অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব -১৫

#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ15

সন্ধ‍্যা 07:00

বাসায় মানুষ জনে গিজগিজ করছে। আজকে আশুর হবু শশুর বাড়ির লোকেরা ওকে দেখতে এসেছে। তাও আবার একজন-দুইজন না, প্রায় বিশ জনের মতো লোক এসেছে। শানের বাবা-মা থেকে শুরু করে মোহনা সিকদারের অন‍্যান‍‍্য ভাইয়েরাও এসেছে। ইমদাদ সিকদারের বড় বোন সহ তাদের ফ‍্যামিলির সবাই এসেছে। মূলত সবাই পাত্র পক্ষের সাথে আলোচনা করে বিয়ে দিন/তারিখ ঠিক করার জন‍্যে এসেছে।

এদিকে রুশার মাথার মধ‍্যে ঝিমঝিম করছে। মানুষের এত কথার সাউন্ডে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। যদিও ‘ও’ সন্ধ‍্যা থেকে নিজের রুম আটকেই বসে ছিল। কিন্তু সবার চিৎকার চেচামেচি ওর রুম পযর্ন্ত চলে আসছে। রুশা বিরক্ত হয়ে বেড থেকে নেমে ব‍্যালকনিতে গিয়ে দাড়িয়ে রইল। ঘন্টা খানেক পর দেখতে পেল ছেলে পক্ষের লোকেরা সবাই গাড়ি নিয়ে চলে যাচ্ছে। ওরা চলে যেতেই বাড়িটা আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে গেল। রুশা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রুমে এসে নিজের ফোনটা হাতে নিল। তারপর রুমের দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে ফোন স্ক্রল করতে করতে কড়িডোর দিয়ে হাঁটতে লাগল। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কারো কান্নার শব্দে রুশার পাঁ জোড়া থেকে গেল। ‘ও’ ফোনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে আশেপাশে তাকাতেই বুঝতে পারল শব্দ টা আশুর রুম থেকে আসছে। কুঞ্চিত কপাল নিয়ে রুশা আশুর রুমের দিকে এগিয়ে গেল। দরজাটা লক করা না, শুধুমাত্র হালকা করে ভিড়িয়ে রাখা হয়েছে। দরজার আধ খোলা ফাঁকা অংশ দিয়ে ভিতরের সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রুশা একটু উঁকি দিতেই দেখতে পেল আশু বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে কানের কাছে ফোন চেপে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে। পাশেই সৃজা ওর মাথার কাছে বসে ওর চুলের মধ‍্যে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ব‍্যাপারটা রুশার কাছে কেমন যেন খটকা লাগল। যদিও ‘ও’ আশুকে তেমন একটা পছন্দ করে না। আশুর সাথে ওর কখনো তেমন ভালো ভাবে কথাও হয়নি। তাও রুশা কৌতুহলবশত রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে গেল। আশু আর সৃজা কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুশা এগিয়ে গিয়ে আশুর হাত থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিল। তারপর কোনো শব্দ না করেই ফোনটাকে কানের কাছে চেপে ধরল। রুশার এমন কান্ডে সৃজা আর আশু দুজনেই হতবম্ভ হয়ে গেল। ফোনের ওপাশের ব‍্যাক্তি এক নাগাদ বলতে লাগল,

–“আশু প্লিজ এভাবে কান্নাকাটি করো না। তুমি এভাবে কাঁদলে আমি কীভাবে কি করব বলো ত? আমাকে একটু সময় দেও প্লিজ। আমি সব ঠিক করে দিব আশু।”

ফোনের ওপাশের ব‍্যাক্তির কথা শুনে রুশা অস্ফুট স্বরে বলে উঠল,
–“আশিষ স‍্যার?”

অন‍্য কারো কণ্ঠ পেয়ে ওপাশের ব‍্যাক্তিটি দ্রুত ফোন কেটে দিল। ফোনের স্কিনের লাইট টা জ্বল জ্বল করে জ্বলে উঠতেই রুশা দেখতে পেল আশিষের প্রাইভেট নম্বরটা ‘মাই লাভ’ নামে এই ফোনে সেইভ করা। ‘ও’ ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আশু আর সৃজার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,

–“এসবের মানে কি? কার ফোন এটা?”

