Game 2 পর্ব -২৫+২৬

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_25+26

নির্ঝর তার মেহু পাখির পিছু করতে করতে সুইমিংপুলে এলো। কিন্তু মেহেরিন কে সেখানে পেলো না সে। দেখল তার বিড়াল বাচ্চা সুইমিংপুলের পাশে। নির্ঝর বিড়াল বাচ্চা টাকে কোলে তুলতে যাবে তখন দেখল মেহেরিন পানিতে ভাসছে। নির্ঝর দ্রুত পানিতে নেমে মেহেরিন কে ধরে উপরে তুলে আনল। মেহেরিন’র জ্ঞান নেই। নির্ঝর পাগলের মতো মেহেরিন কে ডাকতে লাগলো। নির্ঝর মেহেরিন’কে উল্টো করে শুইয়ে দিয়ে পিঠে চাপ দিতে লাগল যাতে তার পেট থেকে পানি বের হয়ে যায়। কিছুক্ষন এরকম করার পর পানি বের হলো কিন্তু মেহেরিন’র জ্ঞান ফিরল না। নির্ঝর তার কোলের মাঝে মেহেরিন কে নিয়ে তার হাত ঘসতে লাগল আর দা দা বলে চিৎকার করতে লাগল। নিহা কেও ডেকেছে কিন্তু ভেতরে গানের আওয়াজের কারনে কেউই তার ডাক শুনতে পারি নি। নির্ঝর মেহেরিন’র গাল ধরে বলতে লাগলো..

– মেহু পাখি এই মেহু পাখি কথা বলো না। মেহু পাখি তুমি মজা করছো নাকি। দেখো চিন্তা হচ্ছে হচ্ছে এবার। কথা বলো না এই মেহু পাখি!

কিন্তু মেহেরিন’র কোনো জবাব এলো না।সে মেহেরিন কে এখানে একা রেখেও যেতে পারছে না। সে এবার মেহেরিন’র পালস চলছে তবে খুব ধীরে ভাবে। নির্ঝরের চিন্তা এবার বাড়তে লাগলো। মেহেরিন’র হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। নির্ঝর আর কিছু না ভেবে মেহেরিন’র মুখে মুখ লাগিয়ে শ্বাস দিতে লাগল। আবার হাত পাও ঘসতে লাগলো। আবারো শ্বাস দিতে লাগল আর বার বার হাত পা ঘষতে লাগলো। এক পর্যায়ে মেহেরিন’র জ্ঞান ফিরে এলো। জ্ঞান ফিরার পর নির্ঝর কে সে তার অনেক কাছে দেখতে পেলো। নির্ঝর তাকে শ্বাস দিচ্ছিল। মেহেরিন চট করে উঠে বসে কাশতে লাগল। নির্ঝর বুঝতে পারছে না মেহেরিন কি ভাবল। এদিকে ইহান মেহেরিন কে ডাকতে ডাকতে সুইমিংপুলের কাছে এসে পড়ে। দেখে মেহেরিন ভেজা অবস্থায় নির্ঝরের কোলে। ইহান এটা দেখা মাত্রই দৌড়ে ভিতরে গিয়ে সবাই কে ডেকে আবারো আসলো। অতঃপর দা এসে মেহেরিন কে কোলে তুলে ভিতরে নিয়ে গেল। ডাক্তার কে ডাকা হলো। সে এসে মেহেরিন কে চেক আপ করলো।

মেহেরিন এখন তার ঘরে রেস্ট নিচ্ছে। অভ্র, আহিয়ান, নীল আর নিশি সবাই ওখানে। নির্ঝর মাত্র চেঞ্জ করে বের হয়ে দেখে নিহা তার রুমে নক করছে। সে তোয়ালে নিয়ে মাথা মুছতে মুছতে নিহা কে ভেতরে আসতে বলল। নিহা এসে মুচকি হেসে তাকে বলল..

– ধন্যবাদ নির্ঝর! আর তোর জন্য’ই আমার জান টা বেঁচে গেল।

– দি ও আমারও মেহু পাখি ভুলে যেও না। এখন কেমন আছে।

– ঠিক আছে ঘুমাচ্ছে। সবাই ওখানে!

