#অপ্রিস সে
#সানজিদা সন্ধি
# পর্বঃ১৭+১৮
আহানা তার ছোট্ট কিচেনে রান্না করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। রিমু আর সাদিয়াও তার সাথে গেলো। রিমু হাতে হাতে সাহায্য করছে আর সাদিয়া চুপচাপ বসে আছে।
একসময় অন্য মনস্ক হয়ে সাদিয়া বলে উঠলো, ” জানিস রিমু? রূপম ভাইকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। কত ভালো মানুষ তিনি। যদিও তার কারণে তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস! কিন্তু বিশ্বাডলস কর। সে অনেক ভালো। ”
সাদিয়ার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই রিমু বলে উঠলো, ” বুঝলাম! তাহলে অন্যের দালালী করতে এসেছিস। আমার খোঁজ নিতে নয়। ”
দালালী শব্দটা কেমন জানি ঠেকলো সাদিয়ার কাছে। সে সচকিত হয়ে বললো, ” রিমু তোর শব্দচয়ন বাজে ঠেকলো আমার কাছে। তোর মধ্যে আচরণ গত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ। আগের নম্র আচরণ টাই কাম্য তোর কাছে।
রিমু আরো রেগে বললো, ” এখন আমার কথা কেন ভালো লাগবে তোর কাছে? আমার সাধারণ কথাবার্তাও তোর কাছে বিরক্তিকর, ভন্ড মনে হবে৷ কী বলতো অন্যের দালালী করতে এসেছিস তো তাই!”
চ
বারবার দালালী দালালী বলাতে সাদিয়ার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। সে কথা না বাড়াতে চেয়ে উঠে যেতে ধরলো।
রিমু তার পথ আটকে বললো, ” কী রে দালালীতে সুবিধা করতে না পেরে বুঝি চলে যাচ্ছিস? আহারে। শোন কারো হয়ে আমার সামনে সাফাই গাইতে আসবি না। আর আপাতত আমি তোর মুখটাই দেখতে চাচ্ছি না দয়া করে দেখাতে আসিস না। ”
এতক্ষণ রাগ লাগলেও এবার মনে প্রচন্ড রকম আঘাত পেলো সাদিয়া।
সে নম্র ভাবে বললো, ” রিমু আমি তোর সাথেই দেখা করতে এসেছিলাম। কারো দালালী করতে নয়। আর তুই না বুঝে না শুনে যা নয় তাই বললি। কথাবার্তা বুঝে শুনে বলা উচিত। এটার উপর অনেক কিছু নির্ভরশীল। সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে অযৌক্তিক কথার কারণে আবার সুন্দর সম্পর্ক গড়তেও পারে সুমিষ্ট কথার কারণে। আজকে তুই অনেক বেশিই বলে ফেললি। আমার মুখ দর্শন করতে চাইছিস না ঠিক আছে। আমি দেখা দেবো না। কিন্তু কোনো একদিন এমনও হতে পারে আমার মুখ দেখতে চাইবে অনেক করে। কিন্তু পাবিনা। ভালো থাকিস। অযৌক্তিকতায় আজ মনে কষ্ট দিয়ে ফেললি।” কথাগুলো বলে এক মুহুর্তের জন্যেও দাঁড়ালো না সাদিয়া। পেছন থেকে আহানা ডাকলো তাকে বেশ কয়েকবার। কিন্তু পিছু ফিরে তাকালো না সাদিয়া।
বাসায় ফিরে ঋষির ফোন পেলো সে। রিসিভ করতেই ঋষি জিজ্ঞেস করলো, ” রিমুর সাথে কথা হয়েছে আপনার? ”
সাদিয়া ধরা গলায় বললো, ” হু। ” তার গলাটা শুকিয়ে এসেছে। কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে গলাতেই আটকে আছে। তবে এখন তৃষ্ণা মেটাতে পানি পান করলে আরো বেশি তেষ্টা পাবে তার।
ঋষি সাদিয়ার কন্ঠস্বর শুনে জিজ্ঞেস করলো, ” এনি প্রবলেম? ”
সাদিয়া এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো একজন সল্প পরিচিত মানুষের সামনে। যেখানে তার কান্না দেখা বা শোনার সুযোগ খুব কম মানুষেরই হয়েছে। নিজের ভেতর জ্বলে পুড়ে গেলেও কাউকে জানতে দেয়না সে। অথচ আজ প্রিয় বান্ধবীর আচরণ তাকে এতটাই মর্মাহত করেছে যে সে সামলাতেই পারছে না নিজেকে।
হুট করে সাদিয়ার কান্না শুনে বিব্রত হলো ঋষি। সাথে তার ভীষণ কষ্টও হচ্ছে। সে বুঝতে পারছেনা কেন সে এমনটা অনুভব করছে। একজন সল্প পরিচিতার কান্নায় এমন কী আছে যা তাকে প্রভাবিত করছে? এর সাথে তো শুধুমাত্র ফ্ল্যাট করাই উদ্দেশ্য ছিলো ঋষির। কোনো ভাবে সে মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে পড়ছে না তো?
