real love পর্ব ৫০

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 50
.
.
আমার জীবন থেকে একটা একটা করে দিন হারিয়ে যেতে লাগলো!সাথে সাথে বড় হতে লাগলো আমার ভেতরের ছোট্ট একটা জীবন!
.
রাতে আন্টির রুমে সময় কাটানোর জন্য আন্টির সাথে টুকটাক কথা বলছিলাম!হঠাৎ রুম থেকে ইফাজের চিৎকার শুনতে পেলাম।চিৎকার করে হিয়া!হিয়া! বলে ডাকছিলেন!আন্টি অন্যকিছু ভেবে মিটমিট করে হেসে বললেন,
– যাও!ডাক পরেছে!
কিন্তু আমার মোটেও অন্যকিছু মনে হলো না।সিরিয়াস কিছু মনে হচ্ছে!আমি “আচ্ছা মা,আসছি!” বলে আন্টির কাছ থেকে চলে এলাম।রুমের দরজার কাছাকাছি আসতেই উনি একপ্রকার হাত টেনে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা লক করে দিলেন!আমি বেডে বসতে যাবো সেইমুহূর্ত বেডের মাঝখানের দিকে চোখ পরলো।নীল কাগজে মোড়ানো সেই প্যাকেট!আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার দুইবাহু ধরে দাড় করিয়ে প্যাকেটটা আমার সামনে ধরে বললেন,
– কি এটা?
আমার হাত-পাসহ পুরো শরীর কাঁপছে! কি জবাব দিবো এখন উনাকে আমি!উনি আমাকে ঝাঁকি দিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন,
– চুপ করে থেকো না!বলো….এটা কি?
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
– স..সরি!
উনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বেডের উপর ফেলে দিলেন!আমার গাল বেঁয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো!উনি বেডসাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে সজোরে ছুড়ে ফেললেন!পুরো রুমে টুকরো টুকরো কাঁচ ছড়িয়ে পরলো!দেয়ালে হাত দিয়ে কয়েকটা বাড়ি দিলেন!উনার কান্ড দেখে ভয়ে আমার কলিজার পানি শুঁকিয়ে যাচ্ছে!ভয়ে গলা কাঁপছে!কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাঁম!উনি প্যাকেটটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে পা দিয়ে পিষিয়ে ফেললেন!আমার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন!আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম!ওই চোখে চোখ রাখার মতো সাহস আজ আমার নেই!উনার নিশ্চয় এইমুহূর্তে আমাকে কয়েকটা চড় মারতে ইচ্ছে করছে!আমি প্রস্তুত উনার হাতের চড় খাওয়ার জন্য!অন্তত উনার এই কঠিন নিরবতা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে!উনি আমার দিকে এগিয়ে এলেন!আমি সাথে সাথেই চোখমুখ শক্ত করে বন্ধ করলাম উনার চড় খাওয়ার জন্য!উনি দাতে দাত চেঁপে কটমট করে বলে উঠলেন,
– এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে একবার নিজের হাজবেন্ডকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলে না?
উনার কথা শুনে চোখ খুলে উনার দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে নিচুস্বরে বললাম,
– সরি!
উনি রেগে গিয়ে বললেন,
– সরি মাই ফুট!!!এইমুহূর্তে তোমাকে কয়েকটা চড় মারতে ইচ্ছে করছে!
– তো মারুন না!
– কিহ্!!!
আমি পা’দুটো বেডের উপর তুলে গুঁটিশুটি হয়ে বসে পরলাম!উনি বেডের কোনায় পা দিয়ে প্রচন্ড জোরে একটা লাথি দিলেন!পুরো বেড কেঁপে উঠলো!এতো শক্তিশালী বেডও উনার ভয়ে কাঁপে?ওহ্ মাই গড!
.
উনি আমার সামনে বসে আমার মুখটা উপরে তুলে বললেন,
– এতোদিন আমি ভেবেছিলাম আমি বেশি বেশি খাওয়াচ্ছি বলে দিনদিন তোমার ভুড়ি বাড়ছে!আমার ধারনাটা যে এতোদিন ভুল ছিলো সেটা আমি টেরই পেলাম না!
