real love পর্ব ২০

# Real_Love♥
# Oniya_Chowdhury
Part:20
.
.
নাফিসা ল্যাপটপটা নিয়ে রুমে চলে গেলো।আমি মাত্রই বেড থেকে উঠতে যাবো সেই মুহূর্তে হাত ধরে টান দিলো!আমি ভয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– কি?
– বসো!
– প্লিজ!
– কি প্লিজ?
– ঘুমিয়ে নেন একটু!
– একটা কনডিশনে ঘুমোবো!
– কি কনডিশন?
– চুল টেনে দিতে হবে!
– কিহ্!পারবো না!
– প্লিজ?
– অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু!
– সেটাই তো চাই!
বলেই উনি আমার হাত টেনে উনার পাশে বসিয়ে আমার কোমড় ধরে শুয়ে পরলেন।হঠাৎ এভাবে কোমড় জড়িয়ে ধরাতে ভয় পেয়ে এক নিশ্বাসে কয়েক সেকেন্ড ওভাবেই ছিলাম!
.
আমি চুপচাপ উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম!কিছু করছিলাম না দেখে উনি চোখ খুলে আমার দিকে তাকাতেই আমি অন্যদিকে তাকালাম। উনি আস্তে করে বললেন,
– সুযোগ দিয়েছি কিন্তু!কাজে লাগাও!বিয়ের আগে কিন্তু আর পাবা না এভাবে!
.
আমি একবার দরজার দিকে উকিঁ দিলাম!আম্মু যেকোনো সময় উপস্থিত হতে পারে!এই অবস্থায় একবার আম্মু দেখে ফেললে আমি ওখানেই শেষ!
.
আমি কোমড় থেকে উনার হাতটা যতবার ছাড়ানোর চেষ্টা করছি ততবারই উনি শক্ত করে ধরছেন!
.
– ছাড়ুন!আম্মু আসছে!
কথাটা বলে উনাকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করলাম!কিন্তু উনি ভয় না পেয়ে উল্টো আমার কোলে মাথা রেখে দুইহাত দিয়ে দুইদিক থেকে কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– টিয়াপাখি!যেটা বলেছি সেটা করো!আন্টি তোমার মতো বোকা না!তিনি অযথা এই রুমে ঢুকে তার মেয়েজামাইকে লজ্জায় ফেলবেন না!সো ভয় না দেখিয়ে চুল টেনে দাও!
.
এই প্রথম উনি আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছেন!উনার এরকম স্পর্শে পুরো শরীর কাপছেঁ!উনি যে আমাকে ছাড়বেন না সেটা আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারছি!
কোনোকিছু না ভেবে আমি একহাত দিয়ে উনার চুল আস্তে আস্তে টানতে লাগলাম!
.
কিছুক্ষণ পর উনার কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না।আমি মৃদু গলায় ঘুমিয়েছেন কিনা সেটা পরীক্ষা করার জন্য ডাকলাম!কিন্তু কোনো সাড়া পেলাম না!এতো তাড়াতাড়ি ঘুমানোর মানুষ তো উনি নয়!আমি আবার ডাকলাম,
– ঘুমিয়ে পরেছেন?
-……
– একদম ঢং করবেন না কিন্তু বলে দিলাম!
কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিলাম না দেখে আলতো করে উনার গালে হাত রাখলাম!তবুও উঠলেন না!সত্যি সত্যিই মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে পরেছেন!
কেনো যেনো খুব উনার নাম ধরে ডাকতে ইচ্ছে করছে!ঘুমিয়েই তো আছেন!ডাকলে টেরই পাবেন না!আমি উনার গালে হাত দিয়ে আলতোভাবে কিছুক্ষণ স্লাইড করলাম!
গভীরভাবে উনার দিকে তাকিয়ে আছি!ঘুমোলে উনাকে কত্ত সুন্দর লাগে!আমি উনার একদম কাছে যেয়ে চোখের উপর একটা চুমো দিলাম!উনি একটুও নড়লেন না!তারমানে একেবারে ঘুমিয়ে পরেছেন!আমি কোনোকিছু না ভেবে আস্তে করে”ইফাজ”বলে ডাকলাম!
.
সাথে সাথেই উনি বলে উঠলেন,
– ভয়েসটা মনে হলো আমার বউয়ের!ঠিক শুনলাম তো?
ওহ্ মাই গড!উনি জেগে আছেন!হঠাৎ উনার কন্ঠ শুনে প্রচন্ড ভয় পেলাম!সাথে সাথেই বুকে থুথু দিয়ে উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একদৌড়ে রুমে এসে নাফিসার পাশে বসে পরলাম!হঠাৎ আমাকে এভাবে রুমে আসতে দেখে নাফিসা ভয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে বললো,
– আপু!কি হয়েছে?এরকম করছো কেনো?
আমি একটা ঢোক গিলে নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– বোন রে!আমি নাম ধরে ডেকেছি!
– মানে?কার নাম?কিসের নাম?
– ই ই ইফ…..