ঋষি শান্ত হতে বললো সাদিয়াকে। তারপর ধীরে ধীরে সবটা জানতে চাইতেই সাদিয়া বললো, ” বন্ধুত্বে মান অভিমান। ”
মানুষ মাত্রই কৌতুহল প্রবণ। ঋষিও এর ব্যাতিক্রম নয়। কৌতুহল বশত সে জানতে চাইলো কী নিয়ে মান অভিমান হয়েছে।
সাদিয়া প্রশ্নটা শুনে বিরক্তবোধ করলেও সহজভাবে জবাব দিলো, ” বন্ধুদের মাঝে অনেক কিছু নিয়েই মান অভিমান হয়। আবার ঠিকও হয়ে যায়। এসব বন্ধুমহলেই সীমাবদ্ধ থাকা ভালো। এসব নিয়ে বাহিরে আলোচনা করা পছন্দ নয় আমার। কিছু জিনিস একান্তই থাক!”
ঋষি মুগ্ধ হলো সাদিয়ার কথায়। মেয়েটার ব্যাক্তিত্ব আছে বলতে হবে। তারপরও বললো কিছু জানানোর মতো হলে নির্দ্বিধায় জানাতে পারবেন। আমি অপেক্ষায় থাকবো। এবার আর কাঁদিয়েন না। কষ্ট হচ্ছে আমার।
সাদিয়া কৌতুহলী হয়ে বললো, ” আমার জন্য কষ্ট? তাও আবার পাবেন আপনি? ”
মুহুর্তেই গলার স্বরে তার পরিবর্তন এলো। খানিকটা কৌতুকের স্বরেই বললো সাদিয়া, ” আপনি তো ফ্ল্যাটিং এর কোনো র্যাংক থাকলে সেখানে ফার্স্ট হতেন। এতো ভালো ফ্ল্যাটিং শিখেছেন কার কাছে?
ঋষি গলা খাকাড়ি দিয়ে বললো, আমার শুদ্ধতম অনুভুতি গুলোকে ফ্ল্যাটিং মনে হচ্ছে? এটা কী ঠিক?
