এক্সিডেন্টলি প্রেম পর্ব ২২

#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-২২♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥

মাথার ওপর কাকফাঁটা রোদ ছড়িয়ে একনাগাড়ে উত্তাপ বিতরণ করে চলেছে হলুদরঙা সূয্যিমামাটা। এই ব্যস্ত নগরীতে সেই তীব্র উত্তাপ গায়ে মেখেই পথচারীদের চলাচলে মত্ত হয়ে রয়েছে সড়ক। দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত শহর জীবনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ এইসব পরিশ্রমী মানুষেরাই। যারা প্রতিনিয়ত নিজেদের পরিবারের খাতিরে নিজেদের সুখ-শান্তি বিলিয়ে করে চলেছে উপার্জন। এই তীব্র গরমে ঘেমে একাকার হয়ে চলেছে প্রত্যেকের দেহ। তবে ব্যতিক্রম শুধুমাত্র এই চারজন মানবের কর্মকান্ড। তারা ঘামছে শুধু গরমের দরুনই নয়। তাদের ঘর্মাক্তকলেবর মূখ্য ভিত্তি হলো “টেনশন!”

আজ সকাল ৮ টা নাগাদই নওগাঁ থেকে সোজা রওনা দিয়ে কোনো স্পটে ব্রেক না নিয়েই অন্বিতারা অবশেষে ফিরেছে চকবাজার। পুরো সাড়ে চার ঘন্টা জার্নির পর সকলের শরীর ক্লান্ত হলেও বর্তমানে ক্লান্তির চেয়ে দুশ্চিন্তাই তাদের মাথায় পতঙ্গের ন্যায় কামড়ে চলেছে ক্রমাগত। গাড়িতে থাকাকালীন ২ ঘন্টার মাথায় অন্বিতার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল আচমকাই। সেই থেকেই হাজারো রকমারি প্রশ্নে একাকার হয়ে চলছিল তার অশান্ত হৃদয়! ভেবেছিল নিশান্তদের রহস্যের সমাধান সজাগ থেকেই করবে যে করেই হোক, কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তার। যা দরুন নিজের অসময়ে আগত ঘুমবাবাজির ওপর চরম ক্ষিপ্ত ছিল সে। নিশান্তও ছিল নাছোড়বান্দা! তাকে হাজার কাতুকুতু দিতে দিতে গুঁতো মেরেও কোনো লাভ করতে পারেনি সে। যার দরুণ বর্তমানে তার মুখ কোনো পেঁচার তুলনায় কম কালো হয়ে নেই মোটেই।

সবাই যখন দুশ্চিন্তার অতল গহ্বরে ডুবে হাবুডুবু খেয়ে চলছিলো এমন সময় ঠোঁট উল্টে মুখ কাঁদো করে চাপা আর্তনাদ করে উঠলো সানি,

—– এহ্যা! এহ্যা! আল্লাহ গো…! আমার আর বাসায় ফেরা বুঝি হইলো না গো…..!

সানির “ভ্যাতকান্দুরী” টাইপ কথাবার্তায় বিরক্ত হলো রিভান। পেটে চিমটি কেটে চুপ করতে ইশারা করে বললো,

—– এখন ভ্যা ভ্যা করে কাইন্দা কোনো লাভ নাই। বাসা থেকে যেমন বেরিয়েছি তেমন বাসায় ফিরতেও লাগবে। তা থেকে বেটার এতো দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে বুকটান করে বাসায় ঢুকে পড়ি সবাই। ওকে?

নিশান্ত সরু চোখে তাকালো। যেখানে তার মতো ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষেরই টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে সেখানে রিভান এতোটা গা ছাড়া ভাব নিয়ে আছে ভাবতেই অবাক লাগছে তার। অন্বিতা বেশকিছুক্ষণ যাবৎই গালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছিল। হঠাৎ রিভানের প্রতিউত্তরে হাত উঠিয়ে বললো,

—– এই এই আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে। সবাই এদিকে মনোযোগ দিন।

অন্বিতার কথায় তিনজনই কান খাঁড়া করে ভ্রু কুঁচকে ঝুঁকে দাঁড়ালো। অন্বিতা গলা খাঁকারি দিয়ে বক্তাদের মতো ভাব নিয়ে বলা শুরু করলো,

—– আচ্ছা আমরা তো সবাই এখন বাসায় ম্যানেজ করার মতো বাহানা খুঁজছি, রাইট?

