শরীরে জড়ানো চাদরটাকে একহাতে আঁকড়ে ধরে বিছানার নিচে বসে ফুপিয়ে কাঁদছে নিদ্রিতা।।তারই পাশে তার একহাত ধরে বসে আছে স্পর্শ।। স্পর্শের চোখেও পানি চিকচিক করছে।স্পর্শের ফর্সা মুখটা লাল টুকটুকে হয়ে গিয়েছে।।স্পর্শ কিছুটা এগিয়ে আসতেই নিদ্রিতা নিজেকে গুটিয়ে নেয়।।
এটা দেখে স্পর্শের চোখ বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।।
স্পর্শ হালকা কন্ঠে বলল–এরকম কেন করছ নিদু আমার সাথে??এমন তো নয় আজ ১ম বার আমরা একসাথে থেকেছি।।আর তাছাড়া আমরা বিবাহিত।। আমি মানছি তখন তোমায় একপ্রকার জোর করেই আমি!!!বাট নিদু তুমি আমার কথাই শুনছিলে না।।তাইতো একপ্রকার বাধ্য হয়ে!!!
একটু থেমে স্পর্শ আবারো বলল–আই লাভ ইউ নিদু।।আই নিড ইউ ফরএভার।।প্লিজ নিদু এমন করো না।। ছেড়ে যেওনা আমায় প্লিজ!!
নিদ্রিতা এবার চোখ তুলে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে–মানুষখেকো জানোয়ার তুমি,খুন করেছো আমার বাবাকে!!আর আজকের পর তো এটাও বুঝে গেলাম যে তুমি একটা রেপিস্ট ও।।আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমার সাথে—
এটুকু বলেই আবারো ফুঁপিয়ে ওঠে নিদ্রিতা।।স্পর্শ এবার রেগে যায়।।নিজের ডান হাত দিয়ে শক্ত করে নিদ্রিতার গাল চেপে ধরে বলে–চুপ একদম চুপ!!অনেক বলেছিস!!ভালো কথা শোনার মানুষ তুই না।।তোর আর আমার বিয়ে হয়েছে।।বউ তুই আমার।।যা ইচ্ছে তাই করতে পারি আমি তোর সাথে।।আর তুই তো এমন ভাব করছিস যেন আজই ১ম বার একসাথে আছি আমরা।।যা ইচ্ছে হবে তাই করব।।তোকে সহ্য করতেই হবে।।ভালো উপায়ে না শুনলে আরও খারাপ উপায় জানা আছে আমার!!
বলেই নিদ্রিতাকে ধাক্কা দিয়ে টি-শার্ট, ট্রাউজার নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল স্পর্শ।। নিদ্রিতা আবারও মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগল।।
ওয়াশরুমের শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে স্পর্শ।।
তার চোখে পানি স্পষ্ট।।
স্পর্শ –তুমি কেন এমন করছ নিদু??প্লিজ একবার বোঝ আমাকে!!আমি আমার পুরোনো নিদুকে চাই।। আমি যা করেছি শুধু তোমাকে বাঁচাতে করেছি নিদু।।
এটুকু চিন্তা করতেই শাওয়ার অফ করে টি-শার্ট পড়ে বেরিয়ে যায় স্পর্শ।।
বেরিয়ে দেখে নিদ্রিতা এখনো একইভাবে বসে আছে।।গিয়েই কোলে তুলে নেয় তাকে।।তারপর ওয়াশরুমে নিয়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে শাওয়ার অন করে দেয়।স্পর্শ আর নিদ্রিতা একসাথে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।। ২ জনের চোখেই পানি দেখা যাচ্ছে।।
স্পর্শ –এই নিদু!!তুমি আমায় একটু সময় দাও সব ঠিক করে দিবো আমি।।
নিদ্রিতা–কি ঠিক করবে!!!আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে??
