#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__২৫
অন্ধকার রুমে একা বসে আছি ৷ পাশে থাকা লাইটটা একবার জ্বালাচ্ছি তো একবার নিভাচ্ছি ৷ মনের ভেতরটা অজানা এক কারণে বারবার খচখচ করছে ৷ শান্ত মন বারবার অশান্ত হয়ে উঠেছে ৷ মনটা অসস্থির হয়ে উঠছে ৷ কোনো একটা কারণে ভয় হচ্ছে খুব ৷ কিন্তু কি সেই কারণ বুঝতে পারছি না ৷ হঠাৎ রুমের লাইট জ্বলে ওঠায় কিছুটা চমকে গেলাম ৷ পেছনে তাকাতেই আরিহানকে দেখতে পেলাম ৷ বিরক্তি সুরে বললাম,,,,
কাশফিয়া : লাইট অফ করুন ৷ ভালো লাগছে না ৷
আরিহান আমার পাশে বসতে বসতে বললেন,,,,
আরিহান : কি হয়েছে তোমার বলো তো? নিচ থেকে এভাবে চলে এলে ৷ আবার বলছো ভালো লাগছে না ৷ কি হয়েছে?
কাশফিয়া : জানিনা ৷ খুব বিরক্ত লাগছে ৷ প্রচন্ড ভয়ও করছে ৷
আরিহান : শুধু শুধু নেগেটিভলি চিন্তা করছো কেন?
আমি আরিহানের দিকে ঘুরে বসে বললাম,,,,
কাশফিয়া : না নেগেটিভ না ৷ সত্যি এরকম মনে হচ্ছে যেন আমি কিছু একটা হারিয়ে ফেলবো বা আমি নিজেই হারিয়ে যাবো ৷ অনেক ভয় হচ্ছে আমার আরিহান ৷ কেন এরকম লাগছে?
আরিহান : ভুল চিন্তা করছো কেন? এরকম কিছুই হবে না ৷ শান্ত হও প্লিজ ৷
কাশফিয়া : সকাল থেকে মনটা অসস্থির হয়ে উঠেছে ৷ বারবার মনে হচ্ছে আমি সায়ানের মতো আপনাকেও হারিয়ে ফেলবো ৷
আরিহান আমাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন,,,,,
আরিহান : আর কোনো বাজে কথা না ৷ অনেক হয়েছে আর না ৷ বিয়ে বাড়ির কাজ করে আজে বাজে চিন্তা সব তোমার মাথায় উঠেছে ৷ এসব কিছুই হবে না ৷ একটু শান্ত হও ৷
কাশফিয়া : পারছি না আমি পারছি না ৷ বারবার এক চিন্তা মনের মধ্যে ঝেকে বসছে ৷
আরিহান : কাশফুল প্লিজ এভাবে উল্টা পাল্টা ভেবে শরীর খারাপ করো না ৷ যাও চেন্জ্ঞ করে আসো ৷ খাবার নিয়ে আসছি আমি ৷
কাশফিয়া : আখি চলে গিয়েছে?
আরিহান : হুম ৷
কাশফিয়া : আপনি খেয়ে নিন আমি খাবো না ৷ ভালো লাগছে না ৷
আরিহান : এরকম করলে আরো দূর্বল হয়ে পরবে তুমি ৷ কয়েকদিন ধরেই দেখছি ঠিক ভাবে খাচ্ছো না ৷ এরকম করলে কি হবে বলো?
কাশফিয়া : কিছু হবে না ৷ একটু আগেই মা খাইয়ে দিয়েছে তো ৷ আর খাবো না ৷ পেট ভরাই আছে ৷ প্লিজ প্লিজ প্লিজ ৷
আরিহান : আচ্ছা ঠিক আছে ফ্রেশ হয়ে আসো যাও ৷
আমি ফ্রেশ হয়ে চেন্জ্ঞ করে নিলাম ৷ রুমে এসে দেখি আরিহান বেডে শুয়ে ফোন টিপছেন ৷ লাইট অফ করে দিয়ে ওনার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে টেবিলে রেখে দিলাম ৷ তারপর ওনাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা দিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলাম ৷ আরিহান আমার মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে বললেন,,,,,
আরিহান : বেশি খারাপ লাগছে কি? ডাক্তারের কাছে যাবে?