বিনিময়ে তিনজনই একসাথে মাথা ঝাঁকাল তৎক্ষণাৎ। অন্বিতা সটান হয়ে দাঁড়ালো। দু হাত ভাঁজ করে গম্ভীর গলায় বললো,

—– দেন সলিউশন একটাই, আমাদের একে অপরের বলির পাঠা হতে হবে।

অন্বিতার কথায় সমস্বরে গলা মিলিয়ে “মানে?” বলে চেঁচিয়ে উঠলো নিশান্ত, সানি এবং রিভান। তাদের চিৎকারের তীব্রতায় অন্বিতা দু-হাতে কান চেপে ধরে নাক-মুখ কুঁচকালো। বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে বললো,

—– ওমারে আমার কানটা গেলো রে….! আরে আগে পুরো কথাটা তো শুনবেন নাকি? আমায় শেষ করতে দিন। মানেটা অটোম্যাটিকালি বুঝতে পারবেন।

অন্বিতার কথায় তিন বন্ধুই নিজেদের গলার স্বর নিয়ন্ত্রণ রেখে গভীর মনোযোগী হলো। অন্বিতা ফিসফিসিয়ে বলা শুরু করলো,

—- হুম তাহলে যেটা বলছিলাম…আচ্ছা আপনাদের বাড়ির লোকেরা কি সবার ফোন নম্বর জানে? মানে বলতে চাইছি যে সানি ভাইয়ের প্যারেন্টস কি রিভান ভাইয়ের ফোন নম্বর জানেন? কিংবা বাসার নম্বর?

বিনিময়ে মাথা-ডানে বানে নাড়িয়ে দুজনেই বোঝালো যে “জানে না”। নিশান্ত ভ্রু কুঁচকে চিন্তিত গলায় বললো,

—- তা না জানলেও আমরা যে তিন বন্ধু কম বান্দর বেশি এটা তিনজনের পরিবারই খুব ভালোমতো জানে।

অন্বিতার মুখটা খানিকটা চিন্তিত দেখালো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে গালে হাত রেখে ভাবার ভান করে বললো,

—- ফ্যাক্ট সেটা নয়, ফ্যাক্ট হচ্ছে একে অপরের হয়ে কিস্তি দেওয়া৷ এখন খুব মন দিয়ে আমার কথা শুনুন! এইযে সানি ভাই আর রিভান ভাই আপনাদের কারো কাছেই তো বর্তমানে ফোন নেই তাইনা?

বিনিময়ে দুজনেই মুখ কালো করে বাংলার পাঁচ বানিয়ে মাথা ঝাঁকালো। সানি ঠোঁট উল্টে বললো,

—- ফোন টোন, টাকা-পয়সা এমনকি জামা-কাপড় সবই তো ওই কাইল্লা ডাকাইতেরা মাইরালাইচ্ছে ভাবী!

অন্বিতা ভ্রু কুঁচকালো। সানির মুখ থেকে আজ পর্যন্ত ভাবী বাদে আর কোনো সম্মোধন না পাওয়ায় নিজেরও প্রায় অভ্যেসই হয়ে গিয়েছে এই ভাবী ডাক শুনায়। অদ্ভুত হলেও ইদানীং সানিকে দেখলে তার দেবর দেবর ফিলিংসই আসে। তবে কারণটা অজানা! যার দরুন ততোটা পাত্তা দিল না অন্বিতা। সামান্য কেশে নিয়ে আবারও বললো,

—- আচ্ছা সে যাই হোক। কথাটা হচ্ছে….”বাহানার!” আপনারা একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখবেন আমরা কিন্তু কাল বেরিয়েছি ঠিক ২ টার আগে আগে। মানে ততক্ষণে আমরা জেগে থাকলেও বাসার সবাই ঘুমে কাত! রাইট?

