real love পর্ব ৪৩

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 43
.
.
আমি প্যাকেট-টা আলমারির ড্রয়ারে রেখে পা ঝুলিয়ে বেডের উপর বসে পরলাম!উনি আমার সামনে বসে কোলে মাথা রেখে বললেন,
– কষ্ট পাচ্ছো কেনো?আমি কিন্তু একদম কষ্ট পাচ্ছি না!
– আমি একবছর পড়াশোনা থেকে দূরে থাকতে চাই!
হঠাৎ আমার এরকম কথা উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালেন!আমি অন্যদিকে তাকিয়ে আবার বললাম,
– এতো স্ট্রেস নিয়ে আমি একদম পড়াশোনা করতে পারবো না!
– মাথা ঠিক আছে তোমার?
– হুম!
– আমার দিকে তাকাও!
– উহু!
জোর করে আমাকে উনার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
– পারবো না আমি একবছর বাড়াতে!
– আপনি মা-বাবাকে একটু ম্যানেজ করুন!আমার মাথা একদম কাজ করছে না!
– কয়েকদিন সময় নিয়ে ডিসাইড করো!এভাবে হুটহাট ডিসিশন নিলে তো হবে না!
– আমি অনেক ভেবেই ডিসিশনটা নিয়েছি!
আমার কথা শুনে উনি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,
– ওকে!যেখানে চারবছর ওয়েট করতে হবে,সেখানে পাঁচবছর কোনো ম্যাটার না!আমি বুঝিয়ে বলবো!টেনশন নিয়ো না!
কথাটা বলেই উনি উঠে যেতে নিচ্ছিলেন!আমি উনার শার্ট আকঁড়ে ধরে জড়িয়ে ধরলাম!উনি টাল সামলাতে না পেরে আমাকে নিয়ে ফ্লোরে বসে পরলেন!
.
উনার থেকে আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারছেন না!বাধ্য হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– টিয়াপাখি!ডোন্ট ক্রাই!আমার নতুন শার্ট নষ্ট করে ফেলছো কিন্তু!রাগ করবো কিন্তু খুব!
– নিজের কষ্টটাকে এভাবে লুকিয়ে রাখছেন কেনো?
– আমি কষ্ট পাচ্ছি না!কতবার বলবো!দেখি ছাড়ো!আমার সামনে আর কখনো কাঁদবে না!
– এখন থেকে প্রতিদিন আমাকে কাঁদতে দেখবেন আপনি!
– মাইর লাগাবো কিন্তু এখন!এমনভাবে কাঁদছো মনে হচ্ছে জীবনে আর কোনোদিন….
উনাকে আর বলার সুযোগ দিলাম না!সাথে সাথেই উনার মুখ চেঁপে ধরে বললাম,
– আপনার মুখে কিছু আটকায় না,তাই না?
আমার কথা শুনে উনি জোর করে হেসে আমার চোখের পানি মুছে দিলেন!হাত ধরে আমাকে দাড় করিয়ে আলমারি থেকে প্যাকেটটা বের করে আমার হাতে দিয়ে বললেন,
– এটা নিয়ে আপুর কাছে যাও!৭২ঘন্টার আগে ইমার্জেন্সি-টা খেতে হবে!অলরেডি অনেক লেট হয়ে গিয়েছে!
.
আমার হাত ধরে আমাকে দরজা পর্যন্ত নিয়ে এসে বললেন,
– আপু রুমেই আছে!যাও…
আমি কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ আপুর রুমের দিকে হাঁটা শুরু করলাম!
.
আপু মাহিনকে স্যুপ খাওয়াচ্ছিলেন!আমাকে দরজায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভেতরে আসতে বললেন!আমি আপুর মুখোমুখি বসে মাহিনকে আমার কোলে বসালাম!
– হিয়া!হাতে ওটা কি?
আমি মলিন হেসে আপুর দিকে প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিলাম!আপু হাতে নিয়েই বুঝতে পারলেন প্যাকেটটা কিসের!
আপু আমার দিকে সামান্য এগিয়ে এসে আমার হাত ধরে বললেন,
– খুব খুশী হলাম দেখে!
– উনি পাঠালেন তোমার কাছে পরামর্শ নেওয়ার জন্য!
