real love পর্ব ৪২

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
#Part: 42
.
.
কফি একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেছে! অনেকক্ষণ হয়ে গেলো কারোর কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না!পাবো কিভাবে? এখানে গুট্টি মেরে বসে থাকলে হাওয়া এসে সাড়া দিবে নাকি?
.
আমি পা টিঁপে টিঁপে আমাদের রুমের সামনে উঁকি দিতেই দেখলাম আঙ্কেল ইফাজের কাধে হাত রেখে কথা বলছেন!ইফাজ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মুখের সামনে ধরে ছিলো আর আঙ্কেলের কথাগুলো খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো!
.
আমি চলে আসলাম!ইয়াশের বেডের উপর বসে পা নাঁচাতে লাগলাম!কফির দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম!দেখে মনে হচ্ছে কফিরও আমার মতো মন আঁকুপাঁকু করছে!হঠাৎ আঙ্কেলকে ইয়াশের রুমের সামনে দিয়ে যেতে দেখেই লাফ দিয়ে উঠলাম!দ্রুত আমাদের রুমের দিকে পা বাড়ালাম!রুমে ঢুকতেই আপুর সামনে পরলাম!আপু রুম থেকে বের হচ্ছিলেন!আমি ইশারায় আপুকে জিজ্ঞেস করলাম “কি হয়েছে?”
আপু চোখের ইশারায় উনাকে জিজ্ঞেস করতে বললেন!আপু রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন!
.
আমি উনার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলাম,
– কি হয়েছে?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন!আমি উনার কাঁধে হাত রেখে বললাম,
– কি হলো!বলুন!
উনি আমার হাতটা ধরে আমার আঙ্গুলের মাঝে নিজের আঙ্গুল ঢুকিয়ে নিয়ে বললেন,
– হিয়া!তুমি কি এখনো ছোট আছো?
হঠাৎ উনার এরকম কথা শুনে আমি ভ্রু কুচঁকে জিজ্ঞেস করলাম,
– হঠাৎ এই প্রশ্ন?আর আমি কেনো ছোট থাকবো?
– কনসিভ করার মতো বয়স তোমার হয়নি?
উনার কথাটা শুনে আমি পুরো শকড্!অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– কিসব বলছেন?বুঝিয়ে বলুন!
– যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার আন্সার দাও!
আমি উনার হাত শক্ত করে ধরে বললাম,
– অবশ্যই হয়েছে!বাট স্কুলে যখন পড়তাম ম্যামরা বলতো বিশ/একুশ বছরের আগে মেয়েদের কনসিভ করা একদম উচিৎ নয়!আম্মুও….
আমি আর বলতে পারলাম না!উনি সাথে সাথেই আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন!উনার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনার চোখ লাল হয়ে আছে!চোখ বন্ধ করলেই টপ করে পানি পরবে!উনার কান্ড দেখে আমি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম!এই প্রথম উনাকে এভাবে দেখছি!উনি যে কাঁদতেও পারেন জানা ছিলো না আমার!
.
আমি উনার মুখোমুখি বসে দুইহাত দিয়ে উনার গাল ধরে বললাম,
– মা-বাবা এসেছিলেন কেনো?কি বলে গেলেন উনারা?
– কিছু না!
– বলবেন না আমায়?
– তোমার বয়স কত?
আমি রেগে গিয়ে বললাম,
– যেটা জিজ্ঞেস করেছি সেটার উত্তর আগে দিন!
– বলো না!
– বলবো না!
– তুমি এখনো অনেক পিচ্চি!তাই না?
– উফ্….অসহ্য!আপনি বলছেন না কেনো কি হয়েছে?
– আমার কথা শুনে বুঝতে পারছো না কি হয়েছে?
– না!