সাদিয়া বললো, ” আসলে কী বলুন তো! আপনি এখন ঠিকঠাক ফ্ল্যাটিংটা শিখতে পারলেন না। আফসোস। ”
ঋষি খানিকটা চকমক করে বললো, ” শিখতে পারিনি এখনো তাতে কী? একদিন ঠিক শিখবো। ”
রিমু রেগে বললো, ” আর শিখে কাজ নেই।”
রূপমের কিছুই ভালো লাগছে না। ডাইনিং টেবিলে গিয়ে সে দেখলো রেহনুমা আর রিয়াজুল করিমের মুখ থমথমে হয়ে আছে। মেয়ে বাড়িতে না থাকাতে দুজনেই মুখই থমথমে।
রূপম সবার সামনেই তাদের সরি বললো তারপর বললো, ” আমার জন্য এত বাজে কিছু হবে এ যেন কল্পনাতীত ছিলো আমার জন্য। কিন্তু চোখের সামনে এত কিছু নিতে পারছিনা আমি। কোনক্রমেই পারছিনা। সবাই আমাকে মাফ করে দিন।
রিমুর বাবা বললো, ” শুধুমাত্র নিজেকে দোষী করা বন্ধ কর রূপম। আমাদের দোষও অনেক আছে। আমরা রিমুকে অবহেলা করেছি। সেখানে তোর দোষ কী করে থাকতে পারে? আমার কী পুতুল না কি যে আমাদের ভালো মন্দ বিচারের ক্ষমতা নেই? তুই যেভাবে নাচাবি সেভাবেই নাচবো? মোট কথা আমাদের স্বদিচ্ছার অভাব ছিলো মেয়েকে আগলে রাখার। সেখানে তুই কোনোভাবেই দ্বায়ী হতে পারিসনা। ”
রূপম বললো, ” আর স্বান্তনা দিও না চাচ্চু।
এতো স্বান্তনার ভার বইতে পারছিনা আমি। এতো করুণা, দয়া কী করে নিবো আমি? ইচ্ছে করছে মরে যাই। রূপমের মতো শক্ত ছেলেটার মুখে এমন কথা সবাইকে মর্মাহত করলো।
রূপম খাবার টেবিলে বসেই রিমুকে ফোন দিয়ে বললো সে খেয়েছে কী না! রিমু আবার ছোট বড় বেশকিছু কথা শুনিয়ে দিলো। রিমুর কথার ধরণ শুনে সবাই বিরক্ত বোধ করতে লাগলো। রূপমের ইচ্ছে হলোনা পূণরায় রিমুর সাথে যোগাযোগ করতে। কারণ তার কথাবার্তা কেমন কেমন যেন হয়ে গেছে কদিনেই। কিন্তু যোগাযোগ না করলেও শান্তি পাবে না রূপম।
সে কঠোর ছিলো তখনই ভালো ছিলো। যেই নিজের আবেগ অনুভূতিকে প্রশ্রয় দিলো অমনি নিজেকে হারিয়ে ফেলতে শুরু করলো। এজন্যই বোধহয় নিজেকে শক্ত খোলসে আবৃত রাখাই ভালো। নিজের ভালোর জন্য।
রূপম কিছু না খেয়েই উঠে গেলো। সে খুব ভালোই বুঝতে পারলো দিন দিন সে ডিপ্রেশনে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিজেকে ডিপ্রেশনে ফেলার মানেই নেই তার। বেশ কয়েকদিন ধরে মন মতো গান গাওয়া হয়নি রূপমের। বলা চলে সুযোগ পায়নি। রূপম তার প্রিয় গিটারটা হাতে নিয়ে টুং টুং সুর তোলার চেষ্টা করলো। কিন্তু সে কিছুতেই পারছেনা ঠিকমতো সুর তুলতে। এভাবে আরো বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও যখন দেখলো কোনো লাভ হচ্ছে না তখনই সে বেলকনিতে উঠে এলো। একটুখানি স্বস্তির আশায়। বেলকনিতে বেশ কয়েকটা লতা বাহারের গাছ আছে। পাতা বাহারও আছে বেশ কয়েকটা। রূপম হাত দিয়ে স্পর্শ করলো সেগুলো। তার মনে হলো রিমুর সাথে দেখা করাটা দরকার তার। ভীষণ রকমের দরকার।
চলবে,,,
#অপ্রিয় সে
#সানজিদা সন্ধি
#পর্ব: ১৮
