#অবুজ_পাখি
#নাম_না_জানা_পথিক
পাট:১৭
ফারিহা: এই মেয়েটার জন্য রিফাত আমাকে রিজেক্ট করছে। এই মেয়েটাকে আমি আর এই দুনিয়াতেই থাকতে দিবো না বলে ফারিহা একটা বালিশ নিয়ে পরির মুখের উপর চেপে ধরলো। পরি হাত-পা ছুড়তেছে কিন্তু কোনো ভাবেই ফারিহাকে সরাতে পারতেছে না।
ইমন ভাইয়া পরির রুমের সামনে থেকে যাওয়ার সময় পরির গোঙ্গানোর আওয়াজ শুনতে পায়।
ইমন: পরি তুমি ঠিক আছো তো পরি কিছু বলো।
পরি অনেকে কষ্টে ফারিহাকে সরিয়ে গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে চিল্লানি দেয় দাভাই আমাকে বাঁচাও।
ইমন: পরি কি হয়েছে তোমার দরজাটা খোলো বলে ইমন ভাইয়া দরজায় জোরে ধাক্কা দিতে লাগলো।
ফারিহা: আজ তোকে না মেরে আমি যাবো না। লাগলে তোকে মেরে আমি জেলে যাবো।
পরি দৌড়ে কোনোমতে দরজার কাছে গেল যেই দরজা খুলতে যাবে ফারিহা একটা লাঠি দিয়ে পরির কপালে বারি মারে। পরি ছিটকিনি অধেক খুলে কপাল ধরে পড়ে যায়।
ইমন: জোরে দরজায় ধাক্কা দেওয়াতে বাকি অধেক ছিটকিনি খুলে যায়। সাথে সাথে রুমে সবাই প্রবেশ করে।
ফারিহা পরির দিকে ফুলদানি ফেকে মারে কিন্তু ফুলদানিটা গিয়ে ইমন ভাইয়ার হাতে লেগে হাত থেকে রক্ত পড়তে থাকে।
ভাবি: তাড়াতাড়ি করে ফারিহাকে ধরে ২টা থাপড় মারে তোর সাহস হয় কি করে আমার বরকে মারার।
ফারিহা এই মেয়েটাকে আমি জানে মেরে ফেলবো বলে পরির দিকে তেড়ে যায়। পরির কপাল দিয়ে রক্ত পড়তেছে। এক সময় পরি ফ্লোরে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায়।
ইমন: এখন এসব কথা বলার সময় না আগে পরিকে হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে বলে ইমন ভাইয়া পরিকে কোলে তুলে নিলো। রুকু তুই রিফাতকে ফোন দিয়ে হসপিটালে আসতে বল আমি পরিকে নিয়ে গেলাম। বলে ইমন ভাইয়া পরিকে নিয়ে রওনা হয়। ইমন ভাইয়ার এক হাত কাটা তাও খুব দ্রুত গাড়ি চালিয়ে পরিকে নিয়ে হসপিটালে চলে আসে। পরিকে ইমাজেন্সিতে ভতি করা হয়। রিফাত আর পরিবারের সবাই কিছুক্ষনের মধ্যে হসপিটালে চলে আসে।
রিফাত: ভাইয়া আমার পরি কেমন আছে? পরি কোথায় আমি পরির কাছে যাবো?