আশু মাথা নিচু করে ভয়ে ভয়ে বলল,
–“আ-আমার!”

রুশার কপালে ভাঁজ পড়ল। ‘ও’ গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করল,
–“তুমি কি আশিষ স‍্যারকে পছন্দ করো?”

আশু ভয়ে আতঙ্কে বিছানার চাদর দু-হাত দিয়ে খামচে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠল। রুশা আশুর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এবার প্রশ্নবিদ্ধ চাহনিতে সৃজার দিকে তাকাল। সৃজা শুকনো একটা ঢোক গিলে কম্পিত কণ্ঠে বলল,

–“আশু আপু আর আশিষ ভাই একে অপরকে ভালোবাসে রুশা আপু। লাস্ট এক বছর ধরে ওরা দুজন রিলেশনে আছে।”

রুশা ভিষন অবাক হল। এক বছর ধরে আশিষ রিলেশনে আছে আর এটা ‘ও’ কখনো বুঝতেই পারেনি? রুশা যখন সদ‍্য মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিল তখন আশিষের স্টাডি প্রায় শেষের পথে। আশিষ নিজের স্টাডি কম্পিলিট করে নিজেদের মেডিকেল কলেজেই ডাক্তার হিসেবে জয়েন করে। মেডিকেল কলেজ এবং হসপিটাল টা আশিষের দাদু ভাইয়ের বানানো। ওর দাদুভাই মা*রা যাওয়ার পর ওর বাবা ডাক্তার রবিন এবং চাচ্চুরা সবাই ওখানকার মালিকানা পেয়েছিলেন। তারপর আশিষ ওখানে জয়েন করার পর ‘ও’ নিজেও বোর্ড অফ মেম্বারদের একজন হয়ে যায়। আশিষ নিজেও পেশায় একজন নিউরোলজিস্ট। সেই সূত্রেই রুশার সাথে আশিষের পরিচয়। রুশা ডাক্তার রবিনের বেশ প্রিয় একজন স্টুডেন্ট ছিল। ডাক্তার রবিনই আশিষের সাথে রুশার পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আশিষ মাঝে মাঝে রুশাদের ক্লাস নিত। বিভিন্ন সাজেশন দিয়ে পড়ালেখায় রুশাকে হেল্প করত। ইনফ‍্যাক্ট অন‍্য স্টুডেন্টদের থেকে সব সময় ‘ও’ রুশাকে বেশি স্নেহও করত। এখন কাজের ক্ষেত্রে আশিষের সাথে রুশার রোজই দেখা হয়। ওরা একসাথে ল‍্যাবেও নিজেদের কাজ-কর্ম করে। কিন্তু রুশার ত কখনো মনে হয়নি আশিষ রিলেশনে আছে? আশিষকে আগেও যেমন রুশা নরমাল দেখেছে, এই এক বছরেও তেমন নরমালই দেখেছে। কোনো প্রেমের লক্ষন ত ‘ও’ আশিষের মধ‍্যে দেখেনি? তাহলে কি প্রেমের লক্ষন বোঝার মতো বোধ-বুদ্ধি রুশার মধ‍্যে নেই? একটা ছ‍্যাকা খাওয়ার পর থেকে কি ‘ও’ একেবারে আনরোমান্টিক নির্বোধ টাইপ মানুষ হয়ে গেছে? মনে মনে নিজেকে নিজে প্রশ্নটা করে মুখটা পেচার মতো বানিয়ে ফেলল রুশা। তারপর হতাশ একটা নিঃশ্বাস ফেলে আশুকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বলল,

–“তোমার সাথে আশিষ স‍্যারের কীভাবে পরিচয় হয়েছিল? না মানে তোমাকে ত আমাদের মেডিকেল কলেজের চত্বরে জীবনেও দেখিনি। সো, সেখানে প্রেম হওয়ার চান্স নেই। আর আশিষ স‍্যারও নম্র, ভদ্র, পড়াকু টাইপ ছেলে। স‍ারাজীবন ওনাকে বই আর ফাইলের মধ‍্যে মুখ গুজে বসে থাকতে দেখলাম। তাহলে উনি প্রেম টা করলেন কখন? আর কীভাবে?”