কাশফিয়া : আরে না এতোক্ষন একটু খারাপ লাগছিল এখন ঠিক আছি ৷
আরিহান : ঠিক তো?
কাশফিয়া : হুম খেয়েছেন আপনি?
আরিহান : তুমি খেলে না আমি কীভাবে খাই বলো?
আমি মাথা তুলে বললাম,,,,,,
কাশফিয়া : মানে কি আপনি এখনো খান নি? এটা কেমন কথা? আমি খেয়েছি বললাম তো ৷ আর কত খাব?
আরিহান : আচ্ছা আমার খেতে ইচ্ছা করছিল না ৷ তুমি ঘুমাও তো ভালো লাগবে ৷
কাশফিয়া : আপনি আমার একটা কথাও শোনেন না ৷
উনি আমার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন,,,,
আরিহান : কোন কথাটা শুনি নি বলো?
কাশফিয়া : কোনোটাই শুনেন না ৷
বলে মুখ ঘুরিয়ে ওনার বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিলাম ৷ কিছুক্ষন পর আরিহান বললেন,,,,
আরিহান : কাশফুল?
কাশফিয়া : হুম…?
আরিহান : পরশু দিন কিন্তু হানিমুনে যাবো ৷
কাশফিয়া : এই আপনি আবার শুরু করলেন? সারাদিন তো হানিমুন হানিমুন করে আমার কান ঝালা পালা করে দেন ৷ এখনো বাকি আছে?
আরিহান : হুম খালি বলতেই ইচ্ছা করে ৷
কাশফিয়া : আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আর কেউই যায় না হানিমুনে ৷ আপনিই প্রথম ৷ বলি আমি কি ভুলে গেছি? মনে আছে তো আমার নাকি? সকাল থেকে কানের কাছে খালি এই এক কথা ৷ যাবোই না আমি ৷
আরিহান : আরে আরে রাগছো কেন? সরি সরি আর বলবো না ৷ তবুও যাবো না বলো না ৷
কান ধরে তাকিয়ে রইলেন ৷ আমি ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে হেসে দিলাম ৷ এই একজনই পারে আমার খারাপ মনকে ভালো করে দিতে ৷ কান থেকে হাত সড়িয়ে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললাম,,,,
কাশফিয়া : কখনোই রাগ করে থাকতে পারি না আমি আপনার উপর ৷ কি জাদু জানেন?
আরিহান : ভালোবাসার জাদু ৷
বলেই আমার কপালে একটু চুমু দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইলেন ৷
____________________
মাঝখানে কেটে গেলো আরো একটি দিন ৷ আজ সিলেটে যাবো ঘুরতে আরিহানের ভাষায় হানিমুনে ৷ রেডি হয়ে নিচে চলে গেলাম ৷ সবাইকে বিদায় দিয়ে আরিহানের সাথে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ আরিহান গাড়ি স্টার্ট দিলে আমি বললাম,,,,,
কাশফিয়া : ড্রাইভার নিলে হতো না? এতোটা পথ একা আপনার খুব কষ্ট হবে তো ৷
আরিহান : উহু অভ্যাস আছে আমার ৷ আগে ঢাকার বাহিরে প্রায়ই নিজে ড্রাইভ করে যেতাম ৷
কাশফিয়া : তবুও কষ্ট হবে ৷
আরিহান : তুমি আছো না? কিসের কষ্ট?
বলেই সামনে তাকালেন ৷ আমি জানালা দিয়ে কিছুক্ষন বাহিরে তাকালাম ৷ ঘুম পাচ্ছে অনেক ৷ হাই তুলতে তুলতে আরিহানের এক হাত পিছনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : ঘুম আসছে অনেক ৷ এক হাতে ড্রাইভ করুন প্লিজ ৷
আরিহান : আচ্ছা সে নাহয় করলাম ৷ কিন্তু তোমার ঘুম আসতেছে? একটু আগেই তো ঘুম থেকে উঠলে ৷
কাশফিয়া : আমি কি ইচ্ছা করে করেছি নাকি? অল্প একটু ঘুমাই আপনি ডাক দিয়েন হুম?
