The_Terrible_LoverLover part 28

#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__২৮

মেয়ে দুইটা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ওদের বাড়ির গেইট পেরিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো ৷ বাড়ির ভিতরের উঠানে একটা লোক বসে ছিল আর কাগজ কলম নিয়ে কিসব হিসাব নিকাশ করছিল ৷ মেয়ে দুইটা হাপাতে হাপাতে ওই লোকটার পেছন গিয়ে লুকালো ৷ লোকটা ওদের দিকে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,,,,,

— কি হয়েছে? এভাবে দৌঁড়ে এলি কেন? কেউ কি…

লোকটা আর কিছু বলার আগেই ওই বুড়ো লোকটা লাঠি নিয়ে বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বললো,,,,

— কই? মাইয়া দুইডা কই? আইজ একবার হাতে পাই ৷ না করার পরও কথা হোনে না ৷ কই দেহি বাইর হো ৷

বুড়ো লোকটা এসব বলে চিল্লাচিল্লি করতে লাগল ৷ তখন ওই লোকটার কানে ওদের মধ্যে থেকে একটা মেয়ে ফিসফিস করে বললো,,,,

— মামু এইবারের মতো বাঁচিয়ে দাও প্লিজ!!

লোকটা ওদের দিকে একবার তাকিয়ে বুড়ো লোকটার দিকে এগিয়ে গেল ৷ তারপর পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে বুড়ো লোকটার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,,,,,

— হয়েছে? শোধবোধ ৷ এখন আসতে পারেন ৷

বুড়োটা টাকাগুলোর দিকে একবার তাকিয়ে ভেংচি কেটে লোকটাকে বললো,,,,,,

— এটাই তো করতে পারেন ৷ মাইয়াগুলারে বাইঁধা রাখেন নাহলে পরে সমস্যায় পইরা যাইবেন ৷

— আপনাকে ওসব ভাবতে হবে না ৷ চলে যান এখান থেকে ৷

— যাইতাছি যাইতাছি হুহ!

বলেই বুড়ো লোকটা চলে গেল ৷ আর ওই লোকটা মেয়ে দুটোর সামনে এসে ওদের দুজনকে কোলে নিয়ে একটা চেয়ারে বসে বললো,,,,,

— তোমার আবার এরকম করেছো? বলেছিনা ওই গাছের আম ধরবে না ৷ খেতে ইচ্ছা হলে বলতে এনে দিতাম ৷ কিন্তু এটা একদম ভালো না ৷

মেয়ে দুইটা একবার একে অপরের দিকে তাকিয়ে দুজনেই একসাথে লোকটাকে বললো,,,”সরি মামু” ৷

দুজনেই তারপর মাথা নিচু করে চুপ করে থাকলো ৷ লোকটা ওদেরকে আবার বললো,,,,,,

— মাম্মা কষ্ট পাবে না বলো এসব শুনলে?

— মাম্মাকে একটু বুঝিয়ে বলো প্লিজ ৷

— আচ্ছা ঠিক আছে এখন আমার মামুনিরা একটু হাসো ৷ এভাবে থাকলে ভালো লাগে বলো?

পেছন থেকে একটা মহিলা হাতে দুইটা প্লেট নিয়ে ওদের কাছে এসে বললেন,,,,,

— আমার মামুনিদের আবার মন খারাপ হয়েছে? কে বকেছে? এসো আমার কাছে এসো ৷

ওরা চুপচাপ মহিলাটির কোলে উঠে বসলো ৷ মহিলাটি মুচকি হেসে বললো,,,,,

— আমার কেয়ামনি আর আরিয়ামনির মন কীভাবে ভালো করবো গো?

— আমাদের মন তো ভালো হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু মাম্মা এখনো ফিরে নি?

— না গো আরিয়া সোনা তোমার মাম্মা চলে আসবে এক্ষুনি ৷ নাও এখন খেয়ে নাও দুজনে ৷ মাম্মা এসে যদি দেখে খাওনি তবে খুব বকবে কিন্তু ৷

— না আমরা মাম্মা আসলে খাবো ৷ এভাবে ভালো লাগে না ৷

— আমার কেয়া মনিও দেখি তার মামিমনিকে একটুও ভালোবাসে না ৷

— অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি ৷ কিন্তু আজ মাম্মার হাতে খাবো ৷

বলেই কেয়া আর আরিয়া একে অপরের পেছন পেছন উঠানে দৌঁড়াতে লাগলো ৷ মহিলাটি লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,”এখন?”

