#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__২৯
গাছপালা, পশুপাখি, মাঠঘাট, নদীনালা, আকাশ, পাহাড়, এমনকি মানুষদেরও ছবি তুলে ক্যামেরাতে বন্দি করছে নিধি ৷ আজ সকালেই রূপনগর এসেছে নিধি ৷ ফোটোগ্রাফির জন্য ৷ সিলেট শহরের এই জায়গাটা রূপের দিক দিয়ে অসম্ভব সুন্দর ৷ তাই তো এই জায়গাটার নাম রাখা হয়েছে রূপনগর ৷ নিধি ক্যামেরা দিয়ে আশেপাশে সবকিছুর ছবি তুলছে ৷ তখনি ক্যামেরা দিয়ে ওর চোখ যায় দুটো বাচ্চা মেয়ের দিকে ৷
ক্যামেরাটা সরিয়ে খালি চোখে সেদিকে তাকালো ৷ পরীর মতো সুন্দর দুটো বাচ্চা মেয়ে ৷ খেলছে আর খিলখিল করে হাসছে ৷ নিধি একটু হেসে ক্যামেরা দিয়ে ওদের এই মূহুর্তের সুন্দর একটা ছোট্ট ছবি তুলে নিল ৷ তারপর ওদের দিকে এগিয়ে গেল ৷ মেয়ে দুইটা ছিল কেয়া আর আরিয়া ৷
নিধি ওদের কাছে গিয়ে ওদের সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে পরলো ৷ ওরা দুজন নিধির দিকে তাকালো ৷ ওদের সাথে আরো দুইটা মেয়ে ছিল ওরাও তাকালো ৷ নিধি কেয়া আর আরিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,
নিধি : খেলছো তোমরা? কি খেলছো?
ওরা দুজন একবার একে অপরের দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো ৷ ওদের অবস্থা বুঝতে পেরে নিধি আবার বললো,,,,,,
নিধি : ভয় পেও না ৷ কিছু করবো না আমি ৷ আমি ঘুরতে এসেছি এখানে ৷ নাম কি তোমাদের?
এবার আরিয়া কেয়ার কানে ফিসফিস করে বললো,,,,
আরিয়া : বলিস না কিছু ৷ মাম্মা বলে দিয়েছে অচেনা কাউকে কিছু বলতে না ৷ বললেই ধরে নিয়ে যাবে ৷
কেয়াও ফিসফিস করে আরিয়ার কানে কানে বললো,,,
কেয়া : গাঁধা একটা ৷ ধরে নিবে কীভাবে হুম? চিৎকার করবো বুঝলি?
আরিয়া : কিছু বলিস না তাও ৷
কেয়া : ভীতুর ডিম একটা ৷
আরিয়া মুখ ফুলিয়ে বসে রইল ৷ নিধি ওদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,,,,
নিধি : কি গুজুরগুজুর ফুসুরফুসুর হচ্ছে শুনি? আমি কিন্তু তোমাদেরকে ধরে নিতে আসি নি ৷ তোমরা বিশ্বাস করতো পারো আমাদের ৷
কেয়া : সরি আন্টি মাম্মা বলেছে অচেনা কারো সাথে কথা বলতে না আমাদের ৷ আমি কেয়া আর ও আরিয়া৷
নিধি : দুই বোন তোমরা না?
দুজনেই মাথা ঝাকালো ৷ সেটা দেখে নিধি একটু মুচকি হেসে আশেপাশে তাকালো ৷ তারপর ওদের দুজনকেই বললো,,,,,,
নিধি : আইসক্রিম খাবে?
ওরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার চুপ করে রইল ৷
নিধি : আমি এখানকার প্রকৃতির ছবি তুলতে এসেছি বুঝেছো?
কেয়া : কিসের জন্য?
নিধি : ফোটোগ্রাফির জন্য ৷
আরিয়া : ফোটোগেরাফি কি?
নিধি : ফোটোগেরাফি না সোনা ফোটোগ্রাফি ৷ বড় হও বুঝবা ৷ বা তোমাদের মাম্মাকে জিজ্ঞেস করো বলে দিবে ৷ এখন আইসক্রিম খাবে আন্টির সাথে?
