এখনো ভালোবাসি পর্ব ২৪+২৫+২৬+২৭

“এখনো ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-২৪|

“ঢাকার বাহিরে একটা রিসোর্টে অনিক ও সারার বিয়ের আয়োজন করা হলো।আইডিয়াটা অবশ্য সারারই ছিলো।ওর নাকি ইচ্ছে দুপরিবার একসাথে সকল প্রোগ্রাম আয়োজন করুক।যেহেতু দুপরিবারের সবাই একই ফ্যামিলির।তাহলে আয়োজন ভিন্ন ভিন্ন কেনো।আয়ন ছোট ভাইয়ের বিয়ের আয়োজনে কোনও ত্রুটি রাখছে না।সব কিছু নিখুঁত ভাবে নিজেই পর্যবেক্ষণ করছে।তবে এসব ফ্যামিলি প্রোগ্রামর প্রতি আয়নের নিজেরই কোনও ইন্টেরেস্ট নেই।ওর কাছে এসব কেনো জানি একটু বোরিং লাগে।”

–সারাদিন ব্যস্ত থাকায় আয়ন প্রিয়ুকে একবারও চোখে দেখেনি।খুব রাগ উঠছে আয়নের এখন।আমি না হয় ব্যস্ত ছিলাম কিন্তু এই মেয়ের কি একবারও মনে হয়নি আমার একটু খোঁজ নেওয়ার দরকর।কি কপাল আমার!এতো হান্ডস্যাম স্বামীকে কেউ একা ছাড়ে।ওর জায়গায় অন্য কোনও মেয়ে হলে আঁচলে বেঁধে রাখতো।অথচ এই মেয়ের কাছে আমার কোনও কদরই নেই।আয়ন নিজের দুঃখ গুলো নিজের কাছে রেখেই খুঁজতে লাগলো প্রিয়ুকে।

“কিন্তু সারা রিসোর্ট খুঁজেও আয়ন প্রিয়ুর দেখা পেলো না।তাই ক্লান্ত হয়ে নিজের রুমে চলে এলো।সোফায় আড়ামে একটু বসে চোখদুটো বন্ধ করে মনে মনেই ভাবছে।বিয়ে শাদীতে এতো প্যারা কেনো যে মানুষ নেয় আল্লাহই জানে।আমার মতো কাজী ডেকে,দুজন সাক্ষীর সামনে বিয়ে করবে,শেষ।ঢাকঢোল পিটিয়ে মানুষকে জানানো কি প্রয়োজন আজ আমার বিয়ে।উফ!আয়নের মাথাটা ব্যাথা করছে।তার উপর প্রিয়ুকে খুঁজে পাইনি বলে মেঝাজাও বিগরে যাচ্ছে।”
–হঠাৎ আয়ন অনুভোব করছে,একটা বিড়ালছানা আয়নের কোলে এসে বসে ওকে জড়িয়ে ধরেছে।তবে এটা একটা বড় বিড়ালছানা,কি নরম ধরতে।মুহুর্তে আয়নের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।নিজের দুহাত দিয়ে আয়ন নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো সেই নরম বিড়াল ছানাটিকে।
“চোখ বন্ধ রেখেই প্রিয়ুকে জিঙ্গেস করলো আয়ন,কোথায় ছিলি।সারা রিসোর্ট খুঁজে এলাম আমি।”
–হু,মিথ্যুক!আমি তো ছাদেই ছিলাম।
“ওও!কিন্তু আমি তো ছাদ চেক করিনি।তাই হয়তো তোকে দেখতে পাইনি।কি করছিলি ছাদে এই সময়।”
–আজ রাতে এনগেজমেন্টের পর ডান্স পার্টির আয়োজন করেছে।সবাই সবার পার্টনারের সাথে নাচবে।
“আনবিলিবেল,এসব ফালতু আর বাচ্চামো আইডিয়া কে করেছে শুনি।”
–প্রিয়ু কপাট রাগ দেখিয়ে,আয়নকে চোখ পাকিয়ে,আয়ন…..।
“প্রিয়ুর মুখে নিজের নামটা শুনলেই আয়নের কেমন নেশা লেগে যায়।এক অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে।”
–হঠাৎ প্রিয়ু আয়নের গলাটা দুহাতে জড়িয়ে আললাদি সুড়ে বললো,শুনো না,আমার না এখন করতে মন চাইছে।প্লিজ আসো না।আমরা একবার করি এখন।তুমি পূরণ করবে না বলো।তুমি না করলে কে করবে,পাঁচটা নয় দশটা নয়,একটা মাত্র স্বামী আমার।আমার চাওয়া পাওয়ার দিকে একটু খেয়াল রাখো।একবার করি,দরজা লাগিয়ে।আজকের পর আর কোনও দিনও করতে বলবো না।এবার হা বলে দেওনা,বাকিটা আমিই শিখিয়ে দিবো।লজ্জা পাওয়ার কিছুই নেই।সবাই করতে পারলে আমরা পারবো না কেনো।এই বিষয় ধারণা থাকলেই চলবে।খুব মজা হবে।একবার করে দেখো তুমিও অনেক এনজয় করবে।তোমার তো পাড়ার কথা।তাহলে বলো করবে আমার সাথে, লাস্টবার!

“আয়নের ব্রেনের গতিবিধ চলন্ত ঘোড়ার মতো ছুটছে।দিকবেদিক হয়তো কিছুই দেখছে না।শিরা উপশিরা গুলোতে রক্ত চলাচল যেনো স্বাভাবিক থেকে বেশিই কাজ করছে।কি বলছে প্রিয়ু,এসব কি সত্য।এই মেয়ে কি বলে আর করতে হবে না মানে কি।একবারে কি হবে।আমার তো ওকে বারবার চাই।ওর এসব কথায় আমি আরো তৃষ্ণার্ত হতে শুরু করে দিয়েছি।আর এসব কথার মানে কি।ও কি আবারও পালানোর ধান্দায় আছে নাকি।”
–কি হলো কথা বলছো না কেনো।আর এমন দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে।
“আস…লে…আ….মি….।আয়ন ঘামছে। এসিরুমে থাকা সত্যেও আয়ন ঘামছে। কি সাংঘাতিক। ”
–দেখো,না বলবে না।সবাই সবার পার্টনারের সাথে নাচবে।তাহলে আমি কি আচার বানাবো।তুমিও নাচবে আমার সাথে।ঠিক আছে।এরপর আর কখনো বলবো না।শুধু একবার।
“তুই এতোক্ষণ ডান্সের কথা বলছিলি।”
–হুম,কেনো?তুমি কি মনে করেছিলে।
“আয়ন একঝটকায় প্রিয়ুকে কোল থেকে নিচে ফেলে দিয়ে,উঠে দাঁড়ালো।”
–আআআ,কি করলে এটা।
“আয়ন ট্রি টেবিল থেকে পানির গ্লাশটি নিয়ে একঢোকে সব শেষ করে দিলো।তবুও যেনো গলাটা শুকিয়ে আছে।প্রিয়ু পাশে এসে দাঁড়িয়ে কি হলো তোমার এমন বিহেভ করছো কেনো।”
–চুপ ফাজিল মেয়ে।আমার বারটা বাজিয়ে বলে এমন করছো কেনো।আমি তো কি না কি মনে করে ছিলাম।আর তুই?কান খুলে শুনে রাখ আমি কোনও ডান্সফান্স করতে পারবো না।ইম্পসিবল!আর দ্বিতীয়বার আমাকে এসব বলবিও না।
“তাহলে আমি কার সাথে করবো।প্রিয়ু মুখটা ফুলিয়ে।”
–জানি না।আয়ন একটু চিল্লিয়ে।
“আচ্ছা ঠিক আছে।আমি অন্যকোনও পার্টনার খুঁজে নিবো।তার হাতে হাত রেখে পায়ের সাথে পা মিলিয়ে ডান্স করবো। কি বলো।”
–থাপ্পড়াইয়া তোর সব দাঁত ফেলে দেবো বেয়াদব।হাত পা ভেঙ্গে ঘরে বসিয়ে রাখবো।অন্য কারো সাথে দেখলে খুন করে ফেলবো।
“ঠিক আছে,আমি বুঝতে পাড়ছি।বয়স হয়ে গিয়েছে তাই হয়তো ভয় পাচ্ছো ডান্স করতে গিয়ে,পড়ে আবার কোমড় না যায় এভেবে।কিন্তু এতো চিল্লাচ্ছো কেনো।আমি কালা নাকি।”

“আয়ন কোমড়ে হাত দুটো রেখে,চোখ পাকিয়ে প্রিয়ুর দিকে তাকালো,মানে কি তোর। আমি বুড়ো।”
–প্রিয়ু মুখ চেপে হাসছে।কিছু আর বললো না।ওর খুব মজা লাগছে আয়নকে এভাবে রাগাতে।
“হঠাৎ আয়ন প্রিয়ুর কোমড়টা ধরে টান দিলো নিজের দিকে।প্রিয়ু গিয়ে আয়নের বুকে পড়লো।আয়ন প্রিয়ুর মুখে নিজের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে বলছে,ওকে মিসেস মাহবুভ। আজ রাতে পার্টিতেই দেখা যাবে।আপনি আবার এই বুড়োকে দেখে বেহুশ হয়ে যাবেন না তো।দূর্বল হার্টের মানুষ হলে সাবধানে থাকবেন।আয়ন প্রিয়ুকে ছেড়েই মুচকি হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।”
–আর এদিক দিয়ে প্রিয়ু ভাবছে বেশি করে ফেললাম নাকি।এই লোক যে আজ কিছু একটা ঘাপলা করবে তা নিশ্চিত।কিন্তু কি?
দেখা যাক কার বুকের আগুন জ্বলে আজ।
___________
“নিজের ডেস্ক এ বসে ছটফট করছে তিতির।কেবিনে এখন কি চলছে তা ভেবেই অস্থির লাগছে।লোরিন নামক একজন নামকরা মডেল এসেছে ইটালি থেকে।দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি হট।ছেলেরা কি অফিসের মেয়েরাও ছোটখাটো ক্রাশ খাইছে লোরিনকে দেখে।নতুন প্রজেক্ট এর ব্রান্ড এম্বাসেডর লোরিন।তাইতো প্রায় এক ঘন্টা ধরে লোরিন দিনেশের কেবিনে বসে কথা বলছে।হয়তো লোরিনের কাজগুলো দিনেশ ভালো করে বুঝিয়ে দিচ্ছে।তিতির একবার গিয়েছিলো কেবিনে কফির বাহানায়।কিন্তু দিনেশ সাথে সাথে ওকে রুম থেকে বের করে দিলো।লোরিনের সামনে এমন বিহেভ করায় তিতির একটু কষ্টতো পেলো,কিন্তু এই কষ্ট থেকে বেশি কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে একটি সুন্দরী মেয়ে,শুধু সুন্দরী বললে ভুল হবে বিশ্ব সুন্দরী মেয়ে দিনেশের সামনে বসে আছে।কেউ সত্যি বলেছে,মেয়েরা হিংসুক হয়।বিশেষ করে নিজের থেকে সুন্দর কাউকে দেখলে সহ্য হয় না।যা এখন তিতিরের সহ্য হচ্ছে না।এটাই বাস্তব।”

–বেশকিছু সময় পর দিনেশ লোরিনকে সাথে নিয়ে হাসতে হাসতে কেবিন থেকে বের হলো।অফিসের সবাই তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।লোরিনও যে দিনেশ এর উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে তা কিছুটা ওর কার্যকলাপে তিতির অনুধাবন করতে পাড়লো।দিনেশ তিতিরকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে লোরিনের সাথে চলে গেলো।তিতির দিনেশের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পাড়লো না।দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে নিজের ডেস্কে বসে পড়লো।না চাওয়া সত্যেও চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।আবার মনে পড়ে গেলো সেদিনের রাতের কথা।যেদিন দিনেশ ওকে প্রোপজ করেছিলো।

অতিত…..