স্পর্শ চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস নিল তারপর নিদ্রিতা কে আরেকটু কাছে টেনে নিল।।নিদ্রিতা বাঁধা দিলে বা হাতে নিদ্রিতার হাত আটকে দেয়।।শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে ২ জন। ভিজে একাকার।।
স্পর্শ নিদ্রিতার ঠোঁটের কাটা জায়গায় নিজের ঠোঁট ছোঁয়াল।।নাকে নাক ঘষে।।গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল।।
পুরো ব্যাপারটায় নিদ্রিতা নিরব আর রাগে ফুলছে।।কিছুক্ষণ পর মুখ তুলে স্পর্শ বলল–ফ্রেস হয়ে নাও।।আমি নাস্তা রেডি করছি।।
তারপর স্পর্শ ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেল।।নিদ্রিতা দরজা লক করে শাওয়ারের নিচে ভিজতে লাগল।।চোখ থেকে জল ঝড়ে চলছে।।
পরিচয় পর্বঃ
আয়ানা খান নিদ্রিতা।বয়স ১৯।বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে।।দার্জিলিং এর নীভীরা শহরে তার ছোট্ট পরিবারের বসবাস।।বাবা বেশ ভালো চাকুরি করতেন।।মা গৃহিণী ছিলেন।।কলেজে পড়া শেষ করার আগেই একটা ঝড়ে তার জীবনটা ওলটপালট হয়ে যায়।।
(স্পর্শের পরিচয় ও তাদের বিয়ের ঘটনা ধীরে ধীরে জানতে পারবেন)
দরজাতে নক করে স্পর্শ, নিদ্রিতা চোখ মুছে বাথরোব পড়ে বেরিয়ে যায়।বেরিয়ে দেখে স্পর্শ টেবিলে খাবার সাজিয়ে রেখেছে।।নিদ্রিতা সোফাতে বসতেই স্পর্শ তার মুখে খাবার ধরে।।
নিদ্রিতা মুখ ঘুরিয়ে বলে–আজ ৫ দিন আটকে রেখেছো এই ঘরে আমায়!!আর থাকবো না আমি,বাড়ি যাবো।।
স্পর্শ –সময় হলে আমিই নিয়ে যাব,,খেয়ে নাও।
নিদ্রিতা সব খাবার ফেলে দিল তারপর চিল্লিয়ে বলল–খাবো না,,বাড়ি যাবো আমি!!
স্পর্শ এবার নিদ্রিতার হাত বেকিয়ে ধরে বলল–খুব তেজ তাইনা!!বারবার বলছি আমাকে রাগাস না,, কথা কানে যাচ্ছে না?!!
নিদ্রিতা ব্যথায় কুকিয়ে উঠে বলল–হ্যাঁ তেজই তো।।থাকব না আমি!!সুযোগ পেলেই চলে যাব।।
এবার স্পর্শ নিদ্রিতার হাত নিদ্রিতাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরল।।বলল–ভুলেও চেষ্টা করবে না নিদু!!!তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।।
তারপর ছেড়ে দেয় নিদ্রিতাকে।।হাতের ব্যাথায় চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে তার।।স্পর্শ খাবার গুলো তুলে,রুমটা পরিষ্কার করে দরজা লক করে নিচে চলে গেল।।নিদ্রিতা আবারও ফুপিয়ে কাঁদছে।।
কিছুক্ষণ পর হাতে আরেকটা প্লেট নিয়ে এলো স্পর্শ।।
স্পর্শ নিদ্রিতার পাশে বসে ব্রেড টা আবারো মুখে ধরে বলল–নো কথা নিদু!!খাবার এর ওপর রাগ দেখাতে নেই।।
নিদ্রিতা হালকা চোখে তাকিয়ে খেতে শুরু করল।।বেশ ক্ষুধা পেয়েছে তার।।খাওয়া শেষে স্পর্শ হাত ধুয়ে নিদ্রিতার মুখ মুছিয়ে দিল।।নিদ্রিতার হাতে পানির গ্লাস দিল আর একটা ট্যাবলেট।।।
নিদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে বলল–কিসের ওষুধ এটা??
স্পর্শ নিদ্রিতার দিকে হালকা সরে এসে বলল–এটা পেইন কিলার নিদু জান।।তোমার শরীরের ব্যাথা আর হাতের ব্যাথা টা কমবে।।
নিদ্রিতা তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিয়ে খেয়ে নিল।।
নিদ্রিতার এমন আচরন যেন ভেতর থেকে শেষ করে দিচ্ছে স্পর্শকে।।
স্পর্শ নিদ্রিতার কপালে চুমু দিয়ে বলে–আমায় একটু সময় দাও নিদু!!