আহানাকে জড়িয়ে ধরেই কান্নায় ভেঙে পড়লো রিমু। তার ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। আহানা তাকে স্বান্তনা দিতে গেলেই রিমু বলে উঠলো, ” আমি আর পারছিনা আহানা। আমি কী করবো তুই বল। ছোট থেকে আমার সাথে যা যা হয়েছে সেগুলো আমি মেনে নিবো কী করে। এদিকে সাদিয়াকে কীভাবে বশ করলো রূপম খান সেটাই বুঝতে পারছি না। বন্ধুত্বের মধ্যে অহেতুক ঝামেলা আমার বিন্দুমাত্র পছন্দ হচ্ছে না। নিজের অজান্তেই কষ্ট দিলাম মেয়েটাকে। আমি সত্যিই বাজে আচরণ করে ফেলছি। ”
আহানা ধমক দিলো রিমুকে। তুই কেন বাজে আচরণ করবি রিমু? তুই যা করছিস সেটা করা একদমই স্বাভাবিক। নিজেকে অহেতুক ব্লেম করা বন্ধ কর। তোর সাথে ছোট থেকে যা যা হয়েছে তাতে তো এগুলো কমই হয়ে গেলো। আর সাদিয়াই বা কেন রূপম ভাইকে সাপোর্ট করছে? মানলাম কোনো একটা কারণে তার মনে হয়ে রূপম খান তোকে ভালোবাসে৷ মনে হতেই পারে। তাই বলে যে তোকেও পাল্টা ভালোবাসতে হবে এমন কথা কী লেখা আছে কোথাও? এতদিনের সব অন্যায় হোক বুঝে কিংবা না বুঝে। ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় সব এতো সহজেই মাফ পাওয়ার যোগ্য? রূপম ভাই কী শুধু একমাত্র মানুষ যে তোকে মন থেকে ভালোবাসে? অন্য কেউ বাসে না? তবে সাদিয়া কেন সেই সঠিক মানুষটার জন্য অপেক্ষা করতে না বলে রূপম রূপম বলে চিল্লাচ্ছে? তুই একটু বেশিই আবেগী। যেসব মানুষদের জন্য বাঁশ খাবি তাদের জন্যই পাগল হবি আবার। এখানে তোরেই বা ব্লেম করি কীভাবে? মানুষের স্বভাবই তো এমন। যাদের কাছে বেশি যন্ত্রণা পায় তাদের জন্যই মরিয়া হয়ে ওঠে সমস্ত আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে। এসব বাদ দিয়ে ক্যারিয়ারে ফোকাস কর। মাথা থেকে আজাইরা চিন্তা ভাবনা সরিয়ে ফেল। আর যদি নাও সরাতে পারিস তবে দয়া করে আমার সামনে এসব আজাইরা আবেগ দেখাতে আসবি না।
রিমু বুঝলো আহানার মেজাজ গরম হয়ে গেছে। তাই কান্না থামিয়ে সে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
রিমুর ফোনটা বেজে যাচ্ছে ক্রমাগত। তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ফোন রিসিভ করলো রিমু। রূপম ফোন দিয়েছে। রিমু সালাম দিয়ে এমন আচরণ করলো যেন অপরিচিত কেউ ফোন দিয়েছে।
রূপম বলতে লাগলো, ” তোর সাথে দেখা করতে চাই রিমু। আহানার বাসার সামনে আছি বের হ তাড়াতাড়ি। ”
নিরুত্তর রইলো রিমু।
কী ব্যাপার? তুই কী আমার কথা শুনতে পাচ্ছিস না? তোর সাথে কথা বলাটা জরুরি আমার। দেখ তুই আমার উপরে ভীষণ বিরক্ত এটা আমি জানি। আমার উপর তোর এই ঘৃণা, রাগ, বিরক্তি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তোর জীবনকে নরক বানিয়েছি আমি। আমার ইন্টেনশন ছিলো না এসবের। বা ইচ্ছে করে তোকে আঘাত করার। আমি করতে চেয়েছি একটা হয়ে গেছে আরেকটা। আমি তোর কাছে আগে মাফ চাইলেও এখন চাচ্ছি না। কারণ আমি জানি মাফ পাওয়ার যোগ্যতা নেই আমার। তোকে আমার সাথে কথা বলতে হবে না। কিচ্ছু করতেও হবে না। আমি জ্বালাবও না তোকে। শুধু তুই একটিবার বের হ রিমু। প্লিজ!
