real love পর্ব ১২,১৩

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 12+13
.
.
ইফাজদের বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই ইফাজ তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশের দরজাটা খুলে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো।আমি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে উনার হাত ধরলাম।ইফাজ হেসে হেসেই আমাকে গাড়ি থেকে নামালো।
.
ইফাজ হাসি হাসি মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আমার হাত ছেড়ে আমার পেছনে যেয়ে দাড়ালো।আমি মাথা ঘুরিয়ে পেছনে উনার দিকে তাকাতেই উনি পেছন থেকেই আমার মাথা সামনের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন।তারপর আস্তে করে আমার শাড়ির আঁচলটা নিয়ে আমার মাথার উপর দিয়ে পেছন দিক থেকেই জড়িয়ে ধরে বললো,
– প্রথম শ্বশুরবাড়ি এসেছো বলে কথা মাথায় ঘুমটা দেওয়াটা আজ তোমার জন্য বাধ্যতামূলক।
আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,
– সব জায়গায় জড়িয়ে ধরা কি আপনার নেশা হয়ে গেছে।সামনে শ্বশুরবাড়ি পেছনে দারোয়ান কেউ যদি দেখে ফেলতো?
– এ্যাহ্!আসছে।দেখে ফেললে ফেলতো।তাই বলে কি রোম্যান্সটাও ঠিকভাবে করতে পারবো না?
.
আমি আর কথা বাড়ালাম না।চুপচাপ সামনের দিকে আগালাম।ইফাজ একপ্রকার দৌড়ে আমার পাশে এসে দাড়ালো।শক্ত করে আমার হাত ধরে কলিংবেল চাপলো।হঠাৎ করে আমার কপালে একটা চুমো খেয়ে সামনের দিকে তাকালো।আমি উনার কান্ড দেখে চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।কিন্তু উনি একটাবারও আমার দিকে তাকাচ্ছেন না।এমন ভাব করছেন যেনো এইমাত্র উনি কিছুই করেন নি।
.
একটা মেয়ে দরজা খুললো।বয়স সাতাশ আটাশ হবে বোধহয়।আমাদের দেখেই একপ্রকার চিৎকার দিয়ে বললো,
– মা জান!ভাই ভাবীরে নিয়া আইছে।আসেন তাড়াতাড়ি।
– আগে ঢুকতে দে!তারপর ডাকাডাকি করিস!
কথাটা বলেই ইফাজ হাত দিয়ে মেয়েটাকে সড়িয়ে আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
.
আমি ঢুকবো কি,আমার ঢোকার আগেই ইয়াশ দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।আন্টি টাইপের একজন মহিলা সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো,
– আর কিছুক্ষণ পরে আসলে আমাকে সোজা পাগলাগারদে যেতে হতো আজ।পাগল করে দিয়েছে ছেলেটা। কিছুক্ষণ পরপরই কানের কাছে প্যানপ্যান করে বলে,ভাইয়া ভাবীকে আনছে না কেনো?আম্মু ভাইয়াকে একটা ফোন করো না। আমি জানি ভাইয়া ভাবীকে আনবে না।
.
কথাশুনে বুঝলাম এটা ইফাজের আম্মু।ইয়াশের হঠাৎ জড়িয়ে ধরাতে মাথার কাপড় পরে গিয়েছিলো।ঠিকঠাক করে মাথায় কাপড় দিয়ে আন্টিকে সালাম করলাম।আন্টি আমাকে সোজা জড়িয়ে ধরলেন।তারপর আমার মুখ ধরে কপালে একটা চুমো খেলেন।ইয়াশ একটাবারের জন্যও আমার হাত ছাড়ে নি।
.
ইয়াশ আমার হাত টানতে টানতে বললো,
– ভাবী,বাবুর কাছে চলো।বাবু তোমার জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে।আসো।
.
ইয়াশের কথা শুনে হাসি পেলো।ইয়াশ আমার হাত টানতে টানতে সিড়ি দিয়ে দোতলা করিডোরের শেষ রুমে নিয়ে গেলো।রুমের দরজা ধাক্কা দিয়ে ইয়াশ আমাকে ভেতরে ঢুকিয়ে খুশিমনে জোরে জোরে বললো,
– আপু দেখো,কে এসেছে?
