অনুতাপ পর্ব -১৮

#অনুতাপ
#অষ্টদশ_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)

আমি চাই না আমার প্রাক্তন স্বামী জীবনে বিয়ে-শাদি করে সুখি হোক। সত্যি বলতে আমি চাইনা সে বিয়ে করুক। যখন শুনলাম সে বিয়ে করেছে, জীবনে আগে বেড়ে গেছে। এটা শোনার পর থেকে আমার খুব অশান্তি লাগছে, যদিও আমি স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে আছি। তবুও কোথায় যেনো একপ্রকার কষ্ট হচ্ছে। একদম অসহ্য লাগছে। এইরকম লাগার কারণ ও আমার অজানা। কারণ ইরাদকে আমি ছেড়ে এসেছিলাম,সে তো আমায় কোনোদিন ছাড়তে চায় নি তাহলে কেনো আমি এমন অনুভব করছি? তবে ভুল কোনটা আর কোনটা সঠিক সেইদিক বিবেচনা করতে ইচ্ছা করছে না। ইরাদ রাতারগুল আছে আমারো সেখানেই যেতে হবে। কেমন মেয়ে বিয়ে করেছে অন্তত দেখতে হবে, কতোটা ভালো আছে এটাও জানার একটা বিষয়। মেয়েটা কি আসলেই অনেক সুন্দরী? আর মেয়েটা ইরাদকে কি আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে সেটা জানাও আমার একটা খুব প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তু হয়ে দাড়িয়েছে।

.

সারাদিন ঘুরাঘুরি করে রুহির আবারো জ্বর চলে এসেছে। ইরাদ তো একপ্রকার রাগই হয়ে গেছে ওর ওপরে। একদম কোনো কথা বলছে না রুহির সাথে।
রুহি বিছানায় শুয়ে আছে চোখ বুঝে, ইরাদ মাথার সামনে বসে আছে রুহির। রুহি ইরাদের হাতটা ধরে রেখেছে, ইরাদ ওকে ঘুমিয়ে থাকতে বলেছে কিন্তু কোনোক্রমে নিজের ঘুম পাচ্ছে না। এদিকে রুহি ইরাদের ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে রেখে দিয়েছে। ইরাদের বকার কারণ রুহিকে কষ্ট দেওয়া না বরং ওকে ভালো রাখা। আর রুহি এই জিনিসটা বুঝে। যদিও ওদের বয়সের ব্যাবধান প্রায় ১২-১৩ বছর তবুও মেয়েটা কি সুন্দর বুঝে ইরাদকে। এতোটা ভালো ও ইরাদকে বাসতে পারবে তা কোনোদিন ভাবতেও পারে নি।

রুহি- শুনুন
চোখ বন্ধ করেই রুহি বললো, ইরাদ কোনো কথা বলছে না।
-শুনুন না,,
-….
– আমাকে কেউ আদর করে না, সবাই আমার সাথে রাগ করে, আমি অসুস্থ তাও রাগ দেখায়
কথা গুলো আহ্লাদী সুরে বলছে রুহি।
ইরাদের হাসি পাচ্ছে মেয়েটার বাচ্চাদের মতো আচরণ দেখে। অসুস্থ শরীর নিয়েও কেউ এমন করতে পারে?
রুহি এবার ইরাদের হাতে একটু টাইট করে ধরে বললো,
– আমার সাথে রাগ করলে আমি কষ্ট পাই, উত্তর দেন না প্লিজ।
– হুম বলেন
– আমি সরি
– আপনি সরি?
– হুম আসলেই সরি, আমি জানি আপনি অনেক ব্যাস্ত থাকেন তাও আমার জন্য কতো কষ্ট করছেন। আর করবো না এমন, আমি এখন থেকে সব শুনবো, আপনি যেটা বলবেন সেটাই করবো। একদম সত্যি।
-ঠিক আছে।

১দিন পর

.

