নেশা পর্ব ৮+৯

পর্ব ৮+৯
নেশা Returns💞
Ayusha Akter Usha
“”8″”
কিছুক্ষণ পর সাফার রুমে ঢুকেই বিষম খেল।এটা সে কি দেখছে।কিছুক্ষণ আগেই যে মেয়ে কাঁদছি এখন সেই মেয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।এটা কিভাবে পসিবল।নেশা এমন ভাবে হাসছে যেন এক্ষুনি তার পেট ফেটে যাবে।নেশা বেডের উপর বসে বসে টিভিতে কার্টুন দেখছে আর হেসে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।সাফার চোখ মুখ কুচকে নেশার পাশে গিয়ে বসল।এতে নেশার যেন কোনো খেয়াল ই নেই।সে তো হাসতেই ব্যাস্ত।নেশা হাসতে হাসতে সাফারে শরীরে হুমড়ি খেয়ে পরছে।তা দেখে সাফার রাগী গলায় বলল
– হেই স্টপ ইট।ডোন্ট মুভ।
সাফার এর গর্জন শুনে নেশা চমকে উঠে মুখে আঙুল দিয়ে চুপ করে বসল।
-এই ভাবে কেউ হাসে।এতবড় হয়ে গিয়েছ এখন বাচ্চাদের মতো কার্টুন দেখছ তুমি।
-এই আপনি আমাকে সবসময় এইভাবে বকেন কেন বলুন তো।আমার কার্টুন দেখতে ভালো লাগে তাই দেখি।আপনার কি।
-সাট আপ।আর এই খাবার টা খেয়ে নাও।
-খাবো না।
-খাবে না মানে।
-খিদে নেই তাই খাবো না।
-ওকে না খেও।আমি ভেবেছিলাম ডিনার করার পর এই চকোলেটটা আমি তোমাকে দেব কিন্তু এখন যখন তুমি ডিনার করবে তো চকোলেটটা নাহয় আমি অন্য কাউকেই দিয়ে দেব।
বলে ই উঠতে যাবে তার আগেই নেশা সাফারের হাত চেপে ধরে।
-এত রাগ করছেন কেন।খাচ্ছি তো।এমনিও আমার খুব খিদে পেয়েছে।
-ওহ গুড গার্ল।
বলে নেশা কে খাইয়ে দিতে লাগল।খাওয়া শেষে নেশা চকোলেট খাচ্ছে আর বকবক করছে।আর সাফার নেশার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে তার বকবক শুনছে।
-আচ্ছা আপনি আমাকে কিডন্যাপ করেছেন।কিন্তু আমি কিডন্যাপ এর কোনো ফর্মুলাই দেখতে পাচ্ছি না।কাউকে কিডন্যাপ করলে তাঁকে চেয়ারে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখে কিন্তু এখানে তো আমি কত আরামে আছি।কোনো কিডন্যাপ কিডন্যাপ ভাব ই নেই।
-কেন তুমি কি সত্যিকারের কিডন্যাপ হতে চাও নাকি।
-আসলে কি বলুন তো।কিডন্যাপ তো তাঁদের এ করে যাঁরা স্পেশাল হয়।আর এখন আমিও কিডন্যাপ হয়েছি।মানে আমি ও স্পেশাল।নিজেকে স্পেশাল মনে করার ফিলিং কি স্ট্রং তাই না।
-তুমি কি কোনো কথাই সিরিয়াসলি নিতে পারো না।
-নেই তো।আমার স্বপ্ন টা কে আমি অনেক সিরিয়াস ভাবে নেই।
-তোমার স্বপ্ন??তা কি স্বপ্ন তোমার।
-আমার স্বপ্ন….কোনো একদিন এক রাজকুমার বাইকে চেপে এসে আমাকে নিয়ে যাবে।
-বাইকে চেপে কিন্তু আমি যতদূর জানি রাজকুমার সবসময় ঘোড়ায় চেপে আসে।
-ওহহো ওটাতো সবার স্বপ্ন হয় আমার স্বপ্ন আমার রাজকুমার বাইকে চেপে আসবে এইসব বড় বড় গাড়ি গার্ড রেপুটেশন এসবের মধ্যে না আমি দেবে গেছি।আমি চাই খোলা আকাশে উড়তে।বাইকে বসে পুরো দুনিয়া উপভোগ করতে।
