Mr_Husband পর্ব ১০+১১

#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_১০

গাড়ি চলছে তার আপন গতিতে। মুন জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বাইরে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিছু ভালো লাগছে না এখন আর। হালকা মৃদু বাতাস‌ বইছে। গাছপালা গুলো মনে হচ্ছে দৌড়াচ্ছে। আকাশটা একদম পরিষ্কার। আকাশি রঙের আকাশটার বুকে বকের মতো সাদা মেঘেরা ভাসে চলেছে। কিছু মুক্ত পাখিরা দল বেঁধে খোলা আকাশে মনের সুখে উড়ে বেড়াচ্ছে। আবার কিছু পাখি গাছে বসে কিচকিচ আওয়াজ করে গান গাইছে। মুন সে গান খুব মনোযোগ গিয়ে শুনছে। মুন কে এতো চুপচাপ আর অন্যমনষ্ক দেখে আঁধার গলা খাঁকারি দিলো। কিন্তু মুন ওর দিকে ফিরেও তাকালো না। আঁধার নিরবতা কাটিয়ে বলল,

—“কাল সকালে তোমাকে কলেজে এডমিশন করাতে নিয়ে যাবো। আমরা ৯ টার দিকে রওনা হবো। তাই তৈরি থেকো।”

মুন সহজ ভাবে ছোট করে জবাব দিলো,

—“হুম”

—“তুমি আর আলিয়া এক সাথেই কলেজে যাবে। ড্রাইভার তোমাদের গাড়ি করে দিয়ে আসবে আবার নিয়ে আসবে।”

মুন আবারো জবাব দিলো,

—“হুম”

—“কলেজ শেষ হতেই বাড়িতে চলে আসবে। এক মিনিট ও কোথাও দাঁড়াবে না।”

—“হুম”

—“কোনো ছেলেদের সাথে কথা বলবেনা। ছেলেদের আশেপাশে ও থাকবে না।”

—“হুম”

মুনের এই হুম হুম জবাবে আঁধার বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। মুনের হঠাৎ করে এরকম চুপচাপ হয়ে যাওয়া টা আঁধারের একদমই ভালো লাগছে না। যে মেয়েটা এক মিনিট ও চুপ করে থাকতে পারে না।সারাক্ষণ বকবক করতেই থাকে ।যার মধ্যে চঞ্চলতা ভরপুর সে এরকম হঠাৎ করে চুপচাপ হয়ে গেলে কি কারো ভালো লাগে? উওর একদমই না। আঁধারের ও ভালো লাগছে না। কিন্তু আঁধার তো এটাই চাই তো। মুনের বকবকে ওর কান ঝালাপালা হয়ে যেতো। একটু শান্তিতে থাকতে পারতো না। কিন্তু এখন কেন এই শান্তিটাই ওর সব থেকে অশান্তি লাগছে? এর উওর আঁধার নিজেও জানেনা। আঁধারের রাগ উঠছে অনেক। রেগে গাড়ি ব্রেক করলো। মুন অন্যমনষ্ক থাকায় কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল। তারপর সোজা হয়ে বসে আঁধারের দিকে প্রশ্নাক্ত দৃষ্টিতে তাকালো। আঁধার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভারী গলায় বলল,

—“কি হয়েছে তোমার?”

—“কই কিছু না তো।”

—“আমি যা যা বলেছি শুনতে পেয়েছি?”

—“কি বলেছেন আপনি?”

আঁধার ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো। এতক্ষন তাহলে ও যা যা বলেছে মুন তার কিছুই শুনতে পায়নি? আঁধার মুনের দিকে ভ্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে আছে। মুন আবারো জিজ্ঞেস করল,

—“কি হলো বলছেন না কেন? যে কি বলেছিলেন?”

