Game 2 পর্ব -২৭+২৮

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_27+28

মেহেরিন দৌড়ে ঘরে চলে আসল। অতঃপর বিছানায় বসে শান্ত হবার চেষ্টা করল। তার পুরো শরীর এখনো কাঁপছে। শান্ত হতে পারছে না। যত’ই শান্ত হবার তত’ই‌ যেন বেশ অস্থির হয়ে পড়ছে সে। চোখ বন্ধ করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে শান্ত হবার চেষ্টা করতে লাগল কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই যেন নির্ঝরের সব ছোঁয়া তার সামনে ভেসে উঠছে। সে কিছুতেই শান্ত হতে পারছে না।

মেহেরিন এবার দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ পায়চারি করতে লাগলো কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না। কি জানি নেই তার কাছে। কিছু হারিয়ে ফেলেছে সে। ঠিক এমনটাই লাগছে তার কাছে। ঢক ঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেলল সে। অতঃপর বের হয়ে গেল ঘর থেকে।

এদিকে নির্ঝর খুশিতে নাচতে নাচতে আসছিল। হঠাৎ করেই কেউ তাকে জরিয়ে ধরল। এতোটাই খুশি ছিল যে এটা খেয়াল’ই করে নি কে তাকে জরিয়ে ধরল। অতঃপর তার যখন বোধ হলো সে তাকে না ছুঁয়ে একটু অনুভব করতেই বুঝতে পারল এটা তার মেহু পাখি।

নির্ঝর চমকে উঠলো। মেহেরিন তাকে জড়িয়ে ধরেছে এটা আদৌ সম্ভব। তাকেই ধরতে এসেছিল নাকি ভুলে ধরল।‌ নির্ঝর কিছুক্ষণ ও ভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। অতঃপর খেয়াল করল মেহু পাখি খুব জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। নির্ঝর তার মাথায় হাত রেখে বোলাতে বোলাতে বললো..

– মেহু পাখি ঠিক আছো তুমি!

– হাম…!

নির্ঝর মজা করে বললো..
– তাহলে আমায় জরিয়ে ধরলে যে!

মেহেরিন দ্রুত সরে এলো নির্ঝরের কাছ থেকে। নির্ঝর ও বেশ অবাক হলো।‌ এই কথাটা বলায় ছেড়েই দিল।‌‌ মেহেরিন কিছুক্ষণ নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে রইল। নিজেই বোঝার চেষ্টা করল কি করছিল সে এতোক্ষণ!
অতঃপর সেখান থেকে চলে এলো। নির্ঝরের মাথায় এখন এটা ঢুকল না মেহেরিন এমনটা কেন করল। এদিকে মেহেরিন যে নিজেই বুঝতে পারছে না সে কি চায়। তার মন চাইলো বলে সে নির্ঝরকে জরিয়ে ধরল কিন্তু মন কেন এটা চাইল সে বুঝতেই পারল না। আর এখন বোঝার কোন প্রশ্ন’ই উঠে না। এতো জটিল কথা মেহেরিন’র মাথায় ঢুকবে বলে তার মনে হয় না। শুধু একটাই কথা ওর মন চেয়েছে ব্যস। এতো টুকু’ই যথেষ্ট! এখন মনের কথা বললে সেও খুব আজব। মন নিজেও জানে না যে তার কখন কি চাই। মন কখনো সঠিক আর ভুলের মাঝে তফাৎ বুঝে না। তার কাছে যেটা ঠিক মনে হয় সেটার সে করতে চায়। কিন্তু মেহেরিন’র কাছে এটা বোকামি বলে মনে হচ্ছে। কারন বোকা প্রকৃতির লোক মনের কথা শুনে বলে তার ধারনা। সে সবসময় তার মস্তিষ্ক কে প্রাধান্য দেয় আর এখনও সেটাই করবে। নির্ঝরের ব্যাপারে আর ভাবনে না বলে ঠিক করে।

এদিকে নির্ঝরে ঘরে এসে খাটের উপর বসে পড়ে। অতঃপর তার ফোনটা বের করে মেহেরিন’র ছবি গুলো দেখতে থাকে। কথাও বলতে থাকে আবার। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে নির্ঝরের। খুব ভালো লাগে এভাবে মেহেরিন’র ছবি গুলোর সাথে কথা বলতে। এর অবশ্য একটা কারন আছে। এভাবে সে তার সমস্ত অনুভূতি গুলো মেহেরিন কে বলতে থাকে। মেহেরিন খুব মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনে বলে তার ধারনা। নাহলে বাস্তবের মেহেরিন যেই উড়নচন্ডী। তার একটা কথা শোনার প্রয়াস নেই তার। তবে আজকের মেহেরিনকে কিছুটা অন্যরকম মনে হয়েছে তার। খুব মিষ্টি লাগে এমন মেহেরিন কে।