— এখন আর কি? ওদের পিছনে ছুট লাগাও ৷ মেয়েটা কাজ থেকে ফিরবে আবার ওদের পেছন পেছন কাজ করলে হবে? একটু বিশ্রাম নিবে না? তুমি দুটোকে খাওয়াও ৷

— তুমিও বলো এক কথা ৷ আমি একা মানুষ দুটোকে সামলাবো কি করে? নাও একটা প্লেট নাও ৷

— আমিও?

— হ্যাঁ তুমিও ৷

বলে তারাও ওদের পিছে পিছে দৌঁড়াতে লাগলো ৷ প্লেট নিয়ে দুজন দুজনের পিছন পিছন সারা বাড়ি দৌঁড়াচ্ছে আর এটা ওটা বলে যাচ্ছে ৷ কিন্তু বাচ্চাগুলো থামছেই না ৷ হঠাৎ ওদের সামনে কেউ এসে পরলো ৷ ওরা দাঁড়িয়ে উপরে তাকালো ৷ তারপর “মাম্মা” বলে চিল্লিয়ে সামনের জনকে দুজনেই জড়িয়ে ধরলো ৷ সামনের মেয়েটাও ওদের সামনে বসে ওদেরকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,,,

— আমার বেবিরা আমাকে মিস করছিল? কিন্তু তোমরা এভাবে দৌঁড়াচ্ছো কেন? পরে যাবে তো নাকি? আর মামা মামিকে এতো কষ্ট দিচ্ছো কেন?

আরিয়া : মাম্মা আমরা তো কষ্ট দেই নি ৷ তারাই আমাদের পিছে পিছে ছুটছে ধরার জন্য ৷

— কেন ছুটছে কেন? কি করেছো তোমরা?

কেয়া : আমরা তো কিছুই করি নি ৷ শুধু বলেছি তোমার হাতে খাবো ৷

— কিইই? তোমরা এখনো খাও নি? এটা কি ঠিক? আমি বলেছি না আমি ফিরে যেন দেখি তোমরা খেয়ে ফেলেছো ৷ আর সেখানে না খেয়ে ছোটাছুটি করছো?

দুজনেই : সরি মাম্মা ৷

— আচ্ছা চলো ৷ ক্ষুধা লেগেছে না? চলো ৷

বলেই ওদেরকে কোলে করে নিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিল মেয়েটা ৷ তারপর প্লেট নিয়ে ওদেরকে খাওয়াতে খাওয়াতে বললো,,,,,

— তোমরা আবার আজ ওই বুড়োর কাছে গিয়েছিলে না?

আরিয়া আর কেয়া একে অপরের দিকে তাকিয়ে ওদের মামার দিকে তাকালো ৷ ওদের তাকানো দেখে ওদের মামা এসে বললো,,,,

— আরে থাক না ৷ বাচ্চা মানুষ ৷ বকিস না আর ৷

— কেন বকবো না? ভাইয়া তোমার জন্য মেয়ে দুটো এতো ছোটাছুটি করে ৷ ওদেরকে নিয়ে কতটা ভয় হয় জানো? বারবার না বলার পরও কেন যাবে? একটা কথাও শুনবে না ৷

— আহ ছাড় না ৷ ওই বুড়োটার সাথে দেখা হয়েছিল?

— হ্যাঁ কতটা অভদ্র ওই লোকটা জানোই তো ৷ অসহ্যকর ৷

— আচ্ছা বাদ দে সেসব ৷ মামুনিরা আর ওখানে যাবে না ঠিক আছে?

আরিয়া আর কেয়া মাথা দুলিয়ে “আচ্ছা” বললো ৷ খাওয়া শেষ করে মেয়েটা ওদেরকে রুমে পাঠিয়ে দিলো ৷ ও হাত ধুয়ে রুমে যাবে তখনি লোকটা বললো,,,,,

— কাশফিয়া শোন ৷

মেয়েটা দাঁড়িয়ে পিছনে ঘুরে বললো,,,,”হুম? বলো?”

— শহরে চাকরির জন্য অ্যাপ্লিকেশন দিয়েছি আমি ৷ দুই এক দিনের ভেতরেই হয়তো ইন্টারভিউয়ের জন্য আমাদের ঢাকা যেতে হবে ৷

— হুম যাও ৷ আমারও যেতে হবে?