আপু চোখ বন্ধ করে অন্যপাশ হয়ে শুয়ে ছিলো।ইয়াশের ডাকে চোখ খুলে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললো,
– আরে!এ দেখি হিয়া এসেছে!বসো!
আপু কথাটা বলেই আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করলো।আমি কাছে গিয়ে আপুকে উঠতে সাহায্য করলাম।আপু আধশোয়া অবস্থায় বেডের সাথে হেলান দিয়ে আমার হাত ধরে আপুর একদম কাছে বসালো।ইয়াশ এসে আমার কোলে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে রইলো।ইয়াশের কান্ড দেখে আপু বললো,
– এই ছেলেটা তুমি বলতেই পাগল।ইফাজের সাথে তোমাকে আনতে যাওয়া নিয়ে দুইভাইয়ের সে কি মারামারি!আম্মু ওদের থামাবে কি!হাসতে হাসতে বাঁচে না!
– ও বেয়াদব একটা ছেলে।আমাকে বলেছিলো নয়টা পনেরোর মধ্যেই তোমাকে নিয়ে আমার সামনে হাজির করবে।আর এখন দেখো দশটা বাজে।দেখছো কত বড় লায়ার!
.
ইয়াশ আমাকে কথাগুলো বলছে আর আমার আঙ্গুল নিয়ে খেলা করছে।আমি ইয়াশের গালে একটা চুমো দিয়ে বললাম,
– রাস্তায় জ্যাম ছিলো তাই আসতে দেরী হয়েছে।
.
আজ রাস্তা একদম ফাকা ছিলো।এখানে আসতে মিনিমাম পনেরো মিনিট লেগেছে।প্রায় আধাঘন্টার মতো ইফাজ আমাকে কোলে নিয়ে পুরো বাসা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো।আজ লেট হয়েছে ওর ওই পাগলামির কারনেই।
.
আমি বাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– ঘুমোচ্ছে নাকি?
আপু বাবুর দিকে তাকিয়ে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– না।একটু আগেই উঠেছে।
– নাম কি রাখা হয়েছে?
– মুহতাসিন চোধুরী মাহিন।
– বাহ্!খুব সুন্দর নাম।কে রেখেছে?
– ওর বাবা ই রেখেছে।
– ওহ্!ভাইয়া কোথায়?
– একটু আগে দেখতে এসেছিলো।দেখেই অফিসে চলে গেছে।আর একটু আগে আসলেই দেখা হতো তোমার সাথে।
– ওহ্!বেড লাক!
আমি হাত বাড়িয়ে বাবুর গালে টাচ্ করে একটা চুমো খেয়ে বললাম,
– একটু কোলে নিবো!
আপু হেসে আস্তে করে বাবুকে তুলে আমার কোলে দিলো।ইয়াশকে আপু টান দিয়ে আপুর কাছে বসালো।আমি বাবুকে একটু উপরে তুলে কপালে চুমো দিলাম।বাবুকে কোলে নিয়েই দাড়িয়ে হাটতে হাটতে আপুর সাথে টুকটাক কথা বললাম।ইয়াশ বিছানার উপর উঠে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলছে।আপু আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে ঢুকলো।
.
তখনই ওই মেয়েটা ঘরে ঢুকে ইয়াশকে বললো,
– ইয়াশ,মা জান আপনারে ডাকতেছে।
– আম্মুকে উপরে আসতে বলো।
– আপনের জন্য নাকি একটা সারপ্রাইজ আছে।মা জান কইলো।
কথাটা শুনেই ইয়াশ লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে বললো,
– সত্যিই!
কথাটা বলেই ইয়াশ দৌড়ে চলে গেলো।ওই মেয়েটাও পেছন পেছন গেলো।যাওয়ার সময় আমাকে আস্তে করে বলে গেলো,
– বড় ভাইজান এতো রোম্যান্স কই পায়,বুঝি না।
কথাটার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না।আর বড় ভাইজানটাই বা কে?
.