কেয়া : আন্টি মাম্মা জানলে খুব বকবে ৷
নিধি : আমি বলে দিব একদম বকবে না ৷ খাবে সোনা?
ওরা আবার চুপ করে রইল ৷ ওদেরকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে খাবে ওরা ৷ কিন্তু ভয়ে কিছু বলছে না ৷ চুপ করে আছে ৷ নিধি পাশের একটা দোকান থেকে পাঁচটা মালাই আইসক্রিম নিয়ে আসলো ৷ ওদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে দিয়ে নিধি একটা হাতে নিয়ে ওদের পাশে বসলো ৷ নিধি ওরটা খেতে খেতে বললো,,,,,
নিধি : এই দেখো আমি খাচ্ছি ৷ এখন চটপট তোমরাও খেয়ে ফেলো তো ৷
কি আর করার!! ওরাও খেয়ে নিল ৷ খাওয়া শেষে আরিয়া নিধিকে বললো,,,,,
আরিয়া : আন্টি তুমি না অনেক ভালো আন্টি ৷ চলো না আমাদের সাথে ৷
নিধি : কোথায় যাবো?
আরিয়া : আমাদের বাড়িতে ৷ চলো না আন্টি চলো না ৷
বলেই ও টানতে লাগল নিধিকে ৷
নিধি : আরে আরে কি করছো? টানছো কেন?
কেয়া : হুম ও ঠিক বলেছে ৷ চলো না আমাদের বাড়িতে৷
নিধি : এখন গেলে সবাই কি ভাববে বলো?
কেয়া : তাহলে কবে যাবে?
নিধি : অন্য একদিন যাবো তবে আজ না আমাকে তো আজ ফিরতে হবে ৷
আরিয়া : সত্যি আসবে?
নিধি : হুম আসবো ৷ তোমরা বাড়িতে যাও ৷ সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে তো নাকি? এখন বাহিরে থাকা উচিত না ৷ যাও বাড়ি চলে যাও ৷
কেয়ার আর আরিয়া দুজনেই নিধিকে জড়িয়ে ধরে ওর দু গালে চুমু খেলো ৷ তারপর দৌঁড়িয়ে চলে গেলো ৷ নিধি ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজে নিজেই বললো,,,,,
নিধি : খুব ভালো বাচ্চা দুটো ৷ মূহুর্তেই আমার সঙ্গে মিশে গেল ৷ না চাইতেও পুরোনো এক অনুভূতি হচ্ছে ৷ এতদিন পর আজ আবার কাশফিয়ার কথা মনে পরছে ৷ ও কি আশেপাশে কোথাও আছে? ধুর সবটাই ভুল ৷ এসব ভেবে আর দেরি করলে চলবেনা ৷ ফিরতে হবে নাহলে রাত হয়ে যাবে ফিরতে ফিরতে ৷
বলেই উল্টো দিকে হাঁটা ধরলো নিধি ৷
★★★
কেয়া আর আরিয়া দৌঁড়ে এসে কাশফিয়ার কোলের উপর উঠে গেল ৷ কাশফিয়া ওদের দিকে একবার তাকিয়ে দুজনকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললো,,,,,
কাশফিয়া : আমার মা দুটোর খেলা তাহলে শেষ হয়েছে?
আরিয়া : হুম ৷ মাম্মা জানো আজ একটা আন্টির সঙ্গে কথা বলেছি অনেক ভালো সে ৷
কাশফিয়া : তাই নাকি কি নাম তার?
আরিয়া : নাম তো জানা হয় নি ৷
কাশফিয়া : আবার অপরিচিতদের সাথে কথা বলেছো তোমরা?
কেয়া : মাম্মা ওই আন্টিটা অনেক ভালো ৷ অপরিচিত তাতে কি? আমাদের তো ধরে নিয়ে যায় নি মাম্মা ৷
কাশফিয়া : তবুও অচেনা কারো সঙ্গে কথা বলা উচিত হয় নি তোমাদের ৷
আরিয়া : মাম্মা আন্টিটা অনেক ভালো ৷ আমাদের
আ ই স…
কেয়ার চোখ রাঙানোতে চুপ করে থাকলো আরিয়া ৷ কাশফিয়া ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,
কাশফিয়া : আইস? আইস কি? বলো?
