এক্সিডেন্টলি প্রেম পর্ব ২১

#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-২১♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥

—- নিশান্ত ভাইয়া, কেমন আছো তুমি?

মেয়েটির প্রশ্নে কপালে সুক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠলো নিশান্তের। যাকে নিয়ে শতশত এলোমেলো অগোছালো ভাবনার মেলা জমিয়ে নিজের হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত করেছিলো ক্রমাগত, এখন তাকে দেখে অদ্ভুৎ হলেও কোনো অনুভূতি কাজ করছে না তার। যেখানে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ঝাপটে গলা মেলাবার কথা ছিলো যেখানে দু-হাত দূরত্ব বজায় রেখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে সে। নিশান্তকে এভাবে চুপচাপ একজায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো রিভান। বাহুতে হাল্কা ধাক্কা মেরে ফিসফিসিয়ে বললো,

—- দোস্ত! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস? এতোদিন তো দিব্যি আয়ু আয়ু করে মাথার খুলি খেয়ে ফেলছিলি এখন আবার থম মেরে গেলি কেন? যা…! কথা বল!

রিভানের কথায় ঠোঁটে ঠোঁট চেপে অচেতন মনে তাকালো নিশান্ত। তার চাহনির অর্থ সেভাবে বুঝা হয়ে উঠলো না রিভানের। পাশ থেকে রবিউল হোসেন প্রাপ্তির হাসি হাসলেন। পরিস্থিতির সামাল দিতে মেয়েটিকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,

—- মি. নিশান্ত হয়তো এখনোও বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে উনার হারিয়ে যাওয়া সেই ছোট্টবেলার বন্ধুটাকে অবশেষে তিনি ফিরে পেলেন। তুমি চিন্তা করো না। নিজেদের মধ্যে একটু সময় নাও, কথা বলো। আমরা পাশের ঘরেই আছি।

বলেই আবারও দাঁত বের করে হাসলেন রবিউল হোসেন। রিভানকে চোখের ইশারায় বাহিরে যেতে বললেন কৌশলে। রিভানকে উদ্দেশ্য করে বোকা হেসে বললেন,

—- আপনি নিশ্চয় উনার বন্ধু! আসুন আপনাকে আমাদের ছাদটা ঘুরিয়ে দেখাই। ছাদেই বাগান করেছি আমরা। শাক-সবজি, ফুল-ফলের গাছও রয়েছে বেশ।

রিভান সম্মতি সূচক মাথা নাড়ালো। নিশান্তের কাঁধে হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেড়িয়ে গেলো নিঃশব্দে। নিশান্ত এখনও নির্বিকার! মনে মনে কোনো এক জটিল অঙ্কের সমাধান করতেই যেনো ব্যস্ত তার মন। যা দেখে সামান্য আশাহত হলো মেয়েটি। গুটিগুটি পায়ে জড়সড় শরীরটি চালিয়ে দু ধাপ এগিয়ে এলো সে। সামান্য আওয়াজ করে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,

—- কিছু বলছো না কেনো? আমার ওপর কি খুব বেশি রেগে আছো তুমি?

নিশান্ত চমকে ফিরে তাকালো। এতোক্ষণ ভাবনায় মগ্ন থাকায় মেয়েটির আগমন চোখেই পড়েনি তার। যার দরুণ জোড় পূর্বক হেসে আবারও চিন্তায় মগ্ন হলো সে। মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে ক্ষীণ গলায় জিজ্ঞেস করলো,

—- আংকেল-আন্টি সবাই ভালো আছে? বাবা ফিরেছে কি বিদেশ থেকে?

মেয়েটি না বোধক মাথা নাড়িয়ে মলিনতা ভরা হাসি হাসলো। সামনে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে হতাশাগ্রস্ত ভাব নিয়ে বললো,

—- বাবা এখনোও বিদেশেই। আমি আর মা থাকি এখানে বাসায়!

প্রতিউত্তরে নিশান্তের চোখের দৃষ্টি খানিকটা তীক্ষ্ণতর আকার ধারণ করলো। কিছুক্ষণ অস্বস্তিতে দোমনা ভাব নিয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বললো,

—- তা তোমার সব কিছু মনে আছে দেখছি! হুট করে কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলে তুমি?