– কিছু বলেছে কিভাবে এসব হলো।

– হুম কেউ ওকে টেনে সুইমিংপুলে পানিতে নিয়ে গেল। অতঃপর তার ডুবিয়ে মারতে চেয়েছিল। তুই কাউকে দেখেছিলে।

– না আমি কাউকে দেখেনি। আমি তোর ওর পিছু পিছু গিয়েছিলাম তখন ওকে পানিতে দেখি। কিন্তু দি এটা কিভাবে সম্ভব! কেউ একজন এখানে এই বাড়িতে এসেই মেহু পাখি কে মারার চেষ্টা করলো আর মেহেরিন কিছু করতে পারল না। আমি যতটুকু জানি ও তো এমন না। সবকিছুতেই পারদর্শী ও। তাহলে এটা..

– কারন একটাই অধরা খান!

– অধরা খান!

– নির্ঝর এটা তো তুই জানিস যে মেহেরিন’র সব অভ্যাস’ই আমার মায়ের মতো। মার সবকিছু নকল করতো ও। আমার মা যখন খুব ছোট ছিল তখন আমার নানা আর নানু মা কে নিয়ে সমুদ্রে ঘুরতে যায়। সেখানে আমার মায়ের সামনেই আমার নানু পানিতে ডুবে মারা যায়। এর কারন আমার নানু সাঁতার জানতো না আর মা তখন এতোটাই ছোট ছিল যে সেও কিছু করতে পারি নি কিন্তু ওই পানিতে ডুবে মরাটা আমার মায়ের মনে ভয় সৃষ্টি করে দিয়েছিল যার কারনে আমার মা কখনো সাঁতার শিখতে পারে নি। আর মেহেরিন যেহেতু সবসময় মায়ের নকল করতো তাই সেও পানিকে খুব ভয় পেতে লাগলো। আর এই ভয়ের কারনে সেও কখনো সাঁতার শিখতে পারে নি। আর আমরাও কখনো জোর করেনি। সত্যি বলতে ওকে আমরা কখনোই জোর করতাম না। ও যা শিখেছে নিজের ইচ্ছায় কখনো কিছুতে জোর করা লাগে নি। কিন্তু কথা হলো ওর এই দুর্বলতা’র কথা ওর শত্রু রা জানল কিভাবে?

নির্ঝর ভাবতে লাগল সেদিন মেহেরিনকে খুব জোর করেই বিচে নিয়ে গিয়েছিল সে। মেহেরিন যেতে চায় নি তাহলে এটার কারন কি ওর এই ভয়। নিহা বলে উঠে..
– কি ভাবছিস!

– ভাবছি এখন কি করবে। সবাই জানে মেহেরিন বর্ষা খান’র কোনো দুর্বলতা নেই। কিন্তু এখন তারা যখন জেনেছে পানিতে ওর ভয় এই সুযোগ কি তারা ছেড়ে দিবে ভেবেছো।

– জানি কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু..
তখন ডেভিল এসে উপস্থিত হলো। নিহা তাকে জিজ্ঞেস করল..
– কোন খবর পেলে কে এসেছিল।

– না ম্যাম এরকম কিছু পায়নি।

– পাও নি মানে! এটা কিভাবে হতে পারে। কেউ না কেউ তো এসেছিল তাই না। নাহলে মেহেরিনকে কে মারার চেষ্টা করবে। সিসি টিভি ফুটেজ এ কাউকে দেখতে পাও নি।

– ম্যাম আসলে..

– কি?

– সিসি টিভি ফুটেজ তখনকার জন্য বন্ধ ছিল।

নির্ঝর উঠে দাঁড়িয়ে বলল..
– কি বললে এটা কিভাবে সম্ভব। তোমরা কোথায় ছিলে?

– ম্যাম এটা হ্যাক করে বন্ধ করা হয়েছিল।

নিহা রেগে পাশে থাকা টি টেবিলে জোরে লাথি মেরে বলল..
– কি হচ্ছে কি এসব। একজন এই বাড়িতে ঢুকে আমার বোনের উপর আক্রমণ করল কিন্তু তার কোনো প্রমান নেই এটা কিভাবে সম্ভব!

– দি শান্ত হও।

– কি করে শান্ত হবো তুই বল। কি করে..

– আচ্ছা দি হতেও তো পারে এটা বাড়ির কারোর কাজ!

নিহা ভ্রু কুঁচকে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বলে..
– তুই ক্যাট’র কথা বলছিস!

– না মানে দি ও তো এরকম আগেও করতে চেয়েছিল!

