#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১৬_১৭
হঠাৎ আরিয়ান গাড়ি ব্রেক করায় অদ্রিতা ভাবনা থেকে বের হয়ে আসে।বাহিরে তাকিয়ে দেখে তারা বাড়িতে চলে এসেছে।আরিয়ান প্যাকেটগুলো নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরে আর তার পিছু পিছু অদ্রিতাও গাড়ি থেকে নেমে যায়।অদ্রিতা গিয়ে বাড়ির কলিং বেল বাজাতেই তার মা ছোটে এসে দরজা খুলে দেয়। আরিয়ান অদ্রিতার বাবাকে সালাম দিয়ে ভিতরে ঢুকে। অদ্রিতার ভাই এসে আরিয়ানের হাত থেকে প্যাকেট গুলো নিয়ে যায়।আরিয়ানও সবার সাথে হাসি মুখে সুন্দর করে কথা বলে।তার ভাই বোনের সাথে মজা করছে। আমি আশা করিনি ওনী এত ভালো ব্যবহার করবেন আমার পরিবারের সবার সাথে। তাই কিছুটা অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকালাম। আমার তাকানো দেখে ওনীও বুঝতে পারছেন যে আমি অবাক হচ্ছি তাই আমার দিক থেকে অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নেয়।
অদ্রিতার বাবা আরিয়ানের সাথে কথা বলা শেষ করে অদ্রিতাকে জিজ্ঞেস করে,”তুই কেমন আছিস?”
আমি ভালো আছি , তুমি?
একটু খারাপ…. তোকে ছাড়া কি করে ভালো থাকি বলতো হাসি দিয়ে বলে।
অদ্রিতাও হেসে তার বাবাকে জরিয়ে ধরে।তার বাবার সাথে কথা বলা শেষ হলে ছোট ভাই বোনের সাথে দুষ্টমি করে। আরিয়ান এইসব কিছু বসে বসে দেখছে।এতদিন তার সাথে যেই অদ্রিতা ছিল তার সাথে এই অদ্রিতার কোন মিল নেই। এখানে এসেই হাসি খুশি হয়ে গেছে।সবার সাথে কত সুন্দর কথা বলছে, মজা করছে আর বাড়িতে তো সারাদিন চুপচাপ থাকে। মনে হয় যেন সে কথাই বলতে পারে না।এই সব কিছু ভাবছে এমন সময় অদ্রিতার মা আরিয়ানের কাছে এসে বলে….
বাবা,আমার মেয়েটাকে একটু দেখে রেখো। আমার মেয়েটা একটু কালো তাই হয়তো তোমার ওকে পছন্দ নাও হতে পারে কিন্তু আমার মেয়ের মন অনেক ভালো। কেউ তাকে একটু ভালোবাসলে, একটু করলে,,সে তার জন্য সব কিছু করতে পারে।আমি তো ওর মা তাই ওর মুখ দেখেই বুঝি হয়তো সে কষ্ট পাচ্ছে। তুমি ওকে কোন কষ্ট দিও না। এতদিন ও অনেক কষ্ট পেয়েছে তাই তুমি ওকে একটু ভালোবাসো আর যত্ন করো।
আরিয়ান মুচকি হেসে বলে জ্বি মা,… অবশ্যই। এখন তো ওর সব দায়িত্ব আমারই। তাই আমি ওকে দেখে শুনে রাখবো।আপনারা কোন চিন্তা করবেন না, আমি তার কোন অযত্ন হতে দিবো না ।( অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলে)
অদ্রিতার মা আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার বাবাব বলেন,” ওরা মাত্র এসেছে।এখন ওদের ফ্রেস হয়ে একটু রেস্ট নিতে দাও যা কথা আছে পরে বলো।অদ্রিতা মা… আরিয়ানকে তোর রুমে নিয়ে যা ফ্রেস হয়ে একটু বিশ্রাম নিক।অদ্রিতা তার বাবার কথা মতো আরিয়ানকে নিয়ে রুমে যায়।”
আরিয়ান রুমে ঢুকেই দরজায় বন্ধ করে দেয়।হঠাৎই দরজা বন্ধ করায় অদ্রিতা ভয় পেয়ে যায় আর বলে আপনি দরজা বন্ধ করছেন কেন। আরিয়ান তার কথার উওর না দিয়ে সোজা তার দিকে এগিয়ে যায়।অদ্রিতা আরিয়ানে দিকে তাকাতেই দেখে তার চোখ লাল হয়ে আছে, বোঝাই যাচ্ছে সে রাগে আছে।এতক্ষন তো সব ঠিক ছিল। কি সুন্দর সবার সাথে হাসি মুখনিয়ে কথা বলেছেন।কিন্তু হঠাৎ করে কি এমন হলো যে ওনী এততা রেগে গেলেন?আরিয়ানের আগানো দেখে সে পিছিয়ে যেতে থাকে আর পিছাতে পিছাতে তার পিঠ দেওয়ালের সাথে আটকে যায়।পিছনে আর যাওয়া জায়গা না থাকায় অদ্রিতা ভয়ে ঢুক গিলতে থাকে। ওইদিন তো সামান্য বিষয়ে আমার সাথে কটতা খারাপ আচরণ করেছেন।এত জোরে হাত চেপে ধরেছেন যে আজও ব্যাথা করছে আজকে আবার কি করবেন?
আরিয়ান এসেই শক্ত করে অদ্রিতার হাত চেপে ধরে ঝাড়ি মেরে বলে,”এখানে এসেই আমার নামে নালিশ করা শুরু করে দিয়েছ?”