—- আসলে সবটা মনে নেই তবে আবছা আবছা মনে আছে। তোমার সাথে তো বেশি মিশতাম তাই তোমায় ভুলিনি! আর হুট করে উধাও হয় নি আমরা। তোমরা যেদিন চট্টগ্রাম নিজের খালার বাসায় গিয়েছিলে সেদিনই মাম্মা এসে নানুবাড়ি থেকে রংপুর নিয়ে আসেন আমায়৷ আম্মুর জব কনফার্ম হয়েছিলো সেখানে। আমি অনেক কান্নাকাটি করেছিলাম অবশ্য তবু লাভ হয় নি। নানু বলেছিলো অনেকবার এসব চাকরি করে খেতে হবে না৷ তবু মাম্মা শুনে নি কারো কথা। বিয়ের পরও বাপের বাড়িতে থেকে খেতে চায়নি কখনোই।

—- কেনো? বাবা ভরনপোষণের দায়িত্ব নিতো না?

বিনিময়ে মাথা ডানে-বামে নাড়িয়ে অসম্মতি জানালো মেয়েটি। নিশান্ত দুহাত ভাঁজ করে দাঁড়ালো। বাম সাইডের ভ্রু চুলকে বললো,

—- তা রংপুর থেকে আবারও নওগাঁ এলে কেনো?

মেয়েটি করুন চোখে তাকালো নিশান্তের পানে। জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে চেয়ারে বসতে বসতে বলতে শুরু করলো,

—- মাম্মার তো বয়স হয়েছে। তাছাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে এতোদূর কোনো আত্মীয়-স্বজন ছাড়া মেয়ে নিয়ে থাকাও তো মুশকিল। তাই দাদিমা আম্মুকে ট্রান্সফার নিয়ে এখানে আসতে বলেন। এইতো দু বছরে হলো নওগাঁতেই বসবাস। তবু দাদিমার বাড়িতে কিন্তু থাকি না আমরা। এই এলাকাতেই ভাড়া বাড়ি নিয়ে আছি আমরা দুই মা-মেয়ে।

—- ওহ আচ্ছা বুঝলাম। তা তোমার তো দেখি প্রায় সবই মনে আছে, দেন বড় হয়ে আমায় খোঁজার চেষ্টা করো নি কেনো? নাকি পুরোনো কথাগুলো আর বর্তমানে টেনে আনতে চাওনি, মুছে ফেলতে চেয়েছিলে সব?

—– তোমায় খুঁজি নি বলছো? খুঁজেছি তো। ছোটতে তো আর মাম্মা একা ছাড়তো না তাই খুঁজার সুযোগ হয় নি। তবে আমার বিশ্বাস ছিলো, একদিন না একদিন ঠিকই তোমার পাবো। ধীরে ধীরে বড় হলাম। স্কুলের গন্ডি পেড়িয়ে কলেজে উঠলাম। তারপর কলেজ শেষে ভর্তি হলাম এখানকার ডিগ্রি কলেজে। বাসায় মা একা থাকায় বাহিরে বেরোনোর সুযোগ পেয়েছিলাম খুব নগন্য পরিমাণেই। একবার ফ্রেন্ডস সার্কেল থেকে ট্রিপের বাহানায় গিয়েছিলাম শাহজীবাজার! কিন্তু কপালে ছিলো না হয়তো তোমায় খুঁজে পাওয়া। তাইতো তোমাদের পুরোনো বাসায় লোহার তালা ঝুলতে দেখে নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছিলো আমায়। এরপর আশেপাশে খোঁজ করেছি অবশ্য। তোমার নাম দিয়ে আইডি সার্চ করেছি অহঃরহ৷ কিন্তু যাকে খুঁজেছি তাকে তো আর পাইনি।

এক নিঃশ্বাসে এটুকু বলেই থামলো মেয়েটি। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে পুনরায় দম নিয়ে বললো,

—- আর কোনো প্রশ্ন?