তিনজনই সিরিয়াস মুডে হ্যাঁ সূচক মাথা দোলাতেই,

—- হুম, তারমানে আমরা চাইলেই একদম সাজানো গোছানো মিথ্যে বলে ব্যাপারটা সীমিত পরিমাণে ভয়ংকর করে তুলতে পারি। যদিও মিথ্যে বলা আমার ধাঁচে নেই তবু মাঝে মাঝে “মিথ্যে দিয়ে প্রাণে বাঁচা গেলে মিথ্যেই ভালো” টাইপ অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে আমায়। সেরকম এবারও খানিকটা মিথ্যে বলে কেটে পড়তে হবে বৈ কি। আমরা একটা কাজ করবো, ফার্স্টলি সবাইকে বোঝাব যে আমরা রাতে নয় বরং দিনে, তাদের ঘুম থেকে উঠার পূর্বেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। যেহেতু আমি বাড়ি থেকে ফোন নিয়েই আসিনি আর মি. নিশান্তেরও ফোন চার্জের অভাবে মৃতপ্রায়! দ্যট মিনস সবাই অলরেডি আমাদের ফোনে না পেয়ে ভার্সিটি, সমিতি সহ আশেপাশে খোঁজ করা বাদ রাখে নি মোটেই। এই মুহুর্তে খুব বেশি যুক্তি সঙ্গত কারণও কিন্তু বাহানা হিসেবে চালানো যাবে না। নয়তো “অতি চালাকের গলায় দড়ি” টাইপ অবস্থায় পড়তে হবে আমাদের। আমরা বরং উদ্ভট কোনো এক বাহানা জুড়ে দেবো। আচ্ছা আপনাদের মাঝে আপ-কামিং কারো বার্থডে আছে কি?

অন্বিতার কথায় তিন বন্ধু নিজেদের জন্মদিনের ডেইট মনের করার চেষ্টা চালালো। রিভান-সানি দুজনেই জানাল তাদের দুজনের বার্থডেই গত হয়েছে ২ মাস প্রায়। নিশান্ত কপালে সুক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজ ফেলে বললো,

—– এজ অলয়েজ আমার বার্থডে এবারও এক্সামের মধ্যে পড়বে। আই মিন পরের মাসের ১৮ তারিখ! বাট তাতে কি এসে যায়?

অন্বিতা দুহাতে হাল্কা শব্দ করে তালি বাজালো। চোখে মুখে একরাশ আশা নিয়ে বললো,

—– ব্যাস হয়ে গেলো! আপনার বার্থডে এক্সামের সময় না করে টেনেটুনে আজ এনে নিলেই কেল্লাফতে!

অন্বিতার কথার আগামাথা কিছু বুঝলোনা কেউ। রিভান বিস্মিত হয়ে বললো,

—- বার্থডে কি গরু-ছাগল যে টেনেটুনু হাল চাষ করাবে? এটা তো একটা ফিক্সড ডেইট!

—- আহা, আপনারা সবাই চুপ থাকবেন? আমায় শেষ করতে দিন! দেখুন, বার্থডের ডেইট নিয়ে টানাটানি করতে হবে না। জাস্ট বার্থডের শো অফ করতে হবে এটাই ফ্যাক্ট। সানি আর রিভান ভাই আপনারা একে-অপরকে ফাসিয়ে বলবেন “ও আমাকে সক্কাল সক্কাল জোরজবরদস্তি নিশান্তের মাথায় আন্ডা ফুটাতে নিয়ে গিয়েছিল!”

অন্বিতার বলা বাক্য শেষ হতেই নিশান্তরা তিনজনই বিস্ফোরিত চোখে ফুটবলাকার ধারণ করে চেঁচিয়ে “হোয়াট!” বলে উঠল। তাদের চিৎকারে অন্বিতা চোখ খিঁচে বন্ধ করে দুহাতে কান চেপে ধরলো আবারও। বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে চিৎকার জুড়ে দিয়ে বললো,

—– বাপরে…..আমার কানের পর্দাতো গলে গিয়ে স্যুপ হয়ে গেলো রে…..! আহহ! কি শুরু করেছেন আপনারা? নিজেরদের কিউরিয়াস মাইন্ডটাকে একটু ধৈর্য্যশীল মাইন্ডে পরিণত করুন না বাবা প্লিজ! আমায় বলতে দিন….।

