My First Crush পর্ব -০২

#My_First_Crush
#পর্ব-০২
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

‘তোমার মতে বিয়ের জন্য সবথেকে প্রয়োজনীয় কি?

রাইয়ান একবার তার সামনে দাঁড়ানো ধবধবে ফর্সা ছিপছিপে গড়নের আমেরিকান মেয়েটার দিকে তাকালো। মেয়েটা গোটা গোটা ইংরেজিতে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েই হাতের মাইকটা রাইয়ানের সম্মুখে বাড়িয়ে জবাবের জন্য অপেক্ষা করছে। চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে বুদ্ধিমান এবং প্রাকটিক্যাল মাইন্ডের রাইয়ান ইংরেজিতেই স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দিল,

‘স্যাটিসফেকশন।’

মেয়েটা কিঞ্চিৎ কৌতূহলী হয়ে উঠলো। রাইয়ান বলতে লাগলো, ‘আমার মনে হয় বিয়ের জন্য প্রথমেই সবথেকে প্রয়োজনীয় ব্যাপারটি হলো একে অপরকে নিয়ে স্যাটিসফাইড ফিল করা। কারণ দুজন পার্টনার যদি একজন আরেকজনকে নিয়ে স্যাটিসফাইড না হতে পারে তাহলে কখনোই তারা ভেতর থেকে খুশি হতে পারবে না। শুধু খুশি হবার নাটক করতে হবে। তাই বিয়ের জন্য অবশ্যই যে যেমন লাইফ পার্টনার চায়, এবং পার্টনারের মধ্যে যেসব কোয়ালিটি চায় সেগুলো নিয়ে স্যাটিসফাইড হতে পারাটা খুবই জরুরী।’

নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করার জন্য রাইয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়েটা আবারো অন্য ব্যক্তিদের মতামত নিতে ছুটলো। রাইয়ানও আর সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে সামনেই গাড়ি নিয়ে দাঁড়ানো তার বাঙালী বন্ধু জিশান এর দিকে এগিয়ে গেলো। হাত বাড়িয়ে পাঞ্চ করে তোষামোদি বিনিময়ের পর জিশান জিজ্ঞেস করলো, ‘ওটা কি ছিল?’
রাইয়ান বলল, ‘হবে কোন ইউটিউবার। বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় কি তার উপর মতামত নিচ্ছে।’
কথাটা বলে জিশানের থেকে চাবি নিয়ে গাড়ির দরজা খুলে ড্রাইভারের সিটে বসলো রাইয়ান। জিশানও তার পাশের সিটে বসে সিটবেল্ট লাগাতে লাগাতে বলল, ‘হুম, শুনলাম তো। আর তোর অদ্ভুত জবাবও শুনলাম।’
রাইয়ান বলল, ‘তো আমি ভুল কি বলেছি! তুই চাইলি কফি তোকে দেওয়া হলো চা তাহলে কেমন হবে?’
জিশান মজা করে হেসে বলল, ‘চা ও তো কম মজা নয়।’
রাইয়ানও মৃদু করে হাসলো। জিশান বলল,
‘শুধু কি সম্পর্ক নিয়ে উপদেশই দিবি! এতদিনে নিজে কোন রিলেশনশিপে গেলি না কেন? এই পর্যন্ত কম সুন্দরী মেয়েরা তো তোর উপর নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেনি!’
রাইয়ান মুখে মৃদু করে চ সূচক একটা শব্দ করে বলল, ‘হেই (Hey), সবকিছুর একটা পারফেক্ট টাইমিং থাকে। ক্যারিয়ারে ফোকাসের সময়টা রিলেশনের জন্য না। আমি আগে আমার ক্যারিয়ারটা ভালো ভাবে বিল্ড আপ করতে চেয়েছিলাম। ডোন্ট ইউ নো? আমি আমার কাজ নিয়ে অনেক সিরিয়াস। আর আমি আমার জন্য যেমন সুইটেবল মেয়ে চাই তেমন এখনো পাইনি।’
‘হ্যাঁ হ্যাঁ জানি, তুই একদম পারফেক্ট একটা মেয়ে চাস। হাই এডুকেটেড, স্মার্ট, বিউটিফুল, ম্যাচিয়ুরড একটা মেয়ে।’
রাইয়ান খুনশুটি করে বলল, ‘মুখস্থ করে রেখেছিস নাকি! কাজ নিয়ে এমন সিরিয়াস হ।’
জিশান হাত নাড়িয়ে বলল, ‘আচ্ছা আচ্ছা হবো। তুই গাড়ি চালা।’
________________________________________________

