#More_than_love
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা
পর্বসংখ্যা-[০২]
-” মাই রেবিট। আমি এসে পড়েছি। না জানি এতদিনে তুমি কত বড় হয়ে গেছো। দেখতে অনেক সুন্দর হয়ে গেছো তাই না? জানো রেবিট আজকে একটা বাজে মেয়ের আমার গায়ের ওপর পড়েছিল। আমার মেজাজটাই বিগড়ে গেছে। আমি চেয়েছি বাংলাদেশ এ এসে ফার্স্ট তোমায় জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু ঐ স্টু*পিড গার্ল আমার গায়ের উপর পড়লো। তুমি কি রাগ করবে রেবিট? প্লিজ রাগ করো না। আমি কানাডা থেকে তোমার জন্য অনেক অনেক চকলেট এনেছি ওগুলো খেয়ে রাগ ভুলে যেও প্লিজ। আর আমাকে ভাইয়া ভাইয়া বলে আর হার্ট করো না কিন্তু। আজ লিপির বার্থডে ছিলো। তুমি কেন আসলে না? যাইহোক কাল সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আমি যাবো তোমার কাছে। আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না। আমি এখন ঘুমাবো, তুমি তো ঘুমিয়ে কাত হয়ে গেছো তাই না। আমার স্বপ্নে এসো তুমি কেমন। আল্লাহ হাফেজ মাই হারমোসা।
চোখ বুজে গভীর নিদ্রায় তলিয়ে যায় রোদ্দুর। এতক্ষন একটা ছবির সাথে কথা বলছিলো সে। আট-নয় বছরের একটা বাচ্চার ছবি। বাচ্চাটা কিছু খেলনা পাতিল নিয়ে খেলছিলো আর হাসছিলো তখনই ছবিটা তুলেছিল রোদ্দুর। এটাই ছিল শেষ দেখা। তারপর ১৩ টা বছর দূরে ছিলো সবার থেকে। পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমিয়েছিল সুদূর প্রবাসে।
________
-” কি হলো রোজা, রুহি? খাচ্ছো না কেন? এনিথিং রং?
বাবার এহেন কথায় বেসম খেলো রোজা। রুহি তাড়াতাড়ি করে বোনকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে –
-” বাবা ও কিছু না এমনিই। রোজা পানি টা খেয়ে নে।
রোজা রুহির হাত থেকে পানিটা নিয়ে খেয়ে নেয়। তার এখন কিছুতেই মন বসছেনা। রুহির ও একই দশা। খাবার খাওয়ার সময় অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল দুজনেই। রোজা কিছুটা রিল্যাক্স হলে তার বাবা আয়মান চৌধুরী জিজ্ঞেস করে-
-” মামনি তোমরা দুজনে লিপির বার্থ ডে তে গিয়েছিলে?
রুহি ভাত নাড়তে নাড়তে বলে –
-” পাপা আমি যাইনি। রোজা গিয়েছিলো শুধু।
আয়মান চৌধুরী কপাল কুঁচকে ফেলে। গলার স্বর নরম করে বলে-
-” কেন যাওনি মামনি? রোজা তোমাকে কিছু বলেছে? দু বোনে কি ঝ”গড়া করেছিলে।
বাবার কথায় রোজা ফুঁসে ওঠে। রাগান্বিত হয়ে বলে-
-” বাবা তোমার কি আমাকে ঝগরুটে মনে হয়? আমি কেন শুধু শুধু ওর সাথে ঝগড়া করতে যাবো? তোমাদের এই চিন্তার জন্য সবাই আমাকে ঝগরুটে বলে। তোমার খালি সবসময়ই মনে হয় আমি ওকে বকি। খাবোনা আমি যাও।
রোজা গটগট করে উপরে চলে যায়। আয়মান আশ্চর্য হয়ে মেয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ এত রাগ কেন করলো? রুহি সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আয়মান চৌধুরী দ্বিধান্বিত চোখে রুহির দিকে তাকিয়ে বলে-
-” মামনি। রোজা এমন করছে কেন? ওর কি কিছু হয়েছে?
রুহি ঠোঁট উল্টে ফেলে বাবার কথায়। বোনের মেজাজ তো রোদ্দু্রের খারাপ ব্যবহারের জন্য বিগড়ে আছে। এটা বাবাকে বলা ঠিক হবেনা। সে কষ্ট পাবে। রুহিকে ভাবতে দেখে আয়মান চৌধুরী অস্থির হয়ে প্রশ্ন করে-
-” কি হলো মামনি কি ভাবছো? কি হয়েছে রোজার? বলো আমায়?
