থ্রেট

গল্পঃ থ্রেট

মেইন ডোর খুলতেই তানি একজন শ্যামলা বর্ণের সুদর্শন যুবককে দেখতে পেলো।যুবকটি প্যান্টের পকেটে দু হাত পুরে দাঁড়িয়ে আছে।পরনে একটা সাদা শার্ট আর কালো জিন্স প্যান্ট।শার্টের দুটো বোতাম খোলা।যার জন্য বুকের কিছুটা ওপরের ক্রসের মতো দুটো কাটা দাগ দেখা যাচ্ছে।কাটা চিহ্ন দুটো অনেক পুরোনো।বোঝা যাচ্ছে হয়তো ছোট থাকতে কোনোভাবে আঘাত পেয়েছিল ওখানে।বড় বড় দুটো চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখছে তানিকে সে।আর তানিও যুবকটিকে খুঁটে খুঁটে দেখছে।উচ্চতা পাঁচ ফিট আটের বেশি হবেনা,স্বাস্থ্য মাঝারি, কপালটাও বেশ বড়।তবে কপালের ওপর ঝাঁকরা চুলের কয়েকটা চুল এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে।মাথায় চুল প্রচুর। চোখ দুটো খুব বড় আর চোখদুটোতে কেমন যেনো একটা মায়া মায়া ভাব।চেহারার মাঝে সব থেকে বেশি আকর্ষণীয় হলো ছেলেটার ঠোঁট দুটো।ঠোঁটের আকৃতি টা অনেকটা মেয়েদের মতো।ঠোঁটের দু প্রান্ত হালকা গভীর। মনে হচ্ছে পেন্সিলে আঁকা।

– পর্যবেক্ষণ শেষ হলে কী আমি ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পেতে পারি?’
– কেনো নয়?অনুমতি তো দিতেই হবে।খদ্দের হচ্ছে লক্ষী। তাকে কী ফিরিয়ে দেওয়া যায়? রহস্যভরা হাসি মেখে বললো তানি।

যুবকটি ঘরের ভেতর ঢুকলো।বাইরে থেকে যেমনটা ভেবেছিল ঠিক তেমনটা নয়।সাদা টাইলসে পুরো এপার্টমেন্ট। বিশাল বড় একটা ড্রয়িংরুম তার পাশেই ডাইনিং প্লেস।আর ডাইনিং এর সাথেই কিচেন।তিনটি বেডরুম দেখা যাচ্ছে।ড্রয়িংরুমের সাজসোজ্জা দেখে মনে হচ্ছে খুবই বিলাসবহুল জীবনযাপন করে এরা।বড় একটা এপার্টমেন্ট নিয়ে থাকা মানেই এদের ইনকাম অধিক ছাড়া সামান্য নয়। অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো না যুবকটি।সোফায় গিয়ে বসে পড়ল।

– তো ক’জন তোমরা?
– আমরা পাঁচজন। যুবকটির মুখোমুখি বসতে বসতে উত্তর দিলো তানি।
– এখন কাকে কাকে পাবো?
– তোমার প্রয়োজন কাকে কাকে?নাকি সবাইকেই চাও?বিল কতো জানো তো?
– কী মনে হচ্ছে?
– তুমি খুব আপসেট। এটাই মনে হচ্ছে।আরামের প্রয়োজন তোমার।
– তাহলে সেটার ব্যবস্থায় করো।
– সিলেক্ট করতে হবে তো আগে?
– নিয়ে এসো বাকি চারজন কে।
– এই মুহূর্তে আমরা এখন চারজন।বাকি একজন বাইরে আছে।
– যে চারজন আছো আগে তাদেরকেই দেখি।
– হুম,বসো। হালকা হেসে বললো।একটু পিছু ফিরে প্রশ্ন করলো তানি, -‘তোমার নাম?’
– তাসিন।আর কিছু?