আমি বাবুকে কোলে নিয়ে পুরো রুম ঘুরছিলাম।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন জড়িয়ে ধরতেই আমি ভয়ে চিৎকার দিতে যাবো সাথে সাথেই আমার মুখ চেপে ধরলো।বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো।
হঠাৎ কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কেউ একজন বলে উঠলো,
– আমার স্পর্শ এখনও তুমি বুঝতে পারো না?আর একটু হলেই তো চিৎকার দিয়ে সব শেষ করে দিতে।
আমি ইফাজের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,
– এভাবে কেউ হুট্ করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে?আর একটু হলেই তো বাবুকে ফেলে দিতাম।
ইফাজ আমার ঘাড়ে চুমো দিয়ে বললো,
– আমি ধরে ফেলতাম।
– উফ্!ছাড়ুন তো!আপু এখনই বের হবে।আর ইয়াশও চলে আসবে।
– আপুর বের হতে অনেক দেরি।আর ইয়াশকে তো ট্যাব আর চকলেট বক্স দিয়ে বসিয়ে রেখে এসেছি।মনিকে বলে এই রুম থেকে ইয়াশকে আমি বের করে দিয়েছি।সত্যি কথা বলতে ইয়াশকে আম্মু ডাকে নি।
আমি রেগে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আপনি আসলেই খারাপ।দেখি ছাড়ুন!
.
আমাকে না ছেড়ে হঠাৎ করে আমাকে কোলে তুলে নিলেন।ভয়ে বুকের ভেতর ধুক করে উঠলো!আমি বাবুকে শক্ত করে ধরলাম,যাতে পড়ে না যায়।উনি আমাকে সামান্য উপরে উঠিয়ে আমার কপালে আর বাবুর কপালে চুমো দিয়ে বললেন,
– এই মুহূর্তে একটা পিক তোলা উচিৎ ছিলো।প্রবলেম নেই আমাদের বেবি হোক তারপর দেখবা ফেমিলি পিক কত প্রকার ও কি কি?
.
উফ্!আবার শুরু করেছে!আমি কথা ঘুরিয়ে বললাম,
– নামান প্লিজ।আপু এখনই বের হবে।আর আমার ভয় লাগছে বাবুকে নিয়ে।মনে হচ্ছে এখনি পড়ে যাবে।
কথাগুলো উনার দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে বললাম।
.
উনি আমার কথার কোনো গুরুত্ব না দিয়ে কয়েক কদম হাটলেন।সাথে সাথেই ওয়াশরুমে আপুর বের হওয়ার আওয়াজ পাওয়া গেলো।উনি আওয়াজ শুনে আস্তে করে আমাকে নামিয়ে দিয়ে নিজে যেয়ে বেডের উপর বসে বসে পা নাঁচাতে লাগলেন।
.
আপু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ইফাজকে দেখেই বললেন,
– বাব্বাহ্! কাকে দেখছি আমি!এতো ভদ্র মানুষ আমার রুমে কি করছে?আমি নেই,ইয়াশ নেই।তারপরও চুপচাপ বসে পা নাচাচ্ছে!কত্ত ভদ্র হয়ে গেছে আমার ভাইটা।
.
ইস্!আপুর কথা শুনে লজ্জায় আমারই মরে যেতে ইচ্ছে করছে!কি ভাবছে আপু!ছিঃ!
.
আমি উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে কিউট একটা হাসি দিয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
– শোনো আপু,তোমার ভাই যথেষ্ট ইনোসেন্ট একটা ছেলে!সে মোটেও তার দুলাভাইয়ের মতো না।বুঝতে পেরেছো!
.
উনার কথা শুনে আপু আর আমি দুজন দুজনের দিকে অবাক হয়ে তাকালাম।আপু অবাক হয়ে তাকালো কারন উনি আমার সামনে দুলাভাইকে নিয়ে এইসব কথা বললেন।আর আমি অবাক হলাম কারন উনি আমার সামনে নিজেকে ইনোসেন্ট দাবি করে দুলাভাইকে খারাপ বানালো,তার জন্য।
.
আপু ইফাজের কাছে যেয়ে পিঠের উপর কয়েকটা এলোপাথারি দিয়ে বললেন,
– তুই ইনোসেন্ট, তাই না?আর তোর দুলাভাই খারাপ?ওইদিন তুই দরজায় নক না করে ক্যান ঢুকেছিলি?বেয়াদব!অসভ্য!
.
উনি উনার পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে আমাকে বললেন,
– টিয়াপাখি! বাবুকে রেখে এদিকে আসো!পিঠে মালিশ করে দাও!খুব জোরে জোরে মেরেছে।
.
উনার কথা শুনে আমি থতমত খেয়ে আপুর দিকে তাকালাম।আপু আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে!
আপু আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– হিয়া আমি মোটেও এতো জোরে মারিনি।সব তোমার আদর খাওয়ার বাহানা!