আঁধারের এখন ইচ্ছে করছে এক থাপ্পড়ে মুনর সব দাঁত ফেলে দিতে। আঁধারের নিজের ইচ্ছে কে দাবিয়ে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—“কাল আমি তোমাকে কলেজে ভর্তি এডমিশন করাতে নিয়ে যাবো। ৯টার দিকে রওনা দিতে হবে তাই রেডি থেকো। রোজ তুমি আর আলিয়া এক সাথেই কলেজে যাবে। ড্রাইভার তোমাদের দিয়ে আসবে আবার কলেজ ছুটি হলে নিয়ে আসবে। কলেজ ছুটি হওয়ার পর এক মিনিট ও কোথাও দাঁড়াবে না সোজা বাড়িতে চলে আসবে। ছেলেদের সাথে ভুলেও কখনো কথা বলবে না। কোনো ছেলের আশেপাশে ও যেন তোমাকে না দেখি।”

মুন চুপচাপ সব শুনলো তারপর জবাব দিলো,

—“প্রাণি আমি আপনার এই আজাইরা রুলস ফলো করতে পারছি না।”

আঁধার বাকা হেসে বলল,

—“সো বি রেডি ফর পানিশমেন্ট।”

—“কেন?”

—“আমার দেওয়া রুলস গুলোর মধ্যে একটা রুলস ব্রেক করলেও তার জন্য শাস্তি পেতে হবে।”

বলেই আঁধার আবারো বাঁকা হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।

.

সকাল ৫টা বাজে আঁধার মুন কে ঘুম থেকে তুলে পড়তে বসিয়েছে। মুন টোলতে টোলতে পড়তে বসেছে। এখন বইয়ের সামনে বসে মুন মুরগির বাচ্চার মতো ঝিমাচ্ছে। আর আঁধার ল্যাপটবে কাজ করছে আর কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। আঁধার ল্যাপটব থেকে চোখ তুলে তাকিয়ে মুন কে ঝিমাতে দেখে দেয় এক রাম ধমক। মুন ধমক খেয়ে ধরফরিয়ে উঠে জোরে জোরে পড়তে শুরু করল। মুনের কান্ড দেখে আঁধার মুনের আড়ালে হাসে। এভাবেই ৮টা বেজে যায়। আঁধার ৩০মিনিট সময় দিয়েছে মুন কে রেডি হতে। মুন কাবার্ড থেকে একটা ব্লু কালারের লং ফ্রোক, হোয়াইট কালারের ট্রাউজার আর ওড়না নিয়ে ওয়াশরুমে চেন্জ করতে চলে যায়। এসে দেখে আঁধার একদম রেডি এখন ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে লুকিং গ্লাসে নিজেকে দেখছে। আঁধার মুনের দিকে ফিরতেই মুন ছোট খাট একটা বাঁশ থুক্কু ক্রাশ খেল। ফর্সা সুঠাম দেহে হোয়াইট কালারের জিন্স ওর টিশার্ট তার উপরে ব্লু কালারের জ্যাকেট। ফর্সা লোমশ হাতে ব্লু কালারের ব্যান্ডেড ওয়াচ। রেশমী সুতোর মতো সিল্কি সফ্ট চুল গুলো কপালের উপরে পরে আছে। নীল এক অতল সাগরের মতো মায়াবী চোখের উপরের ডান দিকের ভ্রুতে একটা কাঁটা দাগ আছে যেটার জন্য আঁধার কে আরো বেশী আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। রেশমী চুলগুলো বারবার উরে এসে কাঁটা দাগ টাকে ঢেকে দিচ্ছে। ডার্ক রেড মেয়েলী পাতলা ঠোঁটের নিচে ছোট্ট একটা কালো তিল। যেটা তে চোখ পরতেই মুনের খুব হিংসে হলো। কারণ মুনের ঠোঁটের উপরে, নিচে তিল থাকা খুব পছন্দের। মুন সবসময় আফসোস করতো ইশ্ যদি তার ও এরকম ঠোঁটের নিচে তিল থাকতো। মুন তাদের দেখতে পারেনা যাদের ঠোঁটের নিচে তিল আছে। কিন্তু আঁধার থেকে যেন চোখ’ই পরছে না। বেহায়ার মতো এক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে চোখ দুটো। যেন চুম্বকের মতো আকর্ষণ করছে ওকে। মুন কে নিজের দিকে এরকম হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আঁধার ভ্রু যুগল কুঁচকে তাকালো। তাকে কি এলিয়েন মনে হচ্ছে যে মুন এভাবে হা করে তাকিয়ে দেখছে। আঁধার লুকিং গ্লাসে একবার ভালো করে নিজেকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো। নাহ সব তো ঠিকই আছে। তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? আঁধার মুনের সামনে চুটকি বাজাতেই ওর হুঁশ ফিরে। মুনের নিজের কাজে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল। লজ্জায় আঁধারের দিকে তাকাতে পারছে না। নিজেকে নিজেই বেহায়া উপাধি দিলো মুন। আঁধার বলল,