সকাল সকাল কফিশপে কোন কাস্টমার ছিলো না। জেরিন একটা চেয়ারে বসে টেবিলের উপর মাথা রেখে ঝিমাচ্ছিলো। জেরিনের ব্যাপারে বলতে গেলে সে অর্ধেক বাঙালী, অর্ধেক ইংরেজ। অর্থাৎ তার বাবা বাঙালী, মা ইংরেজ। তার পরিবার মিনেসোটাতে থাকে। বব কাট চুলের এই অর্ধ বাঙালী মেয়েটি মাইন্ডের দিক থেকে খুবই স্ট্রং। পড়ালেখার জন্য সে ফ্লোরিডায় এসেছিল। পড়ালেখা শেষে এখনো ফিরে যায়নি। হৃদির সাথে বন্ধুত্ব হয় তার ইউনিভার্সিটিতে থাকতেই। সময়ের সাথে সাথে তারা এখন একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড। কফিশপটি হৃদির হলেও এর পরিচালনা হৃদি আর জেরিন দুজন মিলেই করে। দুজন হেল্পিং মেনও আছে। তবে তারা পার্ট টাইম বিধায় সকালের সময়টুকু হৃদি আর জেরিনকেই দেখভাল করতে হয়। আজ জেরিন একটু তাড়াতাড়িই কফিশপে চলে এসেছে। কাস্টমারের অপেক্ষা করতে করতে জেরিন যখন ঝিমাচ্ছিলো ঠিক তখন ঝড়ের বেগে বাইরে থেকে প্রবেশ করে হৃদি। ধপ করে জেরিনের পাশের চেয়ারে বসে পড়ে জেরিনের হাত ঝাঁকিয়ে উত্তেজিত গলায় বলে,
‘জেরিন, জানিস কি হয়েছে?’
জেরিন চোখ না খুলেই ঘুমু ঘুমু গলায় বলতে লাগলো, ‘কি হয়েছে? তোর বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ঐ পুরনো বাড়ি আর কতদিনই টিকবে।’
হৃদি এক নিঃশ্বাসে বলে উঠলো,
‘আমার সাথে রাইয়ানের বিয়ে হবে।’
জেরিন কোন ধরণের প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে সেভাবেই বলল, ‘সে তো কবেই হয়েছে। রাইয়ানের সাথে বিয়ে হয়েছে, সংসার হয়েছে, দুটো বেবি হয়েছে।’
হৃদি বাঁধা দিয়ে বলল, ‘ওহ হো! ওটা তো কল্পনায়। আমি এখন বাস্তবের কথা বলছি।’
জেরিন এবার চোখ খুলে বলল,
‘বাস্তবের কথা বলছিস মানে সত্যি সত্যি?’
হৃদি খুশি হয়ে মাথা ঝাঁকালো। জেরিন আবারো জিজ্ঞেস করলো, ‘রাইয়ানের সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে?’
হৃদি আবারো মাথা ঝাঁকালো। চোখের পলকে জেরিন একটা লাফ দিয়ে উঠে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো, ‘রাইয়ানের সাথে তোর বিয়ে ঠিক হয়েছে!’
চিৎকারটা এতো জোরে ছিল যে রাস্তা দিয়ে যাওয়া কিছু পথচারী পর্যন্ত কফিশপের ভেতর ওদের দিকে তাকালো। হৃদি দাঁড়িয়ে জেরিনের হাত ধরে টেনে বলল, ‘আস্তে!’
জেরিন আবার বলল, ‘তুই সত্যি বলছিস তো?’
হৃদি এক্সাইটেড হয়ে বলল, ‘গতকাল ওর দাদীমা আমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল।’
জেরিন অধীর আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করলো,
‘তুই কি বলেছিস?’
হৃদি লজ্জা পেয়ে বলল, ‘আমি আর কিই বলতে পারি?’
জেরিন আনন্দিত হয়ে হৃদির দু হাত ধরে বলল, ‘তার মানে রাইয়ানের সাথে তোর বিয়ে হচ্ছে।’
ওরা দুজন উৎফুল্ল হয়ে একে অপরের হাত ধরে লাফাতে লাগলো। অবশেষে জেরিন হৃদিকে একবার জড়িয়ে ধরে তারপর বলল,
‘আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। অবশেষে তোর এতোদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। আমি খুবই খুশি।’
‘বিশ্বাস তো আমারো হচ্ছে না। আমার এখনও মনে হচ্ছে আমি স্বপ্ন দেখছি।’
‘ওই, আর স্বপ্নে থাকতে হবে না। এখন সব বাস্তবেই। বাস্তবেই তুই তোর ভালোবাসা পাবি।’
হৃদির চোখ খুশিতে চিকচিক করতে লাগলো।
________________________________________________

