অজানা তুমি পর্ব ১১+১২

#অজানা_তুমি
#রুবাইতা_রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -11

ফ্লোরে হাটু গুঁজে বসে আছি আর নিজের চুল এক হাত দিয়ে ধরে টানছি।এতোক্ষন খোলার চেষ্টা করতে করতে হাপিয়ে উঠেছি।এখন কি করবো?ভেবে পাচ্ছি না।চিন্তা করতে করতে মাথা ব্যাথায় টনটন করছে।আরে এগুলো লাগাবে কে?আমি তো লাগাইনি!তাহলে?আচ্ছা ১মিনিট!সকালের দিকে ওই ব্রিটিশটা (আয়রান) আর তার পিএ কে আমি আমার বেডরুমে এই বেলকোনি আর উইন্ডোর কাছে দাঁড়ানো দেখেছি। তাহলে কি ওরাই?ভেবেই ক্ষোভে মাথার রগ ফুলে উঠলো।দ্রুত উঠে ফোনটাকে থাবা দিয়ে নিলাম।কল লিস্ট চেক করে ওই ব্রিটিশের নম্বরটা পেয়ে গেলাম।চটপট ফোন দিলাম।রিংগিং হচ্ছে।রিসিভ হয়ে গেলো অপাশ থেকে বলে উঠলো
-“”হেই’ নুরিপাথর একটু আগেই না কথা বললাম আমরা?খুব মিস করছিলে বুঝি??”””

এই ঢংয়ের কথা শুনে মেজাজ এগারো আসমানে উঠে গেছে।আমি রেগে চিৎকার করে বললাম

-“””ঢং করছেন আমার সাথে??হ্যা ঢং??আমার রুমের সবগুলো গ্লাস লাগিয়ে দিয়ে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছেন??যেনো কিছুই হয় নি??আপনার এতো সাহস কই থেকে আসে??মাত্র দুইদিনের পরিচয়ে মাথায় উঠে গেছেন??কেনো লক করেছেন বলুন??আরে লক দূরে থাক আগে বলুন আমার পারমিশন ছাড়া কেনো আমার বেডরুমে ঢুকেছিলেন?

-“””সাট আপ!””জাস্ট সাট আপ!গলা নামিয়ে কথা বলো।যেখানে সবাই আমার নাম শুনলেই ভয়ে পালায় সেখানে তুমি আমার সাথে চিৎকার করে কথা বলছো?আর হ্যা ওগুলো আমিই লক করেছি।এবং ওগুলো বন্ধই থাকবে।সো খোলার চেষ্টাও করো না।মাইন্ড ইট!””

এই কথা শুনে আমার কিছুটা ভয়+আরো বেশি রাগ লাগছে।কিভাবে ধমক দিলো!শয়তানের ইতর কোথাকার!!ধমক শুনে হালকা দমে গেলেও বললাম-“”কিন্তু লক কেনো করলি মানে করলেন?””

ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ ফোঁসফোঁস করে শব্দ আসলো তারপর আচমকা ঠাস করে কিছু ফেলার শব্দ পেলাম।ওইপাশে হয়তো এখন আমফান চলছে তাই ফটাফট কল কেটে দিলাম।জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে ফোনের দিকে তাকালাম।বাপরে বাপ কি রাগ!এতোক্ষন হয়তো কোনো ঠান্ডা বাঘের সাথে কথা বলছিলাম হালকা থাবা দিতেই হিংস্র হয়ে গেছে।আর জিগ্যেস করার সাহস হয়ে উঠলো না।কিন্তু এখন তো নিজেকে বদ্ধ আসামির মতো লাগছে।মানুষের এই ফ্যানের কৃতিম বাতাস বাদে একটু তো নেচারাল বাতাসের দরকার আছে।মনে হচ্ছে এখন দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো।ধুরর!!দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১০টা বেজে গেছে।আরে বারান্দায় গিয়ে একটু বুক ভরে শ্বাস নিতে না পারলে তো পাগল হয়ে যাবো।এদিকে প্রচন্ড ক্ষুদায় পেটে ছোঁচা দৌড়াচ্ছে।লাইট অফ করে ধপাস করে শুয়ে পড়লাম।আর ভিতরে ভিতরে রাগে,দুঃখে ফুলতে লাগলাম।বুঝলাম না আমাকে এভাবে বন্দি করে রেখে যাওয়ার কারনটা!এদিকে চোখ ঘুমে বন্ধ হয়ে আসছে।বালিশের পাশ থেকে থাবা দিয়ে এয়ারফোন নিয়ে গান শুনতে লাগলাম।ফোনটাকে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি আর বারবার ওই ব্রিটিশটার নাম্বার বিভিন্ন নাম দিয়ে সেভ করছি।নামগুলো ওই বান্দরের সামনে গিয়ে বলতে পারলে হয়তো একটু শান্তিতে নিদ্রিত হতে পারতাম।নামগুলো যেমন:ইতর,ইবলিশ,কিপ্টা,সজারু,এনাবেলির জামাই,টিকটিকির বেয়াই,বটগাছ ইত্যাদি ইত্যাদি।সেভ আর রিমুভ করতে করতেই কোন সময় চোখ দুটো লেগে গেলো টেরই পেলাম না।

হঠাৎ কলের শব্দে আমার সুন্দর ঘুমটা হারাম হয়ে গেলো।কোনোমতে চোখ একটু আধটু খুলে ফোন কানে ধরলাম।

-“”হেই নুরিপাথর আই এম সরি!!দেখো বুঝতে পারি নি! বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছি।সরি!!”””

কারো অনুতপ্ত আর মোলায়েম কন্ঠে আমি লাফ দিয়ে উঠে গেলাম।কি বলছে??এটা তো ব্রিটিশটা!!সরি বলছে আবার!এহহ ঢং!!

-“”ফোন করেছেন কেনো?””

-“”দেখো সরি।রাগে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে গেছিলাম।তাই বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছি।!””

-“”সরি একসেপ্ট হবে না।কিন্তু একটা কথা বলুন গ্লাসগুলো লক কেনো করেছেন?””

-“”শোনো সময় আসলে অবশ্যই জানতে পারবে।এখন যেরকম আছে সেরকমই থাক।ভুলেও খোলার চেষ্টা করবে না।আর কোনো প্রশ্ন নয়!””

-“”কিন্তু……”””

-“”নুরিপাথর!””

-“”ওকে””

-“”আমার দেওয়া গিফটটা খুলেছো??””

-“”না! ভুলে গেছি!””

-“”ওয়ান্ডারফুল,ব্রিলিয়েন্ট,নাইস জব!””

বলে কলটা কেটে দিলো।কি রে??পাগল নাকি?বলা নেই কথা নেই ফট করে কেটে দেয়।আমি ড্রেসিংটেবিলের উপর রাখা গিফটটার দিকে তাকালাম।গিয়ে নিয়ে আসলাম।তারপর উপরের রেপিং পেপার খুলে বক্সটা খুললাম।ভিতরে আরেকটা খুব সুন্দর একটা ডিজাইন করা বক্স।চারপাশে চেইট দেওয়া সাথে একটা সুন্দর ছোট্ট টেডি ঝুলছে।পেটে সরি লেখা।আমি কিছুটা অবাক হলাম।চেইটা খুললাম।খুলেই খুশি হবো নাকি অবাক হবো বুঝতে পারছি না।ভিতরে একটা চশমা সেটার,সাথে বিভিন্ন ডিজাইনের সুন্দর সুন্দর ফ্রেম।কোনোটা আবার চেইন সিস্টেম।এক কথায় প্রচন্ড সুন্দর।পাশে একটা চিঠি পেলাম।খুলে দেখলাম।লেখা:
____________________________________ সরি সরি সরি
তোমার চশমাটা ভাঙার জন্য
তাই এই গিফটটা
পছন্দ হয়েছে??
এটা জেনো তোমার চোখে দেখি
নইলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে

