#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৫৫+56
মেহেরিন বাইরে এসে দেখে আনহা গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে নিশি আর ক্যাট বসা। তাদের এখানে দেখে মেহেরিন বলে উঠে..
– তোমরা এখানে কেন? আর শান্ত আর অরনি ওরা কোথায়? রাইয়ান!
– চিন্তা করো শান্ত আর অরনি পেছনের সিটে ঘুমাচ্ছে আর রাইয়ান ক্যাট’র কোলে। সেও ঘুমিয়ে আছে।
মেহেরিন এবার খেয়াল করল আসলেই রাইয়ান ঘুমিয়ে আছে। অতঃপর একে একে সবাই বাইরে আসল। মেহেরিন সবার বাইরে বের সবার আগেই আনহা ওদের কে নিয়ে চলে গেল। অতঃপর সবাই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেল। নীল একবারও নীলাশা’র কথা চিন্তা করল না আর না তার জন্য অপেক্ষা করল। সেও চলে গেল। নীলাশা’র কথা এখন আর ভাবতে চায় না সে। তার কথা ভাবলেই তার রাগ হচ্ছে।
রিদুয়ান, নীলিমা ওদের সবাইকে ডেভিল নিজেই চৌধুরী বাড়িতে দিয়ে আসল। মেহেরিন বলেছিল এটা করতে কারন এখন তাদের মনের অবস্থাটা সে বুঝে। মেহেরিন বাড়িতে এসেই নিজের রুমে চলে গেল। অভ্র আর নিহা ভাবছে কি করবে। তারা জানে মেহেরিন যত’ই নিজের মুখে বলুক না কে সে নির্ঝর কে ভালোবাসে না কিন্তু সে অসম্ভব ভালোবাসে নির্ঝর কে। নাহলে তার জন্য তার মা বাবা সে কোনভাবেই খুঁজে আনতো না। মেহেরিন’র একটা ক্ষমতা আছে সেটা হলো নিজের কষ্ট খুব সহজেই আড়াল করে রাখতে পারে সে। তবে নিহা আর অভ্র’র চোখে এসব ধরা পড়ে যায়।
আনহা, নিশি আর ক্যাট পুরো সত্যি টা শুনে অবাক হয়ে যায়। অভ্র আর নিহা দেখল নীল রাইয়ান কে কোলে নিয়ে নিজের ঘরে চলে গেছে। একটা ঝড় কিভাবে তাদের দুই ভাইবোনদের জীবন নষ্ট করে দিলো এটাই ভাবছে দুজন। কি হবে এখন তাদের পরিণতি।
আহিয়ান এসে নিহা’র ঘাড়ে হাত। নিহা তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে হাজারো প্রশ্ন। আহিয়ান শুধু একটা কথাই বলল..
– সময় যেমন সব কিছু তছনছ করে দেয় আবার সেই সময়’ই সব ঠিক করে। অপেক্ষা করো!
নিহা আহিয়ান কে জরিয়ে ধরে। অভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফায় এসে বসে। ভাবছে এখন কার কাছে যাবে। মেহেরিন নাকি নীল!
ক্যাট এসে অভ্র’কে এক গ্লাস পানি দিয়ে যায়। অভ্র পানির গ্লাস টা খালি করে টেবিলে রাখতেই দেখে মেহেরিন ঘর থেকে বের হচ্ছে। হাতে একটা তোয়ালে যা দিয়ে নিজের মাথা মোছার ব্যর্থ চেষ্টা করছে সে। অভ্র বেশ ভালো মতোই তাকাল মেহেরিন’র দিকে। নাহ মেহেরিন কাঁদে নি। সে কাঁদলে সবার চোখ ফাঁকি দিলেও অভ্র’র চোখ ফাঁকি দিতো না। অভ্র হেসে মেহেরিন কে ডাকলো। মেহেরিন হেসে তার সোফার সামনে মেঝেতে বসে বলল..
– চুলটা মুছে দাও তো!
অভ্র তার চুল মছতে থাকে। সবাই তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। বেশ স্বাভাবিক লাগছে তাকে। মনে হচ্ছে যে কিছুই হয় নি। একটা স্বাভাবিক দিনের মতোই!
– মাথা মুছা শেষ, খাবার আনবো খাবে তুমি!
– না দা ঘুমাবো! খুব ঘুম পাচ্ছে! ভাইয়া কোথায়?
– রাইয়ান কে নিয়ে ঘরে গেল।
– আচ্ছা!
বলেই মেহেরিন উঠে যায়। সে যায় নীলের ঘরের দিকে। ঘরের দরজা খোলাই ছিল।মেহেরিন ঘরে এসে দেখে নীল ঘুমন্ত রাইয়ান কে নিয়ে বসে আছে। মেহেরিন কে দেখে হেসে দেয় নীল। মেহেরিন বিছানায় উঠে রাইয়ান কে নিজের কোলে নেয়। অতঃপর তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার পাশে নিজেও শুয়ে পড়ে। মাথা রাখে নীলের কোলের উপর। বলে… “আমি ঘুমাবো”!