— হ্যাঁ সবাই যাবো ৷ তোর তো ইচ্ছা তুই তোর মেয়েদের শহরে পড়াবি ৷ সেটাও হয়ে যাবে গেলে ৷ আর…

— আর?

— তোর পরিচয়টাও জানতে পারবি ৷

কথাটা শুনেই মেয়েটার মুখটা মলিন হয়ে গেল ৷ কোনো রকমে বললো,,,,,

— আচ্ছা দেখা যাবে ৷ আমি এখন যাই ৷

বলেই মেয়েটা রুমের ভেতর চলে গেলো ৷ আর লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজ করতে চলে গেলো৷

[ছোট্ট মেয়েদুইটার নাম হলো আরিয়া আর কেয়া ৷ আরিয়ার থেকে কেয়া একটু বেশিই চঞ্চল ৷ আর আরিয়া একটু ভিতু টাইপের তবুও চালাক আছে ৷ ওদের মাম্মার নাম কাশফিয়া ৷ (আলাদা করে ওর পরিচয় দেয়ার কিছুই নেই) যেই লোকটাকে ওরা মামু বলছিল তার নাম রাতুল ৷ কাশফিয়া ভাইয়া বলে ডাকে ৷ আর ওই মহিলাটার নাম লিজা ৷ কাশফিয়া ভাবি বলে ডাকে তাকে মাঝেমাঝে ৷ ওরা এখন যেই জায়গাটায় থাকে সেই জায়গাটার নাম হচ্ছে রূপনগর যেটা সিলেটে ৷ রূপনগর এলাকাটা অনেকটা গ্রাম্য তবে ততোটাও ব্যাকডেটেড নাহ ৷ কাশফিয়া এখানকার একটা স্কুলের টিচার আর রাতুলের একটা বড় কাপড়ের দোকান আছে ৷ মোটামুটি আর্থিক অবস্থা ভালোই ৷]

কাশফিয়াকে রাতুল তাদের এলাকায় একটা নদীর পাড়ে পেয়েছিল ৷ মাথায় বেশ আঘাত লেগেছিল ওর ৷ হাত পা অনেক জায়গায়ই ছুলে গিয়েছিল ৷ এভাবে একজনকে দেখে রাতুলের মাথা কাজ করছিল না ৷ পাশে থেকে লিজা (রাতুলের বউ) বললো ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করতে ৷
ওরা তাড়াতাড়ি করে ওকে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায় ৷ প্রায় এক মাস কাশফিয়া কোমায় ছিল ৷ তারপর আস্তে আস্তে উন্নতি হয় ওর ৷ কিন্তু ওর মাথার ক্ষতটা বেশ গভীর ছিল ৷ তাই জাক্তার বলেছিল যে এতোটা আঘাত আর চাপের ফলে জ্ঞান ফিরলে পেসেন্টের আগের জীবনের কথা মনে নাও থাকতে পারে ৷ হলোও তাই ৷ সেই থেকে ওরা ওকে নিজেদের কাছে রাখে ৷ খুব যত্ন করতে থাকে ৷
কাশফিয়া কিছু মনে করতে চাইলে ওর মাথায় পেইন উঠে যায় ৷ যেই যন্ত্রনা সহ্য করা যায় না ৷ মাঝে মাঝে ওর চোখের সামনে আবছা আবছা দৃশ্য ভেসে উঠে ৷ তবুও কিছু মনে করতে পারে না ৷ ও ওর নিজের পরিচয় জানে না ৷ ওর মেয়েদের জন্ম পরিচয়ও জানে না ৷ ও কোথায় থাকতো, কি করত সেটাও মনে নেই ওর ৷ রাতুল বলেছে শহরে নিয়ে যাবে ওকে ৷
কারণ যখন ওরা কাশফিয়াকে পেয়েছিল তখন ওর পোশাক আশাক দেখে কিছুটা হলেও শহুরে লেগেছিল ৷ ঢাকা শহরে গিয়ে একবার খোঁজ করলে তো দোষ নেই ৷ কিন্তু সেখানে গিয়ে থাকবে কই, খাবে কি, কাজ পাবে কই সেসব ভেবে আর যায় নি ৷ এখানে থেকেই অনলাইনে একটা জবের ব্যবস্থা করেছে ৷ শুধু মাত্র কনফার্ম হলেই হয় ওরা শহরে চলে যাবে ৷

