#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি
পর্ব__১৫
স্পন্দন এতো সময় চুপচাপ বসে শুনলেও এবার আর সহ্য করতে পারলো না।বলে উঠলো,
__চন্দ্র কোথাও যাবে না।এই স্পন্দন যতদিন বেঁচে থাকবে চন্দ্র তার সাথেই থাকবে।স্পন্দন ছাড়া চন্দ্র যেমন কিছু না তেমন চন্দ্র ছাড়া স্পন্দন ও কিছু না।আর বাকি রইল চন্দ্রকে কষ্ট দেওয়া।সেটা যদি দিয়েও থাকি ভুলবোঝাবুঝি থেকে দিয়েছি।তার জন্য আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি মেঝো আব্বু।তবুও একথা বলবেন না যে চন্দ্রকে আমার থেকে কেড়ে নিয়ে যাবেন।স্পন্দন বাঁচতে পারবেনা চন্দ্রকে ছাড়া।দয়া করুন আপনারা আমার উপর। আমি বাঁচতে চাই শুধু চন্দ্রকে বুকে আগলে ধরেই বাঁচতে চাই।
__তোমাকে আমি আর বিশ্বাস করিনা স্পন্দন। আমার মেয়ে তোমার কাছে ভালো থাকবে না। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে যাবো।এটাই শেষ কথা।
স্পন্দন অসহায় চোখে চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে।মুখ ফুটে বলতেও পারছেনা কিছু।বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। চন্দ্র চোখ দিয়ে ইশারা করলো শান্ত থাকার জন্য। তারপর বললো,
__আজকে হঠাৎ মেয়ের প্রতি এতোটা কেয়ার নিতে শুরু করলে কেনো আব্বু?যেদিন তোমার মা তোমাকে আমার সাথে স্পন্দনের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন সেদিন কোথাও ছিলো তোমার এই ভালোবাসা?
__আমি সেদিন অসহায় ছিলাম চন্দ্র মা। কিন্তু আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।ওরা তোকে ভালো রাখতে পারবে না।সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝে গেছি।
__আমি স্পন্দনকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। সেদিন আমাকে তোমরা জোর করে বিয়ের আসরে বসিয়েছো। আজকে আমি বলছি আমি আমার স্বামীকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। কোথাও না।
চন্দ্রের এমনিতেই শরীর ভালো না।তার উপর এভাবে উত্তেজিত হওয়াতে আবার খারাপ লাগছে।স্পন্দন চন্দ্রকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,
__প্লিজ তোমাদের পায়ে পড়ি। আমার চন্দ্র অসুস্থ।তোমরা একটু চুপ করো প্লিজ।ওর কষ্ট হচ্ছে।
সবাই একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।স্পন্দন এখনো চন্দ্রকে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে।বাইরে প্রচন্ড শোরগোল শুরু হয়েছে।দুই পক্ষ থেকে পাল্টা পাল্টি অভিযোগ করা হচ্ছে। এমন সময় স্পন্দনের দাদিমা বললেন,
__সবাই চুপ করো।আমি বেঁচে থাকতে তোমাদের সাহস কি করে হয় আমার নেওয়া সিদ্ধান্তকে ভুলে যাও। চন্দ্র দিভাই আর স্পন্দন দাদুভাইকে কেউ আলদা করতে পারবেনা। ওদের এই দাদিমা বেঁচে থাকতে তো নয়।যাও নিজেদের কাজ করো।ছেলের বাড়ি থেকে লোকজন আসার সময় হয়ে গেছে। এখন আমি কোনো ঝামেলা চাই না।
সবাই শান্ত হয়ে গেলো। কিন্তু চন্দ্রের বাড়ির লোকজন বিয়ে ছেড়ে বেড়িয়ে গেলো।দাদিমার কথা মতো কেউ তাদের আটকায় নি।স্পন্দন দাদিমাকে বললো,
__বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে আমি চন্দ্রকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই। আমি ওকে এখানে আর এক মুহূর্তও রাখতে চাই না।
দাদিমা সম্মতি দিয়েছেন।ভালোয় ভালোয় বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে স্পন্দনরা বাড়িতে ফিরে গেছে। চন্দ্র আবার কলেজ যেতে শুরু করেছে।স্পন্দনের কড়া নির্দেশ চন্দ্র একা যেতে পারবে না আবার আসতেও পারবে না।যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেনো চন্দ্রকে স্পন্দন ই কলেজে আনা নেওয়া করে।
সেদিন চন্দ্র একা ছিলো।ওর বান্ধবীরা কলেজ আসেনি। চন্দ্র ক্লাস শেষে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো নিচে।স্পন্দন নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছে।একটু দেরি করলেই উন্মাদ হয়ে যাবে।এসব ভাবতে ভাবতে তাড়াতাড়ি করে পা বাড়ালো চন্দ্র। হঠাৎ মনে হলো কেউ ওর হাত পেছনে আড়মোড়া দিয়ে ধরে মুখ চেপে টানতে টানতে একটা ক্লাসরুমে নিয়ে গেছে। চন্দ্র একেতো ভয় পেয়ে গেছে তার উপর ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু লোকটার জোরের সাথে চন্দ্র পেরে উঠছে না। হঠাৎ একটা বিশ্রী রকমের হাসি হাসলো লোকটা। এরপর বললো,
__ওয়েলকাম মিসেস্ স্পন্দন মির্জা। আহ্ এভাবে ছটফট করতে নেই গো ময়না পাখি।
চন্দ্র উমম্ উমম্ শব্দ করছে।
__কিছু বলার জন্য ছটফট করছেন ভাবী? কিন্তু আমি বললে তো কারোর আর বলার অধিকার থাকে না ভাবী। আপনি জানেন আপনার স্বামী একটা ল’ম্পট দুশ্চরিত্রের?সে একটা ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। আপনার শ্বশুর মিস্টার সৈয়দ মির্জার সাথে আপনার স্বামীর এতো দ্বন্দ্ব আর শত্রুতা কেনো জানেন? আপনার শ্বশুর ও একটা মুখোশ ধারী সাপ। গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন স্পন্দন মির্জা কে কি কি কুকীর্তি করছে বাপ ছেলে মিলে।আর আপনার স্বামীকে বলে দেবেন আমার কাজ হাসিল করতে আমি আমার পথের কাঁটাকে ও ক্ষমা করি না।
কথা গুলো বলেই এক ধাক্কায় চন্দ্রকে ঠেলে ফললো। চন্দ্র উঠে দাঁড়িয়ে বাইরে এসে দেখে কোথাও কেউ নেই।তাই ওয়াশরুমে গিয়ে হাত মুখ বেয়িয়ে নিচে নেমে দেখে স্পন্দন খুঁজছে।এই টুকুতেই অস্থির হয়ে গেছে। চন্দ্র নিজেও আজ বুঝতে পারলো ওকে নিয়ে এতো ভয় কেনো পায় স্পন্দন। চন্দ্র এক দৌড়ে গিয়ে স্পন্দনের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো।স্পন্দন কিছু না বুঝলেও ও এটুকু বুঝতে পারলো হয়তো কোনো কারণে ভয় পেয়ে গেছে।স্পন্দন হাতের বাঁধন শক্ত করে রেখে ঠোঁট দিয়ে চন্দ্রের কপাল ছুঁয়ে দিয়ে বললো,
__কি হয়েছে চন্দ্র?
__কি কিছু হয়নি স্পন্দন। আমি আপনাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
__পাগলী আমি তো গেইটে তোকে দাঁড়ানো না দেখে ভেতরে এদিকে ওদিকে দেখছিলাম। ভাবছিলাম ওদের সাথে আড্ডা দিতে বসে গেছে নাকি আমার চন্দ্র।আর এদিকে স্পন্দনকেই ভুলে গেছে।
__কখনো না। কোনোদিন না। চন্দ্র স্পন্দনকে কোনোদিন ভুলতে পারে না।নাহ্ এটা হতেই পারে না।
চন্দ্রকে এতো উত্তেজিত হতে দেখে স্পন্দন আরো অবাক হলো।তবে মুখে কিছু না বলে দুই হাত দিয়ে মুখটা তুলে ধরে বললো,