– নির্ঝর সেটা আগে এখন না। আর আমি ওকে দেখেছি পার্টির পুরোটা সময় রাইয়ান কে কোলে নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছে ও। এছাড়াও আগের ক্যাট আর এখনকার ক্যাট এর মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। ক্যাট এমনটা করবে না।

– তাহলে ভুলে যাও এইকথা।

– মানে!

– মানে দেখো কে এমনটা করেছে এটা জানো না আর না পেলে কোন প্রমান তাহলে এটার কথা ভেবে লাভ কি যেটার কোনো খোঁজ’ই তুমি পাবে না।

– তাহলে কি বসে থাকবো।

– আমি কখন বললাম এই কথা। অন্য কিছু ভাবো। মেহু পাখি’র এই ভয় দূর করো। ওকে সাঁতার শেখাও যাতে ওর শত্রুরা ওর এই দুর্বলতা কে কাজে লাগাতে না পারে।

– এটার চেষ্টা যে করি নি তা না কিন্তু..

– দি তাহলে এটা আমার ওপর ছেড়ে দাও।

– তুই! তুই পারবি এটা করতে..

– কেন পারবো না আমি জানি মেহু পাখি কে কিভাবে সাঁতার শেখাতে হবে। এতো দিনে এতটুকু হলেও ওকে চিনেছি আমি।

– ঠিক আছে তাহলে দেখ যদি পারিস!

জবাবে নির্ঝর বাঁকা হাসি দেয়।
.
দুদিন পর..

মেহেরিন ঘুমিয়ে ছিল, হঠাৎ করেই তার মনে হলো সে পানিতে ভাসছে। সাথে সাথে তার ঘুম ভেঙ্গে গেল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে সে ‌ সুইমিংপুলে! তার চারপাশে শুধু পানি আর পানি। মেহেরিন এবার চিৎকার করে অভ্র’কে ডাকতে লাগলো। অভ্র তার ডাক শুনে দৌড়ে আসতে নিল তখন নির্ঝর তাকে আটকে দিল। মেহেরিন হাবুডুবু খেতে খেতে অভ্র কে ডাকতে লাগলো। তখন নির্ঝর কফি হাতে নিয়ে তার কাছে এসে তার দিকে একটা সুইমিং রিং ফেলে বলে…

– এই ধরো ডুববে না তুমি!

মেহেরিন কোনোমতে সেটা ধরে ভেসে থাকে। কিন্তু তবুও ডাকতে থাকে অভ্র কে। নির্ঝর বলে উঠে..

– চিৎকার করা বন্ধ করো, ডুববে না তুমি!

– আপনি..( তখন অভ্র এসে পড়ে ) দা আমাকে বের করো এখান থেকে। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি থাকতে পারছি না এখানে!

– কেন তুমি নিজে বের হয়ে এসো।

– আমি সাঁতার কাটতে পারি না জানেন না আপনি।

– তো কি হয়েছে। তোমার কাছে তো সুইমিং রিং আছে। সেটা ধরে বেরিয়ে আসো।

– পারবো না। দা এখনো তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবে।

নির্ঝর বলে উঠে..
– এতো ভিতু কেন তুমি। ডুবে যাবে নাকি। সব ধরনের সার্পোট দিচ্ছি তাও বেরিয়ে আসতে পারছো না।

মেহেরিন এবার চুপ হয়ে গেল। নির্ঝর এবার হেসে বলতে লাগল..
– আমি জানতাম মেহেরিন বর্ষা খান কোন কিছু তেই ভয় পায় না কিন্তু তুমি তো দেখছি অনেক বেশি ভিতু হয়ে গেছো। সাঁতার একটা সহজ জিনিস আর এটা শিখতে পারো না।

– না জেনে কিছু বলতে নেই জানেন না।

কফির মগে চুমুক দিয়ে..
– জানি আমি সব!

– তারপরও এই কথা কেন বলছেন! অপমান করছেন আমাকে!

– অবশ্যই! মেহেরিন বর্ষা খান এই সহজ একটা জিনিস পারে না ব্যাপারটা একটু হাস্যকর নয় নাকি!

– আপনি পারেন!

– অবশ্যই এই সহজ একটা জিনিস আমি পারবো না কেন। তোমার মতো আর ভিতু নই আমি।

– বার বার ভিতু বলবেন না আমায়।

– আচ্ছা বলবো না তাহলে প্রমাণ করো আমায়!

– কি প্রমাণ!

