আশা দিয়ে দিনের পর দিন ধোকা দিয়ে রাখিস।যখন ভালোবেসে ভালোবাসার মর্যাদা দিতে পারিস না।তখন ভালোবাসার দাবি নিয়ে কেন গেলি?বল কেন গেলি?’

ইহান আর সাফাত টেনে সরিয়ে আনল রুদ্রিক।রুদ্রিক বড়ো বড়ো শ্বাস নিচ্ছে রাগে।ইহান বলল,’ মাথা ঠান্ডা কর রুদ্রিক।রাগলে চলবে না।’

রুদ্রিক দাঁত খিচিয়ে বলে,’ তুই বলছিস আমায় রাগতে না? ও মারিয়ার বাবার কাছে মারিয়ার হাত চাওয়ার সাহসটুকু করতে পারছে না।তাহলে ও কেন মারিয়াকে ভালোবাসল।’

নীল অসহায় গলায় বলে,’ ভালোবাসা কোন কারন নিয়ে হয় না রুদ্রিক।এমনিই হয়ে যায় ভালোবাসা।আর সেটা হয় মন থেকে।’

রুদ্রিক চিৎকার করে বলে,’ ও তুই এখন আমাকে জ্ঞান দিবি?ভালোবাসলে কখনও ভীতু হতে নেই।ভালোবাসলে বুকে সাহস রাখতে হয়।যা তোর নেই।তার মানে তুই মারিয়াকে কখনও ভালোবাসিসই নেই।’

‘ রুদ্রিক।’
‘ কি রুদ্রিক?চিল্লাবি না।যদি সত্যিই মারিয়াকে ভালোবাসিস।তাহলে এই মুহূর্তে আমার সাথে যাবি মারিয়ার বাড়িতে।আর গিয়ে ওর বাবাকে বলবি তুই মারিয়াকে ভালোবাসিস।আর ওকে বিয়ে করতে চাস।কি পারবি?যদি এটা পারিস বলতে।আমি নিজে যে করেই হোক তোর সাথে মারিয়ার বিয়ে দিবো।তুই শুধু এটুকু বল।’

তেজি কণ্ঠে রুদ্রিকের বলা প্রতিটা কথায় যেন নীল সাহস পেলো।দৃঢ় গলায় বলে,’ হ্যা পারব।’
‘ তাহলে চল।’

সাফাত বলে,’ অনিককে ফোন করে আসতে বলি।’

রুদ্রিক দুহাতে চুল পিছনের দিকে ঠেলে দিয়ে বলে,’ অনিককে বলার দরকার নেই। ও সিয়ার সাথে আছে।ওদের একান্তে ছেড়ে দে।ওদের ব্যাপারটাও সিরিয়াস।এইভাবে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না।আমরা পরে এসে ওকে বুঝিয়ে বলব।’

‘ কিন্তু মারিয়াকে তো দরকার।ওর বাবা যদি জিজ্ঞেস করে মারিয়াও নীলকে ভালোবাসে কিনা তাহলে কি জবাব দিবো?তখন তো মারিয়াকে লাগবে।’

ইহানের কথায় যুক্তি খুঁজে পেয়ে রুদ্রিক বিনাবাক্যে মারিয়াকে ফোন লাগায়।দুবার রিং বাঁজতেই মারিয়া কল রিসিভ করে।ও রিসিভ করতেই রুদ্রিক বলে উঠে,’ মারিয়া?যেখানেই আছিস।দ্রুত ভার্সিটির গেটের কাছে আয়।’

রুদ্রিকের এহেন কথায় মারিয়া ঘাবড়ে গেল।বলল,’ কেন রুদ্রিক কি হয়েছে?’
‘ কিছু হয়নি তুই জলদি আয়। ডোন্ট ওয়েস্ট আ সেকেন্ড।’

বলেই ফোন রেখে দিলো।মিনিট দশের বাদেই দূর থেকে দেখা গেল মারিয়া দৌড়ে আসছে।রুদ্রিকদের সামনে এসে থামল।হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,’ কি হয়েছে?এইভাবে আমাকে ডাকলি কেন?’