ইতি
তোমার নিউ মিট পার্সন
____________________________________

বুঝতে পারলাম কে দিলো।মুহুূর্তেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।যত্ন করে রেখে দিয়ে আবার ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

-#অজানা__তুমি
#রুবাইতা___রুহি (ছদ্ননাম)
#পর্ব -১২

সকালে রেডি হচ্ছি কলেজের জন্য।একটা সাদা কুর্তি আর নিচে কালো জিন্স পড়ে কানে দুটো ঝুমকো দিলাম।ঠোঁটে হালকা বেবি পিঙ্ক কালারের লিপস্টিক লাগিয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলাম।রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎই ওই বৃদ্ধা মহিলার কথা মনে পড়লো।ওইদিনের পর আর দেখি নি।যাক ভালোই হলো এখন নির্ভয়ে চলাচল করতে পারবো।আকাশে পেঁজা তুলোর মতো গুচ্ছ গুচ্ছ মেঘ ভেসে বেরাচ্ছে।নীল আকাশে দল বেধে সাদা বকগুলো উড়ে উড়ে নিজের গন্তব্যের উদ্যেশে রওনা দিয়েছে।হালকা একটু উষ্ণ বাতাস বইছে চারপাশে।হয়তে শ্রাবণ মাসের আগমন ঘটছে! ঘটছে না ঘটে গেছে।খুব সুন্দর পরিবেশ চারদিকে।হালকা একটু রোদ।গরমও লাগছে বটে।
হঠাৎ আমার সামনে একটা কালো রংয়ের প্রাইভেট কার দাড়ালো।আমি অবাক হয়ে গেলাম।গাড়ির উইন্ডোগুলো সব বন্ধ থাকায় ভিতরে কে বুঝতে পারছি না।ভ্রু কুঁচকে সেটা অনুমান করার চেষ্টা করছি।আমার দেখার মাঝেই গাড়ির দরজাটা খুলে গেলো।ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো ব্লাক কোট,প্যান্ট পরিহিত একটি লোক।আমি নিচ থেকে উপরে চোখ দিতেই আয়রানের হাসিজ্জল মুখমণ্ডল দেখতে পেলাম।ওরে বাবা যে স্টাইলে বের হলো মনে করলাম বলিউডের কোনো নায়কের আগমন ঘটেছে আমার সামনে।ধুর!আমি মুখ ভেংচি দিয়ে ব্যাগ হাত দিয়ে ঠিক করে রাস্তার দিকে রিকশা খোজার উদ্যেশে চোখ দিলাম।আয়রান একদম আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।আচমকা আমার চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে থুঁতনি ধরে উঁচু করে ফিসফিসিয়ে বললো
-“”হেই ইউ লুক সো বিউটিফুল!””

কথাগুলো শুনে হ্রদস্পন্দন বেড়ে গেলো।ওনার স্পর্শে শরীরে ঠান্ডা শিহরণ বয়ে গেলো।পায়ের রক্ত মনে হয় একলাফে মাথায় উঠে গেছে।মুখের বুলি বন্ধ হয়ে গেছে।কান গরম হয়ে গেছে সঙ্গে নাকও।আমি ওনার হাত সরিয়ে চারপাশে তাকালাম।

-“”হেই কেউ দেখেনি।এখানে তুমি আমি ছাড়া আর কেউ নেই!””

আমি থতমত খেয়ে ওনার দিকে তাকালাম।উনি মুচকি হেসে সরে দাঁড়ালেন। ইস এই রাস্তায় কিসব শুরু করেছে।আমি ভ্রু কুঁচকে মাথা নামিয়ে নিলাম।ওনি পকেটে হাত গুঁজে বললেন

-“”চলো আজকে আমি তোমাকে তোমার কলেজে ড্রপ করে দেবো।ইভেন প্রতিদিনই দেবো।””চলো ওঠো!””

