নেশা পর্ব ১২+১৩

পর্ব ১২+১৩
নেশা Returns💞
Ayusha Akter Usha
“”12″”
পরেরদিন নেশা ভার্সিটি যাওয়ার নামে সাফারের বাড়ি যায়।নেশা রুমে ঢুকে দেখে সাফার অন্য পাশে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে।সাফার পকেটে দুই হাত রেখে থাই গ্লাস ভেদ করে বাইরের শহর দেখতে ব্যস্ত।এমন সময় কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পেছনে ঘুরে যাকে দেখল তাতে সাফার শকড।নেশা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।সে যেন বিশ্বাস ই করতে পারছে না।সাফারের মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে নেশার চোখ ছলছল করে উঠল।
-নেশা….
-কেন ঠকালেন আমায়।
-কি বলছ এসব।
-কেন ঠকালেন আমায়।ভালোবাসার নামে ইউজ করলেন আমাকে।কেন আপনাকে ভালোবাসার এথ বড় শাস্তি দিলেন আমাকে।
-নেশা বিশ্বাস কর আমি তোমাকে ব্যাবহার করিনি।
-বন্ধ করুন আপনার নাটক।এখনো কি আপনার কার্যসিদ্ধি বাকি এখনো আমাকে ইউজ করতে চাইছেন।ভালোবাসার নামে মিথ্যে কথা না বললেও পারতেন।কিডন্যাপ করে এনে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতেন সারাদিন না খাইয়ে রাখতেন তাতেও তো হতো।হ্যা কষ্ট হতো আমার কিন্তু এতোটাও হতো না।আমার যে দম বন্ধ আসছে।আপনি কি করে পারলেন আমার অনুভূতি গুলো নিয়ে খেলতে।
-নেশা একবার আমার কথাটা শোনো।
বলে যেই নেশাকে ধরতে যাবে তখনি নেশা সরে গেল।
-ডোন্ট টাচ মি।আমার ই ভুল ছিল আমি আপনাকে ভালোবেসেছি।ভুলে গেছিলাম আমি আপনি একজন মাফিয়া।মাফিয়ারা সবসময় সার্থপর হয়।যারা নিজ স্বার্থে মানুষ খুন করতে পারে তারা কিভাবে কাউকে ভালোবাসতে পারবে।
-নেশা….
-আমি শুধু আপনাকে এক ঝলক দেখার জন্য এসেছিলাম।দেখা হয়ে গেছে।আমি চলে যাচ্ছি আর কখনো আমার দেখা হবে না।আমি আপনার মুখ ও দেখতে চাই না।
বলেই নেশা রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
-নেশা নেশা লিসেন টু মি।।।
সাফার পেছন থেকে ডাকার পরেও নেশা তার কোনো কথা না শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।সাফারের এখন নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে।যেভাবেই হোক নেশার রাগ ভাঙাতেই হবে।নেশা তাঁকে ভুল বুঝেছে এটা সে কিছু তেই মানতে পারছে না।যে করে ই হোক নেশাকে বোঝাতে হবে সাফার সত্যি তাঁকে কতটা ভালোবাসে।
নেশা দোটানায় পরেছে।কি করবে ও।কাকে বিশ্বাস করবে।তার বাবা তাঁকে কখনোই মিথ্যে বলবে না।সেটা সে খুব ভালো করেই জানে।অন্য দিকে সাফারকেও সে অবিশ্বাস করতে পারছে না।কোনদিকে যাবে।নেশা সাফারকে ছাড়া থাকতে পারবে না।যতই হোক ভালো তো তাঁকেই বাসে।