সকাল বেলা রুহির শরীরটা ভালো লাগছিলো। ঘুম থেকে উঠে দেখে ইরাদ ওর মাথার কাছেই বসে ঘুমাচ্ছে। অনেকক্ষন রুহি তাকিয়ে দেখছিলো ইরাদকে। তারপর ও নিজে থেকেই রেডি হয়ে ইরাদকে ডাক দিলো। ইরাদের এই সপ্তাহে কোনো অপারেশন ছিলো না দেখে ও নিজেও রুহিকে জোর করেনি ফিরে যেতে প্রায় ৩-৪ দিনের মতো হয়েছে ওরা রাতারগুলে থেকেছে। আজ ফিরে যাবার পালা,
– উঠুন আমরা আজ ফিরে যাবো
– শরীর ভালো লাগছে?
– আপনার যত্নে ভালো না লেগে উপায় আছে?
ইরাদ হাসি দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো,
বিকেলে রুহি আর ইরাদ ঢাকা ব্যাক করলো, প্রাইভেট জেট দিয়ে ব্যাক করার কারণে ওদের মাত্র আধা ঘন্টা লাগলো।
আর ইরাদের এই গাড়িটা ড্রাইভার গিয়ে নিয়ে আসবে সিলেট থেকে।
– বাসায় নামিয়ে দিবো?
– উহুম
– যেতে পারবেন?
রুহি একটা হাসি দিয়ে বলে,
– হ্যাঁ পারবো না কেনো? আমি বাচ্চা?
ইরাদ মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
-ঠিক আছে।
ইরাদ পেছজ ঘুরে চলে যাচ্ছিলো আর রুহি আরেক রাস্তায়। দু’জন দি দিকে তাকিয়ে ছিলো যাওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে।
রুহি হঠাৎ পেছন ঘুরে ইরাদকে বললো,
– শুনুন
ইরাদ ও পেছন ফিরে তাকালো
-হুম?
রুহি এক ঝাটকায় ইরাদকে জড়িয়ে ধরে বললো,
– থ্যাংক ইউ সো মাচ। ইট ওয়াস দা মোস্ট বিউটিফুল ভ্যাকেশন ফর মি।
কথাটা বলে রুহি ইরাদকে ছেড়ে দিয়ে আর এক মুহুর্ত ও অপেক্ষা করে নি। সেখান থেকে চলে যায়।
কয়েক মুহুর্তের জন্য ইরাদ স্তব্ধ হয়ে যায়। রুহি হেটে যাওয়ার সময় ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে অশ্রু ঝরছিলো। মেয়েটার কান্না ইরাদকে অস্থির করে দেয়। তা রুহিও জানে তাই ও ইরাদের সামনে কান্না করে নি। এই জন্য আর কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসে। ইরাদ কিছু বুঝে উঠতে পারে নি তার আগেই রুহি ওকে জড়িয়ে ধরেছিলো। মেয়েটা এমন আচরণ করবে এটা ও ভাবতেও পারে নি। তবে এভাবে রুহির ওকে জড়িয়ে ধরাটা আজকে কেনো যেনো বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ লাগে নি ইরাদের। রুহি যদিও কখনো ওমন কোনো আচরণ করে না তবে ইরাদের কেনো যেনো মনে হলো আজকে কিছু অন্যরকম ছিলো এই স্পর্শে। ইরাদের কি নিজেরই রুহির প্রতি অন্য রকম অনুভুতি কাজ করছে? নাকি রুহির ও একই অবস্থা? ইরাদ এসব অনেক আগেই ফেলে এসেছে। এসব নিয়ে আএ ভাবতেও চায় না ও তবুও কেনো যেনো রুহির চিন্তা দিন রাত ওকে পাগল করছে।

সে রাতে মেঘা রাতারগুল যেতে পারে নি, তাই পরদিন সকালে রওনা হয়েছিলো। যাওয়ার পরেও ইরাদের কোনো খোঁজ সে পায় নি। এতো খোজাখুজির পরেও সে দু’দিন পরে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলো। যেহেতু ইরাদকে দেখাই যায় নি তাই তাকে আর তার না দেখা বউকে নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট করাই ভালো। মেঘা চেষ্টা করছে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার।

প্রায় ৬-৭ দিন চলে গেছে। ইরাদ রুহি ওদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে। ইরাদ আর মাত্র ৬দিন পর চলে যাবে কানাডা। এদিকে দিবাও ঢাকা এসে পড়েছে রুহির ব্যাপারটা আর মেঘাকে জানানো হয়নি। তবে রুহির সাথে আজকে এসব নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

