#Your_love_is_my_Addiction
#Season_2
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_৮
.
অন্ধকারে চারিপাশ নিস্তব্ধ। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে একধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ইচ্ছে। সে বুঝতে পারছে না সে যা করতে চাইছে তা করা আদৌও ঠিক হবে কি-না। আয়াশ তাকে ভালোবাসে। আর কারও ভালোবাসার অনুভূতি নিয়ে খেলা ঠিক নয়, ইচ্ছে জানে এটা। কিন্তু ভুল তো আয়াশও করেছে। তাহলে আয়াশেরও তো শাস্তি পাওয়া উচিৎ। ইচ্ছে প্রচন্ড নার্ভাস ফিল করছে। শোভনের দেওয়া ফোনটা সে তার বালিশের নিচ বরাবর তোশকের নিচে লুকিয়ে রেখেছে।
আয়াশ যদি কখনো জানতে পারে যে ইচ্ছে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাইছে বা বিশ্বাসঘাতকতা করছে তাহলে সে ইচ্ছেকে ছাড়বে না। কারণ আয়াশ বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করতে পারে না। ইচ্ছে বড় বড় করে দু-তিনটে শ্বাস ফেলে বেলকনি থেকে রুমে এলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নিলো। রাত ১ টা ১৪ বাজে। ইচ্ছের হঠাৎ মনে হলো আয়াশের রুমে গিয়ে একবার দেখে আসা উচিৎ সে কী করছে। যেই ভাবা সেই কাজ।
আয়াশের রুমের সামনে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। বাইরে থেকেই ভেতরে উঁকি দিল ইচ্ছে। প্রায় সাথে সাথেই একটা হাত ওকে টেনে ভেতরে নিয়ে গেল। ভয় পেয়ে গেল ইচ্ছে। সে হাত জোড়ার মালিক তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে রেখেছে। ভীত চোখে সামনে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে ইচ্ছে যে এই হাত জোড়ার মালিক কে? এই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝেও বাইরে থাকা ল্যাম্পপোস্টের মৃদু আলোয় কিছু কিছু দেখা যাচ্ছে। ইচ্ছে এক ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলো,
-“কক..কে আপনি?”
হাত জোড়ার মালিক কোনো কথা বললো না। ইচ্ছে অনুভব করলো তার মুখের উপর কারও গরম নিঃশ্বাস পড়ছে। একটা আঙুল তার ঠোঁট ছুঁয়ে দিচ্ছে। সেই ব্যক্তি হাত দিয়ে ইচ্ছের কপাল হতে চুলগুলো সরিয়ে কানের পেছনে গুঁজে দিল। ইচ্ছে চেষ্টা করলো সেই ব্যক্তিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার, কিন্তু পারলো না। সে চিৎকার দিতে যাবে এমন সময় কানের কাছে পরিচিত এক কণ্ঠস্বর শুনে চুপ হয়ে গেল ইচ্ছে। তার মাথায় এতক্ষণ এটা আসে নি যে আয়াশের বাড়িতে আয়াশ ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষ তাকে ছোঁয়ার চেষ্টা তো দূরে থাক, এই কথা কল্পনা করলেও ওই লোককে মরতে হবে। তার মানে নিঃসন্দেহে এই ব্যক্তিটি আয়াশ। মৃদু কণ্ঠ শুনে চোখ বুঁজে ফেললো ইচ্ছে।
-“এই এত রাতে একটা ছেলের ঘরের উঁকি দেওয়া কোনো ভদ্র মেয়ের লক্ষ্মণ হতে পারে না। কী করছিলে তুমি এখানে এই সময়ে?”
-“আ..আমি তো….”
-“তুমি তো?”
-“আমি তো এমনিই মানে আপনাকে…. আই মিন আমার ঘুম আসছিল না তাই এসেছিলাম।”
-“ওহ মাই গুডনেস! তোমার ঘুম আসছিল না বলে যাকে তুমি ঘৃণা করো তুমি তার কাছে এসেছিলে?”
-“মুহিব আজ বাড়িতে নেই। লিজাও ঘুমিয়ে গেছে। এছাড়া এই বাড়িতে আর কাউকে আমি চিনি না। এক আপনিই আছেন যিনি কি-না রাত জাগেন। তাই আপনার কাছেই এসেছিলাম।”
-“স্বপ্ন দেখছি না তো আমি!”
