#অতল_গভীরে
#পর্ব২
Eliyana Aara
—-কিরে তানহা, শুনলাম কালকে তোর বিয়ে হয়ে গেছে তো এখানে কি করছিস??
—-কেন জানিস না আমি এখানে রোজ সকালে আসি।বিয়ে হয়ে গেছে বলে কি আসতে পারবো না।
—–না মানে আমি তা বলিনি।তাও বিয়ে হয়ে গেছে এখোন এগুলা না কিনলেওতো পারিস।
—-জানিস না এগুলা এখোন আমার নেশা হয়ে গেছে। এগুলা ছারা আমি এক মুহুর্ত ও থাকতে পারি না।
—–জানিস আমি এতো মানুষের কাছে ড্রাগ,বিয়ার কোকিন বিক্রি করি কখোনো কারো প্রতি মায়া লাগে না কিন্তু তোর কাছে এগুলি বিক্রি করতে না আমার খুব খারাপ লাগে।তোকে এগুলা দিতে ইচ্ছে করে না।কিন্তু কি করবো আমার তো এগুলাই ধান্ধা। তুই এগুলা না খেলেই তো পারিস।কেন খাস তুই??
—–বুঝবি না কেন খাই নিজের চাপা কষ্ট লুকাতে খাই।
—–কিসের এতো কষ্ট তোর?
—-তোর না জানলেও চলবে।আগে আমাকে একটা পেকেট দে তার পর কথা বল।
—-নে ধর। আর পারলে এখোন একটু নেশা কম কর।
___________
—-জি স্যার জি, হুম আমি বুঝতে পেরেছি ১তারিখেই জয়েন দিবো তাই না ওকে স্যার ধন্যবাদ।
যাক আমার জবটা হয়ে গেলো এবার শান্তি সব জায়গা দিয়েই।ঢাকার বাহিরে জব পেয়েছি। চলে জাবো এখান থেকে। এই মাসে মাসে- আসবো তখোন দেখা হবে সবার সাথে।
এখানে এই মেয়ের সাথেও আমি সংসার কিছুতেই করতে পারবো না।এই মেয়েও আমার সাথে থাকতে চায় না, তাই আগে এখান থেকে চাকরিতে জয়েন করে তারপর ডিভোর্স এর জন্য এপ্লাই করবো।ডিভোর্সটা হয়ে গেলেই ভালো।আর পাঁচ দিন পরেই আমি এখান থেকে চলে জাবো।আম্মুকে বলতে হবে,যে জব পাইছি এক কাজ করি দুপুরের খাবার সময় সবাইকে বলে দিবো।
দুপুরে খাবার টেবিলে সবাই বসে আছি,তখোন আমি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
——আমি জব পেয়েছি।
—-আলহামদুলিল্লাহ বাবা এটাতো খুশির খবর।(আম্মু)
—-তা কোথায় পেয়েছিসরে বাবা(বড় কাকি)
—–বড় কাকি খুলনায় হয়েছে জব।
—–ভাইয়া এতো দুরে?এইতো দুদিন হলো এখানে এসেছে আবার আমাদের থেকে আলাদা হয়ে যাবা?(মিলি)
—-কি করবো বল যার আমার কাজ পছন্দ হয়েছে উনি রেখে ছে আমাকে এরপর যদি ঢাকায় কোথাও আবার ভালো জব পাই তাহলে ওইটা ছেরে দিবো।
—–ওওও (ছোট কাকি)
——তো কবে যাবি ওইখানে(জাহিদ)
—–১তারিখে জয়েন দিতে বলেছে। তো ১তারিখ আসতে আরো এ সপ্তাহ বাকি,আর পাচ দিন পর চলে জাবো।
—-ওওওও(তানজিল)
—–তো জাও সমস্যা নাই তানহাকেও সাথে করে নিয়ে জাও।(আব্বু)
——তানহাকে বাবা কিন্তু।
——কোন কিন্তু নয় আয়মান, এখোন তোমরা স্বামী স্ত্রী। তাই দুজনকে এক সাথেই থাকতে হবে।তানহাকে তোমার সাথে নিয়ে যেতেই হবে। আমি রাতে তানহার সাথে কথা বলবো এই বেপারে।
আব্বুর কথার উপরে কথা বলার কারো সাহস নেই, আর এই বাড়ির এখোনো কারো হয়ে উঠেওনি। তাই চুপচাপ সব কর্নপাত করে শুনে গেলাম।কিছু করার নেই ওই মেয়েকে নিজের সাথে নিতেই হবে।ওই মেয়ে না গেলেই ভালো হয়।
রাতের বেলা সবাই ড্রইংরুমে বসে আছি তানহাকেও আব্বু বসিয়ে রেখেছে,ওই মেয়ে বিকেল হওয়ার আগেই বাসায় চলে এসেছিলো হয়তো আমি গিয়ে ছিলাম একটু বাহিরে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে। আব্বু তানহাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
—-তানহা মা তোর সাথে আমার কথা ছিলো।
—-হুম বড় আব্বু বলো।
—–আয়মানের খুলনাতে জব হয়েছে।ওখানেই ওর থাকতে হবে।
—–ভালোতো থাকুক ওখানে কে না করেছে?