রুহি থতমত খেয়ে যায়। মিনমিন করে বলে-
-” আসলে বাবা আমার শরীর টা একটু খারাপ লাগছিল তাই যাইনি বার্থ ডে তে। আর আপুর হয়তো মুড সুইং হচ্ছে তাই এমন করছে। বুঝলে!
আয়মান চৌধুরী কথাটা কতটুকু বিশ্বাস করেছে তা রুহি জানেনা। বাবার চোখ মুখ দেখে রুহি বুঝতে পারছেনা। রুহি তাড়াতাড়ি করে হাত ধুয়ে উঠে যায়। আয়মান মেয়েকে বলে-
-” একি? তুমি খাবার না খেয়েই উঠলে কেন?
রুহি পরপর দুটো ঢোক গিলে পেছনে ফেরে। চোখ ছোট ছোট করে বাবার দিকে তাকায়। মেকি হাঁসি দিয়ে বলে-
-” বাবা খেতে ইচ্ছে করছেনা। আমি একটু রোজার কাছে যাই। দেখি কি করছে।
আয়মান চৌধুরী হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বলে-
-” মামনি আমি তো তোমাদের সময় দিতে পারিনা। তোমাদের মাম্মাম থাকলে ঠিকই তার কথা শুনতে। আমার কথা আর কি শুনবে। আমি তো ভালো বাবাই হতে পারলাম না। না হতে পেরেছি ভালো স্বামী। আমি ব্যর্থ!
রুহির বুকটা ধ্বক করে ওঠে। বাবা এরকম কথা আগে কখনো বলেনি। আজ হঠাৎ কেন? রুহি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। তারপর পিছু ফিরে বলে-
-” তুমি আমাদের সুপারম্যান। তুমি বেষ্ট বাবা। আর আমার মাম্মামের বেষ্ট হাজবেন্ড!
এটুকু বলেই সে রোজার রুমে ঢুকে পড়ে। তার বুক কাঁ*পছে কেন যেন। বাবার কথাগুলো নিতে পারছেনা। রুহি সারা ঘরে চোখ বুলিয়েও রোজাকে দেখলো না। সে বেলকনিতে গিয়ে দেখে রোজা দাঁড়িয়ে আছে, আকাশের দিকে তাকিয়ে। রুহি ও তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আকাশে মস্ত চাঁদটা তার কিরন ছড়াতে ব্যস্ত। সে পৃথিবীকে জানান দিচ্ছে তার সৌন্দর্যের। তারার সামিয়ানা যেন বিশাল আকাশ। রুহি সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে-
-” ওভাবে না খেয়ে চলে এসেছিস কেন? বাবা কষ্ট পেয়েছে। ওমন ব্যবহার করলি কেন?
রোজা আকাশে দৃষ্টি রেখেই বলে-
-” কিছু বলেছে?
রুহি এবার রোজার দিকে তাকালো। আস্তে করে বলল-
-” তুই রোদ ভাইয়ার ব্যবহারের জন্য কষ্ট পেয়েছিস মানছি। আমরাও একটু আধটু ঝগড়া করি তাই বাবা জিজ্ঞেস করেছে। সে তো আর জানেনা আমি প্রবলেমের জন্য যাইনি। তোর এভাবে রিয়্যাক্ট করা উচিত হয়নি। বাবা বলেছে সে নাকি ভালো বাবা হতেও পারেনি, ভালো স্বামীও হতে পারেনি।
রোজা হালকা কেঁপে উঠলো রুহির কথায়। বাবাকে বেশি আ*ঘাত করে ফেলেছে নাকি সে? তাদের দরজায় টোকা পড়লো। রোজা গলা উঁচিয়ে বলল-
-” কে ভেতরে এসো।
আয়মান চৌধুরী দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। তার হাতে ভাতের গামলা। দুইবোনের জন্য ভাত এনেছে। এখন আবার বাড়তি প্লেট এঁটো করতে ইচ্ছে করছে না। আর গামলায় ও ভাত ছিল পরিমাণ মত। তাই সে গামলাতেই তরকারি নিয়ে চলে এসেছে। আয়মান চৌধুরী ভাতের গামলা বিছানায় রেখে বললেন-
-” মামনিরা এদিকে এসো।
রোজা আর রুহি একে অপরের দিকে তাকালো। দুজনেই রুমে এলো। আয়মান চৌধুরী ভাত মাখাচ্ছেন। রোজা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
-” একি বাবা? ভাত নিয়ে এখনে এসেছো কেন?
