#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৩+34
কয়েকদিন পর…
নির্ঝর কফি শপে বসে আছে। কোন কারন নেই এভাবেই সময় কাটানোর জন্য। হঠাৎ করে একটা মেয়ে এসে তার পাশে বসল। নির্ঝর মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে অতঃপর কফি মগে চুমুক দিয়ে ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে রইল। মেয়েটা একটু একটু করে তার কাছে আসতে লাগল। নির্ঝরের এতে কোন ভাবান্তর নেই। সে তার মতোই বসে আছে। মেয়েটা এবার নির্ঝরের গা ঘেসে বসল। নির্ঝর এবারো কিছু বললো না। হুট করেই মেয়েটা নির্ঝরের বাহু তে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকাল। মেয়েটা বাঁকা হাসি বলে..
– হেই হ্যান্ডসাম!
নির্ঝর কিছু না বলে মেয়েটার হাত সরিয়ে দিল। মেয়েটা আবারো তার হাত ধরতে গেলে নির্ঝর দাঁড়িয়ে গেল। অতঃপর বিল দিয়ে বেরিয়ে গেল কফি শপ থেকে। কফি শপ টা একটা শপিং মলে ছিল। নির্ঝর’র মুখে একটা কালো মাস্ক পড়ে নিল। সেলিব্রিটি হয়ে এভাবে একা একা ঘোরা ফেরা তার ঠিক না। নির্ঝর বের হয়ে একটা দোকানে গেল। এই মেয়েটা তার পিছু পিছু সেখানেও গেল। মেয়েটা হেঁটে এসে একটা শার্ট নিয়ে নির্ঝরের দিকে ধরে বলল…
– এটা পড়লে খুব হট লাগবে তোমাকে!
নির্ঝর মেয়েটার দিকে তাকাল। মেয়েটা হেঁটে হেঁটে নির্ঝরের অনেকটা কাছে আসল। নির্ঝর তবুও কিছু বলল। একসময় মেয়েটা আর নির্ঝরের মাঝে ২ ইঞ্চি’র তফাৎ হয়ে গেল। মেয়েটা নির্ঝরের আরো কাছে যাবার আগেই নির্ঝর মেয়েটার বাহু ধরে তাকে দূরে সরিয়ে দিল। অতঃপর পকেট থেকে টাকা বের করে মেয়েটার হাতে দিয়ে দিল। মেয়েটা অনেকটা অবাক হলো। অতঃপর নির্ঝর সেখান থেকে বেরিয়ে গেল।
নির্ঝর বের হবার পর’ই নিরব আসলো সেখানে। সে হেসে নিজের ক্যামেরায় বন্দী করা নির্ঝর আর মেয়েটার কয়েকটা ছবি তুলল। সব গুলো ছবিতে নির্ঝর আর মেয়েটা খুব ঘনিষ্ঠ ভাবে ছিল। এসব মেহেরিন দেখলে নির্ঝর আর তার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবে এটা ভেবেই নিরব বাঁকা হাসি দিল। এদিকে মেয়েটা রেগে বলে উঠে..
– এতো এটিটিউড ছেলেটার। আমাকে পাত্তাই দিল না বরং টাকা দিয়ে চলে গেল।
নিরব হেসে তার হাতে আরো টাকা দিয়ে বলল..
– তোমার কাজ কমপ্লিট এখন আসতে পারো আর হ্যাঁ নিজের মুখ বন্ধ রাখবে বুঝলে।
– তুমিও কি এখন টাকা দিয়ে আমাকে অপমান করছো।
– অপমান করার কি আছে। এটা তোমার পারিশ্রমিক। তুমি আমার কাজ করেছো তার জন্য এখন আসতে পারো!
বলেই নিরব চলে গেল। মেয়েটা কিছুক্ষণ টাকা গুলোর দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।
নিরব একটা কফি শপে ঢুকে ক্যামের ছবি গুলো দেখতে লাগল। তখন হুট করেই তার হাত থেকে কেউ ক্যামেরা টা নিয়ে নিয়ে গেল। নিরব বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর তার পাশে বসা। সে একের পর এক ছবি দেখছে আর বাঁকা হাসছে। নিরব থতমত খেয়ে গেল। এখন কি হবে এটাই ভাবতে লাগলো। নির্ঝরের হাত থেকে ক্যামেরা টা নেওয়ার চেষ্টা ও করলো কিন্তু তখন নির্ঝরের গার্ড তাকে আটকে দিল। নিরব রেগে সেখানেই বসে রইল। নির্ঝর এবার খানিকটা হেলান দিয়ে বসে ছবি গুলো ডিলেট করে বলতে লাগল..