রুদ্রিক বাইকে উঠে বসল।নীলকে ইশারা করে বলে,’ দ্রুত নীলের বাইকে উঠে পর। আর হ্যা কোনো কুয়েশ্চেন করিস না আপাততো। উল্টাপাল্টা জেদ ধরলে এখনই আমার হাতের চড় খাবি।তাই যা বলছি তাই কর।’

রুদ্রিকের কথায় মারিয়া ভয় পেয়ে গেল।তাই না চাইতেও দ্রুত বাইকে উঠে বসল।ইহান আর সাফাতও নিজেদের বাইকে উঠে বসে।সবাই একসাথে বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। পুরো রাস্তায় মারিয়া একটা কথাও বলল না।চুপচাপ বসে রয়েছিলো।নীলও ওকে বেশি ঘাটায়নি।বাইক এসে মারিয়াদের বাড়ির সামনে থামতেই মারিয়া অবাক হয়ে যায়।ও বাইক থেকে নেমে অবাক কন্ঠে বলে,’ রুদ্রিক?তোরা আমার বাসায় আসলি কেন?’

রুদ্রিক বাইক পার্ক করে গম্ভীর গলায় বলে,’ কেন?তোর বাসায় বুঝি আমাদের আসতে মানা?’
‘ না তেমনটা বলিনি।কিন্তু…’
‘ কোনো কিন্তু না।চল আমার সাথে।আর হ্যা তোর মন যা চায় তাই করবি।সেটাই বলবি। বাকিটা আমি সামলে নিবো।’

মারিয়া বোকার মতো তাকিয়ে রইলো রুদ্রিকের দিকে।তারপর বাড়ির দিকে পা বাড়ালো।বাড়ির কলিং বেল বাজাতেই।মারিয়ার মা এসে দরজা খুলে দিলেন।সবাই উনাকে সালাম জানালো।তিনি সালামের জবাব দিয়ে হাসি মুখে বলেন,’ আরেহ রুদ্রিক,ইহান,সাফাত,নীল তোমরা।অনেক দিন পর আসলে।আমার তো মনে হয়েছিলো আমার এই ছেলেগুলো আমাকে ভুলেই গিয়েছে।’

ইহান প্রতিত্তুরে বলে,’ না আন্টি ভুলিনি।এইজন্যেই তো এসে পরলাম।’

‘ হ্যা হ্যা এসো।তা অনিক কোথায়?’
‘ অনিক একটু জরুরি কাজে আটকে গিয়েছে।তাই আসতে পারেনি।’
‘ ওহ! দেখেছ আমি তোমাদের বাহিরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি।ভেতরে এসো তোমরা।’

মারিয়ার মা ওদের ভীতরে আসতে বলে দ্রুত রান্নাঘরে চলে গেলেন।মারিয়া ওদের নিয়ে বসার ঘরে চলে গেল।গিয়েই দেখেন মারিয়ার বাবা সেখানে আগে থেকেই বসে আছেন।আর তিনি চা পাণ করছেন।রুদ্রিকরা উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।সবাই একসাথে সালাম জানালো।আচমকা এইভাবে এতোগুলো মানুষের একসাথে কণ্ঠ শুনে তিনি ঘাবড়ে গেলেন। রুদ্রিকদের দেখে সময় নিয়ে শান্ত হলেন।সালামের জবাব দিয়ে তিনি বলেন,’ কেমন আছ তোমরা?অনেকদিন পর আসলে আমার বাড়ি।’
‘ আলহামদুলিল্লাহ আমরা ভালো আছি আংকেল।আপনি ভালো আছেন?’ বলল ওরা।
‘ আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি।এখন তো আরও দ্বিগুন ভালো আছি।’