আমি প্রশ্নসুচক তাকালাম।
-“”আপনি কেনো ড্রপ করে দেবেন??আমি নিজেই যেতে পারবো।কোনো দরকার নেই!আপনি নিজের কাজ করুন!””

-“”দরকার আছে।চলো!””

বলে আমার হাত নিজের হাতের মুষ্টিতে আবদ্ধ করে গাড়ি কাছে গিয়ে আমাকে ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে দিলেন।আমি বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছি।কি করছে?সে নিজেও গাড়িতে উঠে ড্রাইভিং করতে লাগলো।আমিও বসে রইলাম।কেনো নিজেও বলতে পারছি না!তবে ওনার এই গেট আপ দেখে কিছু প্রশ্ন জিগ্যেস করতে ইচ্ছে করছে।

-“”আচ্ছা আপনি এইগুলো পরে কোথায় যাচ্ছেন??””

উনি আমার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললেন
-“”অফিসে!””

-“”ওহ আচ্ছা।””

-“”হুম!!শোনো তোমাকে আজকে ঘুড়তে নিয়ে যাবো!””প্রমিজ করে ছিলাম না!”

শুনে কিছুটা খুশি হলাম।কিন্তু মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া করলাম না।হঠাৎ আমার মাথায় আবার প্রশ্ন কিলবিল করে উঠলো।কিছুটা সাহস জুগিয়ে কেশে জিগ্যেস করলাম

-“”আচ্ছা আপনি আমার রুমের সবগুলো গ্লাস কেনো লাগিয়ে দিয়েছেন?””

খেয়াল করলাম ওনার মুখ শক্ত হয়ে গেছে।কটমট করে আমার দিকে তাকালাম।আমি বিষম খেয়ে কাশতে কাশতে মাথা নামিয়ে নিলাম।বুক ধুক করে উঠলো।

-“”নুরিপাথর এই নিয়ে কালকে আমাদের কথা হয়ে গেছে!সো আজকে আবার এই প্রসংগ্য উঠিয়ো না!””হুম?

আমি ভালোয় ভালোয় “হুম” বললাম।নইলে কালকে যেটা ওনার রুমের উপর দিয়ে গেছে সেটা আজকে আমার উপর দিয়ে যাবে।অজানা কোনো কারণেই ওনাকে ভয় পাচ্ছি আমি।কলেজের সামনে এসে নেমে গেলাম।ভিতরে ঢোকার সময় হাতে টান পড়লো।পিছনে তাকিয়ে দেখি আয়রান আমার দিকে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে।আমি প্রশ্নসুচক চোখে তাকালাম।উনি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাত ছেড়ে দিলেন।তারপর আমার দিকে ঝুকে বললেন

-“”নুরিপাথর কালকে কি বলেছিলাম??মনে আছে??ওই ছেলেটার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকবে।আর শোনো বিকালের দিকে রেডি থেকো তোমার গাড়ি নিয়ে ওয়েইট করবো।কোথায় ঘুড়তে যেতে চাও সেটা সেই সময় জেনে নেবো তোমার কাছ থেকে।!!””

বলে আমার গাল টেনে দিয়ে চলে গেলেন।আমি গালে নিজের ডান হাত বুলিয়ে মুচকি হাসলাম।

______________________

আজকে ক্লাসে একটাও ছাগলের দল আসে নি।পুরো ক্লাসটাই আজকে বোরিং গেছে একা একা।ক্লাস থেকে বেরিয়ে আচমকা কোথা থেকে উড়ে এসে রিদ্রিশ আমার সামনে দাঁড়ালো। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।এ আবার কোথা থেকে উদয় হলো??রিদ্রিশ একদম আমার কাছে দাড়িয়ে জিগ্যেস করলো

-“”কেমন আছো তুমি?””কতো খুজি তোমায়।একদিনও পাই না।আজকে পেয়েই গেলাম!””