“দিনেশ চোখমুখ শক্ত করে তিতিরের দুবাহু চেপে ধরলো।সমস্যা কি তোমার।বলো?চিৎকার করে দিনেশ।
ওয়াটস ইউর প্রোবলেম।”
–এভাবে ধরায় তিতির ব্যাথায় চোখেমুখ খিঁচে ফেললো।প্লিজ ছাড়ুন।আআ!ইউ হার্ট মি।
“কষ্ট হচ্ছে তোমার।এর থেকে বেশি কষ্ট আমি পাচ্ছি তিতির।তা কি চোখে পড়ে না তোমার।নাকি আমি অন্য ধর্মের বলে মানুষ মনে হয়না বলো।তিতিরের বাহু ছেড়ে দিয়ে দিনেশ তিতিরের মুখটি দুহাতে তুলে বললো,ভালোবাসা ধরে বেধে হয়না তিতির,কিন্তু কি করবো বলো হয়ে গিয়েছে।তোমাকে ভালোবাসি আমি, খুব বেশি।তাই ছাড়তে পাড়ছি না।ধর্মই কি সমস্যা তোমার।দুনিয়াতে আমরা নতুন না,যে ভিন্ন ধর্মের মানুষ একে অপরের প্রেমে পড়েছি।আমাদের আগেও অনেকে ভালোবেসেছে,বিয়ে করে সংসার করছে।তাহলে আমরা কেনো পাড়বো না তিতির বলো।”

“-তিতিরের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে,নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।কিন্তু ও নিরুপায়।ও এ সম্পর্ক চাইলেও মেনে নিতে পাড়বে না।ওর শিক্ষা ওর ধর্ম ওকে দিবে না।তাই ও মনকে শক্ত করে দিনেশের হাতটি নিজের থেকে সরিয়ে ফেললো,এক পা পিছিয়ে দিনেশের দিকে তাকিয়ে বললো।এটা সম্ভব না স্যার।আমার ধর্ম আমাকে অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করার অনুমতি দেয়নি।আমাদের বিয়েটা কখনো বৈধ বলে গণ্য হবে না।সম্পর্কটাকে কখনো কোনও পবিত্র নাম দেওয়া যাবে না,এটা সম্পূর্ণ হারাম আমার জন্য।তাহলে বলুন কিভাবে গ্রহণ করি আমি।কিভাবে মেনে নিই।আমি পাড়বো না।সমাজ, বাবা-মা সবার সাথে লড়াই করতে পাড়বো,কিন্তু যিনি সৃষ্টি করেছেন তার সাথে কিভাবে লড়বো বলুন।আমি পাড়বো না।আমাকে ভুলে যান।আপনার জন্য আমার জন্য সবার জন্যই এটাই ভালো।প্লিজ।”

–দিনেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে তিতিরকে প্রশ্ন করলো,ভালোবাসো আমায়।
“তিতির নিশ্চুপ।তবে ওর চোখের পানি অনেক কিছু বলে দিচ্ছে।”
–তিতিরের এমন চুপ থাকাটা আজ দিনেশের সহ্য হলো না।হঠাৎ তিতিরকে কাছে টেনে ওর ঠোঁট দুটো নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো দিনেশ এবং খুব রুডলি ভাবে কিস করতে লাগলো।এমন ভাবে কিস করছে যেনো দিনেশ ওর সব রাগ,ফাস্ট্রেশন দূর করছে।আচানক সব কিছু হওয়ায় তিতির রিয়েকশন দিতে ভুলে গেলো প্রথমে।সাথে কিছুটা শোকড!কিন্তু ব্যাপারটা বুঝতে পেড়ে দিনেশ থেকে ছুটার চেস্টা করতে লাগে।কিন্তু পারেনা।তিতির এর এমন ছুটাছুটি দিনেশের একদম পছন্দ হয়নি।তাই তিতিকে টেনে আরো কাছে নিয়ে এলো,মনে হয় নিজের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলবে।তিতির নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।খুব বেশি অস্বস্তি ফিল করছিলো।দিনেশের এমন রুক্ষ আচরণ একদম মেনে নিতে পারছিলো না।কিন্তু নিজেও কিছুই করতে পারছিলো না।কিছুক্ষণ পর দিনেশ নিজেই ছেড়ে দিলো।
ছাড়া পেয়ে তিতির রীতিমতো হাফাতে লাগলো,জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস ছেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে লাগলো।
“তিতিরের কপালে নিজের কপাল ঠেকিয়ে দিনেশ,যাও,চলে যাও!আজ থেকে তুমি মুক্ত।আজকের পর থেকে আমি নিজ থেকে তোমার কাছে আসবো না কখনো।তবে তুমি আমার আশেপাশে থাকতে বাধ্য হবে।ভালোবাসার দহনে আমি তোমাকে পুড়াবো।ভীষন পুড়াবো।পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে ফেলবো।তুমি না বলতে পাড়বে না সইতে।শুধু চেয়ে চেয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়বে।যেমনটা আমি করছিলাম এতোদিন।”

–ফোনের শব্দে তিতির সম্বিৎ ফিরে পেলো।সেদিনের পর দিনেশ সত্যি ওকে বাধ্য করেছে আবার অফিস জয়েন হতে।কারণ ও চুক্তিবদ্ধ ছিলো এই কোম্পানিতে।চুক্তির আগেই ও কাজ ছেড়ে দিয়েছিলো।কিন্তু তখন দিনেশ কিছু না বললেও এখন এই চুক্তির জোড়েই তিতিকে অফিসে আবার জয়েন হতে বাধ্য করেছে।সেদিনের পর থেকে তিতির এর সাথে দিনেশের আচরণ পুরো পাল্টে গেছে।প্রয়োজন ছাড়া তেমন কথা বলে না।সর্বদা তিতির কে ইগনোর করেই চলে।ফোনটি আবার বেজে উঠলো।স্কিনে ভেসে উঠছে আয়নের নামটি।তিতির জানে কেনো ফোন করছে আয়ন।আয়ন তিতি কেও ইনভাইট করেছিলো অনিকের বিয়েতে।
____________
“এনগেজমেন্ট এর পর্ব খুব ভালো করেই শেষ হলো।সবাই ডান্সও করেছে।এমনকি দিশাও তিয়াশের সাথে ডান্স করার সুযোগ পেয়েছে।কিন্তু একমাত্র প্রিয়ুর কপালেই ডান্স করার সুযোগ হলো না।ওর ভীষণ রাগ উঠছে,তবে সাথে একটু বিরক্ত।কারণ পুরো পার্টিতে প্রিয়ু আয়নকে দেখতে পেলো না এখনো,কোথায় এই খবিশটা।আমাকে বলে কি কামাল দেখাবে।আর এখন নিজেই গায়েব।”

–হঠাৎ প্রিয়ু খেয়াল করলো সবাই বাহিরের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়ুও তাদেরকে লক্ষ্য করে সেদিকে তাকালো,আর সাথে সাথে একটা হার্ট বিট মিস করলো।আয়ন দাঁড়িয়ে আছে।একদম ফুল এটিটিউড নিয়ে।প্রিয়ু মনে মনে ভাবছে,আজ জানি কতো মেয়ে খুন হবে এই লোকটিকে দেখে।তাহলে আমার কি হবে একটু হতাশ হয়ে ভাবছে।প্রিয়ু আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অলরেডি অনেক মেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে আয়নের উপর।আর পড়বেই না কেনো।বেশির ভাগ মানুষই জানে আয়ন এখনো ব্যাচেলার।ওর বিয়ের খবরটা মিডিয়াতে এখনও প্রকাশ পায়নি।আয়নের কাছের মানুষগুলো ছাড়া তেমন কেউ জানেই না আয়ন বিবাহিত।তাইতো মেয়েরা ট্রাই করছে,একবার যদি আয়নের নযরে আসা যায়।প্রিয়ুর মনটা খারাপ হয়ে গেলো।প্রিয়ু ভাবছে,আয়ন হয়তো প্রিয়ুকে নিয়ে কিছুটা লজ্জিত তাই প্রিয়ু আর ওর বিয়ের কথা বলতে চায়না কাউকে।প্রিয়ুর অবুঝ মনে একগুচ্ছ মেঘ এসে জমা হয়ে গেলো।আর এর ফলে যেকোনও সময় বর্ষণও হতে পারে।

“-এদিকে আয়ন কয়েকবার ট্রাই করেছে প্রিয়ুর সাথে কথা বলার।কিন্তু গেস্টদের এটেন্ড করতে গিয়ে আর সময় পায়নি।কিন্তু দূর থেকেই দেখে বুঝতে পাড়ছে প্রিয়ুর মন খারাপ।কিন্তু মন খারাপের কারণ কি? আয়ন বুঝতে পাড়ছে না।আয়ন ভেবেছিলো প্রিয়ুকে আজ জেলাস ফিল করাবে।কিন্তু প্রিয়ুর উদাসীন মুখটি দেখে আয়ন নিজেই অস্থির হয়ে পড়লো, কখন সব গেস্টরা যাবে আর ও প্রিয়ুর উদাসীনতার কারণ জানতে পাড়বে।”

–পার্টি শেষ হবার পরও একটু দেরি করেই প্রিয়ু রুমে এলো,ওর আয়নের সাথে কথা বলার একদম ইচ্ছে নেই তাই।আজ পার্টিতে বুঝতে পাড়ছে প্রিয়ু, ওর স্বামী নামের এই মানুষটির পিছনে কতো মেয়ে পাগল।আগে ব্যাপারটা ইজি নিলেও কেনো জানি আজ খুব খারাপ লাগছে।একদম অসহ্য।কখনো সুন্দর ছেলেদের বিয়ে করতে নেই,এদের নিয়ে রিস্ক বেশি থাকে।প্রিয়ু নিজের এই বিষন্ন মনটাকে নিয়ে এতো রাতে রুমে এসেও আয়নকে পেলো না,তাই দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে চেন্জ্ঞ করতে চলে গেলো।ওয়াসরুম থেকে বের হতেই কেউ ওর উপর ঝাপিয়ে পড়ে।আর খুব সোফ্টলি প্রিয়ুকে কিস করতে থাকে।ঘটনার আকষ্মিক প্রিয়ু ভয় পেলেও পরে চেনা মানুষটির পারফিউম এর গন্ধে প্রিয়ু নিজেও মাতাল হয়ে যায়।বেশ সময় পর আয়ন প্রিয়ুকে ছেড়ে আবার সাথে সাথে কোলে তুলে নেয়।প্রিয়ু আয়নের এভাবে পাগলামির কোনও মানে বুঝতে পাড়ছে না।শুধু নিরব হয়ে দেখছে।আয়ন প্রিয়ুকে বিছানায় নিয়ে আরো একবার প্রিয়ুর ভেজা ঠোঁটের পরশ নিতে লাগলো।প্রিয়ু এখনো শোকড এর মধ্যেই আছে।তবে আয়নের পাগল করা স্পর্শে প্রিয়ুর চোখদুটো বন্ধ হয়ে গেলো।গালদুটো লাল হয়ে গেলো।প্রিয়ু লজ্জা পাচ্ছে,ব্যাপারটা আয়ন একবার লক্ষ্য করেছে,কিন্তু নিজেকে প্রিয়ুর উপর থেকে তুললো না।বরং আরো একটু নেমে এসে ওর গালে, গলায়,বুকে কিস করতে লাগলো।আয়ন জানে ওর বউয়ের মনটা ভালো নেই।সেটা যেই কারণেই হোক,আয়ন ওর ভালোবাসা দিয়ে আগে নিজের অবুঝ বউকে বশে আনতে চায়।এরপর বাকি কাহিনী প্রিয়ু নিজেই বলবে,ওকে আর কিছুই করতে হবে না।”এখনো ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-২৫|