রাতের বেলা..
মেহেরিন সারাদিন আর যাই’ই করুক না কেন ঘুমকে কখনো ভুলে না সে। তার ঘুম কখনো হারাম হয় না। আজও তার ব্যতিক্রম হয় নি। সারাদিন যেই মেহেরিন এতো অস্থির ছিল সে এখন তার দু’চোখের পাতা এক করে ঘুমের রাজ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদিকে নির্ঝরের চোখে ঘুম নেই। ভাবতেই পারছে না মেহেরিন অবশেষে তাকে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু ভয় একটাই এই ভালোবাসা মেহেরিন আদৌও বুঝতে পারবে তো। মেহেরিন যত’ই বুদ্ধিমান হোক না কেন সেটা শুধু তার কাজের ক্ষেত্রেই। নির্ঝর জানে সে তার মনের কথা কখনো শুনবে না। কারন তার মধ্যে ম্যাচুরিটি এখনো আসে নি। তার যখন যেটা ভালো মনে হয় সে সেটাই করে। এই ভালোবাসা, আবেগ, অনুভুতি, প্রেম এগুলোর না কোন মানে আছে তার কাছে আর কোন গুরুত্ব।

নির্ঝর এবার ঘর থেকে বের হয়ে হাটা ধরে মেহেরিন’র ঘরে। এসে দেখে তার মেহু পাখি খুব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। নির্ঝর হাঁটু গেড়ে তার বিছানার পাশে বসে পড়ে। সেখানে বসে বসে দেখতে থাকে মেহেরিন কে। নির্ঝর খুব ধীরে ধীরে বলে…

– কি সুন্দর লাগছে তোমাকে এভাবে মেহু পাখি! আচ্ছা তুমি কেন এমন বলোতো। আমার ভালোবাসা বোঝার চেষ্টা কেন করো না তুমি। সব তো বোঝ! সবার মন ও বুঝতে পারো তুমি। কে কি করতে চায় তাই বের করে ফেলো আর আমার মনের এই সূক্ষ্ম অনুভূতি টা টের পাওনা তুমি। তুমি জানো আমার সবটুকু অনুভুতি শুধু তোমার জন্য। এই অনুভূতি কি তোমার কাছে পৌঁছায় না। আমার ভালোবাসা টা বুঝতে কেন পারো না তুমি। সত্যি খুব ভালোবাসি তোমায়। তুমি আমার মনের মেহু পাখি। আমার মনের খাঁচায় বন্দী হলেও তোমার মন এখনো বন্দি হলো না মেহু পাখি। আমার তোমার ওই মন’টাই চাই মেহু পাখি! তুমি শুধুই আমার মেহু পাখি। আর কারো নও তুমি। কারো হতে দেবো না তোমায়। তোমাকেই চাই আমার মেহু পাখি নাহলে তোমার বিরহে পাগল হয়ে যাবো আমি। তোমার বিরহে না তোমার প্রেমে পাগল হতে চাই আমি! মেহু পাখি…!

অতঃপর নির্ঝর কিঞ্চিত হেসে তার মুখে ফুঁ দেয়। সে জানে মেহেরিন আর যাই হোক এখন আর ঘুম থেকে উঠবে না। আর এখানে বসে বসে এভাবে তার মেহু পাখিকে দেখার মধ্যে একটা প্রাপ্তি আছে যা আর কোথাও পাওয়া যায় না। এটা যেন খুব সূক্ষ্ম একটা সুখ। যেটা না পেলে সব কিছুই তুচ্ছ মনে হয়। নির্ঝর এভাবে সারারাত বসে বসে মেহেরিন কে দেখতে দেখতে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে।