নীল হেসে তার মাথায় হাত বুলাতে থাকে। মেহেরিন রাইয়ান কে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু নীল সারারাত’ই জেগে থাকে। বিষয়টা একবার উঁকি দিয়ে যায় অভ্র। খুব অদ্ভুত তার ভাই বোন গুলো। একজনের কষ্ট পেলে শুধু ঘুমিয়ে থাকে তো আরেকজন জেগে তার রাত পার করে দেয়। কোন দিন কি এসব স্বাভাবিক হবে!
.
চৌধুরী বাড়িতে…
নির্ঝর তার মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। নীলিমা মাথায় হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। খুব শান্তি লাগছে তার। নীলাশা এতোক্ষণ কাঁদছিল! কাঁদতে কাঁদতে রিদুয়ান’র কোলেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল সে। ১১ বছর পর নিজের সন্তানদের কাছে পেয়ে একদিকে যেমন সে খুশি ঠিক তেমনি অপরদিকে সন্তান দের এভাবে কষ্ট পেতে দেখে খুব খারাপ লাগছে তার কাছে। কিন্তু কিভাবে তাদের এইসব ঠিক করবে সে!
কয়েকদিন ধরে এভাবেই কাটতে লাগল। নির্ঝর আর নীলাশা দুজনেই মনমরা। নীলাশা প্রায় সময়ই রাইয়ান’র জন্য কান্নাকাটি করে। এদিকে নির্ঝর মেহেরিন’র ছেড়ে যাওয়ার শোকে যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে শুধু সেই ডির্ভোস পেপার দেখতে থাকে সে। নীলিমা আর তিশা’র এসব দেখে খুব খারাপ লাগে। অতঃপর নীলিমা আর তিশা সিদ্ধান্ত নেয় তারা মেহেরিন’র সাথে কথা বলতে যায় খান বাড়িতে!
নীলিমা আর তিশা কে দেখে বেশি একটা অবাক হলো না মেহেরিন। সে জানত তারা আসবে। তাদের দেখে বাড়ির সবাই অনেক খুশি। এখনো তারা অনেক হাসিখুশি! বোঝাই যাচ্ছে না কিছু হয়েছিল এই বাড়িতে।
সোফায় সবাই বসে আছে। ইহান বসে আছে তিশা’র বারবার বিপরীত দিকে। কেউই কারো দিকে তাকাচ্ছে না। মেহেরিন রাইয়ান কে নীলিমা’র কোলে দিয়ে বলল..
– আপনার নাতি!
নীলিমা রাইয়ান কে চোখ দুটো ছল ছল করতে থাকে। অসংখ্য চুমু খেতে রাইয়ান কে। সবাই ছিল বসার ঘরে। নীলিমা মেহেরিন কে ধন্যবাদ জানাল। অতঃপর তিনি নির্ঝরের নাম নিতেই মেহেরিন বলে উঠে..
– আপনি কি ইহান আর তিশা’র ব্যাপারে কথা বলতে চান!
নীলিমা চুপ হয়ে গেল। সে বুঝতে পারল মেহেরিন নির্ঝরের ব্যাপারে কোন কথা বলতে চায় না। এখানে বাকি সবাই অবাক ইহান আর তিশা’র কথা শুনে। তিশা লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে কারন মেহেরিন কে সে সব বলে দিয়েছিল। মেহেরিন বলে উঠে..
– ইহান আর তিশা’র বিয়েটা হলে কিন্তু মন্দ কিছু হবে না। সবাই কেমন জানি চুপচাপ হয়ে আছে বিয়ে হলে ভালো লাগবে একটা জমজমাট পরিবেশ হবে।
– ইহান আর তিশা’র বিয়ে!
– আগে ওদের জিজ্ঞেস তো কর ওরা অন্য কাউকে পছন্দ করে কি না। তুই বললেই কি হবে নাকি।
– আমি বলছি বলে না, ইহান আর তিশা একে অপরকে ভালোবাসে তাই!
– কিহহ!
– হুম! তাহলে কি ওদের বিয়ে টা এবার সেরে ফেলা যাক কি বলিস!
ইহান বলে উঠে..
– বিয়ে এসব এখন থাক!
– কেন থাকবে কেন?
– বাড়ির পরিবেশ এখন ভালো না।
অভ্র বলে উঠে..
– পরিবেশ ভালো না বলেই ঠিক করার জন্য’ই এমন করতে চাইছে আদুরী। এতে আসলেই সবার ভালো লাগবে।
নীল বলে উঠে..
