হৃদয়ের প্রতিশ্রুতি পর্ব ৯

🌸#হৃদয়ের_প্রতিশ্রুতি🌸

#লেখিকাঃআদিলা
#পর্বঃ৯
______________________🌸
রুহান আমিরকে রুমে দিয়ে চলে যায়। আমির দরজার দিকে তাকাতে দেখে ইয়ামিনা মাএ ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়েছে। আধো ভেজা চুল পরমে ভেজা শাড়ি পাল্টে নতুন সুতি শাড়ি পরেছে। তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে আমিরের চোখে চোখ পড়ে যায়।ইয়ামিনা ইতস্তত বোধ করে চোখ সরিয়ে ফেললেও আমির ইয়ামিনার দিকে এখনো দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে। কি জানি আছে এই চোখের মধ্যে আমির না চেয়েও চোখ সরাতে পারে না।
আপনি তো পুরো ভিজে গেছেন। জামা চেঞ্জ করে নিন না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
ইয়ামিনার কথায় আমিরের ধ্যান ভাঙে। হ্যা করছি।
ইয়ামিনা আমিরের সামনে একটা টিশার্ট ধরে… এই নিন
আমির সেটা হাতে নেয়। চেঞ্জ করতে যেয়ে বিপত্তি ঘটে। হাত কেটে যাওয়ার কারনে আমিরের টিশার্ট খুলতে কষ্ট হচ্ছে তারপর চেষ্টা করচ্ছে ইয়ামিনা সেটা দেখতে পেয়ে আমিরের কাছে যায়।।

আমিরের টিশার্ট খুলতে খুলতে ইয়ামিনা বলে আমাকে বললে হতো না। আপনার তো হাত কেটে গেছে খুলতে তো সমস্যা হবে।।

ইয়ামিনা ভেজা টিশার্ট টা বারান্দায় মেলে দিয়ে রুমে ভেতরে আসে৷
আমাকে একটু ওয়াশরুমে নিয়ে যাও ফ্রেশ হবো। ইয়ামিনা আমিরকে ধরে উঠায় আমিরের নাকে একটা মিষ্টি স্মেল আসে ইয়ামিনার গায়ের থেকে আসছে। আমিরকে যেন এই স্মেলটা খুব বেশি টানচ্ছে। ইচ্ছে করচ্ছে সেখানে ডুব দিতে। ইয়ামিনা আমির কে ওয়াশরুমে দিয়ে আসে।
আমিরের ডাকে আমিরকে নিয়ে এসে বেডে শুয়ে দেয়। কোম্বলটা টেনে দিয়ে লাইট অফ করে দেয়।আমিরও কিছু না বলে উল্টো হয়ে শুয়ে পড়ে।

ইয়ামিনা বারান্দায় গিয়ে গ্রিল ধরে দাড়ায়। সাড়া শরীর ব্যাথা করচ্ছে। আমিরকে বুঝতে না দিলেও এখন বেশ খারাপ লাগচ্ছে।এত লম্বা মানুষকে ধরে নেয়া আসা করা কম কথা না৷ যতই হোক মেয়ে মানুষ এত ভার নেয়া ইয়ামিনার পক্ষে কষ্ট হয়ে পড়েছে ।আমির বুঝতে পারলে হয়তো ইয়ামিনাকে কাছে আসতে দিত না।তাই ইয়ামিনা মুখে হাসি ভাব বজায় রাখে। কিন্তু তার যে হার মানলে চলবেনা। যেভাবে হোক আমিরকে সবটুকু দিয়ে তার সেড়ে তুলতে হবে। এসব চিন্তা করে ইয়ামিনা রুমে আসে। চাদের আলো জালালা ভেদ করে আমিরের মুখের উপর পরচ্ছে। ঘুমের মধ্যে আমিরের মুখটা পুরো বাচ্চা বাচ্চা লাগচ্ছে। জেগে থাকলে তো রাগ সারাদিন মাথার উপর নিয়ে রাখে আর এখন… এটা ভেবে ইয়ামিনা কিছুটা হেসে দেয়।বেডের এক পাশে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে পরে।

