#মনের_উঠোন_জুড়ে
#পর্ব_১৩
#লেখনীতে_নূন_মাহবুব
-“আই লাভ ইউ সাহিত্য স্যার।আপনি সত্যি বাস্তবে এসেছেন? আপনি তো রোজ রাতে আমার স্বপ্নে আসেন। আমার সাথে গল্প করেন।আর আজ বাস্তবে ও এসেছেন? আই কান্ট বিলিভ দিস। সাহিত্য স্যার প্লিজ আপনার সাথে একটা সেলফি তুলি। আমার ফ্রেন্ডদের দেখিয়ে বললো, সাহিত্য স্যার দিলের টানে আমার বাসায় এসে হাজির হয়েছে।”
-” আরে বাবু ! এটা কি করছো তুমি? এইভাবে কেউ কোমর জড়িয়ে ধরে?”
-” আমি বাবু না। আমার নাম পাখি।আর কোমর জড়িয়ে ধরবো না তো কি করবো? আপনি তো অনেক লম্বা। তাছাড়া একটা মেয়ে রয়েছে আপনার কোলে।তাই তো বুদ্ধি করে কোমর জড়িয়ে ধরেছি। পরক্ষণে আবার প্রিয়া মন খারাপ করে বললো, আপনার কোলে ঐ শা’ক’চু’ন্নী টা কে?ওকে কোলে নিয়েছেন কেন আপনি? আপনি শুধু আমাকে কোলে নিবেন,আর কাউকে না। কে হয় ঐ মেয়েটা আপনার?”
-” সাহিত্য আমতা আমতা করে কিছু বলার আগেই আবৃত্তি বললো,ও শিক্ষা। আমার কাজিন।”
-” ও আচ্ছা। কাজিন কথাটা আগে বলবেন তো।পাখি কানে হাত দিয়ে বললো,সরি সাহিত্য স্যার।”
-“সাহিত্য হেসে দিয়ে বললো, তুমি তো দেখছি অনেক…
-” হ্যাঁ হ্যাঁ জানি আমি অনেক কিউট। এজন্য সবাই আমাকে মিষ্টি পাখি বলে ডাকে। জানেন স্কুলে গেলে কতো ছেলে আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু আমি কাউকে পাত্তা দেই না। আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে শুধু আপনার বসবাস ।এই পাখির কাছে কেউ পাত্তা পাবে না। শুধু মাত্র একজন ছাড়া।আর এই একজন হলেন আপনি।”
-” ও আচ্ছা তাই নাকি? তো তুমি কোন ক্লাসে পড়ো বাবু?”
-” পাখি হাত দিয়ে দেখিয়ে বললো ,অনেক বড়ো ক্লাসে পড়ি স্যার । ক্লাস সিক্সে।”
-” ও মাই গড!”
-“সাহিত্যের কথা শুনে আবৃত্তি বললো, কাম অন ভাইয়া।ডিজিটাল যুগের বাচ্চা বলে কথা। এতটুকু স্মার্ট না হলে কি হয় বলো তো ? অথচ আমার স্পষ্ট মনে আছে পাখির মতো বয়সে মম আমাকে ক্লাসে নিয়ে গিয়ে আমার সাথে বসে থাকতো।মম কে ছাড়া আমি এক মিনিট ও ক্লাসে থাকতাম না। সে কি কান্না জুড়ে দিতাম। সত্যিই সেই দিন গুলো খুব মিস করি।”
-” হুম আমি ও।”
-” আবৃত্তি পাখির গাল টেনে প্রিয়ার কথা জিজ্ঞেস করছে, এরই মধ্যে প্রিয়া কিচেন থেকে বললো, হ্যাঁ রে পাখি কে এসেছে?”