ভোরে…
মেহেরিন আজ একটু তাড়াতাড়ি’ই ঘুম থেকে উঠে। এর কারন হলো তার বিড়ার বাচ্চা। সকাল সকাল বিড়াল বাচ্চা এসে মেহেরিন কে জ্বালাতন করতে থাকে। এসব সে মেহেরিন’র কাছ থেকেই শিখেছে। অতঃপর মেহেরিন ঘুম ঘুম চোখে বিড়াল কে কোলে নিয়ে বসে থাকে। ভালোই লাগে তার এভাবে থাকতে। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর তার হঠাৎ করে সে খেয়াল করে নির্ঝরকে। নির্ঝর কে দেখে মেহেরিন’র ঘুম উধাও হয়ে যায়। সে ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে।দেখে মনে হচ্ছে সারারাত এইখানেই ছিল সে। কিন্তু এটাও কি সম্ভব। একটা লোক সারারাত এভাবে শুয়ে ছিল তার ঘরে। মেহেরিন তার বিড়াল টাকে নির্ঝরের মাথার উপর রেখে দেয় যাতে নির্ঝরের ঘুম ভেঙ্গে যায়।

নির্ঝরের ঘুম ভাঙার পর সে দেখে মেহেরিন তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে মৃদু হেসে মেহেরিন কে বলে…
– গুড মর্নিং মেহু পাখি!

– রাখুন আপনার মর্নিং! আমার ঘরে কি করছিলেন আপনি!

নির্ঝর এবার উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর কিছু না বলেই চলে যেতে নেয়। মেহেরিন এটা দেখে অনেকটা অবাক হয়। সে দ্রুত গিয়ে নির্ঝরের সামনে এসে দাঁড়ায়। অতঃপর বলে..
– চলে যাচ্ছেন যে। আপনি আমার ঘরে কি করছিলেন বলুন আগে।

– আগে তুমি বলো তুমি আমাকে কাল কেন জরিয়ে ধরলে!

মেহেরিন চট করে বলে দিলো..
– আমার মন চেয়েছে তাই। এখন আপনি বলুন! লেজ কাটা ব্যাঙ আমার ঘরে সারারাত কি করছিলেন আপনি।

– তোমাকে দেখতে মন চাইলো তাই দেখতে এলাম।

– কি?

– হ্যাঁ!

– এখন’ই বের হন আমার ঘর থেকে!

– চলেই তো যাচ্ছি!
বলেই নির্ঝর যেতে নেয়। মেহেরিন বেশ অবাক হয়। কিন্তু হঠাৎ নির্ঝর মেহেরিন কে ঘুরিয়ে নিজের কাছে টেনে বলে..
– একটা কথা জানো!

– না বললে কিভাবে জানবো!

– এটাই তো! তুমি তো আবার আমার মনের কথা বোঝ না।

– কি বলবেন এটা বলে বের হন।

– এটাই আমার দিন টা আজ অনেক ভালো কাটবে।

– কেন?

– কারন! ( মেহেরিন’র অনেকটা কাছে এসে তার নাকের সাথে নিজের নাক ঘষে) আজ আমি আমার মেহু পাখি’র মুখ থেকে ঘুম থেকে উঠেছি তাই! আমার মনের পাখি আজ ঘুম ভাঙিয়েছে আমার!

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে নির্ঝর কে একটা ধাক্কা মেরে বলল..
– আমার থেকে দূরে থাকুন!

– দূরেই তো আছি মেহু পাখি! যখন তুমি কাছে আসো তখন’ই আসি আর নাহলে এই দূরেই থাকি আমি। কি জানি তোমার থেকে দূরে থাকাটাই না আমার অস্তিত্ব হয়ে দাঁড়ায়।

#চলবে….

( লেখার প্রতি আজ কোনভাবেই মনোযোগ দিতে পারছি না তাই গুছিয়ে লিখতে পারি নি। আজ হয়তো আর আরেকটা পর্ব দিতে পারবো না। দুঃখিত সবার কাছে! )#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৮

মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে নির্ঝর কে একটা ধাক্কা মেরে বলল..
– আমার থেকে দূরে থাকুন!

– দূরেই তো আছি মেহু পাখি! যখন তুমি কাছে আসো তখন’ই আসি আর নাহলে এই দূরেই থাকি আমি। কি জানি তোমার থেকে দূরে থাকাটাই না আমার অস্তিত্ব হয়ে দাঁড়ায়।