এবার নিজেদের এক্সাইটমেন্ট ধরে রাখতে তিনজনেই ঠোঁটে আঙুল চেপে ধরলো। অন্বিতা কান ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক গলায় আবারও বলতে শুরু করলো,

—- এখন আসা যাক আন্ডা ফুটানো টপিক নিয়ে। আপনারা এই জেনারেশনে মানুষ হয়ে পঁচা ডিম না হোক এটলিস্ট ভালো ডিম মারার কাহিনী সম্পর্কে অবগত নন ভেবেই অবাক লাগছে আমার। হোয়াট এভার! আন্ডা ফুটানো কিন্তু বর্তমান সময়ের একটা বার্থডে স্পেশাল ট্রেন্ড বলা চলে৷ এখানে বার্থডে গার্ল অথবা বয় উভয়কেই চরম অপদস্ত হতে হয় তাদের বন্ধু-বান্ধবদের জন্য। ফ্রেন্ডসরা মিলে সারপ্রাইজ দেওয়ার নাম করে মাথায় পঁচা ডিম ফুটিয়ে গায়ে আটা মেরে দেয়৷ মোট কথা একেবারে দুর্গন্ধযুক্ত ভূতে পরিণত করে বার্থডে গার্ল অথবা বয়কে। সেই ট্রেন্ডটার বাহানা দিয়েই সানি ভাই আপনি বাসায় বলবেন, রিভান ভাই আপনাকে নিশান্তের এরকম পরিস্থিতি ঘটাতে নিয়ে গেছে। বাসায় জানাতে চেয়েছিলেন বাট সময়ের স্বল্পতায় ভুলে বাসায় ফোন রেখে না বলেই বেরিয়ে গিয়েছেন। আর এতোক্ষণ যাবৎ এসব হৈ-হুল্লোড়ের পাশাপাশি নিশান্তকে পানিতে চুবিয়ে গন্ধ মেটাতে মেটাতেই সময় চলে গিয়েছে দেখতে দেখতে। রিভান ভাই, আপনিও সেইম ডায়ালগ ঝেড়ে দিবেন। শুধু নাম অদলবদল করে সানি ভাইয়ের নাম জুড়ে দিবেন। ব্যাস হয়ে গেলো! আর বাদবাকি ক্ষমাটমা চাওয়া, হাতে-পায়ে পড়ে এরকম না জানিয়ে করা ভুলের দোয়াই দিয়ে মাথা ঠোকরান এসব আপনাদেরই ম্যানেজ করতে হবে।

এক নিঃশ্বাসে এতোটুকু বলে সামান্য ব্রেক মারল অন্বিতা। নাকের ডগায় জমা বিন্দু বিন্দু ঘাম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছে নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বললো,

—- কি, আইডিয়া পছন্দ হলো?

সানি-রিভান একে অপরের দিকে বিস্ময় মাখা চোখে তাকালো। মুহূর্তেই ময়ূরের ন্যায় নেচে উঠল দুজনেই। রিভান লাফাতে লাফাতে বললো,

—- ওহ মাই গড! ওয়াট আ ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া ম্যান! নিশান্ত দেখ, তুই নিজেরে ব্রিলিয়ান্ট ভাবোস তাইনা? অন্বিতা তো তোর থেকে কয়েক ধাপ এগিয়েই।

অন্বিতা জামায় কলার না থাকা সত্ত্বেও ওড়না টেনে ভাব জমাল। নিশান্ত নিজের খোঁচা খোঁচা দাড়িতে হাত বুলাতে বললো,

—- আচ্ছা ওদেরটা নাহয় বুঝলাম বাট আমি? আমরা কি বলবো বাসায়? আমরা দুজনে আলাদা আলাদা বললে তো ধরা খাবো নির্ঘাত!

সানি রিভানের হাত চেপে ধরে নিশান্তকে উদ্দেশ্য করে জবাবস্বরূপ বললো,

—- তোরা নিজেদের বাপেরবড়ি-শ্বশুরবাড়ি সামলা বাপ! হাম তো পাতলি গালিছে নিকাললিয়ে!