– তোর কোন অসুবিধা আছে নাকি!
– না আমার কোন অসুবিধা নেই।
– তাহলে আর কি! বিয়ের তারিখ টা এখন’ই ঠিক করে ফেলা যাক
নীলিমা বলে..
– এখন’ই !
– হ্যাঁ আন্টি বিয়ে হলে তাড়াতাড়ি হওয়াই ভালো!
– আন্টি বলছো আমাকে!
মেহেরিন হেসে বলে..
– এই সম্পর্কটাই এখন রাখতে চাই!
নীলিমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অতঃপর বলে..
– রাইয়ান কে একটু নিয়ে যাই আজ। কাল নিয়ে আসবো। নীলাশা তাকে দেখার জন্য অনেক কান্নাকাটি করছে!
সবাই চুপ হয়ে গেল। কে কি বলবে সে বুঝতে পারছে না। নীল ঠিক করেই নিল রাইয়ান কে সে কিছুতেই নীলাশা’র কাছে যেতে দিবে না। মেহেরিন বলে উঠে..
– হ্যাঁ নিতেই পারেন!
– না আমার ছেলেকে আমি কখনো ওর কাছে পাঠাবো না।
– বাবা নীল!
– আন্টি প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন আমাকে। আমার পক্ষে সম্ভব না জোড় করবেন না।
নীলিমা আর কোন কথা বলল না। অতঃপর তারা চলে গেলো!
.
পরদিন সকালে….
নীল রাইয়ান কে খাওয়াচ্ছে কিন্তু রাইয়ান কিছুতেই খেতে চাইছে না। ইদানিং খুব কান্নাকাটি করছে সে। কিছুই খেতে চায় না। কেউ জোর করে খাইয়ে দিলে রাইয়ান বমি করে ফেলে। আজও তাই করল। নীল রেগে গেল। একট ধমক দিয়ে বসল তাকে। ধমক শুনে রাইয়ান আরো জোরে জোরে কাঁদতে লাগল।
মেহেরিন এসে দৌড়ে রাইয়ান কে কোলে নিল, অতঃপর তাকে থামানোর চেষ্টা করতে থাকল..
– ভাইয়া তুমি ওকে বকছো কেন?
– কি করবো বল। কথা শুনতে চাইছে না।
– ও বাচ্চা ভাইয়া।
– তাই বলে কি ক্ষিধে পায় না ওর। কয়েকদিন ধরে কিছু খাচ্ছে না। পরে অসুস্থ হয়ে পরবে কি না বল তুই!
মেহেরিন চুপ হয়ে গেল। আর কিছু বললো না। অতঃপর অনেক কষ্ট করে রাইয়ান কে শান্ত করে ঘুম পাড়িয়ে দিল।
দুপুরের দিকে..
দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। নীল এসে দরজা খুলতেই দেখে নীলাশা ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নীল রঙের একটা জর্জেটের শাড়ি পড়া সে। চুল গুলো অবাধ্য হয়ে ছড়িয়ে আছে, চোখের নিচ কালো, মুখটাও কেমন মলিন। তাকে দেখে নীলের মনের ভিতর কেমন একটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
কিন্তু নীলাশা’র কথা মনে পড়তেই মেহেরিন’র কথাও মনে পড়ল তার। পানিতে ডুবিয়ে তাকে মারতে চেয়েছিল সে। এটা শুনে নীল কর্কশ গলায় বলে উঠে..
– তুমি এখানে কেন?
নীলাশা’র ইচ্ছে করল এখন খুব চিৎকার করে কাঁদতে। নীল কখনো তার সাথে উঁচু গলায় কথা আর আজ এভাবে কথা বলছে। নীলাশা গলার স্বর ভারী হয়ে গেল। সে বলল..
– রাইয়ান!
– কি রাইয়ান!
– একটু দেখতে এসেছিলাম ওকে।
– কেন দেখতে এসেছো, কে হয় সে তোমার।
– নীল! আমি ওর মা!
– মা! তোমার মুখে মা ডাকটা মানায় না। এমন হলে কখনো একটা মায়ের গলায় তুমি ছুরি ধরতে পারতে না।
নীলের চিৎকার শুনে বসার ঘর থেকে সবাই ছুটে আসে। নীলাশা দাঁড়িয়ে কাঁদতে থাকে। নীল রেগে বলে উঠে…
– চলে যাও এখান থেকে, এখানে তোমার কোন জায়গা নেই।
– নীল এমন করবেন না, আমার ছেলেটা কে আমি এতোদিন ধরে দেখি নি। একটু দেখতে দিন!
– না!