কী ব্যাপার সেলিব্রেটি রূপম খান? আপনি আমার মতো সাধারণ একটা মেয়ের পিছনে ধরনা দিচ্ছেন কেন? আর এতো আজাইরা সময় আপনি কবে থেকে পেলেন? আমার জানামতে আপনি ভীষণ ব্যাস্ত একজন মানুষ। আর শোনেন। আমি আপনার সাথে কস্মিনকালেও দেখা করতে আগ্রহী নই। কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন। আমি যথেষ্ট মনযোগী শ্রোতা। খুব মন দিয়ে ভীষণ যত্ন সহকারে আপনার কথা শুনতে রাজি আছি।
রিমু প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর। তোর সাথে সামনাসামনি কথা বলতে চাই আমি। প্লিজ বের হ একটিবার।
বাপরে এতো করে রিকুয়েষ্ট করছেন। কাহিনী টা কী? আচ্ছা আমি আসছি। আমি আবার মানুষের এতো আকুতি ফেলতে পারিনা। তাও আবার যদি হয় এমন সেলিব্রেটি।
রূপম বুঝলো রিমু সব কথা গুলো তাকে বিদ্রুপাত্মক ভাবে বলছে। অবশ্য সে এসব কিছুরই যোগ্য। তারপরও রূপম খুশি হলো এটা ভেবে যে সামনাসামনি থেকে সে কথা বলতে পারবে রিমুর সাথে।
রিমু ফোন কানে রেখেই গায়ে একটা ওড়না পেঁচিয়ে বাড়ির বাহির হলো। এতো অনুরোধ তার ফেলতে ইচ্ছে হলোনা। রূপমের গাড়ি দেখা যাচ্ছে। রিমু হাত নাড়ালো। বাইরে থেকে গাড়ির ভেতরের কিছু বোঝা না গেলেও ভেতর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। আর রিমু জানে রূপম আহানার দরজার দিকেই এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। রূপম গাড়ি থেকে বের হলো। তার শরীরে ব্ল্যাক কালারের একটা হুডি। মাথা ঢাকা টুপি দিয়ে। মুখে মাস্ক, চোখে সানগ্লাস।
রূপমের গেট আপ দেখে খানিকটা হাসি পেলো রিমুর। আবার খানিকটা কষ্টও পেলো সে। এই গরমের মধ্যে ছেলেটাকে হুডি পরে ঘুরতে হচ্ছে। সেলিব্রেটি বলে কথা। কোনো ভক্ত দেখলেই তো ঝাঁপিয়ে পরবে প্রিয় ব্যাক্তিত্বের মুখ দর্শনে। তাই এমন সাজ। রিমু একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। যে মানুষটা হাজার হাজার মানুষের এতো প্রিয়। তাকেই সহ্য করা সম্ভব নয় রিমুর জন্য। একজন মানুষ কখনোই সবার প্রিয় হতে পারে না।
রূপম গাড়ি থেকে বের হয়েই রিমুর কাছাকাছি চলে এলো। আহানার বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের রাস্তা ধরে হাঁটলেই একটা শিশু পার্ক আছে। রূপম ভাবলো সেখানে গিয়েই কথা বলবে।
রিমু গাড়িতে উঠে আয়। পার্কটাতে গিয়ে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। আর তোকে বেশ খানিকটা সময় দিতে হবে আমাকে। পারবি তো?