মেয়েটির কথার ডান সাইডের ভ্রু উঁচু করলো নিশান্ত। সামান্য ঝুঁকে মুচকি হেসে বললো,

—- কেনো? সব প্রশ্নের জবাব আগে থেকেই দিয়ে দেবে ভেবে বসেছিলে বুঝি?

নিশান্তের প্রশ্নে সামান্যতম ভয়ের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠলো মেয়েটির মুখে। ঠোঁটে জোড় পূর্বক হাসির রেশ ফুটিয়ে জবাব স্বরূপ বললো,

—- ন..না! আসলে এতোগুলো বছর পর দেখা! কতশত প্রশ্ন মনের মধ্যে বাসা বেঁধে ছিলো তাই আরকি আগেভাগেই সব ক্লিয়ার হয়ে নেওয়াটা উচিত ভেবেই বললাম আরকি!

নিশান্ত ঠোঁটে ঝুলিয়ে রাখা হাসির রেখা প্রসারিত করলো। নিজের ব্রাউন সিল্কি চুলগুলোতে হাত চালিয়ে বললো,

—- তা এখন পর্যন্ত তো একটা প্রশ্নও করলে না আমায়! এতো বছর পর দেখা। কোথায় আছি কিভাবে আছি, কোনো কিছুই তো জানার আগ্রহ দেখলাম না।

নিশান্তের প্রশ্নে ভড়কে গেলো মেয়েটি। এদিক-ওদিক তাকিয়ে আমতা-আমতা করে বললো,

—- না না তা হবে কেনো? তোমার ঠিকানা, ফ্যামিলি স্টাটাস, ব্যাংক ব্যালেন্স সবই তো ওই আংকেলের থেকে জেনে নিয়েছি। নতুন করে আর কি জানবো বলো?

নিশান্ত তার হাবভাব দেখে চাপা স্বরেই হেসে ফেললো এবার। নিশান্তকে হাসতে দেখে ভয়টা যেনো তীব্রতর হলো মেয়েটির। তার ভয়ার্ত মুখশ্রী দেখে হাসি থামিয়ে সোজা হয়ে বসলো নিশান্ত। গম্ভীর গলায় বললো,

—- তোমার গলায় লকেটটা আজো আছে দেখছি, পুরোনো হয়ে গিয়েছে বেশ। আমায় দাও, আমি নতুন লকেট বানিয়ে এনেছি। ওটা এখন থেকে পড়বে কেমন?

ততৎক্ষণাৎ খুশিতে চোখ চিকচিক করে উঠলো মেয়েটির। ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে হাত উল্টো দিকে নিয়ে গিয়ে লকেটটা খুলে নিশান্তের দিকে এগিয়ে দিলো নির্দ্বিধায়। নিশান্ত মুচকি হেসে লকেটটা হাতে নিলো। লকেটের চেইনের একপ্রান্ত দু আঙুলের ভাঁজে আগলে চোখের সামনে ধরলো। চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লকেটটা দেখে নিতেই ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো তার।

—- নাও আমার যা দেখার দেখে নিয়েছি। লকেটটা তো এখনোও সদ্য কেনার মতোই লাগছে তাই নতুন করে লকেট নেওয়ার কোনো প্রয়োজন দেখছি না তোমার!

মেয়েটা মুখা কালো করে লকেটটা ফিরিয়ে নিলো। তার শুকনো মুখ দেখে নিশান্ত অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে বলে উঠলো,

—- ট্রেনিং যদিও ভালো ছিলো তবে ল্যাগসও ছিলো ভীষণ। এরপরের বার থেকে এক্টিং এর রোল প্লে করলে স্টার জলসা দেখে কিছু শিখে রেখো। কাজে দেবে!