– আমার সাথে Swimming race Competition করো। আর যদি তুমি হেরে যাও তাহলে মেনে নিবে যে তুমি ভিতু

– আর যদি জিতে যাই তখন..

– যা চাইবে তাই হবে!

মেহেরিন বাঁকা হাসি দিয়ে বলল..
– তাহলে তৈরি হন। ঠিক এক সপ্তাহ পর আপনার আর আমার সুইমিং রেস হবে। আর আপনাকে আমি দেখিয়ে দেবো মেহেরিন বর্ষা খান আসলে কি!

– আমিও অপেক্ষায় থাকবো!
বলেই কফি মগে চুমুক দিয়ে নির্ঝর চলে যায়। তখন অভ্র এসে মেহেরিন কে পুল থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

#চলবে….

[ আরেকটা পর্ব দেবার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ সবাইকে!]
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৬

মেহেরিন আজ প্রথম নামবে সাঁতার শিখতে! পানিতে নামতে না নামতেই তার অবস্থা খারাপ। পানির দিকে তাকিয়ে পানিকে তার দৈত্য বলে মনে হচ্ছে। তার মাথা যেন ঘুরছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ নির্ঝরের বলা কথা গুলো তার কানে বাজল। নির্ঝর তাকে অপমান করেছে এটা তার ইগোর প্রশ্ন। আর ইগো সবসময় জীবনের চেয়ে বড় হয়। এটাই সত্যি। কেউ কখনো তার ইগো হার্ট সহ্য করে না। মেহেরিন’র ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে। যে করেই হোক নির্ঝর কে হারাতে হবে তার। অতঃপর চোখ বন্ধ করে তখন তার মা’র বলা একটা কথা তার মনে পরে। মা বলতো..

– সাফল্য হচ্ছে মাছির মতো যা সারাক্ষণ তোমার চারদিকে ভন ভন করে কিন্তু তুমি তাকে ছুঁতে পারো না। ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত লাগতো তখন। এতো কিছু থাকতে কি না শেষে মাছি দিয়ে মা আমাকে কথাটা বোঝাল। আসলে ব্যাপারটা এটা ছিল আমি তখন বসে বই পড়েছিলাম। তখন একটা মাছি খুব বিরক্ত করছিল আমায়। আর বই পড়ার সময় খুব ছোট আওয়াজ ও যেন মাথা গরম করিয়ে দেয়। আমি রেগে সেই মাছি টাকে ধরার চেষ্টা করি। কিন্তু যতই ভাবছি ধরবো ধরবো তখনই যেন সেটা আমার হাতে এসেও চলে যাচ্ছিল। বলতে গেলে আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছিল। তখন আমার কান্ড দেখে মা হেসে আমাকে সেই কথাটা বলেছিলো। তখন আমি মাছির উপর রেগে মার কোলে গিয়ে বসেছিলাম।
মা তখন হেসে আমায় বললেন..
– সফলতা পেতে হলে যেমন পরিশ্রম দরকার তেমনি দরকার বুদ্ধিমত্তা ও নাহলে সেটা সম্ভব না বুঝলে!

অতঃপর তিনি আমার নাক টান দিলেন। মা’র এতো বড় কথা তখন আমার মাথায় ঢুকি নি কিন্তু শুধু এতটুকু বুঝেছিলাম যে মা আমাকে বুদ্ধি করে মাছি টা ধরতে বলেছে। তখন আমি ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করে একটা প্লেটে রেখে ওখানে রাখলাম। আর মাছি তখন সেই মিষ্টি’র লোভে পড়ে মিষ্টি খেতে লাগল। আমি তখন ঢাকনা দিয়ে সেটা আটকে ফেললাম। মা আমার এই কান্ড দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন। আমি তখন ফিক করে হেসে দিয়ে বলি..

– তুমি কি এই বুদ্ধি টার কথা বলছিলে!

মা তখন কিঞ্চিত হেসে আমার মাথায় চুমু খেয়ে বলেন..

