real love পর্ব ৩৩

# Real_Love♥
# Oniya_Chowdhury
Part:33
.
.
বাসায় এসেই দ্রুত শাড়িটা চেঞ্জ করে নিলাম!এতক্ষণ নিজেকে ভারী বস্তা বহনকারী ট্রাক মনে হচ্ছিলো!শাড়িটা খোলার পর নিজেকে তুলার চেয়েও পাতলা মনে হলো!
প্রচুর ক্লান্ত লাগছে।দ্রুত বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরলাম।বিছানায় শোয়ার কিছুক্ষণ পরই নাফিসা এসে পেছন থেকে হাত-পা আমার উপর তুলে দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
– আপু,কি শুনছি?
– যা শুনেছিস ঠিক শুনেছিস।এখন বিরক্ত করিস নাতো।যা এখান থেকে।আমি ঘুমাবো।
নাফিসা আমাকে ছেড়ে আমার ফোনটা নিয়ে বললো,
– একটু গান শুনবো!নেই?
– তোর যা মন চায় তুই তাই কর।আমার সামনে থেকে সরলেই হলো।
নাফিসা ফোনটা নিয়ে আমার পাশে শুয়ে পরলো!আমার চোখ একদম লেগে আসছিলো।দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
.
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ নাফিসা বলে উঠলো,
– ভাইয়া…এই কয়েকমাস ঘুমোতে পারবেন তো একা একা?
নাফিসার কথাটা শুনেই আমি দ্রুত পাশফিরে ওর কাছ থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বারান্দায় চলে এলাম!ফোনটা কানের কাছে ধরতেই উনি বলে উঠলেন,
– কি হলো…চুপ কেনো?উত্তর দাও!
আমি বিব্রত হয়ে বললাম,
– কিসের উত্তর?
– টিয়াপাখি নাকি?
আমি আস্তে করে বললাম,
– হুম!
– ঘুম আসছে না?
– ঘুমোচ্ছিলামই।নাফিসার জন্য জেগে গেলাম।
– কেনো?কি করেছে ও?
আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম,
– গান শুনবে বলে আমার ফোনটা নিয়ে বেয়াদবটা আপনাকে ফোন দিয়ে কথা বলছিলো!সেটা কানে আসতেই জেগে গেলাম!
– বাব্বাহ্!নিজের বোনকেও আমার সাথে কথা বলতে দিবে না?
– উফ্!উল্টো বুঝেন কেনো!দুজনই তো মুখে রসের হাড়ি নিয়ে ঘুরেন!লাগামহীন সব কথাবার্তা চলবে আপনাদের মধ্যে!সেটা ভেবেই কানেকশন নষ্ট করলাম!
আমার কথা শুনে উনি হো হো করে হেসে উঠলেন!
তারপর বললেন,
– আমার হয়ে ও’কে একটা থেক্স দিও।
– কেনো?
– এই যে,ওর জন্য তোমার সাথে কথা বলতে পারছি!দিও কিন্তু থেক্স!
– পারবো না!
– তুমি পারোটা কি?বলো তো একটু শুনি!
– কিছুই পারি না আমি!
– কিছুই পারতে হবে না তোমাকে!একবার আমাকে তুমি বলে ডাকো তাহলেই হবে!
উনার কথা শুনে আমি কিছুক্ষণ নিরবতা পালন করে বললাম,
– কখনোই সম্ভব না!
– কেনো?
– আপনি করে বলতে ভালো লাগে,তাই;
– কিন্তু আমার যে তোমার মুখ থেকে তুমি ডাকটা শুনতে ইচ্ছে করছে!কি করবো এখন…?
– চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ুন!
– ওকে ঘুমোবো!তার আগে একবার শুধু বলবে “ইফাজ!আমি তোমাকে ভালোবাসি!”
উনার কথাটা শুনেই আমি কেশে উঠলাম!
– প্লিজ!একবার…..প্লিজ!
আমি আস্তে করে বললাম,
– এটা আমার মুখ থেকে কোনোদিনও বের হবে না!