-” তুমি এসে দেখে যাও আপু। আমার স্বপ্নের পুরুষ এসেছে। আমি সাহিত্য স্যার কে পছন্দ করি বলে তুমি সবসময় আমাকে গাল মন্দ করো। কিন্তু দেখো সে আজ নিজে থেকে আমাকে দেখতে চলে এসেছে।”
-” প্রিয়া এসে দরজায় সাহিত্য আর আবৃত্তি কে দেখে প্রিয়ার চুল টেনে দিয়ে বললো, গা’ধা কোথাকার। ওদের কে ভেতরে আসতে না দিয়ে গল্প জুড়ে দিয়েছিস।তোকে কতোবার বলেছি কোনো মেহমান আসলে আগে তাকে ভেতরে নিয়ে বসতে দিতে হয়।”( লেখিকা নূন মাহবুব )
-” আহ্ প্রিয়া! শুধু শুধু বাচ্চা মেয়েটা কে বকছিস কেন?”
-” তুই পাখির হয়ে কথা বলিস না আবৃত্তি। কিন্তু তোদের কি হয়েছে? শিক্ষার এই অবস্থা কেন? তুই না বর্ণের বার্থ ডে পার্টিতে গেছিস? কিন্তু এইখানে এইভাবে? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
-” ডোন্ট প্যানিক। তেমন কিছু হয় নি আমার। শিক্ষা আর ভাইয়ার একটু আঘাত লেগেছে।আমি পরে তোকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।”
-” ঠিক আছে, ভেতরে আয়। আমার পরিচিত ডক্টর আঙ্কেল কে কল করছি। এক্ষুনি চলে আসবে।”
-” কিছুক্ষণ পর ডক্টর এসে শিক্ষার চেক আপ করে বললো, চিন্তার কোনো কারণ নেই। দূর্বলতার জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।ওর খাওয়া দাওয়ার প্রতি একটু খেয়াল রাখবেন।আর হ্যাঁ আমি কিছু ঔষধ আর মলম দিয়ে যাচ্ছি। এগুলো ঠিক টাইমে ওকে দিবেন।”
-“ঠিক আছে ডক্টর।”
-” তাহলে আমি এখন আসছি কেমন?”
-” না না আঙ্কেল।একটু চা নাস্তা করে যান।”
-“আকাশের অবস্থা ভালো না প্রিয়া। যেকোনো সময় বৃষ্টি আসতে পারে। আমি অন্য একদিন এসে শুধু চা নাস্তা নয় একদম কব্জি ডুবিয়ে খেয়ে যাবো।”
-” ঠিক আছে। সাবধানে যাবেন আঙ্কেল।”
-” ডক্টর যাওয়ার পর আবৃত্তি পুরো ঘটনা প্রিয়া কে খুলে বললো। সব শুনে প্রিয়া বললো,সরি রে আমার জন্য তোর এই বাজে পরিস্থিতির শিকার হতে হলো।আমি যদি রাতে তোকে আমাদের বাড়ি না আসতে বলতাম,তাহলে হয়তো তোর সাথে এসব কিছু হতো না। নিজেকে আমার অপরাধী মনে হচ্ছে আবৃত্তি। তুই আমাদের বাড়ি আসিস নি দেখে আমি ভেবেছিলাম তুই হয়তো আমাকে রেখে বর্ণদের বাড়ি চলে গেছিস।তাই তোর উপর অভিমান করে আমি নিজেও বর্ণদের বাড়ি যাই নি।আর না তোকে কল করে জানতে চেয়েছি তুই গেছিস কি না।”
-” থাক না প্রিয়া।যা হবার হয়েছে। তুই একটু শিক্ষার কাছে থাক। আমি পাপা কে কল করে আসি। শিক্ষাকে না দেখতে পেয়ে নিশ্চয় টেনশন করবে।আমি ইনিয়ে বিনিয়ে কিছু একটা বলে আসি।”
-” ঠিক আছে যা।”