– ছবি গুলো খুব ভালো তুলেছো দেখছি। ভালো ফটোগ্রাফার হতে পারবে।
– আমার ক্যামেরা দাও।
– এই নাও!
নিরব ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে দেখে কোন ছবি নেই। নির্ঝর হেসে বলে..
– নিজেকে বেশি চালাক ভেবো না। মেহু পাখি শুধুই আমার। আমাকে আর তাকে আলাদা করার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে তোমার আর সেটা আমিই করবো মাইন্ড ইট!
অতঃপর নির্ঝর উঠে চলে গেল। নিরব রেগে ক্যামেরাটা জোরে আছাড় মারল। নির্ঝর তার প্ল্যান এতো সহজে ধরে ফেলবে এটা তার ধারনা বাইরে ছিল। কিন্তু এই বলে সে থেমে যাবে না আরো কিছু তো অবশ্যই করবে সে।
.
মেহেরিন শান্ত, অরনি আর বিড়াল বাচ্চা কে নিয়ে খেলছে। তাঁদের ঘরে এখন ৩ বউ রান্না বান্না করছে। নিহা কোটে গেছে আর আহিয়ান অফিসে। অভ্র আর নীলও অফিসে। নীলাশা রাইয়ান কে নিয়ে ঘুমাচ্ছে। মেহেরিন অনেকক্ষণ বসে বসে তাদের সাথে খেলল। অতঃপর একটু সোফায় হেলান দিয়ে বসল। ফোনটা তখন টুং টুং করে বেজে উঠলো। মেহেরিন ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নির্ঝরের মেসেজ। এটা দেখেই মেহেরিন উঠে আনহা কে বলল..
– মিষ্টি ভাবী আমি বাইরে যাচ্ছি!
আনহা রান্না ঘর থেকে বাইরে এসে বলল..
– কোথায় যাচ্ছ?
মেহেরিন জুতার ফিতা বাঁধতে বাঁধতে বলল..
– নির্ঝর মেসেজ দিয়েছে বলেছে দেখা করতে!
– নিজেকে একবার আয়নায় তো দেখে যাও।
– কেন আমি দেখতে কি সুন্দর না।
– এটা কখন বললাম, কিন্তু আমি আজ পর্যন্ত এটা দেখলাম না কোন মেয়ে তার বফ এর সাথে দেখা করার আগে একবার আয়নায় নিজের মুখটাও দেখল না।
আনহা’র কথায় ক্যাট আর আরিশা’র হাসির শব্দ পাওয়া গেল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে আনহা’র সামনে দাঁড়িয়ে বলল..
– দেখো আমাকে বলো ঠিক আছি কি না!
আনহা তাকে পা থেকে মাথা আবদি দেখে, একটা জিন্স আর হুডি পড়া। আর চুল গুলো কোন মতে ঝুটি করে ফেলেছে হয়তো অনেক তাড়াহুড়ো করে বেঁধেছে। আনহা বলে উঠে..
– একটু মেয়েলি পোশাক ও পড়তে পারো ননদিনী।
– আমি আগে কখনো পড়েছি যে আজ পড়বো।
– আগে কখনো তো এভাবেও কাউকে ভালোবাসো নি তাই না!
মেহেরিন তাকিয়ে দেখল পেছন থেকে ক্যাট আর আরিশা উঁকি দিয়ে তাকে দেখছে। মেহেরিন বলে উঠে..
– কিন্তু নির্ঝর তো আমাকে এই ভাবেই পছন্দ করে নাহ!
– থাক বোন তোমাকে বোঝানোর সাধ্য আমার নেই। কিন্তু চুল গুলো ঝুটি কেন করলে তোমার তো খোলা চুল’ই বেশি ভালো লাগে নাহ!
– এমনেই করলাম কিন্তু নির্ঝর পরে ঝুটি খুলে ফেলবে আমি জানি।
পেছন থেকে ক্যাট আর আরিশা বলে উঠে..
– ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার!
