real love পর্ব ৭

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
part:07
.
.
এরকম রাত আগে কখনো আমার লাইফে আসে নি।আমি সবসময় ঘড়ির টাইম ধরে রাত এগারোটায় ঘুমাতাম আর সকাল সাতটায় উঠতাম।কিন্তু আজ রাতে আমি এতো বেশি পরিমানে এক্সাইটেড আর নার্ভাস ফিল করছিলাম যে পাক্কা রাত তিনটায় আমি চোখের পাতা এক করতে পেরেছি।আর ফজরের আজান শুনে ঘুম ভেঙ্গেছে।মানে মাত্র দেড় ঘন্টার মতো ঘুমিয়েছিলাম রাতে।ফজর নামাজটা আমার প্রায় সময়ই কাযা হয়ে যেতো।কিন্তু আজ ফজর নামাজটা ঠিক টাইমে পড়তে পেরেছি।
.
আব্বুকে কাল রাতেই আম্মু ইফাজের আসার ব্যাপারটা বলেছে।আব্বু নাকি শুনে অনেক খুশি হয়েছে।আজ আমি কলেজ অফ দিয়েছি দেখেও আব্বু একবারও কথা শোনায় নি।শোনাবে কিভাবে? নিজের মেয়ে জামাই আসছে সেখানে মেয়েকেই যদি কলেজে পাঠায় তাহলে জামাই এসে কি করবে।আহ্!আমি তো আজ মহাখুশি।উনি আসছে!সেই ফার্স্ট একবার দেখেছিলাম।ফার্স্টের দিনই উনি যা করেছিলেন!এইবার আসলে কি করবেন?
.
নাফিসা আজ স্কুলে যেতে চায় নি।কিন্তু আম্মু আব্বুর ভয় দেখিয়ে অনেক কষ্টে স্কুলে পাঠাতে পেরেছে।
.
আমি নয়টার দিকে ব্রেকফাস্ট করে ইফাজকে ফোন দিলাম।বাট উনি ফোনটা না ধরে কেটে দিলেন।আমি আবার কল দিলাম।এবারও কেটে দিলেন।আমার তো খুব রাগ হলো।আমি ছোট্ট করে একটা ম্যাসেজ দিলাম,
– কেটে দিচ্ছেন কেনো বার বার?
কিছুক্ষণ ওয়েট করার পর রিপ্লাই দিলো,
– ড্রাইভিং করছি তারজন্য।
– ওহ্ ওকে।এখন কথা বলতে হবে না,থাক।
– হুম!আমি পৌছিয়ে কল দিবো।
– ওকে।….বলেই ফোনটা বেডের রেখে আলমারি থেকে উনার দেওয়া জামদানি শাড়িটা বের করলাম।আয়নার সামনে দাড়িয়ে কিছুক্ষণ নিজেকে ঘুরে ঘুরে দেখলাম।কেমন যেনো একটা ফিলিংস্ কাজ করছে।
আজ এই শাড়িটা পরে উনাকে সারপ্রাইজ দিবো।ফার্স্ট এভাবে সামনাসামনি আমাকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখলে উনি কি করবেন!দূর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে শুধু দেখবেন নাকি কাছে এসে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরবেন?উফ্!ভাবতে পারছি না এসব!আবেশে সারা শরীর অবশ হওয়ার উপক্রম!শাড়িটা কোনোরকমে ভাজঁ করে আলমারিতে আবার রেখে দিলাম।আম্মুর কাছে যেয়ে টুকটাক রান্নায় সাহায্য করলাম।
.
সাড়ে বারোটার দিকে কলিংবেল বাজতেই বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো।এই টাইমে তো আব্বু অফিস থেকে ফিরে না।নাফিসারও স্কুল ছুটি হতে অনেক দেরি।তাহলে কি উনি এসেছে?আমি ওড়নাটা ঠিক করে মাথায় কাপড় দিয়ে আমি কোনোরকমে যেয়ে দরজা খুলে দেখলাম নাফিসা দাড়িয়ে আছে।ওকে দেখেই মুখে বিরক্ত ভাব নিয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– এই সময়ে ক্যান?তোর না আরো পরে আসার কথা?
– স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে এসেছি।ভাইয়া কি আসছে?
– নাহ্।
বলেই মাথা থেকে ওড়নাটা ফেলে দিয়ে আমি রুমে চলে আসলাম।ভাবলাম কি আর হলো কি!ধ্যাৎ!অপেক্ষা জিনিসটা সত্যিই খুব বাজে।
.
নাফিসা রুমে ঢুকে বললো,
– অপেক্ষা!অপেক্ষা!অপেক্ষা!ভালোই লাগে কারোর জন্য অপেক্ষা করতে।
কথাগুলো ও হাসতে হাসতে গা হেলিয়ে দুলিয়ে বলল।
আমি ওর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– সমস্যা কি?এরকম করছিস কেনো?
ও আমার কাছে এসে পাশ থেকে আমার ফোনটা নিয়ে বলল,
– ভাইয়ার নাম্বারটা কি নামে সেভ করা?