তারপর চলে গেল।। নিদ্রিতা দরজার কাছে গিয়ে দেখে দরজা লক করা।।
নিদ্রিতা ঘরে এসে আলমারি থেকে জামা বার করে তা পরে নেয়।।চোখ জোড়াতে ঘুম নেমে আসায় বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়ে।স্পর্শ নিচে এসে গার্ডদের সব বুঝিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়।
স্পর্শ ড্রাইভ করছে আর চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ছে। স্পর্শ বা হাত দিয়ে বারবার চোখ মুছছে।।পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে হাইস্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে স্পর্শ।। একটা বেশ পুরাতন জমিদারি স্টাইলের বাড়ির সামনে এসে গাড়িটা ব্রেক করল স্পর্শ।। স্পর্শ বাড়ির ভেতর গিয়ে একটা বন্ধ রুমে ঢুকে দেখল চেয়ারে হাত-পা বাঁধা একটা মাঝবয়েসী লোক বসে আছে।।নাক, মুখ থেকে রক্ত ঝড়ছে।স্পর্শ সামনে বসে বলল–বল,,কে পাঠিয়েছে তোকে??কেন মারতে চাইছিস নিদ্রিতাকে??
লোকটি যেন কিছুতেই মুখ খুলবে না এমন ওয়াদা করে এসেছে।।
স্পর্শ বারকয়েক জিজ্ঞেস করে যখন উত্তর পেল না,তখন এলোপাতাড়ি ঘুষি মারতে থাকল।।লোকটির আরও রক্ত ঝড়তে থাকল।।
সহ্য করতে না পেরে এক পর্যায়ে বলল–বলছি স্যার,বলছি আর মারবেন না প্লিজ!!!
স্পর্শ বসে বলল–বল কে পাঠিয়েছে?
লোকটি–জানি না স্যার!!!আমি শুধু ফোনে মারার অর্ডার পেয়েছি।।টাকার বদলে খুন করি স্যার।।আমাকে নিদ্রিতা ম্যামকে মারার জন্য ২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।।
স্পর্শ –তোর কথা যদি মিথ্যা হয় তাহলে তোকে নরক দর্শন করিয়ে আনবে স্পর্শ আহমেদ।মনে রাখিস।।
তারপর স্পর্শ চলে গেল বাহিরে।।।
বাইরে গার্ড এসে বলল–স্যার লোকটা সিলিপার সেলস।।ও কি কাজ, কেন করছে, কার জন্য করছে কিছুই জানে না।
স্পর্শ –খবর নেও মাস্টার মাইন্ড কে??আমার নিদ্রিতার লাইফ রিস্ক আছে।
তারপর স্পর্শ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। ড্রাইভ করার মাঝেই স্পর্শের ফোন বেজে ওঠে।।গাড়ি সাইট করে স্পর্শ ফোন রিসিভ করে হালকা কেঁপে ওঠে।।মুহূর্তেই অগ্নিবর্ণ ধারণ করে।গাড়ি হাইস্পিড এ ড্রাইভ করতে শুরু করে।।
#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ২
স্পর্শ দ্রুত বাড়িতে এসে দেখে সব গার্ড আর ২ মেইড দাঁড়িয়ে আছে।।
স্পর্শ রেগে গার্ডদের জিজ্ঞেস করল–পালাল কি করে ও??
একজন গার্ড ভীত কন্ঠে বলল–স্যার,ম্যাম হঠ্যাৎ চিৎকার করা শুরু করেন।।কোনো সমস্যা ভেবে দরজা খুলে দেখতে যাই,তখন ম্যাম বলেন ওয়াশরুমে নাকি কেউ আছে দ্রুত দেখতে যাই কাউকে না পেয়ে এসে দেখি ম্যাম গেস্টরুমের ছোট দরজা দিয়ে পালিয়েছেন।
স্পর্শ রেগে বলল–ননসেন্স সব।।খোঁজ কর দ্রুত ওর।।
স্পর্শ নিজেও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়।। ড্রাইভ করতে করতে স্পর্শ বলে–ইডিয়েট মেয়ে একটা!!বুঝতেই চাইছে না কোনোকিছু!!!একবার পাই ওর ভিমরতি বের করছি আমি!!!
একজায়গায় এসে নিজের গার্ডদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্পর্শ গাড়ি ব্রেক করে।। দেখে একজন মেয়ে গার্ড নিদ্রিতার হাত শক্ত করে ধরে আছে।।আর নিদ্রিতা বহু চেষ্টা করছে হাত ছাড়ানোর।।স্পর্শ দ্রুত গিয়ে নিদ্রিতার সামনে দাঁড়ায়।। স্পর্শকে দেখেই নিদ্রিতার ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে।স্পর্শ নিদ্রিতার হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ির কাছে নিয়ে যেতে লাগল।।
নিদ্রিতা–ছাড়ো আমায়!!