হেসে মাথা নেড়ে না জানায় তানি।তারপর একটি রুমে চলে যায়।

তানি, বন্যা, নিশি আর রিমি বসে আছে তাসিনের সামনে। সবাই রাতের পোশাক পরিহিত অবস্থাতে তাসিনের সামনে উপস্থিত হয়েছে।চারজনই মোটামোটি দেখতে বেশ।কিন্তু তাসিন যার কাছে এসেছে, যাকে দেখার উদ্দেশ্যে এসেছে সে অনুপস্থিত।রাতের ঘনিষ্ঠতা আর বিছানা গরম করার জন্য এরা পুরোটাই পারফেক্ট।কিন্তু তাসিনের তো এদের প্রয়োজন নয়।

– তুমি কী সন্তুষ্ট নও আমাদের দেখে? তানির প্রশ্ন।
– অসন্তুষ্ট হওয়ার মতো কেউ ই নও তোমরা।কিন্তু আমি অপেক্ষা করতে চাইছি অন্য আর একজনের জন্য।পরে যদি তোমাদের থেকেও সে বেশি দুর্দান্ত হয় তখন তো আমার আফসোস হবে।
– দারুণ বললে।তাহলে যে অপেক্ষা করতে হবে?
– রাজি।
– বেশ। কী নিবে? কফি, চা, সফ্ট ড্রিংক নাকি মাথা ধরিয়ে দেওয়ার……
– লাস্ট অপশন।
– গ্রেট।বসো নিয়ে আসছি।

মাথা ধরানো ঝাঁঝালো পানীয় সেবন করে সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে পড়েছে তাসিন।চোখের পর্দায় শুধু ওই মুখটায় ভেসে আসছে বার বার।কীভাবে, কী অবস্থাতে আজকে ওর সামনে আসবে সে? সে কী আগের মতোই দেখতে মায়াবী আর স্নিগ্ধ আছে নাকি পুরুষদের আকর্ষণের জন্য সবসময় চোখে মুখে রং-চং মেখে নিজেকে কৃত্তিম সাজে সাজিয়ে রাখে?ওর ঠোঁটের ডান পাশে নিচে একটা গাড়ো কালো তিল ছিল।তিলটা কে তাসিন বলতো ‘এই তিলটার নাম হচ্ছে তাসিন।কারণ এই তিলটা তোমার ঠোঁটের একদম কাছে।আর আমি সবসময় এতটায় কাছে থাকতে চাই তোমার।’ সহস্রবার চুমু খেয়েছে তাসিন ওই তিলটাতে।আজ ওই তিলে কী অন্য পুরুষেরাও….?? কথাটা ভাবতেই তাসিন চোখ খুলে তাকাল।চোখ দুটো রক্তের বর্ণ ধারণ করেছে।সে কোনোকালেই মেনে নিতে পারবেনা এমন বিষয়।ওই মানুষটাই যে তাসিনের।কিন্তু হায়! আজ দুটো বছর ওই মানুষটা আর তাসিনের নেই।সারা শরীরে দর দর করে ঘাম ঝরছে।

– পিপাসা পেয়েছে খুব?

বসে আছে সেই মানুষটি ওর সামনে।তার কন্ঠের আওয়াজে দৃষ্টি পড়ল তার দিকে।দু চোখ ভরে দেখছে তাসিন তাকে।এই তো তার কুয়াশা।এই তো সেই কোমল আর স্নিগ্ধ মুখখানা।যে মুখখানা দেখলে বুকের বামপাশটাতে সবসময় একটা মিষ্টি ধাক্কা খেতো।হ্যাঁ সেই মানুষটা একদম আগের মতোই আছে।

কুয়াশা তাসিনের হাতটা ধরে নিজের রুমে নিয়ে আসে।তাসিন যেনো কোনো ঘোরের মধ্যে আছে।তাকে যেনো বশ করা হয়েছে তাই সে নিরবে অন্ধের মতো কুয়াশার হাতটা ধরে ওর পিছু পিছু আসছে।তাসিনকে বিছানায় বসিয়ে নিঃশব্দে রুমের দরজা লক করলো।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল গুলো আঁচড়ে ছেড়ে দিলো কুয়াশা।তারপর ব্ল্যাক কালারের ছোট নাইটি টা নিয়ে চেইঞ্জ করে নিলো তাসিনের সামনেই।তাসিন নিরবে শুধু তাকিয়ে দেখছে কুয়াশাকে।ওর চোখদুটো এখন রক্তশূণ্য।দৃষ্টি খুবই তীক্ষ্ণ।হাতের মুঠোও শক্ত হয়ে আসছে।কুয়াশা দাঁড়িয়ে নাইটির ফিতা বাঁধছে।তাসিন উঠে এসে কুয়াশাকে ঘুরিয়ে হাতের পাঁচ আঙুল বসিয়ে দিলো ওর গালে।কুয়াশা ছুটে গিয়ে পড়ল বিছানার ওপর।সোজা হয়ে বসার আগেই তাসিন হিংস্র পশুর মতো ওর শরীরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর গলা চিঁপে ধরে।চিৎকার করে বলে, -‘এভাবেই তুই নিজেকে প্রদর্শন করিস সবার সামনে?সবকিছু দিয়ে দিস ওদের?’

ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় কুয়াশা।ওর শার্টের কলার চেঁপে ধরে বলে, -‘আমি এখন তোমার বউ নই।আমি তোমার অধীনে নেই এখন।আমি আমার শরীরের মালিক। এই শরীর নিয়ে খেলা করার অধিকার শুধু আমার।আর এই অধিকারে হস্তক্ষেপ করার অধিকার তোমার এখন নেই তাসিন। তোমার এখন নেই।’

রাগে ফুঁসতে থাকে তাসিন।কুয়াশা ওর কাছে এসে ওকে বিছানায় বসিয়ে দেয় আবার।

– আমার দিকে তাকিয়ে থাকো তাসিন।আমাকে দেখো। আমার চোখ আমার ঠোঁট আর…… আর আমার ঠোঁটের নিচের তিলটা দেখো। কিছুটা থেমে বলে কুয়াশা।

তাসিনের ঠোঁট কিছু বলার জন্য নড়ে উঠতেই কুয়াশা ঠোঁটের ওপর অনামিকা আঙুল চেঁপে ধরে বলে, -‘ কোনো কথা বলো না। শুধু চেয়ে থাকো আমার দিকে।

দশ মিনিট, পনেরো মিনিট, পঁচিশ মিনিট পার হয়ে যায় তাসিন কুয়াশাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধের ওপর মাথা রেখে বসে আছে।কুয়াশার চোখের কোণা দিয়ে নোনা পানি ক্ষয় হচ্ছে। এরপর কুয়াশা তাসিনকে উঠিয়ে সোজা করে বসিয়ে বলে, -‘ ভালো লাগছে এখন?’

মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানায় তাসিন।

– কেনো এসেছো?আমাকে দেখতে?
– হুম।
– শুধুই দেখতে?
– জানিনা।
– প্রতি ঘন্টা কতো বিল জানো?
– জানি।
– আমার রুমে এসেছো পঁয়ত্রিশ মিনিট হয়ে গেছে।বাকি পঁচিশ মিনিট কী করবে?
– জানিনা।
– জেনে নাও।এমনি এমনি বসে থেকে বিল পেমেন্টের থেকে কিছু আদায় করে নেওয়ায় বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

কুয়াশা ওর সামনে থেকে উঠে গিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়াল।আবার বললো, -‘ তুমি জানো এখন এটা আমার পেশা।তাহলে কেনো এত সিনক্রিয়েট করছো?তুমি এসেছো কী কারণে বলো তো?’
– তোমাকে দেখতে।তোমাকে স্পর্শ করতে।
– এই তো লাইনে এসেছো।
– তাহলে বসে কেনো?লেটস স্টার্ট।

কুয়াশা দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তাসিন উঠে এসে ওকে আচমকা কোলে তুলে নিলো।এটার জন্য কুয়াশা একদম প্রস্তুত ছিল না।এমনটা তো তাসিন তখন করতো যখন কুয়াশা ওর সঙ্গে ঘর বেঁধে ওর সংসারের বধু হয়েছিল।ভালোবাসা আর আদরে যখন তাসিন ওর কাছে আসত ঠিক এভাবেই তো ওকে কোলে তুলে বিছানায় এনে শুরু করতো ভালোবাসার পর্ব। কিন্ত আজ তো ভালোবাসার কোনো পর্ব নেই।আজ শুধু আছে দুজনের মাঝে চাহিদা পূরণের পর্ব আর চাহিদা পূরণের পর বিনিময় পর্ব।বুকের ভেতরটা ভেঙ্গে-চুরে আসছে কুয়াশার। ভালোবাসা নামক এই যন্ত্রণার অনুভূতি সে এখন পেতে চায় না।ওকে বিছানায় শুইয়ে ওর কাছে আসতেই কুয়াশা ওকে বাঁধা দিয়ে বলে, -‘ তুমি নয়।শুরু করবো আমি।সন্তুষ্ট করার দায়িত্ব আমার।’