– বিয়ের পর মাষ্ট বের হবে!আমি বের করাবো!এখন প্লিজ একবার বলো…
আমি শক্ত করে গ্রিল ধরলাম!
– বলতে পারবো না।মুখে আসছে না আমার।
– আসবে…আসবে…ট্র- আসবে…আসবে…ট্রাই করো একবার।
– ….
– লজ্জা নারীর ভূষণ!কথাটা তো ভুল।এখানে নারী লজ্জার ভূষণ হবে।
এভাবেই প্রায় বিশমিনিট কথা বলার পর উনি ফোন রেখে দিলেন।উনার কথাগুলো এখনও কানে বাজঁছে।আমি মুখ প্রসারিত করে একটা হাসি দিয়ে বেডে যেয়ে শুয়ে পরলাম।
.
.
সকালে উঠেই দেখলাম আব্বু আম্মু অলরেডি সব প্লান শুরু করে দিয়েছে!আমি যেয়ে পাশে বসতেই আমাকে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্নে জর্জরিত করলো…দেখ তো হিয়া,এটা কেমন হয়েছে?লিস্টে এটা না রাখলেও চলবে,চলবে নারে হিয়া?খাবারের মেন্যুটা অন্যরকম করা উচিৎ ছিলো,তাই নারে হিয়া?
আব্বু আম্মুর প্রশ্নে আমি পাগল হয়ে দ্রুত উঠে রুমে চলে এলাম।
ইফাজকে ফোন দিতেই উনি রিসিভ করে বললেন,
– উম্মম….বলো।
– ঘুমোচ্ছেন?
– হুম।
– ওহ্…সরি।ডিস্টার্ব করলাম।রাখছি….
– এই পাগলি…একটা মাইর দিবো!কোথায় একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে জেগে তুলবে।তা না করে সরি,রেখে দিচ্ছি।
– আমি তো মিষ্টি করেই আপনাকে আবার ঘুমাতে বলছি!
হঠাৎ নাফিসা রুমে ঢুকে বললো,
– আপু,আম্মু ডাকছে!
বলেই চলে গেলো।
উনি নাফিজার কথাটা ফোনের ভেতর থেকেই শুনতে পেয়েছেন।নিজেই বললেন,
– যাও…শুনে আসো শ্বাশুরি’মা কি বলেন।
– হুম।
বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে আম্মুর কাছে চলে এলাম।আম্মু আমার হাত ধরে টেনে আম্মুর পাশে বসিয়ে বললো,
– দেখতো এই হারটা কেমন?
আমি হার’টা নেড়েচেড়ে দেখে বললাম,
– হুম…সুন্দর তো।
– পছন্দ হয়েছে?
– হুম!
আম্মু হার’টা রাখতে রাখতে বললো,
– আচ্ছা,এখন যা..এটা দেখাতেই ডেকেছিলাম।
আমি চুপচাপ উঠে চলে এলাম।ফোনটা হাতে নিয়েও আর ফোন দিলাম না।উনি হয়তোবা আবার ঘুমাচ্ছেন!
.
বিকেলের দিকে এ্যাপার্টমেন্টের সামনে আমরা সব কাজিনরা আর এ্যাপার্টমেন্টের কিছু বড় আপুরা মিলে হ্যান্ডবল খেলছিলাম।হঠাৎ এ্যাপার্টমেন্টের গেইট দিয়ে একটা গাড়ি ঢুকতেই সবার নজর সেদিকে পরলো।গাড়িটা আমার চেনা চেনা লাগছিলো।ইফাজের গাড়ির মতো ছিলো।
.
গাড়িটা একদম এ্যাপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে থামলো।আমরা দূর থেকে তাকিয়ে দেখছি!হঠাৎ গাড়ি থেকে ইয়াশকে নামতে দেখলাম!ওহ্ মাই গুডনেস….
ইয়াশকে নামতে দেখেই সবাই হাসাহাসি করছে আর ইফাজকে নিয়ে নানাধরনের কথা বলছে!