মেহেরিন’র কানে কথাটা যায়। কেমন জানি লাগলো কথাটা শুনে তার কাছে! মনে হলো সত্যি সত্যি তার থেকে কিছু দূরে সরে যাচ্ছে। এদিকে নির্ঝর কথাটা বলেই চলে যায়। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে না সেখানে। মেহেরিন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো অনেক সকাল। কিন্তু তার ঘুম এখন আর আসছে না। কি করবে! একটু জগিং করতে যাবে। হ্যাঁ যাওয়া যেতেই পারে এখন তো আর কোন কাজ নেই আর মজার কথা হলো ডেভিল নিশ্চিত এখনো ঘুমাচ্ছে। একা একা এখন ঘুরতে বেশ লাগবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ফ্রেশ হয়ে মেহেরিন তৈরি হয়ে চলে যায় তার গন্তব্যে! বাসা থেকেই খুব কাছে একটা পার্ক আছে। তার গন্তব্য আজ সেখানে। অতঃপর মেহেরিন পার্কে চলে আসে। কিছু মানুষ ও আছে এখানে। তবে চারদিকের পরিবেশ এখন বেশ নিরব। কয়েকটা চড়ুই পাখিকে উড়তে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া কয়েকটা রিকসা যাচ্ছে। ভালোই লাগে এই পরিবেশ টা। আর এভাবেও আজ অফ ডে তাই আরো বেশি নিরব। নাহলে কিছু বাচ্চাদের রাস্তায় দেখা যেত স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে।

মেহেরিন একটু রেস্ট নিয়ে আবার দৌড়াতে যাবে তখন হুট করেই কারো সাথে ধাক্কা খায়। মেহেরিন ব্যালেন্স রাখতে না পেরে ধপাস করে পরে যায়। মেহেরিন নিচে বসে মাথা উঁচু করে উপরে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর। তাকে দেখা মাত্রই তার মাথা গেল গরম হয়ে। মেহেরিন বিড় বিড় করে বলতে থাকে..
– এই লোকটা এখন এখানে কি করছে। কোন কাজ টাজ নেই নাকি। এতো বড় সেলিব্রিটি হথচ এরকম বেকার টেকার হয়ে ঘুড়ে বেড়ায়।

নির্ঝর হেসে এক হাঁটুর উপর ভর দিয়ে মেহেরিন কে বলে..
– ৬ মাসের জন্য ব্রেক নিয়েছি তাই এমন বেকার ঘুরি মেহু পাখি!

মেহেরিন মুখ ভেংচি কেটে বলে…
– ভালো করেছেন এখানে এসে আমাকে ধাক্কা দিচ্ছেন কেন শুধু!

– তোমায় ধাক্কা কেন দেবো বলো। আচ্ছা এভাবে বসে থাকবে নাকি উঠো!

– না আমি তো এভাবেই এভাবেই পড়ে গিয়েছিলাম না।

– আচ্ছা বাবা ঠিক আছে আমিই ধাক্কা দিয়েছে এখন উঠো!
বলেই নির্ঝর মেহেরিন কে হাত ধরে উঠালো। উঠেই মেহেরিন হাত ছেড়ে দিল। নির্ঝর বলে উঠে..
– মেহেরিন বর্ষা খান এতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে ভাবা যায়।

– অপমান করছেন।

– ঘাড়ে কয়টা মাথা বলো।

– আপনি এখানে এসেছেন কি করতে।

– যা করতে তুমি এসেছো তাই! তবে হ্যাঁ এটা ভেবো না যে তোমাকে পিছু করছিলাম। মোটেও এটা না আমার ঘুম আসছিলো না বলেই এলাম আর তখন এখানে তোমাকে দেখলাম।

– সাফাই দেওয়া শেষ।

– সত্যি বললেও দেখছি বিশ্বাস করো না।

– কেন বিশ্বাস করবো আপনাকে, বিশ্বাস করার কারন কি!

হুট করেই নির্ঝর একটানে মেহেরিন কে নিজের কাছে টেনে আনলো। মেহেরিন চমকে উঠলো। নির্ঝর হেসে বলল…

– এই কারনে!

মেহেরিন এবার এপাশে তাকাল, কিছু একটা তার পাশ দিয়ে খুব জোরে গেল বলে তার মনে হলো। আসলেই তাই এটা একটা কুড়াল ছিল যা মেহেরিন’র পাশ দিয়ে গিয়ে ওই গাছে এটকালো। নির্ঝর তাকে না টানলে এটা তাকে ভেদ করে দিতো। মেহেরিন এপাশে তাকিয়ে দেখল কিছু লোক তার দিকেই এগিয়ে আসছে। বুঝতে বাকি নেই এরা তাকে মারতে আসছে। মেহেরিন দ্রুত নির্ঝরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। অতঃপর পকেটে হাত দিয়ে দেখল গান নেই। মেহেরিন নির্ঝরকে বলে উঠে..

