More than love পর্ব -০৩+৪

#More_than_love
#মেঘলা_আহমেদ
পর্বসংখ্যা- [০৩]+[৪]

-” পিপিন পিপিন! উই আর সো সারপ্রাইজড। ওহ নো। রুহির বাচ্চা যা গিয়ে পিপিন কে বসা। তারপর সরবত নিয়ে আয়।

রুহি চোখ কটমট করে রোজার দিকে তাকায়। রোজার এক হাতে রুহির চুল আর এক হাত দিয়ে রুহির হাত ধরে রেখেছে। রুহি দাঁত কিড়মিড় করে বলে-

-” ঐ হা/রামি তুই আমারে ধইরা রাখছোস। আমি ধরিনাই। ছাড় বা/ন্দরনী।

রোজা চুলে হালকা টা/ন দিয়ে ছেড়ে দেয়। রুহি ব্যাথায় চেঁচিয়ে ওঠে –

-” আহ্। ঐ তুই চুলে টা/ন দিলি ক্যান। তোর কপালে কাইল্লা জামাই জুটবো দেখিস। পেটমোটা কাইল্লা জামাই। তরে উঠতে বসতে কে/নু (মা ইর) দিবো। দেহিস!

রোজা চেঁচিয়ে ওঠে ওর কথায়-

-” কি বললি টুহির বাচ্চা টুহি। তর জামাই হইবো টাকলা মুরাদ। হ্যাংলা পাতলা গাঞ্জাখোর। উগান্ডার কালা বাছুর। মনে রাহিস। আমার কথা মিলাইয়া নিস! উঠতে বসতে শ্বাশুড়ি ঝাঁটা পে/টা করবো‌।

রুহি রোজার সাথে না পেরে চিৎকার করে বলে-

-” পিপিনননন! তুমি কিছু বলবা। এখন আমি একটা দিলেই দোষ হবে কিন্তু।

রোজাও সমস্বরে বলে-

-” হ পিপিনন!‌ ওরে থামতে বলো। বেয়াদব একটা বড় বোন কে একটু সম্মান ও দেয়না‌।

-” চুপ বেডি চুপ, তুই বেয়াদব। আসছে বড় বড় করতে।

সামনের ভদ্রমহিলা টি সবই পর্যবেক্ষন করছে তীক্ষ্ণ চোখে। তার দুই হাত বুকের উপর ভাঁজ করা। তার এসব দেখতে মজাই লাগছে। গত কয়েক বছর ধরে এই সবের সাথে সে অভ্যস্ত।রোজা রুহির কথায় পাত্তা না দিয়ে এসে তার ফুপিকে জড়িয়ে ধরে। মেরুন স্নেহের হাত রাখে রোজার মাথায়। রুহি অভিমান করে। ঠোঁট ফুলিয়ে চলে যেতে চাইলে, মেরুন হাত বাড়িয়ে ডাকে –

-” আরে রুহি তুই আয় এদিকে। কই যাচ্ছিস। সব আদর তো রোজা নিয়ে যাবে।

ফুপির ডাক কে অগ্রাহ্য করতে পারলো না রুহি। ছুটে এসে ফুপিকে জড়িয়ে ধরে। মেরুন দুই হাতে দুই ভাইজি কে জড়িয়ে ধরে। রুহি খুশিতে কেঁদে দিয়ে বলে-

-” আমাদের কথা মনে পড়ে না বুঝি তোমার? তুমি এত পাষান কি করে হলে?

মেরুনের মুচকি হেসে বলে-

-” পাগলী মেয়ে। ভুলে যাবো কি করে আমার প্রিন্সেস দের? তোদের ছাড়া আমি একটুও ভালো নেই‌। আই মিস মাই প্রিন্সেসেস্।

রোজা আর রুহি দুজনেই বলে ওঠে-

-” রোজা আর রুহিও পিপিন কে অনেক মিস করেছে। এবার অনেকদিন থাকবে।

রোজা রুহির দিকে তাকিয়ে বলে-

-” যা পিপিনের জন্য সরবত বানিয়ে নিয়ে আয়।

রুহি মুখ বাঁকিয়ে বলে-

-” আমি যাবো না তুই যা।

রোজা রেগে আবারো রুহির চুল টেনে ধরে বলে-

-” ঐ আমি তোর আটান্ন সেকেন্ডের বড়! তুই আমার সাথে এমন ব্যবহার করিস! এক না দুই না আটান্ন সেকেন্ড। আমি যা বলব তাই শুনবি‌।

