#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩১+32
সকাল সকাল নির্ঝর রান্না ঘরে কফি বানাতে ব্যস্ত। তখন নিহা’র আগমন ঘটে সেখানে। নির্ঝর সবে কফি মগে কফি টা ঢেলে একটু সাজাতে লাগলো হুট নিহা এক কফি মগ নিয়ে বলে উঠে..
– থ্যাকস ইয়ার, অনেক দরকার ছিল এটার!
নির্ঝর দ্রুত তার হাত থেকে সেটা নিয়ে বলে উঠে..
– না দি তুমি এটা নিও না। আমি তোমাকে আরেকটা বানিয়ে দিচ্ছি।
– কেন? আমার এটাই চাই!
– দি এটা স্পেশাল কারো জন্য!
– সিরিয়াসলি তোর মনে হয় আদুরী এটা খাবে!
– আমার মেহু পাখি এটা খেতে বাধ্য!
বলেই হেসে দিল। নিহা তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল..
– ব্যাপার কি আজ একটু বেশিই ব্লাস করছিস তুই।
নির্ঝর আবারো মুচকি হাসল। নিহা বলে উঠে..
– স্বপ্নে ভুলভাল কিছু দেখলি নাকি।
নির্ঝর কফি মগ টা ট্রে তে রেখে বলল..
– না গো স্বপ্ন না এটা সত্যি। রোজ যে স্বপ্ন দেখি তা এখন পূরন হতে চলছে!
– আদুরী তার মানে..!
– মিসেস মেহু পাখি চৌধুরী হবে বুঝলে!
নিহা শকড হয়ে খানিকক্ষণ নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর নির্ঝরের কপালে হাত রেখে বলল..
– দেখি দেখি তোর জ্বর আসলো কি না। জ্বরের ঘোরে ভুলভাল বলছিস মনে হয়!
– 😒! সত্যি বলছি তোমার বোন পটে গেছে। বিশ্বাস না হলে গিয়ে জিজ্ঞেস করো দেখো।
– আমার তো মনে হচ্ছে আমি নিজেই স্বপ্ন দেখছি।
হঠাৎ করেই পেছন থেকে আহিয়ান নিহা’র কোমরে একটা চিমটি দিয়ে বলল..
– না ভূতনি তুমি যা শুনেছ তা সত্যি শুনেছ!
নিহা লাফিয়ে উঠল। অতঃপর পেছনে তাকিয়ে দেখল আহিয়ান দাঁত বের করে হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
– আপনি!
– হুম ভূতনি আমি, তোমার বর!
– আম্মুউ এতো জোরে কেউ চিমটি কাটে। জানেন কতো ব্যাথা পেয়েছি।
আহিয়ান পেছন থেকে নিহা’র কোমর টেনে নিজের কাছে এনে বলে..
– আমি আছি চিন্তা করো না।
নির্ঝর হালকা কেশে বলে..
– আমি গেলাম!
– কোথায় যাচ্ছিস?
– তোমার বোনের ঘুম ভাঙতে। আমি তো জেগে গেলাম কিন্তু আমার মনের পাখি এখনো ঘুমাচ্ছে!
বলেই চলে গেল। নিহা বলে উঠে..
– ব্যাপারটা কি হলো!
আহিয়ান নিহা’র ঘাড়ে মাথা রেখে বলে..
– সেটাই যেটা তোমরা চাইতে!
– আদুরী মজাও করতে পারে আপনি জানেন না সেটা।
– কিন্তু আমার মন বলছো দেখো এখন সব ঠিক হবে। এখন চিন্তা করা বন্ধ করো বুঝলে!
আহিয়ানের কথায় নিহা মাথা নাড়লেও তার মনে এখনো চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সত্যি কি মেহেরিন ভালোবাসলো নাকি আবার কোন গেইম!
.
মেহেরিন বেশির ভাগ সময়ই দরজা লক না করেই ঘুমিয়ে থাকে। নির্ঝর তাই মেহেরিন’র ঘরে এসে পরল। অতঃপর ল্যাম্পশেড’র পাশে ট্রে টা রেখে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন এখনো ঘুমাচ্ছে! নির্ঝর মেহেরিন’র পাশে বসে তার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলতে লাগল..
– মেহু পাখি! এই মেহু পাখি!
মেহেরিন ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে মিটিমিটি চোখে নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বলল…
– শুভ সকাল আমার মনের পাখি!
– গুড মর্নিং!
নির্ঝর উঠে বিছানায় বসলো। মেহেরিন এসে তার কোলে মাথা রাখল। নির্ঝর মেহেরিন’র মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলল..
– সকালে সবার পাখির ডাকে ঘুম ভাঙে আর আমি’ই একমাত্র ব্যক্তি যে কিনা তার পাখির ঘুম ভাঙাতে আসছি!
মেহেরিন মুখ টা উঁচু করে নির্ঝরের দিকে তাকায়। নির্ঝর বলে..
– ফ্রেশ হয়ে এসো মেহু পাখি! আমি নিজে কফি বানিয়ে নিয়ে এসেছি!