সবাই ভাবছে কিছু বলবে কিন্তু কি বলবে। মেহেরিন থাকলে হয়তো সে বলতো বা অভ্র। কিন্তু তারা এখানে নেই। কোথায়? আরিশা মনে পড়ল মেহেরিন নিজের ঘরে আর অভ্রও সেখানে। হয়তো এখানকার আওয়াজ এখনো যায় নি। আরিশা ছুটে সেখানে গেল। এদিকে নীল দরজা বন্ধ করতে গেলো। তখন নির্ঝর এসে বলল..
– আমার আপু’র এখানে থাকার অধিকার আছে!
– তুই
– নির্ঝর তুই!
– তুমি কি ভাবলে আপু, আমাকে না বলে আসলে আমি কিছুই জানতো পারবো না।
– ভালো হয়েছে এসেছো। নিজের বোন কে নিয়ে চলে যাও এখান থেকে।
– চলে যেতে না দিয়ে যেতে এসেছি। এ এখন আপনার বাড়ির সম্মান! তাই এখানেই থাকবে!
– আমি ওকে আমার স্ত্রী বলে মানি না।
নীলাশা ছল ছল চোখে নীলের দিকে তাকাল। নীল আবারো বলল..
– কোন সম্পর্ক নেই ওর আমার সাথে, আর না আছে এই বাড়ির সাথে।
বলেই দরজা আটকে দিতে লাগল। তখন মেহেরিন এসে নীলের হাত ধরে বলল..
– ভাইয়া থামো।
– তুই!
মেহেরিন দরজা খুলল। দেখল নির্ঝর আর নীলাশা দাঁড়িয়ে! নির্ঝর তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। কিন্তু মেহেরিন একবার ও তার দিকে তাকায় নি। মেহেরিন নীলাশা কে বলল..
– ভেতরে এসো ভাবী!
– আদুরী পাগল হয়ে গেছিস।
– না পাগল হয় নি। পাগল হয়েছো তুমি, রেগে আছো তুমি, তোমার বাচ্চা টা কি দোষ করেছে। দেখতে পাচ্ছ না মায়ের জন্য কেঁদে কেঁদে ওর অবস্থা খারাপ হচ্ছে
– আমি পারবো সামলাতে!
– সামলাতে পারবে কিন্তু মায়ের অভাব পূরন করতে পারবে না।
– কি বলতে চাস?
অভ্র নীলকে একপাশে ডেকে বলে..
– আদুরী যা করছে ভেবে করছে। তুই একবার ভাব তোদের এখনো ডির্ভোস হয় নি। নীলাশা ওর অধিকার নিয়ে দাড়ঁ হতেই পারে তখন.. যদি কোর্টে যায় নিজের বাচ্চা’র জন্য তখন। আচ্ছা ধর তোদের ডির্ভোস হয়ে গেল কিন্তু এখনকার যুগে ডির্ভোস’র পর বেশিরভাগই সন্তান তার মা’র কাছেই থাকে তখন। পারবি রাইয়ান কে ছাড়া থাকতে।
– দা তুমিও!
– বুঝাচ্ছি তোকে আর এখনো কিছু না বুঝে থাকলে পরে যা হবার হবে। এখন তুই যা করতে চাস! ডিসেশন তোর…
নীল কিছু না রেগে চলে গেল। মেহেরিন নীলাশা’র হাত ধরেই ঘরের ভেতর আনল। নীলাশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন একগাল হেসে তার দিকে তাকাল। মনে হচ্ছে না এতোদিন আদৌও কিছু হয়েছিল। অতঃপর মেহেরিন তাকে রাইয়ান’র দিকে ইশারা করল। নীলাশা তাকিয়ে দেখে রাইয়ান আরিশা’র কোলে। তাকে দেখে খিলখিলিয়ে হাসছে। রাইয়ান এই প্রথম বার বলল..
– ম…মা!
নীলাশা এই কথা শুনে দৌড়ে তার দিকে কাছে গেলো। তাকে কোলে গিয়ে চুমু খেতে লাগল। রাইয়ান ও তাকে দেখে বেশ খুশি!
মেহেরিন দরজার কাছ থেকে যেতে নিলে নির্ঝর বলে উঠে..
– মেহু পাখি!
মেহেরিন দ্রুত তখন দরজার কাছ থেকে সরে যায়। নির্ঝর বুঝতে পারে মেহেরিন চলে গেছে। তাই সে ও চলে যায়। খুব কষ্ট তার। মনে হচ্ছে বুকের মাঝে বার বার কেউ ছুরি দিয়ে আঘাত করছে। নির্ঝর এসেই গাড়িতে উঠল। অতঃপর গাড়ি চালাতে থাকে। চোখ যেন বার বার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। নির্ঝরের খুব রাগ হচ্ছে, রাগটা নিজের উপর’ই হচ্ছে। কারন ভুল টা তার। আর এই ভুলের কারনে আজ তার ভালোবাসা তার থেকে দুরে। নির্ঝর নিজেকে দোষারোপ করতে লাগলো। নিজের সাথে নিজেই কথা বলতে লাগল। তখন হঠাৎ একটা গাড়ি…
মেহেরিন বাকি সবাই দাঁড়িয়ে দেখছে নীলাশা আর রাইয়ান কে। অনেক দিন পর আজ রাইয়ান’র মুখে হাসি। এই হাসি নীলের থেকে আড়াল হলো না। রাইয়ান’র মুখের হাসি তার কান পর্যন্ত এসেছে। নিজের ছেলের হাসির শব্দ শুনে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে সে। শান্ত আর অরনি ও বেশ খুশি! মেহেরিন’র এক পাশে অভ্র এসে দাঁড়াল। অভ্র বলে উঠে..