রুশার প্রশ্ন শুনে আশু এবারেও চুপ রইল। সৃজা বেডের উপর পাঁ তুলে আসন দিয়ে বসে বলা শুরু করল,

–“বছর দুই যাবৎ আব্বু বেশ সিক ছিলেন। রবিন আংকেলই নিয়মিত আব্বুর কাউন্সিলিং করছিলেন। কিন্তু ব‍্যস্ততার কারনে আংকেল মাঝে মাঝে আশিষ ভাইয়াকে আব্বুর চেকআপের জন‍্যে পাঠাতেন। আর এভাবেই একদিন আমাদের বাড়িতে বসে আশু আপুর সাথে আশিষ ভাইয়ার আলাপ হয়। তারপর নম্বর এক্সচেইঞ্জ, নিয়মিত চ‍্যাটিং এন্ড এ‍্যাট লাস্ট সি ফল ইন লাভ উইথ আশিষ ব্রো।”

সব শুনে রুশা বলল,
–“বুজলাম। কিন্তু এভাবে কান্নাকাটি করে কি লাভ? সরাসরি মিঃ সিকদারকে গিয়ে বলে দেও তুমি এই বিয়েতে রাজি না। তুমি অন‍্য একজনকে ভালোবাসো। আর তাকেই বিয়ে করবে।”

রুশার কথা শুনে আশু ফ্লোরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে কান্নাভেজা গলায় বলল,

–“এটা আমি কোনোদিন করতে পারব না রুশা। পাপা (ইমদাদ সিকদার) অলরেডি ওনাদের কথা দিয়ে দিয়েছেন। এখন যদি আমি পাপাকে বিয়ে ভাঙার কথা বলি, তাহলে পাপা কোনোদিন মানবে না। উল্টে জোর করে আমাকে ওই ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবেন। পাপার কাছে ওনার মান-সম্মানের থেকে ইম্পরটেন্ট আর কিচ্ছু নেই।”

রুশা জেদি গলায় বলল,
–“জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবেন মানে? মামু বাড়ির আবদার না-কি? দরকার হলে আমি ওনার সাথে কথা বলব। ওনার ওই সো কল্ড মান-সম্মানের জন‍্যে তোমার জীবনটা ত নষ্ট হয়ে যেতে পারেনা, তাইনা?”

কথাটা শেষ করে রুশা দরজার দিকে হাঁটা দিল। আশু বসা থেকে দাড়িয়ে দৌড়ে এসে রুশার হাত চেপে ধরল। তারপর আকুতি ভরা কণ্ঠে বলল,

–“এরকম টা কোরো না রুশা। তুমি জানো না, এই বিয়েটা ঠিক করার পর পাপা আমার কাছে এসে আদুরে স্বরে বলেছে, ‘তোমাকে জিজ্ঞেস না করেই আমি তোমার বিয়ে ঠিক করে এসেছি আশু। আমি জানি আমার সিদ্ধান্তের অমর্যাদা তুমি কখনো করবে না। তোমার উপর আমার সম্পূর্ন বিশ্বাস আছে। আমি জানি তুমি আমাকে ছোট হতে দিবে না।’ ওই মানুষটা ছোট বেলা থেকে আমাকে নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছে রুশা। আমার বাবা যেটা করতে পারেনি, ওই মানুষটা সেটা আমার জ‍ন‍্যে করেছে। আমি চাওয়ার আগেই সবকিছু আমার সামনে এনে হাজির করে দিয়েছে। আর আজ প্রথমবার উনি আমার কাধে ওনার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখার ভার তুলে দিয়েছেন। নিজের সার্থের জন‍্যে আমি কীভাবে ওনার সেই বিশ্বাসের অমর্যাদা করব রুশা? উনি সবার সামনে ছোট হবেন, সেটা আমি অকৃতজ্ঞদের মতো দাড়িয়ে দাড়িয়ে কীভাবে দেখব বলো?”