★★★
হাতে একটা অফিসিয়াল ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে আরিহান ৷ তখনি ওর মা ওকে পিছন থেকে ডাকলো ৷ ও দাঁড়িয়ে পিছনে না ঘুরেই বললো,,,,,,

আরিহান : যা বলার কুইক বলো ৷

— বলছিলাম কি আসলে…

আরিহান : বলেছি না? সোজা ভাবে বলে ফেলো ৷ এতো ভনিতা করতে হবে না ৷

— বাবা রেগে যাচ্ছিস কেন বলছি তো ৷

আরিহান : হুম বলো ৷

— কতগুলো বছর কেটে গেলো ৷ কতবার বললাম একটা বিয়ে করে নি লে ই তো…

আরিহান রেগে পিছনে তাকালো ৷ ওর মা আস্তে আস্তে চুপ হয়ে গেলো ৷ আরিহান চিৎকার করে বললো,,,,,

আরিহান : বলেছি না? এই ‘বিয়ে’ কথাটা আমার সামনে উচ্চারণ করবে না ৷ আরেকবার বললে বাড়ি থেকে বের করে দিব ৷ আমাকে আমার মতো থাকতে দিন ৷

বলেই গটগট করে হেটে বাহিরে চলে গেলো ৷ আরিহানের মা আরিহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,,,,,

— এই ছেলেটার মাথায় ওই মেয়ে নামক ভুত চেপে বসে আছে ৷ এতোবার বলছি তবুও শুনছে না ৷ কি করেছে মেয়েটা আমার ছেলেটাকে ৷ উফ!

বলেই সে উপরে চলে গেলো ৷

__________

আরিহানের গাড়ি এসে ওর অফিসের সামনে থামলো ৷ ও গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখনি ওর চোখ পরলো অফিসের গেটের দিকে ৷ একটা মেয়ে আর একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে ৷ হেসে হেসে কথা বলছে দুজনে আর ছেলেটা মেয়েটাকে একটা কাগজের মধ্যে কি যেন দেখাচ্ছে ৷ আরিহান কিছুক্ষন ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ ওর মনে পরে গিয়েছে ওর কাশফুলের কথা ৷ চোখ সরিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ওই ছেলে মেয়ে দুটোর কাছে চলে গেলো ৷

ওদের কাছে গিয়ে বললো,,,,,

আরিহান : কি হচ্ছে এখানে? এটা অফিস ৷ আপনাদের প্রেম করার জায়গা না ৷ এখানে সবাই কাজের জন্য আসে ৷ যদি কাজ করতে না চান তো কাজ ছেড়ে দিন কিন্তু এভাবে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে হাসাহাসির কোনো মানেই হয় না ৷

দুজনেই মাথা নিচু করে বললো,,,,”সরি স্যার” ৷

আরিহান : হোয়াট সরি? জবটা করতে চাইলে এখনি ভিতরে গিয়ে কাজ করুন ৷ আপনাদের যেন অফিসে একসাথে না দেখি আমি ৷ আর না করতে চাইলে…

ছেলেটা : নো স্যার এই জবটা প্রয়োজন আমাদের ৷

আরিহান : So go inside and work properly.

দুজনেই : ok sir.

বলেই দুজনে মাথা নিচু করে ভেতরে চলে গেল ৷ আরিহান কিছুক্ষন ওখানে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল ৷ তারপর জোরে একটা শ্বাস নিয়ে ভিতরে চলে গেল ৷

★★★
কেয়া : মাম্মা?

কাশফিয়া : হুম বলো?

কেয়া : একটু বাহিরে যাই? শুধু একটু অল্প খেলেই চলে আসবো ৷

কাশফিয়া : না আজ বাহিরে যেতে হবে না ৷ বসে বসে লিখো আমি দেখবো ৷

কেয়া : প্লিজ মাম্মা প্লিজ ৷ যাই না ৷ এভাবে বাড়িতে বসে থাকতে ভালো লাগে না ৷ ওই আরিয়া চুপ করে আছিস কেন?

কাশফিয়া : ও কি বলবে? ও যাবে না বাহিরে তুমি একা গিয়ে কি করবে?

কেয়া মুখ ফুলিয়ে বসে থাকল ৷ পাশে থেকে আরিয়া বললো,,,,,

আরিয়া : মাম্মা আমরা শহরে কবে যাবো?

কাশফিয়া : কয়েকদিন পর সোনা ৷

আরিয়া : আমরা শহরে গিয়ে স্কুলে ভর্তি হবো না?