– আচ্ছা টাঠা আমার দেরি হচ্ছে।
বলেই মেহেরিন দৌড়ে নিচে চলে এলো। আনহা হতাশা প্রকাশ করে ক্যাট আর আরিশার দিকে তাকাল। তারা দুজনেই ফিক করে হেসে দিল। মেহেরিন নিচে নেমে দেখল নির্ঝর গাড়ির ওপরে বসে ফোন টিপছে। নির্ঝর দুই হাত বাহু তে গুঁজে তার সামনে দাঁড়াল। নির্ঝর মেহেরিন’র উপস্থিত বুঝতে পেরে হেসে বলল..
– এসে গেছো মেহু পাখি!
– সকাল থেকে কোথায় ছিলেন?
– সকাল থেকে! ( গাড়ি থেকে নেমে ) আমার আরেক গফ”র সাথে ডেট করতে গিয়েছিলাম
– ওহ ভালো
বলেই মেহেরিন গাড়ির কাছে গেল। তখন নির্ঝর বলে উঠে..
– আজ গাড়িতে না বাইকে করে যাবো!
অতঃপর নির্ঝর বাইক নিয়ে মেহেরিন’র সামনে আসল। মেহেরিন হেলমেট পড়ে পেছনে বসতে যাবে নির্ঝর বলে উঠে..
– পেছনে না সামনে বসো!
– না সামনে আপনার গফ কে বসান।
নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র হাত টেনে বলল..
– সামনে নির্ঝরের মেহু পাখি বসবে বুঝলে!
মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে এসে বসল। বাইক নির্ঝর’ই চালাবে কিন্তু মেহেরিন নির্ঝরের সামনে তার এমন ভাবে বসল যাতছ নির্ঝরের বুকে মাথা রাখা যায়। নির্ঝর’ই তাকে এভাবে বসতে বলল। মেহেরিন বসেও পরল তবে নির্ঝরের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করল। নির্ঝর হেসে বাইক স্টার্ট দিল। অতঃপর বলতে লাগল…
– সামনে তোমাকে কেন বসতে বললাম জানো।
মেহেরিন তাকিয়ে রইল। নির্ঝর টেনে মেহেরিন কে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে বলল..
– যাতে আমার মেহু পাখি আমার বুকের মাঝে থাকো!
মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। নির্ঝর হেসে বলল..
– রাগ কি এখনো কমে নি!
মেহেরিন কিছুই বললো না। নির্ঝর বাইক নিয়ে একটা নদীর ধারে আসল। অতঃপর মেহেরিন কে নামতে বলল। মেহেরিন ও নেমে গেল। অতঃপর নির্ঝর হেলমেট খুলে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন ও নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর হেসে মেহেরিন’র চুলের ঝুটি টা খুলে ফেলল। বলল…
– তোমাকে খোলা চুলেই বেশ লাগে। চুল বেধো না কখনো!
অতঃপর তার চুল গুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে দিল। তার হাতে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে। অতঃপর নদীর ধারে নরম ঘাসের উপর দুজনেই বসল। নির্ঝর টেনে মেহেরিন মাথা কে নিজের বুকের সাথে মিশাল। মেহেরিন চুপচাপ! নির্ঝর মেহেরিন’র মাথায় হাত দিয়ে বলল..
– আচ্ছা সরি!
মেহেরিন নির্ঝরের শার্টের বোতাম নিয়ে গুঁতাগুঁতি করতে লাগলো। নির্ঝর আবারো বলল..
– বললাম তো সরি! মেহু পাখি এখনো রাগ করে থাকবে। কথা বলো না।
– …
– আচ্ছা আর কখনো বলবো না এমন কথা।
-…
নির্ঝর মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রেগে তার মুখ নিজের দিকে ঘুরাল। অতঃপর নিজের কপালের সাথে তার কপাল ঠেকাল। দুজন ব্যতীত এখানে আর কেউ নেই। সূর্য ও অস্ত যাবে যাবে। পাখিরা দল বেঁধে তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। অনেকক্ষন’ই দুজন এভাবে থাকল। অতঃপর নির্ঝর মেহেরিন’র কপালে একটা ডীপ কিস করে বলল..
– আমার অস্তিত্ব একমাত্র একমাত্র তুমি। শুধু তোমার বাস আমার এই মনে বুঝলে মেহু পাখি!
– ঢং!
– ঢং তোমার সাথে করতেই ভালো লাগে মেহু পাখি!
মেহেরিন নির্ঝরের চুল গুলো এলোমেলো করতে করতে বলল..
– একটা কথা বলি!
নির্ঝর মেহেরিন’র অবাধ্য চুল গুলো কানে গুঁজে দিয়ে বলল..
– বলো!