.
কথাটা বলেই আপু বিছানায় আস্তে করে বসলেন।আমি বাবুকে আস্তে করে আপুর কোলে দিয়ে বেরিয়ে চলে আসলাম।এই রুমে থাকা মানে নিজের সম্মান নিজে বলি দেওয়া!
.
পেছন পেছন উনিও আসলেন।উনাকে আসতে দেখে আমি নিজের হাটা আরো দ্বিগুন করলাম!কিন্তু পারলাম না উনার কাছ থেকে বাচঁতে!ঠিক এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– পালাচ্ছো কেনো?
আমি উনার থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বললাম,
– পালাচ্ছি কই?আন্টির সাথে তো কথাই হলো না।তাই আন্টির কাছেই যাচ্ছিলাম।
হঠাৎ উনি আমার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন,
– শ্বাশুরি হয়!

Part:13
.
আমি উপর থেকেই দেখতে পেলাম নিচে সোফায় বসে বসে ইয়াশ চকলেট খাচ্ছে আর ট্যাব হাতে কিছু একটা করছে।হয়তোবা গেইম খেলছে।আমি ইফাজের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিচে যেয়ে ইয়াশের পাশে গিয়ে বসলাম।ইয়াশ আমাকে দেখেই আমার সাথে হেলান দিয়ে বললো,
– ভাবি,এই গেইমটা পারো খেলতে?
– নাতো!কিভাবে খেলে?
– দাড়াও আমি শিখিয়ে দিচ্ছি!
ইয়াশ সবকিছু শিখিয়ে দিচ্ছিলো কিভাবে গেইমটা খেলতে হয়।আমি ইয়াশের প্রতিটা কথার প্রতিত্তুরে শুধু “ওহ্,আচ্ছা,হুম” বলছিলাম।
.
ইফাজ আমাদের সামনের সোফায় বসে বসে ফোন দেখছে আর আড়চোখে এদিকে তাকাচ্ছে।
.
ইয়াশ গেইম খেলতে খেলতে আস্তে আস্তে আমার কোলে শুয়েই পড়লো।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ কি মনে করে যেনো ইয়াশ লাফিয়ে উঠে বললো,
– ওহ্ ভাবি।তোমাকে একটা জিনিস দেখাতে ভুলেই গিয়েছি।তুমি একটু বসো।আমি পাচঁমিনিটের মধ্যেই আসছি।
.
ইয়াশ চলে গেলো দেখে আমিও কিচেনে চলে আসলাম।ওখানে একা থাকা রিস্ক।কিচেনে আন্টি আর একটা কাজের মেয়ে ছিলো।যেই মেয়েটা মেইনডোর খুলে দিয়েছিলো সেই মেয়েটা।অনেক বড় কিচেনটা।কিচেনের ভেতর ঢুকতেই আন্টি বলে উঠলেন,
– আরে হিয়া,তুমি কিচেনে কেনো এসেছো?
– এমনি আন্টি!
আন্টি আমাকে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
– রান্না পারো?
– বেশি কিছু পারি না।সামান্য!
– ওহ্!আমিও তেমন পারতাম না!ইফাজের আব্বু যে কি দেখে আমাকে পছন্দ করেছে?এখনও বুঝে উঠতে পারি না।নতুন নতুন যখন ওর জন্য রান্না করতাম,মোটেও ভালো হতো না।তারপরও বলতো”আহ্,কি মজাই না হয়েছে আজকের রান্নাটা!”যেদিন এই কথাটা বলতো ওইদিনই বুঝতাম,একটুও ভালো হয় নি।কথাটা কিন্তু প্রতিদিনই শুনতাম।
.
আন্টির কথা শুনে মুখ চাপিয়েই সামান্য হাসলাম।কিন্তু পেটের মধ্যে বোম ফাটানোর মত হাসি পাচ্ছে।
.
আমি হাসি থামিয়ে আন্টিকে বললাম,
– আন্টি!আংকেল কে তো দেখলাম না।বাসায় নেই?
– কাল ব্যবসার কাজে ঢাকার বাইরে গেছে।তিনদিন পর আসবে।তুমি আজ আসবা,এই কথাটা যখন ওকে বললাম।ও আফসোস করে বললো”ইস!মেয়েটাকে সামনাসামনি দেখার সুযোগই পাচ্ছি না!”সেই ইফাজের ফোনে তোমার একটা ছবি দেখেছিলো।ওইটাই ওর ফার্স্ট এন্ড লাস্ট দেখা।
.