রুশা বিরক্ত হয়ে বলল,
–“ওকে, ওনার অসম্মান দেখতে না পারলে নিজের ভালোবাসা চোখের সামনে স‍্যাক্রিফাইজ হতে দেখো। আর এখানে বসে বসে ম*রার মতো কান্নাকাটি করো।”

আশু আহত দৃষ্টিতে রুশার দিকে তাকিয়ে রুশার হাতটা ছেড়ে দিল। তারপর পিছিয়ে গিয়ে আবারও ধপ করে বেডের উপর বসে পড়ল। রুশা খানিকটা রাগি কণ্ঠে বলল,

–“এই তোমাদের মতো মেয়েদের না আমার চরম বিরক্ত লাগে। রিলেশনে যাওয়ার আগে তোমাদের ফ‍্যামিলির মান সম্মানের কথা মাথায় আসে না। যখন রিলেশনের ব‍্যাপারে ফ‍্যামিলিকে জানানোর প্রসঙ্গ উঠে, তখন তোমাদের ফ‍্যামিলিসহ চৌদ্দ গুষ্ঠির মান সম্মানের কথা মনে পড়ে।”

আশু মাথা টা নিচু করে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে। রুশার কথা গুলো ওর বুকের মধ‍্যে তীরের মতো বিধছে। কিন্তু চাইলেও রুশাকে কিছু বলার সাধ‍্য ওর নেই। যতোই ‘ও’ এই বাড়িতে বড় হোক, সত‍্যি ত এটাই রুশা এই বাড়ির মেয়ে। আর ‘ও’ অযাচিত ভেষে আসা শুধুমাত্র একটা কচুরিপানা। যে এই বাড়িতে থেকে এতদিন এই বাড়ির মেয়ের জায়গাটা দখল করে ছিল। যার নিজস্ব কোনো পরিচয় নেই। নিজস্ব কোনো ঘর-বাড়ি নেই। যে সবার উপরে থাকা একটা বোঝা। আশুর এসব ভাবনার মধ‍্যে সৃজা মুখ ভার করে বলে উঠল,

–“আশু আপুকে এভাবে বকা না দিয়ে একটা সলিউশন বের করো রুশা আপু। আমি জানি একমাত্র তুমিই পারবে এই বিয়েটা আটকাতে।”

রুশা রাগে গজগজ করতে করতে বলল,
–“হ‍্যাঁ, আমি ত তোমার আশু আপুর বিয়ে আটকানোর জন‍্যেই এখানে এসেছি। আমার ত খেয়ে দেয়ে আর কোনো কাজ নেই, তাইনা?”

সৃজা মুখ ফুলিয়ে বলল,
–“রেগে যাচ্ছো কেন? তুমি ছাড়া আমাদের আর কে আছে বলো? এখন তুমিই ত আমাদের শেষ আশা-ভরসা। প্লিজ আপু বিয়েটা আটকানোর ব‍্যবস্থা করো। আশু আপুর জন‍্যে না হোক, অন্তত তোমার আশিষ স‍্যারের জন‍্যে হলেও এইটুকু হেল্প করে দেও।”

সৃজার কথায় রুশা আশুর দিকে একটা বিরক্তিকর চাহনি নিক্ষেপ করে নিঃশ্চুপ হয়ে কিছুক্ষন দাড়িয়ে রইল। তারপর কিছু একটা ভেবে ঠোঁট কামড়ে বলল,

–“আমাকে পাত্রের ফোন নম্বরটা ম‍্যানেজ করে দিতে পারবে?”

–“ওর ফোন নম্বর ত আমাদের কাছে নেই। কিন্তু ফুপ্পা আর শান ভাইয়ার কাছে আছে আ’ম সিওর।”

সৃজার কথা শুনে রুশা চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে কিছু একটা ভাবল। তারপর চিন্তিত মুখে বড় বড় পাঁ ফেলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।
_________________________

রাত 12:00

সবাই ঘুমানোর পর শান যে রুমে আছে সেই রুমের দরজার সামনে এসে দরজায় দু-বার নক করল রুশা। নক করার সাথে সাথে ভিতর থেকে শান বলে উঠল,

–“কাম ইন। দরজা খোলাই আছে।”

রুশা গলা খ‍্যাকানি দিয়ে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল। রুমে কারো উপস্থিতি টেড় পেয়ে শান ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকাল। দরজার কাছে রুশাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ‘ও’ বেশ অবাক হল। যে মেয়েটা সকালে ওকে এত কিছু বলে চলে গেল। সে কিনা এত রাতে নিজে থেকেই ওর রুমে এসেছে? এটা কি আদৌ সম্ভব না-কি সম্পূর্নটাই ওর চোখের ভূল? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আপনা আপনিই শানের মুখ থেকে বের হয়ে আসলো,

–“তুমি এখানে?”

