গল্প: #অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসা
লেখক: #কাব্য_মেহেরাব
পর্ব:১২
প্রবীশ অনেক সাহস সঞ্চয় করে যেই না চোখ খুলতে যাবে ওমনি ঠাসসসসসসস করে একটা শব্দ হলো। কিছু টা সাইডে ঝুঁকে যায় তিনি।
জীবনে এই প্রথম এমন অনুভূতি হলো। তার এই ৩৪ বছর জীবনে এই প্রথম তাকে কেউ মারলো। কিন্তু তার জানা মতে তাকে মারার সাহস যার আছে সে তো বেঁচে নেই। সে আর কেউ নয় তার বাবা।যাকে সে পৃথিবীর সবচাইতে বেশি ভালোবাসে।
মুখে হাত রেখে সামনে তাকিয়ে দেখলো রামু জেঠু তার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু টা কাঁপছে। সাথে রাগে ফুঁসছে। পাশে ই বাজারের ব্যাগ ভর্তি জিনিস পত্র পরে আছে। আশ্চর্যর চরম পর্যায়ে পরে গেলেন তিনি। যেই ব্যাক্তি বাবা মারা যাবার পর তাকে চোখে হারিয়েছে, আজ সেই তার গায়ে হাত তুললো?
প্রবীশ বাবু: রা… মু… জেঠু…. তুমি আমাকে…..( গালে হাত দিয়ে)
রামু জেঠু: হ্যাঁ প্রবীশ বাবা আমি…! এই চর টা আরো আগে আমার দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমি পারিনি। চুপ ছিলাম, শুধু আপনার কষ্টকে নিজের চোখে দেখেছি বলে। কিন্তু আপনি??
প্রবীশ বাবু:…….( চুপ করে নাকের পাটা ফুলিয়ে, মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে)
রামু জেঠু: আপনার সাথে যা হয়েছে খুব খারাপ হয়েছে আমি মানছি। কিন্তু ঐ মামনি আপনার কি ক্ষতি করেছে? ( হাত দিয়ে আমাকে দেখিয়ে দিয়ে)
প্রবীশ বাবু: মুখে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকালো 😒…
সারা ফ্লোর জুরে রক্তর বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তলপেটে হাত দিয়ে ব্যাথা যন্তণা সহ্য করার ক্ষমতা হয়তো হাড়িয়ে যাচ্ছে। চিৎকার করে কান্না করছি , কিন্তু প্রবীশ বাবুর কানে মনে হয় না, আমার চিৎকার আর্তনাদ পৌঁছে ছে। কপাল কেটে গেছে, চোখ নাক বেয়ে লহুর স্রোত বয়ে চলছে। তীব্র যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ঙ্গান হারালাম।
রামু চাচা দৌড়ে আমার মাথার কাছে এসে বসে তার হাঁটুর উপর আমার মাথা রেখে অনবরত ডেকে চলছেন। রামু চাচা হাউ মাউ করে কেঁদে দিলেন।
রামু চাচা: মামনি? মামনি? ওঠো মামনি…
দেখো তোমার রামু চাচা এসেছে…( মুখে হাত দিয়ে বার বার ঝাকাচ্ছে।
আমি ঙ্গান শূন্য হয়ে পরে আছি। আমার কোনো নরচর না দেখে প্রবীশ বাবুর দিকে তাকালো , তিনি এখনো গালে হাত দিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছেন। যেন তিনি কোনো পাথর।
রামু চাচা বার কয়েক তাকে ডাকলেন কিন্তু তিনি হয়তো এই দুনিয়ায় ছিলেন না। উপায়ন্তর না দেখে রামু চাচা আমার মাথা টা আলতো করে নিচে রেখে ফোন দেয় অমিত বাবু কে।
রামু চাচা: হ্যালো অমিত বাবা?
অমিত বাবু: জী জেঠু বলো..
রামু চাচা: সর্বনাশ হয়ে গেছে বাবা তুমি এখুনি চলে এসো…( কান্না করতে করতে বলল)
অমিত বাবু: কি হয়েছে জেঠু? আর আপনি এরকম করছেন কেন? কি হয়েছে আমাকে খুলে বলুন…?
রামু চাচা: মামনি..????( কান্না করছে, বলতে পারছেন না।)
অমিত বাবু: ডালিয়া…?কি হয়েছে ডালিয়ার….?