নির্ঝরকে আরেকটু শক্ত করে ধরে..
– আমি আরেকটু ঘুমাবো!
– নো ওয়ে ফার্স্ট উঠে। এরকম দেরি করে ঘুম থেকে উঠা একটুও ভালো না!
– ইশ বললেও হলো আমি আরো ঘুমাবো গুড নাইট!
বলেই মেহেরিন চাদরের মধ্যে ঢুকে গেল। নির্ঝর হেসে বলে..
– তুমি ভালো কথা শোনার মানুষ না!
বলেই মেহেরিন কে কোলে তুলে নিল।
– কি করছেন টা কি!
– ঘুম থেকে উঠাচ্ছি বুঝলে!
বলেই নির্ঝর ওয়াশরুমের দিকে গেল। মেহেরিন দু হাত দিয়ে নির্ঝর গলা জরিয়ে রেখে তার বুকে মাথা রাখল। নির্ঝর ওয়াশরুমের কাছে এনে তাকে নামিয়ে দিল। বলল..
– ফ্রেশ হয়ে এসো আমি এখানে দাড়িয়ে আছি। খবরদার যদি ওয়াশরুমে আবার ঘুমাও তো!
মেহেরিন একটা মুখ ভেংচি কেটে চলে গেল। নির্ঝর হেসে সাউন্ড বক্সে গান বাজাতে লাগলো। সেই দিনের সেই প্রিয় গানটা, যেটা তাদের প্রথম দেখার সাক্ষী! মেহেরিন ফ্রেশ হয়ে এসে বাইরে দাঁড়িয়ে হাত দুটো উঁচু করে দাঁড়াল। নির্ঝর এসে তাকে কোলে তুলে নিল। অতঃপর তাকে নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। মেহেরিন নির্ঝরের কোলের উপর বসে পরল। নির্ঝর তার হাতে কফি টা দিল। তখনও সেই গান টা বাজতে লাগলো। মেহেরিন হেসে তার দিকে তাকাল। নির্ঝর মেহেরিন কে ইশারা করে নিচের দিকে তাকাতে বলল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল তাদের দু’জনের কফি মগ একসাথে করলে লাভ আকার ধারন করে। নির্ঝর হেসে বলে..
– আমাদের ভালোবাসার শুরু হোক এই সুন্দর সকাল দিয়ে মেহু পাখি!
মেহেরিন জোরে হেসে দিল। নির্ঝর তার গালে নিজের গাল মিশিয়ে বলল…
– আমার প্রতিটা অনুভূতি শুধু তোমার নামেই! এখানে আর অন্য কারো জায়গা নেই!
মেহেরিন কফি মগে চুমুক দিয়ে বলল..
– হুম!
– শুধু হুম এতো রোমান্টিক একটা কথা বললাম একটু তো ভালোবাসি বলতে পারো
– গতকার রাতে না বললাম!
– এক বার’ই বলেছো!
– তো!
– আমি তো সারাদিন তোমার কানের কাছে ভালোবাসি ভালোবাসি বলতে থাকি সেই কথা খেয়াল রাখো তুমি!
– হুম এটাও ভালো!
– হাম ভালোই বটে তো আজ ভার্সিটিতে যাবে না।
– ভার্সিটি!
– হ্যাঁ এটার নাম তো ভুলেই গেছো। এই বিয়ে বিয়ে করে আজ ৩ মাস হলো ভার্সিটিতে যাও না কি দেবে পরিক্ষায়
– পরিক্ষার আগের রাত পরলেই পারবো!
– ঘোরার ডিম পাড়বে।
– আচ্ছা নির্ঝর ঘোড়াকে দেখেছেন কখনো ডিম পাড়তে।
– না কেন? তুমি দেখেছো!
– না দেখেনি তবে দেখলে আগে আপনাকেই খাওয়াতাম বুঝলেন!
– ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার।
– হাম হাম অনেক টেস্টি হতো জানেন।
– সেটা কি তোমার চকলেট’র স্বাদের মতোই হতো!
নির্ঝরের কথায় মেহেরিন’র গাল দুটো লাল হয়ে গেল। মেহেরিন মনে মনে বলে..
– এই লোকটা এমন কেন? জানে আমি লজ্জা পাচ্ছি তবুও বার বার এমন কথা বলা লাগে তার। যখন তখন আমাকে জ্বালানো দেখাচ্ছি মজা!
মেহেরিন কফি মগে চুমুক দিয়ে বলে..
– চকলেট’র স্বাদ কিন্তু সবাই নিতে পারে নির্ঝর!
নির্ঝর কফি মগ টা রেখে মেহেরিন’র মুখ ঘুরিয়ে ঠোঁটে হাত রেখে বলে..
– কিন্তু এই চকলেট’র একমাত্র দাবিদার শুধু আমি বুঝলে তুমি!
মেহেরিন মাথা নাড়িয়ে না বলে! নির্ঝর বলে উঠে..
– দাঁড়াও আমি বুঝাচ্ছি!