—“তাড়াতাড়ি রেডি হও। তোমার হাতে আর মাত্র ১০মিনিট সময় আছে।”

মুন তাড়াহুড়ো করে রেডি হলো। মুখে ক্রিম আর হালকা ফেস পাউডার দিলো। ঘনো কালো চুলগুলো আঁচড়ে বাঁকা সিঁথি করে স্টোনের ক্লিপ মেরে নিলো। হাতে ব্লু কালার লেডিস ওয়াচ। পায়ে স্লিপার। কাঁধে কলেজ ব্যাগ নিয়ে মুন রেডি। মুন আঁধার কে বলল,

—“আমি রেডি চলুন।”

আঁধার মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রেখেই বলল,

—“আগে রেডি হয়ে নেও তারপর।”

—“আমি তো রেডি’ই!”

কথাটা মুন অবাক কন্ঠে বলল। আঁধার এবার মুনের দিকে তাকালো তারপর শান্ত স্বরে বলল,

—“এভাবে তুমি বাইরে যেতে পারবে না। চুল গুলো বেঁধে হিজাব পরে নেও। তোমাকে যেন কখনো চুল ছেড়ে বাইরে যেতে না দেখি।”

—“কিন্তু……..”

—“নো মোর ওয়ার্ডস্।”

কথাটা কিছুটা ধমকের স্বরে বলল আঁধার। মুন কেঁপে উঠলো। তারপর আর কিছু না বলে চুপচাপ গিয়ে চুল গুলো ভালো করে আটকে ব্লু কালারের কারুকাজ করা একটা হিজাব বেঁধে নিলো। তারপর একপাশ ওড়না টা নিলো। গোল মুখমণ্ডল টা হিজাব বাঁধার কারণে আরো গোল মনে হচ্ছে। মুন আঁধারের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই আঁধার উঠে দাঁড়ালো তারপর চমৎকার একটা হাসি দিয়ে বলল,

—“নাও ইউ লুকিং সো বিউটিফুল।”

মুন কথা টা শুনলো না শুধু আঁধারের ঠোঁটের দিকেই তাকিয়ে আছে। লোকটা এতো সুন্দর করে হাসতে পারে তা মুনের জানা ছিলো না। আঁধারের ওই হাসি যেন তীরের মতো গিয়ে মুনের বুকে বাঁধলো।

.

আঁধার গাড়ি ড্রাইভ করছে মুন ফ্রন্ট সিটে বসেছে আর আলিয়া ব্যাক সিটে। আলিয়া কানে ইয়ারফোন গুজে মোবাইল টিপছে। মুন জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। আঁধার লুকিং গ্লাসে বার বার আড়চোখে মুন কে দেখছে। মুন বলল,

—“আচ্ছা Mr.Husband আমি কি আজ থেকে ক্লাস করব নাকি কাল থেকে?”