– গান নেই।

– ডেভিল!

– বলে আসি নি আমি!

– তাহলে এখন! কি করবো আমরা। ওদের দেখে তো মনে হচ্ছে ওরা প্রোফেশনাল!

– এখন একটাই পথ আছে।

নির্ঝর বিভ্রান্ত হয়ে বলে…
– কিহ?

মেহেরিন নির্ঝরের হাত ধরে বলে…
– পালান!

অতঃপর দুজনেই দৌড়াতে থাকে। লোক গুলো তাদের পিছনে দৌড়াতে থাকে। মেহেরিন আর নির্ঝর এভাবে কিছুক্ষণ দৌড়ানো’র পর নির্ঝর বলে উঠে..
– আমার গাড়ি ওখানে পার্ক করা আছে সেখানে চলো!

মেহেরিন তার কথায় মাথা নাড়ায়। অতঃপর দুজনেই একসাথে দৌড়াতে থাকে। নির্ঝর বার বার পিছনে তাকাচ্ছে। হঠাৎ করেই লোকগুলোর মধ্যে একজন মেহেরিন’র দিকে ছুরি ছুরে মারে। নির্ঝর হাত দিয়ে মেহেরিন কে সরিয়ে দিলে সেই ছুরি নির্ঝরের হাতে লাগে। নির্ঝরের হাত কিছুটা কেটে যায়। মেহেরিন এসব দেখে নি। গাড়ির কাছে আসতেই মেহেরিন তাকে বলে..

– আপনি গাড়িতে উঠো।

– মানে তুমি উঠবে না।

– উঠবো। তারা আপনাকে না আমাকে মারতে চায় তাই আপনি গাড়ি চালিয়ে ওই আসুন পর্যন্ত ততোক্ষণ আমি তাদের একটু ঘুরিয়ে আনি।

বলেই মেহেরিন হেসে চলে যায়। নির্ঝর গাড়িতে উঠে পড়ে আর বিড় বিড় করে বলে..

– এই মেয়েটাকে বোঝার সাধ্য আমার নেই।

নির্ঝর গাড়িতে উঠার পর’ই দেখে লোকগুলো মেহেরিন’র দিকেই আগাচ্ছে। নির্ঝর কে তারা খেয়াল করি নি। নির্ঝর হেসে বলে..

– দা গেইম ইজ অন!
বলেই গাড়ি চালিয়ে তাদের পিছু নিতে থাকে।

এদিকে লোকগুলো কিছুদূর দৌড়ানোর পর’ই দেখে মেহেরিন দাঁড়িয়ে হাপাঁচ্ছে। তারা মেহেরিন’র পিছনে থাকায় একজন গিয়ে মেহেরিন কে মারতে যায়। মেহেরিন কারো উপস্থিত টের পেয়ে সরে গেলে সে‌ পড়ে যায়। মেহেরিন হেসে বলে..

– ও আচ্ছা আপনারা চলে এসেছেন।

লোকগুলোর লিডার বলে উঠে..
– অনেক দৌড়ানি করালে আমাদের।

– এতোটুকু তেই এই অবস্থা! আর তোমরা এসেছো আমাকে মারতে।

লোকটা হাঁপিয়ে বলে..
– এতোক্ষণ দৌড়ানোর পর এখানে এসে থেমে যাওয়ার কারন কি!

– তোমাদের কি মনে হয়!

ওরা ভালো মতো চারদিক তাকানোর পর একজন বলে উঠে..
– ওর সাথে সেই ছেলেটা নেই!

– বলতে হবে স্মৃতিশক্তি খুব ভালো তোমাদের!

লিডার হেসে বলে…
– খুব চালাক তুমি! ভাবলে যদি তোমার কিছু না করতে তখন ওই ছেলেটাকে তোমার দুর্বলতা ভেবে তাকে মেরে ফেলবো তাই নিজের দুর্বলতা লুকিয়ে এসেছো।

মেহেরিন হেসে বলে..
– প্রথতম কথা হলো ও আমার দুর্বলতা নয়। কিন্তু যখন তোমাদের সাথে আমার লড়াই তাহলে ওর এখানে আসে লাভ নেই তাই এটা করলাম! বাদ দাও কে আগে আসবে বলো। আচ্ছা একটা কাজ করো আগে আসার দরকার নেই সবাই একসাথে এসো টাইম নেই আমার কাছে!