– তুমি এখনো অনেক পিচ্চি!এইবয়সে তোমার কনসিভ করা উচিৎ নয়!উনারা আমাকে সেটাই বুঝিয়ে গেলেন!তোমার শরীর স্বাস্থ্য এখনো সেই ধকলটা নিতে পারবে না!আপু তেইশ বছরে ফার্স্ট বেবি নিলো!তারপরও নাকি আপুর অবস্থা নাজেহাল হয়ে গিয়েছিলো!সেখানে তুমি এতো কম বয়সে কিভাবে সেটা সহ্য করতে পারবে?আগেই বলেছিলাম টিয়াপাখি একটু খাও!একটু শরীর স্বাস্থ্য ঠিক করো!একটু মোটা হও!শোনো নি তো আমার কথা!বোঝোও নি কেনো বলতাম কথাগুলো!আব্বু-আম্মুর সাথে সাথে আন্টি-আঙ্কেলও নাকি মানা করে দিয়েছেন!বছরখানেক সময় নিতে বলেছেন!আমি যদি এখন জোর করে তাদের কথা উপেক্ষা করে কিছু করতে যাই,তারা আমাকে খারাপ ভাববে!বড়দের কথা অমান্য করে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত কেনো নিলাম!প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তোমার কোনো প্রবলেম হলে আম্মু-আন্টি এমনকি আপু কেউ সাহায্য করতে আসবে না!উল্টো আমাকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে ছেড়ে দিবে!কিন্তু আমি একটা বেবি চাই!যাস্ট একটা বেবি!
.
কখন আমার হাত উনার গাল থেকে পরে গিয়েছে টেরই পাই নি!উনার চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে!আমি আবার উনার গালে হাত রেখে মাত্রই কিছু বলতে যাবো সেইমুহূর্তে উনি আমাকে টান দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন!ঘাড়ে মুখ গুঁজে বললেন,
– তুমি কেনো এতো পিচ্চি হতে গেলে?আর একটু বড় হতে!বেশি না একটু বড়!কালই সবকিছু এনে দেবো!বেবি নিতে হবে না এতো তাড়াতাড়ি!তুমি আগে বড় হও!খেয়ে দেয়ে শরীরের পুষ্টি বাড়াও!লেখাপড়া শেষ করো তারপর আমার ইচ্ছেটা পূরণ করবে!তার আগে না!
– উনারা মানা করার কে?আমরা কখন বেবি নিবো না নিবো সেটা আমাদের ডিসিশন!কারোর হেল্পের দরকার নেই!বাবুদের বাবা আছে তো!তাহলেই হবে!
– একদম জেদ করবে না!যেটা বলেছি সেটাই করবে!এমনিতেই চার বছর পর বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো!সেখানে ইয়াশের জন্য চার বছর আগেই বিয়েটা হয়ে গেলো!সো আমাদের চারবছর পরই বেবি নেওয়া উচিৎ!তুমিও সময় পাবে,আরেকটু ম্যাচিউরড্ হবে!তখন সবকিছু ঠিক থাকবে!আপু ঠিকই বলেছে আমি একটু বেশিই পাগলামি করছি!
– বললেই হলো!যেখানে ভাইয়া তাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকির আগেই একটা বেবি নিলো,সেখানে আপনাকে নিতে মানা করছে কেনো?
– ঘুরেফিরে এক প্রশ্ন কেনো করছো?আপুর বিয়েটা দেরিতে হয়েছে যারজন্য বেবি নেওয়ার ডিসিশনটা রাইট ছিলো!কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে তো সেটা যায় না!
– হয়েছে হয়েছে!আমাকে আর বুঝাতে হবে না!আগেকার দিনের মানুষ বারো-তেরো বছরে বেবি নিতো তখন কিছু হতো না!আর এদিকে আমি নিলেই দোষ!
– হিয়া,এখন কিন্তু তুমি বাড়াবাড়ি করছো!কফি আনতে বলেছিলাম না,কোথায় কফি?
– আমি মোটেও বাড়াবাড়ি করছি না!কফি ইয়াশের রুমে!ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে এতক্ষণে!আমি আরেক মগ বানিয়ে আনছি!
– থাক!লাগবে না!ঘুম পেয়েছে খুব!মাথাটা একটু টিপে দাও!