‘অসম্ভব! আমি এই বিয়ে করবো না।’

রাইয়ান দ্রুত পায়চারি করতে লাগলো। একবার ড্রয়িংরুমের এ প্রান্তে আসছে তো আরেকবার অপরপ্রান্তে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে তার সারা শরীরে কেউ বিচুটি পাতার গুঁড়া ছিটিয়ে দিয়েছে। রাইয়ানের ব্যগ্রতায় দাদীমার মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা গেলো না। পাশেই তার দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত মেইড মধ্যবয়স্ক ডি’সোজা চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। তিনি ডি’সোজার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে ধীরে সুস্থে চুমুক দিয়ে বললেন,
‘এতো অসম্ভবের কি আছে?’
‘দাদীমা তুমি বুঝতে পারছো না। এভাবে হঠাৎ করে কিভাবে?’
‘এভাবেই।’
‘ওঁ আমার থেকে কত ছোট!’
‘পাঁচ বছরের ছোটও কোন ছোট হলো! আমাদের দেশে গিয়ে দেখো এই ব্যবধানই বিয়ের জন্য উপযুক্ত হিসেবে ধরা হয়।’
‘আমি এই বিয়ে করতে পারবো না।’
‘এখন তো আর না করে কিছু হবে না। আমি বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি।’
রাইয়ান দাদীমার দিকে দু কদম এগিয়ে এসে বলল,
‘আমাকে না বলেই তুমি এটা কিভাবে করতে পারো দাদীমা?’
দাদীমা মুখে ‘আউ’ করে একটা শব্দ করে বলল,
‘বলিনি মানে! আমি কি তোমাকে এক বছর সময় দেইনি? বলিনি, আর এক বছর সময় আছে এর মধ্যে নিজে কোন মেয়ে বিয়ের জন্য পছন্দ করতে না পারলে আমি আমার পছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে দেবো।’
রাইয়ান বিস্ফোরিত চোখে বলল,
‘ওটা সিরিয়াসলি ছিলো? আমি তো ভেবেছিলাম মজা করছো।’
রাইয়ানের রিয়্যাকশন দেখে ডি’সোজা ফিক করে হেসে ফেললো। রাইয়ান সেদিকে তাকাতেই ডি’সোজা তাড়াতাড়ি হাসি সংযত করে দাদী আর নাতির কান্ড দেখতে লাগলো। দাদীমা বললেন,
‘কিন্তু আমি তো মজা করিনি। এক বছর কেটে গেছে। তুমি কোন মেয়ে পছন্দ করতে পারোনি। তাই আমি আমার পছন্দের মেয়ে দেখেছি।’
রাইয়ান একটা টুল টেনে দাদীমার পাশে বসে তার হাত টিপতে টিপতে নরম সুরে বলল,
‘দাদীমা প্লিজ! আচ্ছা তাহলে আমাকে আরো একটা বছর সময় দাও।’
দাদীমার কোন প্রতিক্রিয়া না দেখে আবার বলল,
‘আচ্ছা আট মাস….ছয় মাস….চার মাস!’
দাদীমা বললেন, ‘এক মাসও না। আমি বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি। আর ঐ মেয়েকেই তোমার বিয়ে করতে হবে।’
রাইয়ানও এবার জেদ ধরে বলল, ‘করবো না আমি বিয়ে।’
দাদীমার সহজ সারল্য দৃষ্টি হঠাৎ তীক্ষ্ণ হয়ে উঠলো। তিনি ঠান্ডা গলায় রাইয়ানকে বললেন,
‘আমার কথা কোনদিন তোমার দাদাজানও না মেনে পারেনি। তোমার কি মনে হয় তুমি পারবে?’

