The_Terrible_Lover part 26

#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__২৬

চুল ছেড়ে আয়নার সামনে বসে আছি ৷ আর আরিহান আমার চুল আচড়ে দিচ্ছেন ৷ এটা প্রতিদিনকার রুটিন ৷ উনি নিজে আমার চুল আচড়ে বেঁধে দিবেন ৷ ভেজা চুল মুছে দিবেন ৷ খাওয়ানোর সময় প্রত্যেকবেলা খাইয়ে দিবেন ইত্যাদি ইত্যাদি ৷ চুল আচড়ে বেনি করে দিলেন ৷ তারপর আমাকে ওনার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,,,,,

আরিহান : মোটেও ভালো লাগছে না তোমাকে এভাবে গোমড়া মুখে বসে থাকতে দেখে ৷

আমি তবুও চুপ করে রইলাম ৷ একে তো এই লোকটার উপর মোটেও রাগ করে থাকতে পারি না আমি ৷ কিন্তু আমার এখন রাগ করতে ইচ্ছা করছে খুব ৷ তাই চুপ করে আছি ৷ দেখি উনি কি করে ৷ বসা থেকে উঠে চলে গেলেন ৷ তারপর হাতে করে কি একটা নিয়ে আমার সামনে বসলেন ৷ আমাকে পিছনে ঘুরিয়ে গলায় একটা চেইন পরিয়ে দিলেন ৷ আমি চেইনটা ধরে ওনাকে বললাম,,,,,

কাশফিয়া : এটা?

আরিহান : খুলে দেখো!

চেইনটার মধ্যে ছোট্ট একটা লকেট যেটা খোলা যায় ৷ খুলে দেখি ভিতরে একপাশে আমার ছবি আর নাম লিখা অপরপাশে আরিহানের ছবি আর নাম ৷ খুব সুন্দর করে কারুকাজ করা হয়েছে ৷ দেখতে অনেক সুন্দর ৷ আরিহান আমাকে তার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,,

আরিহান : পচ্ছন্দ হয়েছে?

কাশফিয়া : না হওয়ার তো কিছু নেই ৷ অনেক সুন্দর ৷ খুব ভালো লেগেছে আমার ৷ (হেসে)

আরিহান : তো ম্যাডামের রাগ ভেঙ্গেছে?

আমি ঠোঁট উল্টে চুপ করে রইলাম ৷ আচমকাই আরিহান আমার ঠোঁটে একটা চুমু খেলেন ৷ আমি ঠোঁটে হাত দিয়ে বললাম,,,,,

কাশফিয়া : কি হলো এটা?

আরিহান : দেখোনি? আবার করে দেখাবো?

কাশফিয়া : উফফ

বলেই ধাক্কা মেরে ওনাকে সড়িয়ে উঠে গেলাম ৷ চলে যেতে নিলেই হাত ধরে আমাকে ওনার কোলে বসিয়ে দিয়ে বললেন,,,,,

আরিহান : যাচ্ছো কোথায়?

কাশফিয়া : বলবো কেন? ছাড়ুন আমাকে ৷

উনি ছাড়লেন না বরং আমাকে কোলে তুলে নিলেন ৷ দুই হাত পেছনে নিয়ে গলা জড়িয়ে ধরলাম আমি ৷ বেলকনিতে নিয়ে আমাকেসহ সোফায় বসলেন ৷ তারপর একটা চাদর দিয়ে আমাকেসহ পেচিয়ে ধরলেন ৷ আমি বললাম,,,,,

কাশফিয়া : এখানে কেন নিয়ে এলেন? হালকা হালকা ঠান্ডা বাতাস ৷ ঠান্ডা লেগে যাবে তো ৷

আরিহান : বাতাস কি লাগছে গায়ে? এক চাদরের নিচে দুজনে জড়িয়ে ধরে আছি এখনো ঠান্ডা লাগছে তোমার?