স্পর্শ নিদ্রিতাকে জোর করে গাড়িতে বসিয়ে ডোর লক করে দিল।।
তারপর নিজে ড্রাইভিং সিটে এসে বসে গাড়ি বাড়ির দিকে ঘুরাতে লাগল।।
আর নিদ্রিতা সে তো বকেই চলেছে।।স্পর্শ এমনিতেই রেগে আছে আর নিদ্রিতার বকবকানিতে আরও রেগে গেল।।জোরে চিল্লিয়ে বলল–চুপপ।।কোনো কথা বলবি না!!
নিদ্রিতা ভয়ে চুপ হয়ে গেল।।কারণ সে দীর্ঘ ২ বছর স্পর্শকে চেনে কিন্তুু কখনো এভাবে এতো রাগতে দেখেনি।।
স্পর্শ গাড়ি ব্রেক করে বাড়ির সামনে এসে।।তারপর নিদ্রিতাকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে লাগে।।নিদ্রিতা কিছু বলতে যাবে কিন্তুু স্পর্শের রাগী লুক দেখে আর কিছু বলতে পারে না।।
বেডরুমে এসে দরজা লক করে দেয় স্পর্শ।।
নিদ্রিতাকে বিছানাতে ফেলে চেপে ধরে বিছানার সাথেই।।
তারপর দাঁত কটমট করে বলে–বারণ করেছিলাম তো বের হতে!!!
নিদ্রিতা কাঁপা কন্ঠে বলে–আমি থাকতে চাই না তোমার সাথে,,!!!
স্পর্শের রাগের মাত্রা যেন চরম সীমায় পৌঁছে যায়।।
নিদ্রিতাকে ছেড়ে ঘরের সবকিছু ভাঙতে শুরু করে।।
সারাঘরময় কাঁচের ছড়াছড়ি।।নিদ্রিতা ভয়ে কুঁকড়ে আছে।কারণ ১.৫ বছরের বিবাহিত জীবনে কখনো স্পর্শকে এতোটা রাগতে দেখেনি সে।।
স্পর্শ এবার নিদ্রিতার হাত ধরে টেনে বিছানা থেকে নামাতেই নিচের কাঁচে পা পড়ে নিদ্রিতার।।গোটা কয়েক কাঁচ ও ঢুকে যায় পায়ে।।নিদ্রিতা ব্যাথায় “আউচচচ” বলে আওয়াজ করতেই স্পর্শ নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে কাঁচ ফুটে নিদ্রিতার পা থেকে রক্ত পড়ছে।
স্পর্শ সাথে সাথে নিদ্রিতাকে কোলে তুলে ধীরে বেডে বসিয়ে দেয়।।চিল্লিয়ে মেইডকে ডেকে বলে রুম পরিষ্কার করতে।।আর স্পর্শ নিদ্রিতার পা ড্রেসিং করতে বসে।।
নিদ্রিতা তো ব্যাথায় কান্না করেই যাচ্ছে।। স্পর্শের এখন নিজের ওপরই রাগ হচ্ছে। স্পর্শ পা ড্রেসিং করে নিদ্রিতার কাছে এগিয়ে আসে তারপর নিদ্রিতার মুখ ২ হাতে ধরে নিদ্রিতার চোখের মুছে দিয়ে বলে–গিভ মি সাম টাইম নিদু!!আমি সব ঠিক করে দিবো!!তোমার বাবাকে আমি খুন করি নি তাও প্রমাণ করে দিব।।
নিদ্রিতা ফুঁপিয়ে যাচ্ছে।।। স্পর্শ নিদ্রিতার ঠোঁট আঁকড়ে ধরে নিদ্রিতা নিজেও কোনো বাঁধা না দিয়ে ফিল করে স্পর্শ কে।।কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বলে–রেস্ট নাও নিদু!!বিছানা থেকে নামবে না একদম!!
স্পর্শ দরজা লক করে বেরিয়ে যায়।।
নিদ্রিতা চোখ মুছতে মুছতে বলে–আই উইশ আমাদের দেখাই না হতো,,আই উইশ আমি তোমার প্রেমে না পড়তাম স্পর্শ।।!!!