কিছুক্ষণ পর রাইয়ান উঠে চলে গেলে ডি’সোজা দাদীমাকে বললেন,
‘এভাবে মি. রাইয়ানকে কি বিয়ের জন্য জোর করা ঠিক হচ্ছে?’
দাদীমা বললেন,
‘তো কি করবো? ওর আশায় থাকলে এই জন্মে আর ওর বিয়ে করা হবে না। সময় কি আমি ওকে দেইনি! এমন চলতে থাকলে সারাজীবন রাইয়ান শুধু কাজই করতে থাকবে আর সিঙ্গেলই থেকে যাবে।’

ডি ‘সোজা হাসতে লাগলো। দাদীমা হঠাৎ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে নরম গলায় বললেন,
‘রাইয়ান ছোট থেকেই একা। মাকে চেনার আগেই মাকে হারিয়ে ফেলেছে। কখনো মায়ের আদর যত্ন পায়নি। আর বাবা তো থেকেও নেই। আমি একা বৃদ্ধ মানুষ কতটুকুই বা কি করতে পেরেছি ওর জন্য। তাই আমি চাই, ওর জীবনে এমন কোন সঙ্গী আসুক যে ওকে শুধু ভালোই বাসবে না, যত্ন করে ভালোবাসবে। যে শুধু ওর ভালো দিকগুলোই না ওর ত্রুটিগুলোও মেনে নিতে পারবে। আর আমার মনে হয় আমি একটা সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে পেরেছি।’
________________________________________________