কিছু বললাম না আমি ৷ খোলা আকাশের নিচে এভাবে শুয়ে থাকার এক অন্যরকম অনুভূতি ৷ আরিহান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন আমাকে ৷ কাঁধে মাথা রেখে গলায় মুখ গুজে দিলেন ৷ চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি ৷ সারাটা রাত এভাবেই পাড় করে দিলাম ৷

_________________

পরেরদিন সকালে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলাম আমরা ৷ গাড়ি করে ডাইরেক্ট গেলাম হাদারপার বাজারে ৷ সেখান থেকেই বিছানাকান্দি ঘুরার জন্য নৌকা পাওয়া যায় ৷ দুজন উঠলাম এক নৌকায় আর সাথে মাঝি ৷ সামনের দিকে যত এগোচ্ছি ততই চারপাশ নীল নীল হয়ে যাচ্ছে ৷ আকাশ, পাহাড়, গাছপালা সব নীল রঙে ছেয়ে গেছে ৷ পানিও নিল ৷ হাতের মুঠোয় পানি নিলেও হাতের মধ্যে পানি নীল দেখায় ৷ এতো সুন্দর আর পরিস্কার পানি এই প্রথম দেখলাম ৷ এতোটাই স্বচ্ছ পানি যে পানির নিচের হাতও উপরে দেখা যাচ্ছে ৷

আয়নার মতো নিজের চেহারাও দেখতে পাচ্ছি ৷ প্রকৃতি থেকে এক অপূর্ব সুভাশ ভেসে আসছে ৷ আরেকটু দূরে যেতেই দেখলাম পানির মধ্যে ছোট বড় পাথর বিছানো ৷ ছোট ছোট পাথরগুলো পানির নিচে থাকলেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ৷ নৌকাটা একটা পাথরের কাছে নিয়ে বেজানো হলো ৷ তাড়াতাড়ি নৌকা থেকে নেমে পাথরে পা রাখলাম ৷ বেশ ঠান্ডা তবুও খুব ভালো লাগছে ৷ আরিহান আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে আছেন ৷

স্রোতের চাপে বারবার পরে যাচ্ছি কিন্তু আরিহান আগলে নিচ্ছেন ৷ এই স্রোতের পানি এসে ভিজিয়ে দিলো আমাদের ৷ এমন একটা অবস্থা ডুবে যেতে ইচ্ছা করছে এর মধ্যে ৷ আরিহান বললেন,,,,,

আরিহান : সাঁতার কাঁটবে? অনেক ভালো লাগবে কাঁটবে?

কাশফিয়া : আমি তো সাঁতার জানি না ৷

আরিহান : সমস্যা নেই মন খারাপ করো না ৷ আমি ধরে রাখবো তুমি শুধু ভাসবে আর হাত ঝাপটিয়ে সাঁতার কাটার মতো করবে ৷ ভয় নেই ছাড়বো না ৷

কাশফিয়া : কিন্তু এখানে তো অনেক স্রোত ৷

আরিহান : বললাম না ছাড়বো না ৷

বলেই আমাকে আরো শক্ত করে ধরলেন ৷ আমি পানির উপর শুয়ে হাবুডুবু খেতে লাগলাম ৷ আরিহান শক্ত করে ধরে আছেন তাই ভেসে যাই নি ৷ একবার স্রোত এসে মুখের উপর উঠছে তো একবার সরে যাচ্ছে ৷ বেশ অনেকক্ষন পর উঠে বসলাম ৷ আরিহান বুকে জড়িয়ে ধরলেন পানির মধ্যেই ৷ হাপিয়ে গেছি ৷ এতোটা খুশি হয়েছি যে খুশিতে নড়াচড়াও করতে পারছিলাম না ৷ আরিহান ধরে নিয়ে নৌকায় বসালেন ৷ জোড়ে শ্বাস নিচ্ছি ৷ শরীরের সব শক্তি মূহুর্তেই শেষ হয়ে গিয়েছে ৷

এই এক নৌকা দিয়েই একে একে বিছানাকান্দি, পান্থুমাই, লক্ষনছাড়া সব জায়গায় ঘুরলাম ৷ বিকালের দিকে রাস্তার একটা ছোট্ট রেস্তোরা থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম ৷ তারপর সিলেট শহরটা আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে ঘুরে ঘুরে দেখলাম ৷ সারাটা বিকাল আরিহানের হাত ধরে কথা বলতে বলতে হাঁটতে হাঁটতে হোটেলে চলে এলাম ৷

______________

এর মধ্যেই চলে গেলো আরো দুটো দিন ৷ ভালো লাগার সময়গুলো খুব তাড়াতাড়িই চলে যায় ৷ এই দুইদিনে আরিহানের সাথে অনেক ঘুরেছি ৷ অনেক কিছু খেয়েছি ৷ অনেক কিছু দেখেছি আর কিনেছিও ৷