আঁধার ড্রাইভ করতে করতেই বলল,

—“কাল থেকে। আজ তোমার প্রয়োজনীয় সব বুকস ও নোটবুকস ও অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে হবে।”

—“আলিয়া ও কি আমাদের সঙ্গে যাবে?”

আলিয়া কানে থেকে ইয়ারফোন খুলে বলল,

—“নো মিষ্টি আজ আমার ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে। একদমই মিস করা যাবে না।”

সবাই আবার চুপ হয়ে গেল। গাড়ি এসে থামলো কলেজের সামনে। আঁধার মুন আর আলিয়া কে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি পার্ক করতে চলে গেল। মুন আর আলিয়া হাঁটতে হাঁটতে ক্যাম্পাসের সামনে গেল। এর’ই মধ্যে কোথা থেকে যেন একটা ছেলে এসে মুনের সামনে লাল টকটকে একটা গোলাপ নিয়ে এক হাঁটু ভেঙ্গে বসে পরলো। আর সেই সময়’ই আঁধার ও গাড়ি পার্ক করে ক্যাম্পাসে ঢুকলো।
#Mr_Husband
#লেখিকা: আবনী ইবনাত মুন
#পর্ব_১১

নিজের একমাত্র রাক্ষস বরের সামনে যে প্রপোজ পাবে তা কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি মুন। ভয়ে ওর ছোট্ট কলিজাটা আরো ছোট হয়ে গেছে। আঁধারের মুখের রং পরিবর্তন হচ্ছে। ধীরে ধীরে মুখটা লাল বর্ন ধারন করছে। চোখ দুটো অগ্নিগিরির মতো জ্বলজ্বল করছে। চোয়াল শক্ত হয়ে আসছে। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিল। কিন্তু তারপরও আঁধার নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। মুন মনে হচ্ছে ভয়ে মরেই যাবে। আঁধার বলে ছিল একটা রুল ব্রেক করলেও পানিসমেন্ট পেতে হবে। আর আজ প্রথম দিনেই……….মনে হচ্ছে কপালটাই খারাপ। মুন চাইছে মাটি টা একটু ফাঁক হয়ে যাক তাহলে ও তার ভিতর ঢুকে যাবে। কিন্তু তা আর হলো না। ছেলেটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,

—“আই লাভ ইউ মুন। তোমাকে সেই প্রথম দেখেছিলাম শপিং মলে। আর তারপর থেকেই আমার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কিছু ভালো লাগে না। শুধু ইচ্ছে করে সারাদিন-রাত তোমার কথা ভাবি। তুমি রাজি থাকলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”

মুন মনে মনে বিরবির করলো,

—“এই মালটা আবার কোত্থেকে টপকালো? ভাই তোর রাতের ঘুম সত্যি’ই হারাম হয়েছে কিনা জানিনা। কিন্তু আমার আজ রাতের ঘুম তুই হারাম করেই ছাড়বি দেখছি।”

ছেলেটা আবারো বলল,

—“উইল ইউ ম্যারি মি মুন?”

এর’ই মধ্যে ক্যাম্পাসের সামনে ছোটখাটো একটা ভীর জমা হয়ে গেছে। উৎসুক জনতা মুনের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। মুন কি জবাব দিবে সেটাই জানার আগ্রহ তাদের। মুন মুখটা করুন করে জবাব দিলো,

—“ভাই আমি অলরেডি বিবাহিতা। আমার আর বিয়ে করার কোনো ইচ্ছে নেই। ভাই কেনো শুধু শুধু আমার সংসারে আগুন লাগাচ্ছেন বলেন তো। ওই দেখুন আমার একমাত্র রাক্ষস জামাই আর আমি তার একমাত্র মাসুম বউ। আমারা দুজন বিরিয়ানির মতো। আপনি কেনো তাহলে শুধু শুধু তার মধ্যে এলাচের কাজ করছেন ভাই?”