– ওকে ওকে…..স্টপ!আগে রিলেক্স হও তারপর বল!
আমি উল্টোপাশ হয়ে শুয়ে পরলাম!কিন্তু মনের ভেতর হার্টবিট প্রচন্ড দ্রুত গতিতে ওঠানামা করছে!শোয়া থেকে উঠে বসলাম।নাফিসা ভয় আর উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– কি হয়েছে?
– হুম?
– কার নাম ধরে ডেকেছো?
– উনার!
– ভাইয়ার?
আমি মাথা উপর নিচ করে”হুম” বললাম!
– উফ্!আপু সত্যিই তুমি পারো ও!
কথাটা বলেই নাফিসা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আবার সেই আমার আর ইফাজের বার্থডে পিক দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো!
আমি আস্তে করে উল্টোপাশ হয়ে শুয়ে পড়লাম।বুকের ভেতরটা কাপছেঁ!উনি শুনে ফেলেছেন!হ্যা,উনি শুনে ফেলেছেন!
– নাফিসা!উনি শুনে ফেলেছেন!
আনমোনেই কথাটা মুখ ফসকে বেরিয়ে এলো!
নাফিসা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,
– প্লিজ!অফ যাও!ডিজগাস্টিং!হাজবেন্ডের নাম ধরে ডাকতেই পারো,এতো ভয় পাওয়ার কি আছে, আজব!
.
নাফিসা কখনোই আমার অবস্থাটা বুঝবে না।আমি রুম থেকে বের হয়ে কিচেনে চলে এলাম!আম্মু নেই!হয়তোবা রুমে!
.
কিচেন থেকে ড্রইংরুমে চলে এলাম!টিভি অন করলাম!
আমার চোখগুলো টিভির দিকে তাকিয়ে আছে!কিন্তু মনটা কারোর ভয়ে বুকের ভেতরেই এদিক ওদিক দৌড়াচ্ছে!
টিভিটা একেবারে অফ্ করে দিলাম!
.
আম্মুর রুমে চলে এলাম!আম্মু ইউটিউবে রান্নার রেসিপি দেখছিলো।আমাকে দেখামাত্রই আম্মু টেনে আম্মুর পাশে বসিয়ে বললো,
– দেখতো,এই রেসিপিটা কেমন?
আমি না দেখেই বললাম,
– হুম,ভালো!
– ইফাজকে রান্না করে খাওয়াবো!তিনটা দেখা অলরেডি শেষ!
– আম্মু!জানো আমি…..
আম্মু ফোন থেকে চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– হুম!
– কি?
– কি যেনো বললি?
– কই?
আমি তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হলাম!বলা যাবে না!কাউকেই বলা যাবে না এই কথা!আমি রুমের বাহিরেই হাটাহাটি করছি।আর নিজের আঙ্গুল নিজেই টানছি!
“ইফাজ” আহ্!নামটা কি অদ্ভুত সুন্দর! কিন্তু নামটার ভেতর এতো ভয় কেনো!সামান্য তো ডেকেছি আর তো কিছু করি নি!
.
আমি নিঃশব্দে পা টিপেটিপে আমার রুমের ভেতর উঁকি দিলাম!উনি ঘুমোচ্ছেন!চিৎ হয়ে বালিশের উপর মাথা রেখে একহাত মাথার নিচে দিয়ে অন্যহাত বুকের উপর রেখে পা লম্বা করে একপায়ের পাতার উপর অন্য পা রেখে নিরালায় ঘুমোচ্ছেন!দেখে মনে হচ্ছে সবচেয়ে সুখী মানুষ!চেহারায় না আছে কোনো চিন্তার ছাঁপ আর না আছে কোনো ভয়!
এদিকে আমি!ভয়ে কোথাও না পারছি বসতে আর না পারছি শুতে!
.
উনাকে দেখে কেনো যেনো মনে হচ্ছে উনি এখনও জেগে আছেন!শুধু চোখটাই বন্ধ করে আছেন!উনি কি আমার উপস্থিত বুঝতে পারেন?
রিক্স নেওয়া যাবে না!দ্রুত ওখান থেকে চলে আসলাম!
.
রুমে চলে আসলাম।নাফিসা ল্যাপটপ নিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছিলো।আমাকে দেখেই নাফিসা বলে উঠলো,
– পিকগুলো কে তুলেছিলো আপু?
– প্রান্ত ভাইয়া আর রনিক ভাইয়া!কেনো?
– ভীষন সুন্দর হয়েছে পিকগুলো!বিশেষ করে তোমার আর ভাইয়ার কেক খাওয়ানোর পিকটা!
আমি ভ্রু
কুচঁকে জিঙ্গেস করলাম,
– কোনটা?
– ওই যে তোমার হাত ধরে তোমার হাতে ভাইয়ার কেক খাওয়াটা!
– ওহ্!
.