– শিক্ষা টা এটাই ছিল তবে যুক্তি টা ভিন্ন!
আমি তখনও এই কথাটা বুঝতে পারি না আর না আজ। কারন আমার মাথায় এসব ঢুকতে চায় না।

অতঃপর চোখ মেলে তাকিয়ে মেহেরিন একটা মুচকি হাসি দেয়। নিহা আর নিশি দুজনেই পানিতে নেমে তাকে ধরে ধরে নামায়। অতঃপর দুই বোন মিলে তাকে সাঁতার শিখতে সাহায্য করে। মেহেরিন খুব ভালো ভাবে সাঁতার কাটতে শুরু করে। খুব প্র্যাকটিস করতে থাকে সে।

মেহেরিন সাঁতার শিখছে এটা দেখে নিহা আর অভ্র খুব খুশি। তারা দুজন এতোদিন যা করতে পারে নি নির্ঝর আজ তা করল। কিন্তু ভয় একটাই মেহেরিন যদি জিতে যায় তখন সে কি চাইবে নির্ঝর থেকে। এসব ভাবনা যে নির্ঝরের নেই তা না। সে ছাদের গ্রিলের উপর বসে এই কথাই ভাবছিল। তখন ইহান এসে তার ঘাড়ে হাত রাখল। নির্ঝর হেসে তার দিকে তাকাতেই ইহান বলল…
– মেহেরিন জিতলে কি হবে জানিস তো!

– জানি! ও বলবে আর কখনো এই বাড়িতে আসতে না। আমাকে সহ্য করতে পারে না ও।

– তাহলে ওকে তুই কেন এই কথা বললি।

– কারন আর কিছু না হোক এই কারনেই ও সাঁতার শিখবে। বুঝলি!

– জানি না কি হবে।

– যা হবে ভালোর জন্য’ই হবে!
বলেই মুচকি হাসল নির্ঝর!

অবশেষে আসল সেদিন! মেহেরিন আর নির্ঝর দু’জনেই প্রস্তুত! দু রাউন্ড দিয়ে যে আগে আসবে সেই জিতবে। মেহেরিন এই কয়েকদিন খুব ভালো ভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে তাই আর হারার কোনো প্রশ্ন’ই উঠে না। অতঃপর রেস শুরু হলো। নির্ঝর আর মেহেরিন একসাথেই লাফ দিলো পুলে। মেহেরিন কোনদিকে নজর না দিয়ে দ্রুত এক রাউন্ড দিয়ে পরের রাউন্ডে যেতে দেখে নির্ঝর তার আগে চলে গেছে। তখন মেহেরিন যত দ্রুত সম্ভব তাড়াতাড়ি করে সাঁতার কাটতে থাকে। আর নির্ঝরের পিছনে ফেলে এগিয়ে যায় সে। জিতে যায় এই রেস। ইহান, রোদ্দুর আর কাব্য হাত তালি দেয়। শান্ত আর অরনি লাফিয়ে উঠে। তবে এখানে অরনি নির্ঝরের দলে ছিল। খানিকক্ষণ আগে এই কারনেই বেশ ঝগড়া লেগেছিল তার শান্ত’র সাথে। তবে যাই হোক মেহেরিন জিতেছে বলে সেও সবার সাথে খুশিতে লাফিয়ে উঠে।

মেহেরিন পুল থেকে উঠে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে নির্ঝরের দিকে। তার কেন জানি মনে হচ্ছে নির্ঝর ইচ্ছে করেই হেরে গেল। নির্ঝর তার দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে উঠে এলো। তার হাসি দেখে মনে হচ্ছে সে এটাই চেয়েছিল।
অতঃপর নির্ঝর চেঞ্জ করে এসে বসার পর’ই মেহেরিন এলো। নিহা আর অভ্র ভাবছে মেহেরিন কি আবার চাইবে নির্ঝরের থেকে। হঠাৎ নির্ঝর’ই বলে উঠে..

– মেহু পাখি কি চাইবে তুমি আমার কাছে!

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে বলে..
– আপনার কাছে কেন চাইবো আমি!
বলেই অভ্র’র কাছে চলে গেল আর তার কাছে বিরিয়ানি খাবার জন্য আবদার করল। সবাই এতে বেশ অবাক হলো। আর সবচেয়ে বেশি অবাক নির্ঝর নিজে। মেহেরিন কেন কিছু বললো না এটা সে বুঝতেই পারল না।
.
মেহেরিন একা দাঁড়িয়ে আছে ডান্স রুমে। পরিবেশ টা খুব নিরব খুব শান্ত। হঠাৎ করেই একটা গানের সুর বাজতে শুরু করল। মেহেরিন পেছন তাকাতে যাবে তখষ হুট করেই উপর থাকা সাদা পর্দা গুলা তার সামনে এসে পরল। মেহেরিন পর্দা সরিয়ে দেখতে যাবে তখন হঠাৎ করে কেউ তার কোমর ধরে নিজের কাছে টানল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নির্ঝর! অতঃপর গান শুরু হয়…

