#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৫
নিদ্রিতা একটা হাতাকাটা টি-শার্ট এনে স্পর্শকে পরিয়ে দিল!!!তারপর স্পর্শের পাশে বসে স্পর্শের মুখের সামনে খাবার ভর্তি চামচ ধরল!!!
স্পর্শ নিদ্রিতার দিকে হালকা করে তাকিয়ে খাবারটা মুখে নিল!!!খাওয়া শেষ হলে নিদ্রিতা সব গুছিয়ে ওষুধ নিয়ে আসে!!তারপর স্পর্শের দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলে–নাও ওষুধ খাও!!
স্পর্শ পানির গ্লাসটা টেবিলের ওপর রেখে একহাত দিয়ে নিদ্রিতাকে একটু কাছে টেনে নিদ্রিতার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল–কি ব্যাপার!!!আমার বউ আজ প্রেম নিবেদন করছে যে আমায়!!!
নিদ্রিতা স্পর্শের একদম কাছে এসে স্পর্শের মুখটা হাতের মধ্যে নিয়ে স্পর্শের ঠোঁট আকড়ে নিল!!
স্পর্শ তো অবাক!!!সে যেন নড়তে ভুলে গিয়েছে!!সে ভাবছে নিদু তো তাকে সহ্যই করতে পারছিল না!!তাহলে আচমকা!!!
নিদ্রিতা কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে বলল–এমন করে বললে যেন আমি কোনোদিন তোমায় ভালোবাসিনি!!!
আমিই ১ম ভালোবাসি বলেছিলাম!!!আর প্রেম তো সমসময় আমিই দেখাই!!!
একটু থেমে নিদ্রিতা আবারও বলল–কি গো!!একদম রোবট হয়ে গিয়েছো!!!কিস করলাম তাও কোনো রেসপন্স নাই!!আজব তুমি!!!
স্পর্শ এবার হতবাক চেহারা করে বলল–তারমানে তুমি আমায় ক্ষমা করে দিয়েছো??
নিদ্রিতা ওষুধের পাতা থেকে ওষুধ ছাড়াতে ছাড়াতে বলল–যখন তোমার কোনো দোষই নেই তখন ক্ষমা করার কি আছে!!!
স্পর্শ –মানে!!!
নিদ্রিতা–ওইযে গার্ড ভাইয়া আছে না!!উনি শুরু থেকে শেষ সব বলেছে!!!ভুল তো আমার না জেনেই!!!
স্পর্শ এবার নিদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরল!!!
নিদ্রিতা তাড়াহুড়ো করে বলল–ব্যাথা পাবে তো কাঁধে!!!
স্পর্শ নিদ্রিতার গলায় মুখ গুজে চোখের পানি ফেলছে!!
নিদ্রিতা হালকা হাতে ছাড়িয়ে বলল–সরি!!!অনেক কষ্ট পেয়েছো তাইনা!!!
স্পর্শ কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল–সরি নিদু!!!আমার ভুল ছিল!!আমি প্রতিশোধের নেশায় পড়ে এটাও ভুলে গিয়েছিলাম যে আমার ভালোবাসার মাঝে আমার অস্তিত্ব আছে!!!
নিদ্রিতা চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল–পুরোনো কথা বাদ!!তার হয়তো পৃথিবীতে আসার কথা ছিল না তাই আসেনি!!!সে হয়তো সাময়িক ছিল!!!তার জন্য তোমার কোনো দোষ নেই!!
নিদ্রিতা এবার ওষুধ গুলো স্পর্শের হাতে দিয়ে বলল–খেয়ে নাও ওষুধ!!সুস্থ হতে হবে জলদি!!
স্পর্শ –হুমম!!দাও!!
ওষুধ খেয়ে স্পর্শ কিছু বলবে তার আগেই নিদ্রিতা বলল–বেডে শুয়ে কথা হবে!!তোমার শরীর বেশ দুর্বল!!
আমি চাদর পাল্টে দিয়েছি!!!
তারপর স্পর্শকে ধরে নিদ্রিতা বেডে নিয়ে শুইয়ে দিল!!তারপর লাইট নিভিয়ে নিদ্রিতাও এসে স্পর্শের পাশে শুয়ে পড়ল!!