অদ্রিতা ভীতু স্বরে বলে, ” কি..কিসের নালিশ। আপনি কি বলছেন আমি তো কিছুই বুঝছিনা।আরিয়ান এতোই জোরে অদ্রিতার হাত চেপে ধরেছে যে ব্যাথায় তার চোখ দিয়ে পানি পরছে।”
আরিয়ান রাগে গম্ভীর স্বরে বলে,” এমন ভাবে কান্না করছো যে আমি তোমাকে মেরেছি।কান্না থামাও এইসব ন্যকামি আমার পছন্দ না। তোমার মা কেন বললো যে… তুমি কালো বলে আমার তোমাকে পছন্দ হয়নি। তুমি কষ্টে আছো।আমি তো না করেছি যে এইসব কথা কাউকে না বলতে আর তুমি এসেই তোমার মাকে সব বলে দিয়েছো।আমার নামে তাদের কাছে নালিশ করেছো।”
আমি মাকে কিছু বলিনি। আপনার কোথায়ও কোন ভুল হচ্ছে।
আরিয়ান আরোও রেগে অদ্রিতার বাহুতে আরো জোরে চাপ দিয়ে বলে,” হুমম… সব ভুল তো আমারই হয়। তুমি যদি কিছু না-ই বলে থাকো তবে ওনী এই কথাগুলো কি করে বললেন। আন্সার মি?”
আরিয়ান এতোই জোরে হাতে চেপে ধরে যে ব্যাথ্যায় অদ্রিতার চোখ দিয়ে পানি পরছে।সে ভীতু স্বরেই বলে,”মা তো তাই হয়তো মেয়ের মুখ দেখে বুঝতে পেরেছে সে সুখে আছে না কষ্টে আছে। সব মাই তার সন্তানের মুখ দেখে বুঝতে পারে সে সুখে আছে না কষ্টে আছে। আপনার মা বুঝতে পারে না আপনি সুখে আছেন না কষ্টে আছেন।”
অদ্রিতার কথা শুনার পর আরিয়ানের খেয়াল হয়… সে তো এতক্ষন অনেক জোরে অদ্রিতার হাত চেপে ধরে আছে তাই সাথে সাথে সে তার হাত ছেড়ে দেয়।রাগ উঠলে সত্যিই মানুষের ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অদ্রিতা তো তার সামনেই সবার সাথে কথা বলেছে সে তো এইসব কিছুই বলেনি। কেন যে এমন হয়,আমি কন্ট্রোলই করতে পারি না নিজের রাগকে। আর বার বার একই কাজ করে ফেলি।সে নিজের ভুল বুঝতে পারে তবুও সে অদ্রিতাকে সরি বলে না।ইগো বলেও একটা কথা আছে যা আরিয়ানের অন্য সবার থেকে একটু বেশিই আছে।অদ্রিতাকে সরি বলতে তার ইগোতে বাঁধছে। তাই সে বলে তোমার মা- বাবা যেন এই বিষয়টা না জানে। ওয়াশরুমটা কোন দিকে?
অদ্রিতা হাতের ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দেয় আর আরিয়ান কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে। একটু পরেই আরিয়ান ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে আর সাথে সাথেই অদ্রিতা ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে। আর এই ফাঁকে আরিয়ান অদ্রিতার রুমটা দেখতে থাকে,,,,
.
..
…
চলবে,,,,,
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১৭
অদ্রিতা ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে আর এই ফাঁকে আরিয়ান অদ্রিতার রুমটা দেখতে থাকে ।
রুমটা তার রুমের মতো ততোটা বড় নয় কিন্তু সুন্দর করে গোছানো ।দেখেই বুঝা যাচ্ছে এইটা কোনো মেয়ের রুম। ঘরের এক পাশে বই রাখার রেগ আছে আর সেখানে অনেক রকমের বই আছে।রুমে একটি পড়ার টেবিল আছে। সেখানে কয়েকটা বই সুন্দর করে গুছানো আছে আর তার পাশেই একটি ডায়রি রাখা আছে। ডায়রিটা দেখে আরিয়ানের অনেক ইচ্ছে হলো এইটার ভিতর কি লেখা তা দেখতে কিন্তু অন্যের জিনিস তো না বলে দেখা ঠিক না। তাই ডায়েরিটা পড়তে কেন জানি তার সংকোচ হতে লাগলো তবুও সে ডায়েরিটা খুলে পড়তে থাকে!
ডায়েরির শুরুতেই লিখা,,,
কালো হওয়া কি সত্যিই কোনো অপরাধ না অভিশাপ। আমি কালো বলেই তো সবাই আমাকে এত অবহেলা করে। কেউ আমাকে বুঝতে চেষ্টা করে না। কালো বলে কি আমি মানুষ না। আমারও তো মন আছে, আমারও তো কষ্ট হয় তা কেউ কেন বুঝে না?
ডায়েরির পরেরে পেইজে লেখা…..
#অপূর্ণতা এমন একটি শব্দ যা আমার জীবনে প্রতিটি পদে ওতোপ্রেতো ভাবে জড়িত।ছোটবেলায় তো অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম কই কোনোটাই তো পূর্ণতা পায় নি।
জীবনে এক ভালোবাসা চেয়েছিলাম তাও
অপূর্ণ রয়ে গেছে।হারিয়ে গেছে আমার থেকে অনেক দূরে।
জীবনে নিজের ইচ্ছায় কিছু হতে চাইলাম, সেই ইচ্ছে তাও আর হয়তো পূরন করা সম্ভব না।
পড়তে পড়তে ডায়েরীর একদম শেষে চলে আসে…..