রুহি মুখ বাঁকিয়ে বলে-

-” ওরে মোর খোদা। আইছে আটান্ন সেকেন্ডের বড়। মুই তো ডরাইছি (ভয় পাইছি) আফু। তোর মত চুনোপুঁটি আমার আটন্ন বছরের বড় হলেও আমি এমন ব্যবহারই করবো। সয়তানের নানী। আগে নিজে ভালো হ।

মেরুন বিরক্ত হয় এদের কান্ডে। ছোটবেলা থেকেই সাপে নেউলে সম্পর্ক। কিন্তু একজনের কিছু হলে অন্যজনের জান হাজির। একজন কে কেউ বকলে অন্যজন গিয়ে তার সাথে ঝগড়া বাজিয়ে কেলেংকারি করে আসবে। একবার রুহিকে একটা ছেলে ঝুঁটি ধরে টান দিয়েছিলো। এরপর রোজা গিয়ে ছেলেটার ধো লাই করতে করতে প্যান্ট খুলে ফেলেছিল। তখন মনে হয় ১০ বছর হবে ওদের। অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে মেরুন উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। রোজা আর রুহি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ফুপির দিকে তাকায়। এভাবে হাসতে দেখে দুজনে একে অপরের দিকে তাকায়। রোজা ভ্রু নাচিয়ে ফিসফিস করে রুহি কে বলে-

-” কি ব্যাপার পিপিনের কি হলো?

রুহি ঠোঁট উল্টে না বুঝায়। তার মানে সে কিছুই জানেনা। রুহি গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করে-

-” এই পিপিন! এভাবে পাগলের মতো হাসছো কেন?

রোজা ভুতে বিশ্বাসী। সে ভয় পেয়ে বলে-

-” ইয়া আল্লাহ! পিপিন কে ভুতে ধরেছে নাকি‌। আস্তাগফিরুল্লাহ। লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি ইন্নি ইন্নি…

রোজার দোয়া পড়া দেখে মেরুনের হাসা বন্ধ হয়ে যায়।‌ রুহিও অবাক হয় খানিকটা‌।‌ মেরুন আর রুহি দুজনেই ভ্রু কুঁচকে রোজার দিকে তাকায়। রোজা থতমত খেয়ে যায় এদের এভাবে তাকানো দেখে। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে-

-” ইয়ে মানে। ভুত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া পরছিলাম হেহে!

বলেই বদলের মত হেসে দেয় রোজা। রুহি আর মেরুন ও রোগ দেয় তাতে। মেরুন হেসে দুজন কে জড়িয়ে ধরে বলে-

-” পাগলী মেয়ে দুইটা। এত বড় হয়েছিস এখনো বাচ্চামো যায়নি।

রুহি আল্হাদী কন্ঠে বলে-

-” আমি তোমার আদরের বাচ্চা টা। সারাজীবন এমনই থাকবো। চলো সোফায় বসো আগে।

রোজা গিয়ে একগ্লাস শরবত নিয়ে আসে। তারপর তিনজন গল্প করতে থাকে। কথায় কথায় মেরুন জিজ্ঞেস করে-

-” আচ্ছা তোরা মাম্মাম কে মিস করিস না?

রোজা আর রুহি একে অপরের দিকে তাকায়। রোজা স্বাভাবিক ভাবেই বলে-

-” মিস করবো কেন? আকাশের তাঁরা কে কেউ মিস করে?

রুহি আর মেরুন অবাক চোখে তাকায়‌ রোজার দিকে। রুহি অল্পতেই কষ্ট পায়। এটা তার স্বভাব। ছোটবেলা থেকেই ছিঁচকাদুনে মেয়েটা। প্রিয় মায়ের সম্পর্কে এ কথা তার হজম হলো না। তার কান্না পেয়ে গেলো। সে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে রোজা কে বলল-

-” রোজা! তুই এভাবে কেন বলছিস? মাম্মামের সম্পর্কে এমন বলতে কষ্ট হয়না? তুই কালকে পাপাকেও হার্ট করেছিস। দিন দিন এমন হয়ে যাচ্ছিস কেন?