নেশার কথা শুনে সাফার এক দৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে রইল।কতোটা ইনোসেন্ট একটা।কি রকম একটা মোহে ফেলে দিচ্ছে তাকে।নেশা নামক মোহ টা এখন সবসময় সাফারের চারিদিকে জড়িয়ে রয়েছে।এই মেয়ের নেশা গেছে সাফারের।সত্যিই খুব কঠিন জিনিস।না চেয়েও এই নেশায় মাতাল হতে ইচ্ছে করে।নেশা সাফারকে এইভাবে তাকাতে দেখে ভ্রু নাচিয়ে বলল
-কি হলো কি দেখছেন এই ভাবে।
সাফার কিছু না বলে এক হাত নেশার গালে রেখে বুড়ো আঙুল দিয়ে ঠোঁটের কোনে লেগে থাকে চকোলেট মুছে দিল।নেশা সাফারে এমন স্পর্শে কেপে উঠল।সাফারের চোখের নেশা তাকে ঘায়েল করছে।সেই নেশায় ডুবে যেতে চাইছে।হঠাৎ করেএ সাফার নেশাকে কোলে তুলে নিল।নেশা অবাক হয়ে সাফার গলা জড়িয়ে ধরল।সাফার নেশাকে বেড এ ভালো করে শুইয়ে দিয়ে গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল
-ঘুমিয়ে পর।
কিন্তু নেশা এইভাবে এ সাফারের দিকে তাকিয়ে রইল।তা দেখে সাফার নেশার কপালে এক চুমু একে দিল।এতে লজ্জায় নেশা চোখ বুজে ফেলল।সাফার বাঁকা হেসে সেখান থেকে চলে।
নেশা সেই সকাল থেকে চেঁচাচ্ছে তার ওয়াশরুমে পানি নেই পানি নেই বলে।কিন্তু কেউ তার কথা কানেই নিচ্ছে না।সাফার ও না জানি কি করছে যে সকাল থেকে এখনো নেশার রুমেই আসেনি।নেশা এবার একটু রাগ করে ই রুমের বাইরে গেল।দরজার দুদিকে দুটো গার্ড দন্ডায়মান।তাদের দেখে নেশা চেচিয়ে বলতে লাগল
-আপনার মালিকের কি কালো টাকার অভাব পরেছে যে এখন কলের মধ্যে খরা দেখা দিয়েছে।
-কেন ম্যাডাম কি হয়েছে।
-কি হয়েছে মানে এতক্ষণ ধরে চেচাচ্ছি শুনতে পাচ্ছেন না।
-সরি ম্যাডাম রুম সাউন্ড প্রুভ।
-হোয়াট…তাহলে এতক্ষণ ধরে যে আমি চেচালাম তা শুধু শুধুই ছিল। খামোখা মাথা ব্যথা ধরালাম।ধুর এতো কথা বাদ সাদ এখন দেখুন আমার কলে পানি আসছে না কেন।
-ওকে ম্যাডাম আমি দেখছি।
একটা গার্ড চলে গেল।নেশা রুমে ঢোকার সময় পাশের রুমের দরজা খোলা দেখল।ভেতরেও কেউ নেই মনে হচ্ছে।এই সুযোগে নেশা নি জের কাপড় নিয়ে পাশের রুমে চলে গেল।রুমে কেউ নেই।নেশা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকে পরল।দরজা নক করেই সামনে তাকাতেই নেশার চোখ চড়ক গাছ।সামনে একজন দানব খালি গায়ে একটা প্যান্ট পড়া অবস্থায় শাওয়ারের ভিজছে।সাফারের ভেজা খালি বুক দেখে নেশা স্তব্ধ।সাফার ও কিছুটা অবাক হলো নেশাকে তার ওয়াশরুমে দেখে।।

“”9″”
-ওয়াশরুমে ঢুকলে যে দরজা লক্ষ করে দিতে হয় সেএ ম্যানার টা কি আপনি জানেন না।
-জানি কিন্তু ম্যানার ভুলে যাওয়ার ফল যে এতটা মধুর সেটা জানা ছিল না।
বলেই সাফার বাকা হেসে নেশার দিকে এগোতে লাগল।সাফার কে এগোতে দেখে নেশা কাপতে লাগল
-মমমমানে।।।।
নেশা তাড়াতাড়ি বাইরে যাওয়ার জন্য দরজার লক খুলতে যাবে তার আগেই সাফার নেশার হাতে হেচকা টান মেরে কোলে তুলে নিল।নেশা অবাক চোখে সাফারের দিকে তাকিয়ে রইল।সাফার নেশাকে শাওয়ারের নিচে এনে নামিয়ে দিল।নেশা মৃদু কন্ঠে বলল
-ককি করছেন….