মুনের কথা শুনে ছেলেটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আর প্রপোজের এমন উওর শুনে আমজনতাদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে গেল। মুনের পাশে দাঁড়িয়ে আলিয়া হেসে কুটিকুটি হচ্ছে। আঁধারের এক্সপ্রেশন আর মুনের ভীত ফেস দেখে আলিয়া বেশ ভালোই বুঝতে পারছে সব কিছু। মুন আলিয়া কে ধাক্কা মেরে বলল,

—“আলিয়া বলো না উনাকে?”

আলিয়া হাসি থামিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই হাসিরা ওর বন্ধ করে দেয়। মুন কড়া চোখে তাকাতেই আলিয়া অনেক কষ্টে নিজের হাসি চেপে রেখে ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলল,

—“হ্যা ভাইয়া ও বিবাহিতা। আমার একমাত্র ভাইয়ের বউ আর আমার একমাত্র ভাবি। একমাত্র আগে এলেও আপনার একটা চান্স ছিলো। কিন্তু এখন আর নেই। কারণ আমার ভাই বুকিং করে ফেলেছে।”

মুন জোড় পূর্বক হেসে বলল,

—“আপনি একদম চিন্তা করবেন না আমি আপনার জন্য সুন্দর দেখে একটা ভালো মেয়ে খুজে দিবো। কেমন? আর আমি না আপনাকে ভাই বানাতে চাই। তাই আজ থেকে আপনি আমার ধর্মের ভাই। ঠিক আছে? আবার উঠুন উঠুন।”

বলেই ছেলেটির হাত ধরে টেনে তুলল মুন। মুনের কথা শুনে আরেক দফা সবাই হাসিতে ফেটে পরলো। বেচারা এসে ছিল জামাই হতে আর হয়ে গেল ধর্মের ভাই। একেই বলে কপাল। এদিকে মুন ছেলেটার হাত ধরায় আঁধারের রাগ সপ্তম আকাশ ছুঁয়েছে। আজ মুনের কপালে দুঃখ আছে সেটা আঁধার কে দেখেই বেশ বোঝা যাচ্ছে।

.

মুনের এডমিশন করিয়ে ওখান থেকে সোজা লাইব্রেরিতে চলে গেল আঁধার। আঁধার মুনের জন্য নোটবুকস, টেস্ট পেপারস, প্যাডস ইত্যাদি নিচ্ছে। আর মুন ঘুরে ঘুরে একটা করে গল্পের বই নিচ্ছে। মুন বই গুলো নিয়ে কাউন্টারে রাখলো। আঁধার ভ্রু যুগল কুঁচকে মুনের দিকে আর বই গুলোর দিকে তাকাচ্ছে। মুন এক গাদা গল্পের বই নিয়েছে। আঁধার কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবার বুকসেল্ফ গুলো’র দিকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এলো এক গাদা বই নিয়ে। মুন প্রশ্নকর দৃষ্টিতে আঁধারের দিকে তাকিয়ে আছে। আঁধার বলল,

—“তোমার ওই বই গুলোর মধ্যে তুমি যে কোনো দুটো বই নিতে পারবে। আর গুলো ফেরত দিতে হবে। তোমার আউট বুকস পড়তে ভালো লাগলে আমি তোমার জন্য আলাদা বই এনেছি সে গুলো পড়তে পারো। এই বই গুলো পড়লে জ্ঞান বাড়বে। ওগুলো পড়লে কোনো লাভ হবে না।”