___________________________________
-” শিক্ষা মোটামুটি সুস্থ্য এখন। যদিও শিক্ষা একটু বেটার ফিল করার পর বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলো। কিন্তু অনেক ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।যার কারণে তারা বাড়ি ফিরতে পারে নি।প্রিয়াদের বাড়ি রাত্রি যাপন করতে হচ্ছে।রাতে ডিনারের জন্য প্রিয়া আর আবৃত্তি মিলে খিচুড়ি , গরুর গোশত , শুকনো মরিচ ভর্তা, ডিম ভাজি করে রেখে সবাই মিলে গল্প গুজব করছে। তাদের গল্পের মাঝে পাখি এসে বললো,জানেন সাহিত্য স্যার আমি আপনাকে কত্তো ভালোবাসি? অবশ্য আপনার জানার কথা নয়।কারণ আমি তো আপনাকে কখনো আমার ভালোবাসার কথা বলি নি। আপনি আমাকে বিয়ে করবেন সাহিত্য স্যার? আমাদের বিয়ে হবে , অনেক গুলো বাচ্চাকাচ্চা হবে।”
-“এতটুকু বাচ্চা মেয়ের কথা শুনে সাহিত্য ঢোক গিলে ফললো, কিন্তু আমি তো বিবাহিত পাখি। আমার বউ আছে।এখন বাচ্চাকাচ্চা হওয়াটাই বাকি।সেটাও খুব শ্রীঘ্রই হয়ে যাবে। যদি আমার বউ চায়।”
-” সমস্যা নেই স্যার।আমি সতীনের সংসার করতে পারবো। বিশ্বাস করেন আমরা দুইজন বোনের মতো মিলেমিশে সংসার করবো।একটু ও ঝগড়া করবো না।”
-“সাহিত্য প্রিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো,আমার বউ কিন্তু অনেক হিংসুটে, গুন্ডি টাইপের। তোমার মাথায় একটা চুল ও অবশিষ্ট থাকবে না দেখো।আর সে কখনো আমাকে দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি দিবে না।আমাকে জ্যা’ন্ত পুঁ’তে দেবে।”
-” বাব্বা আপনি এতো বড়ো একজন সিআইডি অফিসার হয়েও বউ কে ভয় পান?”
-” বউকে ভয় পায় না ,এমন পুরুষ হয়তো পৃথিবীতে একটা ও নাই। বেচারা পুরুষেরা বাইরে বাঘ। কিন্তু ঘরে বউয়ের কাছে ভেজা বেড়াল। তুমি সবে মাত্র ক্লাস সিক্সে পড়ো।এখনো সময় আছে ভালো করে পড়াশোনা করো ।দেখবে আমার থেকে বড় কোন রাজপুত্র আসবে তোমার জীবনে।”
-“আমার বড়ো কোন অফিসারের প্রয়োজন নেই। আমার আপনাকে চাই সাহিত্য স্যার।আমি আপনার বউকে ম্যানেজ করে নিবো। দরকার হলে শিক্ষা আপুকে নিয়ে যাবো আপনার বউয়ের কাছে।আপু দেখতে যেমন মিষ্টি,তেমনি তার ব্যবহার ও মিষ্টি।আপু ঠিক আপনার বউ কে বুঝিয়ে বলতে পারবে।পাখি শিক্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,আপু তুমি যাবে তো আমার সাথে স্যারের বউয়ের কাছে?”
-” হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো তো পাখি। পাখির কথা শুনে প্রিয়া ফোন নিয়ে বাইরে চলে গেলো। তৎক্ষণাৎ সাহিত্যের ফোনে একটা মেসেজ আসলো, কারো যদি বউয়ের দরকার হয়,আরো তিনটা বিয়ে করতে পারে। আমার তার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”
-” সাহিত্য মুচকি হেসে রিপ্লে দিলো, নির্ঘাত বাচ্চা মেয়ে টা মানতে চায়ছে না,তাই তাকে বোঝাতে বলতে হয়েছে। কিন্তু আপনি এমন ভাব করছেন যেন আপনার প্রতি আমার ইন্টারেস্ট বেয়ে বেয়ে পড়ছে।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।।#মনের_উঠোন_জুড়ে
#পর্ব_১৪
#লেখনীতে_নূন_মাহবুব
-” হ্যাঁ বাবা বলো।চাচার কি খবর?সব ঠিকঠাক আছে তো?”