-শসসসসস
নেশার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে তাকে চুপ করিয়ে দিল।নেশার কোমর জড়িয়ে ধরে তাঁকে টেনে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নিল সাফার।নেশা গালে লেপ্টে থাকা ভেজা চুল গাল বেয়ে চুয়ে পরা মুষল ধারার পানি গুলোর মাঝে সাফার ধীরে ধীরে ডুবছে।নেশার স্নিগ্ধ ঠোঁটে বেয়ে যাওয়া পানি গুলো যেন সাফার খুব বেশিই টানছে।কি আছে এই মেয়ের মধ্যে
কত মেয়েই তো তার আগে পিছে ঘুরল।কত মেয়ে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে তার আকর্ষণ পাওয়ার জন্য নুইয়ে পরেছিল।কিন্তু সাফার একবারের জন্য ও তাঁদের দিকে ফিরেও তাকায়নি।তারা কোনো ভাবে সাফারকে তাঁদের মোহে ফেলতে পারেনি।কিন্তু এই মেয়ে।এই সাধারন মেয়েটার মাঝে কি এমন আছে যাতে সাফার বার বার নেশা গ্রস্ত হচ্ছে।মাতাল হয়ে যাচ্ছে এই নেশায়।মারাত্মক এই নেশা।সাফার খুঁজে পাচ্ছে এই মাতাল করা নেশাটা আসলে কি।সাফার নেশার গালে হাত রাখল।নেশা কেঁপে উঠল।সাফারের এই মাতাল করা দৃষ্টিতে সে নিজেই মাতাল হয়ে যাচ্ছে।বুকে ঢিপঢিপ শব্দ টা যেন গর্জন করছে।ডুবে যাচ্ছে সে সাফারের মাঝে।সাফার তার হাত ধীরে ধীরে নেশার কানের পেছনে এনে তার চুলের মাঝে ডুবিয়ে দিয়ে ধীরে ধীরে নেশা স্নিগ্ধ ঠোঁটের দিকে এগোতে লাগল।নেশার শ্বাস ঘন হয়ে এলো।কি হচ্ছে তার সাথে সাফার তার ঠোঁটের কাছাকাছি আসতে সে মুখ ফিরিয়ে নিল।সাফার থমকে গেল।
-আ আম আমি আমার ঠান্ডা লাগছে।
নেশার কথা শুনে সাফার নেশার থেকে দূরে গিয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাড়ালো।নেশা সেখান থেকে চলে আসতে যাবে তার আগেই সাফার নেশা হাত ধরে ফেলে
-কোথায় যাচ্ছো।
চোখ মুখ লাল করে বলল সাফার।
-আআমার রুমে।
সাফার নেশার হাতে হেচকা টান মেরে নিজের কাছে এনে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
-ইডিয়ট এই অবস্থায় বাইরে মেরে ফেলব।এখানেই চেঞ্জ করে নাও আমি বাইরে ওয়েট করছি।
বলেই সাফার বাইরে বেরিয়ে গেল।নেশা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
।
নেশা পুরো রুম পায়চারী করছে।আজ সারাদিন সাফার তার সাথে দেখা করতে আসেনি।গার্ড এসে খাবার দিয়ে গিয়েছে।এত রাত হলো তবুও একবারের জন্য ও এলোনা।নেশা যেন সাফারকে দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছে।আচ্ছা সাফারের কি একবারের জন্য ও নেশাকে দেখার ইচ্ছে হয়না।কেন একবার ও তাঁকে দেখতে এলো না।