____________________🌸
শ্বাস নিতে আমিরের কষ্ট হচ্ছে চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ভোর হয়ে গেছে। বুকের উপর এখনও ভার অনুভব করচ্ছে ভাল করে তাকিয়ে দেখে ইয়ামিনা আমিরের বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে শুয়ে আছে। বাতাসে ইয়ামিনার চুল গুলো উড়ে আমিরের মুখে ভারি খাচ্ছে। আমির মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরাতেই ইয়ামিনা ঠোট উল্টে আমিরকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আমির নিজের অজান্তেই হেসে দেয়। ইয়ামিনার সামনে পড়া চুল গুলো কানে গুজে দিতেই ইয়ামিনার গায়ে মিষ্টি স্মেল্টা আমির এখনও পাচ্ছে। আমির চোখটা বন্ধ করে ইয়ামিনাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। কখন যে আমির ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়ালি নেই।

ইয়ামিনার ঘুম ভাঙতে দেখে ইয়ামিনা আমিরের বুকে আর আমির ইয়ামিনাকে জড়িয়ে রেখেছে। ইয়ামিনা একটু লজ্জা পেয়ে দ্রুত উঠে পরে। আমির যদি দেখে ফেলে আরও লজ্জা পরে যাবে। উনি হয়তো ঘুমের ঘোড়ে জড়িয়ে ধরেছে খেয়াল নেই কিন্তু আমি কিভাবে এখানে এসে পরেছি।আল্লাহ উনি জেগে থাকলে কি হতো।
ইয়ামিনা বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে আমিরকে ডাক দেয়।
এইযে উঠুন আজান দিয়েছে নামাযটা পড়ে নিন। কি হলো উঠুন।আমিরের উঠার নামই নেই। ইয়ামিনা আমিরের দিকে একটু ঝুকে হাত বাড়িয়ে ডাকচ্ছে। কি হলো নামাজ ওয়াক্ত বেশিক্ষন নেই। উঠুন। আমির ঘুমের ঘোড়ে ইয়ামিনার হাতটা ধরে হেচকা টান মেরে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। আমির ঘুমের মধ্যে বির বর করেই চলচ্ছে।
প্লিজ আরেকটু ঘুমাতে দাও । আমির এত জোরে জড়িয়ে ধরেছে ইয়ামিনার যেন দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম।ইয়ামিনা আর না পেরে আমির গায়ে জোরে চিমটি কাটে। আমির চোখ খুলে তাকায়। কিছুক্ষন এইভাবে তাকানোর পর বুঝতে পারে আমির ইয়ামিনাকে ছেড়ে এক লাফে উঠে বসে। ইয়ামিনা উঠে শাড়ি ঠিক করে নেয়।
আমির অপ্রস্তুত হয়ে বলে…ঘ..ঘ..ঘুমের ঘোরে হয়তো খেয়াল ছিল না …

সমস্যা নেই আমি উঠুন নামাজটা পরে নিন।

আমির ফ্রেশ হয়ে আসতে দুজনে নামাজ আদায় করে নেয়।

খাওয়ার টেবিলে সবাই বসে আছে ইয়ামিনা আর জাফরা সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। আমির খাওয়ার দিকে দৃষ্টি রেখে আরুশিকে বলে… কিরে এত রঙচঙ মেখেছিস কেন তাও এত সকাল সকাল।

আরুশি এমন কথায় মুখটা বাকা করে নেই। মেখেছি আমার ইচ্ছা আর তোমার বউয়ের মত এত সুন্দর না তাই আদা ময়দা মেখেছি। আর এমনিতেও আমার ফ্রেন্ডস আর কাজিন আসবে ভাবিকে দেখতে..