উনার কথা শুনে আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের পানি আড়াল করার চেষ্টা করলেন!আমার সামনে থেকে উঠে গিয়ে দেয়ালের সাথে একহাত ঠেকিয়ে বললেন,
– আমি কতটা টেনশনে থাকি সেটা একমাত্র আমি জানি হিয়া!সেইরাতের ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজটা এখনো আমার কানে বাঁজে!তোমার দেখা সেই স্বপ্নটা এখনো আমার মনে পড়ে!আজও ভুলিনি!আজ যখন তোমার কাপড়-চোপড়ের মধ্যে ওটা পেলাম ঠিক সেইমুহূর্তে আমার পুরো দুনিয়াটা ওলট-পালট হয়ে গেলো!আমি ভাবতেও পারছি না তুমি আমাকে না জানিয়ে এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত একা একা নিয়েছো!
আমি কিছুই বললাম না!উনি আবার বলতে শুরু করলেন,
– কালই আমরা ফ্লাটে উঠবো!রেডি থেকো!আম্মু একবার টের পেলে আমাকে খুন করে ফেলবে!
কথাটা বলেই উনি মাথার চুল কিছুক্ষণ টেনে ধরে থাকলেন!ছেড়ে দিয়ে আবার বললেন,
– চারমাস পর ফ্লাটে উঠবো,একবছর স্টাডি থেকে দূরে থাকবো,একবছর পর হানিমুনে যাবো!এতোগুলো স্ট্রং হিনটস্ আমার আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছিলো!তবুও টের পেলাম না?
আমি বেড ছেড়ে উঠে উনার কাধে হাত রাখার সাথে সাথেই উনি এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে দিলেন!কিন্তু আমার দিকে ঘুরলেন না!পেছন ফিরে আছেন!আমি বুকে অনেক সাহস এনে উনাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম!উনি ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু পারলেন না!কিছুক্ষণ পর নিজেই আমার হাতের উপর হাত রেখে বললেন,
– তুমি আমাকে অনেক বড় একটা টেনশনে ফেললে টিয়াপাখি!অনেক বড়!আজকের পর থেকে আমি রাতে ঘুমাতে পারবো কিনা সন্দেহ!অফিসে গেলেও শান্তি পাবো না!কেনো করলে এটা?স্বপ্নটার কথাও তো একবার মনে করতে পারতে!
আমি উনার পিঠে মাথা রেখে বললাম,
– কিভাবে স্বপ্নটার কথা মনে করবো?সেটা দেখেছিলামই তো তিনদিন পর!তখন আমার কিচ্ছু করার ছিলো না!
– আমাকে একবার ইনফর্ম করতে পারতে?এটা কেনো করলে না?
– আমার ভয় হচ্ছিলো!আপনি যদি ডক্টরের কাছে নিয়ে গিয়ে অন্যকিছু করে বসেন!
– নিচের বাচ্চাকে নষ্ট করার মতো নোংরা ম্যান্টালিটি আমার না!এরকম চিন্তাভাবনা তুমি আমার সম্পর্কে করলে কিভাবে?স্পিচলেস…..
– সরি…আমি ওটা মিন করিনি তো…
– এটাই মিন করেছো তুমি!
– আপনি শুধু….
– আর একটা কথাও শুনতে চাচ্ছি না আমি!দেখি ছাড়ো আমায়!
আমি উনাকে আগের থেকেও শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বললাম,
– ছাড়বো না!
– হিয়া!
– বললাম তো…ছাড়বো না!
– এখন কিন্তু মাইর লাগাবো!ছাড়ো বলছি…
– কালা কোথাকার!বারবার বলছি ছাড়বো না!শুনতে পাচ্ছেন না?
– কি বললে তুমি?
– বাধ্য হয়েছি বলতে!সরি…
– উফ্!এই সরি জিনিসটা আমার সামনে আর কোনোদিন উচ্চারন করবে না!আই হেইট দিজ ওয়ার্ড!
ছাড়ো এখন…
– উহু!
– এইমুহূর্তে আমার মাথা প্রচন্ড গরম!রাগের মাথায় যেকোনো কিছু করে বসতে পারি!আমি মোটেও চাচ্ছি না রাগটা তোমার উপর পরুক!