__আমি মজা করছিলাম চন্দ্র। এভাবে কষ্ট পাচ্ছিস কেনো?
চন্দ্র জিভ দিয়ে ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিয়ে বললো,
__বাসায় যাবো স্পন্দন। আমাকে নিয়ে বাসায় চলেন।
স্পন্দন আর ঘাঁটালো না চন্দ্রকে। গাড়িতে উঠতেই চন্দ্র স্পন্দনের একটা হাতের ভেতর হাত দিয়ে কাঁধে মাথা রাখলো।স্পন্দন এবার পেছনে কাউকে চোখে ইশারা করলো। এরপর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। চন্দ্র আর স্পন্দনকে অফিসেই যেতে দেয়নি।স্পন্দন নিজেও আর যায়নি।
এই মুহূর্তে স্পন্দনের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে চন্দ্র।স্পন্দন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। দুপুরের ঘটনায় স্পন্দনের মধ্যে যে চাপা টেনশন কাজ করছে না তা নয়। শুধু চন্দ্রকেই বুঝতে দিচ্ছে না।ফোনে একটা মেসেজ এলো। সেখানে একটা ঠিকানা লেখা।সেটা একবার পড়ে নিয়ে ফোনটা রেখে দিলো। চন্দ্রকে ধীরে ধীরে শুইয়ে দিয়ে ঝটপট তৈরি হয়ে বেরিয়ে গেলো স্পন্দন।যাবার আগে মাকে বলে গেছে চন্দ্রের খেয়াল রাখতে।
সন্ধ্যা এখনো ঠিক নামেনি।রাস্তাটা এমনিতেই শুনশান এই সময় থেকেই। হঠাৎ হঠাৎ একটা দুটো গাড়ি পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে গেলেও লোকজন নেই বললেই চলে।স্পন্দন গাড়ি থেকে নেমে একটু ঢালু ধরে নিচের দিকে যেতেই একজন লোক কালো পোশাক পরে বেরিয়ে এলো।স্পন্দন কাছে যেতেই বললো,
__স্যার মা’লটা ভেতরেই আছে।দুই চার ঘা দিতেই সুরসুর করে সব উগলে দিয়েছে।বেটার সাথে আরো একজন আছে। সেই ই সেদিন ট্রাক চালাচ্ছিলো।আর আজকে প্রাইভেট কার।
স্পন্দন ভেতরে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসে বললো,
__চৌধুরীর কাজ থেকে কত টাকা খেয়েছিস?
__এক লাখ।আগে পঁচাত্তর আর আজকে ত্রিশ।
__আমি তোদের আরো বাড়িয়ে দিবো।সেইম কাজটা চৌধুরীর সাথে করতে হবে।
দুজনেই অবাক।সাথে মিশাল ও।মিশাল হলো স্পন্দনের বডিগার্ড।মিশালের মনে একটু কিন্তু কিন্তু থাকলেও স্পন্দনের বিরুদ্ধে কিছু বললো না। কারণ স্পন্দন যখন এই কাজ করছে তখন নিশ্চয়ই কিছু ভেবেচিন্তে করছে। ওদের ছেড়ে দিতেই স্পন্দন বললো,
__তোমার সবথেকে বিশ্বাস যোগ্য লোকটাকে এদের পেছনে যেতে বলো।যদি টোপ গিলেই থাকে তাহলে কাজটা করবে।আর না হলে তাকে অর্ডার দিবে।আর তুমি ভালো করেই জানো ঠিক কি অর্ডার তোমাকে দিতে হবে।
__জ্বী স্যার।আমি এখনি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
স্পন্দন তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে উঠে বাসার পথে এগুতে লাগলো। চন্দ্রকে রেখে আসছে তাই। চন্দ্র নিচে নেমে বড় আম্মুকে বললো,
__বড় আব্বু কোথায়?
__আরে চন্দ্র উঠে গেছিস?খেয়ে নে কিছু?তোর বড় আব্বু তো ঘরেই আছে।একটু আগে ফিরলো।
__বড় আব্বু?আসবো?
__হ্যাঁ আয় মা।কিছু বলবি?
__জ্বী বড় আব্বু।
__স্পন্দনের সাথে তোমার এতো দূরত্ব কেনো বড় আব্বু?
চমকে উঠলো সৈয়দ মির্জা। চন্দ্র আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,
__দুই বছর আগে কি ঘটেছিল বড় আব্বু?হৃদি আপু কোথায়?তার সাথে কি ঘটেছিল?
সৈয়দ মির্জা ঘামতে শুরু করেছে।রুমাল দিয়ে বারবার কপাল মুছতে লাগলেন। চন্দ্র আবার বললো,
__আমি ওতোটাও ভালো না বড় আব্বু। আমার আর স্পন্দনের মধ্যে যদি কারো জন্য দূরত্ব তৈরি করা হয় তাহলে আমি ঠিক কি কি করতে পারি তা তুমি ভাবতেও পারবে না বড় আব্বু। ভবিষ্যতে আমার পেছনে কাউকে লাগাতে হলে বুঝে শুনে লাগিও।আজ কিছু বলিনি বলে এরপর বলবো না এটা ভেবে থাকলে ভুল করবে।
চন্দ্র গটগট করে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। সৈয়দ মির্জা ধপ করে বসে পড়লো।মনে মনে ভাবতে লাগলেন,
চন্দ্র কি তবে সব জেনে গেছে?নয়তো এভাবে কথা বলতে তো চন্দ্রকে আগে কখনো দেখিনি।
#চলবে,,,,,,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। কেমন লাগছে কমেন্ট করে বলবেন। সাথে থাকবেন সবাই।#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি
পর্ব___১৬
বেশ চিন্তিত হয়ে কাউকে ফোন করলেন সৈয়দ মির্জা। বললেন,
__চন্দ্র তোমাকে দেখে ফেলেছে?
__কোথায় না তো।
__সত্যি করে বলো।ও আজকে আমার চোখে চোখ রেখে কথা শুনিয়েছে।শাসিয়েছে ও।
__কিন্তু আমাকে তো দেখার কথা নয় স্যার।
__দশ মিনিটের মধ্যে আমার অফিসে এসে দেখা করো। আমি আসছি।
__ওকে স্যার।
চন্দ্র সারা বিকেল মাথা ধরেছে বলে রুমেই ছিলো।বড় আম্মু ডাকলেও নিচে যায়নি।স্পন্দন এখনো ফিরেনি। সন্ধ্যা হয়ে আসলে চন্দ্র ছাদে গিয়ে পায়চারি করতে লাগলো।একটু পরে ছাদের কর্নিশে দাঁড়িয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো,
__আমি করেছি তোমায় আমার স্বত্তাসঙ্গিনী
রেখেছি হৃদয় মাঝে অতি সঙ্গোপনে।
তোমাকে ছুঁয়ে দিয়ে শিখেছি ভালোবাসার অর্থ
নিজেকে রাঙিয়েছি সাত রং এর রংধনুর রং এ।
আজীবন হৃদয়ে রাখিয়া করে রেখো আমায় তুমি
তোমার ভালোবাসার বন্দনী।
আমি তোমার রংহীন জীবনে চটে যাওয়া সবটুকু রং হয়ে
নতুন করে রাঙিয়ে দিবো তোমার জীবন খানি।
হঠাৎ করেই কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে চন্দ্রকে। চন্দ্র জানে এটা স্পন্দন।স্পন্দনের প্রতিটি স্পর্শ তার কাছে স্পষ্ট।তার হৃদয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগিয়ে দেয় প্রতিবার নতুন করে।তাই চন্দ্র নড়াচড়া না করে চুপ করে আছে।স্পন্দন চন্দ্রের কাঁধে বিস্তৃত চুলের মধ্যে মুখ গুঁজে দিয়ে আড়ষ্ট গলায় বললো,
__এতোক্ষণে মনে হচ্ছে বুকটা শান্ত হয়ে এলো।
__শরীর খারাপ লাগছে স্পন্দন?
__উহু মনটা ছটফট করছিলো।
__কেনো?কি হয়েছে স্পন্দন?
__কিচ্ছু হয়নি চন্দ্র। তুই থাকতে স্পন্দনের কিছু হতেই পারে না যে। শুধু চন্দ্রকে এতো সময় বুকে নিতে না পেরে বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছিলো।
__আমি তো সব সময়ই আপনার সাথে থাকি স্পন্দন। আমার কথা যখন মনে পড়বে তখনই বুকে হাত দিয়ে দেখবেন আমাকে অনুভব করতে পারবেন।
__তা থাকিস চন্দ্র।তবে তোকে ছাড়া যে একটা মুহূর্ত ও থাকতে পারে না স্পন্দন। চন্দ্র তোর চুলের ঘ্রাণে যে মাদকতা অনুভব হয় তা আমার সমস্ত ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয় এক নিমিষেই।
__থাক হয়েছে।এতো বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলতে হবে না। নিচে চলেন। কফি এনে দেই । ভালো লাগবে আপনার।
__উহু।চুমু খেলে ভালো লাগবে চন্দ্র।
__দিনদিন আপনার মুখে কিছুই আটকাচ্ছে না স্পন্দন। কিভাবে মিনিটে মিনিটে চন্দ্রকে লজ্জায় ফেলবেন সেটাই ভাবতে থাকেন।
চন্দ্র যেই না ছাদ থেকে নামতে ঘুরে দাঁড়ালো তখনই স্পন্দন বললো,