নেশা ভার্সিটি থেকে বেরোনোর সময় ভার্সিটির দরজায় চোখ পরতেই অবাঁকের সপ্তম আকাশে পৌছালো সে।এ সে কাকে দেখছে।এই কি সাফার।সত্যিই কি তার সামনে সাফার দাঁড়িয়ে আছে।ভার্সিটির সামনে কালো টি শার্টের ওপর কালো শার্ট আর কালো গ্যাবাডিং এর প্যান্ট চোখে কালো সানগ্লাস পরে কালো বাইকের ওপর বসে আছে।পুরো হিরো লাগছে।নেশা কে দেখেই বাইক থেকে উঠে দাড়ালো।নেশা এভাবে সাফারকে দেখে কিছুক্ষণ এর জন্য থ মেরে গেলেও পরক্ষণেই নিজেকে সামলে তার থেকে চোখ সরিয়ে সোজা হাঁটতে লাগল।চারপাশে চারজন গার্ড তাঁকে ঘিরে রেখেছে।ভার্সিটির বাইরে বেরোতেই সাফার নেশার দিকে এগিয়ে এলো।সাথে সাথে নেশার গার্ড রা সাফারের বাহু ধরে তাকে আটকালো।সাফারের গায়ে হাত দেওয়ার সাথে সাথে সাফার চোখ মুখ শক্ত করে তাঁদের দিকে তাকালো।কোথা থেকে কয়েকটা গার্ড এসে নেশার গার্ডদের ঘিরে ধরল।তারা চারজন আর সাফারের গার্ড আটজন কিভাবে পারবে তারা।নেশা তাঁদের এই অবস্থা দেখে সাফারের দিকে রাগী লুক ছুড়ে দিয়ে গাড়িতে বসতে গেলে সাফার নেশা হাতে হেচকা টান মেরে তাঁকে গাড়ির সাথে চেপে ধরল।
-কি করছেন কি ছাড়ুন আমাকে।
-না ছাড়ব না।তোমাকে আমার কথা শুনতে হবে।
-আপনার কোনো কথাই শুনব না আমি।ছাড়ুন আমাকে।
-সাট আপ এন্ড লিসেন টু মি ইডিয়ট।আই লাভ ইউ।আই লাভ ইউ পর এভার এন্ড এভার।কেন বুঝছো না।আমি তোমাকে ইউজ করিনি।ভালোবাসি তোমাকে।সেই প্রথম দিন থেকে তোমাকে ভালোবাসি।তোমার অভ্যাস হয়ে গেছে আমার।তোমার ওপর বিরক্ত না হলে যে আমার ভালো লাগে না।তোমার বকবক না শুনলে যে আমার ভালো লাগে না নেশা।তোমাকে যদি আমার ব্যাবহার করার হতো তাহলে অনেকদিন আগেই সেটা করতাম।যখন জেনেছিলাম তুমি সম্রাট খানের মেয়ে তখন আমি তোমাকে ইগনোর করতে শুরু করেছিলাম।তোমার থেকে দূরে যেতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পারিনি।তোমার থেকে দূরে থাকতে পারিনি।আমি জানি তোমার বাবা কখনোই আমাদের মেনে নেবে না তাই আমি তোমায় আমার কাছে নিয়ে গিয়ে ছিলাম।তোমার বাবাকে ব্লাকমেইল করার জন্য নয়।যদি এরকম টাই হতো তাহলে আমি নিশ্চই উনার দূর্বলতার সুযোগ নিতাম।কিন্তু আমি তা করিনি।আমি পিছু সরে এসেছি।শুধু তোমার জন্য।তোমাকে ভালোবাসি বলে।প্লিজ আমাকে ভুল বোঝো না নেশা।আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।।।।

“”13″”
-হয়েছে….আপনার ড্রামা শেষ হয়েছে।আমাকে ইউজ করা এখনো বাকি আছে আপনার যে এখনো ড্রামা চালিয়েই যাচ্ছেন।দেখুন যদি আপনার সেরকম কোনো ইনটেনসন থাকে তো আপনাকে আমি সোজা কথায় বলে দিচ্ছি আমি আর আপনার এই ফাদে পা দিচ্ছি না।আমি ওতোটা বোকা নই যে আবার আপনার কথায় চলে আসব আমি।ছাড়ুন আমাকে।
বলেই ঝটকা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গাড়িতে বসল নেশা।
-আমার গার্ডদের ছেড়ে দিন।
-নেশা আমার কথা….