“বিয়ের আয়োজন খুব ভালো করেই শেষ হলো।আজ রিসেপশনের পার্টির জন্য বড় একটা হোলরুম বুক করা হলো।চারদিকে হাজার মানুষের ভিড়।আয়ন একটু হিমশীম খাচ্ছে এতো মানুষকে একসাথে এটেন্ড করতে গিয়ে।তাছাড়া আয়নের বিয়ের খবরটা ছড়ানোর পর এই পার্টির ম্যান কেন্দ্রবিন্দু যেনো আয়ন আর প্রিয়ু হয়ে গিয়েছে।চেনা-অচেনা সব গেস্টরা এসে আগে আয়ন আর প্রিয়ুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তারপর যাচ্ছে অনিক আর সারার দিকে।তাছাড়া মিডিয়া তো আছেই।আর কিছুক্ষণ পরপর কেউ না কেউ এসে প্রিয়ু আর আয়নের সাথে সেলফি তুলার রিকোস্ট করছে ‘পিক ক্যাপচার’ করার জন্য।কম বেশি সবাই এমন করবে প্রিয়ু ভেবেছিলো,কিন্তু ব্যাপারটা যে এতোটা অতিরিক্ত হবে প্রিয়ু বুঝতে পারেনি।এখন অনেকটা অস্বস্তি বিরাজ করছে ওর পুরো মুখে।

–তার উপর পার্টিতে আসা গেস্ট,সবাই যেনো আয়ন আর প্রিয়ুকেই ঘিরে রেখেছে।হয়তো আয়নের হঠাৎ নিজের বিয়েটার এনাউসমেন্ট অনেকের কাছেই আশ্চর্য ছিলো।কেউ কেউতো বিশ্বাসই করতে পাড়ছিলো না।তাই সবাই নিজ চোখে আয়নের পার্টনারকে দেখে যাচ্ছে।প্রায় তিন ঘন্টা ধরে প্রিয়ু আয়নের সাথে দাঁড়িয়ে গেস্টদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।প্রিয়ুর এখন খুব রাগ উঠছে।আর নিজের সব রাগগুলো একসাথে দলা বেধে আয়নের গলায় ঝুলিয়ে দিতে মন চাইছে।কিন্তু আফসোস তা করা যাবে না।তাই কপাটরাগ দেখিয়ে আয়নের দিকে তাকালো প্রিয়ু।
“আয়ন ভ্রুকুচকে ইশারা করে সমস্যা কি?প্রিয়ুর এমন তাকানো দেখে।”
–কি দরকার ছিলো,নিজের বিয়ের কথা ঢোল পাড়ানোর।নিজে ঢোল পাড়িয়ে এখন আমাকে চৌকিদারি করতে দাঁড়িয়ে রেখেছো এখানে।যত্তসব আজাইরা কারবার।পার্টিতে সবাই কতো মজা করছে আর আমাকে দেখো স্ট্যাচুর মতো দাঁড়িয়ে আছি।
“আয়ন মুখে একটু হাসি টেনে সবার চোখের আড়ালে প্রিয়ুর কোমড়টা ধরে কাছে টেনে,ফিসফিসিয়ে বললো,আচ্ছা আমি ঢোল পাড়ছি।কালরাতের কথা মনে নেই।নাকি আমি সব ডিটেলস খুলবো।কাল আমাকে ইমোশনে ফেলে কতো কিছু বলেছিলি মনে নেই।নাকি আমার মুখে শুনতে চাস।প্রথম থেকে লাস্ট পর্যন্ত বলবো।কোথা থেকে যেনো শুরু করেছিলাম আমরা কিস..প্রিয়ু আর বলতে দিলো না।”
–ব্যাস!আর এতো চোপা মারতে হবে না।আমি বুঝে গেছি বাকিটা।
“আয়নের হাসি পাচ্ছে প্রিয়ুর এমন করুন মুখটি দেখে।আয়ন জানতো এমনেই হবে।প্রিয়ুকে সবার সামনে আনা মানে প্রিয়ুর স্বাধীন ভাবে চলা ফেরায় বেগাত ঘটা।প্রিয়ু এতোদিন যেভাবে মন চেয়েছে ঘুরছে ফিরছে।কিন্তু আজকের পর থেকে ব্যাপারটা একদম পাল্টে যাবে।এতোদিন প্রিয়ু শুধু প্রিয়ু চিলো।কিন্তু আজকের পর থেকে প্রিয়ুকে কেউ নিজের নামে চিনবে না।চিনবে মিসেস মাহবুভ রুপে।তাইতো আয়ন এতোদিন চুপ ছিলো।কিন্তু কালরাত প্রিয়ুর অভিমান ভাঙ্গাতে গিয়ে প্রিয়ুকে সবার সামনে আনতে হলো।আয়ন বুঝতে পাড়ছে হঠাৎ করে এসব ফেস করা প্রিয়ুর জন্য একটু অস্বস্তিকর।কিন্তু এখন আর কিছুই করার নেই।”

–রাগ করিস কেনো সোনা।আমিতো তেমন কিছুই করলাম না।জাস্ট আমার আইডিতে তোর আর আমার বিয়ের একটা পিক দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিলাম সবার সাথে।যেমনটা তুই চেয়েছিলি।আর দেখ কি অবস্থা।এবার বুঝলি কেনো আমি চুপ হয়ে ছিলাম।তোর হ্যাসবেন্ড এর নামটি কোনও সাধারণ নাম না,বুঝলেন মিসেস মাহবুভ প্রিয়ুর নাক টেনে।”
–আআ….কি করছো।এভাবে কেউ নাক টানে সবার সামনে।আমাকে কি তোমার বাচ্চা মনে হয়।
“আয়ন আরো একটু কাছে গিয়ে প্রিয়ুর কানের কাছে মুখ নিয়ে,ছিঃ সোনা!কিসব বলছিস।বাচ্চা ভাবলে কি কাল রাতে এতো কিছু করতে পারতাম।বিশ্বাস না হলে আজও এর ডেমো দেখাবো,রাতে রুমে গিয়ে।ওকে সোনা।রেডি তো তুই।”
–আয়নের লাগাম ছাড়া কথার জ্বালায়,প্রিয়ু রাগ দেখিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো।আর মনে মনে কিছু গালিও দিলো আয়নকে।আয়ন যে ইচ্ছে করে কাল রাতের কথা তুলে প্রিয়ুকে বিব্রত করে লজ্জা দিচ্ছে বারবার তা প্রিয়ু খুব ভালো করেই জানে।আর প্রিয়ুও যে লজ্জা পাচ্ছে তা প্রিয়ুর লাল লাল গাল দুটো দেখে যে কেউ বলে দিবে।
“তাই মনে মনে ভেবে নিয়েছে প্রিয়ু আয়নের পাশেই আজ আর ঘেঁষবে না।কিন্তু নিজের কথায় বেশিক্ষণ কায়েম থাকতে পাড়লো না প্রিয়ু।নিলীমাকে আয়নের দিকে আসতে দেখে প্রিয়ু নিজে গিয়েই আয়নের পাশে দাঁড়িয়ে আয়নের একহাত জড়িয়ে ধরলো।আয়ন ব্যাচারাতো প্রথমে হাবলার মতো প্রিয়ুর দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলো।ব্যাপারটা বুঝতে এক সেকেন্ড সময় লেগে গেলো।কিন্তু সামনে আসা নিলীমাকে দেখে সব বুঝে গেলো।তার বউটার মনে হঠাৎ ওর প্রতি এতো দরদ কেনো আসলো।
“হ্যালো আয়ন।কেমন আছো।”
–ইয়া,ইয়া।আমরা ফাইন,ফাইন।আয়ন বলার আগেই প্রিয়ু জবাব দিলো।
“এই মেয়ে, মাথা ঠিক আছে তো।নাকি তার সব ছিঁড়া।আমি আয়নকে জিঙ্গেস করছি তোমাকে না।তুমি কেনো উত্তর দিচ্ছো।”
–কারন আপনার আয়ন তো পুরোটাই আমার।তাই আমি মানে উনি,আর উনি মানে আমি।আমরা দুশরীরে এক জান।দেখেন না কেমন চিপকে দাঁড়িয়ে আছি দুজন এক সাথে।ঠিক না আয়ন সোনা।প্রিয়ু একচোখ টিপ মারে আয়নকে।
‘প্রিয়ুর কান্ড দেখে আয়ন বিষম খেলো।হালকা কাশি দিয়ে প্রিয়ুর সাথে তাল মিলালো।’
“নিলীমা কিঞ্চিত অবাক হলো।আয়নের দিকে তাকিয়ে ভাবছে আয়নের মতো এমন হার্ড পার্সোনোলিটির একজন লোক কিভাবে একটা মেয়ের এসব বাচ্চামো সহ্য করে দমে গিয়েছে ভাবতেই অবাক লাগে।লোকে ঠিকই বলে,প্রেম চালাক কেও গাধা বানিয়ে দেয়।মুখে একটু মেকি হাসি টেনে আয়নের দিকে তাকিয়ে নিলীমা জিঙ্গেস করলো।এই মেয়ে কি আবার ড্রিংকস করেছে আয়ন।”
–আয়ন কিছু বলার আগে,আবার প্রিয়ুই জবাব দিলো। না না আপু এখনো করিনি।কিন্তু ওই যে দেখুন ওখানে সব ব্যবস্তা করা আছে।আজও যদি কাউকে আবার ঝাড়তে মন চায় তাহলে করে নিবো।
“নিলীমা রেগে আয়নের দিকে তাকালো।আয়ন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে প্রিয়ুকে আস্তে একটা ধমক দিলো।হাজার হোক নিলীমা এখন গেস্ট ওদের।আর গেস্টদের অপমান করা একদম উচিৎ মনে হয়না আয়নের।আয়নের ধমকে প্রিয়ু রেগে গেলো,আর আয়নকে একা রেখেই চলে গেলো ওখান থেকেই।”
–নিলীমা ঠোঁটে একটু বাকা হাসি রেখে আয়নকে বললো,ম্যাচিউরিটির ‘m’ ও এখনো আসেনি তোমার বউয়ের মাঝে।সামলিয়ে রেখো।তা না হলে লোকের কাছে বারবার লজ্জিত হতে হবে।
“নিলীমার এমন কথায় আয়নের মুখটা শক্ত হয়ে উঠে।প্রিয়ুর সম্পর্কে কোনও কথাই আয়নের সহ্য হয় না,তাই তৎক্ষনিক জবাব দিয়ে দিলো নিলীমাকে।সেটা আমি বুঝে নিবো নিলিমা তোমাকে ভাবতে হবে না এসব নিয়ে।পার্টিতে এসেছো।এন্জয় করো।ওকে।”
___________
“তিয়াশ কখন ধরে দিশার পিছনে পিছনে ঘুরছে।অথচ দিশা এমন বিহেভ করছে যেনো তিয়াশকে ও চিনেই না।তিয়াশের এখন মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে।দিশার এমন বিহেভিয়ার একদম সহ্য হচ্ছে না।
দিশা প্রিয়ুর সাথে সাথে কথা বলার সময় হঠাৎ তিয়াশের উপর চোখ পড়লো।তিয়াশ কোমড়ে হাত দিয়ে দিশার দিকেই অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে।দিশার মনে হলো তিয়াশ যেনো আজ চোখ দিয়েই ওকে ভস্ম করে ফেলবে।এতো দূর থেকেও সেই উত্তাপ অনুভোব করছে দিশা।শুকনো একটা ঢোক গিললো।দিশা যানে ওকে এর শাস্তি পরে ভোগ করতে হবে।কিন্তু এই সময় ব্যাপারটা মাথায় নিলো না।কারণ দিশা বুঝতে পাড়ছে তিয়াশের মা দিশাকে তিয়াশের আশেপাশে মোটেও সহ্য করছে না।কয়েকবার ইনডাইরেক্ট ভাবে তা বুঝিয়েও দিয়েছে।দিশা চায় না ওকে নিয়ে মা ছেলের মধ্যে কোনও ঝগড়া হোক বা পার্টিতে কোনও সিনক্রিয়েট হোক।তাই আপাততো বিয়েতে তিয়াশকে এড়িয়ে চলাটা ভালো মনে করলো।কিন্তু এই তিয়াশ বাচ্চাদের মতো ওর পিছুপিছু ছুটছে।যা দিশাকে আরো বিব্রত করছে।আশেপাশের মানুষগুলোও কানাঘুষি করছে।কিন্তু এতে তিয়াশের কোনও রিয়েকশন নেই।তিয়াশের এমন পাগলামো গুলো দেখে দিশা ভেতরে ভেতরে খুশি হলেও তা তিয়াশকে বুঝতে দিচ্ছেনা।”