তারপর নিদ্রিতা হারিয়ে যায় তার সেই ২ বছর পুরোনো কালো অতীতের দিকে,,,,,
সকাল সকাল মায়ের চিল্লানিতে ঘুম ভাঙে নিদ্রিতার।মুখ থেকে কম্বল সরিয়ে বিরক্ত মাখা মুখ করে উঠে ওয়াশরুম এ চলে যায় সে।।দার্জিলিং এর প্রতন্ত শহর নীভিরা নামক এলাকাতে বাস আয়ানা খান নিদ্রিতার।।বয়স সবে ১৭।।স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে পা রেখেছে সদ্য।বেশ দুরন্ত প্রকৃতির মেয়ে নিদ্রিতা।দেখতে বেশ ফর্সা।কোমড় ছাড়ানো চুল।বেশ মায়াবি চেহারা। বাড়িতে তার বাবা নয়ন খান আর মা নন্দিতা খান আছেন।।বাবার ছোট্ট চাকরি হলেও বেশ হাসিখুশিতে দিন কাটে এই খান পরিবারের।।
আজ নিদ্রিতার কলেজের ১ম দিন তাই নিদ্রিতা রেডি হয়ে নিচে চলে আসে।
নিদ্রিতা–গুড মর্নিং বাপী!!
নয়ন–গুড মর্নিং মামনি!!
নিদ্রিতা–আজ কি তুমি আমায় কলেজ ড্রপ করবে??
নয়ন–তোমার আজ ১ম দিন কলেজের তাই আমি ভাবলাম তোমায় আজ আমিই নিয়ে যাবো।।
নিদ্রিতা–ওয়াও গ্রেট!!!
নয়ন আর নিদ্রিতা নাস্তা করে নন্দিতাকে বিদায় দিয়ে অটোতে করে রওনা হয় বাবা আর মেয়ে।।রাস্তায় নয়ন নিদ্রিতাকে বেশ অনেক কিছু বোঝাতে বোঝাতে নিয়ে যাচ্ছে।। কলেজের সামনে অটো থামলে নিদ্রিতা “বাই” বলে দ্রুত কলেজের ভেতরে চলে যায়।।আর নয়ন খান অটো কে তাড়া দিতে থাকেন।। পথিমধ্যে নয়ন খানের ফোন বেজে ওঠে।।তিনি রিসিভ করেন।।
অপর পাশের ব্যক্তির বলা কথাতে বেশ রেগে উঠে বলেন–আমি কখনোই তোকে মালদার চৌরাস্তার সম্পত্তি লিখে দিবো না।।তাতে তুই আমাকে খুন করলেও না।।ওটা হাজারো বাচ্চার আশ্রয়।।আমি দেবো না।।বলেই ফোন কেটে দেন।।
অপরদিকে,
নিদ্রিতা কলেজ পৌঁছে এদিক ওদিক ঘুরে দেখতে লাগে।এনাউন্সমেন্ট করে একজন প্রফেসর সকল ছাত্র ছাত্রী দের ক্লাসে যেতে বলেন।।নিদ্রিতা ও ক্লাসে পৌঁছে বসে পড়ে।।তারই পাশে তড়িঘড়ি করে এসে বসে শ্যামবর্ণের মায়াবী চেহারার মেয়ে।।নাম সামিরা আহমেদ।।
নিদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে বলে–এতো দেরি করলি কেন??
সামিরা–আর বলিস না নিদু!!ইভু ভাই অফিস যাওয়ার পথে ড্রপ করে দিল।। ওই বেটা কেমন ঢিলা তা তো জানিসই!!
নিদ্রিতা হালকা হেসে বলে–হুমম।।পুরাই ঢিলে খোকা!!
তারপর দুজনেই হেসে দেয়।।
তাদের হাসির মাঝেই ক্লাসে প্রবেশ করে একজন সুঠাম দেহী পুরুষ, লম্বা প্রায় ৬ ফুট হবে,ধবধবে ফর্সা,হালকা ব্রাউন চুল গুলো সেট করে রাখা।কালো শার্ট আর কালো প্যান্ট পরিহিত সে।।ক্লাসে এসে টিচার্স চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে সিডিউল চেক করছেন।।কিছুক্ষণ পর মাথা তুলে বললেন–গুড মর্নিং স্টুডেন্টস।।
নিদ্রিতারাও একযোগে গুড মর্নিং জানালো।।
তারপর লোকটি বলল–আই আম স্পর্শ আহমেদ,ইউর ইংলিশ প্রফেসর এন্ড অলসো ক্লাস টিচার।
একটু থেমে আবারও বলল–আজ আমরা পরিচিত হব।।সবাই একে একে দাঁড়িয়ে নিজের নাম বলো।।
সবাই নিজের নাম বলা শেষ হলে স্পর্শ বলল–ওয়াও গ্রেট।।আজকে আমরা পরিচিত হলাম কাল থেকে আমরা পড়া শুরু করবো সো ডোন্ট ফরগেট টু ব্রিং ইউর বুকস।আর তোমরা সবাই হলরুমে এসো।।
বলেই স্পর্শ বেরিয়ে গেল।।
সামিরা নিদ্রিতার কাঁধে মাথা রেখে বলল–হায় হায়!!কি কিউট!!।
নিদ্রিতা কপাল কুঁচকে বলে–কি??