– প্লিজ আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।
এবার সাফারের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।রাগের মাথায় পা দিয়ে কারে একেক লাথি মারা শুরু করল।নেশা প্রত্যেকটা লাথিতে ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে।গ ার্ডসদের ছেড়ে দিলে নেশার গাড়ি চলে যায়।কিন্তু সাফারের রাগ কিছুতেই কমছে না কিছু শেষ করে দেওয়ার ইচ্ছে করছে।
রাতে সাফার নিজের রুমে বসে ড্রিংকস করছে।
-ওই মেয়ের সাহস হলো কি করে আমাকে ইগনোর করার।আমাকে সাফারকে ইগনোর করল ও।আমাকে বলছে আমি ড্রামা করছি।হাউ ডেয়ার সি।কি যোগ্যতা আছে ওর এই সাফারের ভালোবাসা পাওয়ার।ওর থেকেও হাজারটা ভালো মেয়ে আমার পেছনে ঘুরে।হু ইজ সি ও কে আমাকে ইগনোর করার।এতো করে বলার পরেও শুনল না।ওকে শূনতে হবে না।এই সাফার কারো পোরোয়া করেনা।ওর মতো তুচ্ছ মেয়ের আমি কেন কষ্ট পাবো।ওর থেকে হাজার গুনে ভালো মেয়ে আমার কাছে আসার জন্য মরে যাচ্ছে।আমি কি না তাকে মানানোর জন্য গেলাম।দিজ ইস টু মাচ।আর কখনো ওই মেয়ের কথা ভাববো না আমি।চলে গিয়েছে তো কি হয়েছে এই সাফারে কারো পোরোয়া করে না।আর কখনো যাবো না ওর কাছে কখনো।ইডিয়ট একটা।।।
পরেরদিন বিকেলে নেশার বাড়ির সামনে সাফার বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।নেশা আজ ভার্সিটি যায়নি যার কারনে তাঁকে বাড়িতেএ আসতে হলো।সেই কখন থেকে বসে আছে সাফার কিন্তু নেশা টিকিটির ও দেখা মিলছে না।ও একদৃষ্টিতে নেশার রুমের বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে।এমন সময় নেশা দু হাত উপরে করে হামি নিতে নিতে বারান্দায় এলো।নেশাকে দেখে সাফার অটোমেটিক দাঁড়িয়ে পরল।বুকের ভেতর ধকধক আওয়াজ শুরু হলো।একটা পিঙ্ক কালার লেডিস টি শার্ট আর পাজামা পরা চুল গুলো এলোমেলো ঘুম ঘুম চোখে ছোট বাচ্চা দের মতো বারান্দায় এসে দাড়ালো।নেশার এই কিউটনেস যে সাফারকে ঘায়েল করছে সে দিকে তার খেয়াল ই নেই।নেশা বারান্দার রেলিংয়ে হাত রেখে চারিদিক দেখতে দেখতে হঠাৎ ই সাফারের দিকে চোখ গেল।সাফার কে দেখেই নেশা ভুত দেখার মতো চমকে উঠে দুর দুর করে সোজা রুমে চলে যায়।এ সে কাকে দেখল।স্বপ্ন দেখছে না তো।সাফার তাঁদের বাড়ির সামনে।ওহ গোড একবার যদি তাকে নেশার বাবা দেখে ফেলে লঙ্কাকান্ড বেঁধে যাবে।এখন সে কি করবে।একহাত কোমরে আর হাতের আঙুল দাঁত দিয়ে কামরে ধরে রুমের মধ্যেই পায়চারি করছে নেশা।চিন্তায় সে মরে মরে।এইদিকে সাফার বিরক্তির চরম পর্যায়ে পৌছে গেছে।সাচ আ ইডিয়ট গার্ল।এই ভাবে ভেতরে যাওয়ার কি মানে।একটু যে মন ভরে দেখবে তাতেও এই মেয়েটার প্রবলেম।এ কে নিয়ে যে কি করবে সাফার।সাফার পকেট থেকে ফোন বের করে নেশাকে ফোন দিল।নেশা পায়চারী করছিল এমন ফোন বেজে উঠে।সাথে সাথে নেশা চমকে ঊঠে।উফফ এই ফোনটাও এখন নেশাকে ভয় দেখানো শুরু করল।ফোন হাতে নিয়ে দেখে unknown নাম্বার।নেশা প্রচন্ড বিরক্তির সাথে ফোন রিসিভ করল।ফোন কানে দেওয়ার সাথে সাথে বকুনির বর্ষন বয়ে এলো কানে।