– এমনটা কেন করলে আদুরী!
– দা আমি শুধু আমার পরিবার থেকে শত্রুকে দূরে রাখতে চেয়েছিলাম কিন্তু কোন বাচ্চা থেকে তার মা কে না। শান্ত আর অরনি যেমন রাইয়ান ও আমার কাছে তেমন। ওদের কষ্ট আমি নিতে পারি না।
অভ্র হেসে মেহেরিন কে একহাত দিয়ে জরিয়ে ধরল।
#চলবে….
( আজ আর কোন পর্ব দেবো না। কেউ অপেক্ষা করবেন না। ধন্যবাদ সবাইকে! )#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৫৬
নির্ঝর গাড়ি থেকে বের হলো। গাড়িটা একটা গাছের ধাক্কা খেয়েছিল। একটা গাড়ি নির্ঝরের গাড়ির সামনে আসছিল নির্ঝর গাড়ি ঘুরিয়ে ব্রেক করাতে সেটা গাছের সাথে গিয়ে বাড়ি খেয়েছে। নির্ঝরের কপাল খানিকটা কেটে গেছে। মাথাটা এখনো ভন ভন করছে। নির্ঝর কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থাকার পর একটা ফোন করল। অতঃপর তার গার্ড রা এসে তাকে সেখান থেকে নিয়ে গেল।
.
রাতে খান বাড়িতে…
নীলাশা রাইয়ান কে খুব পাড়িয়ে শুইয়ে দিল। নীল তার ঘরে প্রবেশ করল। নীলাশা নীলের দিকে তাকাল কিন্তু তার নীল তার দিকে ফিরেও তাকাল না। অতঃপর নীল আলমারি দিকে এগিয়ে একটা শার্ট নিয়ে ওয়াশরুম এ যেতে নিল তখন নীলাশা বলে উঠে..
– নীল!
নীল দাঁড়িয়ে গেল। নীলাশা বলে উঠে..
– কথা বলবেন না আমার সাথে!
নীল কিছু না বলে ওয়াশরুম এ চলে গেল। নীল বের হয়ে হয়তো তাকে দেখলে রাগ করবে ভেবে নীলাশা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। অতঃপর গেস্ট রুমের দিকে গেল।
মেহেরিন পানি খেতে এসে নীলাশা কে গেস্ট রুমে যেতে দেখল। সে তার পিছন পিছন গেল। নীলাশা ঘরে এসে বিছানার পাশে বসে ডুকরে কেঁদে উঠলো। মেহেরিন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখল নীলাশা কাঁদছে। সে ঘরে প্রবেশ করে, অতঃপর বলে..
– নীল ভাবী!
নীলাশা কান্না থামিয়ে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে। সে উঠে দাঁড়াল। বলল..
– আদুরী!
মেহেরিন নীলাশা’র চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে..
– কাঁদছ কেন? ভাইয়া কিছু বলেছে!
নীলাশা মেহেরিন কে এভাবে দেখে জরিয়ে ধরে তাকে। অতঃপর কাঁদতে থাকে। মেহেরিন নীলাশা’র মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে..
– কাঁদছ কেন? কিছু হয়েছে?
নীলাশা কিছু না আরো জোরে জোরে কাঁদতে থাকে। মেহেরিন কোনমতে তাকে সামলিয়ে বিছানায় বসায়। তাকে পানি খেতে দেয়। বলে..
– খাও!
নীলাশা কাঁপা কাঁপা হাতে পানির গ্লাস টা নিয়ে পানি খেল। অতঃপর মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন তার মাথায় এখনো হাত বুলাচ্ছে। মেহেরিন আবারো বলে..
– ভাইয়া কিছু বলেছে?
– ( নীলাশা মাথা নাড়ায় যার অর্থ না )
– তাহলে কাঁদছ কেন? অন্য কেউ কিছু বলেছে?
– ( নীলাশা আবারো মাথা নাড়িয়ে না বলে )
– তাহলে.. ভাইয়া এমন কিছু করেছে যার কারনে কষ্ট পেয়েছ?