বলেই রিভানকে সাথে নিয়েই মুহূর্তেই হাওয়া হয়ে গেলো সানি। নিশান্ত-অন্বিতা দুজনেই বোকার মতো চেয়ে রইলো। নিশান্ত আনমনেই বলে উঠলো,

—– নিজেদের কাজ হওয়া মাত্রই ফুরুৎ! এগুলা বন্ধু! এরা তো বন্ধু নামের এক একটা জলজ্যান্ত কলঙ্ক!

অন্বিতা বিস্ময় কাটিয়ে গোলগাল চোখে তাকালো নিশান্তের মুখপানে। হাতের ইশারায় নিজের দিকে মনোযোগী হতে বলে বললো,

—– আপাতত ওদের কথা বাদ দিন! এইদিকে তাকান, আমার কিন্তু বাসা থেকে খুব একটা সমস্যা হবে না। কজ আমার হুটহাট যেখানে সেখানে যাওয়ার রেকর্ড আছে ঠিকই তবে না জানিয়ে নয়। এবার নাহয় একটু মাস্কা লাগিয়ে ভুলে ফোন রেখে যাওয়ার বাহানা জুড়ে দেবো তাতেই হয়ে যাবে। মেইন প্রবলেমটা কিন্তু আপনাকে নিয়ে। আপনি বরং আমায় ফলো করুন। আমরা দুজনে একসাথে বাসায় এন্ট্রি নিলেও আপনি চুপ থাকবেন। আমি যেকোনো উছিলায় কথা উঠিয়ে আপনাকে বাঁচিয়ে নিবো। আপনি শুধু আমার হ্যাঁ তে হ্যাঁ এবং না তে না মেলাবেন, ওকে?

বিপরীতে সুক্ষ্ম চোখে নিশান্ত তাকালো অন্বিতার পানে। অদ্ভুত হলেও যেকোনো ক্রিটিকাল পরিস্থিতি চুটকি বাজিয়ে স্বাভাবিকতার রূপে ফেরানোর অসম্ভব ক্ষমতা রয়েছে তার। আচ্ছা সে কি পারবে না তার মনের হতাশা দূর করতে? তার দোটানার বেড়াজালে আবদ্ধ হৃদপিন্ডটাকে নিমিষেই সারাতে?

____________________________

বাসা থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে রাস্তার ধারের বটগাছের নিচে বসে নূহার ছোটাছুটি গালে হাত দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলো নিশান্ত। নূহা বাচ্চাদের সাথে লাফালাফি করছে! দেখতে দেখতে বোনটার সাত বছর পূর্ণ হলো অজান্তেই। এইটুকুনি বয়সেই তার কতশত পাকাপাকা কথা। আজ অন্বিতার অজুহাতে বাম হাত ঢুকিয়ে নূহা মুখ ফসকে তাদের মাঝে “ইটিশপিটিশ” চলছে এরকম টাইপ বাক্য উচ্চারণ করে ফেলেছিল হুট করেই। নিশান্ত তখন বোকার মতো গোলগাল চোখে চেয়ে চেয়ে দেখছিল প্রত্যেকের মুখের রিয়াকশন। অন্বিতা তৎক্ষণাৎ মুখ চেপে ধরেছিল অবশ্য নূহার তবু ততক্ষণে যা হবার হয়ে গিয়েছিলো কিছু ঠাওর করার পূর্বেই। নিশান্তের বাবা-মা ছেলেকে বকাঝকা করবার বদলে উল্টে মিটিমিটি হাসছিলেন। মাঝখান থেকে চরম অস্বস্তি ও লজ্জায় পরে চুপসে গিয়েছিল অন্বিতা। অথচ নিশান্ত ছিলো হতমূর্খ টাইপ! সবার মুখের রিয়াকশন দেখেও নূহার বলা “ইটিশপিটিশ” শব্দটির কোনো মানে খুঁজে বের করতে পারেনি সে। তবে মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়েছিল তখন বোনকে। হাজার হোক যেখানে কপালে নির্ঘাত অছিলা বাঁশ ছিলো সেখানে কি সুন্দর করে একটা বাক্যেই সবার ভাবমূর্তি পরিবর্তন করে ফেলেছিলো নূহা ম্যাজিকের মতো করেই। যার দরুন অন্বিতার নিজের বাসায় ফেরার সময় চোখ রাঙিয়ে শব্দটার বলা অর্থটাও মধুর মতোই লেগেছিল তার। অন্বিতার জায়গায় হয়তো অন্য কোনো মেয়েকে নিয়ে এরকম মশকরা করলে বাসায় ভুমিকম্প তোলা নিশান্তও বোকার মতো অন্বিতার গালের গোলাপি আভা নিয়েই শতশত ভাবনায় মত্ত ছিলো। আশেপাশে চলা কর্মকান্ডে তখন তার মন ছিলো কই?