রামু চাচা: সিঁড়ি থেকে…..( কান্নার ফলে মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না)
অমিত বাবু: ওহ ভগবান…. আমি এখুনি আসছি।
রামু চাচা: তাড়াতাড়ি এসো… না হলে যে অনর্থ হবে।
হসপিটালে সাদা রঙের সাফেদ বিছানায় শুয়ে আছি আমি।স্লাইন চলছে, এখনো ঙ্গান ফিরে নি। আমার বাচ্চা টাকে আর বাঁচিয়ে রাখতে পারে নি। ২৪ টি সিঁড়ি বেয়ে গড়িয়ে নিচে পরায় আমার সন্তান কে আর বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি ডক্টর রা। অমিত বাবু তার যথাসম্ভব চেষ্টা করেছেন কিন্তু হয়তো উপরআল্লাহ চান না আমি এই বাচ্চা কে এই পৃথিবীতে আনি।
পুরো গোটা একটা দিন কেটে গেল। বিকালের পর আমার ঙ্গান ফিরলে জানতে পারি আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি। আমি কান্না করিনি তবে অবাক হয়েছিলাম। একটা মানুষ কতটা নির্দয় হলে এতো টা জঘন্য কাজ করতে পারে।
চোখ বন্ধ করে নিলাম। আমার অজান্তে চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল কয়েক ফোঁটা। মন টা শুধু বলছে_
প্লিজ কাব্য তুমি আমার কাছে ফিরে আসো নয়তো আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যাও। আমি আর পারছি না। একটি বার এসে আমার হাত টা ধরো। ” তুমি বিহীন এই পৃথিবী কি ভীষণ জঘন্য”
রামু চাচা আর অমিত বাবু আমার সম্পূর্ণ খেয়াল রেখেছেন। প্রবীশ বাবু হয়তো আসেন নি।বা আমার চোখে পরেনি।
মধ্যেরাত হঠাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে গেল আমার। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমার শরীলে ব্লাড দেওয়া হচ্ছে। রুমের চারিদিকে চোখ ঘোরালাম, আমার সামনের ডাবল কাউচের উপর হাঁটুর ওপরে দুই হাতের কনুইয়ে ভর দিয়ে দুই হাত একসাথ এ মুষ্ঠীবদ্ধ করে কপালের সাথেই হাত ঠেকিয়ে নিচের দিকে চোখ দিয়ে বসে আছেন প্রবীশ বাবু। হয়তো জেগেই আছেন। কোন সাড়া দিলাম না আমি। আমার এই অবস্খা করে কি সুন্দর আমারই জন্য, রাত জেগে বসে আছে। বিষয়টা খুব হাস্যকর মনে হলো আমার কাছে।
মিনিট পাঁচেক পর মুখ উঁচু করে তিনি দেখলেন আমি উপরের সিলিং ফ্যানের দিকে চেয়ে আছি। চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে আপন গতিতে। এভাবে আমাকে দেখে অপস্থুত হলেন তিনি। আমাকে জেগে থাকতে দেখে তিনি গলা খাকারি দিয়ে একটা কাশি দিলেন।
চোখ বন্ধ করে নিলাম। চোখ বন্ধ থাকা অবস্থায় বুঝতে পারলাম তিনি উঠে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। হয়তো তিনি কিছু বলতে চান আমাকে। কিন্তু এই নির্দয় মানুষটির কোন কথাই আমি শুনতে চাইনা। মুখ ঘুরিয়ে নিলাম তার থেকে। কয়েক সেকেন্ড আমার মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসলেন।
কিছু সময়ের ব্যবধানে একটি নার্স এবং ডক্টর এলেন আমার কেবিনে।ডক্টর জানতে চাইলেন, কি হচ্ছে আমার? উত্তরে আমি বললাম কিছুই হচ্ছে না। ডক্টর আবার আমাকে বললেন ,আপনার হাসবেন্ড বলল আপনার নাকি খুব কষ্ট হচ্ছে?
‘হাজবেন্ড’ শব্দটা শুনে সত্যিই আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল কষ্টে। আজ কাব্য আমার পাশে থাকলে পৃথিবীর কোন কষ্টই আমার কাছে কষ্ট বলে মনে হতো না। পৃথিবীর বুকে সবথেকে ভাগ্যবান নারী হয়তো আমি হতাম।
ডক্টর: আপনি আপনার হাজবেন্ডের সাথে কথা বলেন।তিনি খুবই চিন্তিত।
অমিত বাবু কেবিনে প্রবেশ করল।আর আমাকে বললো কি হয়েছে তোমার? কোনো সমস্যা? প্রবীশ বাবু কেবিনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন ।
#চলবে ….