ঘরে চাঁদের আর সোডিয়ামের আলো মিলে এক অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছে!!
নিদ্রিতা এবার স্পর্শের বুকে মাথা রাখল!!
স্পর্শ নিদ্রিতাকে একহাতে একটু জড়িয়ে ধরে বলে–ফাইনালি!!আমরা আজ একদম স্বামী স্ত্রী এর মতো আছি!!
নিদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে বলে-কেন!!এতোদিন ও ছিলাম!!স্বামী স্ত্রীর মতোই!!
স্পর্শ –হায়রে পিচ্চি!!এতোদিন তো আমি লুকিয়ে তোমার কাছে যেতাম!!!কিন্তুু আজ দেখো তুমি আমার বাড়িতে আমাদের বেডরুমে!!আর আগে তো লুকিয়ে যেতাম আর সকালের আগেই আবার চলে আসতাম!!
বুঝলে পিচ্চি!!!
নিদ্রিতা–পুরোটা না হালকা বুঝেছি!!
স্পর্শ হেসে দেয়!!সাথে নিদ্রিতাও!!
নিদ্রিতার হাসি দেখে স্পর্শ বলে–হেসো না এমন করে নিদু!!কন্ট্রোল করতে পারি না নিজেকে!!হাতে ব্যাথা!!!
নিদ্রিতা –জানো তুমি দার্জিলিং ছেড়ে যাওয়ার পর!!আমি যেন এক মহাসমুদ্রে পড়ে ছিলাম!!যার কোনো কিনারা নেই!!বেবি ছিল।।ভয় ও ছিল!!বুঝতে পারছিলাম নাহ কিছু!!!মা যেমন বলতো তেমনই থাকতাম!!সব ঠিক ছিল!!কিন্তুু ২ মাসের মাথাতেই আচমকা পেট ব্যাথা আর বমি শুরু হয়!!
২.৫ মাস হতেই ব্লিডিং!!ডাক্তারের কাছে গেলে জানায় বেবিটা পেটের ভিতরই মারা গিয়েছে!!!
স্পর্শ চুপ করে শুনছে আর চোখ ভরে আসছে!!!
স্পর্শ এবার নিদ্রিতার মুখটা নিজের সামনে এনে বলল–আমি কেমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলে চলে গিয়েছিলাম!! কিন্তুু নিদু আমিও খুব একটা ভালো ছিলাম নাহ!!নিজের বাবা বলে জানলাম যাকে সে আমার বাবাই না!!এতোদিন জানতাম মা মারা গিয়েছে কিন্তুু সে জীবিত!!!
নিদ্রিতা–হুমম!!কিন্তুু শোনো তুমি আর আমাকে একা রেখে যাবে না তো!!আর থাকতে পারব না!!
স্পর্শ নিদ্রিতার মাথাটা বুকে চেপে বলল–আমিও না নিদু!!!
এবার নিদ্রিতা মাথা উঠিয়ে বড়দের মতো করে বলল–শুনো এখন থেকে সব কথা শুনবে আমার!!আর এই ভুতের মতো দাড়ি কাটবে কালই আর চুলও!!আমার কিউট বরকে জংলি লাগছে!!!
স্পর্শ হেসে বলে–যা আপনি বলবেন তাই করবে এই অধম!!বদলে অধমকে ভালোবাসা দিলেই হবে!!
নিদ্রিতা হালকা হেসে স্পর্শের কপালে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে বলে–তাহলে অধম এবার ঘুমিয়ে পড়ুন!!!
স্পর্শ –সিউর!!
তারপর স্পর্শ চোখ বুজল সাথে নিদ্রিতাও!!তাদের শেষ রাতের ঘুমে মনে হচ্ছে কতকাল যেন দুজনে জেগে কাটিয়েছে!!!
সকাল ১১.৪৫,,
স্পর্শের ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙল নিদ্রিতার!!স্পর্শকে ঘুম দেখে নিজেই ফোন হাতে বারান্দাতে চলে এলো!!!
ফোনের স্ক্রিনে নানু নাম টা লেখা আছে!!
নিদ্রিতা মনে মনে চিন্তা করল–স্পর্শ আমার খালামনির ছেলে!!তাহলে খালামনির মা মানে আমার আম্মুর ও মা!!তাহলে স্পর্শের নানু মানে আমারও নানু!!