তাসিনের ভেতরটা কেঁপে উঠল কুয়াশার কথাতে।ও ভুলেই গিয়েছিল আজ ওদের মাঝে ভালোবাসা বিনিময় হচ্ছে না। হচ্ছে চাহিদা বিনিময়।তাসিনের কলার দু মুঠোর মধ্যে চেঁপে ধরে খুব কাছে নিয়েলো ওকে কুয়াশা।সেই প্রিয় ঠোঁটজোড়া আজ বহুকাল পর এত কাছে ওর।ইচ্ছে করছে আগের মতো সেই ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে ওই ঠোঁটদুটোকে।কিন্তু এখন তো ভালোবাসা দেখানোর সময় নয়।এখন তো কুয়াশা ওর চাহিদা পূরণের দ্রব্য।কথাটা মনে পড়তেই ঠোঁটজোড়ার খুব কাছে গিয়েও থেমে গেলো কুয়াশা।ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো তাসিন কে সে।বিছানা থেকে নেমে কান্নায় ফুঁপিয়ে বললো,
-‘ চলে যাও তাসিন।আর এসো না এখানে।আমি পারবোনা তোমাকে আমার রোজাগারের মাধ্যম ভাবতে।প্লিজ আমাকে আর কষ্ট দিওনা।মুক্তি দাও আমাকে।’
– যা অন্য কাউকে দিতে পারবে তা আমাকে দিতে পারবেনা কেনো?আমার সামনে নগ্ন হতে তো আরো স্বাভাবিক লাগবে তোমার।
– তুমি বুঝবেনা কোনোদিনও কেনো পারবোনা আমি।বুঝলে আজ আমাকে এই ক্লাসে বিলং করতে হতোনা।
– আমি বলেছি তোমাকে এখানে নামতে?
– বাধ্য করেছো।আমার মাঝে তুমি জিদ ঢুকিয়ে দিয়েছিলে।

হঠাৎ কুয়াশার ফোনে আয়ান নামে একটি কল আসলো। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক রেখে ফোনটা রিসিভ করে কুয়াশা।
– কী খবর আয়ান সাহেব?
– তুই কই এখন?
– কই আবার?আমার রুমে আমার ডিউটিতে।
– কে আসছে তোর কাছে? চিল্লিয়ে প্রশ্ন করলো আয়ান।
– আরে কুল।চিল্লাচ্ছো ক্যান?কে আসতে পারে বোঝোনা।
– কুত্তারবাচ্চা! আমি তোকে বলেছি তোর রুমে যেনো আর কেউ না আসে।কেউ যেনো আর তোর দিকে না তাকায়।তুই কোন সাহসে লোক ঢুকিয়েছিস?
– স্টপ আয়ান সাহেব।এটা আমার রোজগার ব্যবস্থা।আর তুমি আমার কোনো গার্ডিয়ান নও।আমার কাজে বাঁধা দেওয়ার তুমি কে?
– আজই বোঝাবো আমি কে?তুই থাক আমি আসছি।আর যাকে শুইয়ে রাখছিস তাকে কবর দিবো এসে আমি।

ফোনটা কেটে যায় আয়ানের কথা শেষ হতেই।সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে কুয়াশা চোখ মুখ মুছে তাসিনকে শক্ত কন্ঠে বলে,
– আমি কী বলেছি তুমি শুনতে পাওনি?আর আসবেনা এখানে।যাও, চলে যাও।
– কে ফোন করেছিল? কুয়াশার কাছে এগিয়ে এসে বললো।
– তোমাকে জানতে হবেনা।তুমি যাবে?
– না।আমি এখানেই থাকবো আজ।
– তাহলে অন্য রুমে যাও।
– আমি এই রুমেই থাকবো।

জোড় করে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিলো ওকে কুয়াশা। তারপর চিৎকার করে বললো, -‘ আজকের পর যদি তুমি এই এপার্টমেন্টে আসো তাহলে আমি পুলিশকে জানাবো তুমি আমাকে ফোর্স করো। বেরিয়ে যাও।’

