real love পর্ব ৪০

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part: 40
.
.
উনি দুইহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে মুখ গুঁজে বললেন,
– রাগ করেছো?
– ….
– এ্যাই টিয়াপাখি!
উনি খুব আহ্লাদী কন্ঠে ডাক দিলেন!আমি তবুও সাড়া দিলাম না!উনি আগের থেকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে আমাকে একদম পিষে ফেললেন!কিছুক্ষণ আগে ফ্রেশ হয়ে এসেছেন!যারজন্য হাত-পা-মুখ প্রচুর ঠান্ডা!আমার দম একেবারে বন্ধ হয়ে আসছে!উনার হাতের লোমগুলো টানতে টানতে বললাম,
– মরে গেলাম!আস্তে….আস্তে ধরুন!
– উহু!আস্তে ধরলে শীত লাগে আমার!তোমার শরীর অনেক গরম!ভাল্লাগছে….
– আপনার শরীর যে বরফ হয়ে আছে!প্রচুর ঠান্ডা!
উনি গলায় একটা চুমু দিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
– হয়ে যাবে গরম!আর কথা না….চুপ!
– উউউউ দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার!
– কথা কম!
– আমি ঘুমাবো এখন!ছাড়ুননন…
– একটু আগে তুমি রাতের ঘুম ঘুমিয়েছো!এখন আবার কিসের ঘুম…..চুপচাপ থাকো!
.
.
রাত দু’টোর সময় হঠাৎ কেউ রুমের দরজা নক করলো!উনি আস্তে করে জিজ্ঞেস করলেন,
– কে?
– ভাইয়া আমি।
নাফিসা দরজার ওপাশ থেকে উত্তর দিলো।
– হুম বলো!
– ভাইয়া…আপু কি ঘুমিয়ে পরেছে?
– হুম!কিছু বলবে?
– ভাইয়া…ইয়াশ মনে হচ্ছে উঠে পড়বে!আমার কেমন যেনো ভয় লাগছে!আপুকে একটু ডেকে তুলে পাঠিয়ে দিন না!
নাফিসার কথা শুনে উনি আমার পায়ের সাথে পা ঘষে বললেন,
– আমাদের বেবি হলে তাদেরকে ভবিষ্যতে আমি ইয়াশের বউয়ের পেছনে লাগিয়ে দেবো!তখন বুঝবে বউকে এভাবে হুটহাট কেড়ে নেওয়ার জ্বালা কত!
হঠাৎ উনার এরকম কথা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম!উনি আমার দু’চোখে চুমু খেয়ে আরো কিছুক্ষণ আদর করে ছেড়ে দিলেন!
.
.
ইয়াশকে মাঝখানে শুইয়ে দিয়ে আমি আর নাফিসা দু’জন দুপাশে শুয়ে পরলাম!আমি ইয়াশকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলাম!তখন একটু ঘুমিয়েছিলাম সেইমুহূর্তে নাফিসার ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিলো!এখন নিশ্চিত চোখ বন্ধ করলেই ঘুম চলে আসবে!
হঠাৎ নাফিসা বলে উঠলো,
– আপু,শাওয়ার না নিয়ে আসলা কেনো?
নাফিসার প্রশ্নটা শুনে আমি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– মানে?
– ফরয গোসলের কথা বলছিলাম আরকি!
নাফিসার কথা শুনে আমি দাতের সাথে দাত চেঁপে বললাম,
– ঠিকভাবে কথা বল নাফিসা!আমি কিন্তু তোর বড়!
– আরে…রাগ করছো কেনো?আমি তো তোমার গুনাহ্ কমানোর জন্য কথাটা বললাম!
– নাফিসার বাচ্চা…..ওইসব কিচ্ছু হয়নি!আমি চুপচাপ ঘুমিয়ে ছিলাম!
আমার কথাটা শোনামাত্রই নাফিসার চেহারা পরিবর্তন হয়ে মুখ হা হয়ে চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেলো!নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নিয়ে কাঁচুমাঁচু হয়ে পাশফিরে শুয়ে পরলো!
.
সকাল আট’টায় ঘুম ভাঙ্গতেই দেখলাম ইয়াশ আমার একহাতের উপর শুয়ে ফোনে গেইম খেলছে।গেইম খেলার এতো নেশা ওর।সুযোগ পেলেই ফোন নিয়ে পড়ে থাকবে।
আমি ইয়াশের কপালে চুমো দিয়ে বললাম,
– ঘুম ভেঙ্গেছে কখন সোনার?
– মাত্রই।
– ফ্রেশ হয়েছো?
– উহুম।
– ওহ্!তাহলে তাড়াতাড়ি উঠে পড়ো।কালরাতে কিন্তু কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।
– হুম!তুমিও উঠো।
আমি ইয়াশকে নিয়ে উঠে পরলাম।ইয়াশকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিয়ে নাফিসাকে ডেকে তুললাম।নাফিসা হাই তুলতে তুলতে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে আমাদের ফ্লাটে চলে গেলো।আমি সবকিছু ঠিকঠাক করে গুঁছিয়ে রেখে ইয়াশকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আমাদের ফ্লাটে চলে এলাম।
.
আম্মু ডাইনিং-এ খাবার সার্ভ করছিলো!আব্বু বসে বসে ব্রেকফাস্ট করছিলো!আমাদের দেখামাত্রই ইয়াশকে ডেকে চেয়ারে বসিয়ে আম্মু পাশে চেয়ার টেনে বসে ইয়াশকে খাওয়াতে শুরু করলো।ইয়াশ চুপচাপ পা নাঁচিয়ে নাঁচিয়ে খেতে লাগলো!
.