কেয়া : না মাম্মা কিছু না ৷ ও সব আবোল তাবোল কথা বলছে ৷
কাশফিয়া : আরিয়া কি হয়েছে বলো নাহলে পরশু তোমাদের ঢাকায় নিয়ে যাবো না ৷
আরিয়া : আমরা ঢাকায় যাবো?
কাশফিয়া : হুম কিন্তু তুমি না বললে আর যাবো না ৷
আরিয়া চুপ করে বসে রইলো ৷ কেয়া বললো,,,,,
কেয়া : সরি মাম্মা আসলে ওই আন্টিটা আইসক্রিম খাইয়েছে আমাদের ৷ প্লিজ বকো না ৷
কাশফিয়া : সব সময় এরকম করো কেন বলো তো? না করার পরও ৷
আরিয়া : সরি মাম্মা আর কখনো খাবো না ৷ ঢাকায় নিয়ে যাবে প্লিজ?
কাশফিয়া : না তোমাদের কাউকেই নিয়ে যাবো না আমি ৷
বলেই কাশফিয়া ওদেরকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল ৷ কেয়া আর আরিয়া দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে এগিয়ে গেল কাশফিয়ার কাছে ৷ কেয়া পেছন দিয়ে আর আরিয়া সামনে দিয়ে কাশফিয়াকে জড়িয়ে ধরলো ৷ তারপর কেয়া কাশফিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,,,,,,,
কেয়া : সরি মাম্মা প্লিজ রাগ করো না ৷
আরিয়া কাশফিয়ার গালে একটা চুমু দিয়ে বললো,,,,
আরিয়া : মাম্মা আর খাবো না আমরা প্রমিজ ৷
কাশফিয়া : পাক্কা প্রমিজ?
দুজনেই : পাক্কা প্রমিজ ৷
কাশফিয়া ওদের কথা শুনে হেসে দিলো ৷মায়ের হাসি দেখে মেয়েরাও হাসি দিলো ৷ দুটো প্রাণকে বুকে জড়িয়ে নিলো কাশফিয়া ৷ এই দুটো প্রাণের জন্যই তো মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছে ও ৷ আর এখনো বেঁচে আছে ওদের মুখটুকু দেখে ৷
★★★
রাত ০৯ টা বাজে আরিহান নিজের রুমে বসে বসে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে ৷ সেই সময়েই ওর রুমে নিধি আসলো ৷ রাতের বেলা হঠাৎ এভাবে নিধিকে দেখে অবাক হয়ে গেল আরিহান ৷ নিধি দরজা নক করে বললো,,,,,
নিধি : আসবো ভাইয়া?
আরিহান : হুম আসো আসো ৷
নিধি ভিতরে গিয়ে আরিহানের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসলো ৷ আরিহান ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো,,,,,,,
আরিহান : কিছু মনে করো না নিধি ৷ রাতের বেলা হঠাৎ এখানে? কোনো সমস্যা কি?
নিধি : আসলে ভাইয়া একটা হেল্প নিতে এসেছি ৷ অবশ্য হেল্পটা অনেকটা হাস্যকর তবুও…
আরিহান : হুম বলো কি?
নিধি : ভাইয়া আপনি তো জানেনই ফোটোগ্রাফি কনটেস্টে নাম দিয়েছি আমি ৷ আজকেই লাস্ট ডেট ৷ পরশুর মধ্যে জমা দিতে হবে ৷ এর মাঝে আরো কাজ আছে আমার ৷ তাই রাতের বেলাই আসতে হলো আমাকে ৷ জাস্ট জেনে নিয়েই চলে যাবো ৷
আরিহান : কি জানবে?
নিধি : ভাইয়া আপনার চয়েস অনেক ভালো ৷ বলছিলাম কি আমার ক্যামেরা থেকে বেস্ট পিক গুলো যদি একটু সিলেক্ট করে দিতেন ৷
আরিহান : ওহ এই কথা? দাও তাহলে ৷
নিধি ওর ক্যামেরাটা আরিহানকে দিলো ৷ একের পর একটা ছবি দেখে ভালো ছবি গুলো নিধিকে দেখিয়ে দিলো ৷ কিন্তু লাস্টের ছবি তে গিয়ে ওর চোখ আটকে গেল ৷ দুটো বাচ্চা মেয়ে খেলছে আর হাসছে ৷ কতটা সুন্দর লাগছে সেটা ভাষায় বোঝানো যাবে না ৷ আরিহান কিছুক্ষন ছবিটার দিকে তাকিয়ে থেকে নিধিকে বললো,,,,
আরিহান : এই বাচ্চা মেয়েগুলো?