– আমাকে কি আপনার এরকম পোশাকে ভালো লাগে না।
– হঠাৎ এই কথা কেন?
– না সবাই বলে আমি নাকি মেয়েলি পোশাক পরি না।আমার না ভালো লাগে না।
– জ্বি না বলো তুমি ছোটাছুটি করতে পারো না তাই আর একটা কথা হলো আমি তোমার পোশাক দেখে প্রেমে পড়েনি তোমার প্রেমে পড়েছি তাই এটার কোন প্রভাব আমার উপর পরে না। তুমি শুধু আমার কিউটি মেহু পাখি বুঝলা!
মেহেরিন হেসে বলল..
– ওহ আচ্ছা তারপর…
– তারপর! ( হেসে ) তারপর আর কি? বিয়ের পর কষ্ট করে শুধু একদিন শাড়ি পরে আমাকে দেখিও তাহলেই হবে।
– না পারবো না আমি শাড়ি পড়তে পারি না।
– আচ্ছা আমি পড়িয়ে দেবো তাহলে হবে।
– কিন্তু আমি তো শাড়ি সামলাতে পারি না।
– থাক আমি সামলে নেবো তাহলে হবে!
মেহেরিন এবার নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে জোরে হেসে দেয়। নির্ঝর ওর গালে হাত রেখে বলে..
– তোমাকে নিজের করে রাখতে যা করতে হয় সব আমি করবো মেহু পাখি!
মেহেরিন নির্ঝরের ঘাড়ে মাথা রেখে বলে…
– দেখি আপনি কি কি করেন!
– দেখো!
অতঃপর দুজনেই সূর্য অস্ত যাওয়া অবদি সেখানে বসে থাকে। অতঃপর নির্ঝর আবারো মেহরিনকে নিয়ে বাইকে উঠে গেল ঝরে বুকে মাথা রাখল এবার আর হেলমেট পরলো না । কিছুদুর যাবার পর নির্ঝর বাইক থামিয়ে দিল। মেহেরিন বলে উঠে,
– কি হলো বাই থামালেন যে বাড়ি এসে পড়লাম নাকি?
– না
– তাহলে
– সামনে তাকাও
মেয়ের সামনে মেরে সামনে তাকানো অতঃপর অবাক হয়ে নির্ঝরকে বলল,
– মেলা
– হুম মেলা
– আমি যাবো সেখানে
– হুম মেহু পাখি চলো!
অথবা দুজনে মিলে মেলায় গেল যাবার আগে মেহরিনকে একটা মাস্ক দিল। দুজনই কালো রঙের মাস্ক পড়ে এলো মেহেরিন। অনেক মিলন মেলায় গিয়ে নাগরদোলা চড়তে যাওয়ার বায়না করল শুধু কি নাগরদোলা আরো অনেক কিছু এটা করবে না না হয় ওটা করবে নির্ঝর বেচারার বায়না রাখতে রাখতে হাপিয়ে গেল। অবশেষে মেহেরিন বলল..
– এই শেষ আমি শুধু একটা আইসক্রিম’র গোলা খাবো আর কিছু না।
– সত্যি তো!
– হ্যাঁ হ্যাঁ সত্যি সত্যি দুই সত্যি। কিনে দিন না।
নির্ঝর হেঁসে তাকে আইসক্রিম কিনে দিল। মেহেরিন এবার মাস্ক খুলে আইসক্রিম খেতে লাগল। এদিকে নির্ঝর মাস্ক খুলল পানি খাওয়ার জন্য। মেহেরিন আইসক্রিম খেতে খেতে এক পাশে এসে দাঁড়াল। একজন সেখানে রেশমি চুড়ি বিক্রি করছিল। মেহেরিন’র রেশমি চুড়ি গুলো দেখে বেশ লোভ হলো। সে নির্ঝর কে একথা বলার জন্য পেছনে ফিরে দেখে কয়েকটা মেয়ে নির্ঝরকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন আইসক্রিম খাওয়া বন্ধ করে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে। এদিকে নিজের মুখ থেকে মাক্স খোলার কারণে কিছু লোক চিনতে পেরেছে তারা সবাই নিজের সাথে ছবি তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পরলো। এদিকে কোন গার্ড নিয়ে না আসায় নির্ঝর পরল বিপদে। এখানে সবচেয়ে বড় বিপদের কথা হলো তাকে ঘিরে ছবি তুলছে তাদের বেশ কয়েকজন’ই মেয়ে। তাকে এভাবে দেখলে মেহেরিন যে তার বারোটা বাজে সেটা তার অজানা নয়। মেহেরিন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে নির্ঝর বেশ হেসে হেসে মেয়েগুলোর সাথে ছবি তুলছে আর মেয়েগুলো নির্ঝরকে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরিন রেগে হাত থেকে আইসক্রিম ফেলে দিয়ে নির্ঝর এর কাছে যেতে লাগল। তখনই একটা মেয়ে নিজের কাঁধে হাত রাখতে যাবে, মেহেরিন তখন মেয়েটার হাত ধরে তাকে সরিয়ে দিল। সবাই এখন নির্ঝরকে ছেড়ে মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন হুট করে এসে নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ধরলো নির্ঝর চোখ বড় বড় করে মেহেরিন’র কান্ড দেখছে। মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিল এখানে সে আরেকটা ধাক্কা খেলো। সবাই এখন তাদের কথা বলাবলি করছে মেহেরিন বলে ওঠে,
– কি করছেন এখানে এতো মেয়েদের মাঝে!