নাফিসা ল্যাপটপটা নিয়ে রুম থেকে চলে গেলো।রেখে আসতে যাচ্ছে মনে হয়।আমি চুপচাপ যেয়ে বিছানায় বসে পরলাম।
কিছুক্ষণ পরই নাফিসা ল্যাপটপটা রেখে এসে রুমে ঢুকেই বললো,
– আপু!ভাইয়া ডাকছে তোমাকে।
কথাটা শুনেই আমি চোখ বড় বড় করে নাফিজার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– উনি এখনো ঘুমান নি?
– নাতো!ফোন চালাচ্ছিলেন দেখলাম।
আমি অসহায়ভাবে নাফিসার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– উনি এমন কেনো রে?
আমার কথা শুনে নাফিসা চোখদুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,
– কেমন?
– এই যে কাল সারাদিন এতো পরিশ্রম,তার উপর জার্নি করে এতোদূর আসা,তারপরেও কোনো উইকনেস নেই উনার মধ্যে!
– ওহ্!ঘুম না আসলে তো আর জোড় করে ঘুমোতে পারবে না!না ঘুমিয়েও শুয়ে শুয়ে রেস্ট নেওয়া যায়।যেই কাজটা এখন ভাইয়া করছে!বেশি কথা না বাড়িয়ে ভাইয়া ডাকছে ওখানে যাও!
.
আমি নাফিসাকে দেখিয়ে দেখিয়ে রুম থেকে বের হলাম ঠিকই!কিন্তু উনার কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না!বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছিলাম সেই মুহূর্তে আম্মুকে এদিকে আসতে দেখলাম!
আমাকে দেখেই আম্মু এগিয়ে এসে বললো,
– ইফাজ কি ঘুমিয়ে পরেছে?
– কেনো?
– দরকার ছিলো।
আম্মুর কথা শুনে আমি চালাকি করে বললাম,
– যেয়ে দেখে আসো!
– নাহ্!এভাবে যাওয়া ঠিক হবে না।তুই একটু তোর শ্বাশুরির নাম্বারটা দে!
– আমার ফোন তো আনি নি।ভুলে রেখে এসেছি!তোমাকে না সেদিন ফোন করে ইয়াশের সাথে আমার দেখা হওয়ার ঘটনাটা জানালো তখন সেভ করে রাখো নি?
– ওইটা তো তোর আব্বুর ফোনে কল দিয়েছিলো।
– তো আব্বুর কাছ থেকে নাও।
– বাসায় নেই!ইফাজের কাছ থেকে এনে দে!
– তুমি চলো আমার সাথে!
– আমার কিচেনে একটু কাজ আছে।তুই তাড়াতাড়ি নাম্বারটা এনে দে।
কথাটা বলেই আম্মু চলে গেলো।কথাটা এমনভাবে বলে গেলো মনে হলো আমার সাথে উনার কাছে যাওয়াটাকে এভয়েড করলো।
.
আমি ওড়নাটা ঠিকঠাক করে সরাসরি রুমে ঢুকে উনার দিকে না তাকিয়ে বলে ফেললাম,
– আন্টির নাম্বারটা একটু দিন।আম্মু চেয়েছে!
– আসতে এতো লেট হলো কেনো?এদিকে এসো!
উনার কথাটা শুনেই হাতপা রীতিমতো দ্বিগুন জোরে কাপঁতে শুরু করলো।আমি আমার ওড়নার কোনা ধরে টানাটানি করতে করতে বললাম,
– সময় নেই!নাম্বারটা একটু তাড়াতাড়ি দিন!আর্জেন্ট!আমাকে এখনই আম্মুর কাছে যেতে হবে কাজ আছে!
কোনোরকমে মিথ্যা কথা বলে উনাকে তাড়া দিচ্ছিলাম।যাতে উনি তাড়াতাড়ি নাম্বারটা দিয়ে দেন।
.
কিন্তু উনি আমার কথার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দিলেন!উনার কান্ড দেখে ভয়ে আমার জান বের হয়ে যায় যায় অবস্থা!ভয়ে আমি পেছনেও তাকাতে পারছি না!
.
অনেকক্ষণ উনার কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না।উনার এরকম নিরবতা আমার হার্টবিটের কম্পন আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে!
হঠাৎ আমার ডানপাশের কোমড়ে কারোর হাতের স্পর্শ পেতেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসলো!নিতে পারছি না আমি এই অদ্ভুত স্পর্শ!বাম কোমড়েও হাত রাখলেন!আস্তে আস্তে দুইহাত পেচিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরলেন উনি!
উনার এরকম স্পর্শে আমার পুরো শরীর আবেশে ছেয়ে গেলো!শরীরের সম্পূর্ণ ভার আমি উনার উপর ছেড়ে দিলাম!উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার কাধে একটা চুমো দিলেন!
উফ্!আমি শেষ!
.
আমি ছাড়ানোর চেষ্টা না করলে উনি কখনোই নিজে থেকে আমাকে ছাড়বেন না!
আমি কোনোরকমে উনাকে বললাম,
– আম্মু ওয়েট করছে!ছাড়ুন!
আমার কথা শুনে উনি আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,
– পাচঁমিনিট!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here