সামিরা–আরে স্যার।।কি কিউট দেখলি।।
নিদ্রিতা–হুমম দেখলাম।।চল হলরুমে।।
একে একে সবাই হলরুমে চলে গেল।।
হলরুমে বেশ কয়েকজন প্রফেসর বক্তব্য রাখলেন।।তারপর সকল ছাত্র ছাত্রী দের ফুল দিয়ে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।।
নিদ্রিতা রাস্তায় একা হাঁটছে।।সামিরা কে ইভান(সামিরার চাচাতো ভাই) একটা জায়গায় ঘুরতে নিয়ে গিয়েছে।।
পাহাড়ি আঁকাবকা রাস্তায় বেখেয়ালি ভাবে হাঁটছে নিদ্রিতা।।আচমকা একটা গাড়িতে ধাক্কা লেগে পড়ে যায়।।
সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির মালিক বেরিয়ে এসে উদ্রেক কন্ঠে বলে–খুব বেশি লেগেছে কি আপনার?
নিদ্রিতা পায়ে বেশ চোট পেয়েছে।।তাই হালকা মাথা তুলে দেখে স্পর্শ।। তারপর মাথা নাড়িয়ে জানায় যে হ্যাঁ সে বেশ চোট পেয়েছে।
স্পর্শ নিদ্রিতাকে দেখে কপাল কুঁচকে বলে –তুমি তো আজ মেবি ক্লাসে ছিলে??
নিদ্রিতা মাথা ঝাকিয়ে বলে–ইয়েস স্যার!!
স্পর্শ –উঠতে পারবে নাকি হেল্প করবো।।
নিদ্রিতা চেষ্টা করে কিন্তুু হাঁটুতে আঘাত লাগায় তা আর পারে না।।
স্পর্শ কিছু না বলেই নিদ্রিতাকে কোলে নিয়ে তার গাড়িতে বসিয়ে দেয়।নিদ্রিতা তো চোখ ২ খানা রসগোল্লা করে ফেলে।।
স্পর্শ ড্রাইভিং সিটে বসে বলে –হসপিটাল যেতে হবে।।
নিদ্রিতা–ওকে স্যার!!
কিছুক্ষণ পর স্পর্শ হসপিটালের সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করে।।তারপর নিজে বেরিয়ে নিদ্রিতাকে কোলে নিয়ে প্রবেশ করে হসপিটালের ভেতরে।।নিদ্রিতার পা ড্রেসিং করা হয়ে গেলে আবারও তাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে, নিজে এসে ড্রাইভিং সিটে বসে নিদ্রিতার হাতে ওষুধ আর পানির বোতল দিয়ে বলে খেয়ে নিতে।।
নিদ্রিতাও লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে নিল।
তারপর স্পর্শ জিজ্ঞেস করল–বাসা কোথায় তোমার??
নিদ্রিতা–c9 রয়েল স্ট্রিট এভিনিউ।।
স্পর্শ — তাতো প্রায় ১ ঘন্টার রাস্তা।।
নিদ্রিতা মাথা ঝাকিয়ে বলে—হুমমম!!!
স্পর্শ –ওকে লেটস গো!!
তারপর গাড়ি ঘুরিয়ে পাহাড়ি আঁকাবাকা রাস্তা দিয়ে চলতে লাগল।।
নিদ্রিতা বাহিরে তাকিয়ে আছে।।মাঝে মাঝে আড়চোখে স্পর্শকে দেখছে।
স্পর্শের শান্ত দৃষ্টি কেবল সামনের দিকেই বিরাজমান।।
নীরবতা ভেঙে স্পর্শ বলল–তুমি কি কিছু বলবে???!!!
#