প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট_০৩+৪
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
হঠাৎ দরজা ভাঙ্গার আওয়াজ শুনে দুই জনেই চমকে উঠলো।নিলয় বুঝতে পারলো কেউ তার খোজে-ই এসেছে।
নিলয়-মনে হয় পুলিশ এসেছে।তুমি এখানে-ই থাকো।আমি চলি।ওদের সাথে বাড়ি চলে যাইয়ো।
অরিত্রি-আমি তোমার সাথে যাবো নিলয়।আমাকে নিয়ে যাও।
নিলয়-এটা সম্ভব না। আমি চলি।
নিলয় চলো গেলো।অরিত্রি চিৎকার দিয়ে কান্না করছিলো কিন্তু নিলয় পিছন ফিরে তাকালো না।অরিত্রির চোখের দিকে তাকালে নিলয় আর যেতে পারতো না অরিত্রিকে রেখে।তাই আর ফিরে তাকালো না নিলয়।ভালোবাসার অনূভুতিটাকে নিজের মধ্যে রেখে-ই নিলয় পালিয়ে গেলো।পুলিশের সাথে অরিত্রির বাবা আর ভাই অনি আসছে।
অনি-বোন তুই ঠিক আছিস তো।তোর সাথে কিছু হয় নাই তো।তুই কাঁদছিস কেন বোন।কী হইছে?
অরিত্রি-নিজের বোনটা কলিজা,অন্যের বোনটা মাল তাই না ভাইয়া?
অনি চুপ হয়ে গেলো।মাথা নিছু করে পেললো।বলেই আস্তে আস্তে উঠে গেলো অরিত্রি।রুম থেকে বের হতেই পুলিশ অফিসার দাঁড় করালো অরিত্রিকে।
অরিত্রি-আমি এখানে নিজের ইচ্ছাতে আসছি।নিজের ইচ্ছাতে থেকেছি।আমার কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।তাই আমার ব্যাপারে যে কেইস হয়েছে তা এখানেই শেষ।
অরিত্রি গিয়ে গাড়িতে উঠে গেলো।চোখ নিয়ে পানি ঝরতেছে অরিত্রির।আড়ালে নিলয়ও দেখছিলো অরিত্রিকে। ইচ্ছে ছিলো অরিত্রির সাথে শেষ বারের মত কথা বলবে।কিন্তু অরিত্রির দিকে এগিয়ে আসতেই অনি আর ওর বাবা বের হলো।সাথে-ই পুলিশ অফিসাররা।আবারও লুকিয়ে পরলো নিলয়।
গাড়িটা যাওয়া পর্যন্ত নিলয় দেখছিলো অরিত্রিকে।এক সময় গাড়িটা চোখের আড়ালে চলে গেলো।নিলয়ের অনুভূতিটা বুকের মধ্য থেকে শুধু দীর্ঘশ্বাস রূপেই বের হলো।বাড়িতে এসেই রুমে চলে গেলো অরিত্রি।অনি দরজায় নক করলেও দরজা খুললো না অরিত্রি।
অরিত্রির আম্মু-রাত হয়ে গেলো।দরজা খোল এইবার।খাবাটা খেয়ে নে।
অরিত্রি-খাবো না।
অরিত্রির আব্বু-তোর বাবা তোর সাথে কথা বলবে।শুনে যা।
অরিত্রি-আচ্ছা দশ মিনিট পর আসতেছি।
চোখ মুছে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টেবিলে গিয়ে বাবার সামনে বসলো অরিত্রি।বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো বাবা খুব রেগে আছে।অনি বাবার পাশেই বসে আছে।তার পাশে-ই ঐশ্বর্য।পরিবারের পিচ্চি সদস্য।
বাবা-অরিত্রি কী হইছে তোমার?
অরিত্রি-কিছু না।
বাবা-ছেলেটার উপর থেকে কেইস উঠিয়ে পেললা কেন?
অরিত্রি-ছেলেটার অপরাধ কী?
বাবা-তোমাকে আটকে রেখেছিলো।পাড়ার সব মানুষ খারাপ নজরে দেখছে আমাদের।তুমি কী তা দেখছো না?