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছি ৷ আজ তাড়াতাড়িই ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে ৷ সবে মাত্র ০৭ টা বাজে ৷ আরিহান ঘুমাচ্ছেন এখন ৷ আমারই ঘুম আসছে না আজ ৷ তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি ৷ গত কয়েকদিন এই ভয়টা চলে গিয়েছিল আমার ৷ কিন্তু আজ ভয় লাগছে প্রচুর পরিমানে ৷ এতোটা ভয় লাগছে যে ভয়ে আমার হাত ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে ৷ হঠাৎ হঠাৎ কি রকম যেন লাগে যেটা ভাষায় বোঝানো যাবে না ৷

হঠাৎ করেই পেছন থেকে কেউ জড়িয়ে ধরায় চমকে গেলাম ৷ ওই কেউটা যে আরিহান বুঝতে পেরেছি কিন্তু হঠাৎ করে এরকম করার কোনো মানে হয়? কিছুটা ধাক্কা দিয়ে বললাম,,,,,

কাশফিয়া : আজিব? এভাবে ভয় দেখানোর মানে কি? ছাড়ুন ৷

আরিহান আবার জড়িয়ে ধরে ঘুমন্ত গলায় বললেন,,,

আরিহান : কই ভয় দেখালাম? আমাকে ছেড়ে একা একা দাঁড়িয়ে আছো তাই চলে এলাম ৷

কাশফিয়া : ভালো করেছেন ছাড়ুন এখন ৷

আরিহান : এত সকালে ঘুম থেকে উঠেছো কেন?

কাশফিয়া : ঘুম ভেঙ্গেছে তাই উঠেছি ৷ যান ফ্রেশ হয়ে আসুন ৷ বের হবো না?

আরিহান : সেটা তো পরে ৷ এখন এভাবেই থাকি না!!

কাশফিয়া : না ছাড়ুন ৷ ফ্রেশ হয়ে আসুন আগে ৷

বলেই ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে মাথাটা ঘুরে গেলো ৷ আরিহানকে ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম ৷ আরিহান আমাকে ধরে বললেন,,,,,

আরিহান : কাশফুল কি হয়েছে? ঠিক আছো তো?

কাশফিয়া : হ্যাঁ ৷

আরিহান : ডাক্তারের কাছে যাবে? শরীর আবার দুর্বল হয়ে পরেছে না?

কাশফিয়া : আরে না কিছু হয়নি ৷ শুধু মাথাটা হাল্কা ঘুরে গিয়েছিল ৷ আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন ৷

আরিহান : ঠিক তো?

কাশফিয়া : হুম ৷

_______________

একজন গাইডকে সাথে নিয়ে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা উঁচু নিচু পথ ধরে আমি আর আরিহান হেঁটে যাচ্ছি ৷ পাহাড়ে যেতে হলে একজন গাইডকে সাথে নিয়ে যেতে হবে এটাই নিয়ম ৷ সিলেট শহরের সর্বোচ্চ চূড়া বা বিন্দু হচ্ছে কালা পাহাড় ৷ যেখানে যাচ্ছি আমরা ৷ চারপাশে গাছপালা, ঝোপঝাড় আর বাঁশ ঝাড়ে ঘেরা ৷ যেদিকে তাকাই সেদিকেই সবুজে ঘেরা ৷ উঁচু নিচু রাস্তা আস্তে আস্তে উপরের দিকে যাচ্ছে ৷ আর সেই রাস্তা ধরেই আরিহানের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা ৷

প্রায় এক ঘন্টা হাঁটার পরও রাস্তা শেষ হচ্ছে না ৷ এদিকে হাঁটতে হাঁটতে আমার পা ব্যথা হয়ে গিয়েছে ৷ কোনো রকমে হাঁটছি ৷ পাহাড়ে ওঠা যে এতো কষ্টের সেটা আজ বুঝলাম ৷ হঠাৎ করেই মাথাটা আবার ঘুরে উঠলো ৷ আরিহান শক্ত করে ধরে রইলেন ৷ আমার মাথাটা বুকে ঠেকিয়ে বললেন,,,

আরিহান : এখানে নিয়ে আসাই উচিত হয়নি আমার ৷ হাপিয়ে গিয়েছো ৷ অসুস্থ হয়ে পরছো ৷ তোমাকে তো এখন কোলে নিয়েও যাওয়া যাবে না ৷ উঁচু নিচু রাস্তা কি করব? ফিরে যাবে?