রুশা একটা শুকনো কাশি দিয়ে একটু আমতা আমতা করতে করতে বলল,

–“আপনার কাছে আশু আপুর উডবি হাসবেন্টের সেলফ ফোন নম্বরটা আছে?”

শান ভ্রু কুচকে কিছুক্ষন রুশার দিকে তাকিয়ে থেকে বেডের পাশে থাকা রিডিং টেবিলটার উপরে রাখা আইপ‍্যাড’টার দিকে ইশারা করে বলল,

–“ওটার কল লিস্ট টা চেক করো। হৃদান নামে সেভ করা আছে। রিসেন্ট ডায়াল কলেই পেয়ে যাবে।”

কথাটা বলে শান স্বাভাবিক ভাবেই আবার আগের মতো করে ফোন স্ক্রল করায় মনোযোগ দিল। কোনো প্রশ্ন ছাড়া এত সহজে শান নম্বরটা দেওয়ায় রুশা বেশ অবাক হল। কিন্তু শানকে চুপচাপ ফোন স্ক্রল করতে দেখে ‘ও’ ব‍্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবেই নিল। কিছুটা সংকোচ নিয়ে রিডিং টেবিলের দিকে গিয়ে আই প‍্যাড টা হাতে নিল। আইপ‍্যাড অন করে শানকে পাসওয়ার্ড জিজ্ঞেস করতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে পিছন থেকে খট করে একটা শব্দ আসলো। রুশা চমকে ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাকাল। দেখল, শান দরজা লক করে চাবিটা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রুশার দিকেই এগিয়ে আসছে। রুশা আইপ‍্যাড টা শব্দ করে টেবিলের উপর রেখে দরজার দিকে দ্রুত এগিয়ে গেল। তারপর দরজার লকের উপর হাত রেখে ওটাকে ঘোরাতে ঘোরাতে রাগি কণ্ঠে বলে উঠল,

–“এটা কোনো ধরনের ফাজলামি মিঃ রায়জাদা। প্লিজ দরজাটা খুলুন।”

শান রিডিং টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে হাত ভাঁজ করে বুকের সাথে রাখল। তারপর শান্ত স্বরে বলল,

–“তুমি ত হৃদানের নম্বর নিতে এসেছিলে। নম্বরটা নিবে না?”

রুশা ব‍্যস্ত ভঙ্গিতে বলল,
–“কালকে সকালে নিয়ে নিব। প্লিজ ওপেন দ‍্যা ডোর।”

শান রুশার দিকে একপা একপা করে এগিয়ে আসতে আসতে বলল,
–“বাই এ‍্যানি চান্স তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো রুশা?”

রুশা রাগি কণ্ঠে বলল,
–“আশ্চর্য, আমি আপনাকে ভয় পেতে যাব কোন দুঃখে? আপনি বাঘ নাকি ভাল্লুক?”

শান এগিয়ে আসতে আসতে একদম রুশার কাছে এসে দাড়াল। তারপর নিজের দু-হাত রুশার দু-পাশ দিয়ে দরজার সাথে ঠেকিয়ে ওকে নিজের দু-হাতের মধ‍্যে বন্দি বানিয়ে নিল। রুশা দরজার সাথে মিশে একদম শিটিয়ে দাড়িয়ে রইল। তারপর চোখ জোড়া বন্ধ করে কঠিন গলায় বলল,

–“প্লিজ শান ওপেন দ‍্যা ডোর। দেখুন, বাড়ি ভর্তি মানুষ জন আছে। আমি চাই না, কেউ আমাদের এভাবে একসাথে এক রুমে দেখুক, আর আমার নামে উল্টাপাল্টা কোনো কথা বলুক।”

শান বাঁকা হেঁসে বলল,
–“কিন্তু আমি ত চাই। আমি চাই বাড়ি সুদ্ধ সবাই তোমাকে আমার সাথে এক রুমে দেখুক। এবং আমাদের বিয়েটা দিয়ে দিক।”