– তো…তোমার ভাইয়া আমার সাথে কথা বলা তো আমার দিকেই তাকচ্ছে না। তাহলে আর কি করবে।
– শান্ত হও। আর কেঁদো না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
– কিছু ঠিক হবে না আদুরী। তোমার ভাইয়া আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না। সত্যি আমি ক্ষমার অযোগ্য! ( মেহেরিন’র হাত দুটো ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে ) তোমার কাছে আমি যত ক্ষমা চাই না তাই কম, অনেক খারাপ করেছি আমি তোমার সাথে। তোমার মন ভেঙ্গে দিয়েছে নির্ঝর! তোমাদের সাথে যা করেছি এরপর আমাকে রাইয়ান’র কাছে থাকতে দিচ্ছ এই অনেক। আদুরী আমি সত্যি বলছি আমি কিছু করবো কিন্তু আমার ছেলে থেকে আমাকে আলাদা করো না। আমি মরে যাবো ওকে ছাড়া।
মেহেরিন একটু হেসে বলে..
– খেয়েছো কিছু!
– আদুরী!
মেহেরিন আবারো নীলাশা’র চোখে জল মুছে বলে..
– খেয়েছ কিছু নাকি না খেয়েই আছো।
– খেয়েছি, আরিশা খাইয়ে দিয়েছিল আমায়।
– তো এখানে কেন? এখানে ঘুমাবে নাকি!
– হ্যাঁ তোমার ভাইয়া কিছু না বললেও আমি বুঝতে পারছি উনি আমার উপর অনেক বিরক্ত! অনেক রেগে আছে, রেগে থাকাটা স্বাভাবিক! কিন্তু মেহেরিন আমি..
– কেঁদো না আর শরীর খারাপ করবে। ঘুমিয়ে পড়ো আমি আসছি!
বলেই মেহেরিন উঠে গেল। নীলাশা বেশ বুঝতে পারল মেহেরিন ওইসব ব্যাপারে কথা বলতে চায় না। হয়তো ভুলে থাকতে চায়। আচ্ছা অন্য কেউ হলেও কি এসব ভুলে থাকতে চাইতো। হয়তো বা না!
এই মেয়েটা এমন কেন? আমি এতো কিছু করার পরও আমাকে এখানে রাখল। এতোটা আগলে রাখল! কিন্তু আমি… আমি কি করলাম ওর সাথে! শুধু কি আমি, আমার পুরো পরিবার ওর সাথে অন্যায় করেছে। এমন একটা অন্যায় যা আমার পুরো জীবন শেষ করে দিতে সক্ষম হয়ে গেল। কোন দিন কি ক্ষমা পাবো আমি!
অতঃপর নীলাশা খাটে কোনে মাথা রেখে নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে লাগল!
.
নীল বের হয়ে নীলাশা কে রুমে দেখল না । সে খোঁজ নেবারও চেষ্টা করল না। রাইয়ান কে দেখল, ঘুমিয়ে আছে সে। মনে হচ্ছে আজ অনেকদিন পর অনেক শান্তিতে ঘুমাচ্ছে সে। নীল আলতো করে রাইয়ান’র কপালে চুমু খেল। অতঃপর হাঁটতে হাঁটতে এসে বেলকনিতে দাঁড়াল।
নীল চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। খুব কষ্ট লাগছে তার। নীলাশা’র সাথে এভাবে কথা বলায় তারও অনেক কষ্ট লেগেছে। নীলাশা’র চোখের পানি শুধু তার চোখের সামনে ভেসে উঠল। মেহেরিন “ভাইয়া” বলে ডাকায় তার ভাবনায় ছেদ ঘটল। পেছনে তাকিয়ে দেখে মেহেরিন দাঁড়িয়ে আছে দুই হাতে দুটো কফির মগ নিয়ে।
– তুই! এতো রাতে, ঘুমাস নি এখনো!
মেহেরিন হেসে নীলের কাছে গেল। অতঃপর তার হাতে একটা কফি মগ দিয়ে বলল..
– যাক কথা বলেছো, আমি তো ভাবলাম তুমি আমার উপর অনেক রেগে আছো। কথা বলবে না বুঝি!
নীল হেসে কফি মগ টা নিয়ে বলল..
– তুই বানিয়েছিস!
– হ্যাঁ ভাবলাম হয়তো তোমার মাথা ব্যাথা করছে তাই নিয়ে এলাম!
– মাথা ব্যথা!
– আমি তো তোমার জন্য মাথা নিয়ে এলাম বাড়িতে তাই!
নীল এবারও কিছু বললো না। মেহেরিন কফি মগে চুমুক দিয়ে বলল..
– তার মানে এটা সত্যি তুমি আমার উপর রেগে আছো।
নীল মেহেরিন’র মাথায় একটা চুমু খেয়ে বলল..