আল্লাহ তো সবার জন্য একজন জীবনসঙ্গী লিখে রাখেছে। আমি তার অপেক্ষায় আছি। সে হয়তো আমাকে বুঝবে। কালো বলে কখনো আমাকে অবহেলা করবে না।আমি যেমন সে আমাকে সেভাবেই মেনে নিবে আর ভালোবাসবে। তখন আমার সকল দুঃখ কষ্টের অবসান হবে। তার ছোঁয়াতেই হয়তো কেটে যাবে আমার জীবনের সকল #অপূর্ণতা।তখনই হয়তো পূর্ণতা পাবে আমার জীবন।
হঠাৎই ওয়াশরুমে পানি পরা শব্দ বন্ধ হয়ে যায় তাই সে তাড়াতাড়ি ডায়েরিটা বন্ধ করে যে-ভাবে ছিল সেইভাবেই রেখে দিয়ে খাটের উপর শুয়ে গেম খেলতে থাকে।
অদ্রিতা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আরিয়ানকে বলে.. আপনি শুয়ে রেস্ট নিন আমি মাকে রান্নায় হেল্প করে আসি।এই বলে অদ্রিতা চলে আসতে চাইলে আরিয়ান তাকে ডাক দেয় আর সাথে সাথে অদ্রিতা পিছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে… কিছু লাগবে আপনার??
ফাস্ট এইড বক্সটা একটু নিয়ে আসো??
অদ্রিতা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,” কেন?”
আরিয়ান গম্ভীর স্বরে বলে আমি তোমাকে কোন প্রশ্ন করতে বলি নি।শুধু যা বলছি তা করো।
অদ্রিতা আর কিছু না বলে আরিয়ানকে বক্সটা দিয়ে চলে আসবে ঐ সময় আরিয়ান আবারও ডাক দেয়,,
আমিকি তোমাকে এখন চলে যেতে বলছি??
নাতো,,
আরিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে, “তবে চলে কেন যাচ্ছিলে…. এখানে বসো।”
আরিয়ানের এই আচরণে অদ্রিতা কিছুটা অবাক হয়। মনে মনে ভাবছে ওনী কি করে আমার সাথে এত ভালো ভাবে কথা বলছে?
অদ্রিতা কিছু না বলে আরিয়ানের সামনে বসে।
আরিয়ান শান্ত স্বরে অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তখন ঐভাবে এতটা জোরে তোমার হাত ধরা ঠিক হয়নি তার জন্য সরি।হাত দুটো দেখি।
অদ্রিতা হাত দুটো সামনের দিকে দিতেই, আরিয়ান দেখে সে যেখানে ধরেছিল সেখানে কালো হয়ে গেছে। অদ্রিতা এতটাও কালো নয় যে তা বুঝা যাবে না। আরিয়ান সেখানে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে পরে হাত ছেড়ে দেয় আবাও গেম খেলায় ব্যস্ত হয়ে পরে।”
আরিয়ানের এই সামান্য তম কেয়ারে অদ্রিতার মন খুশিতে ভরে যায়। তার কালো মুখটাও যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠে।আরিয়ানের নজরও তা এড়ায় না।তবুও সে আর কিছু বলে না।
কিছুক্ষন ঐভাবে বসে থাকার পরে অদ্রিতার খেয়াল হয় তা মা একা একা রান্না করছে তাই সে রান্না ঘরে চলে যায় তার মাকে হেল্প করার জন্য।রান্না ঘরে ঢুকতেই তার মা.. অদ্রিতার মুখ দেখেই বুঝতে পারে সে এখন অনেক খুশি। আসার সময়তো তার মুখ একদম কালো হয়েছিল তাদের সামনে ঠিকই হেসে হেসে কথা বলেছে তবুও তিনি বুঝেছেন তার মেয়ের মন ভালো নেয়। আর এখন তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তার মন অনেক ভালো আছে। তাই তিনি জিজ্ঞেস করে… কিরে এত খুশি কেন??
মা,ওনী সত্যিই অনেক ভালো। আমার অনেক কেয়ার করে। মেয়ে মুখে এই কথা শুনে তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। মনে মনে তিনি ভয় পাচ্ছিলেন আরিয়ান যদি তার মেয়েকে মেনে না নেয়, সে যদি তাকে আরও কষ্ট দেয় তবে তো তারা সারাজীবনের জন্য মেয়ের কাছে অপরাধী হয়ে থাকবেন। তাই তিনিও মনে মনে অনেক খুশি হলেন।
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১৮_২০
অদ্রিতার মা মুচকি হেসে বলেন,,, আচ্ছা তোর শ্বশুর- শ্বাশুড়ি তারা কেমন? তারা কি তোকে পছন্দ করে?
তারা অনেক ভালো। আমাকে তাদের নিজের মেয়ের মতে ভালোবাসে।
তোর রান্না কেমন লেগেছিল তাদের?তোর শ্বশুর- শ্বাশুড়ির কি তোর রান্না পছন্দ হয়েছিল নাকি হয়নি?
আমার রান্না ওনাদের সবার পছন্দ হয়েছে। আমার চলে যাওয়াতে তো সব কাজের চাপ তোমার একার ওপর এসে পড়েছে তাই না মা।মাহিরাকে তো ছোট থেকেই কোন কাজ করতে দেইনি তাই তো এখন ও কোন কাজ করে না।সব দিক তোমাকে একাই সামলাতে হয়।
তো কি হয়েছে।এই সবে আমার অভ্যাস আছে। তুই এই সব নিয়ে কোন চিন্তা করিস্ না নিজের সংসারের দিকে মনোযোগ দে।
অদ্রিতা হেসে বলে হুমম….. আচ্ছা মা একটা কথা বলি, আমাদের রোহিত তো এখন বড় হয়ে গেছে। এইবার অর্নাসে ভর্তি হবে তা ওর জন্য মেয়ে দেখা শুরু করি, ওর বিয়ে দিতে হবে না।আর তোমারও কাজের পেশার কমবে।( মজা করে…)
এরই মধ্যে রোহিত এসে বলে….
