#হৃদরোগ
#অহর্নিশা
#পর্ব_সংখ্যা ৩
. সেই দিন সম্ভবত শুক্রবার ছিল , কিছু একটা সরকারি কাজের জন্য কলেজ ছুটি থাকায় আমারা তিন মূর্তি গ্ৰুপ স্টাডি করার প্ল্যান করি । তো কথানুযায়ী আমি আর স্নেহা গিয়েছিলাম অনুর বাড়িতে । সুভাষপল্লি রোডের একদম মোড় মাথাতেই দোতলা বিশিষ্ট বাড়িটা অনুদের। ওদের বাড়ির সামনের দিকে ছোটো বাগান আছে , সেই বাগান পেরিয়ে ছোটো গেট এবং গেটের ছাউনী লতা পাতায় জড়ানো।
পড়া শেষে আমি আর স্নেহা বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরোই। অনু আমাদের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিতে আসে,,,,, অনু আর স্নেহা বকবক করতে করতে আমার পেছনে আসছিলো আর আমি ওদের থেকে এগিয়ে গেট খুলে বেরোই । বেরিয়েই সামনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে যাই„„„„
আমার হৃদস্পন্দন হঠাৎ করেই বেড়ে গেল , খুশিতে চোখ দুটো চক চক করে উঠলো। ঠিক কত দিন পরে আমি এই মুখ দেখতে পাচ্ছি,,,,, মরুভূমিতে এক পশলা বৃষ্টির মতো তার এই দর্শন….
এই সু তোর হঠাৎ কী হলো?? এই ভাবে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস , বুকে ব্যাথা করছে??
হুঁ…
অনু আর স্নেহা একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে, তারপর আমাকে জোরে ঝাঁকি দেয় । আমি চমকে উঠলাম…
এই আমার না বুকে ব্যাথা করছে… অসহনীয় ব্যাথা । মনে হয় কোনো বড়োসড়ো রোগ হয়েছে জানিস , আমি বেশি দিন আর বাঁচবো না।
কী হয়েছে ভাই ?? এরকম বলছিস কেনো হঠাৎ?? এতক্ষণ তো সব ঠিকই ছিল, ইতিমধ্যে কী হলো?… আমার কথা শুনে অনু বলে„„„
” হৃদ রোগ ” হয়েছে আমার… দৃষ্টি সামনে রেখে উওর দিলাম„„ ওরা আমার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকায় , বাইকের ওপর বসে ফোনে কথা বলছে এক সুঠামদেহী যুবক ।
ভাই মালটা কে রে ? জোস দেখতে, পুরো আগুনের গোলা … অনু বলে
আমি মুচকি হেসে তাকাই অনুর দিকে„„„
কখন দিয়ে দেখছি তুই ওই ভাইয়াটাকে চোখ থেকে গিলে খাচ্ছিস , ব্যাপার কী বলতো?? স্নেহা দাঁত কেলিয়ে বলে …
আরে সু না বলল , ও বেশি দিন বাঁচবে না ,,,,, তাই পৃথিবীর যতগুলো সুন্দর মাল আছে ও এখনি দেখে নিচ্ছে । কী বলিস সু ?.. অনু আমাকে চোখ টিপ দিয়ে বলে । আমি ওদের দিকে চোখ সরু করে তাকাই,,,,
ওই দেখ হৃদ , আমি সামনের দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে ওই সুদর্শন পুরুষকে দেখাই ।
কোন হৃদ ?? তুই চিনিস ভাইয়াটাকে ? স্নেহা প্রশ্ন করল আমাকে..
বাসে যে আমার পাশে বসেছিল সেই , মুখটা ঊজ্বল করে বললাম।
তুই তো সেইদিন বললি তোর ভাইয়াটার সাথে কোনো কথা হয়নি , তো নাম জানলি কীভাবে? অনু ভ্রু কুঁচকে বলল ..
আমি ওদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম , তাকে দেখলেই আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় আর তাছাড়া আমি তার নাম জানি না , কতদিন বা সে, তার করে বলবো তাই নামটা দিয়েছি।
আরি বাস.. কথাটা আগে বলবিনা , এতক্ষণ আমরা সময় নষ্ট করলাম , চল গিয়ে কথা বলি „„ এই বলে অনু আমার হাত ধরে টান দিলো রাস্তা পার হবার জন্য ….
আমি টাল সামলাতে না পেরে অনুর সাথে হাটতে লাগলাম, স্নেহাও এলো পেছনে …
আমরা রাস্তার ওপারে যেতে না যেতে বাইকটা আমাদের চোখের সামনে থেকে ধোঁয়া উড়িয়ে চলে গেল , আমরা তার যাওয়ার দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকলাম যতক্ষন না বাইকটা চোখের আড়াল হলো।
লে হালুয়া , যার জন্য এলাম সেই উড়ে গেল , সু রে তোর লাক টাই খারাপ । অনু মুখটা ছোটো করে বললো…..
শোন সু কষ্ট পাস না , দ্বিতীয়বার যখন দেখা হয়েছে তৃতীয়বার নিশ্চয়ই হবে আর যদি তা না হয় তবে তোর হৃদপিন্ডকে পাতাল থেকে হলেও খুঁজে বের করবো । তুই চাপলেস থাক , কী বলিস অনু ?
হ্যাঁ একদম । এই বলে দুজনে হাই ফাই করে ।
এই দুটোতে এবার বাড়ি যা, অনেকটা দেরি হয়ে গেছে । অনু বলল,,,,,
আমরা অনুকে বিদায় জানিয়ে রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।
________________________________________________
অনুর ডাকে বাস্তবে ফিরে এলাম ,
সু তুই ঠিক আছিস??
হুম,,,,,,
চল গিয়ে কথা বলবি ,,,,,,
কী বলবো ??
এটাই যে তুই ওনাকে অনেক পছন্দ করিস …..
ওনারা তো কত জন ওখানে , আমি গিয়ে কীভাবে বলবো ? আমি পারবো না রে … মুখটা ছোটো করে বললাম।
মুখ থেকে বলবি বলদ , আচ্ছা তোর জনসংখ্যা থেকে অসুবিধা হচ্ছে তো ? দাঁড়া আমি বাঁদর গুলো কে ফোন করে ডাকছি,,,,,, স্নেহা তো ক্লাস করছে ওকে ডাকা যাবে না । এই বলে অনু ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো,,,,
না থাক কাউকে ফোন করতে হবে না । এই বলে আমি অনুর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলাম,,,,,
ভাই তুই এত ভালো চান্স পেয়েছিস , তো কাজে লাগা এটা কে । আর যদি দেখা না পাস , পরে কষ্ট পাবি তো ? তার থেকে ভালো বলে দে । মনের কথা মনে রেখে আর কত কষ্ট পাবি ? একবার বলে তো দেখবি কী হয় ,,,,, কী বলছি বুঝতে পারছিস ??
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। অনুর দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
অনু আমার হাত ধরে ওদের কাছে যাওয়ার জন্য উদ্যত হল,,,,,,,
চলবে…….