কাশফিয়া : হুম হবে তো ৷

আরিয়া : পাপার সঙ্গে দেখা করবো আমরা তাই না?

কাশফিয়া চুপ করে রইল ৷ পাশে থেকে কেয়া আরিয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বললো,,,,,

কেয়া : হ্যাঁ একদম ৷ মাম্মা আমরা পাপার কাছে যাবো তাই না? ইয়ে কি মজা!! কবে যাবো মাম্মা বলো না?

বলেই কেয়া কাশফিয়ার গলা জড়িয়ে ধরলো ৷ আর আরিয়া এসে কাশফিয়ার কোলে চুপ করে বসে রইল ৷ দুজনেই কাশফিয়ার দিকে চুপ করে তাকিয়ে আছে ৷ কিন্তু কাশফিয়া কিছুই বলছে না ৷ সেও চুপ ৷ কেয়া বললো,,,,,

কেয়া : বলো না মাম্মা বলো না!!

কাশফিয়া : তোমরা বাহিরে যেতে চেয়েছিলে না? যাও ঘুরে এসো ৷ বেশি দূর যাবে না ৷ কাছাকাছিই থাকবে ঠিক আছে?

কেয়া : কিন্তু মাম্মা…

আরিয়া : আচ্ছা মাম্মা তুমি চিন্তা করো না ৷ কেয়া চল ৷

কাশফিয়া ওদের দুজনের কপালে চুমু দিয়ে বললো,,,,

কাশফিয়া : যাও তাড়াতাড়ি আসবে ৷ হাত ছেড়ো না আবার ৷

ওরা দুজন মাথা দুলিয়ে হাত ধরে বাহিরে চলে গেল ৷ কাশফিয়া ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল কিছুক্ষন ৷ তারপর চোখ খুলে ওর গলার চেইনটা হাতে নিল ৷ এটা সেই চেইনটাই যেটা ছয় বছর আগে সিলেটের হোটেলেই আরিহান ওকে পরিয়ে দিয়েছিল ৷ চেইনটার লকেটের ভিতর কাশফিয়ার ছবি আর নাম দেখে ও বুঝতে পেরেছিল ওর নাম কাশফিয়া ৷ কিন্তু আরিহানের ছবিটা ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ৷ তাই চাইলেও দেখতে পারে নি ও ৷ শুধু এটাই জানে যে ওর নাম কাশফিয়া ৷

লকেটটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে নিল ৷ তারপর নিজের কাজে মন দিল ৷ তখনি লিজা ঘরের ভিতর ঢুকতে ঢুকতে বললো,,,,,,

লিজা : আপু কেয়া আর আরিয়াকে বাহিরে যেতে দেখলাম ৷

কাশফিয়া : হুম আমিই বলেছি ৷

লিজা : ওহ ভাবলাম না বলে চলে গিয়েছে তাই বলতে এলাম ৷ তো কি করছো?

বিছানায় বসতে বসতে বললো ৷

কাশফিয়া : এই তো স্কুলের কয়েকটা ফর্ম ফিলাপ করছিলাম ৷ কিছু বলবে?

লিজা : হু ৷

কাশফিয়া : বলো না!

লিজা : ঢাকা থেকে তোমার ভাইয়াকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডেকেছে ৷

কাশফিয়া : সেটা তো ভালো কথা ৷ কবে?

লিজা : পরশু যেতে বলেছে ৷ তুমি স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দাও ৷ তোমার ভাইয়া অনলাইনে কেয়া আর আরিয়ার স্কুলের এডমিশানটা দেখছে ৷

কাশফিয়া : চাকরিটা ছেড়ে দিব? যদি কোনো সমস্যা হয়?

লিজা : কিছু হবে না ৷ ওখানে গিয়ে নাহয় কোনো চাকরির জন্য দরখাস্ত করো কোনো স্কুল বা অফিসে ৷

কাশফিয়া : তোমরা যাও আমি নাহয় থেকে যাই ৷

লিজা : কেয়া আর আরিয়ার জন্য দরকার তোমাকে আর তুমি তো নিজের পরিচয় জানার জন্যই শহরে যাচ্ছো ৷ এতদিনে তো অনেকটা সুস্থ হয়ে গিয়েছো না? আর তোমার ভাইয়া বলেছে সবাইকে নিয়েই সে যাবে ৷

কাশফিয়া : আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে ৷ যাবো আমরা ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

(আগামীকাল গল্প দিতে পারি আবার না ও দিতে পারি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here