মুখের রাগে মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। ও গল্পের বই নিতে চাচ্ছে আর আঁধার ওকে কতগুলো জ্ঞানী বাবার বই ধরিয়ে দিচ্ছে। লাগবে না কোনো বই। মুন কিছু না বলেই রেগে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে গেল। আঁধার দীর্ঘশ্বাস শ্বাস ছাড়লো। তারপর নিজেই মুনের আনা গল্পের বই গুলো থেকে দুটোর জায়গায় ভালো ভালো পাঁচটা বই বাছাই করে নিল। আর মুনের জন্য নিজের আনা বই গুলো ও নিলো। মুন গাড়ির ফ্রন্ট সিটে চুপচাপ বসে আছে। আঁধার বই গুলো এনে গাড়ির ডিকিতে রাখলো
তারপর ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। কারো মুখে কোন কথা নেই। মুন চুপ চাপ জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। আঁধার একমনে গাড়ি চালাচ্ছে। হঠাৎ আঁধার সুপার সপের সামনে গাড়ি ব্রেক করলো। তারপর গাড়ি থেকে নেমে সপের ভিতরে চলে গেল। মুনের অভিমান আরো বেড়ে গেল। আঁধার নিজ থেকে একবার কথাও বলল না। রাগ ও ভাঙ্গালো না। একবার কথা বললে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত?
কিছুক্ষণ পর আঁধার দুটো থলি হাতে সপ থেকে বেরিয়ে এলো। একটা থলি মুনের কোলে রেখে অন্য টা ব্যাক সিটে রাখলো। মুন অবাক চোখে আঁধারের দিকে তাকালো। আঁধার সেদিকে পাত্তা না দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। মুন থলি খুলো‌ দেখলো ভিতরে অনেক গুলো চকলেট আর আইসক্রিম।মুন অবাক কন্ঠে’ই জিজ্ঞেস করল,

—“এগুলো আমার জন্য?”

আঁধার ড্রাইভ করতে করতে জবাব দিলো,

—“না আমার জন্য। তোমাকে শুধু রাখতে দিয়েছি।ভুলেও একটাতেও হাত লাগাবে না। তাহলে কিন্তু………”

আঁধার লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে চমকে গেল। মুন আঁধারের কথা না শুনেই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। বাচ্চাদের মতো পুরো মুখ মাখিয়ে ফেলেছে। মুন খেতে বলল,

—“আপনি আমার। আর আপনার সব জিনিসই আমার অধিকার আছে। তাই এগুলো তে ও আমার অধিকার আছে।”

‘আপনি আমার’ মুনের এই কথাটা গিয়ে আঁধারের বুকে তীব্র ভাবে আঘাত হানে। মুন আবারো বলল,

—“আর সব থেকে বড় কথা আপনার এতো কষ্টের এই বলিষ্ঠ বডি এই তুচ্ছ চকলেট আর আইসক্রিম খেয়ে নষ্ট করবেন তা কি আমি হতে দিতে পারি বলেন? একদমই না। আর টাকার জিনিস ফেলে দিতেও তো পারি না। তাই আমিই খেয়ে ফেলি।”

মুন খিলখিল করে হাসলো। মুনের কথায় আঁধার ও মৃদু ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো।

.

মুন আঁধারের পেন্ট, শার্ট পেটাচ্ছে থুরি ধুচ্ছে। আর বিরবির করে আঁধার কে গালিগালাজ দিচ্ছে। আঁধার একবালতি জামা কাপড় ভিজিয়ে মুন কে ধুতে দিয়েছে আর বলেছে ভালো সরে ধুয়ে পরিষ্কার করতে। কোথাও যেন একটু ময়লাও না থাকে। তাহলে এই জামা কাপড় আবার ধুতে হবে। মুন আঁধারের রাগ আঁধারের কাপড় গুলোর উপর দেখাচ্ছে। মুন এমন ভাবে একটা টিশার্ট কে টাইলস এর উপর বারি মারছে মনে হচ্ছে টিশার্ট টা ছিঁড়ে ফাতা ফাতা হয়ে যাবে। আঁধার ওয়াশ রুমে টোকা মেরে বলল,

—“তোমার যেভাবে ইচ্ছে সে ভাবে ধোও। কিন্তু একটা কথা মনে রেখ আমার জামাকাপড়ে যদি একটা আঁচড় ও লাগে তাহলে এর শাস্তি ভয়াবহ হবে।”