বলেই নির্ঝর উঠে মেহেরিন’র পেটে হাত রাখল। মেহেরিন বুঝতে পারল নির্ঝর এখন কি করবে। নির্ঝর তার পেটে হালকা করে কাতুকুতু দিতেই মেহেরিন দ্রুত বলে উঠে..
– বুঝতে পেরেছি বুঝতে পেরেছি প্লিজ এমনটা করবেন না।
নির্ঝর দু হাত দিয়ে মেহেরিন কে নিজের সাথে জরিয়ে মাথায় আলতো করে চুমু খেয়ে বলল..
– ঠিক আছে মনে থাকো যেন বুঝলে!
মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকায় অতঃপর দুজনেই হেসে দেয়। দরজার আড়াল থেকে ক্যাট, কাব্য, রোদ্দুর আর আরিশা এসব দেখতে লাগল। এসব দেখার পর তারা সবাই নিজেদের দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর তারা সবাই বসার ঘরে এলো। এদিকে নিহা টেনশনে এই পর্যন্ত ১০ টা মিষ্টি খেয়ে ফেলেছে। ক্যাট ওদের নিহা’ই পাঠিয়েছে। কি বলবে তারা এই টেনশনে শেষ। আহিয়ান এক প্রান্তে বসে কফি মগে চুমুক দিচ্ছে আর নিহা কে দেখছে। তার পাশেই অভ্র বসে নিহা কে বোঝাচ্ছে কিন্তু নিহা বুঝতেই চাইছে না। দুই ভাই বোনদের এমন কান্ড দেখে বেশ হাসি পাচ্ছে আহিয়ানের। অবশেষে ওরা চারজন এসে দাঁড়াল নিহা’র সামনে! নিহা চট করে দাঁড়িয়ে বলল..
– কি দেখলি তোরা!
আরিশা বলে উঠে..
– সত্যি দেখেছি!
– কার সত্যি আমার না নির্ঝরের!
চারজন একসাথে বলে উঠে…
– নির্ঝর যা বলেছে তাই দেখেছি!
নিহা এইকথা শোনার পর একটা লাফ দিয়ে বলে..
– সত্যি!
অভ্র আর আহিয়ান ও দাঁড়িয়ে যায়। অভ্র বলে..
– শান্ত হ একটু!
– দা তুমি শুনলে ওরা কি বললো।
আহিয়ান বলে উঠে..
– হ্যাঁ ভূতনি আমাদের ও কান আছে শুনেছি!
– আহিয়ান অবশেষে! অবশেষে আমার আদুরী রাজী হলো। আমি বলেছিলাম না তোমাদের যদি কেউ থাকে তাহলে সেটা নির্ঝর আর কেউ না। আদুরী কে একমাত্র ও’ই সামলাতে পারে।
– হ্যাঁ দেখলাম তো।
– কিন্তু ভূতনি কথা হলো এই প্রেম কয়দিন থাকে সেটা দেখতে হবে।
– মানে!
– মানে আমি আর কি!
– আপনার মুখ এতোটা তেতো এই সময়ে এতো তেতো তেতো কথা বলছেন।
– ১০ টা মিষ্টি তো তুমি এটাই খেলে আমার মুখ কিভাবে মিষ্টি হবে বলো।
আহিয়ানের কথা শুনে সবাই মিটিমিটি হাসতে লাগলো। নিহা রেগে তার দিকে তাকাল। আহিয়ান সাথে সাথে চোখ টিপ দিল। নিহা একটা মুখ ভেংচি দিল।
খানিকক্ষণ বাদেই নির্ঝর চলে এলো তার ঘরে। অতঃপর এসে তৈরি হয়ে আবার গেল মেহেরিন’র ঘরে। বসার ঘর থেকে সবাই দেখছে এসব। নির্ঝর মেহেরিন’কে নিয়ে কিছুক্ষণ পর বসার ঘরে আসল। সবাই তাকিয়ে দেখল দুজনেই এক রকমের পোশাক পরা। ওদের এভাবে দেখে ইহান, রোদ্দুর আর কাব্য একটু পিন্চ মারলো। মেহেরিন ওদের ইগনোর করলেও নির্ঝর বেশ লজ্জা পেল। মেহেরিন এসেই অভ্র’র কাছে বসে পরল। অতঃপর অভ্র তাকে খাইয়ে দেবার পর দুজনেই বের হয়ে গেল একসাথে। গন্তব্য ভার্সিটিতে! প্রায় আজ ৩ মাস পর ভার্সিটিতে আসল দুজনেই। দুজনেই একসাথে গাড়ি থেকে বের হলো। নিরব মেহেরিন’র গাড়ি দেখতে পেয়েই চলে এলো। এসে দেখে নির্ঝর মেহেরিন’র হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিরব এটা দেখার পর থমকে দাঁড়িয়ে পরল। শেষে কি তাহলে তারা দু’জনে এক হয়ে গেল। নিরব কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে পরল। দু’জনকে এভাবে একসাথে দেখে তার মোটেও ভালো লাগে নি। কালো রঙের হুডি দুজনের পরনে। এটাও কি সম্ভব। মেহেরিন নির্ঝরের প্রেমে পরে গেল নাকি!