__মাথাটা ভীষণ ধরেছে চন্দ্র।একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দে। আমি ঘুমাবো।
চন্দ্র বুঝতে পারলো সারাদিন অফিসের এতো ঝামেলা শেষ করে আবার এতো টেনশন মাথায় নিয়ে স্পন্দনের এই অবস্থা হয়েছে।তাই আর বেশি কিছু না বলে স্পন্দনকে নিয়ে নিচে নেমে গেলো।আধ ঘন্টা হতে চললো স্পন্দন ঘুমাচ্ছে। চন্দ্র পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এমন সময় স্পন্দনের ফোনে একটা মেসেজ আসাতে ভাইব্রেশন করে উঠলো। চন্দ্র সেদিকে তাকিয়ে কি মনে করে ফোনটা ধরলো। কিন্তু খুলতে পারলো না লক করা।তাই উপর দিয়ে টেনে দেখতে লাগলো। শুধু একটা লাইন পড়তে পারলো।যেখানে লেখা ছিলো___আপনার সন্দেহ সঠিক স্যার। এরপর আমি আপনার কথা মতো,,,,,,,
চন্দ্রের বুকটা কেঁপে উঠলো। তাহলে কি স্পন্দনের উপর কোনো বিপদ আসছে।আর ভাবতে পারলো না চন্দ্র।ফোনটা জায়গায় রেখে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। নিঃশব্দে ঘরের বাইরে চলে গেলো।মাথায় একটাই কথা ঘুরছে কি নিয়ে সন্দেহ হয়েছিল স্পন্দনের।আর এরপরে ঠিক কি লেখা ছিলো!
__বড় আম্মু?
__কিছু বলবি চন্দ্র?মাথা ব্যথা কমেছে তোর?
__আমি ঠিক আছি বড় আম্মু। তোমার ফোনটা একটু দিবে?
__রুমেই আছে। গিয়ে নিয়ে নে।
চন্দ্র রুমেই ঢুকতে যাবে মনে হলো কেউ গলাটা চেপে চেপে ফোনে কথা বলছে। চন্দ্র আর রুমে না ঢুকে বাইরে থেকে কান পেতে শুনতে লাগলো।
__আবরার চৌধুরী তুমি এতো দিন ধরে যা করেছো করেছো। এবার আর তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে দিলাম।
উল্টো দিকের কি কথা এলো সেটা চন্দ্র বুঝতে পারলো না। আবার এদিকের চাপা হু’ঙ্কার শুনতে পেলো চন্দ্র।
__তুমি তোমার লিমিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকো। আমার বা আমার ছেলের কোনো ক্ষতি করতে এলে তোমাকে ছেড়ে দিবো না আগের বারের মতো।সে বার স্পন্দনের জন্য বেঁচে গেছো। এবার আর বাঁচতে পারবেনা।
__বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো চন্দ্র?
বড় আম্মুর কথায় থতমত খেয়ে গেলো চন্দ্র।আমতা আমতা করে বললো,
__এখন আর ফোন লাগবেনা বড় আম্মু। আমার খুব খিদে পেয়েছে।খেতে দাও।
__আচ্ছা যা স্পন্দনকে ডেকে নিয়ে আয়। আমি খাবার দিচ্ছি।
চন্দ্র ভেবেছিলো ওর আব্বু কে ফোন করবে। কিন্তু বড় আব্বুর কথার পর সেটা আর করতে আগ্রহী হলো না।তাই খিদে পেয়েছে বলে বাহানা দেখিয়ে চলে এসেছে। কিন্তু এই আবরার চৌধুরী আবার কে? এদের সাথে বড় আব্বু বা স্পন্দনের ই বা কি শত্রুতা।এসব ভাবতে ভাবতে ঘরে এসে দেখে স্পন্দন নেই। বেলকনিতে এগিয়ে যেতেই শুধু কানে এলো,
__আমি তোমাকে পরে ফোন করছি। ওদের ঠিকানা লাগিয়ে দাও।
পেছনে ঘুরে চন্দ্রকে দেখেই এক গাল হেসে স্পন্দন বললো,
__দেখেছিস চন্দ্র। তুই মাথায় হাত দিতেই আমার মাথা ব্যথা উবে গেছে।
__আপনি কিছু লুকাচ্ছেন স্পন্দন?
স্পন্দন একটু থেমে গেলো।পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বললো,