লোকগুলো রেগে সবাই একসাথে আসতে নেয়। মেহেরিন’র কিছুটা কাছে আসার পর’ই মেহেরিন হেসে বলল..
– হেই গাইস বুমম!
বলেই মেহেরিন দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল। লোকগুলো মেহেরিন’র কথাটা বোঝার আগেই সেই জায়গাটা ব্লাস্ট হলো। মেহেরিন পিছনে একবার তাকিয়ে বাঁকা হাসল। সবকিছু আগুনে পুড়ে গেছে।

মেহেরিন কিছুটা সামনে এসে দেখে নির্ঝর গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নির্ঝর হেসে বলে..
– ওয়াট অ্যা প্ল্যান। পুরো মাস্টারমাইন্ড তুমি!

মেহেরিন হেসে গাড়িতে এসে বসে। নির্ঝর ও গাড়িতে এসে বসে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে। মেহেরিন’র তখন চোখে পরল নির্ঝরের হাত কাটা। হয়তো তখন তার ওপর হামলার সময় কেটে গেছে। কিন্তু মেহেরিন কিছু বললো না।

বাসায় আসতেই সবাই তাকে ঘিরে ধরল। কে এমনটা করল কি হয়েছে জানার জন্য সবাই পাগল হয়ে গেছে। নিহা আর নিশি মেহেরিন’র ওপর হামলা হয়েছে জানতে পেরেই অনেক আগে চলে এসেছে। মেহেরিন বাসায় এসেই তাদের দেখতে পেলো। সবাই তাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো কি হয়েছে।‌ তখন মেহেরিন বললো দৌড়ানোর টাইমে ডেভিল কে সব মেসেজ করে জানিয়ে দিয়েছিল আর সেই এই কাজ করেছে। অতঃপর ডেভিল এলো তখন! নিহা তাকে ফার্স্টএইড বক্স টা আনতে বলল!

নিহা আর নিশি ‌মেহেরিন’র হাত পা চেক করতে লাগলো। কোথাও কিছু হলো কি না।‌ মেহেরিন বলে উঠে..
– কিছু হয় নি আমার ছাড়ো। দি ঠিক আছি আমি!

মেহেরিন তাকিয়ে দেখে ডেভিলের হাতে ফার্স্ট এইড বক্স। অতঃপর সে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে ডেভিলের হাত থেকে বক্স টা নিয়ে নিল। নির্ঝর কে সোফায় বসিয়ে দিয়ে তার কাটা হাতটার রক্ত পরিষ্কার করতে লাগলো। নিহা আর অভ্র দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছে। মেহেরিন কি না কারো সেবা করছে। তাও নির্ঝরের। নির্ঝর নিজেও বেশ অবাক। মেহেরিন তার এই কেটে যাওয়া হাত তাহলে খেয়াল করেছিল। সে তাকিয়ে থাকে তার মেহু পাখির দিকে, মেহেরিন খুব মনোযোগ দিয়ে তার হাতটা দেখছে।‌হঠাৎ করেই নির্ঝরের মাথা ঘুরতে থাকে।‌ সামনের সব কিছুই তার ঝাপসা মনে হচ্ছে। মেহেরিন মাথা নিচু করেই বলে..

– আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে আহত না হলেও পারতেন!

নির্ঝরের কানে কথাটা কেমন ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছিল। সে হুট করেই মেহেরিন’র হাত টা ধরে আস্তে করে বলে বলে..

– মেহু পাখি…!

মেহেরিন “হুম” বলে মাথা উঠিয়ে দেখে নির্ঝর চোখ বন্ধ করে সোফায় তার মাথায় এলিয়ে দিয়েছে। মেহেরিন’র কাছে ব্যাপারটা কেমন লাগলো।‌ সে দাঁড়িয়ে নির্ঝরের গালে হাত রাখতেই বুঝলে পারল নির্ঝরের জ্ঞান নেই। মেহেরিন চমকে উঠে বলে..

– নির্ঝর!

সবাই দ্রুত কাছে এসে নির্ঝর কে দেখতে থাকে। আসলেই তার জ্ঞান নেই। কি হলো হঠাৎ করে! নিহা নির্ঝরের হাতে কাটা জায়গায় খেয়াল করতে লাগলো। অতঃপর বললো..

– ছুরিতে বিষ ছিল! নির্ঝরের হাত কেটে যাওয়ায় সেই বিষ তার শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। ডেভিল জলদি গাড়ি বের করো হসপিটালে যেতে হবে।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here