আঁধার কথাটা বলতে না বলতেই টিশার্ট টা ফেটে গেল। মুন টিশার্ট টা নিজের মুখের সামনে ধরতেই দেখলো খুব সুন্দর গোল হয়ে টিশার্ট টা ফেটে গেছে। রাগের ফল স্বরূপ এটা হয়েছে। মুন কাঁদো কাঁদো হয়ে নিজেই নিজেকে বলল,

—“তোকে এবার কে বাচাবে মুন?”

যে মেয়ে কখনো নিজের জামাকাপড় ধুয়ে পরে দেখেনি। সে আজ আঁধারের কাপড় ধুচ্ছে। মুন অনেক কষ্টে অন্য জামাকাপড় গুলো ধুলো। তারপর সবার নিচে ছেড়া টিশার্ট টা রেখে তার উপরে অন্য সব জামা কাপড় গুলো রাখলো। তারপর ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে চোরের মতো আঁধারের সামনে দিয়ে বেলকনিতে গেলো
আঁধার সন্দিহান চোখে মুনকে দেখছিল। বেলকনিতে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচলো মুন। তারপর একে একে সব গুলো কাপড় বেলকনিতে লেরে দিলো। শেষে বালতি থেকে ছেড়া টিশার্ট টা হাতে নিলো। আর দেখতে দেখতে ভাবতে লাগলো কি করবে এখন। টিশার্ট টা নিয়ে পিছনে ঘুরতেই চমকে উঠলো মুন। কারণ আঁধার ওর সামনে কাঁটা ভ্রু টা উঁচু করে তাকিয়ে আছে। মুন টিশার্ট টা উঁচু করেই ধরে ছিল। টিশার্টের দিকে আঁধারের চোখ যেতেই ওর চোখ কপালে উঠে গেল। মুন কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,

—“আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি।”

আঁধার গম্ভীর স্বরে বলল,

—“এখন চুপচাপ বেডে গিয়ে শুয়ে পরো। আর ভুলেও ভাববে না যে আমি তোমাকে ছেড়ে দিদো। তোমার পানিসমেন্ট সকালে দেওয়া হবে।”

মুন চুপচাপ বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ল আর ভাবতে লাগলো আঁধার ওকে কি পানিসমেনট দিবে। আঁধার বাঁকা হেসে নিজেও সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।

.

ভোর ৫টা বাজে আঁধার বরফ ভেজানো ঠান্ডা পানি ঢেলে মুন কে ঘুম থেকে উঠালো। মুন যেন জমে গেছে সেরকম অবস্থা হয়েছে ওর। আঁধার একটা জগিং সুট এনে মুন কে দিয়ে বলল,

—“তাড়াতাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে এসো আমরা জগিং এ যাবো।”

মুন রেগে বলল,

—“আপনাকে যাওয়ার হলে আপনি যান। আমি কোথাও যাবো না। গো টু দি হেল।”

আঁধার মেকি হেসে বলল,

—“দুমিনিটের মধ্যে জগিং সুট পরে রেডি হয়ে এসো। নাহলে একটা নতুন শাস্তির জন্য তৈরি হও।”

মুন দমে গেল। তড়িঘড়ি করে উঠে জগিং সুট টা নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল। তারপর রাগে গজগজ করতে করতে আঁধারের সাথে জগিং করতে গেল। আঁধার মুন কে একটা টাস্ক দিলো। এখন থেকে ৮টা পর্যন্ত মুন কে দৌড়াতে হবে। মানে তিন ঘণ্টা মুনকে দৌড়াতে হবে। আর প্রতি এক ঘন্টায় ব্রেক। মুন কোনো মতেই রাজি নাও আঁধার বাঁকা হেসে বলল,