রোজা রুহির কথার উত্তর দিলো না‌। মেরুন দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলে-

-“‌রোজা মা শোন! এভাবে বলতে নেই‌। যতই হোক তোদের জন্মদাত্রী সে‌। মাম্মাম জানলে কষ্ট পাবে।

রোজা ফুপির দিকে তাকায়। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে-

-” পিপিন শোন। যার কাছে নিজের ইমপর্টেন্স সবচেয়ে বেশি তার এসব কথায় কিছুই আসবে যাবে না। এসব সে গায়েই মাখেনা। জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না। তার কষ্ট দিয়ে আমি কি করবো? উনি আমাদের ভালোবাসে না। আমরা তার দেয়া কষ্টই অনুভব করতে পারি, যাকে আমরা অত্যাধিক ভালোবাসি‌। এক অপরিচিত মানুষ এসে এমন কথা বললে আমরা কষ্ট পাবো না। তেমনি মিসেস ইয়াসমিন এর কাছেও আমরা অপরিচিত। সে আমাদের এসব কথায় কষ্ট পাবেন না‌।

মেরুন দমে যায় রোজার কথায়। কত বড় হয়ে গেছে মেয়েটা। যুক্তি সাজাতে শিখে গিয়েছে। এদের মায়ের কি মায়া লাগে না? সে জানে না‌। মানুষ আসলেই স্বার্থপর। মেরুন রোজার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে-

-” তোর পাপা কোথায়? হসপিটালে গিয়েছে?

রুহি আগে আগে বলে –

-” হ্যা পিপিন। তুমি আসবে জানলে আজকে হাসবি কে আসতে নিষেধ করতাম না। আজকে চেয়েছিলাম ভার্সিটি যাব ঘোরাঘুরি করে ডিনার করে বাড়িতে আসবো‌। এখন তো বাজার করা লাগবে‌। তুমি এসেছো এখন তোমার হাতের রান্না খাবো‌।

রোজা মেরুনের দিকে তাকিয়ে বলে-

-” পিপিন যাষ্ট দশ মিনিট ওয়েট করো। আমি আর রুহি রেডি হয়ে আসছি। এরপর বাজারে যাব। মেরুন হেসে বলে-

-” আচ্ছা যা। তবে দুষ্টুমি করিস না।

দুই জনে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠে‌। প্রতিযোগীতা লেগেছে যেনো। কে আগে উঠবে। মেরুন হালকা গলা উঁচিয়ে বলে-

-” আরে পড়ে যাবি তো। সাবধান এ উঠ‌।

বেহায়া কলিংবেল টা আবারো বেজে ওঠে। মেরুন বেশ অবাক হয়। এখন কে এলো? সে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খুলে দাড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে দেখেই মেরুন দুই হাতে জড়িয়ে ধরে।

#চলবে

#More_than_love
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)
পর্বসংখ্যা-[০৪]

আচমকা অপ্রত্যাশিত কিছু নিজের কাছে পেলে অনুভুতি হয় অন্যরকম। মেরুন রোদ্দুর কে ছেড়ে দিয়ে বলে-

-” রোদ্দুর তুই কবে বিডি তে আসলি? আমায় একটাবার জানাস নি পর্যন্ত! এতই পর হয়ে গেলাম!