নির্ঝর থতমত খেয়ে গেল। এর মধ্যে একজন বলে ওঠে,
– মেহেরিন বর্ষা খান আর নির্ঝর চৌধুরী মেঘ একসাথে!
নির্ঝর হেসে বলে..
– এতো উত্তেজিত হবার কিছু নেই। She is my gf. My love and my would be wife. Ok guys.মনে হয় সবার এবার বুঝতে সহজ হলো।
নির্ঝরের কথা শুনে মেহেরিন হেসে তাকে ছেড়ে দিল। অতঃপর একজন বলে উঠে..
– তাহলে কি মেহেরিন বর্ষা খান আর নির্ঝর চৌধুরী মেঘ রিলেশন এ আছেন।
– হুম অবশ্যই! আচ্ছা আমাদের এখন যেতে হবে। আল্লাহ হাফেজ!
বলেই নিজের মেহেরিনের হাত ধরে নিয়ে গেল সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। অতঃপর সোশ্যাল মিডিয়ায় খবর ছড়াতে লাগলো মেহেরিন বর্ষা খান আর নির্ঝর চৌধুরী মেঘ দুজনেই প্রেমে আবদ্ধ। খুব জলদি বিয়ে করছে তারা। খবরটা কারো ভালো লাগলো আবার কারো খারাপ লাগলো । তবে কথা খবরটা শুনে চোখের কোণে জল এসে ঠেকলেও ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটল। কারন একটাই তার ভালোবাসার মানুষটা নিজের ভালোবাসা পেয়েছে। এটাতেই অনেক খুশি সে।
তবে সেই লোকটা একথা শুনে খুশি না আবার তার খারাপ লাগেনি তার মনে শুধু এই চিন্তা,
– আচ্ছা এরপর কী হবে আমাদের প্রতিশোধ পূর্ণ হবে তো, নাকি নির্ঝর সব সময়ের মত এবারও আদুরী কে বাঁচানোর চেষ্টা করবো। যদি এমনই হয় তাহলে নির্ঝরকে বাঁচতে দেবে না। এত বছর পর যার জন্য প্রতিনিয়ত এতো কষ্ট পেয়েছি তাকে কোনভাবেই আমি বাঁচতে দেবো না। দরকার হলে মেহেরিন আর নির্ঝরকে আমি এক হতে দেবে না।
আরিশা রোদ্দুর কাব্য ক্যাট আরিয়ানে খবরটা প্রেমের পেছনে পড়ে গেল ইরান বলে ওঠে,
– বাহ বাহ এতো প্রেম এতো ভালোবাসা!
কাব্য বলে উঠে,
– নির্ঝর যে কতো মেয়ের মন ভাঙলো তা এই সোশাল মিডিয়াতেই দেখা যাচ্ছে।
রোদ্দুর বলে উঠে,
– মেহেরিন এর কথাটা কি না বললেই নয়। বেচারা ছেলেরা তো বিশ্বাস’ই করছে না এসব।
মেহেরিন ওদের কথায় কান দেয় না। নির্ঝর বলে উঠে,
– সবাই দেখি আমাদের প্রেমে নজর লাগিয়ে দিচ্ছে।
সবাই হেসে উঠলো।ক্যাট বলে..
– তোমাদের প্রেমে কাজলের ফোটা লাগিয়ে দেবো তাহলে হবে।
নির্ঝর কথাটা শুনে হেসে দেয়। এর মাঝেই নিশান আর নিশি খান বাড়িতে আসলো। তাদের দেখে সবাই খুশী। মেহেরিন বলে উঠে,
– আপি!