আরিহান : আচ্ছা ঠিক আছে ঘুমাও ৷
বলে আমাকে ওনার সঙ্গে মিশিয়ে নিলেন ৷
________________
প্রায় ৫ ঘন্টা পর গাড়ি এসে থামলো সিলেটের একটা হোটেলের সামনে ৷ হোটেলটার নাম ‘রোজ ভিউ হোটেল’ ৷ চারপাশে বেশ খোলামেলা আর গাছগাছালি ৷ এক প্রাকৃতিক সুভাশ উড়ে উড়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে পুরো জায়গা জুড়ে ৷ আরিহান চারপাশটা একবার দেখে নিলো ৷ তারপর কাশফিয়ার দিকে তাকালো ৷ ও এখনো ঘুমিয়ে রয়েছে ৷ সকাল ১১ টায় ঘুম থেকে উঠে তার ১ বা দেড় ঘন্টা পর ঘুম আসে কীভাবে? সেটা আরিহানের জানা নেই ৷
তার ওপর পাহাড়ি এলাকা উঁচু নিচু রাস্তা একবারও ঘুম ভাঙ্গলো না ৷ টানা ৫ ঘন্টা ঘুমিয়েছে ভাবা যায়? কাশফিয়ার কপালের উপর পরে থাকা ছোট ছোট চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে কানের পিছনে গুজে দিলো ৷ ঘুমন্ত অবস্থায় একদম ঘুমপরী লাগছে আরিহানের কাছে ৷ কাশফিয়ার কানের কাছে গিয়ে আস্তে ফিসফিস করে বললো,,,,,
আরিহান : কাশফুল!!
ঘুমের মধ্যেই নড়েচড়ে উঠলো আবার ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বললো,,,,,
কাশফিয়া : হুম??
আরিহান : এসে পরেছি আমরা উঠো ৷
কাশফিয়া : কোথায়?
আরিহান : হানিমুনে!!
পিটপিট করে চোখ খুললাম ৷ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : ভুল জায়গায় এসেছি ৷ পাহাড় নেই এখানে ৷ গাড়ি ঘুরান ৷
আরিহান : আরে? হোটেলে এসেছি মাত্র ৷ পাহাড়ে যাবো তো ৷
কাশফিয়া : এখনি যাবো আমি গাড়ি ঘুরান ৷
আরিহান : সন্ধ্যে হয়ে যাচ্ছে আর তুমি এখন পাহাড় দেখতে যাবে? ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিব ৷ আর রাতে পাহাড়ে যাওয়াটা ঠিক না ৷ কাল নিয়ে যাবো ৷ চলো ভেতরে চলো ৷
কাশফিয়া : না না না আমি আজ যাবো আর এখনি যাবো ৷
আরিহান : বললাম তো কাল নিয়ে যাবো প্রমিজ ৷ লক্ষিটি এখন জেদ করে না ৷
কাশফিয়া : আজ এলাম অথচ আজ যাবো না?
আরিহান : তোমাকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাই না আমি ৷ একটু অপেক্ষা করো কাল যাবো তো ৷ রাগ করে না জান প্লিজ ৷
কাশফিয়া : আচ্ছা ঠিক আছে চলুন ৷
বলে গাড়ি থেকে নেমে আমি আর আরিহান ভিতরে চলে গেলাম ৷ রুম আগে থেকেই বুক করে রেখেছিলেন তাই সমস্যা হয়নি ৷ চাবি নিয়ে তিনতলায় চলে গেলাম ৷ ৩০২ নম্বর রুম ৷ চাবি খুলে ভিতরে ঢুকলাম ৷
ভিতরে আসতেই হা হয়ে গেলাম এত সুন্দর আর গোছানো রুম ৷ দেখতে আকর্ষনীয় ৷ চারপাশের দেয়ালে সাদা রঙ করা যার মধ্যে লাভ পেইন্ট করা ৷ প্রত্যেকটা জানালা দরজায় সাদা পর্দা টাঙানো ৷ পুরো রুমের ফ্লোরে সাদা কার্পেট যার ওপর লাভ শেপের পেইন্ট করা ৷ রুমের চারপাশে সাদা ক্যান্ডেল সাজানো ৷ সাদা ফ্রেমের ছবি ঝোলানো ৷ আর তাজা তাজা ফুল রুমের প্রত্যেকটা সাদা টবে সাজানো ৷ বেডশিট, ব্লাঙ্কেট সব সাদা যার উপরে লাভ পেইন্ট করা ৷