– খুব ভালো করেছো এসেছো!জানো,ইয়াশের মুখে যখন শুনলাম এ-বাড়িতে নতুন বাবু আসবে কয়েকদিন পর!প্রথমে তো আমি ওর কথাটা ধরতে পারিনি!পরে যখন বললো ইফাজ বলেছে,শুনেই তো আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিলো!এতো কম বয়সে তুমি কিভাবে কি করবে…ওহ্ মাই গড!দ্রুত আব্বু-আম্মুর সাথে পরামর্শ করে এতো দূর আসলাম!রাগ করো নি তো তুমি?
– নাহ্ আপু!রাগ করবো কেনো?তোমরা তো আমার দিকটা ভেবেই সবকিছু করছো!বিয়ের আগে আম্মুও আমাকে তোমাদের মতো বুঝাতো অলওয়েজ!এমনিতেই আমার বয়স অনেক কম!সত্যিই এখন বেবি নেওয়া একদম ঠিক হবে না!তুমি আমাকে বুঝিয়ে দাও কিভাবে এটা কন্টিনিউ করতে হয়?
আমার কথা শুনে আপু হেসে উচ্ছ্বোসিত কন্ঠে আমাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিলেন!
.
.
আমি রুমে এসে প্যাকেটটা আলমারির ড্রয়ারে রেখে বেডে যেয়ে বসলাম!উনি বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলেন!বারান্দা আর রুমের মাঝে দেয়ালের পরিবর্তে সম্পূর্ন কাঁচ লাগানো!বারান্দা থেকে উনি আমাকে দেখতে পেয়ে রুমে ঢুকে পাশে বসে আমার একহাত ধরে বললেন,
– ওয়েট করছিলাম তোমার জন্য!ঘুমাবে না?
– হুম!
উনি লাইট অফ করে দিয়ে এসে আমাকে নিয়ে শুয়ে পরলেন!আমি উনার একহাতের উপর শুয়ে আছি!উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– সামান্য একটা বিষয়ের জন্য যেনো আর কাঁদতে না দেখি তোমাকে!মনে থাকবে?
– ……
– কি হলো?ঘুমিয়ে পরলে নাকি?
– উহু!
– তাহলে চুপ কেনো?
আমি কোনো উত্তর না দিয়ে পাশফিরে উনাকে জড়িয়ে ধরলাম!সাথে সাথেই উনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন!উনি একটা কালো কালার টি-শার্ট পরে ছিলেন!যেটা দেখেই মাথায় রক্ত উঠে গেলো!আমি উনার টি-শার্টটা বুক পর্যন্ত উঠিয়ে বললাম,
– এটা পরে আছেন কেনো?খুলুন….
আমার কান্ড দেখে উনি শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন!তারপর সামান্য উঠে টি-শার্টটা খুলে ফ্লোরে ফেলে দিলেন!উনি শোয়ামাত্রই আমি জড়িয়ে ধরে উনার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরলাম!উনি ব্লানকেট-টা টেনে আমাদের দু’জনের উপর দিয়ে আমার পিঠে স্লাইড করতে করতে বললেন,
– আমার টিয়াপাখি-টা কি এখনো রাগ করে আছে?
– …..
– যেখানে তোমার ভালোর জন্য সবকিছু করলো সেখানে তুমি মন খারাপ করে থাকলে কিন্তু মানায় না!
– আমি রাগ করিনি!
– তাহলে কথা বলছো না কেনো?
– চুপ থাকতে ভালো লাগছে!
– ওড়না তো আলমারির মধ্যে আরো অনেকগুলো আছে সেগুলোও পরে শুঁতে পারতে!শুধু একটাই কেনো পরেছো?
হঠাৎ উনার এরকম ইনডিরেক্ট বলা কথাটা শুনে আমি চোখ রাঙ্গিয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন,
– এভাবে তাকানোর কি আছে?অনেক শীত পরেছে তাই বললাম!নেগেটিভলি কেনো নিচ্ছো?
কথাটা বলেই উনি ব্লানকেট টেনে আমাদের দু’জনের পুরো শরীর ব্লানকেটের ভেতর ঢুকিয়ে ফেললেন!
.
.
সকালে শাওয়ার নিয়ে সোজা বেডে যেয়ে ব্লানকেট মুড়ি দিয়ে বসে পরলাম!কি শীত রে বাবা!এই শীতে আবার গোসল!উনি রুমে ঢুকে আমাকে এই অবস্থায় দেখতে পেয়ে পেট ধরে হাসতে শুরু করলেন!আমি চোখ রাঙ্গিয়ে বললাম,
– একদম হাসবেন না বলে দিচ্ছি!