নিদ্রিতার এতো ভাবনার মাঝে ফোন ইতিমধ্যে ৩য় বার রিং হতে শুরু করেছে!!!
নিদ্রিতা এবার ফোন রিসিভ করে সালাম দিল!!!
মেয়েলি কন্ঠ শুনে নানু বোধহয় একটু চমকালেন!!তারপর সালামের উত্তর দিয়ে বললেন–কে তুমি মা??
নিদ্রিতা কাঁপা গলাতে বলল–আমি নিদ্রিতা!!!স্পর্শের ওয়াইফ!!
নানু–ও খোদা!!দেখেছ আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছি!!আমার বয়ফ্রেন্ড তো এখন বিবাহিত!!পাগলের মতো কে জিজ্ঞেস করেছি!!!
নিদ্রিতা হালকা হেসে বলল–কোনো ব্যাপার না!!!
নানু–তুই তো জানিসই তুই আমার নাতনি আবার নাতবৌও!!!
নিদ্রিতা–জি নানু জানি!!!
নানু চোখের পানি মুছে বলল–তাড়াতাড়ি চলে আয় নানুদিদি!!তোকে একটু দেখি!!সেই জন্মের সময় এক ঝলক দেখেছিলাম!! আর নানু ভাইএর থেকে ছবিতে!!!
নিদ্রিতা–কেঁদো না নানু!!আসব তাড়াতাড়ি!!
এরই মধ্যে স্পর্শ এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল নিদ্রিতাকে!!নিদ্রিতা ভয় পেয়ে হালকা আওয়াজ দিকেই ফোনের অপরপাশে থাকা নানু তড়িঘড়ি করে জিজ্ঞেস করল–কি হয়েছে!!
স্পর্শ এবার নিদ্রিতার হাতে ফোন রেখেই লাউডে দিয়ে বলল–কিছু হয়নি গো গিন্নি!!আমার বউকে একটু জড়িয়ে ধরলাম!!
স্পর্শের লাগামছাড়া কথাতে নিদ্রিতা লজ্জায় মাটিতে মিশে যাওয়ার কায়দা!!
আর নানু হাসছেন!!
তারপর স্পর্শ বলল–কেমন আছো তুমি??
নানু–এই তো আছি!!তোমরা তাড়াতাড়ি আসো!!আমার বয়ফ্রেন্ডের বৌকে একটু দেখি!!
স্পর্শ –হুমম!!চলে আসব দ্রুত!!
তারপর নানু ফোন রাখতেই স্পর্শ দেখল নিদ্রিতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে!!
স্পর্শ নিদ্রিতার গলায় নিজের ঠোঁট বুলাতে বুলাতে বলল–কি হয়েছে??
নিদ্রিতা–তুমি ওমন জড়িয়ে ধরার কথা বললে কেন!!কি ভাবলো নানু!!
স্পর্শ –কি ভাববে!!নিজের বউকে জড়িয়ে ধরেছি অন্য কাউকে তো না!!
নিদ্রিতা –চলো ফ্রেস হবে!!ড্রেসিং করাতে ডাক্তার আসবেন আবার!!
স্পর্শ আর কিছু না বলে নিদ্রিতার পেছন পেছন ঘরে চলে যায়!!!
স্পর্শকে ফ্রেস হতে দিয়ে নিদ্রিতা নিচে আসতেই একজন গার্ড জিজ্ঞেস করে–কিছু দরকার ম্যাম??
নিদ্রিতা–হুমম!!রান্না যে করবে তাকে একটু বলবেন লাইট কিছু রান্না করতে!!আর চুল, দাড়ি কাটে এমন লোক নিয়ে আসবেন একজন!!আপনাদের স্যারের জন্য!!
গার্ড মাথা নাড়িয়ে বলে–ওকে ম্যাম!!আপনি রুমে যান!!সব ব্যবস্হা হয়ে যাবে!!!
নিদ্রিতা রুমে আসতেই স্পর্শ বলল–আমরা কিন্তুু কাল কোলকাতা যাচ্ছি???
#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৬
স্পর্শ –আমরা কিন্তুু কাল কোলকাতা যাচ্ছি??
নিদ্রিতা ভ্রু কুঁচকে বলল–মোটেই না!!আগে তুমি সুস্থ হবে তারপর!!