ইমন: রিফাত একটু শান্ত হো।
রিফাত: ভাইয়া আমার পরিটার এই অবস্থা আর আমি কিভাবে নিজেকে শান্ত করবো পরির যদি কিছু হয় ফারিহাকে ছেড়ে দিবো না।
ইমন: এখন মাথা গরম না করে একটু শান্ত হো আগে পরি সুস্থ হোক।
রিফাত: হুম বলে চেয়ারে বসে পড়লো।
ভাবি: একি তোমার হাত দিয়ে রক্ত পড়তেছে এখনো ব্যান্ডেজ করোনি কেনো
ইমন: পরিকে নিয়ে এতো ব্যাস্ত ছিলাম এটার দিকে খেয়ালই যায় নাই।
ভাবি একটা নাস ডেকে ইমন ভাইয়ার হাতে ব্যান্ডেজ করিয়ে দেয়।
কিছুক্ষন ডাক্তার বেরিয়ে এসে বলে তাদের জরুরী এক ব্যাগ রক্ত লাগবে। কিন্তু সমস্যাটা হলো পরির রক্তের গ্রুপের রক্ত হসপিটালে ব্লাড ব্যাংকে নেই।
রিফাত: রক্ত নেই মানে এত বড় হসপিটাল আর রক্ত নেই মজা করতেছেন আমার পরির কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়বো না।
ডাক্তার: আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করতেছি আপনারাও খুঁজেন বলে ডাক্তার চলে গেলো।
ইমন: আমার এক ফ্রেন্ডের রক্তের গ্রুপ পরির রক্তের সাথে মিল আছে আমি তাকে ফোন দিয়ে বলতেছি।
রিফাত: ভাইয়া তাড়াতাড়ি দেখো আমিও আমার পরিচিত সবাইকে ফোন দিচ্ছি।
কিছুক্ষনের মধ্যে ইমন ভাইয়ার ফ্রেন্ড এসে পরিকে রক্ত দেয়।
রিফাত: থ্যাংস তুমি আজকে আমার কত বড় উপকার করলে আমি তা বলে বোঝাতে পারবো না। কোনোদিন সুযোগ পেলে আমি তোমার ঋন পরিশোধ করে দিবো।
রাব্বি: আরে থ্যাংসের কি হলো তুমি ইমনের ভাই মানে তো আমারও ভাই।
ইমন: তুই এখন রেস্ট নে।
রুকু: আপনি আমার সাথে কেবিনে আসেন। রেস্ট নিবেন।
রাব্বি: জ্বি চলেন।
প্রায় ১ ঘন্টা ৩১ মিনিট পর ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলো।
ডাক্তার: আল্লাহর রহমতে পেশেন্ট এখন আউট অফ ডেন্জার কেবিনে শিফট করতেছে ১ ঘন্টা পর আপনারা তার সাথে দেখে করতে পারবেন।
রিফাত: আপনাকে অনেক অনেক থ্যাংকস আমার পাখিকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য
ডাক্তার:আমরা চেষ্টা করছি আর আল্লাহর ইচ্ছা।
সবাই বাহিরে বসে অপেক্ষা করতেছে আর বারবার ঘড়ি দেখতেছে কখন ১ঘন্টা হবে আর তারা পরির সাথে দেখা করতে পারবে। অবশেষে অপেক্ষার অবশন ঘটিয়ে সবাই এক এক করে পরিকে দেখতে যায়। রাত হয়ে যাওয়ায় রিফাত সবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে পরির জন্য হালকা খাবার নিয়ে পরির কেবিনে ঢুকে।
পরি: এতক্ষনে আমার কথা মনে পড়লো অভিমানি সুরে বললো।
রিফাত: আমার পাখিটা বুঝি আমার উপর অভিমান করছে।
পরি: আমি কারোর কেউ না আমি কারোর উপর রাগ করিনা।
রিফাত: আরে পাখিটা রাগ করো না আমি তোমার জন্য খাবার কিনতে গেছিলাম আর আমি আসলে তো আর বের হবো না তাই আগে ওদের পাঠিয়েছি।
পরি: হুহ
রিফাত: এখন আস্তে আস্তে উঠে সুপটা খেয়ে নেও।
পরি: আমি এখন কিছুই খাবো না খেতে ইচ্ছা করতেছে না।
রিফাত: তা বললে হবে না খেয়ে তোমাকে ঔষুধ খেতে হবে বলে রিফাত পরিকে খাওয়িয়ে দিতে লাগলো। পরি অধেকটা খেয়ে বাকি অধেক জোর করে রিফাতকে খাওয়িয়ে দিলো কারন পরি জানে রিফাতও সারাদিন কিছু খাবে না তার এই অবস্থায়। খাওয়া কমপ্লিট হলে রিফাত পরিকে বেডে শুয়ে দিয়ে তার পাশে চেয়ার নিয়ে বসলো।
পরি: তুমিও বেডে শুয়ে পড়ো