উনি আমার কথা অগ্রাহ্য করে হাসতে হাসতেই আমার পেছনে হাঁটুভেঙ্গে বসে আমার মাথায় মোড়ানো টাওয়ালটা খুলে ভেঁজাচুলগুলো মুছে দিতে দিতে বললেন,
– এভাবে টাওয়াল দিয়ে পেঁচিয়ে রেখেছো কেনো?ঠান্ডা লেগে যাবেনা?শাওয়ার নেওয়ার পর সামান্য মুঁছে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে ফেলবে,মনে থাকবে?
আমি মাথা নেড়ে “হুম” বললাম!
.
হঠাৎ উনি ব্লানকেটসহ আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডের একদম সাইডে বসালেন!তারপর হেয়ার ড্রায়ার অন করে চুলগুলো শুঁকাতে লাগলেন!আর গুঁনগুঁন করে গান গেয়ে উঠলেন,
“খায়রুন লো তোর মাথার লম্বা কেঁশ,
চিরল দাতের হাসি দিয়ে পাগল আমি দেশ;
খায়রু…..”
– স্টপ!
আমি চেঁচিয়ে উঠলাম!পেছন ফিরে বললাম,
– আপনি অলওয়েজ মৌসুমীর আদিমযুগের গানগুলো কেনো গান?
উনি হেসে বললেন,
– টিয়াপাখি!তুমি যেটা ভাবছো সেরকম কোনো ব্যাপার না!মৌসুমী তো বুড়ি হয়ে গিয়েছে!তোমার কেঁশগুলো দেখে এইগানটার কথা মনে পরলো!তাই একটু গেয়ে উঠলাম!
– এতোই যেহেতু গাওয়ার শখ তো ঠিকভাবে গাইবেন!ভুলভাল কেনো গাইছেন?
– উহু টিয়াপাখি!আমি একদম ঠিক গেয়েছি!তুমি ভেবে দেখতে পারো!
বলেই উনি আমার মাথাটা ঘুরিয়ে দিয়ে চুল শুঁকাতে ব্যস্ত হয়ে পরলেন!আমি উনার বলা লাইনটা আওড়াতে লাগলাম!উনি বললেন মাথার লম্বা কেঁশ,বাট গানে বলে লম্বা মাথার কেঁশ!মৌসুমীর মাথাটা কি লম্বা ছিলো?এতো বড় ব্লাইন্ড গানটার মধ্যে!!!
.
আমি গানটা থেকে মন সড়িয়ে নিলাম!এইসব ভেবে আমার কাজ নেই!আমি চুপচাপ হাঁটুর উপর মাথা রেখে বললাম,
– আপনার শীত লাগে না?
আমার প্রশ্ন শুনে উনি হেসে বললেন,
– ভাবা শেষ?
– হুম!আপনিই ঠিক!ভাগ্যিস আপনি লম্বা মাথা বলেননি!
– বললেও তো ধরতে পারতে না তুমি!
– ধরা লাগবে না আমার!আপনি নেক্সট টাইম এইসব গান আর কখনো গাইবেন না আমার সামনে!
উনি হেসে উত্তর দিলেন,
– ওকে!তুমি যেনো কি প্রশ্ন করলে তখন?
– ওই তো এতো সকালে শাওয়ার নিয়েও দিব্যি বাহির থেকে ঘুরে আসলেন!সেটাই বলছিলাম শীত লাগে না আপনার?
– হুম,লাগে!বাট আধাঘন্টা-একঘন্টার মতো এক্সারসাইজ করলে সব শীত হাওয়া হয়ে যায়!তোমার মতো ব্লানকেটের নিচে বসে থাকলে তো আর শীত কমবে না!উল্টো আরো বেশি লাগবে!
.
উনি হেয়ার-ড্রায়ারটা রেখে আঁচমোকা আমাকে শুঁইয়ে দিয়ে দ্রুত পাচঁমিনিটের কাজটা করে ফেললেন!
.
শেষ হওয়ার সাথে সাথে আমাকে আস্তে করে তুলে বসিয়ে দিয়ে বললেন,
– সকালে ঘুমিয়ে ছিলে!তাই করতে পারি নি!জাস্ট আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বেরিয়েছিলাম!ব্রেকফাস্ট করার আগে আসল ব্রেকফাস্টটা করে নিলাম!
আমি হা করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি!উনি আমার চোখের সামনে হাত নেড়ে বললেন,
– এই যে মিসেস!ব্রেকফাস্ট করতে হবে তো!তাড়াতাড়ি চলুন!হা করে থাকলে তো আর পেট ভরবে না!
.
.
(চলুন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here