অরিত্রি-বাবা আমি এইসব ভাবছি না।
বাবা-তোমার জন্য আমাদের মান সম্মান শেষ হয়ে গেছে।
অরিত্রি-আচ্ছা বাবা তখন ভাইয়া ধর্ষন মামলায় জেলে গেছিলো তখন তোমার মাম সম্মান কই ছিলো।যখন ভাইয়া আর তার বন্ধুরা একটা মেয়েকে জোর করে এনে রাত ভর ধর্ষন করেছে তখন তোমার মান সম্মানের কথা ভাবছে।
অনি-তুই এইসব কী বলছিস?
অরিত্রি-আমি সব জানি,সবটা জানি।তাই আমার কাছে কিছু লুকাতে আসবি না।আর বাবা আমি মেয়ে বলে বাড়ির বাইরে ছিলাম বলে তোমার মান সম্মান শেষ।আর যখন ভাইয়া রাতের পর রাত মদ খেয়ে মাতলামি করতো রাস্তায়।তখন তোমার মান সম্মান বজায় থাকে।
অরিত্রি কথাগুলো বলে ভাবির দিকে তাকাতেই দেখলো আরিশা মাথা নিচু করে আছে।
অরিত্রি-এই যে আরিশা।আমার নাম দিয়ে মিথ্যা কল করে ওরে এই বাড়িতে ডাকলো।তাও তখন,যখন আমরা কেউ-ই বাড়ি ছিলাম না।ওরে ধর্ষন করে বিয়ে করছে তোমার গুনধর ছেলে।তাও তোমার মান সম্মান খুব বেশি আছে তাই না বাবা?
অরিত্রি রুমে চলে গেলো।অরিত্রির মা বললো,মেয়েটা মাত্র বাড়ি আসছে আজকে।মেয়েটার মাথা ঠিক নেই,এইসব না করলেই হতো।
আরিশা ঐশ্বর্য কে নিয়ে রুমে চলে গেলো।অনির বাবা বললো,আজ তোর জন্য তোর বোনটাও এইরকম হয়ে গেছে।
অনি-বাবা আমি আরিশাকে বিয়ে করার পর সব কিছু থেকে দূরে থাকি।তোমার সাথে তোমার কোম্পানির দায়িত্ব নিলাম।কিন্তু আমি বুঝি নি অতীতটা কখনো মুছা যায় না।
অরিত্রি রুমে গিয়ে কান্না করছিলো।নিলয়কে বড্ড বেশি-ই মনে পরছে অরিত্রির।ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে নিলয়কে।কিন্তু কই নিলয়।কোথায় খুজবে অরিত্রি নিলয়কে।নিলয়ের নামটা আর ওই বাড়িটা ছাড়া আর কিছু জানে না অরিত্রি।
পরেরদিন অরিত্রি ছুটে গেলো ওই বাড়িতে।পিছনের দরজা দিয়ে রুমে ডুকলো অরিত্রি।কিন্তু কাউকেই পেলো না।নিলয় আসবে এই ভেবে ব্যাগ থেকে কাগজ আর কলম বের করে নিজের ফোন নম্বরটা লিখে রেখে আসলো অরিত্রি।বাড়িতে যেতেই অরিত্রির মা বললো,কই ছিলি তুই?
অরিত্রি-একটু বেরিয়ে ছিলাম।
অরিত্রির মা-আচ্ছা কিছু খাবি?
অরিত্রি-না।
সিড়ি বেয়ে উঠতেই অরিত্রির ফোনে কল আসলো।একটা আশার আলো জ্বলে উঠলো অরিত্রির মনে।তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে ফোনটা দেখতেই মন খারাপ হয়ে গেলো অরিত্রির।বিরক্ত লাগলেও ফোনটা রিসিভ করলো অরিত্রি।
অনি-কিরে তুই ওই বাড়িতে গেছিলি কেন?
অরিত্রি-তুই আমাকে পাহারা দেস?