স্পর্শ –বাট নিদু!!!
নিদ্রিতা–ওতো কথা শুনছি না আমি!!!
এরই মধ্যে একজন গার্ড নক করলো!!!
স্পর্শের পারমিশন পেয়ে ভেতরে এসে বলল–স্যার,,আপনার খালামনি সুস্থ ভাবে কোলকাতা পৌঁছাতে পেরেছেন!!!আপনার জন্য কালকে যাওয়ার ব্যবস্হা করেছি!!!
স্পর্শ বলল–দরকার নেই!!তোমার ম্যাডাম পরে যাবেন বলেছেন!!!
গার্ড–ওকে স্যার!!
এবার গার্ড নিদ্রিতাকে উদ্দেশ্য করে বলল–ম্যাম,ওই জেন্টস পার্লারের লোক নিয়ে এসেছি!!!
নিদ্রিতা–ঠিক আছে!!
গার্ড বেরিয়ে যেতেই স্পর্শ কপাল কুঁচকে বলে –জেন্টস পার্লারের লোক দিয়ে কি হবে??
নিদ্রিতা–আমার জংলি বরকে মানুষ বানানো হবে!!
স্পর্শ –আর ২ দিন পরে চুল কাটলে হতো না!!
নিদ্রিতা বিছানা ঠিক করতে করতে বলল–নাহ!!হতো না!!
স্পর্শ –হুমম!!
নিদ্রিতা–মা কে যে কোলকাতা পাঠিয়েছো তা বলো নি তো আমায়??
স্পর্শ –বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম!!যেদিন গুলিটা লাগলো ওইদিন ই পাঠিয়েছি!!ঝামেলার জন্য মনে ছিল না!!
নিদ্রিতা –তা ভালো!!চলো নিচে!!
স্পর্শ আর নিদ্রিতা নিচে চলে গেল,,,
বিকালে,,
নিদ্রিতা চোখ,মুখ কুঁচকে তাকিয়ে আছে,,রাগও হচ্ছে বেশ!!
কারণ,,
স্পর্শকে তার পারসোনাল ডাক্তারের এ্যাসিসটেন্ট ডা.মিতা ড্রেসিং করছেন!!
সব ঠিক ছিলো!!কিন্তুু মেয়েটার চাহনি আর ইনিয়ে বিনিয়ে কথা নিদ্রিতার একদম পছন্দ হচ্ছে না!!
আর স্পর্শও কিছু কম না!!একটু বেশিই কথা বলে যাচ্ছে ডাক্তারের সাথে!!!
ডাক্তার যেতেই নিদ্রিতা ধুম করে দরজা বন্ধ করে দিল!!একটা রাগী লুক দিয়ে ওয়াশরুম এ চলে গেল!!!
স্পর্শ তো হেসেই কাত!!নিদ্রিতা যে রেগে আছে তা বুঝতে পেরেই আরও হাসি পাচ্ছে তার!!!নিদ্রিতা বেরিয়ে এসে রাগ আর কান্নামিশ্রিত চোখে স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আছে!!
স্পর্শ নেমে এসে একহাতে নিদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে বলল–কি হয়েছে ম্যাডামের??
নিদ্রিতা হালকা নড়াচড়া করে বলে–ওই লেডি ডক্টরের সাথে ওতো কিসের কথা তোমার!!!আমি অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বললে তো নিজে রেগে ফায়ার হয়ে যাও!!কলেজের অনুষ্ঠানে গতবার একটা ক্লাসমেটের সাথে কথা বলেছিলাম বলে স্টোরের দেয়ালে চেপে কাঁধে ৪ টা কামড় বসিয়েছিলে!!
নিদ্রিতার রাগ মিশ্রিত কথা শুনে স্পর্শ মুখ টিপে হেসে বলে–কামড় দেওয়ার পর আদর করেছিলাম এটা বলছ না কেন!!!
নিদ্রিতা নাক ফুলিয়ে স্পর্শের দিকে তাকায়!!
স্পর্শ হেসে বলে–তুমি চাইলে আমায় কামড়ে দিতেই পারো!!তবে!!
নিদ্রিতা মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বলে–দরকার নেই বাপু কামড়াকামড়ি করার!!ছাড়ো আমাকে!!