ওদের বাবা খানিকটা হেসে বলল-
-” আমায় মায়েরা না খেয়ে আছে। অন্যদিন তো খবর নেই না। আজকে আমি খায়িয়ে দিতে আসলাম। খাবি তো?
দু বোনই খুব খুশি হলো। তারা একসাথে বলে উঠল-
-” খাবনা মানে? আবার জিগায়।
দুজনেই বিছানার উপর উঠে বসে পড়ে। আয়মান চৌধুরী ভাত মেখে আগে রোজার সামনে লোকমা ধরে। তা দেখে রুহি ঠোঁট ফুলিয়ে বলে-
-” বাহ রে ভালোই। রোজাকে আগে দিচ্ছ। আমি তো তোমার কেউ না।
রোজা হেসে বলে-
-” বাবা ঐ হিংসুটে কে আগে দেও। দেখো না হিংসেতে জ্বলে পু*ড়ে যাচ্ছে।
আয়মান চৌধুরী ও হাসিমুখে খায়িয়ে দিতে থাকেন। আর এটা ওটা নিয়ে গল্প করতে থাকেন। দু বোন কে আগে খাবে পরে খাবে এটা নিয়ে তর্কাতর্কি করেই যাচ্ছে। তা হাসিমুখে পর্যবেক্ষন করছে তাদের বাবা। আজ কতদিন পর মেয়েদের সাথে গল্প করছে! তাদের মা কাছে থাকলে হয়তো এমন গল্প রোজই হতো!
_______
-” এই রুহির বাচ্চি ঘুম থেকে ওঠ! ভার্সিটি যাব আজকে।
রুহি বালিশ টা মুখে উপর চে*পে ধরে। বিরক্ত হয়ে বলে-
-” রোজা তুই যাবি এখান থেকে। আর আমি আয়মান আর ইয়াসমিনের বাচ্চা। ডোন্ট কল মি রুহির বাচ্চি।
রোজা এবার রেগে গেলো। সে একটানে কম্বলটা সরিয়ে ফেলে। গ্লাসে করে পানি নিয়ে রুপির গায়ে ছিটিয়ে দেয়। লাফ দিয়ে ওঠে রুহি। চিৎকার করে বলে-
-” এই ব/লদ এমন করছিস কেন? আমায় ঘুমাতে দে । তুই বেশি করছিস কিন্তু। আজ এতো লেখাপড়া উতলে উঠলো কেন? যা এখান থেকে।
রোজা দ্বিগুণ তেজ নিয়ে বলল-
-” দেখি তুই কি করিস। এখনি ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়। ভার্সিটি যাব!
-” তুই যা না ভার্সিটিতে। আমি যাব না বলছিনা।
রোজা রেগে মেগে ওর বাহুতে থা/প্পর বসিয়ে দেয়। রুহিও কম যায়না সেও রোজাকে টেনে ধরে। দুজনের হাতাহাতি শুরু হয়। দরজায় কে যেন অনবরত কলিং বেল দিয়ে যাচ্ছে। রুহি নিজেকে বাঁচিয়ে দরজার কাছে যায়। দরজার ছিটকিনি খুলে দেয়। সাথে সাথেই রোজা সেখনে গিয়ে ওর চুল টে*নে ধরে বলে-
-” কি চা*ন্দু পালাও কেন? বলছিনা আমার সাথে চল।
আগন্তুক দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে বিরক্ত প্রায়। এর মধ্যেই বাড়ির ভেতর থেকে রুহি চিৎকার দিয়ে ওঠে।
-” কে আছো বাঁচাও। ও হাসবির বাচ্চা কই তুই।
আগন্তুক কিছুটা ঘাবড়ে যায়। সে দরজায় ঠেলা দিতেই খুলে যায়। নিজেই বিরক্ত হয় এতক্ষন ব*লদের মত কলিংবেল দেওয়ায়। সামনে দুটো একই রকম চেহারা মেয়েকে দেখে আগন্তুক চিৎকার করে বলে-
-” হেই স্টুপিড গার্লস। স্টপ!
দুজনেই ঘুরে চোখ বড় বড় করে তাকায়! তারপর একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” ইয়াহুউউউউ!
#চলবে