আমি আমার রুমে ঢুকতেই দেখলাম নাফিসা আবার ঘুমাচ্ছে।তখন নিশ্চয় কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে দিয়েছি।আমি ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম।ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং-এ এসে ইয়াশের পাশের চেয়ার টেনে যেই বসতে যাবো সেইমুহূর্তে আম্মু বলে উঠলো,
– ইফাজ কই?ও’কে ডেকে আন আগে!যা…
– উনি ঘুমোচ্ছেন!ঘুম ভাঙ্গলে এমনিতেই চলে আসবেন!
– গাধী!জামাই মানুষ….বলে কিনা ঘুম ভাঙ্গলে এমনিতেই চলে আসবে।যা নিয়ে আয়!
– আম্মু প্লিজ….
– মামনি!যাও ডেকে নিয়ে আসো!
পাশ থেকে আব্বু বলে উঠলো!
.
আমি আব্বুর দিকে তাকিয়ে আস্তে করে চেয়ার থেকে উঠে দাদুর ফ্লাটে চলে এলাম!উনি যেই রুমে ঘুমিয়েছেন সেই রুমের দরজা হালকা খুলে ভেতরে উঁকি দিলাম!উনি নিরালায় ঘুমোচ্ছেন!
.
আমি ধাক্কা দিয়ে দরজা পুরোটা খুলে বললাম,
– এই যে উঠুন!আম্মু ডাকছে!
উনি একটুও নড়লেন না!হয়তোবা শুনতে পাননি!আমি আবার ডাকলাম তবুও নড়লেন না!পরেরবার আরেকটু জোরে ডাকলাম!উনার কোনো পরিবর্তন দেখতে পেলাম না!
.
বাধ্য হয়ে কাছে গিয়ে উনার কাধে হাত রেখে সামান্য ধাক্কা দিলাম!উনি একটু নড়ে উঠলেন!আমি আবার ধাক্কা দিয়ে বললাম,
– দশ’টা বাঁজে!তাড়াতাড়ি উঠুন!
উনি আমার কথাটা শুনতে পেয়ে দুইহাত একসাথে উপরে তুলে হাই তুলতে তুলতে বললেন,
– কয়টা বাঁজে?
– এগারোটা!
– কিহ্!এতো সকাল হয়ে গেছে!আগে ডাকোনি কেনো?
– সেই আট’টা থেকে ডাকছি!আপনি-ই তো উঠছিলেন না!আব্বু ডাকছে….তাড়াতাড়ি উঠুন!
– আমার শার্ট-প্যান্ট এনে দাও জলদি!
.
ওহ্…আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম!আমি দ্রুত আমাদের ফ্লাটে যেয়ে লাগেজ থেকে উনার শার্ট-প্যান্ট বের করে কিছুক্ষণ উনার শার্টের ঘ্রাণ নিয়ে দ্রুত হাঁটা দিলাম!
.
রুমে এসে উনার সামনে শার্ট-প্যান্ট ধরে বললাম,
– নিন!
– এখন ক’টা বাঁজে?
উনার প্রশ্নটা শুনে আমি কেঁশে উঠলাম!নিচুস্বরে বললাম,
– সরি!আম্মু আপনাকে তাড়াতাড়ি ডেকে নিয়ে যেতে বলছিলো তাই….
– সরি গ্রহনযোগ্য নয়!
বলেই উনি আমার একহাত ধরে বললেন,
– নাও…..ফাস্ট একটা লিপকিস করে ফেলো তো!
– আর কখনো মিথ্যা বলবো না!সরি…
– আবার সরি?
– আজকেই লাষ্ট!এই যে আপনার হাত ধরে প্রমিজ করলাম!
– হামলাটা দেখছি আমাকেই করতে হবে!
বলেই উনি উনার সেইবিখ্যাত কাজটা পাঁচমিনিটেই করে ফেললেন!
.
.
ওয়াশরুমে ঢুকে দশমিনিটে ফ্রেশ হয়ে আমাকে নিয়ে আমাদের ফ্লাটে চলে এলেন!
.
ডাইনিং-এ আব্বুকে দেখতে পেয়ে আব্বুকে সালাম দিয়ে চেয়ার টেনে পাশে বসলেন!আমি রুমে চলে এলাম!নাফিসা টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো!আমাকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– ইয়াশ কই আপু?
– ব্রেকফাস্ট করে!
– ভাইয়া উঠেছে?
– হুম!উনিও ব্রেকফাস্ট করছেন!
.
নাফিসা টাওয়ালটা রেখে আমার পাশে বসে বললো,
– তুমি এখনো ভাইয়াকে “আপনি” বলে সম্বোধন করো?
– হুম!কেনো?
– ভাইয়া কিছু বলে না?
– হুম!বাসররাতে “তুমি” করে বলার জন্য খুব জোর করেছিলো!
নাফিসা উৎসুক কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– বলেছিলে তুমি?
– উহুম!আমি বলেছিলাম উনি যখন আমার সাথে রাগ করে থাকবে তখন “তুমি” করে বলবো!তার আগে নয়!
– রাগ করেছিলো একবারো?
– নাহ্!আমি উনার সামনে দাড়ালেই নাকি উনার সব রাগ উড়ে যায়!আমাকে দেখলেই নাকি উনার ঠোঁটে নিজের অজান্তেই হাসি চলে আসে!
– তাহলে তো হলোই….এইজন্মে আর বউয়ের মুখে তুমি শোনা হবে না ভাইয়ার!
নাফিসা পাশ থেকে উঠে আমার কাঁধে চাপড় দিয়ে বললো,
– গুড জব….এগিয়ে যাও!
– মাইর খাবি কিন্তু আমার হাতের!বেয়াদব কোথাকার!দিনদিন আমাকে রেসপেক্ট করা ভুলে যাচ্ছিস তুই!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here