হ্যাঁ পারবো। আর পাঁচ মিনিটের রাস্তা আমি গাড়িতে যেতে পারবোনা। আপনি বরং গাড়ি নিয়ে যান আমি একাই আসছি হেঁটে।
রিমুকে আর কোনো জবাব না দিয়ে রূপমও হাঁটতে শুরু করলো রিমুর সাথে। রূপমের মনে হলো, এই পথ যদি অনন্তকালের জন্য চলতো। তবে তার চেয়ে সুখী বোধহয় আর কেউ হতো না।
পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে রিমু। বেঞ্চটার সামনেই একটা আমগাছ। আম গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রূপম।
রিমু! আস্তে করে ডাকলো রূপম।
জি। যা বলার বলুন। আমি শুনছি। কী এমন জরুরি কথা যেটা না বলতে পেরে হাসফাস করছেন আপনি।
মাথাটা অর্ধনমিত করে রূপম বললো আমি তোকে ভালোবাসি রে।
তাতে আমি কী করতে পারি? রিমুর কড়া জবাব।
তোকে কিছু করতে হবে না। আমি তোকে ভালোবাসি শুধু এটাই জানি। দেখ রিমু ছোট থেকে তোর সাথে যা যা করেছি সবকিছুর উদ্দেশ্য আমার দৃষ্টিতে। আই রিপিট। আমার দৃষ্টিতে ভালো ছিলো। এই যেমন তোর চুল কাটা। আমি জানি এটা তোর দূর্বলতা। এখানে আঘাত করায় তুই মানসিক আঘাত পেয়েছিস। কিন্তু আমি তোর চুল কাটানোর ব্যাবস্থা করেছিলাম যাতে চুলের কারণে ঠান্ডা বাঁধিয়ে তুই বড় সড় অসুখ না বাঁধাস। বিষয়টা আমার দৃষ্টিকোণ থেকে ভালো ছিলো। কিন্তু এটা তোর মানসিক স্বাস্থ্যহানী করেছে। এছাড়া আরো অনেক বিষয় আছে যেগুলো তোর ভালোর জন্য করতে গিয়ে পক্ষান্তরে তোর খারাপই করে ফেলেছি। আমি তো জীবনের অনেক সুন্দর সময় নষ্ট করেছি। আমার অনিচ্ছায়। এখন তোর বাকি জীবনটা আমি আলোয় রাঙিয়ে দিতে চাই। তুই কি দিবি আমাকে সেই সুযোগটা? আজীবন তোর কাছে কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবো।
রিমু থামিয়ে দিলো রূপমকে। আমি বুঝতে পারলাম আপনি আমার ভালো করতে গিয়ে পক্ষান্তরে খারাপ করে ফেলেছেন। কিন্তু খারাপ তো হয়েইছে আমার তাইনা? সেসব কী পারবেন ফিরিয়ে দিতে? কিছু জিনিস কখনোই ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। আমার বাকি জীবনটা আমি নিজের আলোয় আলোকিত করতে চাই। সেখানে আপনার ভূমিকা কখনোই কাম্য নয় আপনার। আমি শ্রদ্ধভরে আপনার প্রেম প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলাম। আর কিছু বলার আছে কী আপনার?
রূপমের চোখ লাল টকটকে হয়ে গেছে। জ্বালা করছে তার দুটো চোখ। মনে হচ্ছে দু এক ফোঁটা এখনই টুপ করে ঝড়ে পড়বে। সানগ্লাসের আড়ালে থাকায় তার চোখদুটো কারো দৃষ্টিগোচর হলো না।
রূপম মিইয়ে যাওয়া গলায় বললো, “রিমু, ও রিমু। মাফ করে দে না রে। ”
রিমু কর্ণপাত করলোনা রূপমের কথায়। আপনার আর কিছু বলার না থাকলে আমি উঠতে চাই। বাসায় যাবো। আপনি চাইলে আমার সাথে যেতে পারেন। অতিথি আপ্যায়ন ভালোই করবো।
রিমু গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে। রূপম চেঁচিয়ে বললো, ” রিমু! ভালোবাসি তো। ”
চলবে,,,,