-এই মেয়ে তোমার প্রবলেম কি।ভেতরে চলে গেলে কেন।ইডিয়ট মেয়ে একটা ভেতরে চলে গিয়ে কি বোঝাতে চাইছ যে তুমি খুব ইন্টেলিজেন্ট আর আমি এজ আ ফুল এখানে দাঁড়িয়ে আছি তোমাকে দেখার জন্য।চুপচাপ কোনো কথা না বলে এক্ষুনি বারান্দায় এসো।
নেশা বকুনি খেয়ে কোনো কথা না বলে বাধ্য মেয়ের মতো বারান্দায় চলে গেল।
-হুম এখন চুপচাপ ওখানে দাঁড়িয়ে থাকো।
নেশা বোকার মতো দাঁড়িয়ে রইল।আর সাফার তার নেশাকে মন ভরে দেখতে লাগল।এই পিচ্চি টা কি না এখন তার নেশা।ভাবা যায় যেই সাফার কখনো কারোর তোয়াক্কা করত না আজ সেই কি না এই একটা পিচ্চির জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছে।এটা নিশ্চিত একটা হাস্যকর ব্যপার।কিন্তু সাফারের কাছে এই ব্যাপারটা কেন জানি ভালোই লাগছে।ভালোবাসার একটা নতুন এক্সপেরিয়েন্স।এতদিন তো ছিনিয়ে নিতে জানতো কিন্তু এখন ভালোবাসতে জানে।আর নেশাই তাঁকে সেটা শিখিয়েছে।নেশা উপর থেকে সাফারকে দেখছে।কতটা ভালোবাসলে একটা মানুষ নিজের পার্সোনালিটি পাল্টে ফেলতে পারে।ফরমাল থেকে একেবারে নরমাল হয়ে গেছে।নেশা জানে সাফার তাঁকে কতোটা ভালো বাসে।সাফারের কাল কের বলা কথা বলা কথা গুলো যে পুরোটা সত্যি সেটা নেশা খুব ভালো করে ই জানে তবুও একটু ভাব নিল।নিতে ই হয়।ভাবা সাফারের মতো একজন যখন তার মতো একটা সাধারন মেয়েকে ভালোবাসে তখন একটু তো ভাব নিতেই হয়।নাহলে নিজের স্পেশালিটি টা বোঝা যায় না।নেশা এসব ভাবতে ভাবতে পাশে তাকাতেই দেখে সম্রাটের গাড়ি আসছে নেশা চোখ বড় বড় করে সাফারের দিকে তাকায়।বার বার ইশারায় তাঁকে চলে যেতে বলছে কিন্তু সাফারের যেন সেদিকে কোনো খেয়াল ই নেই।সে নেশা কে দেখতেই ব্যস্ত।আর থাকতে পেরে নেশা সুযোগ বুঝে রুমে ঢুকে পরল।এবার সাফারের ধ্যান ভাঙল।আবার চলে গেল।সাফার সোজা হয়ে দাড়াতেই দেখে তার সম্রাট দু হাত পকেটে দিয়ে দাড়ানো।তাঁকে দেখে সাফার তা সামনে মুখোমুখি দাড়ায়।সম্রাট দাতে দাঁত চেপে বলল
-এখানে কি করছ।
-আপনার মেয়েকে দেখতে এসেছি।
-ভুলে যাও তার কথা।ও আমার মেয়ে।আর আমি বেঁচে থাকতে আমার এতো বড় সর্বনাশ আমি কখনওই হতে দেব না।
-ভালোবাসা টাকে সর্বনাশ এর পদবী কেন দিচ্ছেন।আমি নেশাকে ভালোবাসি।আপনি একদিন আমার থেকে আমার বাবা কে কেড়ে নিয়ে ছিলেন সেদিন কিছু করতে পারিনি কারন আমি ছোট ছিলাম।এখন আর ছোট নই।এখন আর আপনি নেশা কে আমার থেকে কেড়ে নিতে পারবেননা।
– সেটা তো সময় বলে দেবে।
সাফার ফিক করে হেসে দিল।
– নেশাকে আমি ভালোবাসি।তার জন্য আমি আপনার সাথে আমার লড়াইয়ে আমি পিছু সরে এসেছি।কিন্তু এই বার আর নয়।নেশাকে পাবার লড়াইয়ে আমি পিছনে আসছি না।নেশা শুধু আমার।আই লাভ হার এন্ড সি আলসো লাভ মি।নিজের মেয়েকে কি করে দমিয়ে রাখবেন।
সম্রাট কিছু না বলে সাফারের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।বেশকিছুক্ষন পর বলল
-চলে যাও এখান থেকে।
-নেশা কে না নিয়ে ফিরছি না।
-ওকে অল দ্যা বেস্ট।
বলেই সম্রাট সাফারের পাশ কাটিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকে পরল।
to be continue…
দয়া করে গঠন মূলক কমেন্ট করুন💝💝

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here