রুদ্রিক প্রশ্ন করল,’ কেন আংকেল?’
‘ ওহ দেখেছ।তোমরা তো জানো না।মারিয়ার বিয়ে ঠিক করেছি আমি। এই তো আর দু একদিনের ভীতরে তোমাদের বাড়ি যাবো দাওয়াত দিয়ে আসার জন্যে।আঁকদ করিয়ে রাখব।ওর স্টাডি শেষ হলে তবেই তুলে দিব। ‘

রুদ্রিক মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,’ কিরে মারিয়া?আমাদের দেখি এই বিষয়ে কিছু জানালি না?’

মারিয়া নীলের দিকে আঁড়চোখে তাকালো।পরক্ষণে তাচ্ছিল্য হেসে বলে,’ যাকে জানানোর তাকে তো জানিয়েছিলাম।কিন্তু তার ভীতরে তো কোনো হেলদোলই নেই।তাই আর তোদের জানাই নি।’

নীল মারিয়ায় কথায় ওর দিকে করুণ চোখে তাকালো।
এদিকে রুদ্রিক মারিয়ার বাবাকে প্রশ্ন করে,’ তা আংকেল আপনি তো খুশি এই বিয়েতে বুঝলাম।কিন্তু যার বিয়ে সে খুশি তো?’

মারিয়ার বাবা হেসে বলেন,’ অবশ্যই আমার মেয়ে খুশি।কেন খুশি হবে না?আমি ওর বাবা।আর বাবা মা সন্তানদের জন্যে সবসময় সেরাটাই দেয়।’

রুদ্রিক শীতল কণ্ঠে বলে,’ কখনও কখনও দামি বা সেরা কোনো কিছুতে আমরা এতোটা খুশি হইনা।যতোটা আমাদের মনের মতো পছন্দের জিনিস পেয়ে হই।হোক না তা কম দামি।তবুও তাদের মূল্য আমাদের কাছে আকাশসম থাকে।কারন তা আমাদের পছন্দের, খুব চাওয়ার কিছু।’

মারিয়ার বাবা ভ্রু-কুচকে তাকালেন।বললেন,’ তুমি কি বলতে চাইছ রুদ্রিক। সাফ সাফ বলো।’

রুদ্রিক সটান হয়ে দাঁড়ালো।পকেটে হাত গুজে নির্লিপ্ত কণ্ঠে ডেকে উঠে,’ নীল।’

রুদ্রিকের ডাক শুনে নীল ওর দিকে তাকালো।তারপর মারিয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে সোজা হেটে গিয়ে দাঁড়ালো মারিয়ার বাবার কাছে। বুক ভরে শ্বাস টেনে নিয়ে বলে ফেলল,’ আংকেল।আমি মারিয়াকে ভালোবাসি।আর মারিয়াও আমাকে ভালোবাসে।আমি মারিয়াকে বিয়ে করতে চাই।’

নীলের মুখে এমন কথা শুনে মারিয়ার হেঁচকি উঠে গেল।সাফাত মুচঁকি হেসে একগ্লাস পানি এগিয়ে দিলো মারিয়ার দিকে। মারিয়া দ্রুত গটগট করে খেয়ে নিলো।এদিকে নীলের মুখে এমন সোজাসাপ্টা ভালোবাসার কথা শুনে মারিয়ার বাবা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গেলেন।অবিশ্বাস্য স্বরে চেঁচিয়ে উঠেন,’ কি?কি বলছ এসব তুমি?’