মেরুন মুখ ভার করে বাড়ির ভেতর ঢুকে যায়। রোদ্দুর বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। মেরুনের কাছে গিয়ে তার দুই হাত ধরে বলে-

-” ও মাই ডার্লিং! তুমি রাগ করছো কেন। আমি খুউউব ব্যস্ত ছিলাম। লিপি এবার ভিডিও কল এ বলেছে আমায় ছাড়া বার্থডে কেক কা টবেই না। তুমি জানো ভাই আর বউমনি সময় দিতে পারেনা ওকে। আর আমার ভালো লাগছিল না ওখানে‌। ভাবলাম দেশে এসে জীবনটা গুছিয়ে নেই‌। তোমাকে জানানোর সময়ই পাইনি। আমি সো সরি‌‌, ডার্লিং।

মেরুন মুচকি হাসে। রোদ্দুরের কান টেনে বলে-

-” তুই জীবনেও ভালো হবিনা। ডার্লিং ডাকা টা ছাড়তে পারলি না।

রোদ্দুর নিজেও হেসে বসতে বসতে বলে-

-” বিয়ে করিয়ে দাও একদম ভালো হয়ে যাবো। প্রমিজ‌। বউকে সারাদিন বে|বি, জা|ন, ক/লিজা, লি/ভার, কি/ডনি, ফু/সফু/স ডাকবো। কিন্তু আমার একমাত্র ওয়ান এন্ড অনলি ডার্লিং হলো মেরুন আন্টি। তুমি চিনো তাকে।

রোদ্দুর একটু ভাব নিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে। রোদ্দুরের কথায় মেরুন হেসে বলে-

-” আচ্ছা পা/জি বাজার থেকে পে/ত্নি এনে দেবো কেমন।

রোদ্দুর বিরবির করে বলে-

-” পেত্নি কে চাইছে। আপাতত তোমার ভাতিজি টা কে দিয়ে দাও।

মেরুন ওর বিরবির করা দেখে বলল-

-” কিছু বললি?

-” না আন্টি‌।

-” আচ্ছা দুই মিনিট বস আমি আসছি।

মেরুন দ্রুত পায়ে রান্না ঘরের দিকে যায়। রোদ্দুর পকেটে হাত দিয়ে ফোনটা বের করে।

-” পিপিন চলো ওর এখনো সাজা হয়নি‌। আমরা দুজনে চলে যাই।

হঠাৎ একটা মেয়ের কন্ঠ শুনে রোদ্দুর সেদিকে তাকায়‌। একটা মেয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে ড্রেস ঠিক করতে করতে। সাদা কালো টপস পড়া। পিঠ পর্যন্ত চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছে। কন্ঠটা চেনা চেনা লাগছে রোদ্দুরের। রোদ্দুর মেয়েটার চেহারা দেখে লাফিয়ে ওঠে। চোখ বড় বড় করে বলে –

-” হেই স্টুপিড গার্ল! তুমি এখানে কি করছো?

রুহি চমকে তাকায় রোদ্দুরের দিকে। তার সামনেই একজন সুদর্শন যুবক দেখতে পায়। কালো শার্ট, অফ হোয়াইট জিন্স। শার্টের হাতা সুন্দর করে ফোল্ড করে কনুই তে উঠিয়ে রেখেছে। চুলগুলো ও খুব সুন্দর করে সেট করা। ফর্সা কপালে দুটো চিকন ভাঁজ পড়েছে। রুহি রোদ্দুর কে দেখতে দেখতে নিচে নামে। এরপর ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে-

-” স্যরি ভাইয়া! আমরা কি একে অপরকে আগে কখনো দেখেছি? বা চিনি, নাকি আমাদের কখনো কথা হয়েছে?

রোদ্দুর রুহির কথায় অবাকের সপ্তাকাশে। সে কপালে হাত ঠেকিয়ে বলে-

-“হায় মাবুদ বলে কি এই মেয়ে? তুমি শুধু আমাকে দেখোই নি। গতকাল রাতেই আমার গায়ের উপরে পড়েছো। আমায় থা/প্পর ও দিয়েছ। আর এখন বলছো চিনা না। হায় তুমি দেখছি স্টুপিড এর সাথে সাথে ভালো একটিং ও জানো।

রুহি চোখ বড় বড় করে রোদ্দুরের দিকে তাকায়। তার মানে এটাই রোদ! এত সুন্দর হয়ে গেছে! রুহি গলা খাঁকারি দিয়ে বলে-

-” দেখুন ভাইয়া আপনি হয়তো আমাকে কারো সাথে গুলিয়ে ফেলছেন। আমি আপনাকে প্রথম দেখলাম আজকে।

রোদ্দুর গলায় জোড় দিয়ে বলে-

-” এই চুপ করো মেয়ে! তোমার চেহারা আমার হাড়ে হাড়ে মনে আছে। তুমি লিপির সেই স্টুপিড টিচার। এই বাড়িতে কি করছো?