মেহেরিন হেসে নির্ঝরের হাত ছাড়িয়ে বলল..
– আমার ক্লাস আছে ছাড়ুন আমায়!
নির্ঝর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন তাকে বলছে যেতে না। খানিকক্ষণ এভাবেই কিছুক্ষণ তার সাথে থাকতে। তখন হঠাৎ পেছন থেকে রোদ্দুর বলে উঠে..
– এটা ভার্সিটি মিঃ লেজ কাটা ব্যাঙ!
নির্ঝর সাথে সাথে মেহেরিনের হাত ছেড়ে দিয়ে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে রোদ্দুর আর আরিশা হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ্দুর এসেছিল আরিশা দিয়ে যেতে। আরিশা এসে মেহেরিন হাত টা ফট করে ধরে বলে..
– টাঠা মেহু পাখি’র লেজ কাটা ব্যাঙ, আমাদের ক্লাস আছে!
বলেই মেহেরিন কে টেনে নিয়ে যায়। নির্ঝর হেসে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়ায়।মেহেরিন পেছনে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়। আরিশা হেসে ওর মুখটা আবার ঘুরিয়ে দেয়। অতঃপর রোদ্দুর হাসতে হাসতে চলে যায়। নির্ঝর ও যায় তার কাজে। দূর থেকে এসব কিছু দেখছিলো নিরব। এসব দেখেই তার মেজাজ গেলো খারাপ হয়ে। আরিশা আর মেহেরিন ক্লাসের দিকেই যাচ্ছিল তখন হুট করেই নিরব তাদের সামনে এসে দাঁড়াল। মেহেরিন ওকে দেখেও ইগনোর করে চলে আসতে নিল তখন নিরব তার হাত ধরে ফেলল। অতঃপর বলতে লাগল..
– ইগনোর কেন করছিস
– কথা বলবো না তাই!
– না আমার কথা আছে তোর সাথে।
মেহেরিন আরিশা কে বললো ক্লাসে যেতে অতঃপর নিরবের হাত টা ছাড়িয়ে বলল..
– কি বলবি!
নিরব মেহেরিন’র হাত ধরে ভার্সিটির পেছনে দিকটায় চলে গেল। মেহেরিন এতে কিছু বলল না কারন ও জানে তেমন কিছু হবে না। অতঃপর নিরব বলে উঠে..
– আমার সাথে কথা বলছিস না কেন, কতোবার ফোন করেছি ততোবার’ই কেটে দিয়েছিস। এতো ট্রাই করি কথা বলার তবুও বলিস না কারনটা কি?
– সেটা কি তুই জানিস না!
নিরব মেহেরিন’র দুই বাহু ধরে বলে..
– আমি জানি মেহেরিন আমি ভুল করেছি আর আমি সেটা স্বীকারও করছি। নির্ঝরের সাথে ওমনটা করা আমার ঠিক হয় নি কিন্তু…
মেহেরিন ওর হাত দুটো আবার ছাড়িয়ে দিয়ে বলল..
– কি কিন্তু!
– তুই কি কিছু বুঝিস না। এটা বুঝিস না আমি ভালোবাসি তোকে!
– আমি আগেও বলেছি তোকে তোর জন্য আমার ফিলিং নেই।
– ওহ্ আচ্ছা তাহলে সব ফিলিং কি তোর ওই নির্ঝরের জন্য!
– …
– কথা বল। যখন আমাকে ভালোই বাসিস না তখন আমাকে বাঁচাতে গেলি কেন?
– কারনটা হলো তুই আমার কারনে বিপদে পড়েছিলি তাই!
– ওহ ওয়াও! আমি নির্ঝরের আগে থেকে তোর পিছনে পিছনে ঘুরছি তোকে ভালবাসি ভালবাসি বলছি এটা তোর কানে যাচ্ছে না।
– তুই বার বার নির্ঝর কে কেন টেনে আনছিস!
মেহেরিন’র দুই বাহু ধরে..
– কারন ও আমার থেকে তোকে কেড়ে নিয়েছে আমার ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছে এজন্য!
– ও কিছু করে নি। আমি নিজেই ওকে নিয়ে ভালোবাসি বুঝলি তুই। তোর এসব কথা বন্ধ কর তুই।
– ভালোও বেশি ফেললি বাহ!
– নিরব আমার লেট হচ্ছে সর তুই!
– না আমি সরবো না। তোকে বলতেই হবে নির্ঝরকে কেন ভালোবাসিস তুই। কি খামতি আমার মধ্যে বল!
– নিরব তুই এবার অতিরিক্ত করছিস কিন্তু!
– আমি যাই করি তোর কাছে সেটা ভুল মনে হয়। আর নির্ঝর যা করে তাই ঠিক মনে হয় না।
– আমার তোর সাথে কথা বলাই উচিত হয় নি!
বলেই মেহেরিন যেতে নিবে নিরব তখন ওর হাত দুটো ধরে নিজের হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে বলল..