ইহান এগিয়ে এসে বলে,’ হ্যা আংকেল। নীল ঠিক বলছে।নীল আর মারিয়া দুজন দুজনকে ভালোবাসে।তাই আপনি এই বিয়েটা ভেঙে দিন।কারন এই বিয়েতে মারিয়া কখনও সুখি হবে না।’

মারিয়ার বাবা রাগি চোখে মারিয়ার দিকে তাকালো।মারিয়া এতে ভয় পেয়ে গেল।সাফাত ওর কাধে হাত রেখে বলে,’ ভালোবাসলে ভয় পেতে নেই মারিয়া।ভয় পেলে যে ভালোবাসা হয় না।’

মারিয়া সাফাতের কথায় ভরসা পেলো।চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস টেনে নিলো।তারপর হেটে গিয়ে ওর বাবার মুখোমুখি দাঁড়ালো।সাহসী গলায় বলে,’ হ্যা বাবা নীল যা বলছে ঠিক বলছে।আমি আর নীল একে অপরকে ভালোবাসি।তাই আমি এই বিয়েটা করতে চাইনা বাবা।’

মারিয়ার বাবা সজোড়ে চ’ড় মেরে দিলেন মেয়ের গালে।চড় খেয়ে মারিয়া স্তব্ধ হয়ে গেল। ওর বাবা ওর এতো বছরের জীবনে কখনও ওকে একটা ফুলের টোকাও দেয়নি।আর আজ ওর সেই বাবা ওকে এইভাবে সবার সামনে মারল।কষ্টে মারিয়ার চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগল। মারিয়া ফুপিয়ে উঠল।মারিয়ার বাবা চিৎকার করে উঠলেন,’ লজ্জা করেনা এসব বলতে তোমার?আজ বাদে কাল তোমার বিয়ে।আর সেই তুমি কিনা আজ তোমার প্রেমিককে নিয়ে এসে বলছ তুমি এই বিয়ে করতে পারবে না।’

মারিয়া বাবার কথায় দুহাতে চোখ মুছে নিলো।দৃঢ় গলায় বলে,’ হ্যা,পারব না।কারন আমি নীলকে ভালোবাসি।’

মারিয়ার বাবা আবার মারিয়ার দিকে তেড়ে আসতে গেলে নীল এসে উনার সামনে দাঁড়ায়।মারিয়ার বাবা নীলের দিকে রাগি চোখে তাকালেন।নীল এতে দমল না বিন্দুমাত্র।
‘ আংকেল ওকে মারবেন না প্লিজ।আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।এতে দোষের কি আংকেল?’

মারিয়ার বাবা রাগি গলায় বলে,’ এখানে দোষের কিছু না।আর না মারিয়া তোমাকে ভালোবাসে এই কারনে আমি ওকে চড় মেরেছি।’

উনার কথায় সবাই অবাক হয়ে গেল। রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে বলে,’ মানে আংকেল বুঝলাম না।’

রুদ্রিকের কথায় মারিয়ার বাবা বলে উঠেন,’ আমি এই কষ্টে ওকে চড় মেরেছি যে।আমি ওর বাবা হয়ে এটুকু বিশ্বাস অর্জন করতে পারলাম না।যেই কারনে আমার মেয়ে আমার কাছে তার ভালোবাসার কথা বলতে পারল না।এই এতো বছরে ও আমায় এই চিনল?আমি কি সেইসব বাবার মতো যে মেয়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ওকে জোড় করব কোনো কিছু নিয়ে?আমি তো তেমন বাবা নই।ও কি সেটা জানে না?তাও কেন আমার থেকে সবটা লুকাল।আরেহ আমার মেয়ে যদি আমায় বিশ্বাস ভরসাই করতে না পারে।তাহলে আমি আর কি করব?তাহলে তো আমার এটাই বুঝে নিতে হয়।বাবা হিসেবে হয়তো আমি ব্যর্থ।’

মারিয়ার বাবার এহেন কথায় সবার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরল।ওরা সবাই অবিশ্বাস চাহনী নিয়ে তাকিয়ে আছে মারিয়ার বাবার দিকে।ওদের এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না।আসলে কষ্ট হচ্ছে উনার কথাগুলো হজম করতে।

#চলবে_____________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here