– আমি চাই!
উনি আমার দিকে ঘুরে বললেন,
– তুমি পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছো হিয়া!এরকম লো ম্যান্টালিটি কবে থেকে হলো তোমার?যাকে এতো ভালোবাসি তার গায়ে হাত তুলবো তারউপর সে প্রেগন্যান্ট!!!
আজ উনার কোনো কথাই আমার মাথায় ঢুকছে না।আমি নির্লিপ্ত চেহারা নিয়ে উনার বুকে মাথা রেখে বললাম,
– তোমার সেদিনের কান্নাজড়িত কন্ঠে বলা “আমি বেবি চাই টিয়াপাখি!যাস্ট একটা বেবি!” কথাটা শুনেই আমার বুক কেঁপে উঠেছিলো!নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি!সেজন্যই এতোবড় একটা সিদ্ধান্ত একা একা নিয়েছি!মাফ করে দাও না!
– এই মেয়ে আমাকে পাগল করে ছাড়বে!সিরিয়াস মুডে পানি ঢেলে দিলো!এইমুহূর্তে তুমি করে না বললেই কি চলছিলো না?
– বাসররাতে কথা দিয়েছিলাম তোমাকে!তুমি যেদিন আমার উপর রেগে থাকবে,আমি সেদিন এভাবে তোমার রাগ ভাঙ্গাবো!মনে নেই?
উনি আর কিছুই বলতে পারলেন না!আমাকে নিজের বাহুডোরে বন্দি করলেন!
অনেকক্ষণ ধরে পুরো রুমে নিরবতা বিরাজ করছে।কেউ কোনো কথা বলছি না!দুজনেই চুপচাপ!
.
উনি আমার মাথায় চুঁমু দিয়ে বললেন,
– পৃথিবীতে মনে হয় আমার মতো আর একটাও হতভাগা নেই,তাই না টিয়াপাখি?
– এটা কেনো বলছেন?
– আমার রাগ কিন্তু এখনো কমে নি!
– আমি জানি কমেছে!এখন বলুন..নিজেকে হতভাগা কেনো বললেন?
– এই যে,যেই মানুষটার বাবা হওয়ার এতো ইচ্ছা!সেই মানুষটাই বাবা হবে শুনেও ভয়ে আনন্দটুকুই উপভোগ করতে পারছে না!আনন্দের থেকে ভয় পাচ্ছে বেশি!
– আল্লাহ্কে ডাকুন!দেখবেন কিচ্ছু হবে না!
– সেটা তো প্রতিনিয়ত আমার হার্টবিটের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে!
– সব ঠিক হয়ে যাবে!বাদ দিন এসব!
– ভয় হয় যে খুব!
.
আমি পরিবেশটা ঠান্ডা করার জন্য উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– মিষ্টি মুখ করবেন না?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে মাথা চুলকিয়ে বললেন,
– ফ্রিজে মনে হয় মিষ্টি নেই!তুমি থাকো আমি একদৌড়ে…..
আমি উনাকে আর বলতে দিলাম না!হাত দিয়ে উনার মুখ চেঁপে ধরলাম!উনি চোখ বড় বড় করে ভ্রুঁ কপালে উঠিয়ে জিজ্ঞেস করলেন “কি?”
আমি উনার মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে উনার দু’পায়ের পাতার উপর দাড়িয়ে একটু উঁচু হয়ে উনার গলা জড়িয়ে ধরলাম!সাথে সাথেই উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন!আমি দুইহাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে উনার গালের খোঁচা খোঁচা দাড়িতে স্লাইড করে উনার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে ডিভলি একটা কিস করলাম!যেটার জন্য উনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না!ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথেই উনি কম্পিত কন্ঠে বলে উঠলেন,
– টিয়াপাখি!তুমি নিজে থেকে….ওহ্ মাই গড!!!
– রুমের মধ্যে মিষ্টি থাকতে পুরো দুনিয়া ঘুরে কেনো মিষ্টি আনতে হবে?
আমার কথা শুনে উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকাতেই আমি লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললাম!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here