এই জন্যই তো তোমাকে আমি এত ভালোবাসি। তুমি ছাড়া আমার কষ্ট কেউ বুঝে না।এইবার তুমিই মা-বাবাকে বুঝিয়ে বলো আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে।
মা রেগে বলে দাড়া,, তোর খুব সখ না বিয়ে করার। আজ তোর সব সখ শেষ করছি।বেলুনটা দে তো। মাথায় বারি দেই পরে দেখি বিয়ে সখ কই যায়।
রোহিত মজা করে বলে,,, আমি কি আমার জন্য বলছি নাকি। তোমাদের ভালোর জন্যই বলছি।আপু আমাকে বাঁচাও….
অদ্রিতা মুচকি হেসে বলে,” আরে মা.. ওতো মজা করছে, ওকে মেরো না।”
রোহিত দুষ্টুামি করে বলে,,, না আপু আমি মজা করছি না। আমি সিরিয়াসলি কথাটা বলছি।আর তুমিও তো চলে গেছো মাহিরা একা একা বাড়িতে বোর হয় তাই তার জন্যও তো একটা ভাবি আনা দরকার তাই না।
অদ্রিতা একটু কপট রাগ দেখিয়ে বলে,,, খুব দুষ্ট হয়েছোট্ তাই না। দাড়া তোকে ঝাড়ু পিটা করতে হবে।
অদ্রিতার কথা শুনে রোহিত এক দৌড় দিল আর এই দিকে অদ্রিতা আর তার মা হাসতে হাসতে শেষ।
একটু পরে মহিরা এসে জিজ্ঞেস করলো আপু তুমি এখানে রান্না করছো কই ভাবলাম আজ তোমার আর দিলাভাই এর সাথে মজা করবো, আড্ডা দিব তা না তুমি মার সাথে আছো।
তুই গিয়ে গল্প কর তোর দুলাভাইয়ের সাথে… দেখ রোহিতও সেখানে আছে। তারা মনে হয় গল্প করছে। তুইও যা আমি একটু পরে আসছি।
আচ্ছা আপু,এইটা বলে সে অদ্রিতার রুমে যেতে থাকে আর মনে মনে রোহিতকে বকতে থাকে তাকে রেখে একা একা আড্ডা দেওয়ার জন্য।
রোহিত চলে গেল অদ্রিতার রুমে…..
রুমে ঢুকেই…. আসসালামু আলাইকুম দুলাভাই। একা একা কি করছেন? আজ কিন্তু সারাদিন আমাদের সাথে গল্প করতে হবে।
আরিয়ান হাসি মুখে বলে,” ওয়ালাইকুম আসসালাম। আজ তো আছি এই বাড়িতে ইচ্ছে মতো গল্প করা যাবে।তা কেমন আছো?”
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি .. আপনি??
আলহামদুলিল্লাহ।
আর কিছু বলতে যাবে এরই মাঝে মাহিরা রুমে ঢুকে বলা শুরু করে,
ভাইয়া তুমি একা একাই দুলাভাইয়ের সাথে গল্প করতে চলে এসেছো আমাকে তো নিয়ে আসতে পারতে। আর দুলাভাই আপনিও কেমন আমার কথা ভুলে গেলেন?
আরিয়ান একটু হেসে বলে,” তুমি যে কি বলো?তোমার কথা কি করে ভুলি?আমার একমাত্র শালিকা বলে কথা। তা কি এখনো অভিমান করে থাকবে না আমার সাথে গল্পও করবে। ”
মাহিরা কপট রাগ দেখিয়ে বলে, “থাক আর পাম দিতে হবে না।আর এইভাবে বলে কিছু হবে না আজ বিকালে আমাদের নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে।”
আরিয়ান হেসে বলে তা আর বলতে…. কোথায় যেতে চাও বলো?
শুধু মাহিরাকে একা নিয়ে গিলে হবে না আমাদের সবাইকে নিতে হবে। আবার ভয় পাবেন না কিন্তু সবার কথা বলছি বলে।
আমি ভয় কেন পাবো শালাবাবু…. তোমাদের আজ আমি ঘুরাবো বিকালে রেডি থেকো।
তারা আরও অনেকক্ষন গল্প করতে থাকলো… গল্প করতে করতে এক সময় রোহিত হঠাৎ করে মাহিরাকে এক কথা বললো আর সাথে সাথে সে আর আরিয়ান দুইজনই হেসে ফেললো। এই দেখে মাহিরা রোহিতকে মারা জন্য উঠলেই রোহিত দৌড় দিতে গিয়ে আলমারির সাথে ধাক্কা খায় আর সাথে সাথে আলমারির উপর থেকে একটা বক্স পরে।
বক্সটা দেখে আরিয়ান বলে এইটার ভিতর এই সব কিসের কাগজ দেখি?
আরিয়ানের কথা শুনে রোহিত আর মাহিরা দুই জনেই থেমে যায় আর রোহিত বক্সটা আরিয়ানের হাতে দেয়। আরিয়ান বক্সটা খুলে অবাক হয়….
প্রত্যেকটা কাগজে সুন্দর করে ডিজাইন করা। দেখে মনে হবে এইগুলো প্রোফেশনাল কোনো ডিজাইনার করেছে।তাই সে জিজ্ঞেস করে এগুলো কে করেছে?