আমির ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আবার খাবারে মনোযোগ দিয়ে বলে… ও আচ্ছা।
.
.
.
.
বিকেলের দিকে আমির রুমে বসে লেপটপে বসে কাজ করছিলো৷ হুইল চেয়ারে বসে ছিল৷ বাহিরের আওয়াজে আমির বাহিরে এসে দেখে আরুশির ফ্রেন্ডসরা এসে পরেছে সাথে ফ্রেন্ডের কাজিনরাও আছে।
ইয়ামিনা সবার সাথে হেসে কথা বলছে আর খাবার সার্ভ করচ্ছে।আরুশি সবার সাথে ইয়ামিনার পরিচয় করে দিচ্ছে।ইয়ামিনা হাল্কা গোলাপির সাথে কালো পারের শাড়ি পরেছে।। আমির ইয়ামিনার দিকে একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে। কেন জানি আমিরের প্রচন্ড রাগ লাগচ্ছে ইয়ামিনার উপর।
পেছন থেকে একটা ছেলে বলে উঠে
কেমন আছো?
ছেলের কন্ঠ পেয়ে ইয়ামিনা পিছন ফিরে তাকায়। হয়তো আরুশির ফ্রেন্ডের কাজিন তাই ভেবে ইয়ামিনা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, জি আলহামদুলিল্লাহ ভাল।।
তো আপনি আরুশির ভাবি। আরুশির থেকে শুনেছিলাম আপনার কথা।।
ও হ্যা।।
বাই দ্যা ওয়ে আপনি আসলে অনেক সুন্দর। আপনার মত আপনার হাতের রান্নাটাও মাশাল্লাহ।

ইয়ামিনার কেন জানি বিরক্ত লাগছে লোকটাকে দেখে একটার পর একটা কথা বলেই যাচ্ছে। কথা কাটাতে আরুশির দিকে ইশারা করে বলে… আরুশি মনে হয় আমাকে ডাকচ্ছে আপনি বসেন আমি আসচ্ছি।

ইয়ামিনা আমিরকে খেয়াল করে নি। আরুশি পাশে যেয়ে বাকি জনদের সাথে কথা বলচ্ছে।

পাশ থেকে আরুশির ফ্রেন্ডের কাজিন টয়াকে ফিসফিসিয়ে বলে… এত ছোট বয়সে বিয়ে হয়ে গেছে ভাবতে পারিস।

আরে ভাবি আমাদের এইজের। দেখতে ছোট লাগে।

যাই বলিস ভাবি কিন্তু দেখতে পুরা পুতুলের মত৷
ভাইয়া তো পঙু ভাইয়ার সাথে বনে কিভাবে রে।আমার মনে হয়না এ মেয়ে বেশি দিন টিকবে। কয়েকদিন পরই ছেড়ে চলে যাবে দেখিস।

এতক্ষন আমির কপালে আঙুল ঘষে সবই শুনছিল কেউ না শুনলেও লাস্ট কথাটা শুনে আমিরের রাগ চটে উঠে চোখ গুলা লাল হয়ে আসে। আমির ইয়ামিনার আচল ধরে হাল্কা টান দেয়।
আচলে টান পেয়ে ইয়ামিনা পিছনে ফিরে তাকায়।আমির ইয়ামিনার আচল ধরে আছে।ইয়ামিনা কিছু বলার আগে আমির বলে উঠে…
আমার ক্ষুধা লেগেছে৷ আমাকে ভেতরে নিয়ে যাও।
ইয়ামিনা কিছু না বলে আমিরকে রুমের ভেতর নিয়ে যায়। আপনি বসুন আমি আসচ্ছি।ইয়ামিনা যেতে নিলে আমির হাতটা ধরে ফেলে…
কোথায় যাচ্ছো?
আপনি না বলেছেন ক্ষুধা লেগেছে..
তোমার যাওয়া লাগবে না আমি সার্ভেন্টকে বলে দিয়েছি দিয়ে যাবে খাবার।ওরা যাওয়া না পর্যন্ত তুমি রুম থেকে বের হবা না।
কেন যাবো না যদি কিছু প্রয়োজন পরে আমাকে ডাকলে।
রাগে আমিরে হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় বেশ জোরে গলায় বলে..আমি একবার বলেছিনা না যেতে যাবে না বেস।
ইয়ামিনা একটু ভয় পেয়ে যায়। আমির বুঝতে পেরে নিজেকে শান্ত করে ঠান্ডা গলায় বলে… আমি যেখানে না বলেছি সেখানে যাওয়ার কোনো মানে হয়না আমি তোমার ভালোর জন্য বলছি।
ইয়ামিনা আর কিছু না বলে বারান্দায় চলে যায়। আমির একটা লম্বা শ্বাস ছাড়ে।।
🌸