বলে মাস্কের ভিতর থেকে শব্দ করে হাসলো।বুঝিনা সব সময় মাস্ক পড়ার কি দরকার? কয়েকদিন ধরে আমার পিছনে কেনো পড়েছে?যেখানেই যাই সেখানেই এসে হাজির হয়ে যায়।কয়েক ধরে ব্যাপারটা একদম ভালো লাগছে না আমার।আমি বিরক্ত হয়ে বললাম

-“”প্লিজ সামনে থেকে সরুন।যাবো আমি!””

বলে চলে যেতে চাইলেই আমার সামনে নিজের বাম হাত ধরে আটকিয়ে বললো

-“”কোথায় যাবে তুমি এখন??এতদিন পরে তোমাকে পেলাম।এতো সহজে ছাড়ছি না!””

আমি হতভম্ব হয়ে কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললাম

-“”ছাড়ছি না মানে??ছাড়ছি না মানে কি??””

রিদ্রিশ আমাকে দুই হাত দিয়ে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে বললো

-“”চলো কোথাও ঘুড়ে আসা যাক।আর রাজি না হলে তোমাকে আজকে যেতে দেবো না।””

আমি কাচুমাচু হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম।কি বলছে এইসব??কোথায় যাবে আমাকে নিয়ে??মনের মধ্যে কিছুটা ভয় ঢুকে গেছে।উনি আমার আরো কাছে আসার আগেই আমি ধাক্কা দিয়ে হালকা কাঁপতে লাগলাম।পুরো ক্যাম্পাস খালি হয়ে গেছে।কিছুটা চিকার করে বললাম

-“”নিজের লিমিটের মধ্যে থাকুন।আর প্লিজ আমাকে যেতে দিন।কেনো আমার পিছে পড়েছেন??””

উনি পকেটো হাত গুঁজে বললেন
-“”সেটা পরে জেনে নিও।এখন চলো!””

বলে আমার হাত শক্ত করে ধরলেন।আমি ঘাবড়ে গিয়ে হাত ছুটানোর চেষ্টা করছি।কিন্তু এতো শক্ত করে ধরেছে যে ছুটাতে পারছি না।প্রচন্ড ব্যাথা করছে।ফলে হাতের নীলাভ রগগুলো দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললাম

-“”ছাড়ুন আমার হাত!!আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে স্পর্শ করার??””ছাড়ুন বলছি!”

উনি আমার হাত ধরেই আমার দিকে ঘুড়ে বললেন
-“”ছাড়লেই পাখির মতো উড়ে যাবে।তাই ধরে রেখেছি।আজকে তোমার সাথে খুব সুন্দর একটা জায়গায় যাবো।যেখানে তুমি আর আমি ব্যাতিত কেউ থাকবে না।চলো চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে আমাদের!!””

বলে আমার হাত আগের থেকে দ্বিগুন শক্ত করে ধরে গেটের বাইরে বের হয়ে গেলো।সামনে একটা সাদা গাড়ি দেখতে পেলাম।আমি ভয়ে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।শুধু একটাই চিন্তা ঘুড়ছে মাথায়।এই লোকটার হাত থেকে ছাড়া পেতে হবে। মন বলছে আজকে কিছু একটা খারাপ হতে যাচ্ছে আমার সাথে।আমি ক্ষীপ্ত হয়ে বললাম
-“”ছাড়ুন আমাকে।আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।প্লিজ…..