-” কি হয়েছে নিচে এত কথা কিসের? কে এসেছে?

রোজা হাতের ঘড়ি পড়তে পড়তে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে প্রশ্ন করে। রোদ্দুর কে দেখেই সে ভড়কে যায়। চোখ বড় বড় করে তাকায় রুহির দিকে। রুহি মুচকি হেসে চোখ টিপ দেয়। রোদ্দুর পুরো স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এ কি দেখছে সামনে? এক রকমের দুইজন! তাও একি ড্রেস একি হেয়ারস্টাইল মানে সব সেইম।‌ রোদ্দুর ঢোক গিলে বলে-

-” একি একি আরে এরা কারা? মানে এই স্টুপিড মেয়ে কি নিজের হাজার টা ক্লোন বানিয়েছে নাকি?

মেরুন ট্রে নিয়ে সবার সামনে আসে। রোদ্দুরের অবাক হওয়া মুখটা দেখে তিনজনের খুব হাসি পাচ্ছে। মেরুন স্বাভাবিক হয়ে রোদ্দুরের বাহু চাপড়ে বলে-

-” কি রে? এমন স্ট্যাচু হয়ে আছিস কেন?

রোজা আর রুহি দুজনেই বুকের উপর হাত ভাঁজ করে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। রোদ্দুর মেরুনের দিকে দ্বিধান্বিত চোখে তাকায়। রোজা আর রুহির দিকে আঙুল তুলে মেরুন কে জিজ্ঞেস করে-

-” এরা কারা ডার্লিং?

মেরুন হেসে রোজা আর রুহিকে নিজের দু পাশে নেয়। ওদের কাঁধে হাত রেখে বলে-

-” মাই প্রিন্সেস তোমরা নিজেদের পরিচয় দাও।

রুহি কিছুটা ভাব নিয়েই বলে-

-” হ্যালো রোদ ভাইয়া। আমি আদ্রিশা বিনতে রুহি।

রোজাও এবার হেসে বলে –

-” হ্যালো রোদ ভাইয়া। আমি আমায়রা রহমান রোজা।

রোদ্দুর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কনফিউজড হয়ে জিজ্ঞেস করে-

-” তাহলে পার্টিতে আমার সাথে কার দেখা হয়েছিল?

রোজা দাঁত কিড়মিড় করে বলে-

-” আরে ভাইয়া আমার সাথে আপনার দেখা হয়েছিল। আফসোস আপনার সাথে পরিচিত হতে পারিনি তখন। কিন্তু এখন থেকে ভালোভাবে পরিচিত হব।

রোদ মেরুন কে জিজ্ঞেস করে-

-” সব বুঝলাম। কিন্তু রুহি টপকালো কোথা থেকে। মানে তোমরা জমজ কিন্তু কিভাবে? আমি ছোটবেলা থেকে রোজা কে দেখে আসছি। যখন কানাডা গিয়েছি তখনও রোজাই ছিল। আর ইয়াসমিন আন্টি কোথায়?

রোজা আর রুহি চুপ করে যায় মায়ের কথা শুনে। মুহুর্তেই মুখে আঁধার নেমে আসে। মেরুন পরিস্থিতি সামাল দিতে বলে-

-” রোদ বাবা বস আগে নাস্তা কর। বলবো বলবো সব বলবো। আপাতত ওরা জমজ বোন এটা জেনেই রাখ।

রোদ্দুরের অদ্ভুদ লাগছে সবকিছু। কিন্তু ঐদিন সে রোজার সাথেই বাজে ব্যবহার করেছে। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে এসেছে। হায় রে না জানি কত কষ্ট পেয়েছে। শুরুতেই আমার ব্যাপারে ওর মনে খারাপ ধারনার সৃষ্টি হয়ে গেলো। রোদ্দুর অন্যমনষ্ক হয়ে‌ চায়ের কাপে চুমুক দেয়।

-” আহহ।

মেরুন চমকে উঠে বলে-

-” আরে রোদ কি হলো?