-” না রে মা। কিচ্ছু ঠিক নেই।তোর চাচার অবস্থা বেশি ভালো না। কোমায় রয়েছে।হয়তো বাঁচবে না। তোদের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে । দুই টা মেয়েকে ফাঁকা একটা বাড়িতে রেখে এসেছি। আশেপাশে বখাটে ছেলেদের আনাগোনা চলে। ভেতর টা কেমন যেনো কু ডাকছে।যদিও আমরা বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলাম কিন্তু ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।যার জন্য ফিরতে পারি নি।”
-” তুমি চিন্তা করো না বাবা।আমরা ঠিক আছি।”
-” পাখি কোথায়?”
-” পাখির কথা আর বলো না বাবা। আমাদের বাড়িতে সাহিত্য ভাই আর আবৃত্তি এসেছে। তুমি তো জানো পাখি সাহিত্য ভাই কে কতো পছন্দ করে। বাড়িতে আসার পর থেকে শুরু হয়েছে ওর ননস্টপ বকবক। পাগল করে দিচ্ছে সাহিত্য ভাই কে। আমি কয়েক বার গরম চোখে পাখির দিকে তাকিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয় নি।ওর নিজের মতো করে বকবক করে যাচ্ছে।”
-” সাহিত্যে কে আমি যতটুকু চিনি ও পাখির কথায় কিছু মনে করবে না।ও আমাদের কে নিজের পরিবার মনে করে। তাছাড়া সাহিত্য তোকে আর আবৃত্তি কে কখনো আলাদা করে দেখে না। কয়েক বছর আগে সাহিত্য তোকে র’ক্ত দিয়ে তোর প্রাণ বাঁচিয়েছিলো। তারপর থেকে সাহিত্য কে আমার বড় ছেলের আসনে বসিয়েছি।”
-” সত্যিই আবৃত্তি আর সাহিত্য ভাইয়ের অবদান কখনো ভুলতে পারবো না আমি।”
-” তোর মা তো বাড়িতে নেই । কিন্তু দেখিস ওদের যেন আদর আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি না হয়।রাতে খেতে দিয়েছিস তো ওদের?” (লেখিকা নূন মাহবুব )
-” না বাবা। আমি আর আবৃত্তি মিলে রান্না করে সব কিছু গুছিয়ে রেখে এসেছি। এখন গিয়ে খেতে দিবো।”
-” ঠিক আছে। রাখছি তাহলে। সাবধানে থাকিস। আর হ্যাঁ পাখির খেয়াল রাখিস কিন্তু।”
-” ওকে বাবা। ”
-” প্রিয়া কথা বলা শেষ করে রুমে প্রবেশ করার সাথে সাথে আবৃত্তি জিজ্ঞেস করলো, কি রে কোথায় চলে গিয়েছিলি?”
-” বাবা কল করেছিলো। তোরা গল্প করছিস তাই আমি বাইরে গিয়ে কথা বলে আসলাম।বাবা অনেক খুশি হয়েছে তোরা এসেছিস বলে। অনেক রাত হয়েছে।চল তোরা খেয়ে নে। সাহিত্য ভাই চলেন বলে প্রিয়া দরজার বাইরে পা রাখার আগেই সাহিত্য বললো, দাঁড়া প্রিয়া। তোর নামে অভিযোগ এসেছে। তুই নাকি পাখি কে সবসময় বকা দিস? ওর দিকে গরম চোখে তাকিয়ে থাকিস?”
-“আপনি ওর কথায় কান দিবেন না সাহিত্য ভাই।ও একটা মিথ্যুক।ও নিজে আমাকে মা’রে। আমাকে বড় বলে সম্মান করে না।আমি পড়াতে গেলে বলে আমি ওকে যা শিখিয়ে দিই সব নাকি ভুল।আমি নাকি পড়াশোনা জানি না।ফেলটু করে করে এতো পর্যন্ত এসেছি।”
-” মিথ্যা তো তুই বলছিস প্রিয়া। কিছুক্ষণ আগে আমি আড়চোখে দেখেছি তুই পাখির দিকে গরম চোখে তাকিয়ে আছিস।ওর মতো কিউট, মিষ্টি একটা মেয়ে কে কিভাবে বকা দিস হ্যাঁ? এরপর যদি আর কখনো পাখি কে বকা দিস,তোকে সোজা জেলে ঢুকিয়ে দিবো।”
-” সাহিত্যের কথা শুনে মিটমিট করে হেঁসে উঠলো পাখি।যেন সে অনেক খুশি হয়েছে।”
-” সাহিত্য পাখি কে হাসতে দেখে জিজ্ঞেস করলো, প্রিয়া কে ইচ্ছে মতো বকা দিয়েছি। এবার খুশি তো মিষ্টি পাখি?”