রুহি জানালার পাশে বসে আছে, ঠান্ডা হাওয়ার ওর চুল গুলো উড়ছে আর রুহি গান শুনছিলো,

যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে
মনে হয় এ দেহে প্রাণ আছে
বাকিটা সময় যেন মরণ আমার
হৃদয় জুড়ে নামে অথৈ আঁধার

ব্যথার সমাধিতে বসে এ মন
ফোটায় আশার ফুল রাশি রাশি
যখন দেখি ওই মুখের হাসি

স্বপ্ন থেকে আসো নয়নেতে
নয়ন থেকে তুমি স্বপ্নে হারাও
জাগরণে এসে কাছে দাঁড়াও

শিশুকালের রূপকথাগুলো
পায়ে পায়ে সব আসে ফিরে
তোমার কথা রূপকথা ঘিরে

ভুলে ভরা যত স্বরলিপি
গানের কোকিল হয়ে উঠে ডেকে
কাছে এলে তুমি দূরে থেকে

গানের কথাগুলো যেনো ও অনুভব করতে পারে। ইরাদ ছাড়া ও তো নিঃস্ব। এই মানুষটা ওর অভ্যাস, ভালোবাসা সব হয়ে গেছে। এই চেহারাটা দেখলেই তো রুহির মায়া লাগে। এই মায়া ত্যাগ করা কোনো ভাবেই সম্ভব না। রুহি ভেবে নিয়েছে, ইরাদকে ও নিজের মনের কথা জানিয়ে দিবে।

দিবা- কি করছিস?
– দিবা শোন
– বল
– আমি ইরাদকে বলে দিবো
– তুই শিউর?
– হ্যাঁ
– স্যার কয়েকদিন পরেই চলে যাবে রুহি তাহলে যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে
– হুম
– তুই কল দে এখন?
– এখন?
– হ্যাঁ বেশি দেরি করার দরকার নেই যেহেতু তুই সিরিয়াস।
– ঠিক আছে, কিন্তু ফোনে বলবো না। সামনাসামনি বলবো।
– ভাবীকে জানাবি?
– আপুকে?
– হুম এখনি জানিয়ে দিলে ভালো
– আপু যদি পছন্দ না করে?
– কেনো করবে না?
– জানিনা কেনো জেনো ভয় লাগছে
– চিন্তা করিস না।
-ঠিক আছে আপুকে আগে বলি
এদিকে রুহি মেঘাকে জানিয়ে দিলো ও একজন কে ভালো ভালো বাসে।
মেঘা শুনা মাত্রই খুব খুশি হয় আর জানতে চায় ছেলে কে?
রুহি নাম পরিচয় দেয় না কিন্তু বলে সে তাদের হাস্পাতালের একজন ডাক্তার। সবকিছু ঠিকঠাক হলে মেঘাকেই জানাবে আগে। এই বলে তাদের ফোনালাপ শেষ হয়
এদিকে মেঘার সম্মতি পেয়ে রুহি খুব খুশি হয় আর ইরাদকে ফোন করে। ইরাদ কল।রিসিভ করে,
-কি করছেন?
-সিলেট যাচ্ছি
– সিলেট কেনো?
– অপারেশন আছে আর্জেন্টলি যেতে হচ্ছে।
-ফিরবেন কবে?
– আমার মনে হয় ফেরা হবে না এখান থেকেই ডাইরেক্ট চলে যাবো কানাডা কারণ কাজের চাপ পড়ে গেছে খুব।
রুহি আর ইরাদের ফোনালাপ শুনে দিবা মন খারাপ করে ফেলে। কিন্তু ফোন রেখে রুহি হাসছে
রুহিকে হাসতে দেখে দিবা জিজ্ঞেস করলো
-কি রে হাসছিস কেনো?
– আমাদের কাছে আসার পেছনে সিলেট অনেকটা বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। তাকে আমি প্রপোজ ও করবো সিলেটেই।
কথটা বলেই রুহি ব্যাগ গোছাতে চলে যায়।
রুহির কথা শুনে দিবা হা করে তাকিয়ে থাকে…

(চলবে… কালকে একটা ধামাকাদার প্রহর হবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here