ওর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম,
– উনার নাম্বার দিয়ে কি করবি?
– বল না।কল দিবো।
– থাপ্পড়….
হঠাৎ আম্মু রুমে ঢুকে বললো,
– ইফাজ চলে এসেছে।তোর আব্বু একটু আগে ফোন করে জানালো উনি গেইটে যাচ্ছে ইফাজকে আনতে।
ইফাজ চলে এসেছে শুনে আমার হার্টবিট প্রচন্ড বেগে কাঁপতে কাঁপতে শুরু করলো।বুকে হাত দিয়ে স্পষ্ট বুঝতে পারছি এক সেকেন্ডে আমার হার্টবিট চারবার করে ওঠানামা করছে।
.
আম্মু চলে গেলো।নাফিসা কয়েক স্টেপ নেচে নিলো।আমি অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে ভয়ে সেখানে চুপচাপ বসে থাকলাম।আমাকে নাফিসা এক সেকেন্ডের জন্য জড়িয়ে ধরে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।পাচঁ মিনিটে ও গোসল করে বের হলো।যেই নাফিসা এক ঘন্টার আগে ওয়াশরুম থেকে বের হয় না সে কিনা আজ পাচঁমিনিটে গোসল শেষ করলো।ভাবা যায়!
আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে নাফিসা আমাকে সামান্য ধাক্কা দিয়ে বলল,
– বসে আছিস যে?তাড়াতাড়ি উঠ।
আমি উঠে কালো কালারের একটা সেলোয়ার কামিজ বের করে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।ওয়াশরুমে এসে আয়নায় অনেক্ষণ নিজেকে দেখলাম।মুখটা এরকম লাগছে কেনো?আমার দিকে কেউ তাকালে নিমিষেই টের পাবে এই মুহূর্তে আমি ঠিক কতটা নার্ভাস!হাত পা কাপছে!নিজেকে কোনোভাবেই শান্ত করতে পারছি না।কোনোরকমে ড্রেস চেন্ঞ্জ করে বের হলাম।নাফিসাকে রুমে দেখলাম না।আমি যেয়ে রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিলাম।
আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখে নিজেই লজ্জা পাচ্ছি।কোনোরকমে চুলগুলো একসাইডে সিথিঁ করে হাতখোঁপা করলাম।আমার ঠোটঁ এমনিতেই পিংক।তারপরও হালকা পিংক কালারের একটা লিপস্টিক লাগালাম।আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই ক্রাশ খাচ্ছি।কিছুই তো করলাম না তারপরও এতো সুন্দর কিভাবে লাগছে।নিজের অজান্তেই হাসলাম।হাসলে আমাকে দুইসাইডের উচু দাতগুলোর জন্য নাকি বেশি সুন্দর লাগে।এরকম দাতের অধিকারিনী মেয়েগুলোকে আমার বেশী ভালো লাগে।বিশেষ করে মেহজাবিনকে।
.
আমি ওড়নাটা বিছানা থেকে নিতে যাবো সেই মুহূর্তে নাফিসা রুমের দরজায় নক করে বললো,
– আপু,ভাইয়া চলে এসেছে।
নাফিসার কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে দরজা খুলে নাফিসাকে ভেতরে ঢুকিয়ে আবার দরজা লাগালাম।আমার এরকম আচরণ দেখে নাফিসা বললো,
– কি হলো?এভাবে দরজা লাগালে কেনো?
আমি নাফিসাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
– আমি আর থাকতে পারছি নারে বোন।এখনই বোধহয় জ্ঞান হারাবো।
– উফ্!আপু এতো নার্ভাস হলে চলে?এখনই এরকম করলে একটু পর যখন একা কথা বলতে আসবে তখন কি করবা?
– প্লিজ,বলিস না ওসব কথা!
নাফিসা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
– জানো,ভাইয়াকে যে কি সুন্দর লাগছে!যখন ভেতরে ঢুকলো!উফ!অস্থির একটা লুক নিয়ে ভেতরে ঢুকলো then আম্মুকে সালাম দেওয়া,আমার সাথে হেসে হেসে কথা বলা!ওহ্ মাই গড!
ওহ্,আরেকটা কথা উনি এতো লম্বা কেনো?উনার দিকে তাকিয়ে কথা বলার সময় তো আমার ঘাড় ব্যাথা হয়ে যাবে।
– কে বলেছে তাকিয়ে থেকে কথা বলতে?
কথাটা বলেই আমি বিছানার উপর বসে পা নাড়াতে লাগলাম।নাফিসা আমার পাশে বসে আমার হাত ধরে আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
– আপু,নেইলপলিশ দিয়ে দেই?কেমন খালি খালি লাগছে।ফর্সা হাতে ব্ল্যাকটা মানাবে ভালো।নিয়ে আসি?
আমি নাফিসার কাছ থেকে হাতটা সরিয়ে বললাম,
– খবরদার, ওইসব দিবি না।
– আচ্ছা।
.
আমার বুকের ভেতর ধুকধুক করছে।উনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু দেখার জন্য তো উনার সামনে যেতে হবে।সেই সাহসটা মনের মধ্যে আনতেই পারছি না।বসে বসে বিছানার চাদর খামচাচ্ছি।
.