–হোলরুমের একটা কর্নার সাইডে তিতির দাঁড়িয়ে আছে।আশেপাশের কতো মানুষের ভিড়,কিন্তু তবুও যেনো প্রচণ্ড একাত্মবোধ ফিল করছে তিতির।মনের ভেতরের উত্তান পতন কাউকে বুঝতে না দিলেও,ওর শুকিয়ে যাওয়া মুখখানি বলে দিচ্ছে ওর ভেতরের জ্বালাপোড়া।জ্বালাটা কাল রাত থেকে যেনো আরো দশগুণ বেড়ে গিয়েছে।যখন থেকে লোরিনকে দিনেশের রুম থেকে বরে হতে দেখেছে।
কালরাতে তিতির যখন কোন একটা কাজে রুম থেকে বের হলো, তখনই তিতির দেখতে পেলো লোরিন দিনেশের রুম থেকে বের হচ্ছে।লোরিনের গায়ে তখন ছিলো সিলেভলেস ওয়ান পিছের একটা শর্ট নাইটি।যার ফলে,শরীরের অনেকাংশই উন্মমুক্ত ছিলো তার।তিতির বুঝতে পাড়লো না,এমন একটা নাইটি পড়ে নিজেকে মোহেনীয় বানিয়ে রাতে একটা পর পুরুষের রুমে যাওয়ার কারণ কি।তিতির নিজের কৌতুহল আটকাতে না পেরে, দিনেশের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভেজানো দরজাটা হালকা ফাঁক করে যা দেখলো,তাতে তিতিরের বুকটা ধক করে উঠলো।নিশ্বাসটা গলার মাঝেই আটকে গেলো।কেউ যেনো গলা চেপে ধরেছে তিতির।মুখ দিয়ে কিছুই বলতে পাড়লো না।কিন্তু চোখের জল আর বাধ মানলো না।তিতির ভাবতে পারিনি এমন কিছু ওর চোখে পড়বে।
কারণ দরজায় দাঁড়িয়ে তিতিরের চোখ পড়লো দিনেশের উদাম শরীরটার দিকে।দিনেশ খালি গায়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে সার্ট পড়ছিলো আর তখনি তিতির দিনেশের খোলা পিঠে লোরিনের লিপস্টিক এর দাগ দেখতে পেলো।এটা দেখার পর তিতির আর এক মুহুর্তেও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পাড়লো না।নিজের রুমে এসেই ডুকরে কেঁদে উঠলো।সারারাত তিতির আর ঘুমাতে পারেনি।তিতির বিশ্বাসই হচ্ছে না দিনেশ এমন কিছু করতে পারে।কিছুুদিন আগেও যে ছেলে ওকে ভালোবাসি বলে মারিয়া হয়ে যাচ্ছিলো আজ সেই ছেলেই অন্য মেয়ের সাথে।ভাবতেই অবাক লাগছে।নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো সত্যি কি ভালোবাসা ছিলাম আমি দিনেশের নাকি শুধুই ভালোলাগা।সারারাত কেটে গেলো শুধু এই চিন্তায় চোখের পানিতে।তাইতো আজ পার্টিতে এসেও তিতির একদম চুপচাপ বসে আছে।কারো সাথে কথা বলার কোনও আগ্রহ একেবারেই নেই।কখন পার্টি শেষ হবে তার প্রতিক্ষা করছে।
“আর এদিক দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা দিনেশ পুরোটা সময়ই তিতিরকে লক্ষ্য করছে।তিতির মুখ দেখেই আন্দায করতে পাড়ছে কিছু একটা হয়েছে,যা ঠিক না।কিন্তু কি?”

–আয়ন নিজের বাচ্চা বউয়ের রাগ ভাঙ্গাতে ব্যস্ত।কখন ধরে প্রিয়ুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু প্রিয়ু দূরত্ব বজায় রেখে রেখে হাটছে।মনে হয় আয়নের শরীরে কোনও ছোঁয়াচে রোগ আছে,প্রিয়ু ঘেষলে তারও হবে।আয়ন অনেকবার চোখের ইশারায় সরিও বলেছে।কিন্তু প্রিয়ু পাত্তা না দিয়ে মুখ ঘুড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কারণ আপাততো আয়নের সরি একসেপ্ট করার মুডে নেই।আয়ন ওকে নিলীমার সামনে ধমক দিয়েছে।দিতে মন চাইলে পড়ে দিতো।ওই ডাইনীর সামনে কেনো?নিশ্চয় ওই ডাইনী এটা দেখে ভীষণ খুশি হয়েছে।এসব কারণেই প্রিয়ু মুখটা ভার করে ঘুরছে।
_____________
“পার্টি শেষ হবার পর প্রিয়ু সোজা নিজের রুমে চলে এসেছে।আর এখনো মুখ ভার করেই বিছানা ঠিক করছে ঘুমানোর জন্য।”
–আয়ন রুমে এসে প্রিয়ুকে বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে থাকতে দেখেই,ভীষণ হাসি পেলো ওর।কিন্তু আপাততো লোহা গরম,এখন হাসলে এই লোহা লাভা হয়ে প্রথমে ওকেই জ্বালাবে।তাই চুপচাপ ফ্রেস হতে চলে গেলো।ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে দেখে প্রিয়ু শুয়ে পড়েছে।আয়ন একটু মুচকি হেসে প্রিয়ুর বেডের কাছে হাটু গেড়ে বসলো।
“প্রিয়ু মাথায় হাত বুলিয়ে আয়ন, সরি বললো প্রিয়ুকে।লক্ষি সোনা আমার।দেখ পার্টি থেকে এ পর্যন্ত কতোবার সরি বললাম।এতো সরি তো আমি, আমার ইহজীবনে কাউকে বলিনি।কিন্তু প্রিয়ু কিছু বলছে না।প্রিয়ুকে চুপ দেখে আয়নের মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি এলো,আয়ন টুপ করে প্রিয়ুর ঠোঁটে একটা কিস করে দিলো।”
–আর এতে প্রিয়ু মরিচের মতো জ্বলে উঠলো।লাফ দিয়ে উঠে বসে,আয়নের দিকে নিজের রাগী চোখে তাকায়।
“আর এটা দেখে আয়নের আবার হাসি পায়।কারণ প্রিয়ু রাগলে একদম কিউটের ডিব্বা লাগে।আয়নের মন চায় তখন প্রিয়ুর নরম,সোপ্ট, মসৃণ গাল দুটো টেনে দিতে।কিন্তু এখন নিজের এই চাওয়াটা আপাততো সাইডে রাখলো প্রিয়ুসীকে মানাবার জন্য।”

–আয়ন প্রিয়ুর হাতদুটো টেনে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে আসলো।সরি তো জান।আর বোকা দিবোনা।ধমকও দিবো না।এই যে কানে ধরে সরি বলছি প্লিজ।আয়ন এক কান ধরে ইশারায় দেখালো।প্রিয়ু অভিমানে মুখ ঘুড়িয়ে ফেললো এতো সহযে ও মাপ করবে না।
“আয়ন প্রিয়ুর মুখটা নিজের দিকে ঘুড়িয়ে,আবার একটা কিস করলো ঠোঁটে।প্রিয়ু যেনো আবার অবাক হলো,আয়নের এমন হুটহাট চুমতে।”
–তখন ও আমাদের গেস্ট ছিলো প্রিয়ু।আর গেস্টদের এভাবে কারণ ছাড়া অপমান করাটা কি ঠিক বল।
“প্রিয়ু মাথা নাড়ায়,তার মানে না।প্রিয়ু নিজের ভুলটা বুঝতে পারে।আসলেই তখন এ কাজটা করা ঠিক হয়নি।এটা ওর বাচ্চামি ছাড়া আর কিছুই না।তাই ও নিজেও সরি বলে আয়নকে।”
–আয়ন আবার প্রিয়ুর ঠোঁটে একটা কিস করে,ইটস ওকে সোনা।আমি জানি তুই নিলীমাকে পছন্দ করিস না।আমিও করি না।কিন্তু কি করবো বল,মায়ের বন্ধুবীর মেয়ে,তার উপর ওদের কোম্পানির সাথে আমাদের অনেক বড় একটা প্রজেক্ট জড়িত,তাই না চাওয়া সত্যেও ওকে সহ্য করতে হয়।