অনি-তুই আমার বোন।তোকে পাহারা দিতেই হবে।
অরিত্রি-আমার ব্যাপারে তোকে কেউ নাক গলাতে বলে নাই।
বলেই অরিত্রি ফোনটা রেখে দিলো।বিকেলে আবারও কল আসছিলো অরিত্রির ফোনে।তাও নিলয়ের কল ছিলো না।ফোনের অপেক্ষায় ফোন নিয়ে-ই বসে রইলো অরিত্রি।রাতে খেতে ডাকলেও খাবার খেতে যায় নি অরিত্রি।সারারাত বিছানার এপাশ ওপাশ করতে করতে কেটে গেলো।শেষ রাতে উঠে বারান্দায় গেলো অরিত্রি। চোখ গুলো ভিজে আসছে অরিত্রির।হয়ত আর কখনোই নিলয়ের কল আসবে না।হয়ত নিলয় ওরে মনেও রাখে নি।নিলয়ের মনে হয়ত অরিত্রি ছিলো-ই না।হঠাৎ করেই ফোনটা বেজে উঠলো।অরিত্রি তেমন মনোযোগ দিলো না।দুই বার ফোনটা বাজলেও অরিত্রি বারান্দা থেকে আসলো না।তৃতীয় বার আবারও ফোনের সাউন্ড শুনা গেলো।বিরক্ত হয়ে রুমে গিয়ে ফোনটা হাতে নিলো।হাতে নিলেও রিসিভ পারলো না।তার আগে-ই ফোনটা কেটে গেলো।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস।
#প্রতিশোধ_অতঃপর_ভালোবাসা
#পার্ট_০৪
#জান্নাতুল_ফেরদৌস
একটা মেসেজ ফোনের ক্রিনে ভেসে উঠলো।মেসেজ টা ছিলো–ওই পেত্নি আমি
গার্ডেনে মশার কামড় খাচ্ছি।আর তুমি আরামে ঘুমোচ্ছো।
মেসেজটা পড়েই নিলয়কে ভেবে এক ছুটে বাগানে গেলো অরিত্রি।কিন্তু কাউকে পেলো না অরিত্রি।
রুমে আসতে আবারও মেসেজ আসলো।মেসেজটা ছিলোঃপেত্নি তুমি তো পুরো গার্ডেন খুজেই দেখলা না।
অরিত্রি আবারও গার্ডেনে গেলো।গিয়ে খুজতে লাগলো নিলয়কে।হঠাৎ কেউ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো অরিত্রিকে।কানের পাশে এসে কানে হালকা করে ঠোঁট ছোঁয়াতেই কেপে উঠলো অরিত্রি।
নিলয়-পেত্নি।
অরিত্রি-আমাকে নিয়ে যাবে?
নিলয়-কই যাবা?
অরিত্রি-তুমি যেখানে যাবে সেখানে-ই যাবো।
নিলয়-তোমার বাবা মায়ের কাছে থাকবে না।
অরিত্রি-না।আমি তোমার সাথে থাকতে চাই।
নিলয়-আচ্ছা এখন যাবে?
অরিত্রি-হুম এখন-ই যাবো।
নিলয়-আরেকবার ভাবো অরিত্রি।
অরিত্রি-না আমার ভাবার কিছু নেই।
নিলয়-আচ্ছা তাহলে এখান থেকে-ই আমার সাথে পথ চলা শুরু করবে?
অরিত্রি-হুমমম।
নিলয় হাসলো।এত সহজে পেয়ে যাবে অরিত্রিকে এটা হয়ত নিলয় ভাবে নি।
নিলয়-আমি কাল আসবো তোমাকে নিয়ে যেতে।
অরিত্রি-তুমি আসবা তো?
নিলয়-আসবো অরিত্রি।
অরিত্রি-প্রমিস আসবা?
নিলয়-সত্যি বলছি আমি আসবো।এইখানেই ওয়েট কইরো রাত ১০ঃ০০টাতে।
অরিত্রি-ঠিক আছে।
নিলয় চলে গেলো।রাত কেটে সকাল হয়ে গেলো।অরিত্রির সারাটা দিন ঘুমিয়ে-ই কেটে গেলো।রাতেই অরিত্রি বের হয়ে আসলো বাড়ি থেকে।অরিত্রিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেলো নিলয় অরিত্রিকে।
নিলয়ের বাবা-এসেছিস তুই।দেখ না তোর মা কিছু খাচ্ছে না।
নিলয়-খাবে বাবা।আমি খাইয়ে দিবো,তুমি খেয়েছো?