__হ্যাঁ লুকাচ্ছি।
__কি লুকাচ্ছেন স্পন্দন?
চন্দ্রকে কোমড় ধরে কাছে টেনে নিয়ে কপালে কপাল লাগিয়ে বললো,
__এই যে চন্দ্র আমাকে এতটা ভালোবাসে আর আমি একটুখানি ভালোবাসি।
__বড় আম্মু খেতে ডাকছে স্পন্দন।
__আচ্ছা তুই যা আমি আসছি।
রাত প্রায় বারোটা। দুজনে এখনো বেলকনিতে বসে আছে। খেয়ে আসার পর থেকেই এখানে বসে আছে।স্পন্দন হঠাৎ বললো,
__কাল কলেজ যেতে হবে না চন্দ্র।
__কেনো?
__কাল দুপুরের পর তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবো।
__কোথায় স্পন্দন?
__সেটা তো সারপ্রাইজ মাই ওয়াইফি।
চন্দ্র মুখ ফুলানোর ভঙ্গিতে বললো,
__ঘুম পাচ্ছে স্পন্দন।
__আচ্ছা চল।
পরদিন চন্দ্র আর কলেজে যায়নি। সারাদিন বড় আম্মুর সাথে অনেক বকবক করে সময় কাটিয়েছে। দুপুরের পর বড় আম্মু চন্দ্রকে নিজের ঘরে ডাকলেন। বললেন,
__আজকে আমি আমার চন্দ্রকে সাজিয়ে দিবো। একদমই স্পন্দনের মনের মতো করে।
চন্দ্র কোনো আপত্তি করলো না।বড় আম্মু আলমারি খুলে একটা সুন্দর নীল রঙের শাড়ি বের করলেন। চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে বললেন,
__ছোটবেলা থেকেই স্পন্দনের খুব পছন্দ ছিল এই শাড়িটা। খুব আবদার করে বলতো, মা এই শাড়িটা পড়বে আজকে। আমি চাই আজকে ঠিক সেই শাড়িটাই আমার চন্দ্রকে পড়িয়ে দিতে।স্পন্দনের পছন্দের শাড়িতে তার বউকে দেখতে কেমন লাগে সেটাও পরীক্ষা করবো আজকে।
চন্দ্র লজ্জা পেয়ে মাথা নামিয়ে নিলো।মুখে কিছু বললো না।বড় আম্মু খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছে।কপালে টিপ চোখে কাজল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে। বাইরে থেকে গাড়ির হর্ন বাজতে লাগলো। চন্দ্রের বুঝতে বাকি নেই যে স্পন্দন এসেছে।বড় আম্মুকে সালাম দিয়ে চন্দ্র বাইরে গেলো।চুল গুলো ছাড়া। হাঁটার সময় তা দুলতে লাগলো। চন্দ্র কানের পাশে গুঁজে নিতে নিতে গাড়ির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।স্পন্দন যেনো থমকে গেছে।ওর হার্টবিট দ্রুত চলছে।গলায় কথা আটকে আসছে চন্দ্রকে শাড়িতে দেখে। এভাবে স্পন্দনকে তাকাতে দেখে চন্দ্র আরও লজ্জা পেয়ে গেছে। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রেখে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসতেই স্পন্দন বললো,
__আজকে তো তোর ভয়ং’কর প্লান আছে মনে হচ্ছে চন্দ্র।
চন্দ্র মাথা তুলে তাকিয়ে বললো,
__আমি আবার কি করলাম স্পন্দন?
__এতো কিছু করার পরেও বলছিস আমি কি করলাম। চন্দ্র তুই কিন্তু আজকে আমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করেছিস। এরপর আমি যদি উল্টাপাল্টা কিছু করি তখন কিন্তু আমার কোনও দোষ নেই।
__কি করবেন আপনি?
__আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না চন্দ্র। আমার মনে হচ্ছে আমার নিজের মধ্যে আমি আজকে আর নেই রে। তুই কিন্তু শাড়ি পরে এসে ভয়ানক অপরাধ করেছিস চন্দ্র।
__স্পন্দন আপনি কিন্তু আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন। কেঁদে ফেলবো কিন্তু।
স্পন্দন মুচকি হেসে আর কিছু বললো না। বুঝতেই পারছে চন্দ্র এমনিতেই লজ্জা পেয়ে আছে।তার উপর ভয় দেখালে সত্যি কেঁদে ফেলবে।তাই চুপচাপ করে গাড়ি নিয়ে গন্তব্যে ছুটলো।
#চলবে,,,,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। পরীক্ষা চলছে তার মধ্যে ও গল্প দিতে চেষ্টা করছি।যদি ছোট বা এলোমেলো মনে হয় তবে খুব খুব দুঃখিত লেখিকা।