– আদুরী!
দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরল। অতঃপর নিশান’র সাথে সবাই কুশল বিনিময় করল। মেহেরিন নিশান কে বলে উঠে…
– জিজু তুমি কিন্তু এবার আপি কিন্তু আপি কে রেখে যাবে।
– হাম ওকে রাখতেই এসেছি। ১ সপ্তাহ পর আমি লন্ডন চলে যাবো ডাক্তারি কোর্স কমপ্লিট করতে। নিশিকেও নিয়ে যাবো।
– নিয়ে যাবেন..
– হ্যাঁ গো শালিকা। আমার জান পাখি কে ছাড়া আমি থাকবো কিভাবে। তাই ১ সপ্তাহের জন্য ওকে রেখে গেলাম। বেশি বেশি ভালোবাসো বোনকে।
– কত দিনের জন্য যাবেন।
– ৪ বছর!
– কিহহহহ?
– হাম শালিকা!
– দা! আপি কে এতো দিন না দেখে আমি থাকবো কি করে।
নিশি মেহেরিন কে জরিয়ে ধরে বলে..
– আরে মন খারাপ করার কি আছে? ফোনে তো আমাদের কথা হতেই থাকবে। আর আমি তো আছি একসপ্তাহ।
– আপি!
বলেই নিশি কে জরিয়ে ধরল। অতঃপর টানা ১ সপ্তাহ তারা সবাই মিলে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিল। অতঃপর নিশান নিশি কে নিয়ে চলে গেল!
#চলবে….
( আরেকটা পর্ব দেবার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ সবাইকে!)#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৪
৬ মাস পর…
এই ছয় মাসে মেহেরিন আর নির্ঝরের সম্পর্ক অনেকটা গভীর হয়ে যায়। মেহেরিন অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে নির্ঝরের উপর। সব কিছু ঠিকঠাক চলতে থাকে। আজ নিশি লন্ডন থেকে ফিরছে। শুধু নিশি’ই থাকবে কারন ও প্রেগন্যান্ট! তাই এ অবস্থায় নিহা আর আনহা চায় নিশি তাদের সাথেই থাকুক। নিশান ও দ্বিমত করে না কারন ওদের কাছে থাকলে নিশি সুস্থ’ই থাকবে। সবার সাথে থাকলে ওর মন ভালো থাকবে তাই নিশান নিশি কে নিয়ে দেশে ফিরে। আপাতত সেও কদিন থাকবে অতঃপর চলে যাবে। কাব্য, ক্যাট, মেহেরিন আর নির্ঝর গেছে তাদের আনতে। ডেভিল ও এসেছে তাদের সাথে। সবাই দাঁড়িয়ে ওয়েট করছে তাদের জন্য। ফ্লাইট কিছুক্ষণ আগেই ল্যান্ড করেছে। কাব্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফিসফিসিয়ে ক্যাট কে বলছে..
– আমাদের বিয়ে তো নিশি’র আগে হলো, তাহলে তুমি..
ক্যাট চোখ গরম করে কাব্য’র দিকে তাকায়। কাব্য চুপ হয়ে যায়। এদিকে নিশি আর নিশান ও চলে আসে। মেহেরিন হেসে তাকে জরিয়ে ধরে। অতঃপর বলে..
– আমার আরেক খালামনি আসছে!
নিশান বলে ওঠে..
– আমিও বাবা হচ্ছি!
নির্ঝর আর কাব্য বলে উঠে..
– আমরাও মামা হচ্ছি ওকে।
ক্যাট বলে উঠে..
– আর আমি মামানী!
নিশি বলে উঠে..
– কেউ একটু বল আমি মা হচ্ছি!
অতঃপর সবাই হেসে উঠে। নিশান নিশি’র ধরে তাকে গাড়ির কাছে নিয়ে যায়। সবাই গাড়িতে চড়ে রওনা দেয় খান বাড়িতে। অভ্র, আনহা, আহিয়ান, নিহা, নীল আর নীলাশা সবাই অপেক্ষা করছিলো তাদের জন্য। নিশি কে দেখতে পেয়ে সবাই বেশ খুশি হলো। আর খুশির সংবাদ’ই বটে। বেশ কয়েকদিন পর এই খুশি তাদের বাড়িতে এলো। শান্ত,অরনি দৌড়ে এলো নিশি’র কাছে। সবাই কিছুক্ষণ বসে গল্প করার পর নীলাশা নিশি’র কোলে রাইয়ান কে দিলো। একটা জমজমাট পরিবেশে তৈরি হলো!