কাশফিয়া : আরে না ৷ আর একটুই তো ৷ মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল ৷ আর কিছু না ৷

আরিহান : পানি খাবে?

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম ৷ তার কাধের ব্যাগ থেকে একটা বোতল বের করে দিলেন আমাকে ৷ প্রায় অর্ধেক পানিটাই খেয়ে নিলাম ৷ বোতলটা নিয়ে ব্যাগে রাখতে রাখতে বললেন,,,,,

আরিহান : কিছু খাবে? ক্ষুধা লেগেছে?

কাশফিয়া : না চলুন এগোই ৷

আরিহান একটা শ্বাস ফেলে আমাকে ধরে ধরে এগিয়ে নিয়ে যেতে লাগলেন ৷ আরো প্রায় এক ঘন্টা পর পাহাড়ের চূড়ায় এসে পৌঁছালাম ৷ এতোক্ষনের ক্লান্তি সব এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো ৷ হাত ছড়িয়ে বাহিরের বাতাসটা নিজের মধ্যে টেনে নিলাম ৷ আশেপাশে বেশ গাছপালা আছে তবে সেগুলো বেশ দূরে দূরে ৷ মাঝখানটা পুরো খালি ৷ সবুজ আর সবুজ ৷ মাথার উপরে নীল আকাশ ৷ জাস্ট স্পিচলেস ৷ আমি আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম ৷

হঠাৎ আরিহান হেচকা টান দিয়ে তার বুকে জড়িয়ে ধরলেন ৷ খুব জোড়ে হার্ট বিট করছে যেন ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু কেন? নিচের দিকে তাকাতেই মাথা ঘুরে উঠলো ৷ আরেকটু হলেই পরে যেতাম আমি ৷ দেখতে দেখতে কখন যে কর্ণারে চলে এসেছি টেরও পাই নি ৷ আরেকটু হলেই আরিহানকে হারিয়ে ফেলতাম আমি ৷ মনের ভিতর ভয়টা আরো ঝেকে বসছে ৷ আরিহান কাঁপাকাঁপা গলায় বললেন,,,,,

আরিহান : ঠিক আছো তো তুমি? একটু সাবধান হও ৷ এই জায়গাটা অনেক রিস্কি ৷ এভাবে এতো কর্ণারে কেন এলে?

কাশফিয়া : আমি না বুঝতে পারি নি ৷

বলেই ফুপিয়ে কেঁদে দিলাম ৷ ভয় তো আমিও পেয়েছি অনেক ৷ আরিহান আমার চোখ মুছে দিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন,,,,,

আরিহান : এই পাগলি কাদছো কেন? বকেছি তোমায় আমি? কান্না বন্ধ করো প্লিজ ৷ আমি আছি তো কি হবে তোমার?

বলেই আবার জড়িয়ে ধরলেন ৷ আমি শান্ত হলে উনি আশেপাশে আমার হাত ধরে ঘুরে ঘুরে দেখালেন ৷ হঠাৎ সামনে একটা কাঠগোলাপ গাছ দেখতে পেয়ে আরিহানকে বললাম,,,,,

কাশফিয়া : পাহাড়ের চূড়ায় কাঠগোলাপ গাছ?

আরিহান : হুম এগুলাতে তো সূর্যের আলো, বাতাস প্রচুর দরকার হয় তাই এভাবে এখানে আর সৌন্দর্যের জন্যই লাগানো হয়েছে ৷ দেখেছো কি সুন্দর দেখা যাচ্ছে?

কাশফিয়া : অনেএএএক সুন্দর আমি নিবো ৷

আরিহান : এই না ওটা একদম কর্ণারে পরে যাবে ৷

কাশফিয়া : না না আমি নিব ৷ প্লিজ প্লিজ অন্তত একটা?

আরিহান : আচ্ছা তুমি দাঁড়াও আমি নিয়ে আসছি ৷

কাশফিয়া : আমি যাই না? একটু?