—–কেউ না করেনি কিন্তু তোমাকেও ওখানেই থাকতে হবে ওর সাথে।
—–অসম্ভব বড় আব্বু, তুমি আমাকে এইটা বলো না আমি জেতে পারবো না উনার সাথে।
—–আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করছি না,তুমি ওখানে জাবে আর এটাই আমাদের ডিসিশন।
—-বড় আব্বু।
——কি বড় আব্বু। বড় ভাইয়া যেটা বলছে তুই সেটাই করবি।আর ওখানে না গেলে তুই আমার মরা মুখ দেখবি(ছোট কাকি)
—– ঠিক আছে জাবেোবলেই ও উপরের রুমের দিকে হাটা শুরু করলো,
আর আমি বসে রইলাম,বুঝিনা আমার আম্মু কাকিদের এতো কসম কেন দেওয়া লাগে বুঝি না।না গেলে না যেতো ভালোই লাগে না আমার কিছু।
আমিও ওখানে সবার সাথে বসে আরো কিছু সময় সবার সাথে আড্ডা দিয়ে রুমে চলে গেলাম রুমে গিয়ে দরোজাটা দিয়ে যাস্ট রুমে ঢুকেছি আর ওমনি তানহা আমাকে দাক্কা দিয়ে ওয়ালের সাথে মিশিয়ে, গলায় ছুরি ধরে বলতে লাগলো,
—–আপনি ইচ্ছে করে এমনটা করেছেন তাই না। ইচ্ছে করে? কে বলেছে আমাকে নিয়ে জেতে আপনার সাথে। নিশ্চয়ই আপনি বলেছেন,
আমি একটা বড় সর ঢোক গিলা ওর হাতটা একটু সরানোর চেষ্টা করলাম ও ছারার বদলায় আরেকটু শক্ত করে ধরাতে, আমি বলতে শুরু করলাম।
—–কি হয়েছে??এভাবে গলায় ছুরি ধরে আছিস কেন?আর আমি তোর থেকে চলে জাওয়ার জন্যই এতো দুরের জবটা নিয়েছে খুলনায় আর দেখ সেই আমাকে এখোন তোকে গলায় করে ঝুলিয়ে নিয়ে জেতে হবে।
—–তো কে বলেছে আমাকে আপনার সাথে নিয়ে যেতে।
—–আব্বু বলেছে।
—–বড় আব্বু।ইই এই সব হয়েছে আপনার জন্য, কে বলেছে এতো দুরে জব নেওয়ার জন্য, কেনসেল জব করা লাগবে না এই চাকরি।জাওয়া লাগবে না কোথাও।
—-ছারবো না আমি এই চাকরি।এতো ভালো টাকা মাইনের সেলারি ছেরে দিবো কখোনই না।তোর আমার সাথে যেতে হলে যাস না যেতে হলে যাস না আই ডোন্ট কেয়ার।
ও জেদ করে ছুরিটা সরিয়ে আছার দিয়ে নিজের চুল নিজে টানতে লাগলো কেননা ওর কিচ্ছু করার নেই। ওকে যেতেই হবে আমার সাথে যেহেতু আব্বু বলে দিয়েছে তাই।বললাম না আব্বুর কথা কেউ ফেলেনা ওরকম।কিন্তু আব্বু ওর এই মদের নেশাটা ছারাতে পারেনি। ওই দিনকার মতো আমি রাতে মোবাইল টিপতে টিপতে বিছানায় শুয়ে পরেছি ডেইলি ডেইলি আমি সোফায় সুতে পারবো না।আমার আবার এতো মায়া নেই কারো উপর।