ক্লাবে ঢুকেই গায়ের ব্লেজারটা খুলে রাইয়ান ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। জিশান বিলিয়ার্ড গেমের পুল টেবিলের উপর সবুজ বলটিতে স্ট্রাইক দিয়ে হিট করলো। রাইয়ানকে উদ্দেশ্য করে খানিক মজার সুরে বলল,
‘এতো রাগ করলে তো ফেস এর গ্লামারস কমে যাবে উড বি গ্রুম।’
রাইয়ান ক্ষেপে গিয়ে বলল, ‘আমি কি তোকে আমার মজা উড়ানোর জন্য বিয়ের খবর দিয়েছি?’
জিশান বলল, ‘সরি ব্রো। আচ্ছা মজা সাইডে রাখলাম। এবার বল, ফোনে যা বললি তোর নেইবার হুডেরই কোন একটা মেয়ের সাথে তোর দাদীমা বিয়ে ঠিক করেছেন। আচ্ছা তোর দাদীমা এই মেয়েটাকে নিয়ে এতো সিরিয়াস হয়েছে কেন?’
‘মেয়েটা বাঙালী বলে হয়তো…হোয়াটএভার, আমি জানি না।’
‘দেখেছিস মেয়েটাকে কখনো?’
‘দেখেছি এক দু বার। আমাদের বাড়ির থেকে কয়েক বাড়ি পরেই হয়তো ওর বাড়ি। আমি শিওর না।’
জিশান ওর ফোনে কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে রাইয়ানের দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে একটা ছবি দেখিয়ে বলল, ‘এই মেয়েটা?’
রাইয়ান বলল, ‘হ্যাঁ। তুই পেলি কিভাবে?’
জিশান স্মিত হেসে বলল, ‘ফেসবুকে তোদের নেইবার হুডের গ্রুপে ঢুকেছি। ওখানে বাঙালী পরিবারই তো তিন কি চারটে। খুঁজে পেতে আর এমন কি মুশকিল!’
এরপর ফোনের স্ক্রিনে আরও গভীর দৃষ্টিপাত করে জিশান বলল, ‘খারাপ কি মেয়েটা?’
রাইয়ান বলল, ‘আমি কখন বললাম খারাপ! আমি শুধু বলছি..সি’জ নট মাই টাইপ।’
‘তাহলে বিয়ের জন্য মানা করে দে।’
‘তোর কি মনে হয় আমি এখনো চুপ করে বসে আছি। ইউ নো হোয়াট, এই পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে জেদি নারী হচ্ছে আমার দাদীমা। আমাকে কি বলেছে জানিস, বলেছে এই বিয়ে না করলে আমাকে সব সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে দেবে।’
জিশান বলল, ‘ঐ! তোর দাদীমা মনে হয় অনেক সত্তর, আশি দশকের বাংলা মুভি দেখেছে।’
‘আমার দাদীমাও তো ঐ যুগেরই। আমি কোনদিন ভাবিনিও যে বিয়ে নিয়ে আমাকে এমন সিচুয়েশনে পড়তে হবে।’
‘হুম, অনেক বড় থ্রেট।’
‘একচুয়েলি এটা আমার কাছে কোন ম্যাটারও করতো না। এতো হার্ড ওয়ার্ক করে নিশ্চয়ই এর জন্য নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করিনি যে পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বসে থাকবো আবার এর জন্য নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু করবো। কিন্তু সমস্যাটা হলো…
জিশান বললো, ‘কি?’
রাইয়ান মুখটা ফুলিয়ে বলল, ‘আমার লোন। আগে থেকে তো গাড়ির লোন আছেই তার উপর কয় মাস আগে যে নিজের নতুন অ্যাপার্টমেন্ট রাখলাম তার লোন। এই বিশাল লোন আবার আমার লিভিং এক্সপেন্স সব মিলিয়ে আমার স্যালারিতে হয় না। বড় হবার পর থেকে তো মার্কেটে আমাদের স্টোর হাউজ আর ইনকাম সোর্স সব প্রোপার্টির দেখভাল আমিই করি। এগুলো থেকে পাওয়া ডলারও আমার কাছেই থাকে। এই ডলার আর স্যালারি মিলিয়ে প্রতিমাসে লোন দিয়েও আমার খুব ভালো মতো চলে যায়। কিন্তু এখন যদি দাদীমা আমাকে এসব থেকে সরিয়ে দেয় তাহলে আমার একার স্যালারিতে তো এত বড় লোন আমি শোধ করতে পারবোই না। উল্টো এদেশের আইন কানুন কত কড়া তা তো জানিসই, লোন দিতে একটু হেলাফেলা হলেই ব্যাংক থেকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে জেলেও ঢুকিয়ে দিতে পারে।’
সোফায় হেলান দিয়ে দু হাতে মুখ ঢেকে রাইয়ান অস্থির সুরে বলল, ‘উফ! আমি একদম ফেঁসে গেছি। এজন্যই মানুষ বলে কচ্ছপের মতো আস্তে আস্তে এগোতে। কি দরকার ছিল এতো তাড়াতাড়িই গাড়ি বাড়ির লোন নেওয়া!’
জিশান একটা কোকাকোলার ক্যান রাইয়ানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ‘রিল্যাক্স ব্রো। একটু গলাটা ভিজিয়ে নে।’
কোকাকোলার ক্যানে চুমুক দিয়ে রাইয়ান বলল,
‘দাদীমা না ইচ্ছে করে আমাকে গ্যাড়াকলে ফাঁসিয়েছে! খুব ভালো করেই জানে আমার অবস্থা। আর আমার এখন তার কথা মানা ছাড়া কোন উপায়ও নেই।’
জিশান মৃদু করে হেসে বলল, ‘তার মানে তুই বিয়েটা করছিস?’
রাইয়ান বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ব্লেজারটা হাতে নিয়ে যাওয়ার আগে বলল,
‘এখনের মতো এ ছাড়া তো আর কোন উপায় দেখছি না। আপাতত এটাই করতে হবে।’
কথার মানে বুঝতে না পেরে রাইয়ানের যাওয়ার পানে জিশান কৌতুহলী গলায় প্রশ্ন ছুড়লো, ‘তারপর?’
পেছনে ঘুরে রাইয়ান স্বাভাবিক সুরে বলল, ‘হেই(Hey), আমরা বাংলাদেশে না ইউএসএ থাকি। ডিভোর্স এখানে খুবই নরমাল।’

চলবে,

[একটা গানের থেকে ইন্সপায়ার্ড হয়ে এই গল্পটা আমার লেখা। শেষপর্যন্ত পাশে থাকবেন। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here