অন্তিম প্রণয় পর্ব -০৩

#অন্তিম_প্রণয়`[৩]
#সুমাইয়া_মনি

রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের স্বচ্ছ নিয়নবাতির আলোতে পথ পাড়ি দিচ্ছে হিয়ান। রাত প্রায় এগারোটা বাজে। ঘুম নেই চোখে বিন্দুমাত্র। রাস্তার চারপাশে ছিমছাম নিরবতা । মাঝে মাঝে কয়েটা গাড়ি দ্রুত গতিতে ছুটে রাস্তার ধুলো উঁড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে। কালকের ঘটনার পর থেকেই উদাসীন মন বিষণ্ণ হয়ে আছে। বার বার মনে পড়ছে অচেন সেই রমণীর কথা। শার্ট পরিবর্তন করার পর লালচে দা’গ দেখেছে। বন্ধুদের কথা সত্যি প্রমাণিত হলো। এটি র’ক্তে’র দাগ ছিল।
পদতলে তাকিয়ে সরু নিশ্বাস নিল হিয়ান। সেই রমণীর কথা মনে উঠতেই ইরিনের চিন্তাভাবনা এসে ভর করে। রমণীর ফিসফিস করে বলা কথা গুলো হিয়ানের কানে এখনো প্রতিধ্বনি হচ্ছে । আপাতত রমণীর বিষয়টি পাশে রাখতে চাইছে। তার মন টানছে আগের স্মৃতিগুলো। তিন বছর আগের ব্যথা গুলো আজ বুকের মাঝে নাড়া দিচ্ছে। এমন এক রাতে ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে ইরিনের সাথে কতই না ফোনালাপ হয়েছে। হাসি-ঠাট্টায় রাত পার করেছে। আবার কখনো সময় কেটেছে ফেসবুকে চ্যাট করে। হিয়ান একটি ল্যাম্পপোস্টের নিচে বসে। ফোনটা বের করে ডাটা অন করে ফেসবুকে প্রবেশ করে। ইরিনের সাথে প্রথম দেখা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে হলেও কথাবার্তা আরম্ভ হয় ফেসবুক থেকে। অতীতের কিছু ঝলক ফুঠে উঠে চোখের সামনে।