পাঁচ দিন পর আজকে সন্ধ্যায় বাসে জাবো ওখানে একটা ফ্লাট ভারা নিয়েছি।দুই রুমের ওখানেই থাকবো।বিকেল বেলা ছাদে দাঁড়িয়ে আছি একা একা,দরোজার দিকে তাকিয়ে দেখি ছোট চাচি আসতিসে।উনি এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললেন,
—–কিরে বাবা কি করছিস??
—–এইতো চাচি, দাড়িয়ে আছি।
—-ওওও আজকে চলে জাবি তাই না।এক সপ্তাহ তো হলো, বল এতো দুর থেকে এলি এখোন আবার আরেক জায়গায় চলে যাচ্ছিস এটাকি ঠিক বল।
—-কি করবো চাচি জাওয়ার হলেতো জেতেই হবে।
—-হুম।আর আমাকে এখোনো চাচি কেন বলছিস আমি তোর শাশুড়ী আম্মা হইনা আম্মা ডাকবি।
আমি কিছুটা হেসে বললাম
—-হাহহা আম্মা জান।
—-হুম এটা বেটার।আর শোন বাবা তোর সাথে একটু কথা বলার জন্য আসলাম।
—-কি কথা আম্মা???
——আমি একটা কথা বলবো রাখবি সারাজীবনের জন্য? বলা না রখবি??
—–কি কথা???
—–আমার তানহাটকে সব সময় এর জন্য নিজের করেই রাখিস কখোনো ওর হাতটা ছারিস না। আমার মেয়েটা যে খুব ভালো মনের। জানি না কি এমন কারোন যে ও এমনটা হয়ে গেলো।নাহলে তো তুই দেখেছিস ওও কেমন ছিলো বল!ওকে তুই ছেরেদিস না।আমি জানি তুই এই বিয়েতে রাজি ছিলি না।কিন্তু এখোন যেহেতু তোদের বিয়ে হয়ে গেছে একটু মানিয়ে নে না।দেখ না আমার মেয়েটা ঠিক হয় কিনা।
কান্না করতে করতে চাচি এই কথা গুলো বলছে,আমার খুব খারাপ লাগছে চাচির কান্না দেখে।তাই ওনাকে কথা দিয়ে দিলাম যে হে থাকবো আপনার মেয়ের সাথে।কেননা এখোন যেহেতু ওর সাথে বিয়ে হয়েই গেছে তাহলে দেখি মানিয়ে নিতে পারি কিনা।ওকে একটু সময় দেই নিজের মতো চলার আসতে আসতে বুঝাবোনি।
চাচি আম্মার সাথে আরো কিছু সময় কথা বলে নিচে চলে এলাম কাপোর সব আমি গুছিয়ে রেখেছি।রুমে গিয়ে দেখি সব বোনেরা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আর তানহার বেগ গুছিয়ে দিচ্ছে। তো আমিও গিয়ে সোফায় বসে বলতে লাগলাম,
—–কি সালিকারা কি করছিস?