-” হ্যাঁ অনেক।”
-” তাহলে চলো এবার আমরা ডিনার করে আসি।”
-” হ্যাঁ ,চলো। কিন্তু শিক্ষা আপু তো ঘুমিয়ে পড়েছে।আপু কি রাতে খাবে না?”
-” সাহিত্য শিক্ষার দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি শিক্ষা ঘুমিয়ে পড়েছে। কপালে, হাতে বেশ খানিকটা কেটে গিয়ে র’ক্ত জমাট বেঁধে কালো হয়ে রয়েছে। শিক্ষা কে এই অবস্থায় দেখে শিক্ষার প্রতি সাহিত্যের কেমন যেনো মায়া মায়া অনুভব হয়।তার নিজের বোনের জন্য আজ শিক্ষার এই অবস্থা। সাহিত্য এসে শিক্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,থাক না ও কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে! যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন না হয় খাবে।”
-” ঠিক আছে সাহিত্য স্যার। এবার তো চলো। আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে।”
-” হুম , যাওয়া যাক।”
-” সাহিত্য ডিনার শেষ করে প্লেটে শিক্ষার জন্য খাবার সাজিয়ে নিয়ে এসে দেখে শিক্ষা বিছানায় নাই। সাহিত্য শিক্ষা শিক্ষা বলে দুই তিন ডাকার পর শিক্ষা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে বললো, এমন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছেন কেন?”
-” তোর জন্য খাবার এনেছি। তাড়াতাড়ি খেয়ে ঔষধ খেতে হবে। ক্ষতস্থানে মলম লাগাতে হবে।”
-” আমার বিষয়ে আপনার না ভাবলে ও চলবে।”
-” সাহিত্য রেগে গিয়ে শিক্ষার দুই বাহু চেপে ধরে বললো, কিছু না বলে বলে তোর অনেক বাড় বেড়েছে শিক্ষা। ডোন্ট গ্ৰো সো ফার।”
-” শিক্ষা সাহিত্যের হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বললো, আমাকে শাসন করার আপনি কে মিস্টার সাহিত্য শিকদার?”
-” প্রশ্ন টা তোর নিজেকে কর শিক্ষা।আই নো ভেরি ওয়েল দ্যাট ইউ উইল গেট দ্যা অ্যান্সার।”
-” প্রয়োজন বোধ মনে করছি না।”
-” ওকে ফাইন ।খেয়ে নে এখন।”
-” জুতো মে’রে গরু দান করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমার সময় মতো আমি খেয়ে নিবো।”
-” সাহিত্য শিক্ষার খাপছাড়া কথা শুনে শিক্ষা কে জোর করে বিছানায় বসিয়ে নিজে হাতে খাবার মেখে শিক্ষার গালে ঢুকিয়ে দেয়। শিক্ষা খাবে না খাবে না করে প্লেটে রাখা সবটুকু খাবার খেয়ে শেষ করে।যা দেখে সাহিত্য ফোড়ন কেটে বলে, খুব তো খাবো না খাবো না করছিলি। এখন খাবারগুলো কার পেটে গেলো শুনি?মনে হচ্ছে আমার পেটে গিয়েছে।”
-” শিক্ষা কিছু না বলে চুপচাপ শুতে যাওয়ার আগেই সাহিত্য শিক্ষা কে কেটে তুলে বললো, ঔষধ খেয়ে মলম লাগিয়ে তারপর যতো খুশি ঘুমা।”
-” পিঠের দিকে ও আঘাত লেগেছে।আমি মলম লাগাতে পারবো না। আবৃত্তি আপু আসুক, আপু লাগিয়ে দিবে।”
-” আবৃত্তি গল্প পেয়েছে এতো সহজে সে আসবে না। তুই উঠে বস । আমি মলম লাগিয়ে দিচ্ছি।”
-” তার কোনো প্রয়োজন…
-” বেশি কথা বললে আমি বাবা কে সব বলে দিবো।আর তারপর না পারবি পড়াশোনা করতে আর না পারবি বাড়ির বাইরে বের হতে।”
-” ঠিক আছে ,দিন।”
-” সাহিত্য মলম এনে শিক্ষার হাতে , কপালে ,পিঠে লাগিয়ে দিতে লাগলো।সাহিত্যের স্পর্শে কেঁপে উঠলো শিক্ষা।আমতা আমতা করে বললো,আজ আপনি আমার উপকার করছেন বিনিময়ে আমি একদিন আপনার কাপড় চোপড় পরিষ্কার করে দিবো। আমি কারোর কাছে ঋণী হয়ে থাকি না।”
-” সাহিত্য শিক্ষার পিঠে মলম লাগানোর সময় মনে মনে বললো , আমি তোকে কখনো বুঝে উঠতে পারি না শিক্ষা। তুই একটা রহস্যময়ী।তোকে ঘিরে রয়েছে হাজারো রহস্য। জানি না এই রহস্যের উন্মোচন কবে হবে???”