“ও সব সময় তোমার গায়ে পড়ে কথা বলে,কিন্তু তুমি কিছু বলো না।আমার এসব একদম পছন্দ না।প্রিয়ু মুখটা আবার ভার করে আয়নকে অভিযোগ করে।”
–আয়ন যানে প্রিয়ুর মনে আয়নের জন্যও একটা সোফ্ট ফিলিং আছে,কিন্তু সেটা আজও ভালোবাসা কিনা আয়ন যানে না।প্রিয়ু এখনো ওর মনের কথা প্রকাশ করেনি।কিন্তু বলে না,কিছু অনুভূতি লুকানো যায় না,ভালোবাসা তেমনি এক মিষ্টি অনুভূতি।ইচ্ছা করলেও লুকানো সম্ভব না।আজ প্রিয়ুর জেলাছি তাই প্রকাশ করছে।আয়ন যেমন প্রিয়ুকে নিয়ে পজেসিভ তেমনি প্রিয়ুও অন্যকারো সাথে আয়নকে দেখতে চায়না।প্রিয়ু হয়তো যানেই না ও আয়নকে কতোটা ভালোবেসে ফেলেছে।
“আয়ন আবার ওর প্রিয়ুসীর ঠোঁটে একটা কিস করে বললো,আমার নিজেরও একদম পছন্দ না,সোনা।তাই তো ওর কাছ থেকে দূরে দূরে থাকি।কিন্তু ওকে তোর ভাষায় কি বলে জানিস,ছেঁচড়া মেয়ে! আমার বিয়ে হয়েছে যেনেও পিছ ছাড়ছে না দেখিস না।”
–প্রিয়ু আরো কিছু বলতে নিবে কিন্তু আয়ন আবার প্রিয়ুর ঠোঁটে কিস করলো,কিন্তু এবার আর ছাড়লো না।তার মানে আয়ন আর কিছু বলতে আগ্রহ না।আর প্রিয়ুও নিজের অজান্তেই দুহাত দিয়ে আয়নকে টেনে নিলো নিজের কাছে।একদম কাছে।ব্যাপাটা আয়নকে একদমই অবাক করলো না,বরং খুশি হয়ে প্রিয়ুকে শক্ত হাতে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।আজ প্রিয়ু সক্রিয়ভাবে আয়নের সাথে তাল মেলাতে লাগলো।সুখের এক আদিম খেলায় মেতে উঠলো ওরা দুজন।
_____________
“বিয়ের পর পরই অনিক আর সারাকে হানিমুনে পাঠিয়ে দিলো আয়ন।অনিক অবশ্য যেতে চায়নি,কিন্তু দাদার আদেশে অনেকেটা বাধ্য হলো।”
–আর আয়নকেও আবার অফিসের কাজে মন দিতে হলো।অনেকদিন ছুটি কাটানোর পর অনেক কাজ পেন্ডিং পড়েছিলো।তাই অফিসে এসে শ্বাস নেওয়ার সময়ও পায়নি।তার উপর অনিকও নেই,তাই আয়ন আর তিয়াশের উপরই চাপ পড়লো সব।পর পর দুটো মিটিং এটেন্ড করে আয়ন অনেকটা ক্লান্ত নিয়ে নিজের কেবিনে এসে বসলো।হঠাৎ প্রিয়ুর কথা মনে পড়তেই ফোনটা হাতে নিলো।প্রায় বিশটা মিসকল তাও আবার আননোন নাম্বার থেকে।আয়ন একটু অবাক হলো।একটু চিন্তা করে নাম্বারটিতে কল দিলো।অপর পাশ থেকে রিসিভ করা ব্যক্তির কন্ঠ শুনেই আয়ন চমকে গেলো।কিছুক্ষন চুপ থেকে শুনলো অপর পাশের ব্যক্তিটির ফোন করার কারণ।আয়ন ফোনটা কোনও রকম কেটেই দ্রুতো অফিস থেকে বের হয়ে গেলো কাউকে কিছু না বলে।

“আজ কলেজ থেকে বের হয়ে রাস্তার অপর পাশে ফুসকার স্টোল দেখে প্রিয়ু ডানেবামে না থাকিয়ে রাস্তা পার হতে নিলেই হঠাৎ একটা বাইকের সাথে ধাক্কা লেগে প্রিয়ু ছিটকে রাস্তায় পড়ে যায়।এতে খুব বেশি ব্যাথা না পেলেও পায়ে আর মাথায় ভালোই ব্যাথা পায়।দিশা দৌড়ে এসে প্রিয়ুকে ধরে।দিশা আর ওর কিছু ক্লাশমেট এর সাহায্যে গাড়ীতে উঠে বসে প্রিয়ু।দিশা ড্রাইভারকে বলে তারাতারি হসপিটালে নিয়ে যেতে।দিশা একহাতে প্রিয়ুকে ধরে আরেক হাত দিয়ে ফোনটা বের করে আয়নকে কল করতে থাকে।”

–ডাক্তার প্রিয়ুকে কিছুতেই সুই দিতে পাড়ছে না।ও সুইয়ের কথা শুনেই বাচ্চাদের মতো কেঁদে চলছে সেই কখন ধরে।আয়ন কেবিনে এসে প্রিয়ুকে এভাবে কাঁদতে দেখে বিচলিত হয়ে পড়লো।প্রিয়ুর কাছে এসেই,কি হয়েছে সোনা।কাঁদছিস কেনো।সব ঠিক আছে তো,খুব পেইন করছে কি?কোথায় করছে আমাকে বল প্লিজ।এখনি কমে যাবে।একদম ঠিক হয়ে যাবি।আমি আছি না।প্রিয়ুকে হালকা জড়িয়ে ধরে,রাগী চোখে ডাক্তারের দিকে তাকায়।সমস্যা কি?এখনো ওর ট্রিটমেন্ট করেন নিই কেনো?”
–স্যার তেমন চিন্তার কিছু না।তবে পেইন কমানোর জন্য একটা ইনজেকশন দিতে হবে।কিন্তু পেশেন্ট ইনজেকশনের নাম শুনেই বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।তাহলে আমরা এখন কি করতে পারি।

“বাচ্চাদের মতো কি?ওতো বাচ্চাই।আপনার কি ওকে দেখে বুড়ি মনে হচ্ছে আয়ন কিছুটা রেগে।কথা না বলে কাজ করুন।আয়ন ইশারায় ডাক্তারকে সুই দিতে বললো।
–আয়নের কথা শুনে ডাক্তার ব্যাচারাও আহম্মক হয়ে গেলো।কি বলে এই লোক।এতো বড় ধামড়ী মেয়েকে নাকি উনার বাচ্চা মনে হয়।ডাক্তার মনে মনে একটু বিরক্ত হলেও কিছুই বললো না।চুপচাপ নিজের কাজ করে চলে গেলো।
“প্রিয়ু যখন আয়নের বুকে মাথা রেখে কেঁদে ভাসিয়ে দিচ্ছিলো,তখনই আয়নের ইশারায় ডাক্তার সুইটা দিয়ে ফেলে।প্রিয়ু ছোটবেলা থেকেই সুই দিতে ভয় পায়,তাইতো সুই এর ভয়ে ডাক্তার দেখাতেও যেতো না।আজও তাই হলো।”

–এক এক করে সবাই চলে যায়,আয়ন আর প্রিয়ুকে একা রেখে কেবিনে।আয়ন প্রিয়ুকে শান্ত করে ওর মুখটা তুলে জিঙ্গেস করলো কিভাবে হয়েছে এসব।প্রিয়ুর সব বলতে দেরি আয়নের ঝাড়ি দিতে দেরি হলো না।সব সময় বাচ্চামো,বড় হবি কবে।কতোদিন বলেছি এভাবে তিড়িংতিড়িং করে চলা ফেরা করবি না।কিন্তু তুই কথা শুনলে তো।আজ থেকে তোর সব বন্ধ।খুব বেশি বাড় বেড়েছিস।কিছু বলি না বলে মনে করিস না,আমি ভালো হয়ে গিয়েছি।শুধু নিজেকে শান্ত রাখছি।না হলে তোকে আছাড় মেরে হাড্ডিগুলো ভেঙ্গে ফেলতাম এতোক্ষণ।

“আয়নের ধমকে প্রিয়ু রেগে আয়নকে দূরে সরাতে নিলো নিজের থেকে।কিন্তু একচুলও সরাতে পারলো না।আয়ন নিজের জায়গাই দাঁড়িয়ে আছে।”
–‘হয়েছে,ব্যাশ! এতোটুকুই শক্তি।মশা আসছে হাতিকে সরাতে আয়ন হাসতে হাসতে বললো এবার।’
“একতো এক্সিডেন্ট হয়ে কতো জায়গায় ফাও ব্যাথা পেয়েছে,তার উপর আয়নও বকছে সেই কখন থেকে।আরে ভাই কেউ ইচ্ছা করে কি নিজের এক্সিডেন্ট করে।কিন্তু কে শুনে কার কথা।এই লোকটা একটা বদজাত।”

–প্রিয়ুকে মুখ ভার করে থাকতে দেখেও আয়ন আজ আর প্রিয়ুর রাগ ভাঙ্গালো না।চট করে প্রিয়ুকে কোলে তুলে নিয়ে হাটা ধরলো কেবিনের বাহিরে।প্রিয়ু কিছু বলতে মুখ খুললেই,আয়ন টুপ করে একটা চুমো দিয়ে দেয় ওর ঠোঁটে।আর এতেই কাজ হয়ে যায়।
“এখনো ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-২৬|

‘আজ তিনদিন হলো প্রিয়ুর কোনোও খোঁজ নেই।আয়ন আকাশ পাতাল এক করে দিয়েছে।তবুও কোনও হদিস মিলছে না।চারদিকে পুলিশ হতে শুরু করে নিজের লোকও লাগিয়ে দিয়েছে।কিন্তু ফলাফল শূন্য।সারাদিন নিজের কাজ কর্ম ফেলে আয়ন প্রিয়ুকে হন্ন হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে।সেই সকালে বের হয়,রাতে ফিরে।খাওয়া নেই, ঘুম নেই চোখে।আয়ন এখন খুব ক্লান্ত।কি করবে,কোথায় যাবে কিছুই বুঝতে পাড়ছে না।শুধু যানে প্রিয়ুকে ওর চাই।একটু শান্তির জন্য।প্রিয়ুর বুকের উষ্ণ গরমই পাড়বে আয়নের এই অচেতন মনটিকে এখন একটু প্রশান্তি দিতে।কিন্তু কোথায় প্রিয়ু?’

–অনেকদিনের ক্লান্ত চোখ দুটো বন্ধ করে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে আয়ন।চোখের কোনা দিয়ে গড়িয়ে পড়লো একফোঁটা জল।কি অদ্ভুত না এই ভালবাসা।পাথরের বুকেও ফুল ফোটানোর ক্ষমতা রাখে।তবুও যেনো তার বিন্দু মাত্র অহংকার নেই।যেখানে মানুষ তার ক্ষনিকের সৌন্দর্যের মহে অন্ধ হয়ে যায়,অথচ এই ভালোবাসা নামক বচনটির পরিসীমা অসীম তবুও নেই কোনও দম্ভ।আমরা কেনো এমন হতে পরি না

‘আয়ন ভেসে যাচ্ছে অতিতের কিছু মধুময় স্মৃতিতে।’
–কিছুদিন আগের কথা,আয়ন অফিস থেকে ক্লান্ত শরীরে বাসায় এসেই হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।প্রিয়ু তখন পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিলো। আয়নের এই বাজে অভ্যাসটা প্রিয়ুর একদম পছন্দ না।প্রায়ই আয়ন অফিস থেকে এসে ফ্রেস না হয়েই বিছানায় এভাবে শুয়ে পড়ে।আর চোখ দুটো কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে শুয়ে থাকে।আজও তাই করলো।