শিখা-বাবলীর সাথে পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করে বাড়ি ফিরছিলো অন্বিতা। তার লম্বা এলো চুলের বিনুনি কোমড় পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে অবলীলায়। যারা পায়ের ধাপ ফেলার সাথেসাথেই নেচে উঠছে আপন মনে। সঙ্গ দিয়ে চলেছে অন্বিতার নূপুর পায়ে এগিয়ে চলার ছমছমে শব্দে। হাটতে হাটতে এক পর্যায়ে বাচ্চাদের কোলাহল পূর্ণ মাঠের দিকে চোখ গেলো তার। অন্বিতা ক্ষণিকের জন্য থমকে দাঁড়ালো। হঠাৎ নিজের ঝাপসা স্মৃতিতে ফুটে উঠতে লাগলো নিজের শৈশব। অন্বিতা এই বাচ্চাগুলোর মতোই ছোটাছুটিতে মত্ত ছিলো। তার পাশেই মিষ্টি হেসে সঙ্গ দিচ্ছিলো কেউ। তবে তার ঝাপসা মুখশ্রী ঠাওর করতে পারলো না অন্বিতা। ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে আবারও এগোতে নিতেই চোখ গেলো নূহার ওপর। নূহাকে দেখেই ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো তার। ভাবলো বাচ্চাদের সাথে একটু ছোটাছুটিতে মত্ত হওয়াই যায়। ভেবেই বটগাছটার দিকে তাকালো। হাজারও ভাবনায় মত্ত নিশান্তের ক্লান্ত মুখশ্রী দৃষ্টিগোচর হতেই ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠলো তার। অন্বিতা মনে মনে ভাবলো “যাক অবশেষে চার দেয়ালে বন্দী রোবট তবে প্রকৃতির আমেজ বুঝতে শুরু করলো!” এই ভেবেই এগিয়ে চললো খানিক আলাপ করাবার তাগিদে। তবে হঠাৎ করেই চোখের সামনে কোনো বাচ্চার হাত ফসকে রাস্তার ওপর গড়িয়ে গিয়ে পড়া ক্রিকেট বল ভেসে উঠলো। বাচ্চাটাও অবুঝ মনে বল কুড়তে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে ছুট লাগালো। এর মাঝেই রাস্তার অপোজিট প্রান্ত থেকে দ্রুত বেগে ছুটতে ছুটতে এগিয়ে এলো একটি প্রাইভেট কার। অন্বিতা ভয়ার্ত চোখে তাকালো। এতোদূর থেকে দৌড়ে বাচ্চাটাকে থামানো যাবে না জেনেও ছুট লাগালো। বাচ্চাটার আর মাত্র ১ হাত দূরত্বে গাড়িটা থাকাকালীনই থমকে দাঁড়ালো অন্বিতা। এক প্রকান্ড চিৎকারের আওয়াজ কানে পৌঁছোতেই দুহাতে মাথা চেপে ধপ করে রাস্তার পাশেই হাটু গেড়ে বসে পড়লো সে। তবে কি বাচ্চাটাকে বাঁচানো হলো না? এভাবে খেলতে খেলতেই বুঝি শেষ হয়ে গেলো একটি প্রাণ! খালি হলো কোনো অভাগী মায়ের বুক!
.
.
.
.
চলবে……………💕

(প্রচুর বানান ভুল হতে পারে তাড়াহুড়ো করে লেখায়। আমি পরে ঠিক করে নিবো। বাই দ্য ওয়ে গত পর্বের অভিশাপ তো ভালোই কাজে দিলো দেখছি! কতোগুলো চোর ধরা পড়লো বাবা!🐸)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here