বলেই উনি শুয়ে পরলেন!আমি উনার একদম মাথার কাছে বসে মাথা টিপতে লাগলাম!ফর্সা চেহারায় রক্তবর্ণ চোখদুটো ভীষন আকর্ষনীয় দেখাচ্ছিলো!
.
কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি ঘুমিয়ে পরলেন!আমি দরজাটা লক করে এসে উনাকে জড়িয়ে ধরে পাশেই শুয়ে পরলাম!হঠাৎ কি মনে করে উনার গালে কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে ঠোঁটের কোনায় একটা চুমু দিলাম!উনার গালের সাথে গাল লাগিয়ে শুয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ!
.
.
কখন ঘুমিয়ে পরেছিলাম খেয়াল-ই করি নি!ঘুম ভাঙ্গতেই পাশে তাকিয়ে দেখলাম ইয়াশ জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে!ইফাজ আয়নার সামনে দাড়িয়ে বডিতে পারফিউম স্প্রে করছিলেন!ইয়াশ আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– ভাবি কান্না করছিলে কেনো তখন?
ইয়াশের কথা শুনে আমি চঁমকে উঠে বললাম,
– কখন?
– যখন তোমার কাছে শুঁতে এসেছিলাম তখন!দু’চোখ ভেঁজা ছিলো!আমিই তো মুছে দিলাম!
উনি আমার পাশে বসতে বসতে বললেন,
– ইয়াশ তো ভেবেছিলো আমি তোমাকে মেরেছি!একটুআগে বিনাদোষে ইয়াশের কিলঘুষি খেতে হয়েছে আমাকে!তুমি তো দিব্যি আরামে ঘুমোচ্ছিলে!
.
আমি উঠে বসে বেডসাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে পুরোটুকু শেষ করলাম!দুইভাইয়ের আঁজগুবি কথা শুনে মাথা কাজ করছে না!ইয়াশ আমার হাতটা নিজের কাছে টেনে নিয়ে বাসররাতে যেই আংটি-টা উনি পড়িয়ে দিয়েছিলেন সেটা আঙ্গুল থেকে খুলে নিয়ে নিজের আঙ্গুলে একবার পরছে তো একবার খুলছে!
.
আমি উনার দিকে তাকালাম!উনি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিলেন!শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললেন,
– ঘুমের মধ্যেও কাঁদার অভ্যাস আছে নাকি তোমার?
– আমি ঘুমের মধ্যে মোটেও কাঁদি নি!
– ওহ্!তারমানে বলতে চাচ্ছো আমরা দুইভাই ভুল দেখেছি?
– আমি সেটা বলি নি!
– আমার গাল ভিঁজিয়ে দিয়েছো কান্না করতে করতে!এইসব ব্যাপার নিয়ে একদম ভাববে না!বলে দিচ্ছি!যা হবে সব চার বছর পর!মনে থাকে যেনো!
আমি কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
– কোথাও যাচ্ছেন?
– হুম…রিপনকে দেখতে যাচ্ছি!
– এতো রাতে?
– কোথায় এতো রাত?মাত্র বাঁজে আটটা-নয়টা!
কথাটা বলেই উনি উঠে আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার আর ইয়াশের কপালে চুমু খেয়ে বাই বলে বেরিয়ে পরলেন!
.
আমি ইয়াশকে জড়িয়ে ধরেলাম!ইয়াশ আংটি-টা নিয়ে খেলছে!কিছুক্ষণ পর ইয়াশের কপালে একটা চুমু খেয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম!ইয়াশ বললো,
– ভাবি তোমার আংটি?
– রাখো তোমার কাছে!আমি আসছি!
.
.
রাত সাড়ে দশটার দিকে উনি রুমে ঢুকে আমার হাতে নীল কালারের কাগজে মোড়ানো ছোট একটা প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বললেন,
– এসব খাওয়ার ব্যাপারে বলতে গেলে কিচ্ছু জানিনা!ইমার্জেন্সির-টাও নিয়ে এসেছি!আপুর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তারপর খাবে!
আমি ভ্রু কুচঁকে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার গালজোড়া টেনে দিলেন!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here