আমি অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলাম,
– কোন ছবি আন্টি?
– রেস্টুরেন্টের একটা ছবি!ইফাজের ফোনে এখনও আছে তো।লুকিয়ে লুকিয়ে তুলেছিলো!…..কথাটা বলেই আন্টি হাসলো।তারপর আবার বললো,
– ওকে বললেই দেখাবে।
– আচ্ছা আন্টি! আমি এখনই দেখে আসছি।
.
কথাটা বলেই আমি ওখান থেকে ইফাজের কাছে চলে আসলাম।উনার পাশে বসতেই উনি ভুত দেখার মতো আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– মেঘ না চাইতেই জল!……কথাটা বলেই ইফাজ এক হাত বাড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরার আগেই আমি উনার হাত চেপে ধরে বললাম,
– একদম না!আপনার ফোনটা একটু দেওয়া যাবে?
– পারমিশন নেওয়ার কি আছে?আমার সবকিছু তোমার!আমার ফোন তোমার!আমার আমি তোমার!আমার বেড তোমার!আমার ওয়াশরুম তোমার!আমার জামা,কাপড়,শার্ট,প্যান্ট, লুঙ্গি সব,সব তোমার! আমি দিতে না চাইলেও তুমি সব কেড়ে নিবে!
– উফ্!আমি যাস্ট ফোনটা চেয়েছি!ওগুলোর দরকার নেই।
.
ইফাজ ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
– নাও!
.
আমি ফোনটা নিয়েই ফার্স্ট গ্যালারিতে ঢুকলাম।অনেকগুলো ফোল্ডার দেখতে পেলাম।বউ নামের একটা ফোল্ডারে ঢুকে দেখলাম এখানে সব আমার পিক দিয়ে ভর্তি!আমি উনার দিকে তাকালাম!উনি সেন্টার টেবিলের উপর দুইপা তুলে আধশোয়া অবস্থায় সোফায় শুয়ে পেপারওয়েট নিয়ে খেলছিলেন।আমার তাকানো দেখে আমার দিকে তাকিয়ে একটা কিউট হাসি দিয়ে আবার খেলায় মনোযোগ দিলেন।
.
আমি অনেকগুলো পিক দেখতে পেলাম।ওর ফোনে আমার ফার্স্ট পিক দেখার জন্য আমি একদম নিচে নামলাম।কত্ত পিক।সব ক্যান্ডিড পিক,দেখেই বোঝা যাচ্ছে লুকিয়ে লুকিয়ে তোলা।আমি উনার দিকে ফোনটা ধরে বললাম,
– এই পিকগুলো কতদিন আগের?
আমার কথা শুনে উনি নরমালভাবে তাকিয়ে বললেন,
– ডিটেইল’স এ যেয়ে দেখো।
আমি যে রেগে উনাকে জিঙ্গেস করলাম উনি বুঝলেন ই না।আর এভাবে উনার ফোনে আমার পিকগুলো দেখছি সেটা দেখেও কোনো রিয়েক্ট করলেন না।
.
আমি উনার থেকে চোখ ফিরিয়ে আবার পিক দেখতে লাগলাম।লাস্টের দিকে আমার কয়েকটা রেস্টুরেন্টে বসা পিক দেখতে পেলাম।আমি একটা পিক এ ক্লিক করে দেখলাম এই পিকটা অনেকদিন আগের।রেস্টুরেন্টটাতে আমি একবার ই গিয়েছিলাম।আমার ওখানে ওটাই ফার্স্ট যাওয়া ছিলো এন্ড ওটাই লাস্ট।হিজাব পড়া অবস্থায়, একহাত টেবিলের উপর রাখা,অন্যহাতের কনুই রেখে গালে হাত দিয়ে কাজিনদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলাম,তখনই পিকটা তোলা হয়েছে!
.
হঠাৎ ইয়াশ দৌড়ে এসে আমার দুইহাত দুইদিকে দিয়ে আমার কোলে বসে একটা আর্টখাতা খুলতে খুলতে বললো,
– ভাবি,এই আর্টখাতা ভর্তি তুমি।প্রতিটা পেজ এ আমি নিজে তোমায় একেছি।যখনি তোমাকে টাচ্ করতে ইচ্ছে করে তখন ভাইয়ার ফোন নিয়ে তোমার ছবি দেখে দেখে এখানে আকিঁ।
.