নিশান্তের কথায় চমকে দাঁড়িয়ে পড়লো মেয়েটি। কাঁপাকাঁপা গলায় “মা..মানে..!” বলতেই বাঁকা হেসে বড়বড় পায়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলো নিশান্ত। তার এরকম বিহেভিয়ার চিন্তায় ফেললো মেয়েটিকে। একরাশ ভয় নিয়ে ছুট লাগালো নিশান্তের পিছুপিছু সেও।

_______________________

বিরক্তিতে জড়োসড়ো হয়ে সেকেন্ডে সেকেন্ডে ঘড়ি দেখছে রিভান। রবিউল হোসেনের “ছাদবাগান” আর ফলমূলের বিবরণ শুনতে শুনতে রীতিমতো পেকে উঠেছে তার কান। রিভানের ইচ্ছে হচ্চে এই মুহুর্তে ফুলের টব উঠিয়ে সোজা লোকটার টাক মাথায় বারি মেরে ফাটিয়ে ফেলতে। দেখতে বোকাসোকা হলেও চরম রকনের ধূর্ত ও বাচাল স্বভাবের এই রবিউল হোসেন। কেনো যেনো স্বাভাবিক মনে তাকে মানতে চাইলেও মনের কোথাও খট খট শব্দ করে খটজা লাগছে রিভানের। মোটকথায় লোকটিকে “অতিভক্তি চোরের লক্ষণ” টাইপ বলেই মনে হচ্ছে তার।

কাকফাঁটা রোদে দাঁড়িয়ে ঘড়ির ওপর ডান হাতের ছায়া ফেলে আবারও সময় দেখতে নিতেই ছাদের দরজায় ঝনঝন শব্দের আলোড়ন সৃষ্টি হলো হঠাৎ। রবিউন হোসেন ও রিভান দুজনেই চমকে উঠলো। নিজের অবস্থান থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে উল্টো দিকে তাকাতেই ঝড়ের বেগে রিভানকে পাশ কাটিয়ে সোজা রবিউল হোসেনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো নিশান্ত। ঠাডিয়ে দু-তিনটে চর বসালেও হয়তো মন শান্ত হবার নয় তার। তবু নির্বিকার সে। মায়ের দেওয়া শিক্ষার অবমাননা করে কোনো মুরব্বির গায়ে হাত তোলায় সায় দিলো না বিবেক।
যার দরুন দাঁতে দাঁত চেপেই নিজের রাগিটা দমিয়ে নিলো নিশান্ত। তার পিছুপিছু দৌড়াতে দৌড়াতে স্পটে এসে পৌঁছালো মেয়েটিও। রিভান অবুঝ নয়নে সবার কার্যকলাপ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কিউরিওসিটি ধরে রাখতে না পারলেও নিজের অবাধ্য মনকে কোনোরকমে বুঝ দিয়ে চুপ করে রইলো সে।

—- এ…একি? তোমাদের এতো তাড়াতাড়ি কথা বলা হলো? কি সিদ্ধান্ত নিলে অবশেষে?

রবিউল হোসেনের কথায় নিশান্ত তাচ্ছিল্যে ভরা হাসি উপহার দিলো নিশান্ত। মানিব্যাগ বের করে তার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,

—– সরি আংকেল। এই মুহুর্তে আমার কাছে এই ১১ হাজারের মতোই টাকা আছে। আপনি যদি আমায় আগে থেকে বলতেন তবে আরোও কয়েক হাজার টাকা সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারতাম আমি। আম এক্সট্রিমলি সরি ফর দ্যট!

রবিউল হোসেন অবাক চোখে তাকালেন। আমতা-আমতা করে বললো,

—- আরে এসব কি করছেন মি. নিশান্ত? আপনার মানিব্যাগ আমায় দিচ্ছেন কেনো? আমি কখন আপনার কাছে টাকা চেয়েছি?

—- আহা! আমি আপনার ছেলের বয়সী আংকেল। এসব মিস্টার ফিস্টার রাখুন তো। ভালোয় ভালোয় বলছি টাকাগুলো নিন, হাতটান এলে এতো সম্মানের ভয় যে করা চলে না তা বুঝি আমি।

এতোক্ষণ চুপচাপ গালে হাত দিয়ে সবটা দেখলেও এবার আর কিউরিওসিটি ধরে রাখতে পারলো না রিভান। ঠোঁট উল্টে কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে প্রশ্ন ছুড়লো,

—- ওয় তুই টাকা দিতাছিস কেন? তোর এই টাকা বাঁচানোর জন্য প্রাণ বাজি রাইখা আমরা দৌড়ে মান-সম্মান খায়া ফেললাম আর তুই এতুলা টাকা উনারে দিচ্ছোস কোন আক্কেলে?