‘তাই প্রিয়ু নিজের টেপ রেকডিং বাজানো শুরু করে দিলো।আয়নকে বারবার ফ্রেস হওয়ার তাগিদ দিতে লাগলো।কিন্তু আয়নের কানে কিছু ডুকছে বলে,মনে হয় না।’
–তাই প্রিয়ু আয়নের হাত ধরে টেনে উঠাতে চাইলে,আয়ন একটু রেগে যায়।
‘সমস্যা কি?এমন করছিস কেনো।ফেরার পর থেকেই দেখছি কানের সামনে কখন ধরে কা কা করেই যাচ্ছিস।কি? হয়েছে কি?এতো রিয়েক্ট কেনো করছিস।আমার রুম,আমার বিছায়নায় কি শান্তি মতো এখন একটু শুতেও পাড়বো না।বল!সমস্যা কি?একটু চেঁচিয়ে।
‘-কিছু না!বলেই,প্রিয়ু চুপচাপ পড়ার টেবিলে বসে পড়লো।’
–আয়ন একটা দীর্গ শ্বাস ছাড়লো।প্রিয়ুর সাথে এমন আচরণ ওর মোটেও করা উচিত হয়নি।তবুও কেনো যে নিজেকে আটকাতে পাড়লো না।আজকাল মাঝে মাঝে খুব বেশিই খারাপ ব্যবহার করে ফেলে ও প্রিয়ুর সাথে।বলা বাহুল্য মানুষ তার প্রিয় মানুষটির উপরই সব রাগ ঝাড়তে পারে কারণে অকারণে।আয়ন ও নিজের ফ্রাস্টেশন গুলো প্রিয়ুর উপরই উঠালো।
……………………………….
‘শাওয়ারের ঠান্ডা জল আয়নের শরীর বেয়ে নেমে যাচ্ছিলো।আর আয়নের মাথায় ভর করছে কিছু অজানা টেনশন।আজ রবিন কনফার্ম করলো আজগর আলীর মার্ডার হয়েছে।তাই তো এতো আকাশ পাতাল করেও তার খোঁজ পায়নি এতোদিন আয়ন।এই আজগরই তো ছিলো একমাত্র মাধ্যম যার মাধ্যমে জানা যেতো কারা প্রিয়ুর সাথে এমন করছে।প্রিয়ুর ফেক ভিডিও বানিয়ে ওকে বদনাম করার পিছনে কার হাত ছিলো।আর কেনো?’
“কিন্তু আজগরের মৃত্যুর সাথে সব যেনো শেষ।এখন কিভাবে জানবে আয়ন,এই টেনশনই ভর করছে ওর মস্তিষ্ক জুড়ে।চেনা শত্রুর সাথে লড়াই করা যায় কিন্তু অচেনা শত্রু থেকে বাঁচা সহয না।আর এসব টেনশনের পিড়ায় আয়ন প্রিয়ুর সাথে খারাপ ব্যবহার করে বসে।”
–আয়ন শাওয়ারটা বন্ধ করে,নিজের ভেজা চুলগুলো হাতের সাহায্যে পিছনে সরিয়ে সিনের জলে ভেজা আয়নায় নিজের নগ্ন শরীরটার দিকে তাকিয়ে আছে।ফর্সা শরীরটা শাওয়ারের ঠান্ডা জলে কেমন লালচে হয়ে গিয়েছে।হাতের সাহায্যে গোলাটে আয়না থেকে জলটা মুছে নিলো।মুখে কিঞ্চিত বাকা হাসি দিয়ে আয়ন নিজেই নিজেকে সান্ত্রনা দিতে লাগলো।আমি তোর কিছুই হতে দিবো না সোনা।তোকে আগে যেমন আগলে রেখেছি,এখনো রাখবো।তার জন্য আমাকে একটু কঠোর হতে হলে হবো।
“আয়ন কিছু মনে করে বাথরুম থেকেই প্রিয়ুকে ডাক দিলো।”
–প্রিয়ু ভ্রুকুচকে বাথরুমের দরজার দিকে তাকালো।একটু আগের ঘটনা প্রিয়ু এখনো ভুলেনি।তাহলে এখন কেনো আয়ন ওকে এভাবে ডাকছে।শয়তান লোক।কখন কি মতলোব আটে মনে কিছুই বোঝা যায় না।একদম গিরগিটির মতো রং বদলায়।এখন আবার বাথরুমে গিয়ে ডাকছে।কেন রে…তোকে কি এখন আমি গোশল করিয়ে দেবো।প্রিয়ু মনেমনেই বিড়বিড় করে যাচ্ছে।ভীষণ রেগে আছে।আয়নের ঈদানিং এমন হুটহাট আচরণ গুলো একদম সহ্য হয়না।
“আর এদিক দিয়ে আয়ন বাথরুমে থেকেই প্রিয়ু প্রিয়ু করেই যাচ্ছে কতোক্ষণ ধরে।আয়নের চিৎকারে প্রিয়ুকে অবশেষে জবাব দিতেই হলো।”
‘-কি হয়েছে,কি চাও?’
–চাই তো তোকে।কিন্তু আপাততো তোয়ালটা দিলেই হবে।আয়ন একটু হেসে।
“অসহ্যকর লোক!এতোক্ষণ বকে,এখন বলে কি তোকো চাই।কথাটা একটু ব্যাঙ্গ করেই বলে প্রিয়ু।তোওয়ালটা নিয়ে দরজায় নক করলে,আয়ন ওর পুরুষালি ভেজা হাতটি এগিয়ে দেয়।আয়নের ভেজা হাত দিয়ে তখনো চুয়ে চুয়ে পানি ঘরের মেঝেতে পড়ছিলো।”
‘-প্রিয়ু কিছুটা বিরক্ত হয়ে তোয়ালটা দিতে নিলে,হঠাৎ আয়ন তোয়াল সহ প্রিয়ুকেই টেনে শাওয়ারে দাঁড় করিয়ে দেয়।মুহুর্তে প্রিয়ু পুরো কাক ভেজা হয়ে যায়।রাগে দুঃখে প্রিয়ু আয়নের দিকে তাকাতেই,আয়নের চোখের চাওনি দেখেই কেপে উঠে প্রিয়ু।কি ভয়ংকর এই মানুষটির চাওনি। চোখ দিয়ে মেরে ফেলতে পারে।নেশা কাকে বলে?আজ যেনো প্রিয়ু হারে হারে টের পাচ্ছে।আর তাই প্রিয়ুর যেনো নেশাগ্রস্ত লাগলো নিজেকে।এক অমানসিক চাওয়া ভর করছে প্রিয়ুর মনে।মুখ দিয়ে অনেক কিছু বলতে চেয়েও যেনো বলতে পাড়লো না।আয়নের শরীর থেকে ভেসে আসা সদ্য গোশল করা পুরুষালী শাওয়ার জেলটার গন্ধটা খুব তীব্র ভাবে পাচ্ছিলো ও।অদ্ভুত শিহরণে জেগে গেলো প্রিয়ুর সারা শরীর।প্রিয়ুর দৃষ্টি আটকে ছিলো তখনও,আয়নের পশমবিহীন খোলা বুকটার দিকে।’
‘আর আয়নও তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয়ুর দিকে।দুজনের মধ্যে কোনও কথার আদানপ্রদান চলছিলো না,তবুও যেনো দুজন দুজনার অনুভূতির অসীম খেলা মেপে নিলো চোখে চোখ রেখেই।এ এক অদ্ভুত অনুভূতি।যার নাম নেই,গন্ধ নেই, আছে শুধু কিছু অনুভূতি আর অনুভূতি। কিছুক্ষণ এভাবেই থাকার পর শাওয়ারের ঠান্ডা জলে ভিজার কারণে প্রিয়ুর শীত শীত লাগছে।ঠান্ডায় হঠাৎ প্রিয়ুর ঠোঁট গুলোও কাঁপতে লাগলো।’
–আয়ন প্রিয়ুর দিকে তাকিয়ে থেকেই শাওয়ারটা বন্ধ করে দিলো।আরো একটু কাছে চলে এলো প্রিয়ুর।আর এতে আয়নের নিশ্বাসের গরম বাতাস আচড়ে পড়ছে প্রিয়ুর সারা মুখে।প্রিয়ু বুঝতে পাড়ছে না,কেউ না ছুঁয়ে শুধু তার কাছে থাকার অনুভূতি দিয়ে কিভাবে ঘায়েল করতে পারে।প্রিয়ু ঘায়েল হচ্ছে ভীষণ ভাবে!
“আয়নও যেনো প্রিয়ুর কাপাকাপা ঠোঁট,বিস্মিত মুখের লাল আভায় কেমন বিমোহিত হয়ে পড়ছে।হাত বাড়িয়ে ঠোঁট দুটো স্পর্শ করতেই প্রিয়ু চমকে আয়নের দিকে তাকালো।

“হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শে আয়নের সম্বিৎ ফিরে এলো।চোখ দুটো খুব জ্বালা করছে।খুলতেও কষ্ট হচ্ছে।কিছুক্ষণ চোখগুলো বুঝে থেকে একটু সময় দিলো।এরপর ধীর চোখে সামনে তাকালে মায়াকে দেখতে পায়।আয়ন আশা করেনি বোনকে এসময় দেখবে।মায়া পেগনেন্ট।সিক্স মানথ্ রানিং চলছে।কিছু কম্পলিকেশন এর জন্য ডাক্তার জার্নি একদম নিশেধ করেছে।তাইতো অনিকের বিয়েতেও তেমন কিছুই করতে পারেনি।অথচ প্রত্যেকবারের মতো এবারও আয়নের কষ্ট কমাতে চলে এসেছে বোন।”
–কেমন আছো আপু।মায়ার একটা হাত ধরে।বাবু কেমন আছে।ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করোতো।আর তুমি কেনো এই শরীর নিয়ে আসতে গেলে।আসছো তো আসছো তার উপর এতোরাত জেগে আছো।এসব কি আপু?এই সময় অনিয়ম কিন্তু একদম ঠিক না।
“মায়া স্নেহের সাথে আয়নের মুখে হাত রেখে, তুই ঠিক আছিস তো ভাই।”
–আয়ন যেনো স্নেহের এই স্পর্শটিরই অপেক্ষাই করছিলো।মায়ার হাতটি মুখে চেপে ধরেই ডুকরে কেঁদে দেয়।নিজের আবেগ গুলো বোনের কাছে কিছুতেই লুকাতে পাড়লো না আর।
“আমি ঠিক নেই আপি,একদম না।ও আমাকে আবার ছেড়ে চলে গেছে।কিভাবে পাড়লো আপি।আমি কি করবো।আমার ভালোবাসাও ওকে আটকাতে পাড়লো না।আমার বিশ্বাস হচ্ছে না,ও আবার চলে গেছে।আমি ওর চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি আপু।তাহলে কি ওসব মিথ্যা ছিলো এতোদিন।শুধুই কি অভিনয়।ও কেনো চলে গেলো আপু।কেনো?আমি কোথায় খুঁজবো ওকে এবার।আমার যে সহ্য হচ্ছে না আর আপু।আমি মরে যাবো।ওকে ছা….ড়া কি…. ভাবে থাক…বো।
…………………………………………..
তিনদিন আগের সকাল,
“আয়ন আর প্রিয়ুর দিনগুলো খুব ভালোই কাটছিলো।প্রিয়ুও ধীরেধীরে আয়নের ভালোবাসায় যেনো আসক্ত হয়ে পড়ছিলো।আয়নকে ছাড়া ওর এখন চলেই না।সারাদিন চোখের থেকে দূরে থাকলেও মন থেকে দূরে ছিলো না।আয়ন নিজের ভালোবাসায় প্রিয়ুকে এমন ভাবে জড়িয়েছে, প্রিয়ু হয়তো চাইলেও দূরে থাকতে পাড়বে না।শরীরের সাথে সাথে ওদের মনটাও যেনো একসূত্রে বেধে গেছে।সবকিছু ভালোই চলছিলো।এমনকি প্রিয়ু গায়ব হবার সকালটাও আয়নের জন্য খুব সুন্দর ছিলো।প্রিয়ু আয়নের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলো,এই সময় এলার্ম ক্লকের আওয়াজে প্রিয়ু জেগে গেলো।আর আয়নের হাতের মাঝ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে বসলো।আয়ন আবারও ওকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।আরও একটু থাক না সোনা।”