তানি, বন্যা, নিশি, রিমি সবাই দাঁড়িয়ে আছে কুয়াশার পাশে। নিশি জিজ্ঞেস করলো, -‘ ও কে কুয়াশা?’
– ও সেই মানুষটা।আজ যার জন্য আমি এখানে।

কুয়াশার কথা শেষ হতে না হতেই দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে আয়ান ড্রয়িংরুমে এসে ঢুকলো।বেচারা অফিসে বসে ছিল। যখনই ওর লোক খবর দিয়েছে নতুন কেউ একজন এই এপার্টমেন্টে এসেছে তখনই আয়ানের মাথা আউলিয়ে গেছে। অন্য মেয়েগুলোর কাছে এই লোক গুলো আসুক তাতে কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু কুয়াশার কাছে কেউ আসলে ও তাদেরকে জ্যান্ত রাখবেনা।প্রথমবার যখন এই এপার্টমেন্টে এসেছিল আয়ান। তখন থেকেই সে কুয়াশার প্রতি দুর্বল বনে গেছে।তার কথা কুয়াশা কেবল তার একার।সে শুধু কুয়াশাকে স্পর্শ করবে। অন্য কেউ নয়।তার বিনিময়ে এমাউন্ট থাকবে চড়া।এক পর্যায়ে সে কুয়াশাকে নিজের বাড়িতেই নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল। কিন্তু কুয়াশা রাজি হয়নি।এরপর সে সবসময় কুয়াশাকে নিজের লোকের মাধ্যমে চোখে চোখে রাখে কুয়াশা কখন কোথায় যায়, কে আসে ওর কাছে সব খোঁজ রাখে।আয়ানের দাপটে প্রায় মাস তিনেক হলো কেউ কুয়াশার কাছে ঘেষতে পারেনা।কিন্তু আজ এই ছেলের এত বড় বুকের পাটা হলো কী করে কুয়াশার ঘরে ঢোকার সেটাই দেখবে আয়ান।কোনো কথা নেই আয়ানা হামলে পড়ল তাসিনের ওপর।তখনই কুয়াশা আয়ানকে টেনে নিয়েসে বললো,-‘ তুমি ওর গায়ে হাত দিবে না।ওকে আমি এখনই বের করে দিচ্ছিলাম।’

আয়ান কুয়াশার গাল চেঁপে ধরে বললো,-‘ তোর জানের ভয় নেই?তুই কী কারণে ওকে ঘরে ঢুকিয়েছিলি?’
– ও আমার প্রাক্তন বর আয়ান। আয়ানের হাত ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে ওর হাত ধরে কাঁপাস্বরে বললো।
– প্রাক্তন বর।এখন তো বর নয়।তাহলে কেনো?
– আমার লাগছে আয়ান।ছাড়ো আমাকে। ধাক্কা মেড়ে সরিয়ে দিলো আয়ানকে।
– তুমি এমন জোড়জবরদস্তি করতে পারোনা আমার সাথে। আমি তোমার কাছে একেবারে বিক্রি হয়ে যাইনি।আমার যাকে ইচ্ছা আমি তাকে ঘরে ঢোকাবো।তোমার যদি প্রয়োজন হয় তুমিও আসো প্রতিদিন।টেনশান রিলিজ করে দিবো।

খুব জোড়ে থাপ্পড় মাড়ল আয়ানা কুয়াশার গালে।ওর চুলের মুঠি ধরে বললো, -‘ টেনশান রিলিজ করার দায়িত্ব নিয়েছিস তাই না?ঠিক আছে চল।টেনশান রিলিজ করবি আমার।’

কথা শেষ করেই আয়ান কুয়াশাকে জোড় করে কাঁধে তুলে নেয়। তানি বন্যা সবাই বাঁধা দিতে আসলে ওদের উদ্দেশ্য করে আয়ান বলে, -‘ আজকে থেকে ওই রুমের জন্য নতুন কোনো সদস্য খুঁজো।’
– আপনি ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
– ও তো টেনশান রিলিজের মেশিন।মেশিনের সুবিধা যাতে আমি একা পাই সেই ব্যবস্থা করতে যাচ্ছি।
– কী বলছেন এসব?
– হিসাব বুঝোনাই? পার্মানেন্টলি ঘরে রাখার ব্যবস্থা করবো ওকে।
– আমরা কিন্তু পুলিশ ডাকবো।
– পুলিশ স্টেশনই আসো।ওখানেই কাজী ডাকছি।