– তোর উপর কখনো রাগ করে থাকতে পারি না।
– তাহলে.. অভিমান!
– হুম!
– কিন্তু তুমি অভিমান টা করে ঠিক করছো না।
– আমি না তুই ঠিক করছিস না, তোর উচিত হয় নি নীলাশা কে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া।
– কেন?
– মানে, ও যদি আবারো তোকে মারার চেষ্টা করে তখন
মেহেরিন হেসে বলল..
– ক্যাট মেরেছিল!
নীল মুখ ঘুরিয়ে ফেলল। মেহেরিন বলল..
– ভাইয়া তুমি কেন এই কথাটা বুঝতে পারছ না। এখন নীলাশা কেন আমার ক্ষতি করবে, কি কারন আছে তার। আমি এবার তার মা আর বাবা কে ফিরিয়ে এনেছি এর পর ও কি সে মারতে চাইবে আমাকে। কি কারন!
– তাই বলে শত্রু কে বিশ্বাস করবি।
– সব শত্রু কে না।
– আমি থাকতে দেবো না ওকে।
– ভাইয়া! আমি কিন্তু ভাবী কে বউ করে এই বাড়িতে এনেছিলাম, যদি বের করার হয় আমিই করবো। আর এখন তো তার সাথে খান বাড়ির সম্মান জরিয়ে আছে। এরপর তো আর কোন কথাই নেয়।
– লয়ার’র সাথে কথা বলে এসেছি। দুদিন পর ডির্ভোস পেপার এসে পড়বে।
– একবার ও কি রাইয়ান’র কথা ভেবেছ।
– তোরা এতো জন তো আছিস। দরকার পড়লে আরো লোক রাখবো।
– একজন মা কি আনতে পারবে!
নীল মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন বলল..
– ভাইয়া! মা’র কষ্ট টা আমি বুঝি! আমার জীবনের খুব কম সময় আমি তার হাত কাটিয়েছিলাম। যেখানে একজন মা সবসময় তার সন্তানের সাথে থাকত সেখানে আমি ১০ টা বছর তাকে ছাড়া কাটিয়েছি। অতঃপর তাকে পেয়েও আবার হারিয়ে ফেলেছি। তুমি কি সবাইকে আমার মতো অভাগী বানাতে চাও!
নীল এসে মেহেরিন’কে জরিয়ে ধরল।
– চুপ! কে বললো তুই অভাগী! আমার বোন তুই। কলিজার টুকরা আমার। বুঝলি!
মেহেরিন হেসে বলল..
– আমি জানি! তবে তুমি..
– আদুরী আমি এটা নিয়ে আর ভাবতে চাই না। এসব ভাবতে আর ইচ্ছা করে না।
– তার মানে.. তুমি এটাই করবে।
– ( মেহেরিন কে ছেড়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়াল )
– তুমি ভুল করছো!
– আচ্ছা তুই বল তুই কি পারবি নির্ঝর কে মেনে নিতে।
– ( মেহেরিন চুপ হয়ে গেল। )
নীল মেহেরিন’র গালে হাত রেখে বলল..
– আমি তোকে হার্ট করতে চাই নি। শুধু বোঝাতে চেয়েছি, কারন একটাই যে একবার বিশ্বাস ভাঙে তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না। তুই যেখানে আমিও সেখানে আদুরী!
মেহেরিন হেসে নীলের হাত ধরে বলল..
– তুমি আবারো ভুল বললে। তুমি যেখানে আমি সেখানে না। কারন একটাই রাইয়ান! তোমার জন্য ভাবী গুরুত্বপূর্ণ না হলেও রাইয়ান’র জন্য সে তার অবিভক্ত অংশ! আর এই অবিভক্ত কে বিভক্ত করলে ক্ষতিটা রাইয়ান’র হবে। তুমিও তো থেকেছো মা কে ছাড়া। জানো তো কি কষ্ট হয়!
নীল চুপ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হেসে বলল..
– আমার ছোট বোনটা অনেক ভালো ভালো কথা বলতে শিখে গেছে।
– আর আমার ভাইয়া টা ঠিক ভুল বিবেচনা করা ভুলে গেছে।
– মন যা চায় তা করা কি ঠিক না।
– ঠিক! তবে তোমার মন না তোমার রাগ এটা চায়। আর তুমি যত তাড়াতাড়ি এটা বুঝবে তত তাড়াতাড়ি সব ঠিক হবে!
বলেই মেহেরিন বেরিয়ে এলো!
.
মেহেরিন ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দেওয়াল ঘেঁষে বসে পড়ল। তার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। নির্ঝরের কথাটা একদম তার বুকে গিয়ে বেঁধেছে। সে কিছুতেই ভুলতে পারছে না এই কথা। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। ইচ্ছে করছে খুব জোরে জোরে কাঁদতে। কিন্তু তার কান্না করা যে বারন। সে কাঁদতে শিখে নি। এখানেই তার বেশি কষ্ট। মানুষ যদি না’ই কাঁদতে পারে তাহলে তার কষ্ট কখনো কমে না!