–একদম না,আমাকে কলেজের জন্য রেডি হতে হবে।আর তোমাকে অফিসের জন্য সো ফাস্টলি উঠে পড়ো আমাকেও ছাড়ও।
“কিন্তু আয়নের এখন আর কোনও সারা নেই।যেমন স্কুল কামাই করার জন্য বাচ্চারা ঘুমের অভিনয় করে শুয়ে থাকে,প্রিয়ুরও এখন আয়নকে দেখে তাই মনে হচ্ছে।আয়ন প্রিয়ুকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমানোর ভান করছে,প্রায় আধও ঘন্টা ধরে। প্রিয়ু আয়নকে সরানোর চেষ্টা করছে,কিন্তু!কোনও কাজ হচ্ছে না।আয়ন যেনো আরো শক্ত করে আটকে দিলো প্রিয়ুকে।”

–আয়ন উঠো,আমি জানি তুমি জেগে আছো।তাই ভান করে লাভ নেই।কি বাচ্চামো শুরু করলে।আমার লেট হয়ে যাবে আজ ভার্সিটিতে পৌঁছাতে।

“আয়নের মনে হয়না কোনও কথা কান দিয়ে মগজে ডুকেছে।ও আরো গভীর ভাবে প্রিয়ুর গলায় মুখ ডুবিয়ে একটা কিস করলো।মুহুর্তে প্রিয়ু শিউরে উঠলো।আয়নকে আবারও ধাক্কাতে লাগলো।কি করছো কি তুমি?সকাল সকাল এসব কি শুরু করছো।তোমার নামে মামলা দেওয়া দরকার।জানো!যখন তখন বউকে জ্বালাবার।”
–আয়ন এবার প্রিয়ুর গলায় নাকটা ঘষতে ঘষতে বললো,যা কর গে গিয়ে।পুলিশ কি আমি ডাকবো নাকি তুই।কিন্তু আমার এক স্বর্থ আছে।আমার সাথে তোকেও জেলে রাখতে হবে।আর দুজনকে একটি হ্যানকেপ দিয়ে আটকাতে হবে।তাহলেই হবে, আমার কোনও সমস্যা নেই।
“কেনো?কেনো?আমি কেনো তোমার সাথে একই হ্যানকেপ পড়ে জেলে যাবো।আমার ওখানে কি কাজ।”
–কেনো মানে!আমি আছি না।আমি একা জেলে কারসাথে রোমান্স করবো।সঙ্গী থাকলে হাসতে হাসতে কেটে যাবে রাস্তে। কথায় আছে না।
“হু,মামা বাড়ীর আবদার পাইছো।”
–আয়ন হেসে বলে…না!মামার শয়তান মাইটাকে পাইছি।

এটাই ছিলো প্রিয়ুর সাথে আয়নের শেষ কথা।এরপর প্রিয়ুকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আয়নের।প্রিয়ু প্রতিদিনের মতো যথারীতি ভার্সিটি তো গিয়েছিলো কিন্তু ফিরে আর আসেনি।
“এখনো ভালোবাসি”
|ইয়াসমিন তানিয়া|
|পর্ব-২৭|

আয়নের রুমের বাহিরে সবাই চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।কারো মুখে কোনও কথা নেই।তবে কিছু কিছু পাবলিকের মুখে বিরাক্ত ভাবটা না চাওয়া সত্যেও ফুটে উঠছে স্পষ্টভাবে।আর এমন মহান ব্যক্তি দুজন হলো,আসমা বেগম আর সারা।তারা পাড়ে না রুমের ভেতরের মানুষটিকে টেনে হিচড়ে বাড়ীর বাহিরে বের করে দিতে।কিন্তু আফসোস কিছু চাওয়া ইচ্ছা থাকলেও পূরন করা সম্ভব হয়না।এই যেমন এখন সারা আর আসমার ইচ্ছার দাম কারো কাছেই নেই।চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আপাততো তাদের কিছু করার নেই।

–“আয়নদের ফ্যামেলি ডাক্তার নাসরিন কবির প্রিয়ুর চেকআপ করছে।”পাশেই আয়ন দাঁড়িয়ে আছে।কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই।শুধু এক দৃষ্টিতে প্রিয়ুর অচেতন মুখটির দিকে তাকিয়ে আছে।নিজেকে অনেকটা অপরাধী মনে হচ্ছে।সবই তো ঠিক ছিলো তাহলে হঠাৎ এমন কেনো হলো।ডাক্তার নাসরিন এর কথায় আয়নের হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পায়।
–“কিছু টেস্ট করা প্রয়োজন পেশেন্ট এর।তাহলে আমরা এক্সাক্ট কারণ জানতে পাড়বো।আপনার ওয়াইফের শরীরটা খুবই ইউক।মনে হয় কিছু দিন যাবৎ খাওয়া দাওয়া তেমন ঠিকমতো করেনা।উনার প্রতি একটু যত্ন নিন মিস্টার আয়ন।কাল সকালে একবার আমার চেম্বারে নিয়ে আসবেন।টেস্টগুলো দ্রুতো করানো দরকার।আপাততো পেশেন্ট এখন ঠিক আছে।উনার ঘুম দরকার,আর একদম স্ট্রেস নিতে মানা করবেন।”

–“আয়ন ডাক্তার নাসরিন এর সাথে কথা বলতে বলতে বাহিরে এসে দেখে সবাই কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে।কিন্তু আপাততো কারো রিয়েকশন দেখার সময় নেই আয়নের।আয়ন ডাক্তারকে বিদায় দিয়েই কেউ কিছু বলার আগেই সবার মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দিলো।আয়নের এমন আচরণে কেউ অবাক না হলেও মিসেস আসমা বেগম অনেকটা বিরক্ত।এই ছেলেকে নিয়ে উনি আর পাড়ছে না।কি আছে এই মেয়ের মাঝে,যে তার এতো বড় ধামড়া ছেলে এই মেয়ে ছাড়া কিছু চোখেই দেখে না।গলার মধ্যে কাটার মতো আটকে আছে এই মেয়ে।আরে চলে গেলে এমন জায়গায় যা,যাতে আয়ন ইচ্ছা করলেও আর খুঁজেও না পায়।কিন্তু না!ম্যাডাম দুদিন পর পর গায়ব হবে,আর ছেলে হারিক্যান নিয়ে খুঁজে বের করবে।এটা বাড়ীতো না,যেনো কোনও এতিম খানা।যার মন চায় আসবে আবার যার মন চায় চলে যাবে।আর আমি হচ্ছি বিশাল দানশীল। মানুষ টাকাপয়সা দান করে,আর আমি আমার ছেলেদের।কি জীবন আমার।দালান ঘরে থেকেও ছ্যাড়া তেনার সুখ কপালে।প্রিয়ুর থেকে বেশি তো আয়নের উপরই রাগ উঠছে এখন বেশি আসমার।পাড়ছে না আয়নকে এখনই দুচারটি কথা শুনিয়ে দিতে।কিন্তু আফসোস এই ইচ্ছাও পূরণ হবে না আজ আর।

“আর সারা এসব দেখে বিরক্তকর মুখ নিয়েই ওখান থেকে প্রস্থান করলো।এই লেটেস্ট নিউজটা নিজের মা মহিনীকে দিতে চলে গেলো।বলে না ঘরের কথা পরে জানে কেমনে।এসব কিছু খাজাখোর নারীদের জন্যই ঘরের খবর শুধু পরে না,শত্রুও জানতে পারে।”

–“আয়ন গিয়ে ঘুমন্ত প্রিয়ুর পাশে গিয়ে বসলো।প্রিয়ুর হাতটি ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।আজ সকালেও তো ভালো ছিলো তাহলে এমন হবার কারণ কি আয়ন বুঝতে পাড়ছে না।রবিন ফোন না করলে হয়তো আয়ন জানতোই না,প্রিয়ু যে সেন্সলেস হয়ে পড়েছে।খবরটা শুনেই আয়ন আর এক মুহুর্ত দেরি করেনি।অচেতন প্রিয়ুকে সোজা নিজের বাসায়ই নিয়ে এসেছে।এখন আর অন্য কিছু চিন্তা করার সময় নেই।”
……………………….
প্রিয়ু যেদিন গায়ব হয়েছিলো,সেদিনই আয়ন খুঁজে বের করে ফেলে।প্রিয়ু হয়তো জানতোই না,আয়ন প্রিয়ুর অগোচরে কিছু বডিগার্ড রেখেছিলো সর্বদা প্রিয়ুকে নযর রাখতে।তাই আয়নকে বেশি কষ্ট করতে হয়নি প্রিয়ুকে খুঁজে বের করতে।কিন্তু প্রিয়ুর এভাবে চলে যাওয়ার চেয়ে বেশি রাগ উঠেছিলো প্রিয়ু বর্তমানে যার সাথে আছে তা জেনে।কারণ প্রিয়ু আর কারো না রোহানের বাসায় এখন।আয়ন এটা জানতে পেরেই রাগ যেনো ওর সাত আসমানে উঠে পড়েছে।যে নামটা ও একদমই সহ্য করতে পারে না,প্রিয়ু সেই মানুষটির বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে।কিন্তু কেনো?আয়ন হয়তো প্রিয়ুকে সামনে পেলে এখন নিজের রাগ দিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিতো।

–“সেদিন প্রিয়ু কলেজে যাওয়ার পরই একটা ইমেল আসে প্রিয়ুর মোবাইলে।ইমেলটা ওপেন করলেই দেখতে পায় আয়ন কোনও মেয়েকে খুব গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরে আছে।বেশ কয়েকটি ছবি এসেছে,আর প্রতিটি ছবিতে আয়নের সাথে মেয়েটির ঘনিষ্ঠতা অনেক বেশি মনে হচ্ছে।মুহুর্তে প্রিয়ুর চোখ দুটো ছলছল হয়ে পড়লো।আর কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রিয়ুর ফোনটা বেজে উঠে।স্কিনে একটা আননোন নাম্বার ভাসছে।কিছুক্ষণ চিন্তা করে প্রিয়ু কলটা রিসিভ করলো।ফোনের ওপর পাশ থেকে একটা কর্কশ কন্ঠ ভেসে আসলো প্রিয়ুর কানে।
“হ্যালো মিসেস আহমেদ।আমি জানি আপনি হয়তো এখন কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।কিন্তু কি করবো বলুন কিছু কথা না বলে থাকতেও পাড়ছিলাম না।আপনি হয়তো ভাবছেন আমি কে?আমি যেই হই না কেনো, আপাততো আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী এখন।ছবি গুলো দেখে হয়তো বিশ্বাস হচ্ছে না,আয়নের মতো মানুষ এমন করতে পারে।কিন্তু জানেন নিই তো মানুষ মাত্রই ভুল।আপনার আয়নও তো সাধারণ একজন মানুষ।আপনি চলে যাওয়ার পর হয়তো সুখ খুঁজার চেষ্টা করেছে অন্য কারো কাছে।তাই হয়তো ব্যাচারার পা পিছলে গেছে।এখন আপনার ইচ্ছা আপনি কি করবেন।”
–“এতোক্ষণ চুপচাপ অপর পাশের ব্যক্তির কথাগুলো শুনছিলো প্রিয়ু।নিরবতা কাটিয়ে নিজের ভাব ভঙ্গি পরিবর্তন না করেই প্রিয়ু প্রশ্ন করলো,ছবি গুলো আসল তার সত্যতা কি?”
–“অপরপাশের ব্যক্তি হয়তো এমনি কোনও প্রশ্নের আশা করছিলো।সত্যতা কি তা তো আপনিই ভালো জানেন মিসেস মাহবুভ।আপনার সাথে যা করেছে তা কি সত্যি ভালো করেছে।মিস্টার আয়ন দাবি করে আপনাকে ভালোবাসার অথচ নিজের ভালোবাসার মানুষটিকে শুধু মাত্র বিছানায় পেতে কতো অভিনয় করেছে।”
–“বিছানার কথাটা শুনেই প্রিয়ুর রাগ উঠে গেলো।তাই কিছুটা উচ্চ সুরেই বললো, মানে!মানে কি?দেখুন মিস্টার ওয়াট এবার,যা বলবেন সোজাজাপ্টা কথা বলবেন,আমার ট্যাড়া কথা একদম পছন্দ না।আর কি বোঝাতে চাইছেন আপনি।”
–“আরে ম্যাডাম রাগ করছেন কেনো।আমি তো ভুল কিছুই বলিনি।আপনার হয়তো আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না,তাই আমি একটা অডিও ক্লিপ পাঠাচ্ছি,যা চেক করে ডিসাইড করবেন আপনার আয়ন কতোটা ভালো মানুষ।”
–“ওকে,তা বুঝলাম সবই।এবার প্রিয়ু নিজের সুরটা কিছুটা নরম করে জিঙ্গেস করলো,কিন্তু এটা তো বলুন হঠাৎ আমার উপর এতো দরদ দেখানোর কারণ।আমিতো আপনাকে চিনিও না।অন্য কোনও কারণ নেই তো আবার।”
–“হা হা,ভেরি স্মার্ট গার্ল।যতোটা বোকা ভেবেছিলাম ওতোটা বোকা নন আপনি।যাই হোক সময় হলে যেনে যাবেন।এখন রাখি।আশা করি আমার অডিও ক্লিপটি শুনার পর আপনার সব ভুল ভেঙ্গে যাবে।”