– বিশ্বাস কর মেহেরিন খুব ভালোবাসি তোকে। সত্যি অনেক ভালোবাসি। তোকে ছেড়ে থাকা সম্ভব না আমার পক্ষে।
মেহেরিন নিরবের হাত ছাড়িয়ে চলে আসতে নিলে নিরব আবারো মেহেরিন’র হাত ধরে ফেলে। মেহেরিন ঘুরে হাত খুলতে চাইলে নিরব এক টানে তাকে নিজের কাছে টানে। অতঃপর তার গালে হাত রাখতে যাবে ঠিক তখন’ই নির্ঝর এসে তার হাত ধরে ফেলে। মেহেরিন তাকিয়ে দেখে নির্ঝর তার দিকে রেগে তাকিয়ে আছে তবে এই রাগটা তার জন্য না। নিরবের জন্য! নির্ঝরের মেহু পাখি কে অন্যকেউ স্পর্শ করবে এটা সে কখনোই ভাবতে পারে না। সে নিরব কে ধাক্কা মেরে পিছনে ফেলে মেহেরিন’র হাত ধরে বলে…
– মেহু পাখি শুধু তার নির্ঝরের আর কারো না!
নির্ঝর রেগে তাকিয়ে রইল নিরবের দিকে। নির্ঝর তার কাছে যেতে নিলে মেহেরিন তার ধরে থামিয়ে দিল। অতঃপর নির্ঝর কিছু না বলে মেহেরিন’র হাত ধরে তাকে নিয়ে চলে যায়! নিরব তাদের দিকে রেগে তাকিয়ে রইল। বলল..
– আমি দেখব এই ভালোবাসা কয়দিন থাকে!
#চলবে….#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩২
নির্ঝর মেহেরিন’র হাত ধরে গাড়ির কাছে আসলো। অতঃপর হাত ছেড়ে দিয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন নির্ঝরের গলা জরিয়ে ধরে বলল…
– রেগে আছেন নাকি!
– জিজ্ঞেস করছো না বলছো?
– আমি আবার কি করলাম?
– কি করো না তুমি। সব’ই তো করো। দুনিয়ার যতো আকাম সেটা তুমিই করে বেড়ায়!
মেহেরিন দাঁত বের করে হেসে..
– শুকরিয়া!
নির্ঝর রেগে মেহেরিন’র বাহু ধরে বলে..
– মজা করছো! কে বলেছিলো তোমায় ওর সাথে কথা বলতে হুম।
– ওই তো বললো কথা বলবে তাই গেলাম।
– ও বললো আর তুমিও চলে গেলো। যদি কিছু হয়ে যেত।
– হে ওয়েট আমি কোন অবলা নারী না যে আমাকে দিয়ে কিছু করে ফেলবে।
– আই নো দ্যাট মেহু পাখি! কিন্তু বোঝার চেষ্টা করো আমার ভয় করে তোমাকে নিয়ে। এই না কিছু হয়ে যায় তোমার। সারাদিন চিন্তায় থাকি আমি।
মেহেরিন নির্ঝরের নাকে টুকা দিয়ে বলে..
– এসব ভাবার জন্য আমার দা আর দি আছে। এছাড়াও আরো ৫ জন আছে। আপনার না ভাবলেও চলবে!
নির্ঝর মেহেরিন’কে ছেড়ে দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে ওপর দিকে দরজা খুলে ড্রাইভিং সিটে বসে পরল। মেহেরিন বুঝতে পারল রেগে গেছে। গাড়ির দরজা ওর জন্য’ই খুলে রেখেছে। মেহেরিন গাড়িতে বসে বলল..
– আজ কি ক্লাস করবো না।
নির্ঝর কিছু না গাড়ি স্টার্ট দিল। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে একটু ঝুঁকে তাকাল। হঠাৎ নির্ঝর ওর হাত ধরে গাড়ি ব্রেক করল। মেহেরিন কি হলো বুঝতে পারল না। নির্ঝর ফোনটা বের করে কিসব টাইপিং করে মেহেরিন’র হাতে দিল। মেহেরিন দেখল তাতে লেখা আছে..
– সিট বেল বাধো!
মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে হাত টা নির্ঝরের ফোনে দিয়ে দু হাত গুঁজে বসে রইল। নির্ঝর জানে তাকেই বাঁধতে হবে। সে মেহেরিন’র দিকে ঝুঁকে তার সিট বেল বাঁধতে লাগলো। একবারের জন্য মেহেরিন’র দিকেও তাকাল। মেহেরিন হেসে তাকে চোখ টিপ দিল। কিন্তু তাতে নির্ঝরের কোন ভ্রুপ নেই। সে আবারো আপন মনে গাড়ি স্টার্ট দিল। মেহেরিন এবার নিঝেই সিটবেল খুলে বসে রইল। নির্ঝর আবারো তার সিট বেল বেঁধে দিল। কিছুক্ষণ পর মেহেরিন আবারো সিট বেল খুল। নির্ঝর গাড়ি থামিয়ে আবারো সিট বেল বেঁধে দিল। মেহেরিন আবারো সেই একই কাজ আর নির্ঝরও কোন বিরক্ত ছাড়া সিট বেল বেঁধে দিল। মেহেরিনের এবার নিজেরেই বিরক্ত লাগতে লাগলো। সে চাইলো নির্ঝর বিরক্ত হয়ে তার সাথে কথা বলুক কিন্তু এবার সে নিজেই বিরক্ত বোধ করতে লাগলো। অতঃপর এবার সিট বেল খুলে সোজা নির্ঝর কোলে মাথা রাখল। অতঃপর মুখ উঁচু করে নির্ঝরের দিকে তাকাল। সে এখনো আগের মতোই গাড়ি চালাতে লাগল। মেহেরিন এবার গান গাইতে শুরু করল..