-“ঠিক আছে আপনার বিশ্বাস না হলে আপনি থাকুন আমি যাই।”
ইচ্ছে চলে যেতে গেলে তার পাশের দেয়ালে হাত রেখে তাকে আটকে দিল আয়াশ। ইচ্ছে এই অন্ধকারে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু ও বুঝতে পারলো ও এখন আয়াশের দু’হাতের মাঝে বন্দী। আয়াশ এই আঁধারের মাঝে তার ইচ্ছেময়ীকে দেখতে না পেলেও স্পষ্ট কল্পনা করে নিচ্ছে তাকে। আয়াশ আরও এগিয়ে এসে ইচ্ছের শরীরের সাথে একদম মিশে দাঁড়ালো। ইচ্ছের হাত দু’টো আয়াশের বুকের মাঝে আটকে আছে। বুকের ভেতরটা ভীষণ কাঁপছে তার। মৃদু কণ্ঠে আয়াশ জিজ্ঞেস করলো,
-“কাঁপছো কেন?”
-“আপ..আ..আপনি একটু সরে দাঁড়ান।”
-“কেন?”
-“অস্বস্তি হচ্ছে আমার।”
-“কেন?”
-“জানি না। প্লিজ সরে দাঁড়ান আয়াশ।”
কেঁপে উঠলো আয়াশ। ইচ্ছের মুখে এই প্রথমবার নিজের নাম শুনে অবাক হওয়ার পাশাপাশি একটা ঘোরের মাঝে চলে গেল সে। ইচ্ছের মুখে তার নামটা ভীষণ নেশাযুক্ত লাগছে। আয়াশ একহাত ইচ্ছের গালে রেখে বললো,
-“কী বললে?”
-“এক..একটু সরে দাঁড়ান।”
-“উঁহু এটা না। আমার নাম ধরে ডাকো তো আরেকবার।”
-“(….)”
-“কী হলো ডাকো!”
-“আ..আয়াশ।”
মূহুর্তেই এক শীতল স্রোত বয়ে গেল আয়াশের সারা শরীরের। ইচ্ছে বারবার চেষ্টা করছে আয়াশকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার, কিন্তু পারছে না। আয়াশ ঠোঁট কামড়ে হাসলো। বললো,
-“এখন এই মুহূর্তে আমি যদি তোমায় চুমু খাই তবে তোমার কোনো আপত্তি আছে?”
আঁতকে উঠলো ইচ্ছে। আবারও চুমু! এই লোকের চুমু খুবই ভয়ানক। একবার তার ঠোঁট আঁকড়ে ধরলে আর ছাড়তে চায় না। ইচ্ছে এবার নিজের সর্বশক্তি দিয়ে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে আয়াশ হেসে বললো,
-“স্যরি সুইটহার্ট। আই কান্ট লেট ইউ গো উইদাউট কিসিং ইউ।”
-“দে..দেখুন এটা ঠিক না।”
-“এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন অ্যান্ড ওয়ার সুইটহার্ট।”
-“আমি….”
ইচ্ছের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে আয়াশ মৃদুস্বরে বললো,
-“নো মোর ওয়ার্ড। জাস্ট ফিল দ্যা মোমেন্ট সুইটহার্ট।”
ইচ্ছে চুপ হয়ে গেল। আয়াশ তার কাছে আসতে চাইলে বা কাছে আসলে সে কোনোভাবেই আয়াশকে বাঁধা দিতে পারে না। কেন পারে না সে কথা জানা নেই তার। তাছাড়া আয়াশকে বাঁধা দিলেও আয়াশ মানবে না। আয়াশ যা চায় তা এমনি এমনি না পেলে জোর করে হলেও তা আদায় করে নিতে জানে। প্রথমে ইচ্ছের ঠোঁটে আলতো চুমু খেলো আয়াশ। ঠোঁট দু’টো ভীষণভাবে কাঁপছে ইচ্ছের। মৃদু হেসে ঘোর লাগা গলায় ফিসফিস করে আয়াশ বললো,
-“ইউ আর মোর ইনটক্সিকেটেড দ্যান অ্যালকোহল। আই অ্যাম গেটিং অ্যাডিক্টেড টু ইয়্যর লাভ ডে বায় ডে। ইয়্যর লাভ ইজ মাই অ্যাডিকশন সুইটহার্ট।”