রোহিত আর মাহিরা দুইজনে একসাথে বলে উঠে… এইগুলো আপু করেছে।আপু অনেক সুন্দর ডিজাইন করতে পারে। কিন্তু দেড় বছর আগে কি এমন হলো যে আপু এইসব ডিজাইন করা, আঁকা সব কিছু ছেড়ে দিয়েছে।
আরিয়ান বিষন্ন হয়ে বলে,”ওহ.. আচ্ছা।”
অদ্রিতা অনেকক্ষন আগেই ঘরে আসছে… এতক্ষন তার অনেক ভালো লাগছে আরিয়ানের ব্যবহার দেখে। তার ভাই আর বোনের সাথে এত সুন্দর করে কথা বলার জন্য মনে মনে সে অনেক খুশি হলো….
কিন্তু হঠাৎই বক্সটা দেখে তার অতীতের কথা মনে পরে যায়।অতীতকে ভুলার জন্যই তো সে তার ছোট বেলার স্বপ্নকে ছেড়ে দিয়েছে।
এই জিনিসটা তাকে এমন একজনের কথা মনে করিয়ে দেয় যাকে সে ভুলতে চায়। যে তাকে ঠকিয়েছে,মিথ্যা আশা দিয়ে পরে চলে গিয়েছে। এখন তো সে সব কিছু নতুন করে শুরু করতে চায় তবে সে কেন আবার তার সামনে চলে এসেছে!
অতীত….
এই আমার ব্লাক কুইন কি করছো?
অদ্রিতা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,” দেখতেই তো পাচ্ছেন নিলভাইয়া কি করছি এখন একদম বিরক্ত করবেন না।”
নিলয় রেগে গম্ভীর স্বরে বলে,”আমাকে একদম নিলভাইয়া বলে ডাকবে না। আমি কি তোমার ভাই হই নাকি যে আমাকে ভাইয়া বলো। কত দিন তোমাকে না করছি আমাকে ভাইয়া ডাকতে তবুও সেই তুমি আমাকে ভাইয়া বলো।এটা কিন্তু একদম ঠিক না।একদিন আমি এই সব কিছুর শোধ তুলবো দেখে নিও।”
অদ্রিতা নিলয়ের রাগ আরো বাড়ানোর জন্য বলে,”তবে কি ডাকবো বলেন? নিলদা,, বলে মনে মনে হাসে.. সে জানে যে এখন নিলয় রাগ করছে আর সে জন্যই তো ইচ্ছে করে এইসব বলছে।
নিলয় বিরক্ত হয়ে বলে,”একে তুমি ডিজাইন করতে থাক আমি আসছি।
তোমার এই ডিজাইন গুলো আমার অনেক পছন্দ।তুমি পড়াশোনা শেষ করো পরে আমাদের কোম্পানি তোমাকে ডিজাইনার হিসেবে জয়েন্ট দিব আর আমার বাবাকে বিয়ের জন্য তোমাদের বাড়িতে পাঠাবো।একবার আমাদের বিয়ে হউক তার পরে তোমাকে বুঝাবো আমাকে ভাইয়া ডাকার শাস্তি কি হতে পারে মনে মনে কথা গুলো ভেবে সে চলে যায়।
অদ্রিতা তাকে পিছন থেকে ডাকতে থাকে কিন্তু নিলয় আর না দাঁড়িয়ে চলে যায়।
অদ্রিতা মনে মনে বলে,”আমি জানি আমার যাতে ডিসটার্ব না হয় তাই আপনি চলে যাচ্ছেন আমার সাথে এইটা এখন আপনারও স্বপ্ন হয়ে গেছে আমাকে বড় ডিজাইনার করা।”
অদ্রিতাকে গভীর ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে মাহিরা বলে,” আপু… এই আপু তোমার কি হয়েছে সেই কখন থেকে তোমাকে ডাকছি। কোথায় হারিয়ে গেলে।”
মাহিরা ডাকে বর্তমানে ফিরে আসলাম। মনে মনে বলছি… এই আমি কি ভাবছি আমার তো এইসব ভাবা একদম ঠিক না।আমি আর ভাববো না এইগুলো।এখন আমার এই কথাগুলো ভাবা একদম ঠিক না।
.
.
.
চলবে…..
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_১৯_২০
অদ্রিতা আস্তে করে বলে,,, কই কিছু ভাবছি নাতো, কি ভাববো?
মহিরা মজা করে বলে,”মনে হয়ে দুলাভাইয়ের কথা ভাবছে বলেই হেসে দেয়।”
বেশি পেকে গেছট্ তাই না।দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।এই বলে সে মাহিরাকে মারার জন্য যেই না যেতে চায় তখন আরিয়ান তাকে ডাক দেয় আর সে থেমে যায়।সে আরিয়ানের দিকে তাকায় পরে জিজ্ঞেস করে… কিছু লাগবে আপনার?
না…..এই ডিজাইন গুলো তুমি করেছো??
অদ্রিতা আস্তে করে বলে,” হুমম….. ”
আরিয়ান কিছুটা অবাক হয়ে বলে,” তবে ছেড়ে দিয়েছো কেন? এখন তো আবার শুরু করতে পারো?”
অদ্রিতা কন্ঠে একটু কাঠিন্যতা রেখে বলে,”এখন আর এইসব করার কোন ইচ্ছে নেই।খাবার রান্না হয়ে গেছে।মা পাঠিয়েছে আপনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।পরে ভাবতে থাকে এই ডিজাইন গুলো দেখলে আমার ওনার কথা মনে পরে যায়।আমি চাই না এমন কাউকে মনে করতে যে আমাকে ঠকিয়েছে। তাই তো আমি এইসব ছেড়ে দিয়েছি নতুন করে আর এইসব শুরু করতে চাই না।”
আরিয়ান দেখে অদ্রিতা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।দেখেই বুঝা যাচ্ছে হয়তো কিছু ভাবছে তাই সে একটু জোরেই বলে,” কি এত ভাবো সব সময়।নিচে চলো?”