নিধি : ওহ ভাইয়া ৷ এই মেয়ে দুটো না অনেক ভালো আর কিউট ৷
আরিহান : ওদের নাম কি জানো?
নিধি : উম…হুম কেয়া আর আরিয়া দুই বোন ওরা ৷
আরিহান : জায়গাটার নাম কি?
নিধি : রূপনগর সিলেট ৷
সিলেটের নাম শুনে ওর বুক কেঁপে উঠলো ৷ সিলেটেই তো হারিয়েছে ও ওর কাশফুলকে ৷ এই সিলেট শহর টাকেই ওর কাছে এখন বিষাক্ত লাগে ৷ মনে পরে যায় ছয় বছর আগের কথা ৷ নিধি আরিহানের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কথা ঘুরিয়ে বললো,,,,,
নিধি : ভাইয়া? আমাকে তো যেতে হবে আবার ৷ ক্যামেরাটা?
আরিহান : হুম নাও । আমার একটা কাজ করে দিতে পারবে?
নিধি : কি কাজ?
আরিহান : এই বাচ্চা মেয়ে দুটোর ছবিটা নামিয়ে কাল সকালে দিয়ে যেতে পারবে?
নিধি : কেন ভাইয়া?
আরিহান : আমি নিজেও জানিনা । একটু দিয়ে যেও প্লিজ ।
নিধি : আচ্ছা ঠিক আছে ।
আরিহান : হুম সাবধানে যেও আর কাল মনে করে নিয়ে এসো ।
নিধি : আচ্ছা আজ আসি ।
বলেই নিধি ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল । আর আরিহান বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইল । তারপর নিজে নিজেই বিরবির করে বলতে লাগল,,,,,,,
আরিহান : কে ওই মেয়ে দুইটা? কেন এতো আপন লাগছে আমার? কেন এরকম লাগছে? কেন যেতে ইচ্ছা করছে ওখানে? ওই জায়গাটার জন্যই তো আজ আমি একা । সেই জায়গায় আমি আবার যাবো কেন? ওই বাচ্চা দুটোর জন্য? কিন্তু কেন? বুঝতে পারছি না কিছু । অস্থির লাগছে নিজেকে ।
কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বলতে লাগল,,,,,,,
আরিহান : কেন এভাবে কষ্ট দিচ্ছো আমাকে কাশফুল? আমি কখনো তোমাকে কষ্ট দিয়েছি বলো? হ্যাঁ দিয়েছি তাইতো তুমিও আমাকে কষ্ট দিচ্ছো । আমি কি এতোটাই খারাপ? হুম অনেক খারাপ খুব খারাপ । তুমি হয়তো ভালো আছো কিন্তু আমি ভালো নেই । তোমাকে ছাড়া যে আর কাউকেই নিজের করে নিতে পারবো না । চাইলেও না । কখনোই না ।
নিজের চোখ মুছে রুমের ভিতরে চলে গেল আরিহান । কাশফিয়ার ছবি ওর শূন্য বুকে জড়িয়ে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো । ও জানে ওর ঘুম আসবে না কিন্তু চেষ্টা করতে হবে ওকে । শক্ত হতে হবে । ছেলেদেরকে যে এটুকুতেই ভেঙ্গে পরতে হয় না । নিজের কষ্টটা বাহিরের কাউকেই দেখাতে হয় না । ওর নিজের কষ্টের কথা ভাবলে ওর নিজেরই রাগ হয়, কষ্ট হয়, অভিমান হয়, হাসি পায় । এতোটাই কষ্ট হয় ওর মাঝেমাঝে নিজের কষ্টের কথা ভাবলে নিজেই হেসে দেয় যার সাথে চোখের পানি ফ্রি ।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,