—–আপনার বউ এর বেগ গুছিয়ে দিচ্ছি। (সুমি)
—–আমার বউ নিজের বেগ নিজে গুছিয়ে নিতে পারে না তোদের কেন কষ্ট দিচ্ছে।
তানহা রাগে বলতে লাগলো,
—–আমার বোনেরা আমার বেগ গুছাবে না কি অন্যের বেগ গুছাবে তাতে আপনার কি নিজের চরকায় নিজে তেল দিন।
—-হুম।শোন শালিকারা তোমার বোনের আসল জিনিস গুলো দিতে ভুলো না যেন
—–কি জিনিস ভাইয়া(তাহমিনা)
—–ওইজে মদ, বিয়ার, সিগারেট।
—–দেখুন ভাইয়া আপনার এসব বেপারে বলতে হবে না।আমি কি নিবো আর না নিবো আমি জানি।আর এগুলা বলে কি প্রমান করতে চাইছেন আমি খুব খারাপ।আমি নেশাখোর তাইতো?
আমার পাশে মিলি বসে ছিলো ওর কানে কানে বললাম,
—-সেটা আবার বলতে।তিই যে নেশাখোর এটা আসে পাশের সব এলাকার মানুষ জানে।
মিলি আমার কথা শুনে হাসতে লাগলো,আমাদের হাসি দেখে
তানহা তেতে উঠে বললো,
—–কানে কানে কি ফিস ফিস করছেন।যা বলার মুখের উপর বলেন।
এবার আমি দাঁড়িয়ে সোজা হয়ে পকেটে এক হাত দিয়ে বললাম,
—-সোজা কথা এটাই যে।আমরা ওখানে নতুন যাচ্ছি। সো মানুষ যাতে আমাদের খারাপ বলার কোন দিক খুজে না পায়।তোর এসব খেতে হলে ঘরে বসে বসে খাবি। আমার যাতে কারে কাছে ছোট না হতে হয়।
—-হুহ।পারবো না আপনার এতো কথা শুনতে।
—–না পারলে বেরিয়ে আসবি ওখান থেকে।
—– তখোন কেন তাহলে আমি এখোনি জাবো না।
—–এখোন তো তোকে যেতেই হবে।আমি চাচিকে কথা দিয়েছি আমার সাথে তোকে নিয়ে জাবো সো তুই জাবি আমার সাথে।
—–পারবো না।
—–আ ভাইয়া আপু জাবে তোমার সাথে আমরা বুঝিয়ে দিচ্ছি। তুমি রাগ করো না ভাইয়া প্লিজ।(সুমি)
—–হুম বুঝা ওকে।
বলেই আমি রুম থেকে বের হয়ে গেলাম।
দেখতে দেখতে বাসের টাইম হয়ে গেলো তাই আমরা দুজনে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাস স্টেন্ডে চলে এলাম।সবাই ওকে বুঝানোর পর দেখি রাজি হয়েছে আসার জন্য। শুধু চাচি বলেছে দেখে ওকে এখানে নিয়ে আসলাম নাহলে এখানে নিয়ে আসতাম না।
সারারাত জার্নি করে চলে এলাম খুলনা।ওখানে এসে তিনতলায় একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়েছি সেখানে উঠে গেলাম।ঘরের ভিতরেই সব জিনিসপত্র আছে আমাদের আর কিছু কিনতে হবে না তাই জামেলা নেই।
আসার সময় পরোটা কিনে এনেছিলাম সেটাই খেতে বসেছি।পরশু থেকে আবার জয়েন হয়ে জাবো জবে।সারাদিন অফিসে। সকাল ১০থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। ওকে কয়েকবার ডেকেছি খেতে কিন্তু আসেনি।দুটো রুম থাকায় ও এক রুমে আমি আরেক রুমে। আমি খেয়ে রুমি উকি দিয়ে দেখি বালিশ ছারা উবুর হয়ে ঘুমিয়ে গেছে।তাই রুমে গিয়ে মাথার নিচে বালিশ দিয়ে ঠিক করে শুয়িয়ে দিয়ে এসেছি আর আমার রুমে এসে লেপটপ নিয়ে বসেছি।জবের জন্য কিছু কাজ শিখতে হচ্ছে তাই বসে বসে শিখছি।
চলবে……