আমি ইয়াশের কথা শুনে অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– ও এরকম ই!
আমি ইয়াশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গালে একটা কিস করে আর্টখাতাটা ওর হাত থেকে নিয়ে দেখতে শুরু করলাম।আমি একটা একটা করে দেখছি আর হাসছি।কারন একটা ছবিও আমার মতো দেখতে হয়নি।কিন্তু আমার প্রতি যে ওর এতো ভালোবাসা সেটা দেখে আমি অবাক হচ্ছি!
.
আমার দেখা শেষে আর্টখাতাটা ইফাজ রেখে আসতে চলে গেলো।আমি উনার ফোনটা উনাকে দিয়ে দিলাম।উনার কানের কাছে যেয়ে আস্তে করে বললাম,
– আপনি লুঙ্গি পরেন?
– কেনো?
– তখন যে বললেন,আপনার লুঙ্গিও আমার!তার জন্যই জিঙ্গেস করলাম।
.
উনি আধশোয়া থেকে উঠে ঠিকঠাক হয়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– বলো তো,গরমকালে ছেলেদের জাতীয় পোশাকের নাম কি?
কথাটা শুনেই আমি উনার থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।কারন উনি কি মিন করেছে সেটা বুঝতে পেরেছি।
.
ইয়াশ দৌড়ে এসে অন্য সোফা থেকে ফোনটা নিয়ে আমার কোলের সাথে হেলান দিয়ে গেইম খেলছে।
.
– বলো!
উনি আবার জিঙ্গেস করলেন।আমি উনার দিকে তাকিয়ে ইয়াশকে নিয়ে উঠে আসার চেষ্টা করলাম।উনি আমার হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বললেন,
– ভয় পাচ্ছো নাকি?বিলিভ মি,আমার বেডরুমে একটা লুঙ্গিও নেই।ওইটা যাস্ট কথার কথা বলছিলাম।গরমের সময় তো রুমে এসি চলে।তাই লুঙ্গিরও দরকার হয় না।
– লুঙ্গি দেখে ভয় পাওয়ার কি আছে?
– গুড!
উনার “গুড” বলা শুনে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– গুড বলার কি হলো এখানে?
– তুমি ভয় পাচ্ছো না দেখে বললাম আরকি!সাহসী বউ আমার!
কথাটা উনি হেসে হেসে বললেন।উফ্!উনার হাসি দেখে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে!কেনো যে লুঙ্গির ব্যাপারটা উঠাতে গেলাম?
উনি আবার বলতে শুরু করলেন,
– তোমার শ্বশুরআব্বা কিন্তু লুঙ্গি পরতে ভীষণ ভালোবাসে।তার রুমে লুঙ্গির স্তুপ!বলতে গেলে সবখানে লুঙ্গি ঝোলে!আমিতো একদিন লুকিয়ে লুকিয়ে একটা লুঙ্গি পরেছিলাম!ভয়ে বেশি হাটাহাটি করি নি।বেডের উপর চুপচাপ বসে ছিলাম।
.
কথাগুলো বলেই উনি হো হো করে হেসে উঠলেন!
উনার কথা শুনে আমি অন্যদিকে তাকিয়ে হেসে আবার মুখে রাগী ভাব নিয়ে উনার দিকে তাকালাম।
.
হঠাৎ ইয়াশ আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
– আমিও পরেছিলাম ভাইয়ার দেখাদেখি!ভাইয়া আর আমি অনেক্ষণ লুঙ্গি ডান্সে নেচেও ছিলাম।ওইটার একটা ভিডিও আছে ভাইয়ার লেপটপে।গেইম টা শেষ করি,তারপর তোমাকে নিয়ে দেখবো।
.
আমি উনার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।উনি হাসছেন!এদের দুইভাইয়ের লুঙ্গির ইতিহাস শুনে আমি হাসবো না কাদবো বুঝে উঠতে পারছি না।হঠাৎ মনে পরলো একটু আগে বলা উনার কথাটা।আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– আপনি যে বললেন,আপনি নাকি লুঙ্গি পরে চুপচাপ বসে ছিলেন?
আমার কথা শুনে উনি আমার সাথে হেলান দিয়ে বললেন,
– বউকে বলতে লজ্জা করে তো!তাই ইনোসেন্ট সাজলাম!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here