—“তোতাপাখি তুমি যদি আমার কথা না‌ শুনো তাহলে ওই যে ওখানে একটা রিভার দেখছো না? ওই রিভারে তোমাকে তিন ঘণ্টা সুইমিং করতে হবে। তাও ব্রেক ছাড়া।”

মুন আঁতকে উঠলো। ও তো ভালো করে সুইমিং পরেও না। কোনো রকম ভেসে থাকতে পারে। সেখানে তিন ঘণ্টা ও এক টানা কি করে সুইমিং করবে? ও তো মরেই যাবে। আঁধার বলল,

—“বলো কোনটা করতে চাও তুমি?”

—“আমি দৌড়াবো।”

—“এই তো গুড গার্ল।”

—“কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে?”

আঁধার ভ্রু বাঁকিয়ে তাকালো।

—“প্রতি ৩০ মিনিট অন্তর ব্রেক?”

—“স্টার্ট ফাস্ট।”

মুন দৌড়ানো শুরু করলো। বিশ মিনিট হতে না হতেই দৌড়াতে দৌড়াতে মুনের করুন অবস্থা হয়ে যায়। মুন আগে কখনো এতো দৌড়েছে কিনা তাও
সন্দেহ। মুনের পা প্রচুর ব্যথা করছে। ধীরে ধীরে সূর্যের তাপ বাড়ছে। আঁধার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। মুনের মুখ লাল হয়ে গেছে রোদের তাপের। মনে হচ্ছে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। মুন বেশিক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না ওর সমস্যা হয়। মাথা ঘুরে আসে। শরীর ছেড়ে দেয়। এক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পর্যন্ত ওর মধ্যে থাকে না। সেখানে তো আজ ও দুই ঘণ্টা ধরে দৌড়াচ্ছে। কিভাবে সম্ভব। ৮টা বাজতে আর মাত্র ৩০ মিনিট বাকি আছে। মুন দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত।

—“টাইম আপ।”

আঁধারের কথা টা কানে যাওয়া মাত্রই মুন যেখানে ছিল সেখানেই বসে পরে। আঁধার ছাতা নিয়ে মুনের সাথে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে। মুন হাঁপাতে হাঁপাতে অভিমানী সুরে বললো,

—“আপনি খুব খারাপ Mr.Husband”

আঁধার মৃদু হেসে জবাব দিলো,

—“আই নো। ওই ছেলেটার হাত ধরার শাস্তি এটা। অন্য কোনো পুরুষের হাত ধরার আগে এই শাস্তির কথা মনে করবে। এবার ছেড়ে দিলাম দ্বিতীয় বার যদি দেখি তাহলে একদম জানে মেরে ফেলবো।”

শেষে কথা গুলো দাঁতে দাঁত চেপে বলল আঁধার। কথা গুলোর মাঝে হিংস্রতা ফুটে উঠছিল। আঁধার মুন কে ওখানে ফেলে রেখেই সামনের দিকে চলে গেল। আর মুন ওখানে ওভাবেই বেকুবের মত বসে রইল।

চলবে,

[গল্প আজ দুপুরেই দিবো ভেবে ছিলাম। গল্প লেখা শেষ ও হয়ে গেছিল কিন্তু কপি করতে গিয়ে ডিলিট হয়ে যায়। তারপর ভেবেছিলাম আজ কে আর গল্প দিবো না। কারণ গল্প লেখার কোনো ইচ্ছে’ই ছিল না। কিন্তু পরে আপনাদের কথা ভেবে, আপনাদের খুশি করার জন্য আবার গল্প লিখতে বসি। খাওয়া, গোসল বাদ দিয়ে আপনাদের জন্য কষ্ট করে দ্বিতীয় বারের য়তো গল্প লিখলাম। তাই আশা করি সবাই গঠন মুলক কমেন্ট করে আমাকেও খুশি করবেন। আর ভুল গুলো মার্জনা করবেন। ধন্যবাদ।]
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here