রিদ্রিশ আমার কোনো কথাই শুনছেন না।আমাকে টেনে গাড়ির পিছন সিটে বসিয়ে নিজেও আমার পাশে বসলো।সামনে একটা কালো কুচকুচে লোক ড্রাইভ করছে।আমি শুধু হাসঁফাস করছি আর নিজেকে এই লোকের হাত থেকে বাচানোর চেষ্টা করছি।উনি আমার ছটফটানি দেখে একদম আমার মুখের কাছে এসে চোখ রাঙিয়ে বললেন

-“”আহা সোনামনি এতো ছটফট করছো কেন??ভয় পাচ্ছো??আরে আমি তোমার সাথে কিচ্ছু করবো না।শুধু একটু ঘুড়বো তোমার সাথে।তোমার না খুব ঘুড়তে যাওয়ার শখ সেটাই মেটাবো আমি।সো চুপচাপ বসে থাক!””

শেষের কথাটা কিছুটা ধমকের সুরেই বললো।আমি ওনার এই ধমকে চুপ করে গেলাম।চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে।নিজেকে এখন একটা পুতুল লাগছে।কি করতে চাচ্ছে??বুঝতে পারছি না কিছুই।গাড়ি একটা অপরিচিত রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।আমি কোনোদিন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেছি কিনা জানি না।চারপাশে শুধু সাদা রংয়ের বিল্ডিং। কয়েকটা নতুন ইট আর সিমেন্ট এর বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে ।কিন্তু অদ্ভুদ কথা হলো এখানে একটাও মানুষ দেখা যাচ্ছে না।চারদিকে শুধু ইট সিমেন্টের ষোলো সতেরো তলার বিল্ডিং। কি অদ্ভুদ গা ছমছমে পরিবেশ।আমি শান্ত হয়ে নিজের ওরনা চেপে ধরে চারপাশ পর্যবেক্ষণ করছি।পাশে রিদ্রিশ নামের লোকটা একদম আমার গা ঘেঁষে বসে আছে।এতে আমার প্রচন্ড অস্বস্তি হলেও কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না।এখন একদম শান্ত থাকতে হবে আর পরিস্থিতি বুঝে প্রতিক্রিয়া করতে হবে।বেশি লাফালাফি,ঝাপাঝাপি করলে চলবে না।

গাড়িটা খোলা মাঠের পাশে একটি চিকন সরু রাস্তায় গাড়ি থামলো।এক সাইডে বড় সবুজ মাঠ অন্য সাইডে গাছপালা।রিদ্রিশ বের হয়ে আমাকে বের হতে ইশারা করলো।আমি ধীরেধীরে নেমে গেলাম।রিদ্রিশ হঠাৎ করে আমার কোমড়ে হাত রেখে গালের কাছে নিজের বুড়ো আঙ্গল দিয়ে স্লাইড করে বললো
-“”কি গো সোনামনি??এতো চুপচাপ হয়ে গেলে যে??””

সারা শরীর গুলিয়ে উঠলো আমার।কিন্তু এই ছোঁয়া আমার কিছুটা পরিচিত লাগছে।কিন্তু কিভাবে??রিদ্রিশ আমাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো

-“”চলো আমার সাথে।উইথআউট এনি সাউন্ড!!””

বলে আমাকে একটা সাদা বিল্ডিয়ের কাছে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।আমি অধৈর্য হয়ে ছাড়াতে চেষ্টা করলাম।আর শান্ত থাকতে পারছি না।কি করতে চাচ্ছে আমার সাথে।কোনো খারাপ কিছু নয়তো।লোকটার মতিগতি ভালো ঠেকছে না।আমি এখন চিৎকার করে কান্না করতে করতে বললাম

-“”ছাড়ুন আমাকে। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন??কি করেছি আমি?ছাড়ুন প্লিজজ।আমি কিন্তু চিৎকার করবো।”””

রিদ্রিশ আমার দিকে ভয়ংকরভাবে তাকিয়ে
বললো
-“”চিৎকার করবে তুমি??করো করো!!কেউ তোমার আর্তনাদ শুনতে পারবে না।করো যত ইচ্ছা চিৎকার করো।হয়তো আর কোনোদিন এই সুযোগ পাবে না।তাই গলা ফাটিয়ে চিৎকার করো।””