আরিহান : না বললাম তো ৷ (ধমকে)

বলেই এগিয়ে গেলেন সামনের দিকে ৷ একদম কাছের একটা ডাল থেকে একটা ফুল এনে আমার মাথায় গেঁথে দিলেন ৷ এই ডালে আর কোনো ফুল নেই শুধু একটাই ছিল ৷ আর সব ফুলগুলো পেছন দিকে ৷ আমাকে বললেন,,,,

আরিহান : হয়েছে?

কাশফিয়া : মাত্র একটা?

আরিহান : আচ্ছা ঢাকায় গিয়ে এক ঝাঁক ফুল কিনে দিব ৷ গাছের চারাও কিনে দিব ৷ কিন্তু এখন না প্লিজ রাগ করো না ৷

কাশফিয়া : ঠিক আছে ৷

আরিহান : মন খারাপ করে থাকলে হয় বলো?

কাশফিয়া : এখন আমি কি জোর করে হাসবো? (রেগে)

আরিহান : আচ্ছা ঠিক আছে কিচ্ছু করতে হবে না ৷ খেয়ে নিবে চলো ৷

বলেই মাটিতে একটা মাদুড় বিছিয়ে দিলেন ৷ এখানে আসার জন্য পানি, খাবার সব সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন উনি ৷ তিন প্যাকেট বিরিয়ানি বের করলেন ৷ এক প্যাকেট ওই গাইডকে দিলেন ৷ উনি প্রথমে না করলেও পরে নিলেন ৷ আর দুই প্যাকেট থেকে আমাকে খাইয়ে দিলেন তারপর নিজেও খেয়ে নিলেন ৷

সবকিছু গুছিয়ে উঠে গেলেন ৷ বিকাল হয়ে গেছে তাই চলে যেতে হবে ৷ কিন্তু আমার নজর ওই কাঠগোলাপ গাছের দিকে ৷ আরিহান আমার হাত ধরে রেখেছেন ছাড়ছেনই না ৷ তাই যেতেও পারছি না সেখানে ৷ হঠাৎ করেই আরিহানের একটা কল এলো ৷ আর উনি সেটা রিসিভ করে কথা বলতে লাগলেন ৷ বাট আমার হাত ধরেই রেখেছেন ৷

তবুও আস্তে করে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে গাছটার দিকে এগিয়ে গেলাম ৷ কয়েকটা ডাল থেকে কয়েকটা ফুল ছিড়ে ওড়নার মধ্যে ছড়িয়ে রাখলাম ৷ ছোট থেকেই এই ফুল আমার অনেক পচ্ছন্দ ৷ যেখানে দেখি ছুটে চলে যাই যেমনটা আজও ৷ মাটিতেও কয়েকটা ফুল পরে আছে সেগুলোও তুলে নিলাম ৷ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পেছন ঘুরে সামনে এগিয়ে যেতে নিলেই পা স্লিপ কেটে গেলো ৷ মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,,,,,,

“আআআরিহাআআনননননন”

আরিহান কাশফিয়ার গলা শুনে পিছনে ঘুরে দেখলো কাশফিয়া পরে যাচ্ছে ৷ ওর দিকে দৌঁড়ে গিয়েও লাভ হলো না ৷ ততক্ষনে প্রায় পরেই গেছে ৷ সামনের দিকে হাত বাড়িয়ে জোরে “কাশফিয়া” বলে চিৎকার উঠলো ৷ ওর চিৎকার পুরো পাহাড় কেঁপে উঠলো ৷

নিচে পরে যাচ্ছি আর আমার উপরে পরছে ফুলগুলো ৷ চোখের কোন বেয়ে পানি পরছে ৷ হারিয়ে ফেলেছি আমি আমার আরিহানকে ৷ চিরতরে হারিয়ে ফেললাম ৷ হঠাৎ মাথায় ব্যথা অনুভব হলো ৷ ঝাপসা ঝাপসা চোখে শেষবারের মতো আরিহানকে দেখতে পেলাম ৷

আরিহান নিচে নামতে গেলে পাশে থাকা গাইডটা আটকে ধরলো ৷ ওই গাইডেরও নজরে ছিল না কাশফিয়াকে ৷ আরিহান মাটিতে পাথরের মতো বসে আছে ৷ আজ ওর একটু অসাবধানতার জন্য কাশফিয়া ওর থেকে দূরে চলে গেলো ৷ আরিহান এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে আর পাথরের মতো বসে আছে যেন অনুভূতিহীন একটা মানুষ!!

____________________

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here