অদ্রিতা আস্তে করে জবাব দেয়,” হুমম!”
তারপর তারা খাবার টেবিলে যায়।গিয়ে দেখে সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। আরিয়ানও গিয়ে একটা চেয়ারে বসে।টেবিলে এত খাবার দেখে সে অবাক হয়ে যায়। মনে মনে ভাবে আমাকে কি ওনাদের রাক্ষস মনে হয় যে এত সব খাবার রান্না করছেন।এতসব খাবার দেখে সে এতই অবাক সে টেবিলে দিকে চেয়ে হা করে থাকে…. তা দেখে রোহিত বলে…
আরে দুলাভাই মুখ বন্ধ করেন নয়তো মুখে মাছি ঢুকে যাবে। রোহিতের কথায় আরিয়ান লজ্জা পেয়ে যায়।
এই তুই চুপ করবি সব সময় শুধু মজা করা তাই না।
তার বাবার কথা শুনে রোহিত চুপ করে যায়। তারপর আরিয়ানকে বলে,”আমরা তো তোমাদের মতো ধনী না তাই বেশি কিছু করতে পারি নি।এই সামান্য কিছু খাবারের আয়োজন করছি কিছু মনে করো না।”
আরিয়ান মনে মনে বলে এ যদি সামান্য হয় তবে বেশি হলে কি হতো আল্লাহই ভালো জানে। দেখা যেতো খাবার খেয়ে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হতো।
অদ্রিতা আর তার মা সবাইকে খাবার বেড়ে দেয়.. আর রান্না অনেক ভালো হওয়ায় সে একটু বেশিই খেয়ে ফেলে। এখন আরিয়ানের মনে হচ্ছে তার পেট এখনি ফেটে যাবে।খাওয়া শেষ করে আরিয়ান ঘরে গিয়ে শুয়ে পরে।প্রায় আধা ঘন্টা পরে অদ্রিতা নিজে খেয়ে সব গুছিয়ে ঘরে যায়।অদ্রিতাকে ঘরে আসতে দেখে আরিয়ান বলে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও?
অদ্রিত বিষন্ন কন্ঠে বলে,” আমরা তো আজ এখানে থাকবো, না মানে মা তো তাই বলে দিয়েছে?”
আরিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে,” বাড়ি যাব কখন বললাম… তুমি রেডি হয়ে নাও, রোহিত আর মাহিরাকে বলো তাড়াতাড়ি রেডি হতে ঘুরতে যেতে হবে তাই। তারা তো বললো আজ তাদেরকে নিয়ে ঘুরতে যেতে আর তোমার যদি ইচ্ছে না থাকে তবে তুমি থাক আমরা ঘুরে আসি এমনিতেই তোমাকে নিয়ে ঘুরার আমার কোনো ইচ্ছে নেই। ”
অদ্রিতা মন খারাপ করে বলে হুমম… আমার ঘুরার কোনো ইচ্ছে নেই আপনি তাদের নিয়ে যান।
আমাকে কেন নিয়ে যাবেন আমাকে নিলে তো আপনার মান সম্মানে লাগবে,আপনার সাথে তো আমাকে মানাবে না।
অদ্রিতা আর কিছু না বলে চলে যায় আর গিয়ে রোহিত আর মাহিরাকে রেডি হতে বলে। মাহিরা রেডি হয়ে দেখে অদ্রিতা এখনো রেডি হয়নি তাই জিজ্ঞেস করে…… আপু তুমি এখনো রেডি হওনি কেন?? আমরা সবাই তো রেডি হয়ে গেছি। দুলাভাই আর রোহিত বাহিরে অপেক্ষা করছে,। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো।
আমি যাব না তোরা যা। মনে মনে ভাবে ওনি তো চান না আমি যাই, তাই আমার না যাওয়াই ভালো।
যাবে না মানে… তুমি না গেলে আমরা কেউ যাব না।এবার তুমি ভেবে দেখ কি করবে।
অদ্রিতা তাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু মাহিরা তো নাছোরবান্দা তাকে রেডি করিয়ে বাহিরে নিয়ে যায়। আর অদ্রিতার তো রেডি হতে তেমন সময় লাগে না সে বোরকা পরেছে আর সাথে মুখে হিজাব বাঁধা।এই টুকোই।অদ্রিতা আর মাহিরা বের হতেই রোহিত বলে… এত সময় লাগে রেডি হতে সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি আসলে মানুষ ঠিকই বলে মেয়ে মানুষ সাজতে বসলে সময়ের কোনো খেয়াল থাকে না।
মাহিরা রাগ দেখিয়ে বলে,” আপুর জন্যই তো দেরি হলো। আপু তো আসতেই চাইছিল না কত জোর করে নিয়ে আসলাম। ”
আরিয়ান এক পলক অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে বলে,”থাক আর কথা বলে সময় নষ্ট করার দরকার নাই চলো যাই।”
সবাই আরিয়ানের গাড়িতে করে ঘুরতে বের হয়।প্রথমে পার্কে যায় পরে সেখান থেকে শপিং মলে যায়। অনেক কিছু কিনে। ঘুরতে ঘুরতে প্রায় রাত হয়ে যায় তাই মাহিরা বলে… দুলাভাই চলেন আজ ডিনারটা কোন রেস্টুরেন্টে করি।
আরিয়ান হেসে বলে,” আইডিটা মন্দ নয়। চলো যাই।”
সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে যায় খাবার খেতে। সবাই টেবিলে বসে খাবার খেতে এমন সময় অদ্রিতা সামনের দিকে তাকিয়ে পুরোই অবাক হয়।সে এমনটা আশা করেনি।ভাবতেই পারিনি এখানে তাকে দেখবে।আসলে মানুষের জীবনটাই এমন… জীবনে সে যা চায় না,যা আশা করে না, যা সে ভাবতে পারে না তার জীবনে তাই হয়।মানুষ যা ভুলতে চায় পরিস্থিতি সব সময় তা তার সামনে নিয়ে আসে।
.