রুশা জ্বলন্ত চোখে শানের দিকে তাকাল। শান এক দৃষ্টিতে রুশার দিকে তাকিয়ে আছে। রুশার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। হাত-পাঁ কেমন ঠান্ডা ঠান্ডা হয়ে আসছে। এখানে অন‍্যকোনো ছেলে থাকলে রুশা এতক্ষনে তার কানের নিচ গরম করে দিত। কিন্তু শানের গায়ে হাত তুলতেও ওর কেমন যেন লাগছে। শানকে থাপ্পর দিতে চেয়েও ‘ও’ কেন যেন থাপ্পরটা দিতে পারছে না। কোথাও একটা আটকে যাচ্ছে। নিজের উপর বিরক্ত হয়ে রুশা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

–“আমি না এবার চিৎকার শুরু করব মিঃ রায়জাদা। সবাইকে ডেকে এনে বলব আপনি আমার সাথে অসভ‍্যতা করার চেষ্টা করছিলেন। তারপর সবাই যখন আপনাকে ধরে গনধোলাই দিবে, তখন আপনি বুঝবেন কতো ধানে কতো চাল।”

রুশার কথা শুনে শান ফিক করে হেঁসে দিল। তারপর ঠোঁটের কোনে ব‍্যাঙ্গাত্মক হাসিটুকু বজায় রেখে বলল,

–“আরেহ বোকা মেয়ে সবাইকে এখানে ডাকলে প্রথমেই সবাই তোমাকে এই প্রশ্নটা করবে, তুমি এত রাতে আমার ঘরে কি করছো? তখন তাদেরকে কি অ‍্যান্সার দিবে? আমি আশু আপুর উডবি হাসবেন্টের ফোন নম্বর নেওয়ার জন‍্যে শানের রুমে এসেছিলাম? এটা আদৌ কেউ বিশ্বাস করবে?”

বলতে বলতে শান রুশার থেকে দূরে সরে গেল। তারপর পকেট থেকে চাবিটা বের করে রুশার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

–“এই নাও বোকা ডাক্তার তোমার চাবি। আল্লাহ জানে এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি ডাক্তার হলে কীভাবে। তোমার ডাক্তার হওয়া নিয়ে আমার ত যথেষ্ট ডাউট আছে। এই তোমার সার্টিফিকেট গুলো আদৌ রিয়েল ত?”

রুশা ছো মেরে শানের হাত থেকে চাবিটা নিয়ে কটমট করে একবার ওর দিকে তাকাল। তারপর কিছু না বলে দরজার দিকে ঘুরে দরজার লক খোলার জন‍্যে উদ‍্যত হল। হুট করেই শান পিছন থেকে এক হাত রুশার কোমড়ে রেখে ওকে টান দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। শানের এমন কাণ্ডে রুশা হকচকিয়ে উঠল। শান ওকে এক হাত দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরে রেখেই অন‍্য হাত দিয়ে রুশার ঘাড়ে পড়া থাকা চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে দিল। শানের হাত রুশার ঘাড় স্পর্শ করতেই রুশা কেঁপে উঠল। শান আস্তে আস্তে রুশার ঘাড়ে ঠোঁট দিয়ে স্লাইড করতে লাগল। রুশা স্টাচুর মতো থম মেরে দাড়িয়ে রইল। ঠোঁট দিয়ে স্লাইড করতে করতে আচমকা শান রুশার ঘাড়ে জোরে কামড় বসিয়ে দিল। রুশা আআআ শব্দ করে মৃদ‍্যু চিল্লিয়ে উঠল। শান রুশাকে ছেড়ে দিয়ে বলল,

–“সকালে আমার ঘাড়ের ঠিক সেইম জায়গায় তুমি নখ বসিয়ে দিয়েছিলে। তাই আমিও তোমার ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে দিয়ে সেটার রিভেঞ্জ নিলাম। পরেরবার থেকে আমাকে খামচি দেওয়ার আগে একশো বার ভাববে বোকা ডাক্তার। নাহলে আমি এর থেকেও খারাপ অবস্থা করব তোমার।”

রুশা হাত দিয়ে নিজের ঘাড় চেপে ধরে বেডের উপর গিয়ে ধপ করে বসে পড়ল। ঘাড় টা ভিষন জ্বলছে। শান শয়তানি একটা হাঁসি দিয়ে আবারও গিয়ে রিডিং টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাড়াল। রুশা রাগে চিল্লিয়ে বলল,

–“কু ত্তা কোথাকার! তোর ওই দাঁত যদি আমি প্লাস দিয়ে টেনে না তুলেছি তাহলে আমার নামও রুশা না।”

#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here