স্পর্শ মাথা নাড়িয়ে বলে–একদমই না!!আমার বউ রাগ করেছে,,,এখন আমি রাগ ভাঙাবো!!!
নিদ্রিতা কিছু বলার আগেই স্পর্শ তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল!!
৭ দিন পর,,,
আজ নিদ্রিতা আর স্পর্শ কোলকাতা যাচ্ছে!!!
এয়ারপোর্টে এসে নিদ্রিতা বলল–জানো,আমি জীবনে ১ম এই শহরের বাইরে যাচ্ছি!!
স্পর্শ হেসে নিদ্রিতার কপালে চুমু দিয়ে বলল–এরপর আরও অনেক জায়গায় নিয়ে যাবো আমি!!একটু সময় দাও আমাকে!!!
নিদ্রিতা হেসে বলে–ওকে!!!
ঘন্টা চারেক পর তারা কোলকাতা এসে পৌঁছায়!!
নিদ্রিতা তো অবাক চোখে সব দিক দেখছে!!
স্পর্শ বারবার নিদ্রিতার দিকে তাকাচ্ছে!! আর নিদ্রিতা তো কোলকাতার ব্যস্ত নগরী দেখতে!!
গাড়িতে উঠে স্পর্শ নিদ্রিতার কোমড় ধরে কাছে টেনে বলে–নিজের বরের প্রতিও একটু নজর দিন!!!
নিদ্রিতা তাকিয়ে বলে–এইযে দিলাম নজর!!!
স্পর্শ নিজের ঠোঁট এগিয়ে আনতে নিলেই নিদ্রিতা বাঁধা দিয়ে ড্রাইভারকে ইশারা করে ফিসফিস করে বলে–একদম বেলজ্জা হয়ে গিয়েছো তুমি??মাথায় সারাক্ষণ এসব ঘোরে তাইনা!!
স্পর্শ নিদ্রিতার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে–আমার মাথায় যে কি কি ঘোরে তা তুমি যদি জানতে তাহলে!!!
স্পর্শকে থামিয়ে দিয়ে নিদ্রিতা বলে–আচ্ছা, আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?? আমাদের নানু বাড়িতে নাকি তোমার আর আমার দাদুবাড়ি?? মানে আমার শ্বশুরবাড়ি??
স্পর্শ –আমরা আমাদের বাড়ি যাচ্ছি!!!
নিদ্রিতা–মানে??
স্পর্শ–মানে তোমার বরের নিজের ফ্লাট কেনা আছে ওখানে যাচ্ছি!!!
নিদ্রিতা–তাহলে চাচ্চু মানে শ্বশুর বাবার সাথে দেখা হবে কেমনে??
স্পর্শ –সময় হলে সবার সাথেই দেখা হবে!!!
এসব টুকটাক কথার মাঝে তারা পৌঁছে যায় নিজেদের বাড়িতে!!!
স্পর্শ নিদ্রিতার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়!!
নিজেদের বেডরুমে গিয়ে নিদ্রিতা যেন অবাক হয়ে যায়!!বেডরুমে তার আর স্পর্শের বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি ঝোলানো রয়েছে!!
নিদ্রিতার চোখ আটকে আছে একটা বড় ফ্রেমের ছবিতে!!বলা যায় ছবিটা একেবারে মধ্যমণি!!!ছবিটিতে পাহাড়ের কর্ণারের অপরূপ দৃশ্য!! আর সেই মনোরম দৃশ্যের মধ্যে স্পর্শ নিদ্রিতার ঠোঁট আকড়ে ধরে আছে!!এটা মূলত তাদের বিয়ের ৫ মাস পূর্তির দিনে তোলা ছবি!!!
ছবিটি দেখে নিদ্রিতার নিজের কেমন লজ্জা লাগছে!!
নিদ্রিতার গাল ২ টো লাল হয়ে গিয়েছে!!!
এরই মঝ স্পর্শ এসে তাকে জড়িয়ে ধরে!! তারপর বলে–এতেই এতো লজ্জা পাচ্ছো??
নিদ্রিতা–লজ্জা পাওয়ার মতোই!!এই ছবি বেডরুমে কেউ দেখলে কি ভাববে!!!
স্পর্শ –যা ভাবার ভাবুক!!ফ্রেস হয়ে রেডি হও!!খালামনি ওয়েট করছে!!