রোদ্দুর নিজেকে সামলে বলে-

-” ইয়ে মানে। গরম চা তো তাই। ঠান্ডা হলে খাবো।

রোজা টাইম দেখে বলে-

-” ফুপি বাজারে যাবে না? লেট হয়ে যাচ্ছে তো‌।

রোদ্দুর জিজ্ঞেস করে –

-” বাজারে কেন যাবে?

রোজা মহাবিরক্ত হলো রোদ্দুরের কথায়। কপাল কুঁচকে বলে-

-” বাজারে ঘাস কাটতে যাবো। আমাদের উঠানে প্রচুর ঘাস হয়েছে সেগুলো বেঁচে আসবো। বাজারে গিয়ে লুঙ্গি ড্যান্স করবো। মাছের সাথে সেলফি তুলবো। আর মুরগির সাথে পার্টি করবো‌।

রুহি হেসে দেয় রোজার কথায়। হাসতে হাসতে বেচারির অবস্থা খারাপ। রোদ্দুর আড়চোখে তাকিয়ে বলে-

-” ছিহ এগুলো বলছো কেন, আজব?

রোজা বিরক্ত হয়ে বলে-

-” তো আপনি জানেন না মানুষ বাজারে কি করতে যায়। রান্নাবান্না করবো তাই বাজার করতে বাজারে যাবো সিম্পল। গাধার মত প্রশ্ন করলে উত্তর দেবো কি?

মেরুন ঝ/গড়া দেখে হেসে বলে –

-” উফফ রোজা থাম তো। সারাদিন ঝ/গড়া করো খালি। এই রোদ তুই আমাদের সাথে যাবি?

রোদ যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। এক ঝটকায় দাঁড়িয়ে বলল-

-” আমি রাজি মহারাজি। আমার ডার্লিং বললে আমি কি না করতে পারি?

ফুপির কথা শুনে রোজার মাথা খারাপ হয়ে গেলো। এই রোদ্দুর কে কেন নিতে হবে? বদ ছেলে একটা। রোজা হেসে বলে –

-” ইয়ে মানে পিপিন। উনি কেন কষ্ট করে আমাদের সাথে যাবে? উনার এই গরমে বাহিরে যাওয়ার দরকার কি? দেখা গেলো বিদেশী আবহাওয়ার এই সাদা বিলাই কালা হয়ে গেলো। কি বাজে দেখাবে। তাইনা।

রোদ থামিয়ে দিয়ে বলে-

-” আই হেভ নো প্রবলেম। আমার সব আবহাওয়া মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা আছে। আর আমি মোটেও বিলাই না।

রোজা চোখ গরম করে তাকায় রোদ্দুরের দিকে। রোদ্দুর তার বদলে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়। রোজা আগে আগে হাঁটা দেয়। রুহি শুধু এদের চক্ষু যুদ্ধ দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে। তার রোদ্দুর কে ভীষণ পছন্দ হয়েছে। আহ এটাকে দুলাভাই বানাতে পারলে জীবন ধন্য। রোদ রোজার পিছে পিছে যায়। মেরুন দরজা তালা দিচ্ছে। রোজা রেগে রুহিকে বলে-

-” কিরে তুই নাকি রোদের কা/চু/ম্বার বানাস? এখন এত হেসে হেসে কথা বলতাছিস কেন?

রুহি হেসে বলে-

-” আরে এতো কিউট একটা ছেলেকে কিছু বলা যায় নাকি। তুই কত ভাগ্যবতী সে তোকে বকেছে‌। আহা এত কিউট ছেলেকে তুই কেমনে চ/ড় দিলি?

রোদ মুচকি হাসে রুহির কথা শুনে। রোজা চোখ বড় বড় করে রুহির দিকে তাকায়। সিরিয়াসলি বকা খেলে কেউ ভাগ্যবতী হয়? আর চ/ড় কেন দিয়েছে এটা জিজ্ঞেস করছে। তার যে শখের ড্রেস টা ছি/ড়ঁলো রুহির মতো এরকম কয়টা আছে আর পৃথিবীতে। রোজা চেঁচিয়ে বলে-

-” মির জাফরের বংশধর!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here