.
রাত্রি বেলা..
মেহেরিন দাঁড়িয়ে ফোন টিপছিল। পিছন হঠাৎ কারো উপস্থিতি পেয়ে সে তার সামনে ফলের ঝুড়িতে থাকা ছুরি টা নিয়ে পিছনে ফিরেই গলা তার দিকে ধরল। নির্ঝর গলায় ছুরি দেখে বলে উঠে..
– মেহু পাখি আমি আমি। তোমার লেজ কাটা ব্যাঙ!
মেহেরিন ছুরি টা সরিয়ে তাকিয়ে দেখে নির্ঝর! সে ছুরি টা সরিয়ে বলে উঠে..
– আপনি!
– উফ আরেকটু হলেই আমার প্রান টা চলে যেত। এটা কি হলো?
– আমি ভাবলাম অন্য কেউ!
নির্ঝর কোমরে হাত রেখে মেহেরিন’র সামনে দাঁড়িয়ে বলল…
– এটা কোন ধরনের কথা। সবাই তার ভালোবাসার মানুষের গায়ের গন্ধেই তাকে চিনে যায় আর তুমি আমাকে চিনতে পারছো না।
– না। কারন সবাই আপনার মতো দিনে দিনে পারফিউম চেঞ্জ করে না। আর এতো পারফিউমের ঘ্রাণ মনে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব না।
নির্ঝর হেসে পেছন থেকে মেহেরিন কে জরিয়ে ধরে বলে..
– জানো মেহু পাখি তোমার গায়ের গন্ধ না তোমার উপস্থিতিতে আমার হার্ট বিট বলে দেয় তুমি আমার কাছে।
– হামম হামম!
– কি এমন করছো তুমি!
– কিছু না একটু কাজ করছি!
বলেই মেহেরিন আবারো সেই কাজের মধ্যে ঢুকে গেল। নির্ঝর আস্তে আস্তে তার গাল দিয়ে মেহেরিন’র গালে স্লাইড করতে থাকে। হঠাৎ মেহেরিন বলে উঠে..
– আম্মুউউ!
– কি হলো! ( মেহেরিন কে ছেড়ে )
– আপনার দাড়ি!
– আমার দাড়ি!
– হ্যাঃ আপনার এই খোঁচা খোঁচা রাক্ষস দাড়ি যা আমার গালের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে!
– তুমি জানো কতো মেয়ে আমার এই চাপদাড়ির পাগল!
– ভালো তাহলে ওদের নিয়েই থাকেন!
বলেই চলে গেলো।
– আরে মেহু পাখি শোন তো। রেগে যাচ্ছ কেন?
মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকাল। অতঃপর তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিল। নির্ঝর কিছু বলতে যাবে এর আগেই দরজা বন্ধ করে দিল। বেচারা নির্ঝর হতাশ নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। অতঃপর আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের দাড়ি গুলো দেখতে লাগলো। কি মনে করে বাথরুমে চলে গেল। কিন্তু পর বেরিয়ে এসে নিজের দাড়ি গুলো দেখতে লাগল। না আগের থেকে এখন অনেকটা ছোট লাগছে। নির্ঝর এবার হেসে মেহেরিন’র রুমের দিকে গেল। কিন্তু দরজা তো বন্ধ। তো কি বেলকনি কবে কাজে আসবে। নির্ঝর দ্রুত গ্রিল বেয়ে বেয়ে মেহেরিন’র রুমে এলো। বরাবরের মতো দরজা খোলাই পেল বেলকনির। মেহেরিন’র ঘরে সেই গান বাজছে আর মেহেরিন একা একা নাচছে। হুট করেই নির্ঝর এসে তার কোমর ধরে নিজের কাছে টেনে আনলো। অতঃপর তাকে নিয়ে নাচতে শুরু করল। মেহেরিন এতোটা অবাক হলো না কারন সে জানত নির্ঝর আসবে। অতঃপর নাচের শেষে নির্ঝর মেহেরিন কে নিজের কাছে টেনে পেছন থেকে তাকে জরিয়ে ধরল। অতঃপর আবারো তার গালের সাথে মেহেলিন’র গাল স্লাইড করল। মেহেরিন চোখ বন্ধ করে নিল অতঃপর ব্যাথা না পাওয়ায় ফিরে তাকাল। নির্ঝরের দাঁড়িতে হাত রেখে হেসে দিল। নির্ঝর পেছন থেকেই তাকে শক্ত করে জরিয়ে নিল।
অতঃপর মেহেরিন এবার ল্যাপটব নিয়ে বসে পরল। নির্ঝর মুখ ভেংচি দিয়ে মেহেরিন’র সামনে বসল। মেহেরিন কে বার বার খোঁচা দিতে লাগল। কিন্তু মেহেরিন’র কোন পাত্তা নেই। নির্ঝর অসহায় মুখ করে বলল..