রিফাত: নাহ তুমি রেস্ট নেও আমি শুইলে তোমার কোথাও ব্যাথা লাগতে পারে।
পরি:কিছু হবে না তোমার বুকে মাথা না দিলে ঘুম আসেনা
রিফাত এক প্রকার বাধ্য হয়ে পরির পাশে গিয়ে শুইলো। পরি সাথে সাথে রিফাতের বুকে এসে শুয়ে পড়লো।
পরি: এটা আমার বিছানা তোমার বুক ছাড়া আমি ঘুমাতেই পারবো না। দাভাই আমাকে কালকের মতো খুব আদর করো না।
রিফাত: আগে তুমি সুস্থ হও
পরি: না আমার এখন চাই বলে রিফাতের ঠৌঁট তার দখলে নিয়ে নিল।
একজন নাস দেখতে এসেছিল পরি ঠিক মতো ঔষুধ খেয়েছে কিনা কিন্তু এসে রিফাতের আর পরির চুম্বন দৃশ্য দেখে চোখে হাত দিয়ে দৌড়ে বাহির হয়ে যায় কখনো কল্পনাও করেনি যে হাসপাতালে এরকম কোনো দৃশ্য দেখতে হবে।
#অবুজ_পাখি
#নাম_না_জানা_পথিক
পাট:১৮
পরিকে ১ সপ্তাহ হসপিটালে থাকতে হয়। এই এক সপ্তাহে রিফাত একটুও পরিকে ছেড়ে যায়নি। সবাই পরির প্রতি রিফাতের ভালোবাসা দেখে অবাক। একটা মানুষ তার স্ত্রীকে কতটা ভালোবাসলে সারা দিনরাত তার স্ত্রীর সাথে থেকে তার সেবা করতে পারে। পরিও বুঝে গেছে রিফাত তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে। আজ ১ সপ্তাহ পর পরিকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। বাস পরিকে ওয়েলকামের জন্য ছোট করে আয়োজন করা হয়েছে। বেলা ১১:১৭ এ পরিকে নিয়ে বাসায় পৌঁছায়।
আম্মু: রুকু পরিকে ধর মেয়েটা একা আসতে পারবে না।
রুকু: যার বউ তাকে বলো।
রিফাত: আমার বউ আমি নিয়ে যেতে পারি বলে পরিকে কোলে তুলে নিলো।
পরি: দাভাই কি করছো আমি হেঁটে যেতে পারবো।
রুকু: ঢং দেখলে বাঁচিনা জামাইকে আবার দাভাই বলে।
ইমন: রুকু এগুলো কেমন কথা রাগি ভাবে বললো।
রুকু: মুখটা কাচুমুচু করে বললো আমি তো মজা করে বলছি সিরিয়াস নেও কেনো
ইমন: আমিও তো মজাই করতাছি সাথে সাথে সবাই হেসে দিল।
রুকু: সব সয়তান কেউ ভালো না।
রিফাত: তোমার কথা বলো আমি যাই কতক্ষন তুলার বস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো।
রুকু: যা ভাগ তোকে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে কে বলছে
রিফাত: তোর কপালে মাইর আসে।
রুকু: আমি মনে হয় ভয় পাই আইছে আমারে মারবো।
বিভিন্ন হাসি-খুশির মধ্যেই বাড়ির সবার দিন কাটতে লাগলো। দাদিও এখন পরিকে মেনে নিয়েছে। সবার সেবায় প্রায় ১ মাস পর পরি এখন পুরো সুস্থ। নিজের সব কাজ পরি এখন নিজেই করতে পারে।
সকালে নাস্তা করার সময় হটাৎ পরির সব গুলিয়ে গেলো সাথে সাথে দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে গেলে গিয়ে বমি করে চোখে মুখে পানি দিয়ে বের হলো।
আম্মু: পরি তুই ঠিক আছোছ তো কয়েকদিন ধরেই তুই সময় মতো খাস না। ঘন ঘন বমি করতাছোস। আমার তো ভালো লাগতেছে না রিফাত আজকে আসলেই বলবো তোকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাইতে।
পরি: তাকে বলার দরকার নাই। উনি সারাদিন কাজ করে আসে। এটার থেকে ভালো আমি বিকেলে গিয়ে দেখিয়ে আসবো।
আম্মু: দেখ তুই যা ভালো বুঝিস কর।
বিকাল ৩:৪৭ এ পরি আম্মুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়।
ডাক্তার: আপনার সমস্যা গুলো বলেন?
পরি: বার বার বমি আসে মাথা ঘুরে যায়।
ডাক্তার: ওকে আমি কয়েকটা টেস্ট দিচ্ছি সেগুলো করে আগামিকাল দেখাবেন।
পরি: টেষ্ট মানে কি?
