#অপ্রিয়।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
#প্রথম_পর্ব।
কোত্থেকে যেন হুট করে এসেই ছেলেটা আমার পড়ে যাওয়া শাড়ীর আঁচল টা বুকে তুলে দিয়ে বল্লো,
-শাড়ী যদি সামলাতেই না পারো,তবে শাড়ী পরেছো কেন?
নাকি ফ্যাশন করো?
ফ্যাশন করো ফ্যাশন?তোমাদের মত মেয়েদের জন্যই যুবসমাজ আজ ধ্বংসের পথে।
ইচ্ছে করছে এক থাপ্পড়ে সব গুলো দাঁত ফেলে দেই।
যাও ভেতরে যাও।আবার হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
এখনো যায় না দেখি।মারবো নাকি একটা থাপ্পড় গাল বরাবর?
আমি কোন কথা না বলেই ছলছল চোখ নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করি।
দিন টা ছিলো আমার খালাতো বোনের গায়ে হলুদের দিন।
আর যে আমার শাড়ীর আঁচল তুলে দিয়েছিলো সে হলো আমার খালাতো বোনের ফুফাতো ভাই।
সেদিন অনেক টা শখের বশেই শাড়ীটা পরি আমি।
আমার জীবনের প্রথম শাড়ী পরা হয় ওইদিন।
আম্মু আমাকে নিজ হাতে শাড়ীটা পরিয়ে দিয়েছিলেন।
অনেক গুলো সেফটিপিনও লাগিয়ে দিয়েছিলেন আমার শাড়ীতে।কিন্তু কিভাবে যে শাড়ীর আঁচল টা খুলে যায় আমি বুঝতেও পারিনি।
আর ফলাফল এমন অপমান।
তাও আবার আমার থেকে এত্ত বড় একটা ছেলের কাছ থেকে।
সে আমাকে এমন ভাবে অপমান না করলেই পারতো।
আঁচল যখন তুলে দিয়ে হেল্পই করবি,তাহলে আবার অপমানসূচক কথা গুলো বলার দরকারই বা কি ছিলো?
ছেলেটার নাম দিহান।
আমি এখন দিহানকে দেখলেই দূরে দূরে থাকছি।
কখন আবার কোন ভুল ধরে,
আবার না অপমান শুরু করে দেয়।
আমি মুসাররাত।
আম্মু আব্বুর আদরের এক মাত্র সন্তান।
আজ পর্যন্ত আম্মু আব্বু আমাকে একটা ধমক পর্যন্ত দেন নি।
আর থাপ্পড় তো অনেক দূরের কথা।
আমি তখন ক্লাস টু তে পড়ি।
একদিন আমার প্রাইভেট টিচার আমাকে একটা স্কেল দিয়ে বাড়ি দিয়েছিলেন।
আমি বাড়ীর কাজ করিনি বলে।
আমার হাত টা পুরো লাল হয়ে গিয়েছিলো।
যেন আমার হাতে রক্ত জমে গেছে।
আম্মু দেখার সাথে সাথে পরের দিন স্যারকে বিদায় করে দেন।
স্যার বলে গিয়েছিলো,
এমন আদর করে সন্তান লালন পালন করলে,সন্তান কোন দিন মানুষের মত মানুষ হবেনা।
ছেলেপেলে কে পিটিয়ে মানুষ করতে হয়।
আম্মু উত্তর দিয়েছিলেন,
আমার মেয়ের ওমন মানুষ হতে হবেনা,যেই মানুষ কিনা এই টুকু বাচ্চাকে পশুর মত পিটাতে পারে।
গরু কারো ক্ষেতে হামলা করলে গরুকে রাখাল যেভাবে পিটায় সেভাবে।
আম্মু আমার হাত দেখে অনেক কেঁদেছিলেন।
আমার থেকে আম্মুই বোধয় বেশি ব্যথা পেয়েছিলেন।
আমি একদিন হাঁটতে হাঁটতে কিভাবে যেন পা স্লিপ করে আমাদের বাসার বড় আম গাছ টার উপরে পড়ে যাই।আর আম গাছে ধাক্কা লেগে আমার মাথায় অনেক আঘাত পাই।
আব্বু পরের দিনই ওই আম গাছ টা লোক দিয়ে কাটিয়ে ফেলেন।
আজ পর্যন্ত কোন কিছু চাইতে হয়নি আমার।
না চাইতেই সব পেয়েছি আমি।আম্মু আব্বু আমার জন্য এনে হাজির করেছেন।
আজ রত্না আপুর বিয়ে।
আজ পর্যন্ত যত বিয়ে দেখেছি সব বিয়ে হয়েছে বিকেলে।
কিন্তু রত্না আপুর কেন রাতেই বিয়ে করার ইচ্ছে হলো বুঝলাম না।
বাসায় বলেছে,বিয়ে করলে রাতেই করবে।
তাই আপুর রাতেই বিয়ে হবে।
আমার আম্মুর শখ আমিও রত্না আপুর মত শাড়ী চুড়ি পরে বঁধুর সাজে সাজবো।
তাই আমাকেও আম্মু রত্না আপুর মত সব কিছু কিনে দেন।
আর পার্লার থেকে এসে রত্না আপুকে সাজানোর পর আমাকেও পার্লারের আপুটা শাড়ী পরিয়ে সাজিয়ে দেয়।
রাত হয়ে গেছে,একটু পরেই রত্না আপুর বিয়ে।বর যাত্রী এসে খাওয়াদাওয়া করে বসে আছে।
আমার হিসু পেয়েছে তাই আমি আম্মুকে বলে আম্মু আর রত্না আপুর কাছ থেকে উঠে বাথরুমে যাবার জন্য ভেতরে যাই।
আর তখনই হঠাৎ কারেন্ট চলে যায়,
সারাবাড়ী হঠাৎ করেই অন্ধকার।
এমনই বিয়ে বাড়ী এটা জেনারেটারেরও ব্যবস্থা করা হয়নি।আপু নাকি না করেছেন।
বিয়ে করবে রাতে,আবার জেনারেটারের ব্যবস্থা করতেও বারণ করেছে।কি অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার।
রত্না আপু এত আজব কেন?
ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কে যেন রুমাল দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে।
আমি লুটিয়ে পড়ি।
আর যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি আয়ায়ায়া বলে চিৎকার দিয়ে উঠি।
যখন দেখি আমি একটা খাটে শুয়ে,
আর দিহান আমার সম্মুখে একটা চেয়ারে বসা।
আমার চিৎকার শুনে দিহান উঠে আমার দিকে আসতে থাকে,
আর আমি সাথে সাথেই ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
চলবে…