আমি সব কিছু হা হয়ে দেখছি ৷ কতোটা সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে ৷ রুমের ভেতরে গিয়ে বেলকনিতে চলে গেলাম ৷ বেলকনিটাও জানালার মতো সাদা পর্দা গিয়ে ঢাকা ছিলো ৷ বেশ লম্বা আর চওড়াও ৷ আশেপাশে তাকাতেই দেখতে পেলাম অজস্র গাছ দিয়ে ঘেরা এই হোটেলটা ৷ চারপাশে সবুজে সবুজ ৷ নিচের দিকে খেয়াল হতেই দেখি এই বেলকনির ফ্লোর কাচের যেখানে দাঁড়িয়ে আছি আমি ৷ এর নিচে একটা সুইমিংপুল ৷ কাচের উপরে দাঁড়িয়ে আছি ভাবতেই অবাক লাগছে ৷
আরিহান আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ৷ ওনাকে ইশারা করে বললাম,,,,,
কাশফিয়া : দেখুন ৷ কি সুন্দর লাগছে ৷ এটা ভেঙ্গে যাবে নাতো? আমি আবার পরে যাবো নাতো?
আরিহান : আরে না ৷ পরবে কেন? এটা ভাঙ্গার মতো ওইরকম কাচ না যে একটু লাফালেই পরে যাবে ৷ এটা ভাঙ্গবেও না ৷ তুমি এখান থেকে নিচের সবকিছু দেখতে পারছো ৷ কিন্তু নিচের কেউ আমাদের দেখতে পাবে না ৷
কাশফিয়া : কিন্তু কিভাবে?
আরিহান : এর বিশেষত্ব এটা ৷ পচ্ছন্দ হয়েছে তোমার?
কাশফিয়া : অনেক ৷ কিছুক্ষনের জন্য সবকিছু স্বপ্ন লাগছিল আমার ৷
আরিহান : স্বপ্ন নয় সত্যি ৷ যাও ফ্রেশ হয়ে আসো ৷
কাশফিয়া : আজ বাহিরে নিয়ে যাবেন না?
আরিহান : বললাম না কাল?
কাশফিয়া : আমার আজ যেতে ইচ্ছা করছে ৷
আরিহান আমার গালে দুই হাত রেখে বললেন,,,,,,,
আরিহান : আমরা তো আর কাল চলে যাচ্ছি না, না? আছি তো এখানে কয়েকদিন ৷ প্রত্যেকদিন তোমাকে নিয়ে ঘুরবো ৷ কিন্তু আজ নয় ৷ মন খারাপ করো না প্লিজ ৷
কাশফিয়া : আচ্ছা কি আর করার!!
আরিহান : একটু তো সবুর করতেই পারো নাকি? যাও ফ্রেশ হয়ে আসো ৷
কাশফিয়া : হুম যাচ্ছি ৷ কিন্তু আপনি কোত্থাও যাবেন না রুম থেকে ৷
আরিহান : কোথায় যাবো আমি? এখানেই আছি ৷
কাশফিয়া : হুম জানি ৷ তবুও ভয় করে আমার ৷ প্লিজ না বলে কোত্থাও যাবেন না আমাকে ফেলে ৷
আরিহান : আচ্ছা আচ্ছা যাবো না ৷
কাশফিয়া : হুম ৷
বলেই রুমে চলে এলাম ৷ এখন প্রতিনিয়ত একটাই ভয় হয় আমার ৷ মনটা উথাল পাথাল করে ৷ খালি মনে হয় আরিহানকে হারিয়ে ফেলবো আমি ৷ এক সেকেন্ড উনি দূরে চলে গেলেই ভয় জেগে উঠে মনের ভেতর ৷ গত কয়েকদিন ধরেই একটা কথাই খালি আমার মাথায় ঘুরছে ৷ মনে হচ্ছে সায়ানের মতো আরিহানও দূরে চলে যাবে আমার থেকে ৷”
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,