হঠাৎ নাফিসা পাশ থেকে উঠে চলে গেলো।আমি ওর দিকে তাকিয়ে আবার আগের ন্যায় ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে বিছানার চাদর খামচাচ্ছি।হঠাৎ দরজা লক করার শব্দে দরজার দিকে তাকাতেই আমার পায়ের নিচের মাটি কাপা শুরু করল।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম মাটি কাপঁছে না,আমার পা গুলোই কাঁপছে।
.
উনি হোয়াইট শার্ট ইন করে পরা,হাতা ফোল্ড করা,ব্ল্যাক জিন্সের প্যান্ট পরে দুইহাত প্যান্টের পকেটে দিয়ে দাড়িয়ে আছে।ঠোটেঁ দুষ্টু হাসি।আমি উনার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।কিছুক্ষণ পর আবার তাকালাম ততক্ষণে উনি আমার খুব কাছে চলে এসেছেন।আমি চোখ সরিয়ে নিলাম।আমার বুকের ভেতর প্রচন্ড বেগে কাপঁছে।গলাও কাঁপছে।আমি কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠে আস্তে করে জিঙ্গেস করলাম,
– কেমন আছেন?
উনি কোনো উত্তর না দিয়ে ফুঁ দিয়ে আমার সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিলেন।আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
.
আমি ওড়না একবার আঙ্গুলে পেচাচ্ছি আবার খুলছি।উনি হঠাৎ আমার হাত শক্ত করে ধরে ওড়নার কোণা আঙ্গুল থেকে ছাড়িয়ে বললেন,
– এভাবে হাত ঘামছে কেনো?কাপছেও দেখছি।
– কই?নাতো।
– সত্যিই তো!
– হুম।
– ওকে….বলেই উনি আমার একদম কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আমি তো রীতিমতো কেপে উঠলাম।সারা শরীর অবশ হয়ে এলো।উনার বুকে আমার মাথা।আমি এখন কি করবো?এই মুহূর্তে আমার কি করা উচিৎ?আমিও কি জড়িয়ে ধরবো?নাহ,থাক।কিন্তু মন মানছে না।আমি আমার দুহাত আস্তে করে উনার পিঠে রাখলাম।নিজের ভেতরে অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেলো।এই ফার্স্ট কেউ আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরলো।এতো শান্তি লাগছে কেনো!
.
উনি আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,
– কাল সারারাত একটুও ঘুম হয়নি।বারবার তোমার কথা মনে পরেছে।রাত দুটোর সময় একবার কল দিতে চেয়েছিলাম।কিন্তু পরে ভাবলাম থাক,তুমি হয়তোবা ঘুমাচ্ছো।সকাল হওয়ার সাথে সাথেই গাড়ী নিয়ে বের হয়েছি।ড্রাইভার আংকেল সাথে আসতে চেয়েছিলো।আমি মানা করে দিয়েছি।আমি কল্পনাও করিনি ঢাকা থেকে চিটাগাং এতো দূর।এই মুহূর্তে আমি প্রচুর টায়ার্ড।….কথাটা বলেই ধপাস্ করে উনি আমাকে নিয়েই বিছানায় শুয়ে পরলেন।আমি ভয় পেয়ে চিৎকার দিলাম।উনি মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– করছো কি?আন্টি আংকেল কি ভাববে?
আমি চোখ বন্ধ করে বললাম,
– ভয়ে মুখ ফসকে বের হয়ে গেছে,সরি।
উনি হঠাৎ আমার কপালে একটা কিস করলেন।আমি সাথে সাথে চোখ খুললাম।কি করলেন এটা?চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম।আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে উনি ভ্রু উঠিয়ে জিঙ্গেস করলেন”কি”।আমি কিছু না বলে অন্যদিকে ফিরে উঠার চেষ্টা করতেই উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– কোথায় যাচ্ছো?আমি না বলা পর্যন্ত উঠবে না।
এই মুহূর্তে আমার শরীরের ভেতর ভূমিকম্প হচ্ছে ।যেটা অন্যকেউ অনুভব করতে পারছে না।আমার গলা ভারী হয়ে আসছে।
আমি ভারী গলায় আস্তে করে বললাম,
– এতক্ষণ এভাবে দরজা লাগিয়ে রাখলে আব্বু আম্মু নাফিসা অন্যকিছু ভাববে।
– কেউ কিচ্ছু ভাববে না।……বলেই উনি আমার ঘাড়ে মুখ গুজঁলেন।
হঠাৎ ঘাড়ে উনার খোচাঁখোচাঁ দাড়ির স্পর্শ পেতেই আমি কেপেঁ উঠলাম।অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে!পুরো শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে!আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে!আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে মুহূর্তটা উপভোগ করলাম।
.
আমি সামান্য নড়ে উঠলাম।উনি আস্তে করে বললেন”নড়বে না একদম।পাচঁমিনিট শান্তিতে থাকতে চায়।”
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here