আমি দ্রুত হেঁটে গাড়ির কাছাকাছি আসতেই ইয়াশ দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আমি সাথে সাথেই বসে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরলাম।আমার দৃষ্টি গাড়ির দিকে।এখনও উনি নামছেন না দেখে ইয়াশকে জিঙ্গেস করলাম,
– তোমার ভাইয়া নামছেন না কেনো?
– ভাইয়া তো আসে নি।ড্রাইভার আঙ্কেল নিয়ে এসেছে আমাকে!
– ওহ্!
মুহূর্তেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
.
আমি ইয়াশকে নিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে ড্রাইভার আঙ্কেলকে গাড়ি থেকে নামতে বললাম।উনি নামছিলেন না।অনেকবার বলার পরও যখন নামলেন না তখন আমি আঙ্কেলের হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে বললাম,
– লজ্জা পাচ্ছেন কেনো আঙ্কেল? আমি তো আপনার মেয়ের মতোই।
আমার কথা শুনে আঙ্কেল আমার মাথায় হাত রেখে ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু একটা বলে ফুঁ দিলেন।উনার কান্ড দেখে আমি কিছুটা বিব্রত হয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– কি করলেন?
– দোয়া করলাম,মা!
– ওহ্!
আমি হেসে ইয়াশ আর আঙ্কেলকে বাসায় নিয়ে এলাম।আঙ্কেলকে সোফায় বসিয়ে রেখে আমি ইয়াশকে নিয়ে আম্মুর রুমে ঢুকলাম।আম্মু গেইম খেলছিলো।ইয়াশকে দেখেই আম্মু চোখ বড় বড় করে ফোনটা রেখে ইয়াশকে কোলে নিয়ে বললো,
– সারপ্রাইজ?
ইয়াশ হেসে মাথা নেড়ে বললো,
– হুম!
.
– ইয়াশ একাই এসেছে।ড্রাইভার আঙ্কেলের সাথে।উনি ড্রইংরুমে বসে আছেন।
আমার কথা শুনে আম্মু ইয়াশকে আমার কাছে দিয়ে দ্রুত ড্রইংরুমের দিকে পা বাড়ালো।আমি ইয়াশকে নিয়ে আমার রুমে চলে এলাম।
ইয়াশের জুতো জোড়া খুলে দিয়ে বেডের উপর বসিয়ে আমার ফোনটা হাতে দিয়ে বললাম,
– গেইম খেলো।আমি একটু আসছি, হুম?
– হুম!
আমি রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে এসে একটা ট্রেতে করে নাস্তা আর পানির গ্লাস নিয়ে রুমে এসে ইয়াশের সামনে ট্রে’টা রেখে পাশে বসে বললাম,
– তোমার জন্য সব ঝাল খাবার নিয়ে এসেছি!ফোনটা রেখে আগে সব শেষ করো!
ইয়াশ ফোন না রেখে গেইম খেলতে খেলতে বললো,
– খাইয়ে দাও…
ইয়াশের কথা শুনে আমি হেসে খাইয়ে দিতে দিতে বললাম,
– তোমার ভাইয়া আসে নি কেনো?
– তিনটার দিকে ভাইয়ার ফ্রেন্ডরা এসে ভাইয়াকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে।তাই আসতে পারে নি।
– ওহ্!
.
কিছুক্ষণ পর খেতে খেতে ইয়াশ বলে উঠলো,
– ভাইয়ার নাম্বারটা বের করে দাও!
আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– কেনো?
– কথা বলবো!ভাইয়াকে না জানিয়ে তোমার কাছে এসেছি!
কথাটা বলেই ইয়াশ হাসলো।
আমি ইয়াশের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে উনার নাম্বারে কল দিয়ে বললাম,
– রিং হচ্ছে….নাও!
ইয়াশ ফোনটা কানে ধরে কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে আমাকে ইশারায় বললো,
– রিসিভ করেছে!