“কথা হবে দেখা হবে,
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা আসি আর হবে না
চোখে চোখে কথা হবে,
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালবাসা-বাসি আর হবে না
নির্ঝরের থিতুনি তে হাত রেখে..
শত রাত জাগা হবে,
থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না
হুট করে ফিরে এসে,
লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙে যাবে জানো না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
হুট করেই নির্ঝর এবার হেসে দিল। অতঃপর নিচে তাকাতেই দেখল মেহেরিন এক গাল হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর এক হাত দিয়ে মেহেরিন এর কানের কাছে রেখে বলল..
– মেহু পাখি!
– রাগ ভেঙেছে আপনার!
নির্ঝর হেসে বলল..
– তুমি একজন যার ওপর আমি রাগ করে থাকতে পারি না।
– আমার উপর কেউই রাগ করে থাকতে পারে না। কারন আমি খুব সুইট!
– হাম চকলেট’র মতো!
– এবার বন্ধ করুন।
– হুম করলাম!
– আচ্ছা নির্ঝর আপনার পরিবারে কেউ নেই!
– আছে তো!
– কে কে আছে তারা কোথায় থাকে!
– আমার মা, একটা ছোট বোন আছে। তারা সবাই ব্যাংকক থাকে।
– আপনি কেন থাকেন না তাঁদের সাথে। আপনার তো তাদের দরকার নাহ!
– হাম তাই সেখানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে রেখে এসেছি। আমার বিজনেস গান এসব কিছুর জন্য প্রায়’ই বাইরে থাকতে হয় বুঝলে। তাই তাদের খেয়াল রাখতে আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে তাদের কাছে রাখি।
– আচ্ছা নির্ঝর আপনার বাবা!
নির্ঝর মুখে হাসি নিয়েই বলল..
– আজ থেকে ১০ বছর আগে উনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন!
মেহেরিন নির্ঝরের গালে হাত রাখল। নির্ঝর মেহেরিন’র গালে আলতো করে একটা চুমু খেল। মেহেরিন বলল..
– সরি, জানি অনেক কষ্ট পেয়েছেন। আমিও ১০ বছর আগেই আমার মা কে হারিয়েছিলাম।
– না ১১ বছর হতে চলল মেহু পাখি!
– সময় যে কিভাবে চলে যায় বুঝতে পারি না।
– হাম ঠিক বলেছো। এই বছর শেষ হতে চলল।
– হাম। আচ্ছা আপনার বোনের নাম কি নির্ঝর?
– তিশা চৌধুরী!
– ওও কিউট নেম।
– হাম! তো এখন কি বাসায় যাবা।
– না ঘুরবো!
– ঠিক আছে তুমি যা বলবে..
অতঃপর তারা দুজনেই মিলে সারাদিন ঘুরে ফিরে অবশেষে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরার জন্য রওনা দেয়। দু একবার অবশ্য কথা হয়েছে অভ্র আর নির্ঝরের। মেহেরিন সারাদিন’ই ছোটাছুটি করতে থাকে আর নির্ঝর ওকে সামলাতে থাকে। একবার তো মেহেরিন ঝালমুড়ি একটু বেশি ঝাল দিয়ে খাওয়ায় ফলে তার মারাত্মক ঝাল লেগে যায়। অতঃপর একটা বাচ্চার আইসক্রিম নিয়ে খেয়ে তার ঝাল কমায়। বাচ্চার আইসক্রিম নিয়ে ফেলায় বাচ্চা জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করে। অতঃপর নির্ঝর বাচ্চা টাকে ৩ টা আইসক্রিম কিনে দেয় অতঃপর বাচ্চা শান্ত হয়। কিন্তু তবুও মেহেরিন’র পাগলামি কমে না। সে আরো বেশি বেশি দুষ্টামি করতে থাকে।
গাড়ি এসে থামে খান বাড়িতে,
নির্ঝর তাকিয়ে দেখে মেহেরিন ঘুমে বিভোর। সে হেসে তাকে কোলে নিয়েই বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। বাড়ির সবাই তাদের এমন একসাথে দেখে অনেক অবাক হয় আবার খুশি ও হয়। অভ্র এসে নির্ঝর কে বলে মেহেরিন কে রুমে রেখে আসতে। নির্ঝর মেহেরিন কে রুমে নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দেয়। অতঃপর তার গায়ে চাদর টা টেনে দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে অভ্র দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অভ্র হেসে বলে..
– যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। মেহেরিন মনে হচ্ছে খুব জ্বালিয়েছে তোমাকে আজ!
নির্ঝর হেসে বলে..
– না দা তেমন না।
অতঃপর নির্ঝর ফ্রেশ হবার পর সবাই মিলে খানিকক্ষণ বসে গল্প করতে থাকে।
.
নিশি’র শশুড়বাড়ি..
নিশি আর নিশান’র সবে বিয়ে হয়েছে তাই নিশি বেশি একটা খান বাড়িতে আসতে পারে না। তত’ই হোক এখন সে নতুন বউ তাই তাকে এভাবে হুটহাট করে বাড়ির বাইরে যাওয়া সবাই নিতে পারে না অবশ্য তার শশুর শাশুড়ি’র এতে সমস্যা নেই কিন্তু তবুও নিশি রিস্ক নিতে চায় না।
নিশি রান্না ঘরে কাজ করছিল তখন হঠাৎ করেই নিশান এসে তার কোমর জরিয়ে ধরে। হঠাৎ নিশানের ছোঁয়া পেয়ে কেঁপে উঠে নিশি। নিশান নিশি’র কানে ফুঁ দিয়ে বলে..
– জান পাখি!
– সমস্যা কি এমন করছেন কেন?
– তুমি আমাকে সময় দিচ্ছ না এটাই তো সমস্যা!
– ঢং
বলেই নিশানের পেটে গুঁতো মারে। নিশান আউচ বলে দূরে সরে যায়। নিশি হাতে খুন্তি টা নিয়ে নিশানের দিকে ঘুরে বলে..
– কাজ করছি ডিস্টার্ব করবেন ন বুঝলেন!
– তোমার দ্বারা রান্না বান্না হবে না বুঝলে তাই এসব খেটে লাভ নেই।
নিশি রেগে নিশানের দিকে এগিয়ে বলে..
– কি বললেন আপনি!
নিশান একহাত দিয়ে নিশি’র কোমড় জরিয়ে ধরল। অতঃপর তার হাত থেকে খুন্তি টা নিয়ে নিশি’র কপালের সাথে নিজের কপাল মিলিয়ে বলল..
– সত্যি’ই তো বললাম রান্না বান্না, ঘর সামলানো তোমার দ্বারা হবে না।
– তাহলে কি হবে শুনি!
নিশান হেসে নিশি’র নাকের সাথে নিজের নাক ঘষিয়ে বলল..
– তুমি শুধু আমাকে সামলাতে পারবে আর..
– আর..
নিশান নিশিকে ঘুরিয়ে ওর পিঠ নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। অতঃপর নিশি’র কানে ফিসফিসিয়ে বলে..
– আমাদের বাচ্চাদের সামলাবে বুঝবে!
নিশি চোখ বড় বড় করে নিশানের দিকে ঘুরে তাকাল। নিশান তাকে একটা চোখ টিপ দিল।
– ছাড়ুন আমাকে, আপনার এই বাজে কথা শোনার টাইম নেই আমার কাছে!
– জান পাখি! আমাকেই তোমার টাইম দিতে হবে বুঝলে!
অতঃপর নিশান নিশি কে কোলে তুলে নেয়। নিশি বেশ কিছুক্ষণ ছটফট করতে থাকে। অতঃপর নিশান নিশি কে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে যায়!
.
ক্যাট ডেসিন টেবিলে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে থাকে। হুট করেই কাব্য এসে তার কোমর জরিয়ে ধরে। ক্যাট খানিকটা কেটে উঠে। অতঃপর আয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখে কাব্য তার ঘাড়ে কিসি দিচ্ছে। ক্যাট চোখ বন্ধ করে নেয়। কাব্য’র প্রত্যেকটা ছোঁয়া অনুভব করতে থাকে সে। অতঃপর কাব্য ক্যাট কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। অতঃপর তার ঠোঁটের দিকে আগাতে থাকে কিন্তু কাব্য তার ঠোঁটে কিস না করেই তার কোমর জরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। ক্যাট চোখ খুলে তাকিয়ে থাকে কাব্য’র দিকে। কাব্য খানিকটা দুষ্টুমি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে…
– কি?
– কিস মি!
– কিহহ?
– হাম হাম সবসময় আমি কি কিস করবো নাকি আজ তোমার পালা দাও।
– পারবো না।
– কিহহ?
– যা শুনলে তাই পারবো না আমি। ছাড়ো আমায়।
কাব্য ক্যাট কে টেনে নিজের কাছে এনে বলে..
– কিস তো তোমাকেই করতে হবে জানু। নাহলে আজ আমি তোমাকে ছাড়ছি না।
ক্যাট মুখ অন্যদিকে দিকে ঘুরিয়ে নেয়। কাব্য তবুও তাকে ছাড়ে না। ক্যাট অসহায় ভাবে কাব্য’র দিকে তাকায়। কাব্য ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। ক্যাট বলে উঠে..
– আরে মেহেরিন!