.
.
চলবে…….
#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_২০
মানুষের জীবনটা বড়ই অদ্ভুত…এক সময় যা সে চায়,যাকে ছাড়া সে নিজেকে কল্পনা করতে পারে না। সময়ের ব্যবধানে তার থেকে দূরে পালাতে চায়।তখন সেই একই জিনিস তার কাছে সবচেয়ে অপছন্দের হয়ে উঠে।জীবনের বাস্তবতা বড়ই কঠিন সেখানে সুখের চেয়ে কষ্টটা অনেক বেশিই থাকে।আজ পরিস্থিতি অদ্রিতাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছে সে বুঝতেই পারছে না কি করবে।যখন মনে হয় এখন সব ঠিক হয়ে যাবে।সে অতীত ভুলে বর্তমানকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। তখন কেন তা বার বার ফিরে আসে।নিলয়কে সে এখানে দেখবে ভাবতেও পারেনি।আর অন্যদিকে নিলয় ও অদ্রিতাকে দেখেনি।সে তো এখানে এসেছে কাইন্টের সাথে দেখা করতে।সে চায়ও না নিলয় এখন তাকে দেখোক,তাই সে আরিয়ানকে বললো.. আমার এই টেবিলে বসতে ভালো লাগছে না, চলুন ওই ওইদিকে গিয়ে বসি…
কেন? এখানে কি সমস্যা?
অদ্রিতা শান্ত স্বরে বললো কোন সমস্যা নেই। এমনি, প্লিজ চলুন।
অদ্রিতার এমন করে বলাতে আরিয়ান আর কিছু বললো না। তারা গিয়ে নিলয়ের বিপরীত দিকে বসলো।
পরে ওয়েটারকে ডাক দিল।
আরিয়ান সবাইকে জিজ্ঞেস করলো, “তোমরা কি খেতে চাও বলো অর্ডার দেই?”
মাহিরা আর রোহিত খাবারের নাম বললো তা অর্ডার দিয়ে আরিয়ান অদ্রিতাকে বললো,” তোমার জন্য কি অর্ডার দিতে হবে?”
আপনার যা ইচ্ছে,,,,,
আরিয়ান আর কিছু বললো না। ওয়েটার চলে গেল খাবার আনতে। এইদিকে মাহিরা আর রোহিত আরিয়ানের সাথে গল্প করতে লাগলো। অদ্রিতার এইসব কিছু অনেক ভালো লাগছে। মনে মনে ভাবছে… ওনী সত্যিই অনেক ভালো। তা না হলে কি আমাকে পছন্দ না হওয়ার সত্ত্বেও আমার পরিবারের সবার সাথে এত ভালো ব্যবহার করতেন। একদিনের আমার ভাই- বোনের সাথে মিশে গেছে। মনে হচ্ছে এরা ওনারই ভাই-বোন। খুব ভালো লাগছে তার।এইদিকে ওয়েটার ও খাবার নিয়ে এসেছে… একে একে সবাইকে খাবার সার্ভ করছে হঠাৎ অদ্রিতাকে সুপ দিতে গিয়ে তার গায়ে সুপটা ফেলে দেয়।ওয়েটার নিজেও বুঝতে পারেনি এমন হবে। তাই সে ভয় পাচ্ছে, সে অনেক গরীব এখন যদি তারা তার নামে কমপ্লেইন করেন তবে তার চাকরিই চলে যাবে।তাই সে সাথে সাথেই বললো, “আমাকে মাফ করবেন আমি দেখিনি।”
অদ্রিতা কিছু বলতে যাবে তার আগেই মাহিরা জোরেই বলে….. আপনার কি কোন কান্ড জ্ঞান নাই। দিলেন তো আপুর বোরকা নষ্ট করে। কাজ যখন ঠিক ভাবে করতেই পারেন না তবে করতে কেন আসেন। এখনি ম্যানেজারকে দেকে বলছি।মাহিরা কথা গুলো খুব জোরে ধমকের স্বরে বলে যা শুনে রেস্টুরেন্টের সবাই তার দিকে তাকায়।
ওয়েটার নিচের দিকে তাকিয়ে ভীতু স্বরে বলে,”সরি ম্যাম, আমার ভুল হয়ে গেছে আমি আসলে খেয়াল করিনি।প্লিজ ম্যানেজারকে কিছু বলবেন না।”
মাহিরা আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই অদ্রিতা বলে…. মাহিরা তুই চুপ কর্।এইটা এমন কিছু না। ভুলতো সবারই হয় তাই বলে ওনার সাথে তোর এভাবে কথা বলা ঠিক হয়নি।তার পর ওয়েটারকে বলে কোন সমস্যা নেই সামান্য সুপই তো পরেছে এখনি পরিস্কার করলে আর দাগ থাকবে না। আপনি আমাকে ওয়াশরুমটা কোন দিকে তা একটু দেখিয়ে দেন তবেই হবে।
ওয়েটার কৃতজ্ঞতা দেখিয়ে বলে,”আপনি অনেক ভালো ম্যাম। আপনার জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষনে নিশ্চয়ই আমার চাকরিতাই চলে যেত।এই বলে অদ্রিতাকে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়।”
আরিয়ান এতক্ষন সব দেখেছে…. সে অবাক হচ্ছে, কেউ এতটাও ভালো হতে পারে তা সে অদ্রিতাকে না দেখে হয়তো জানতোই না।
নিলয়ও এতক্ষন সব দেখেছে।মনে মনে বলছে…
আমি জানি তুমি অনেক ভালো তাই জন্যই তো তোমাকে আমি এত ভালোবাসি। তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে ঐ দিন অনুষ্ঠানে তোমাকে আমি কিছুই বলতে পারি নি।আজ সুযোগ পেয়েছি আজ আমি তোমাকে সব কিছু বলবোই।
I am extremely sorry….. I have to go now….এই বলে তাদের উত্তর না শুনেই নিলয় উঠে চলে যায়।
অদ্রিতা ওয়াশরুমে গিয়ে তার বোরকা পরিস্কার করে চলে আসার জন্য পিছুনে ফিরে সাথে সাথেই নিলয়কে দেখে অবাক হয়৷ ভাবছে ওনী আবার এখানে কি করছেন। কেন বার বার আমার সামনে আছসেন।সরেন আর কিছু না বলে নিলয়কে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে চায়।কিন্তু নিলয় তাকে ডাক দেয়,,,
প্লিজ অদ্রিতা একটু শোন। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে!