লাউড স্পিকারে দেওয়া ছিলো!উনি রিসিভ করেই বললেন,
– মিস করছিলে?
ইয়াশ গলার স্বর একদম নরম করে বললো,
– হুম!
ইয়াশের কান্ড দেখে আমি অবাক হয়ে ইয়াশের দিকে তাকালাম!
ফোনের ওপাশ থেকে উনি বললেন,
– কে?
ইয়াশ দ্রুত কল কেটে দিয়ে কিছুক্ষণ পর আবার কল দিলো।
আমি ইয়াশকে খাইয়ে দিচ্ছি আর চুপচাপ ওর কান্ড দেখছি!
উনি আবার রিসিভ করে বললেন,
– হিয়া…কি হয়েছে?ঠিক আছো তো তুমি?
ইয়াশ আবার ছোট্ট করে বললো,
– হুম!
– হিয়া কোথায়?
উনার প্রশ্নটা শুনে ইয়াশ ভয়ে ফোন কেটে দিয়ে আমার সাথে একদম লেগে বসলো!
.
আমি ইয়াশের হাত থেকে ফোনটা নিতেই উনি কলব্যাক করলেন!সাথে সাথেই রিসিভ করলাম..
– হুম…বলুন!
– বলুন মানে?এতক্ষণ কে কথা বলছিলো?
– মানে?আমি তো মাত্র আসলাম!
– তোমার ফোন কার কাছে ছিলো এতক্ষণ?
– কার কাছে থাকবে আবার!রুমে ছিলো!
– চেক করো…এর আগে দু’বার তোমার নাম্বার থেকে কল এসেছে!
– ওয়েট…
আমি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললাম,
– কই….নেই তো!
– what!!!এই ভূত আছে নাকি তোমাদের বাসায়?
উনার কথা শুনে আমি হেসে বললাম,
– কেনো?ভূতে ভয় পান নাকি?
উনি হেসে বললেন,
– উহুম….একটা পরীকে দেখে খুব ভয় পাই!তোমাদের বাসাতেই থাকে!
– কই…আমার তো চোখে পরেনি।
– না পরার কি আছে!আয়নার সামনে দাড়িয়ে পরো,ঠিক চোখে পরবে!চোখ ধাঁধানো রূপ তার!একবার কারোর নজরে পরলে সেই চোখ শীতল হয়ে যায়!যেমনটা প্রথম দেখাতেই আমার হয়েছিলো!
– হয়েছে….এখন আপনি কোথায়?
– তুমি এমন কেনো?সবসময় কথা ঘুরাও!
– উফ্….বলুন না!
– বলবো না!
– বলতে হবে না থাক!আমি অলরেডি সব জানি!
– কি জানো,হুম?
– আপনি আপনার ফ্রেন্ডদের সাথে বসে বসে যে আড্ডা দিচ্ছেন,এটা জানি!
আমার কথা শুনে উনি অবাক হয়ে বললেন,
– কে বললো তোমাকে?
– বলবো না!
– বলো….
– উহু!
– ওয়েট…আমি বের করছি!
বলেই কলটা কেটে দিলেন!আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে ইয়াশকে ফোনটা দিয়ে ও’কে খাওয়ানো শুরু করলাম।
.
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ কারোর কল আসতেই ইয়াশ ফোনটা আমার কোলে ঢিল মেরে আমার সাথে একদম লেগে বসলো।
– কে ফোন দিয়েছে?
– ভাইয়া….
আমি দ্রুত ফোনটা তুলে রিসিভ করতেই উনি বলে উঠলেন,
– ইয়াশ তোমার কাছে?
আমি ভীতস্বরে বললাম,
– হুম!
– এর আগে তোমার নাম্বার থেকে দু’বার কল কি ইয়াশ দিয়েছিলো?
– উহুম…
– কি উহুম!
– হুম…
– তুমি ছিলে কাছে?
– হুম…
– তোমাদের দুইটাকে…..
– ….
– ওয়েট আমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here