নিশান্ত ঘাড় ঘুরিয়ে হাসলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে আবারও রবিউল হোসেনের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

—– আহা রিভান, তুই এসব বুঝবিনা। তুই তো ফিল্মের সাইড চরিত্র। হিরো আর ডিরেক্টরের মাঝের ব্যাপার-স্যাপারে নিজের লম্বা নাকটা না ঢুকিয়ে চুপচাপ যা হচ্ছে দেখে যা।

রিভান আবারও ঠোঁট উল্টালো অগত্যাই। রবিউল হোসেন ভয়ে কুঁকড়ে শুকনো ঢোক গিলতে লাগলেন। কপালের ঘাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে কাঁপাকাঁপা গলায় বললেন,

—– দেখুন আপনার কোনো কথাই বুঝতে পারছি না আমি, কিসের ফিল্ম আর কিসের ডিরেক্টর?

—- আজ্ঞে ফিল্মটা হলো বাস্তব জীবনের সাথে জড়িত, আর তার ডিরেক্টর হলেন আপনি! কিন্তু এখনোও কিছু ভুল ত্রুটি আছে বৈ কি! যা দরুন পড়াশুনার বাহিরে কুটনীতিতে কাঁচা মেমোরির এই আমিও ধরে ফেললাম আপনাদের। দেখুন আংকেল আপনার সংসারে টানাপোড়া চলছে সেকথা আমায় আগেই বললে কিন্তু পারতেন। সসম্মানে ত্রাণ দিতে পারতাম, এভাবে ফিল্ম বানানোর দরকার ছিলো না মোটেই। আপাতত এই টাকাগুলো রাখুন, আর আপনাকে বরং আমি একটা ভালো বুদ্ধি দেই বুঝলেন। এইযে এই মেয়েটি, যাকে আয়ানা সাজিয়ে আমার সামনে রিপ্রেজেন্ট করিয়েছেন তার এক্টিং কিন্তু বেশ ভালোই। চাইলে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। কিংবা আপনিই ডিরেক্টর হয়ে একটা ফিল্ম বানিয়ে ফেলতে পারেন। তাতে টাকাও ইনকাম হবে আবার আপনার সুনামও ছড়াবে! তা হলো না এক ঢিলে দুই পাখি?

জারিজুরি ধরা পড়ায় চরমভাবে ভড়কে গেলেন রবিউল হোসেন। ভয়ে আঁতকে উঠে এক কোণে সড়ে দাঁড়ালো মেয়েটিও। রিভান অবাক চোখে তাকালো দুজনের দিকেই। কপালে ঠাস করে হাত চেপে ধরে বললো,

—- যা শালা, যার জন্য এতো কষ্ট করে বাসায় ম্যানেজ করে মাঝ রাত্তিরে চোরের মতো বেড়িয়ে ডাকাতের ধাওয়া খেয়ে লেংটুপুটু সাজলাম, সেই মাইয়া অবশেষে ভুয়া! হোয়াট আ কালা কাউয়া!

রিভানের কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিশান্ত। মানিব্যাগটা রবিউল হোসেনের হাতে রেখে দু ধাপ সরে দাঁড়ালো। উল্টো দিকে ফিরে শার্টের পকেট থেকে নিজের চিকন ফ্রেমের চশমাটা চোখে লাগাতে লাগাতে বললো,

—– আশা করি নেক্সট টাইমের আর এরকম ভুল কারো সাথে করবেন না। ইন্টারনেটে হেল্প চাওয়াটা অপরাধ হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। তাও প্লিজ, কারো ইমোশন নিয়ে খেলবেন না। আমরা আহাম্মদ রাজা-বাদশা নই যে যাকে তাকে গলায় ঝুলিয়ে ফেলে পুরো লাইফ-টাইমের জন্য ইনকাম সোর্স খুলে ফেলতে পারবেন! আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আল্লাহ না আপনাদের মাফ করুক। আল্লাহ হাফেজ!