কথাগুলো বলেই নিজের ঠোঁট দ্বারা আঁকড়ে ধরলো ইচ্ছের ঠোঁটজোড়া। প্রথম কিছু মুহূর্ত বিরক্তবোধ করলেও কিছু সময় পর ইচ্ছে নিজেও আয়াশের পিঠে হাত রেখে আয়াশের চুমুতে সাড়া দিল। প্রচন্ড অবাক হলো আয়াশ। চোখ মেলে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ দু’টো চেপে বন্ধ করে তাকে চুমু খাচ্ছে ইচ্ছে। মনে মনে হাসলো আয়াশ। সে বুঝতে পারলো ইচ্ছে মুখে যতই তাকে ঘৃণা করি বলুক না কেন আসলে ইচ্ছের মনের কোনো এক কোণে এখনো তার জন্য সুপ্ত অনুভূতিগুলো রয়ে গেছে। এক সময় তাকে পছন্দ করতো বলে কথা। এবার আয়াশ ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরে আরও গভীরভাবে তাকে চুমু খেতে লাগলো।
ঘড়ির কাটায় রাত তিনটা পয়ত্রিশ বাজে। বিছানায় শুয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়াশ তার বুকে শুয়ে থাকা এক রমনীর দিকে। এই রমনী আর কেউ নয়, আয়াশের ইচ্ছেময়ী। এখনো আয়াশের মুখে লেগে রয়েছে এক মুচকি হাসি। ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করেই নিঃশব্দে জোরে হেসে ফেললো সে। মনে পড়ে গেল একটু আগের ঘটনা। এত নিবিড়ভাবে চুমু খাওয়ার মাঝে এই প্রথম কাউকে ঘুমিয়ে যেতে দেখলো আয়াশ। যখন তারা একে অপরের সাথে চুমু খাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছিল তখন হঠাৎ ইচ্ছের কোনো সাড়া না পেয়ে আয়াশ চোখ মেলে ইচ্ছের ঠোঁট ছেড়ে দেখে ঘুমে বিভোর হয়ে গেছে ইচ্ছে। তখন বিস্মিত হয়ে তাকিয়েছিল সে ইচ্ছের দিকে। তার যেন বিশ্বাস হতে চাইছিল না বিষয়টা। অতঃপর ঘুমের ভেতরেও ইচ্ছের ঠোঁট নাড়ানো দেখে হেসে ফেললো সে। ইচ্ছেকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের বুকের মাঝে ইচ্ছের মাথা রেখে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো আয়াশ।
সকালে ঘুম ভাঙতেই নিজেকে আয়াশের বুকের মাঝে আবিষ্কার করলো ইচ্ছে। গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে আয়াশ। বুঝা যাচ্ছে আজ তার বেশ ভালো ঘুম হচ্ছে। এটার ক্রেডিট অবশ্যই ইচ্ছের। স্মিত হাসলো ইচ্ছে। এই হাসি ভালো লাগা বা ভালোবাসার নয়, এই হাসি কারও পিঠ পিছে তাকে ছুরি মারার জন্য। যেমনটা ইচ্ছে করতে চলেছে আয়াশের সাথে। গতরাতে ইচ্ছে এমনি এমনি আয়াশকে নিজের কাছে আসতে দেয় নি। সে নিজের প্ল্যানকে কাজে লাগানো শুরু করে দিয়েছে। আয়াশকে ধ্বংস করার খেলায় নেমে গেছে সে। এভাবেই একটু একটু করে আয়াশের খুব কাছের অর্থাৎ প্রিয় মানুষ হয়ে, তাকে নিজের ভালোবাসার জালে জড়িয়ে যখন আয়াশ ইচ্ছেকে একেবারে নিজের কাছে টানবে ঠিক তখনি সেই জাল কেটে দিবে ইচ্ছে। আর মুখ থুবড়ে পড়বে আয়াশ। সেই মুহূর্তেই আয়াশকে ধ্বংস করা খুব সহজ হবে। আয়াশের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো ইচ্ছে। আয়াশের উম্মুক্ত বুকে চুমু দিয়ে মনে মনে সে বললো, “দ্যা গেম ইজ অন মিস্টার আয়াশ খান।”
চলবে….
নোটঃ অসুস্থতার কারণে আজ একটু বেশিই ছোট করে দিলাম স্যরি।