কাব্য ক্যাট কে না ছেড়ে পিছনে তাকায়। ক্যাট সেই সুযোগে কাব্য’র গালে কিস করতে যাবে তখন হুট করে কাব্য তার দিকে ফিরে। অবশেষে কাব্য’র ঠোঁটে কিস টা লেগে যায়। ক্যাট ভেবাছেকা খেয়ে যায়। ক্যাট কাব্য কে ছাড়তে যাবে কিন্তু কাব্য উল্টো তাকে কিস করতে থাকে। ক্যাট কাব্য’র কলার জরিয়ে ধরে!
.
আরিশা আজ মারাত্মক রেখে আছে রোদ্দুর’র উপর। সে আজ ২০ মিনিট পর তাকে ভার্সিটি থেকে নিতে এসেছে। আর এই রাগে আরিশা আজ সারাদিন রোদ্দুর’র সাথে কথা বলে নি। রোদ্দুর অনেকবার চেষ্টা করেছে কিন্তু আরিশা বার বার তাকে ইগনোর করে যাচ্ছে।
রাতে সবাই ডিনার করার পর আরিশা তার রুমে আসে। রোদ্দুর রুমে এসে দরজা আটকে দেয়। আরিশা রোদ্দুর কে দেখে বই নিয়ে বসে পড়ে। রোদ্দুর আরিশা’র সামনে বসে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রায় এভাবে কিছুক্ষণ পার হবার পর আরিশা বলে উঠে..
– এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে, হুম!
রোদ্দুর কথা বলে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আরিশা বলে উঠে..
– আপনার সাথে আমার কোন কথা নেই।
রোদ্দুর এবার বলে..
– এই নিয়ে ১০৩ বার সরি বললাম। এখনও কথা বলবে না।
– না।
– আচ্ছা আমার কি দোষ বল, জ্যাম এ আটকে গেছিলাম তাই!
– ওহ আচ্ছা, জ্যাম এ আটকে গেছো না। তুমি কি ভাবো আমি কিছুই জানি না।
– আমি আবার কি করলাম!
– কি করো না বল হুম, নিশ্চিত কোন মেয়ের সাথে ছিলে তুমি।
– আরু তোমার কসম, আমি সত্যি জ্যাম এ আটকে ছিলাম।
– তাহলে ফোন কেন ধরোনি বল।
– আরে ওটা সাইলেন্ট এ ছিল।
– হ্যাঁ এখন তো এই কথাই বলবে, বলবে এটা ছিল বলবে এটা ছিল। কতো বাহানা তোমার। আর কি পারো তুমি হুম। বল আর..
বলার আগেই রোদ্দুর’র হুট করে আরিশা’র ঠোঁটে হালকা ভাবে কিস করে বলল..
– এটা!
– রোদ্দুর’র বাচ্চা তোমাকে তো!
– আরে বাচ্চা হতে এখনো অনেক সময় লাগবে.
– তোমাকে তো আমি..
বলার পর’ই তার পিছনে ছুটতে থাকে। দুজনেই এভাবে ছোটাছুটি করতে থাকে। অনেকক্ষন এভাবে ছোটাছুটি’র পর দুজনেই হাঁফিয়ে যায়। আরিশা হাঁপিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। রোদ্দুর’র এসে তার পেটের ওপর শুয়ে পরে। আরিশা বলে..
– এই সরো তুমি!
– সরবো কেন। আমার আরু,আমার বউ তার পেট, আমার মাথা তোমার কি?
– তুমি একটা গাধা!
– আর তুমি এই গাধার আরু!
একথা শোনার পর আরিশা হেসে উঠে। রোদ্দুর ও তার হাসি দেখে হাসতে থাকে।
.
নীলাশা রাইয়ান কে কোলে নিয়ে ঘুম পারাচ্ছে। তখন নীল এসে নীলাশার’র কপালে চুমু খেয়ে তার পাশে বসে পরে। নীলাশা নীলের দিকে ঘুরে পরে। অতঃপর নীলের বুকে তার মাথাটা হেলিয়ে দেয়। নীল হেসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলে..
– রাইয়ান ঘুমিয়ে গেছে!
– অনেক কষ্টে ঘুম পাড়ালাম জানো!
– হায়রে এক বাচ্চা আরেক বাচ্চা কে ঘুম পারাচ্ছে।
– হাসছেন আপনি!
– হাসবো না তো কি করবো!
তাদের কথার আওয়াজে রাইয়ান আবারো জেগে গেল। সে জেগেই কাঁদতে লাগলো। নীলাশা অসহায় চোখে নীলের দিকে তাকাল। নীল হেসে রাইয়ান কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর তাকে দোলাতে দোলাতে অনেক কষ্টে আবারো ঘুম পাড়ালো। অতঃপর তার দোলনায় তাকে শুইয়ে দিয়ে নীলাশা’র দিকে তাকাল। নীলাশা গুটিসুটি মেরে বিছানার এক কোনে ঘুমিয়ে আছে। নীল হেসে তার গায়ে চাদর টেনে দিল। অতঃপর তার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরল!
#চলবে….
)