___________________________________
-” সেদিনের দূর্ঘটনা পর কেটে গেছে তিন দিন। শিক্ষা এখন পুরোপুরি সুস্থ্য।আজ ভার্সিটি তে এসেছে সে।তুবাসহ আরো কয়েকজনের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে শিক্ষার।পর পর তিন টা ক্লাস শেষ করে শিক্ষা ক্লাস রুম থেকে বেরিয়েছে এমন সময় বর্ণ পেছন থেকে শিক্ষা কে ডেকে বললো, তুমি শিক্ষা রাইট?”
-” হ্যাঁ ! কিন্তু আপনি কে?আমাকে কিভাবে চিনেন?”
-” আমি বর্ণ। আবৃত্তির ফ্রেন্ড। তোমার আর আবৃত্তির আমার জন্মদিনের পার্টিতে আসার কথা ছিলো কিন্তু আসো নি কেন? সেদিনের পর থেকে আবৃত্তি না ভার্সিটি তে আসছে আর না আমার ফোন রিসিভ করছে। মেয়েটা কে নিয়ে আর পারি না আমি ।কি যে করে এই মেয়েটা? আমাকে বোধদয় যন্ত্রণা দিয়ে মে’রে ফেলতে চায়।”
-” একচুয়ালি ভাইয়া আমরা রেডি হয়েছিলাম কিন্তু একটু সমস্যা কারণে যেতে পারি নি।সরি ভাইয়া।”
-” বর্ণ শিক্ষার মুখে ভাইয়া ডাক শুনে খপ করে শিক্ষার হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে বললো, প্লীজ বোন আমার একটা উপকার করে দাও।প্লীজ তোমার কাছে হাত জোড় করছি।”
-” ঠিক আছে ভাইয়া। বলুন না কি করতে হবে?”
___________________________________
-” একটা ঘটনা মানুষের জীবন কে পাল্টে দেয়। সেরকম টা হয়েছে সাহিত্যের। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার আবৃত্তি কে বাঁচানোর ঘটনা সাহিত্যের মনে দাগ কেটে যায়। সেদিনের পর থেকে শিক্ষার জন্য সাহিত্যের মনে একটা সফট কর্ণার তৈরি হয়েছে। সাহিত্যের ভার্সিটির পাশে একটা কাজ ছিলো।সে কাজ শেষ করে ভেবেছিলো আজ শিক্ষা কে নিয়ে শপিং এ যাবে,কেনাকাটা করবে,খাবে ঘুরবে। কিন্তু ভার্সিটি তে এসে থমকে যায় সাহিত্য। সাহিত্য দেখে একটা ছেলে শিক্ষার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটার মুখ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু শিক্ষা হেসে হেসে কথা বলছে।যা দেখে সাহিত্যের মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে। মূহুর্তের মধ্যে শিক্ষার প্রতি পুরোনো ঘৃণা জেগে ওঠে।
চলবে ইনশাআল্লাহ।।