নেশা আর থাকতে না পেরে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।গার্ডদের সাফারের কথা জিজ্ঞাসা করলে তার নিচে যেতে বলে।নেশা ধীরে ধীরে ডাইনিং রুমের দিকে এগোলো।সেখানে গিয়ে যা দেখল তাতে নেশা স্তব্ধ হয়ে গেল।সাফার এর সামনে একজন ক্ষত বিক্ষত হয়ে পরে আছে।আর সাফারের হাতে থাকা গান দিয়ে এখনো ধোঁয়া বেরোচ্ছে।গার্ডসরা এসে লাশটাকে নিয়ে চলে গেল।নেশা সেখানে দাঁড়িয়ে রইল।কিছুক্ষণ পর সাফার নিজের রুমে যাওয়ার জন্য ওপরে আসতেই নেশাকে দেখে থমকে গেল।কিন্তু কিছু না বলে আবার হেটে নিজের রুমে চলে গেল।নেশাও সাফারে পিছু পিছু যেতে লাগল
-কেন এইভাবে মানুষ মারেন আপনি।কি শান্তি পান এতে।প্লিজ এ সব খুন খারাবা বন্ধ করে দিন।এসব যে ঠিক নয়।এতে জীবনের ঝুঁকি থাকে।কেন এত রিস্ক নিয়ে এসব কাজ করেন।প্লিজ এসব কাজ ছেড়ে দিন।প্লি….
আর কিছু বলার আগেই সাফার রেগে নেশাকে দেওয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরল।দাঁতে দাঁত পিষে বলতে লাগল
-কোন অধিকারে আমাকে এসব বলছ তুমি।সে মি কোন অধিকারে।
সাফারের কথা শুনে নেশার চোখ ছলছল করে উঠল।বার বার ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠছে সে।সত্যিই তো কোন অধিকারে সে সাফারকে এসব কথা বলছে।সে নাহয় সাফার কে ভালোবাসে কিন্তু সাফার সে তো আর তাঁকে ভালোবাসে না। বাসলে হয়তো এইভাবে অধিকারের কথা বলত না।নেশা ঠোঁট কাঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল
-আআসলে আম সরি।সত্যি তো আপনার ওপর তো আমার কোনো অধিকার নেই।আমি কে আপনাকে এসব কথা বলার।আর কখনো এমন হবে না স…
কথাটা শেষ হওয়ার আগেই সাফার নেশার ঠোঁট দখল করে নিল।নেশার ঠোঁটের ওপর যেন সব রাগ ঝারতে লাগল।নেশা ব্যথায় কুকড়ে গেল।সাফারকে নিজের থেকে সরানোর চেষ্টায় বারবার বিফল হচ্ছে।ধীরে ধীরে সাফার রাগ কমিয়ে ভালোবাসার সাথে নেশাতে ডুবতে লাগল।ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে নিতে লাগল নেশাকে।নেশাও যেন সাফার ভালোবাসার কাছে হেরে যাচ্ছে ডুবে যাচ্ছে তার মাঝে।নেশা দুহাতে সাফারের বুকের শার্ট খামচে ধরল।সাফার নেশার ঠোঁট ছেড়ে গলায় নেমে এল।ভালোবাসার স্পর্শে ভরিয়ে দিতে লাগল নেশাকে।হঠাৎ ই নেশা সাফার ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিল।আকস্মিক ঘটনায় সাফার দু কদম পিছিয়েই নিজেকে সামলে নিয়ে নেশার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।।।
to be continue…