ভার্সিটির পুকুরপাড়ের কৃষ্ণচূড়া গাছটির ঠিক নিচে সিমেন্ট বালি দিয়ে তৈরি চেয়ারে প্রিয়ু বসে আছে।গাছ থেকে ফুল না ঝড়লেও পাতাগুলো নিচে পড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।ঠিক যেনো প্রিয়ুর জীবনের মতো।যতোই নিজেকে গুছাতে চায় ততোই যেনো এলোমেলো হয়ে যায়।ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে ভাবছে প্রিয়ু,দুবছর আগের কথা।এমনই কিছু ছবি আর ভিডিও ক্লিপ ব্যবহার করা হয়েছিলো প্রিয়ুর জীবনকে নরক বানাতে।তখন আয়ন নিজের জেদ আর রাগে এতোটাই অন্ধছিলো যে দিকবেদিক,সত্যমিথ্যা কিছু যাচাই না করেই প্রিয়ুর গায়ে আঙ্গুল তুলেছিলো।প্রিয়ুকে চরিত্রহীনতার ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছিলো মুহুর্তে।আর প্রিয়ুকে হারাতে হয়েছিলো নিজের সম্মান আর সাথে নিজের বাবাকেও।
–“আচ্ছা এসব আবার কারো প্লান নাতো।হয়তো কেউ চায় আমি আয়ন থেকে যেনো দূরে সরে যাই।ঠিক এমনই তো ট্রিক এপ্লাই করেছিলো দুবছর আগে আমার সাথে।যাতে আয়ন ভুলবুঝে আমাকে।আর তাই তো হয়েছিলো।কেউ হয়তো চায় আমি আয়নকে ভুলবুঝে সরে যাই।হুম!এমনই হয়তো।বিশ্বাস করিনা আমি এসব। যে মানুষ তার সারা জীবন আমাকে ভালোবেসে গেছে সে এমন কিছুতেই করতে পারেনা।আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”
প্রিয়ুর ভাবনার ছেদ ঘটলো,ফোনের নোটিফিকেশনের শব্দে।প্রিয়ু দেখলো একটা অডিও ক্লিপ এসেছে।প্রিয়ু প্রথমে শুনবে না ভেবেছিলো।কিন্তু ওর মনের খুত ওকে বাধ্য করলো শুনতে।

“অডিওটি ছিলো আয়ন আর দিনেশের মাঝের কথকপতন।আয়ন অফিসে যেদিন দিনেশকে বলছিলো,কিভাবে ও প্রিয়ুকে ট্রাপে ফেলে বাধ্য করেছিলো ওর কাছে আসতে।আরভিনের মিথ্যা অপরেশন,প্রিয়ুকে ব্লাকম্যাল সবই কেউ চালাকির সাথে রেকর্ড করে ফেলে।আর ওটাই আজ প্রিয়ুকে সেন্ড করা হয়।”

–“বুকের ভেতরের এক অসহ্য যন্ত্রণা অনুভোব করছে প্রিয়ু।মনটা ভেঙ্গে হয়তো কয়েকশ ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে।মনটা তো বুকের ভেতরেই থাকে তাই মনের কষ্ট বুকে গিয়েই আগে লাগে ঠিক যেনো বুকের হাড় চিরে যাওয়ার মতো।প্রিয়ুরও তেমন লাগছে।কিভাবে পাড়লো আয়ন ওর সাথে এমন জগন্য একটা কাজ করতে।একবারও কি ওর বিবেকে বাধা দেয়নি।সত্যই কি শরীরের লোভটা ছিলো সেদিন বেশি।প্রিয়ু যেনো দিশেহারা হয়ে গেলো।সাজানো ঘরটা হঠাৎ আসা ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলো।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে,কিন্তু ভার্সিটিতে নিজের তামাশা বানাতে চায়না প্রিয়ু।তাই চুপচাপ সামনের গেট ফেলে প্রিয়ু আস্তে করে হেটে ভার্সিটির পিছনের গেট দিয়ে বের হয়ে গেলো।কারণ সামনের গেটে প্রিয়ুর জন্য আয়নের রাখা একজন গার্ড আর ড্রাইভার দাঁড়িয়ে আছে।”
………………………………………
দিনেশ নিজের কেবিনে বসে কিছু ফাইল চেক করছিলো।আর তখনই তিতির কেবিনের দরজা নক করে ভেতরে আসে।হাতে তার এই মাসের সকল এম্পপ্লোয়িদের বেতনের হিসাবের ফাইল।তিতির দিনেশের দিকে ফাইলটা এগিয়ে দিলেই,দিনেশের চোখ পড়ে তিতির উপর।এতোক্ষণ ও খেয়ালই করেনি কে এসেছে কেবিনে।
–দিনেশকে নিজের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে,তিতির দিনেশের উদ্দেশ্যে বললো,”স্যার ফাইল নিচে,আমার মুখে লাগানো না।তাই নিচে তাকান।”

–“দিনেশও একটু দুষ্টমি ভাঙ্গিতে উত্তর দিলো,কোন নিচে তাকাবো বক্ষের নিচে নাকি নাভির।দিনেশের ঠোঁটের কোনে লেগে আছে এখনো দুষ্ট হাসি।”

তিতির এর গা জ্বলছে দিনেশের ডাবলমিনিংস কথা শুনে।খুব ভালো করেই বুঝতে পাড়ছে দিনেশের মতলোব।কিন্তু রাগলে চলবে না ওকে,তাই নিজের রাগকে সংযোত করে,দাঁতেদাঁত চেপে বললো,নিচে মানে টেবিলের উপর দেখুন।আর রাস্তার ছেলেদের মতো কথা বলা বন্ধ করুন।এটা আপনার স্বভাবে যায়না

–“তিতির যে দিনেশকে কিছুটা অপমান করার চেষ্টা করছে তা বুঝেও দিনেশ চুপ থাকলো।কারণ আজ তিতিরকে একটু অন্যরকম লাগছে দিনেশের।কেনো বুঝতে পাড়ছে না।তিতির শাড়ী পড়ে এসেছে।কিন্তু কেনো?কোনও বিশেষ দিন ছাড়াতো এই মেয়েকে শাড়ীতে দেখাই যায় না।তাহলে আজ কি এমন বিশেষ।দিনেশ কিছু মুহুর্তে সব ভুলে,তিতির শাড়ী পড়ার কারণ খুঁজতে লাগলো।মনে হয় এটা এখন সব থেকে বেশি ইম্পোর্টেন কাজ দিনেশের জন্য।কিছু খুঁজে পাচ্ছে না বলে,এখন টেনশন হচ্ছে দিনেশের।
দিনেশ নিজের প্রতি নিজেই একটু বিরক্তবোধ করছে।এতো বড় বিজনেস এ্যাম্পেয়ার চালাতে পারিস অথচ একটা মেয়ের শাড়ী পড়ার রহস্য খুঁজে বের করতে পারিস না।অপদার্থ কোথাকার।নিজেকে নিজেই গালি দিচ্ছে।”
–“স্যারএএএ….।”
কি হলো,চিল্লাচ্ছো কেনো।আমাকে কি কালা মনে হচ্ছে।
–“না, একদম না স্যার।আপনি কালা হবেন কেনো।আপনি তো বয়ড়া। আই থিংক আপনার ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন।”
“দিনেশ কিঞ্চিত অবাক হলো,তিতির কথা শুনে।যার মুখে দুচারটে কথা ছাড়া তেমন কোনও কথাই মুখ দিয়ে বের করা যেতো না।সেই মেয়ে দেখি তেজ দেখাচ্ছে তাও আবার দিনেশের সাথে।ব্যাপারটা দিনেশের খুব ভালো লাগলো।তাই চেয়ারে কিছুটা হেলান দিয়ে তিতির দিকে আবার মুগ্ধ হয়ে তাকালো।আজ সত্যিই একটু অন্যরকম লাগছে তিতিরকে।দিনেশ যেনো আবার হারিয়ে যাচ্ছে।কেনো জানি এই মেয়েটির সামনে নিজের ইমোশনাল লুকাতে পারেনা।বরং হাতপা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাচ্চাদের মতো কান্না করতে মন চায়।হয়তো এটা দেখে তিতির মনটা একটু গলে যাবে।ওকে কোলে তুলতে না পাড়ুক অন্তত নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলতে তো পাড়বে,তাক লক্ষীটি আর কেঁদো না।আজকের পর থেকে আমি নিজেকে তোমার তরে সপে দিলাম।আমি তোমার হয়ে গেলাম।”
–“দিনেশের আবার এমন কেবলাকান্তের মতো তাকিয়ে থাকা দেখে,শরীর জ্বলছে তিতির।আবার সেদিন রাতের কথা মনে পড়ে গেলো।শয়তান ব্যাট রাত হলে লোরিন লাগবে,আর দিন হলেই আমার দিকে হাবলার মতো তাকিয়ে থাকবে।লুইচ্চার গুষ্টি।তোর পাল্লায় আমি আর পড়বো না।তিতির দিনেশের ধ্যান ভাঙ্গাতে টেবিলের উপর একটা বারি দিলো হাত দিয়ে।
“সাথে সাথে দিনেশ সম্বিৎ ফিরে তিতির দিক থেকে চোখ সরিয়ে ফেলে।”
–“সাইন করে উদ্ধার করুন আমাকে প্লিজ।সারাদিন আমি আপনার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পাড়বো না।”
‘দিনেশ আর না জ্বালিয়ে সাইন করে দিলো,কারণ তিতির মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে এই নারী আজ বাঘের রুপ ধারণ করে আছে।উল্টাপাল্টা কিছু বললেই খবর আছে।

চলবে…।

তারাহুড়ার লিখা।ভুল হলে কমেন্ট এ বলে দিবেন আমি ঠিক করে নিবো।আর আয়ন প্রিয়ু নিয়ে কোনও কনফিউশন হলে,ওয়েট করুন।নেক্সট পর্বে ক্লিয়ার করে দিবো।
চলবে…।
চলবে….।

চলবে….।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here