শুনে আতকে উঠলাম।আর সুযোগ পাবো না মানে??মানে কি??আমাকে কি মেরে……নাা!!!না না!!এটা কিভাবে সম্ভব।না!আমাকে পালাতে হবে।নইলে আজকে আমার সাথে কিছু একটা খারাপ হবে।লোকটাকে এতো চেনা কেনো লাগছে।মনে হচ্ছে একে আগে কোথাও দেখেছি।কিন্তু আমার সাথে এরকম কেনো করতে চাচ্ছে?কি করেছি আমি??না এভাবে লোকটার সাথে তালে তাল মেলালে চলবে না।আমি নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা ছেড়ে কিছু একটা ভাবতে লাগলাম।এদিকে বিল্ডিংটার খুব কাছাকাছি এসে গেছি।মিনিমাম ২১তলা হবে।দেখেই মাথা ঘুড়ছে।আমি রিদ্রিশের আমার হাত ধরে থাকা হাতের দিকে তাকালাম।ওইখানে কনুইয়ের কিছুটা কাছে কোবরা ট্যাটুটা জলজল করছে।দেখে একদম জীবন্ত সাপ মনে হচ্ছে।আমি আর কোনোকিছু না ভেবে ওই হাতে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিলাম।রিদ্রিশ ফট করে আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বাম হাত দিয়ে নিজের ডান হাত ধরে চোখ বন্ধ করে মৃদু চিৎকার করতে লাগলো।আমি এই সুযোগ পেয়ে বিল্ডিয়ের পিছন দিকটায় দৌড় লাগালাম।দৌড়ে যাচ্ছি তো দৌড়ে যাচ্ছি।পিছনে তাকানোর সময় নেই।আচমকা চুলে টান পড়তেই মাটিতে ছিঁটকে পড়লাম।ঘুড়ে দেখি রিদ্রিশ হিংস্র রুপে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।মুখে এখনো মাস্ক পরিহিত।চোখ দুটো তীব্র লাল বর্ণ ধারণ করেছে।আমি পা দিয়ে এক দুই ধাপ পিছনে যাচ্ছি।রিদ্রিশ ততোই আমার সামনে আসছে।হঠাৎ সে নিচু হয়ে দুই হাত দিয়ে আমার গলা চেপে ধরলো।আমার চোখ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।শ্বাসচাপ বাড়ছে।দম আটকে আসছে।হৃদস্পন্দন থেমে যাচ্ছে।আমি লোকটাকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছি।তার দুই হাত নিজের হাত দিয়ে খামচে ধরলাম।ইতি মধ্যে আমাদের মাঝে ধস্তাধস্তি লেগে গেছে।এক পর্যায়ে রিদ্রিশ আমার ওরণা খুলতে নিলেই আমি পা দিয়ে তার গোপন অঙ্গে লাথি দিলাম।রিদ্রিশ আমাকে ছেড়ে ছটফট করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।আমি কাশতে কাশতে উঠে দাঁড়ালাম।আবার নিজের পা চালাতে লাগলাম।হাত পা কাপছে।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।মাথা ঘুড়ে আসছে।দুবর্ল পা নিয়ে দৌড়াতে না পেরে হোচট খেয়ে পড়ে গেলাম।সারা দেহে বালির ছড়াছড়ি।আর পারছি না দৌড়াতে।পা অবশ হয়ে গেছে।মাটিতে শুয়ে পড়লাম।পিছনে তাকিয়ে দেখি রিদ্রিশ ধীরেধীরে উঠে দাঁড়াচ্ছে।তখনই পিছন থেকে দেখতে পেলাম একটি কালো গাড়ি আসছে।আধখোলা চোখে শুধু এইটুকুই দেখে জ্ঞান হারালাম।



♣_____চলবে_____♣

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here