বলেই বড়বড় পায়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো নিশান্ত। রিভান রক্তলাল চোখে তাকালো মেয়েটা ও রবিউল হোসেনের চুপসে যাওয়া মুখের দিকে।

—- কেমন হারামি, এতো জঘন্য কাজ করে ধরা খাওয়ার পরও আবার ওয়ালেট ধরেই আছে! দে শালা, গাড়ির তেল তুলার টাকা পর্যন্ত নাই। তারওপর পেটের মধ্যে ইঁদুর বিলাই দুডাই দৌড়ায়! বাস্টার্ড!

বলেই টান মেরে রবিউল হোসেনের হাত থেকে নিশান্তের রেখে যাওয়া ওয়ালেটটা কেড়ে নিলো রিভান
যেতে যেতে মেয়েটির দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে জিহ্ব ভাঙিয়ে আবারও ছুটির লাগালো নিশান্তের পিছুপিছু।

_______________________

গাড়ির ভেতরে বসে আশেপাশে চলাচল করা মেয়েদের হাত দিয়ে “হায়” বলতে বলতে ক্লান্ত হচ্ছিলো সানি। এমন সময় নিশান্ত-রিভানকে ফ্লাট থেকে নেমে গাড়ির দিকে এগোতে দেখে হাফ ছেড়ে বাঁচলো সে৷ নিশান্ত ঝড়ের বেগে গাড়ির দরজা খুললো। ভেতরে বসে শব্দ করে দরজাটা লাগাতে নিবে তক্ষুনি থেমে গেলো তার হাত। তার স্থির দৃষ্টিতে ফুটে উঠলো অন্বিতার ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখ! সাথেসাথেই হৃদয় জুড়ে বয়ে গেলো এক অজানা শীতল স্রোত, এতোক্ষণ ধরে উত্তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলা বুকটা নিমিষেই শান্ত হয়ে এলো তার। মুখে স্নিগ্ধতা ভরা হাসি ফুটে উঠলো অজান্তেই। নিশান্ত নিঃশব্দে গাড়ির দরজা লাগালো। রিভান চটজলদি গাড়িতে উঠতে দিতেই হাতের ইশারায় শব্দ করতে নিষেধ করলো সে। রিভান সম্মতি সূচক মাথা ঝাঁকিয়ে আস্তে করে সানির পাশে বসে পড়লো। সানি অবাক কন্ঠে বলে উঠলো,

—- যাক বাবা, মাইয়াডার সাথে কথাবার্তা, দিল লেনাদেনা, ফোন নম্বর, ঠিকানা সব নেওয়া হয়ে গেলো এতো জলদি?

রিভান ঠাস করে সানির মাথায় চাটি বসিয়ে দিলো। নিশান্ত ক্ষীণ কন্ঠে বললো,

—– এখন এই টপিকে কোনো কথা নয়, বাড়ি যেয়ে যা যা প্রশ্ন আছে একে একে করবি। অন্বিতা ঘুমোচ্ছে, ওক্ব ঘুমোতে দে। পারলে তোরাও ঘুমো। সারারাত তো জেগে ছিলি!

সানি-রিভান ঠোঁটে আঙুল চেপে মাথা ঝাঁকালো। নিশান্ত ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ঘোরাতেই অন্বিতা সিটে হেলান দেওয়া থেকে সড়ে এসে তার কাঁধে মাথা রেখে আবারও ঘুমন্ত শ্বাস ত্যাগ করলো। যা দেখে চমকে উঠলেও নড়লো না নিশান্ত। সানি-রিভান একে-অপরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। তাদের ফুটবলের সমান চোখ জোড়া দেখে ইশারায় চেঁচিয়ে উঠার আগেই চুপ থাকতে বললো নিশান্ত। বাচ্চাদের মতো ঘুমে কাতর অন্বিতাকে নিজের কাঁধে আগলে রেখেই রওনা দিলো সে নওগাঁ টু নিজেদের বাসস্থান ঢাকা!
.
.
.
চলবে……………….💕

(মন্তব্য না করে চুপিচুপি গল্প পড়ে পালালে কিন্তু রাতের বেলা ভূতে কামড় দিবে, অভিশাপ দিলাম! 😒)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here