নিদ্রিতা–মা কোথায়??
স্পর্শ –তার নিজের বাড়ি মানে শ্বশুরবাড়ি!!!
নিদ্রিতা–শাড়ি পরে যাবো??
স্পর্শ –হুমম!!ওই নীল শাড়িটা পড়ো আর গহনা আলমারিতে আছে!!তোমার পছন্দ মতো পরে নাও!!
নিদ্রিতা চলে গেল!!!
কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা রওনা হলো চৌধুরী বাড়িতে!!!
বিশাল বড় গেটের সামনে গাড়ি থামলো!!!
নিদ্রিতা তো অবাক হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে!! আর স্পর্শ ফোনে ব্যস্ত!!!
গাড়ি থেকে নামতেই স্পর্শ গিয়ে একজন বৃদ্ধ মহিলাকে জড়িয়ে ধরল!!বৃদ্ধার পাশে নিজের মাকে দেখে নিদ্রিতাও দৌড়ে গেল!!!
স্পর্শ নিজের নানু কে ছেড়ে বলল–ওইযে তোমার নাতবউ!!!
নিদ্রিতা কে এবার নানুমনি নিজের কাছে টেনে নিলেন–তারপর ২ গালে হাত রেখে বলল–আমার নাতীর পছন্দ আছে!!!
এরই মধ্যে বেরিয়ে এলেন আরেকজন মহিলা!!স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে তার নানুকে বলল–কে উনি??
মহিলাটি তার নানুকে বলতে না দিয়ে বলল–তোর দাদীমা আমি!!!
স্পর্শ আর নিদ্রিতা তাকে সালাম দিল!!!
তারপর দাদিমা নিদ্রিতার মুখ ধরে বলল–একদম আমার আকাশের আদলে মুখটা!!!
নানুমা তড়িঘড়ি করে বলল–ঘরে চলো সবাই!!
তারপর বাড়িতে এলো সবাই!!
বাড়িতে অনেক মানুষ!!!
নিদ্রিতার ৩ জন মামাতো ভাই আর ২ জন ফুফাতো বোন ও ভাই রয়েছে!!
স্পর্শ যেহুতু সবার বড়।।সেই হিসেবে নিদ্রিতা তাদের ভাবি!!তাই তারা নিদ্রিতাকে ঘিরে বসে আছে!!
মামাতো ভাইদের মধ্যে বড় রিদম।। সে এবার এস, এস,সি দিবে!!!আর বাকি ২ জন জমজ!!রিশাদ আর ইশাদ (ক্লাস ফাইভ),,৩ জনেই বেশ দুষ্ট!!
ফুফাতো বোনদের মধ্যে বড় নয়না!!অনার্স ফাইনাল!!খুবই সুন্দরী সে!!কিন্তুু চুপচাপ!!কোনো কথা ছাড়া পাশে বসা নিদ্রিতা আর অপর সোফাতে বসে ফোন ঘাটতে থাকা স্পর্শকে স্ক্যান করছে!!আর নয়না আপুর ভাই নিশান!!নিশান মাস্টার্স পড়ছে!!বেশ আসর জমাতে পারে সে!!
নিদ্রিতা নিজের এতো মানুষ পেয়ে খুব খুশি!!নিদ্রিতার হাসির প্রতিটি ঝিলিক যেনো চোখ কাড়ছে স্পর্শের!!!
স্পর্শ বলে কেউ ডাকাতে ধ্যান ভাঙলো স্পর্শের!!তাকিয়ে চিন্তে বেশি বেগ হলো না তার!!কারণ এ তো তার নিজের বাবা!!জন্মদাতা বাবা!!!স্পর্শ ফোন পকেটে নিয়ে উঠে দাঁড়াল!!
অভ্র বেশ অসুস্থ তাই হালকা ফতুয়া ট্রাউজার পরহিত!!চোখে পানি!!কাঁপা পায়ে স্পর্শের দিকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে স্পর্শকে!!
কিন্তুু স্পর্শ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে!!!
তারপর বলে–আপনার সাথে কথা আছে চৌধুরী সাহেব!!!একটু আলাদা কথা বলার ব্যবস্হা হবে কি??
অভ্র কান্নামাখা চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে—
#চলবে