– মেহু পাখি!
– হাম।
– চলো ঘুরতে যাই!
– কোথায়?
– লং ড্রাইভে!
– না অনেক বার গেছি আর না। নতুন কিছু থাকলে বলেন।
– আচ্ছা বাইকে চড়ে যাবে।
– অনেক বার গিয়েছি।
– আইসক্রিম!
– বিরিয়ানি, আইসক্রিম, ফুচকা খাওয়া শেষ!
– তার মানে তুমি যাবে না বলেই মনস্থির করে ফেলেছ।
– না বললাম তো নতুন কিছু থাকলে বলুন যাচ্ছি!
– ধুর ছাই যাওয়া লাগবে না কোথাও।
বলেই নির্ঝর চলে গেলো। মেহেরিন মুখ টিপে হাসল কারন মেহেরিন জানে নির্ঝর আবার আসবে। ঠিক তাই হলো খানিকক্ষণ পর আবারো নির্ঝর এলো। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর একটা বাঁকা হাসি দিয়ে হুট করেই মেহেরিন কে কোলে তুলে নিল। মেহেরিন বলে উঠে..
– কি হলো?
নির্ঝর নিজের কপালের সাথে মেহেরিন’র কপাল ঠেকিয়ে বলল..
– সারপ্রাইজ!
– ওকে আই’ম ইন্টারেস্ট!
– ইমপ্রেস না।
– না এখনো না!
– আচ্ছা চলো তাহলে!
অতঃপর নির্ঝর তাকে নিয়ে ছাদে চলে এলো। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল ছাদের কিনারে একটা টেবিল আর তেমন কিছু না। সবসময় যেমন থাকতো আজও তেমন। নির্ঝর তাকে কোল থেকে নামিয়ে দিল। মেহেরিন বলে উঠে..
– সারপ্রাইজ টা কি?
নির্ঝর মেহেরিন’র চোখের সামনে হাত দিল। অতঃপর তাকে একটু ঘুরাল তারপর হাত সরিয়ে নিল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকাল। নির্ঝর হাত দিয়ে ইশারা করে মেহেরিন কে সামনের দিকে তাকাতে বলল। মেহেরিন তাকিয়ে দেখল আকাশে চাঁদ দেখা যাচ্ছে। মেহেরিন বলে উঠে..
– চাঁদ!
– হাম মেহু পাখি! ( পেছন থেকে আবারো জরিয়ে ) আজ জোৎস্না রাত। এই রাতে দুজনেই মিলে চন্দ্র বিলাস করবো। এর আগে কখনো করেছো?
– না করি নি।
– তাহলে তোমার জন্য আনতে পারলাম তো নতুন কিছু!
– হুম!
– আচ্ছা তুমি একটু দাঁড়াও আমি আসছি!
বলেই নির্ঝর চলে গেল আর যাওয়ার আগে ছাদের আলো নিভিয়ে দিল। মেহেরিন এতোক্ষণ’এ খেয়াল করলো চাঁদের আলোতে পুরো ছাদ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। না হলে প্রথমে সে বুঝতেই পারে নি। অতঃপর খানিকক্ষণ পর নির্ঝর এলো। মেহেরিন তার দিকে তাকাতেই নির্ঝর বলে উঠে..
– চোখ বন্ধ করো মেহু পাখি!
মেহেরিন আবারো চোখ বন্ধ করে দাঁড়াল। অতঃপর নির্ঝর তার সামনে এসে দাঁড়ায়। দুজনেই তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। দূরত্ব নেই একটুও। শুধু দুজনের নিঃশ্বাস আর বয়ে যাওয়া বাতাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। মেহেরিন বলে উঠে..
– চোখ মেলবো!
– হাম তাকাও এবার!
অতঃপর মেহেরিন চোখ মেলে তাকাল..
#চলবে….