আশফিন চুপচাপ ফোন স্ক্রল করছে আর গল্পটা পড়ছে।রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ওর।কত বড় হারামী মার্কা বউ হলে এমন গল্প লিখে থ্রেইট দিতে পারে।তিনটি খন্ডে গল্পটি আশফিনকে মেসেজে পাঠিয়েছে মাহি।অফিসে আসার পর ঘন্টাখানেক আগে তুমুল ঝগড়া হয়েছে বউয়ের সাথে।নানারকম হাবিজাবি কথাও বলেছে সে বউকে।বউটাও ছেড়ে কথা বলেনি।কত আজেবাজে কথা বললো ওকে।অন্য কারো সাথে চলে যাওয়ার হুমকি পর্যন্ত দিলো।শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত হয়নি।গল্পের মধ্যে রীতিমতো থ্রেইট দিলো বউটা।
– কেমন লাগলো আমার ‘থ্রেইট’ গল্পটা?মন্তব্য করতে ভুলোনা কিন্তু। টুপ করে মেসেজটা এলো আশফিনের ফোনে।

আশফিন কোনো রিপ্লাই করলোনা।ডিউটি শেষ হওয়ার অপেক্ষাতে আছে।নাইট শিফ্ট চলছে।সকাল ছ’টায় ডিউটি শেষ করে বউয়ের বাপের বাড়ি চলে আসে আশফিন।
কলিংবেল চাপতেই শ্বাশ্বুড়ি দরজা খুলে।

– বাবা তুমি এত সকালে?সব ঠিক আছে তো?
– মাহি কই? তড়ি-ঘড়ি করে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো।
– কী?
– আপনার মেয়ে কোথায়?হুংকার ছেড়ে বললো এবার।
– ও তো ঘুমাচ্ছে।

আর কোনো কথা না বলে দ্রুত পায়ে দরজা ঠেলে রুমে ঢুকে পড়ল আশফিন।শ্বাশ্বুড়ি আম্মা অবাক।কালই এলো মেয়েটা বাপের বাড়ি।আর আজই জামাই থাকতে না পেরে চলে এলো!
আশফিণের আক্রমণের আগেই মাহি দৌঁড়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে।

– দরজা খুলবে তুমি?বাথরুম থেকে বের হও বলছি।
– এত তারা কিসের?আমি রেডি হয়ে আসছি তো।তুমি বসো ডিয়ার। দরজার মুখে দাঁড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে মাহি।
– থ্রেইট করো আমাকে না? অন্য কারো সাথে ভাইগে যাবা তাই না?তাকে কীভাবে চুমু খাবা সেগুলো আমাকে দেখাবা। আসো বাইরে আসো।কিসিং মাস্টার না আমি তোমার?যাতে ভালো করে চুমু দিতে পারো তার জন্য আমি প্রশিক্ষণ দিবো তোমাকে।বের হও বলছি।না হলে দরজা ভাঙ্গবো বলে দিলাম।
– আরে আস্তে।বাইরে সবাই শুনতে পাবে তো।
– তুই বেরুবি? গর্জন করে বললো।
– ক্যান? জ্বলে?পুড়ে?খারাপ লাগে? আমারও লাগে।যখন বলো যার সাথে খুশি তার সাথে ভেগে যাও।তখন আমারও লাগে।

আর কোনো কথা না বলে আশফিন দরজায় লাথি দিতে শুরু করলো।এই বউকে সে আজ শায়েস্তা করবেই।বাড়ি নিয়ে গিয়ে খাটের পায়ার সাথে বেঁধে গল্প লিখার ঝাল বের করবে।

– থ্রেইট থেকে যদি স্বামী শিক্ষা পায় তাহলে থ্রেইটই ভালো। হিঃ হিঃ হিঃ……

(ভুলসমূহ ক্ষমারচোখে দেখার অনুরোধ রইলো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here