🌸
কিছুক্ষন পর আরুশি রুমে আসে ইয়ামিনাকে না দেখে বারান্দায় উকি দেয়…
আরে ভাবি তুমি এখানে আমি তোমাকে সারা ঘর খুজে বেড়াচ্ছি। চলো তো
কোথায় যাব?
কোথায় মানে তোমার জন্য আমার ফ্রেন্ডসরা আসলো তোমাকে দেখবে বলে। আর তুমি এখানে বসে আছো। তারাতারি চলো।
আমির যেতে মানা করেছে বললে যদি আরুশি অন্য কিছু মনে করে। ইয়ামিনা কি বলবে বুঝতে পারচ্ছে না।আসলে আমার শরীরটা ভাল লাগছিলো না তাই এসে পরেছি। তোমার ফ্রেন্ড তোমার থাকা বেশি জুরুরি।
কি যে বলো আমার ফ্রেন্ড তো কি হয়েছে আমার তো সারাদিনই ওদের সাথে দেখা হয়। তোমার জন্যই তো ওরা এসেছে। চলো তো চলোই না। আরুশি ইয়ামিনার হাত ধরে টানচ্ছে…
ইয়ামিনা বার বার রুমে উকি দিচ্ছে আমিরকে কোথাও দেখচ্ছে না।
আচ্ছা আচ্ছা তোমার ভাইয়াকে কোথায় দেখেছো।
না ভাবি রুমে তো দেখলাম না হবে হয়তো কোথাও কোথায় যাবে এই অবস্থায় বলে ইয়ামিনাকে টেনে আরুশি নিয়ে যায়।
আরুশির টানাটানির কারনে ইয়ামিনার আঁচল কোমর থেকে কিছুটা সরে যায়।ইয়ামিনারও খেয়াল ছিল না।
ড্রইং রুমে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে আরুশির ফ্রেন্ড টয়া এসে বলে আরে ভাবি কোথায় ছিলা তুমি। এতক্ষন ধরে বসে আছি আসো একসাথে খাবো।
হটাৎ প্রচন্ড শব্দে ইয়ামিনা সহ বাকি সবাই পিছন ফিরে তাকায় পুরা ফ্লোরে কাচ গুরগুর হয়ে পড়ে আছে। আমির চোয়াল দাত মুখ শক্ত করে ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইয়ামিনা দৌড়ে যায়।কি ভাবে ভেঙেছে আপনার কোথাও লেগেছে কি।
খেয়াল ছিল না হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেছে৷
আসুন আমি ভেতরে দিয়ে আসি আপনাকে…
আমার পা গেছে হাত না। নিজে যেতে পারবো কারো সাহায্য লাগবে না বলেই আমির হাত দিয়ে চাকা ঘুড়িয়ে রুমে চলে যায়।
আমিরের প্রচন্ড রাগ লাগছে এত রাগ কখনো উঠেনি কেন এত রাগ উঠছে তার কারন সে নিজেও জানে না। সত্যি কি ইয়ামিনার জন্য রাগ উঠছে আমির মাথা হাত দিয়ে রেখেছে। রাগে আমিরের সারা মুখ লাল হয়ে আছে।।

ভাবি তুমি মন খারাপ করো না ভাইয়া একটু এরকম রাগ উঠলে কি বলে না বলে হুস থাকে না। আসলে ভাইয়া রাগটা খুব খারাপ যখন তখন রাগ উঠে যায়।
না আরু আমি কিছু মনে করিনি তুমি যাও ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলো আমি এগুলা পরিষ্কার করে নেই।

আরুশি চলে গেলে ইয়ামিনা পরিষ্কার করে নেয়। রান্না ঘরে যেয়ে এক কাফ কফি বানিয়ে রুমে যায়।
ইয়ামিনা আমির সামনে কাপা কাপা হাতে কফিটা ধরে কারন আমির এখন রেগে আছে যদি রাগে চটে ফেলে দেয়।কফিটা খান মাথা ঠান্ডা হবে….

আমির ইয়ামিনার দিকে তাকিয়ে কফিটা হাতে নেয় ইয়ামিনা একটু হাফ ছাড়ে।

আমির সামনে দিকে তাকিয়ে বলে.. শাড়ি যখন গায়ে ঠিক ভাবে রাখতে পারো না তখন পরো কেন। যে জিনিসটা পারো না সেটা করার কোনো মানে হয় না। জাস্ট ডিজগাস্টিং।
ইয়ামিনা বুঝতে পারেনি আমি ঠিক কি বুঝালো৷
.
.
.
চলবে….. 🌸
কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন..🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here