মেহেরিন নির্ঝরকে ছেড়ে চলে যেতে নেয় তখন নির্ঝর মেহেরিন কে টেনে নিজের কাছে আনে। অতঃপর নাচতে শুরু!
Itni mohabbat karo na
Main doob na jaun kahi
Vaapas kinare pe aana
Main bhool na jaun kahi
Dekha jabse chehra tera
Main toh hafton se soya nahi
Bol do na zara
Dil mein jo hai chipa
Main kisi se kahunga nahi
Main kisi se kahunga nahi
Mujhe neend aati nahi hai akele
Khwabon mein aaya karo
Nahi chal sakunga tumhare bina main
Mera tum sahaara bano
Ik tumhein chahne ke alaawa
Aur kuch humse hoga nahi
Bol do na zara
Dil mein jo hai chipa
Main kisi se kahunga nahi
Main kisi se kahunga nahi
Humari kami tumko mehsoos hogi
Bheega dengi jab baarishe
Main bhar karke laya hoon
Ankhon mein apni
Adhoori si kuch khwahishe
Rooh se chaahne wale aashiq
Baatein jismo ki karte nahi
Bol do na zara
Dil mein jo hai chipa
Main kisi se kahunga nahi
Bol do na zara
Dil mein jo hai chipa
Main kisi se kahunga nahi
Main kisi se kahunga nahi

পুরো নাচ তারা খুব সুন্দর করে নাচে। নির্ঝর তার কপালের সাথে মেহেরিন’র কপাল ঠেকিয়ে রেখেছে। মেহেরিন তাকে ছেড়ে চলে যেতে নিলে নির্ঝর ওর বাহু ধরে নিজের কাছে টেনে রাখে। মেহেরিন বলে উঠে..

– কি হচ্ছে ছাড়ুন আমায়!

– মেহু পাখি!

মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝরের চোখ তাকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু কি? নির্ঝর বলে উঠে..
– তুমি আমার থেকে কিছু চাইলে না কেন?

– আপনাকে বলতে আমি বাধ্য নই!
বলেই মেহেরিন চলে যেতে নেয়। নির্ঝর মেহেরিন’কে টেনে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে নেয়। মেহেরিন খুব অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নির্ঝর বলে উঠে..
– পালিয়ে যাচ্ছো কেন?

– পালাবো কেন?

– আচ্ছা তাহলে তুমি পালাচ্ছো না।

– না তো!

নির্ঝর হঠাৎ মেহেরিন’র কোমর ধরে তার কাছে টেনে আনে। মেহেরিন জানি কেমন চুপচাপ আজ। এদিকে মেহেরিন কাঁপছে। নির্ঝরের কাছে আসায় তার শরীর শিউরে উঠছে। এরকম অনুভুতি আর কখনো হয় নি তার সাথে। নির্ঝর এক হাত মেহেরিন’র কোমর ধরে আছে অন্য হাত দিয়ে সে মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রাখে। মেহেরিন সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নেয়। নির্ঝর মেহেরিন’র এরকম আচরণ দেখে অনেকটা অবাক হলো। নির্ঝর মেহেরিন’র আরো কাছে আসল। মেহেরিন’র গালের নিচে খুব আলতো করে তাকে কিস করলো। কিন্তু মেহেরিন কিছু বলে নি। সে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর মেহেরিন’র কপালে আলতো করে কিস করল। মেহেরিন এবার চোখ মেলে বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর মেহেরিন’র আরো কাছে আসল। মেহেরিন তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। সে তার ঠোঁটের দিকে’ই আগাচ্ছে। অতঃপর মেহেরিন আবারো চোখ বন্ধ করে নেয়। নির্ঝর মেহেরিন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে..

– তুমি আমার প্রেমে পড়ে গেছো মেহু পাখি!

মেহেরিন এই কথা শুনে নির্ঝর কে সজোরে একটা ধাক্কা দেয়। নির্ঝর দূরে সরে গিয়ে হেসে উঠে। মেহেরিন সেখানে আর না দাঁড়িয়ে চলে আসে সেখান থেকে। নির্ঝর হাসতে হাসতে নিচে বসে পরে। অতঃপর বলে..

– মেহু পাখি আমার মনের খাঁচায় বন্দী হয়ে গেলে তুমি অবশেষে!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here