অদ্রিতা গম্ভীর স্বরে বলে,” আপনার সাথে আমার কোনো কথা নেই মি. নিলয় চৌধুরী। সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে আমার যেতে হবে।”
অদ্রিতার মুখ থেকে এভাবে নিজের নাম শুনে আমার খুব খারাপ লাগছে তবুও ভুল যখন আমি করেছি শুনতে তো আমাকে হবেই।নিজেকে সামলিয়ে সে অদ্রিতাকে প্রশ্ন করে,” তুমি কি সত্যিই আরিয়ানের সাথে সুখে আছো?”
অদ্রিতা তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে এটা জানার আপনার কোনো প্রয়োজন নেই আর আমার পারসোনাল বিষয় আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই। তবুও যখন জিজ্ঞেস করছেন বলছি, আরিয়ান অনেক ভালো একজন মানুষ। আমি ওনার সাথে অনেক সুখে আছি। ওনী আমাকে অনেক ভালোবাসেন।আপনার মতোন না যে মানুষের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে। তাদের ধোকা দেয়?
নিলয় কিছুটা অবাক হয়ে বলে মানে বুঝলাম না! আমি কার সাথে অভিনয় করছি আর কাকেই বা ধোকা দিয়েছি।হ্যাঁ আমি তোমাকে না জানিয়ে বিদেশে চলে গিয়েছিলাম বিশ্বাস করো তখন আমার হাতে একটুও সময় ছিল না তোমাকে সব কিছু বলার।পরে তোমার সাথে যোগাযোগ করা অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু পারি নি। তোমার ফোন সুইচঅফ ছিল আর আমি পরিস্থিতির হাতে এতটাই নিরুপাই ছিলাম যে আসতে পারিনি। তোমাকে এখন আমি সব বলছি, শুধু আমাকে একটু সময় দাও।
অদ্রিতা রাগে একটু জোরেই বলে,” আমি এখন আপনার কোন কথা শুনতে চাই না।আর আপনি কি জন্যে ঐ সময় চলে গিয়েছিলেন তার সবকিছু অথৈ আমাকে বলেছে। আপনি তো তার সাথে সেই একই কাজ করছেন। তাকেও ধোকা দিয়েছেন আপনার ভয়ে আগে সে আমাকে কিছুই বলতে পারেনি কিন্তু আপনি যেদিন চলে গেছেন তার দুইদিন পরে সে আমাকে সব বলেছে।আমি ঘৃনা করি আপনাকে।আপনি শুধু মেয়েদের মন নিয়ে খেলা করেন।আপনার সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে। তার থেকে বেশি ঘৃণা হয় নিজের উপর এইটা ভেবে যে আপনার মতো একজনকে আমি ভালোবাসতাম।
অদ্রিতার কথা শুনে নিলয়ের বুকেে ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠে। সে বিষন্ন ঘেরা কন্ঠে বলে,কিসব বলছো তুমি? আর আমি এমন কি করছি যে তুমি আমাকে ঘৃণা করো।আমি তোমার সাথে কখনো খারাপ আচরণ করিনি আর তুমি তো জান তুমি ছাড়া আমি অন্য কোনো মেয়েদের সাথে কথাও বলিনি। সেখানে তুমি আমাকে এমন একটি কথা কি করে বলতে পারো।আমার চরিত্র নিয়ে কোন বাজে কথা আমি সহ্য করবো না। তাছাড়া যা খুশি তুমি আমাকে বলতে পারো আমি কিছু বলবো না।আর প্লিজ বলো অথৈ তোমাকে কি বলেছে আমার সম্পর্কে?
অথৈ তো জানতোই না আমি কেন যাচ্ছি তবে সে অদ্রিতাকে কি এমন বললো যে অদ্রিতা আমার সম্পর্কে এমন ভাবছে। আমার সব কিচ্ছু জানতে হবে। অদ্রিতা না বললে অথৈ এর কাছ থেকে। এমন না যে আমি চাই আমার জন্য অদ্রিতা আরিয়ানকে ছেড়ে দেক বা আমার জন্য তাদের বিবাহিত জীবনে কোন প্রবলেম হকো। কিন্তু আমি চাই না অদ্রিতা আমার সম্পর্কে কোন ভুল ধারণা নিয়ে থাকুক। সব ভুল ধারণা শেষ করেই অদ্রিতার জীবন থেকে আমি অনেক দুরে চলে যাবো।মনে মনে সে এই কথা গুলো ভেবে উত্তরের আশায় অদ্রিতার দিকে তাকায়,,,,
অদ্রিতা কিছু না বলে আগের কথা ভাবতে থাকে,,,
.
.
.
চলবে….
.
.
চলবে………