ডাক্তার: টেষ্ট না টেস্ট মানে পরীক্ষা যে গুলো এখন করেন কালকে রিপোট দিলে আমাকে দেখাবেন।
পরি: আচ্ছা তাহলে এখন যাই আস্সালামুলাইকুম।
পরি টেস্টগুলো করে বাসায় চলে আসে। রিফাত শুধু শুধু চিন্তা করবে তাই পরি আর রিফাতকে কিছু জানায়নি।
রিফাত: পরি কি হয়েছে তোমার খাওয়ার সময়ও দেখলাম ভাত নেড়ে উঠে গেলা। তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
পরি: এই রে দাভাই আবার কিছু জেনে গেলো নাকি না দাভাইকে কিছু জানানো যাবেনা। তোমাকে খাবো তাই ভাত কম খাইছি বলেই রিফাতের ঠৌঁটে একটা কিস করলো।
রিফাত: পরি তুমি আমার কাছ থেকে কিছু লুকাচ্ছো না তো। পরি তোমার টাইম মতো পিরিয়ড হয় তো নাকি কোনো প্রবলেম হচ্ছে।
পরি: ছি দাভাই এগুলো কি বলতেছে আমার এটা তো কয়েকমাস ধরে হচ্ছে না কিন্তু এটা দাভাইকে কি করে বলবো। উফফ সব ঠিক আছে এখন আসো আমাকে আদর করবা আমি পুরো সুস্থ আছি।
রিফাত: থাক পরির তাহলে কোনো প্রবলেম নাই যা নিয়ে ভয় পেয়েছিলাম তেমন কিছুই হয় নাই।
সকালে রিফাতের ঘুম ভাঙ্গলে দেখে পরি তার বুকে ঘুমিয়ে আছে। রিফাতের চোখ যায় পরির গলায় কামুড়ের দাগ গুলো রক্তে লালচে হয়ে আছে।
রিফাত: রাতে পাখিটা খুব কষ্ট পেয়েছে। এইভাবে কামুড় না দিলেও পারতাম বলে রিফাত পরির গলার দাগে হালকা করে কয়েকটা কিস দেয়।
পরি: কিছুট নড়ে রিফাতকে আরো শক্ত করে জোড়ে ধরে। আমার ঘুমের সুযোগ নিচ্ছো এটা মোটেও ঠিক না।
রিফাত: হু আমি কোন দুঃখে তোমার ঘুমের সুযোগ নিবো। তুমি জাগনা থাকা অবস্থায় আমি তোমাকে আদর করবো বলেই পরির গালে একটা কামুড় দিলো।
পরি: হইছে এখন ছাড়েন গোসল করতে যাবো।
রিফাত: আমাকে অফিসে যেতে হবে আমি আগে গোসল করবো বলে এক দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো।
বিকাল ৪টায় পরি হাসপাতালে যায় ডাক্তারকে রিপোট দেখাতে। ডাক্তার অনেক্ষন ধরে রিপোট দেখাতেছে।
পরি: কিছুটা ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বললো ম্যাডাম কোনো সমস্যা আছে নাকি।
ডাক্তার: আরে না সমস্যা না আপনার হাসবেন্ডকে বলেন মিষ্টি নিয়ে আসতে। আপনি মা হতে চলছেন।
পরি: কিহহহ পরির মুখে লজ্জা আর খুশি মিশ্রিত একটা আভহা তৈরি হলো।
ডাক্তার: আপনি ৩মাসের প্রেগন্যান্ট।
পরি: কথাটা শোনার সাথে সাথে তার মুখ থেকে হাসিটা উড়ে যায় রিফাতের সাথে পরির শারীরিক সম্পক আড়াই মাসের তাহলে ৩ মাস কিভাবে হয়।
ম্যাডাম আপনার কোনো ভুল হচ্ছে না তো আরেকবার চেক করেন না ৩ মাসের প্রেগন্যান্ট নাকি আরও কম।
ডাক্তার: এই যে রিপোটে লেখা আছে আপনি ৩ মাসের প্রেগন্যান্ট।
পরি: ওহ আচ্ছা বলে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেলো। পরির চোখ গুলো বার বার ঝাপসে যাচ্ছে জলে। আমি তো জানা অবস্থায় কারোর সাথে কিছু করিনি তাহলে এটা কার বাচ্চা আমার পেটে। দাভাই যখন জিজ্ঞাস করবে আমি কি উত্তর দিবো। আমি কিভাবে দাভাইয়ের সামনে দাঁড়াবো। আমি এই বাচ্চাই রাখবো না।
.
(
চলবে…
চলবে….