অতীত…

রাত তখন বারোটা। ফেসবুকে নিউসফিডে আজাইরা ঘুরাঘুরি করছিল হিয়ান। হঠাৎ একটি নোটিফিকেশন আসলো ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্টের। আইডিটি চেক করতে নিলে দেখে আইডি লক করা। নাম ছিল ‘ইরিন জাহান’ নামটি তার কাছে পরিচিত মনে হয়। বই মেলার কথা মাথায় আসলো। রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করার সময়ে চোখে পড়ে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্টি ক্যান্সেল করে দিয়েছে। অদ্ভুত একটা ব্যাপার মনে হয় হিয়ানের কাছে। প্রোফাইলে তার পিক ছিল না। একবার ফেইক আইডি মনে করেও দেখে ফলোয়ার চার হাজার। এজন্য হিয়ানের মনে ফেইক আইডির ব্যাপারটা সরে যায়। হিয়ান আইডিটির লিংক কপি করে সেভ করে রাখল। তারপর টেক্সট দিলো।
‘কী ব্যাপার ম্যাম রিকু দিয়ে আবার সাথে সাথে ক্যান্সেল করে দিলেন যে? আপনি কী আমাকে চিনেন?’
পাঁচ মিনিট পর ইরিন ম্যাসেজটি সিন করল। হিয়ানের টেক্সট দেখে কিঞ্চিৎ বিরক্ত হয়। ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে হিয়ান আহমেদ নামে আইডিটি নজরে পড়ে ইরিনের। নিচে ফেলে ওঁকে। আগ্রহ বশত আইডি চেক করতে গিয়ে ভুলে চাপ লেগে রিকু চলে যায়। ক্যান্সেল করার পরপরই হিয়ানের মেসেজ আসে। ইরিন অনিহা নিয়ে ত্যা’ড়া রিপ্লাই দেয়,
‘রিকু দিয়ে ক্যান্সেল করেছি তাতে আপনার কী? আর আমি আপনার মতো কোনো সুপুরুষকে চিনি না।’
এমন রিপ্লাই দেখে হিয়ানের কিছুটা সন্দেহজনক মনে হয়। ওঁকে বই মেলার ইরিন মনে হতে লাগে। আর এটাও বুঝে কঠিন ধরনের ঘা’ড় ত্যা’ড়া মেয়ে। হিয়ান রিপ্লাই দিল,
‘ম্যাম আপনার পাশে যদি পানির জগ থাকে, তাহলে আপনি আপনার মাথাটা সেই জগের মধ্যে ভিজিয়ে রাখুন। মাথা ঠান্ডা হয়ে যাবে। মেবি এখন আপনার মাথাটা গরম আছে।’
ইরিন এস,এম,এস সিন করে। এবং আবার রিপ্লাই দেয়,
‘ভেজাব না?’
‘তাহলে চু’বা’ন।”
‘আপনার সমস্যা কী? শেদে, শেদে কথা কেন বলছেন?’
‘আমার আবার ঘা’তা মেয়েদের সাথে কথা বলতে খুব ভালো লাগে।’
ইরিন চোখ ছোট ছোট করে রিপ্লাই দিলো,
‘ঘা’তা মানে কী?’
হিয়ান হাসে। তারপর টাইপিং করে উত্তর দেয়,
‘ঘা’তা মানে হচ্ছে ঘাড় ত্যাড়া। সংক্ষেপে ঘা’তা ক্লিয়ার?’
ইরিন ও’কে ঘাড় ত্যাড়া বলেছে । তাই রেগে কয়েকটা রাগী ইমোজি পাঠাল। যেটা দেখে হিয়ান হাসির ইমোজি দেয়। ইরিন আরো রেগে যায়। হিয়ান লিখে,
‘আরে ঘা’তা কুল!’
ইরিন রেগে চুপ করে রইলো। কোনো টেক্সট দিল না। হিয়ান তার রিপ্লাই না পেয়ে আবার ইরিনকে এস,এম,এস দেয়।
‘এই যে ঘা’তা ম্যাম?’
ইরিন সিন করল না।
হিয়ান ফের টেক্সট দেয়,
‘শুনছেন, ঘুমিয়ে গেছেন নাকি?’
এবারও রিপ্লাই দেয় না ইরিন। হিয়ানও আর টেক্সট দিল না। প্রায় দশ মিনিট পর ইরিন পুনরায় রিকুয়েষ্ট পাঠাল। লিখলো,
‘হ্যালো! ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করুন।’
টেক্সট দেখে হিয়ান রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করে। ইরিনের টাইমলাইন ঘেটে তার ছবি খুঁজতে থাকে । তবে কোনো ছবি পায় না । হিয়ান জিজ্ঞেস করল,
‘আপনি কী সেই ইরিন? যার সঙ্গে বই মেলায় দেখা হয়েছিল?’
‘হ্যাঁ!’
‘ইরিন কী আপনার রিয়েল নাম?’
‘হ্যাঁ! আপনি,কোথায় থাকেন?’
‘বরিশাল৷ আপনি?’
‘বলব না।’
‘এটা কোনো কথা?’
‘এটাই কথা। আপনি কিসে পড়েন?’
‘ আমিও বলব না।’
‘না বললে নেই।’
‘ঘা’তা।’
ইরিন রেগে যায়। লিখে,
‘আর আপনি অ’ভ’দ্র লোক।’
‘তবুও আপনার চেয়ে বেটার আছি।’

দু’জনার মাঝে ঝগড়া আরম্ভ হয়। তখন ঘড়িতে প্রায় দুইটা ছুঁই ছুঁই । তিনটা পর্যন্ত তাদের ঝগড়া চলতে থাকে। শেষে ইরিন বিরক্ত হয়ে অনলাইন থেকে বেরিয়ে যায়।
তাদের সম্পর্ক ঝগড়াঝাটি দিয়েই এক প্রকার শুরু হয়েছিল। কথা বলার চেয়ে ঝগড়া বেশি হতো। ইরিন হিয়ানের পরিচয় জানতো। এ ক’দিন সব কিছুই জানা হয়েছে তার। তবে ইরিন তার পরিচয় ও নিজের সব কিছুই গোপন রেখেছে। ভার্চুয়ালে হিয়ানের কোনো মেয়ের সাথে তেমন কথা না হলেও। ইরিনের সঙ্গে ঠিকিই কথা হতো। ইরিনকে রাগানোই ছিল হিয়ানের মূল কাজ। যার ফলে হিয়ানের ওপর প্রচুর বিরক্ত হতো ইরিন।
একদিন সে-ই বিরক্ত হওয়া লোকটির প্রেমে পড়ে। দু’জন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। দেখাসাক্ষাৎ বিহীন ফোন ছিল তাদের কথা আদান-প্রদান করার মূল উৎস। খুব সুন্দর ভাবে চলছিল তাদের প্রণয়!
গাড়ির তীব্র হর্ণের আওয়াজে হিয়ানের চৈতন্য ফিরল। ফাঁকা রাস্তায় হর্ণ বাজানো বোকামি। হিয়ান বো’কার দলে যুক্ত করল ড্রাইভার ব্যক্তিকে। ঘড়িতে নজর বুলিয়ে দেখে বারোটা বাজতে চলল। দ্রুত সেখান থেকে উঠে বাড়ির গন্তব্যে হাঁটতে লাগলো।
.
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here