নিলয়ের বাবা-ও না খেলে আমি কীভাবে খাবো।
নিলয়-আচ্ছা তুমি চলো খাবে।
নিলয়ের আব্বু-আমার মেয়ে এসে গেছে।আমার নিহিতা আমার কাছে এসেছে।মা কই ছিলি তুই?
বলেই অরিত্রিকে আদর করলো নিলয়ের বাবা।নিলয়ের বাবার বিহেভে অবাক হলো অরিত্রি।নিলয়ের দিকেই তাকালো অরিত্রি।নিলয় বুঝতে পেরে বললো,
আমার বোন চলে যাওয়ার পর আমার মাও মারা যায়।মায়ের চলে যাওয়াটা মেনে নিলো না আমার বাবা।তারপর থেকেই এইরকম।
একটা সাজানো গুছানো পরিবার শেষ হয়ে গেলো শুধু মাত্র তার নিজের-ই ভাই এর জন্য।ভাবতেও খারাপ লাগলো অরিত্রির।
অরিত্রির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পেললো।নিলয়ের বাবা চোখের পানি মুছে দিলো।
তারপর বললো,কি রে মা কাঁদছিস কেন?দেখ তোকে আর কোনো কষ্ট পেতে দিবো না।তুই কান্না করিস না।
অরিত্রি-কাঁদবো না।চলুন বাবা খাবার খেয়ে নিবেন।
নিলয়ের বাবা-তুই খেয়েছিস?
অরিত্রি-না।
নিলয়ের বাবা-চল আমরা একসাথে খাবো।তুই থাক,আমি মিহিকে বলে আসি তুই এসেছিস।
নিলয়ের বাবা চলে গেলো।নিলয় বললো,আমার মায়ের নাম মোহনা।আব্বু মিহি ডাকতো আদর করে।
অরিত্রি-আচ্ছা।
নিলয়-অরিত্রি আমার আর কেউ নেই।আমার বাবা আর তুমি ছাড়া।
অরিত্রি জড়িয়ে ধরলো নিলয়কে।অনেক্ষন পর দুইজনের ঘোর কাটলো।দুইজন দুইজনকে ছেড়ে দিয়ে খাবার গরম করে এনে নিলয়ের বাবাকে খাইয়ে দিলো নিলয়।খাবার খাইয়ে এসে দুইজনে খেয়ে নিলো।
নিলয়-আমার ঘুম আসতেছে।আমি চলি।
অরিত্রি-আমাদের বিয়ে হবে না নিলয়?
নিলয়-অরিত্রি এখন তোমার বাবা আমাদের খুজবে।আমাদের লুকিয়ে থাকতে হবে।
অরিত্রি-আচ্ছা।
নিলয়-চলো তোমাকে পাশের রুমে দিয়ে আসি।
অরিত্রি-ঠিক আছে।
অরিত্রিকে রেখে এসে নিলয় শুয়ে পরলো নিজের রুমে।অরিত্রির ঘুম আসছে না।নিলয়ের রুমে উকি মারলো অরিত্রি।গিয়ে দেখলো নিলয় নেই।পিছন থেকে কেউ একজন অরিত্রির ঘাড়ে হাত রাখলো।পিছনে তাকিয়ে অরিত্রি দেখলো কেউ নেই।অরিত্রি ভয় পেয়ে গেলো।চিৎকার দিতে গিয়ে অরিত্রির মুখ থেকে কথা বের হচ্ছিলো না। নিলয়ের রুমে যেতে নিলে কেউ একহাতে মুখ চেপে ধরলো অরিত্রির।অরিত্রি ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও পারলো না ছাড়িয়ে নিতে।
চলবে…..
লেখিকাঃজান্নাতুল ফেরদৌস।