ফোনে হঠাৎ করে টুং টুং শব্দ এলো। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল নির্ঝরের মেসেজ। ইদানিং সে বার বার মেসেজ করে মেহেরিন কে। কিন্তু মেহেরিন এসব দেখে না। সে দেখতে চায় না। এগুলো তাকে দুর্বল করে দিবে। তার মন তাকে বারন কতে দিয়েছে ভালোবাসতে। এখন সেখানে সে’ই বা কি করতে পারে!
মেহেরিন ফোনটা বন্ধ করে দরজার হেলান দিয়ে বসে পরল। ওদিকে নির্ঝর সারারাত বসে বসে মেহেরিন কে মেসেজ দিতে লাগল। আশা করছে হয়তো বা মেহেরিন রেগেই তাকে একটু বকাঝকা করবে কিন্তু কোন উওর আসল না ওপাশ থেকে। নির্ঝর সারারাত মেসেজের’র রিপ্লাই’র আসায় বসে থাকল।
ইচ্ছে তো করে মেহেরিন’র কাছে যেতে, কিন্তু কি মুখ নিয়ে যাবে সে। তার অপরাধ বোধ তাকে পিছিয়ে দিচ্ছে মেহেরিন’র কাছে যেতে। বুঝতে চাইছে না তাকে!
.
নীল ঘর থেকে বের হলো, নীলাশা কে খুঁজতেই বের হলো। কোথায় গেলো সে! অতঃপর গেস্ট রুমের দিকে যেতেই দেখল নীলাশা খাটের কোনে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। নীল এসে নীলাশা’র সামনে বসে তাকে দেখতে লাগল। নীলাশা প্রত্যেকটা বাচ্চামি করার কথা তার মনে পড়ল। সেই রাতে আই লাভ নিয়ে কিই না করল সে। আচ্ছা এসব কি শুধুই অভিনয় ছিল। নীলাশা কি কখনো ভালোবাসি নি তাকে। শুধুই কি ব্যবহার করল।
নীল উঠে চলে যেতে নিল কিন্তু আবারো এসে তাকে বিছানায় শুইয়ে দিল। অতঃপর চলে গেলো। নীল যেতেই নীলাশা উঠে বসল। নীল তাকে এখনো ভালোবাসে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তার ঘৃণা তার রাগ সেই ভালোবাসায় চাপা পড়ে গেছে। আর এটার জন্য একমাত্র সে নিজেই দায়ী!
.
সকালে অভ্র আসল মেহেরিন’র ঘরে, কিন্তু সমস্যা হলো দরজায়! সে দরজা খোলা দেখছে কিন্তু খুলতে পারছে না। ব্যাপার টা কি হলো এখানে। অভ্র’র কাছে মনে হলো দরজার ওপাশে হয়তো কেউ বসে আছে যার কারনে দরজা খোলা যাচ্ছে না। আর এটা মেহেরিন এতে তার সন্দেহ নেই।
অতঃপর অভ্র অন্য দরজা দিয়ে তার রুমে এলো। এই দরজা টা বুকসেলফ এর ওপাশে ছিল। দরজা টা’র খবর শুধু তারা ভাই বোনরা ছাড়া আর কেউ জানে না। অভ্র এসে দেখল মেহেরিন আসলেই দরজায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। সারারাত এভাবেই ঘুমিয়ে ছিল বোধহয়!
অভ্র তাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গেল। কিন্তু মেহেরিন’র ঘুম বরাবর গভীর তাই সে আর উঠলো না। অতঃপর তার গায়ে চাদর টেনে কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বের হতে যাবে তখন কিছু একটা তার পায়ে বাড়ি খেলো। অভ্র নিচে তাকিয়ে দেখে ফোন!
এটা তো মেহেরিন’র ফোন কিন্তু ফোন টা অফ কেন। অভ্র ফোনটা অন করতেই অনেকগুলো মেসেজ এলো। অতঃপর অভ্র তাকিয়ে দেখল সব গুলো মেসেজ’ই নির্ঝরের! তার আর বুঝতে বাকি রইল না মেহেরিন কেন সারারাত এখানে এইভাবে ঘুমাল। সে বেশ বুঝতে পারছে তার বোন কষ্টে আছে কিন্তু আদুরী এই কষ্ট কাউকে দেখাতে চায় না। এরকম নিঃসঙ্গ কষ্ট মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়। অভ্র বেশ দেখতে পাচ্ছে তার বোন তিলে তিলে শেষ শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে কি পারবে তার বোন কে এভাবে শেষ হতে দেখতে!
#চলবে….
(